শায়লা জাহান:
নিজেদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা সর্বদা একটি ভালো ধারণা। কিন্তু এই চিন্তার পরিমাণ যদি লাগামহীন ভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে কী করবে? প্রচলিত একটি কথা আছে, “ কোন কিছুতেই খুব বেশি গভীরে যাবে না, এটি অতিরিক্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায় এবং অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা এমন সমস্যার দিকে নিয়ে যায় যেগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই।”
ক্ষুদ্র এই মানব জীবনের সাথে চিন্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এই চিন্তার পরিধি যখন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায় তখনই তা রুপ নেয় দুশ্চিন্তার। যদিও প্রত্যেককেই কিছু না কিছু ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে কিন্তু কিছু ব্যক্তি এই ধ্রুবক বাঁধায় জর্জরিত থাকে। এই অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা অনেকটা ট্রেডমিলের মতো, যা থেকে সহজেই উতরানো যায়না। কোন কিছু সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করা প্রায়শই শব্দের চেয়ে বেশি কিছু জড়িত থাকে। এটি একটি সময় এমনভাবে মাথায় গেঁড়ে বসতে পারে যা ঘুম, কাজ, সম্পর্ক, স্বাস্থ্য বা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকগুলোকে ব্যাহত করার পাশাপাশি পুরো জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে যথেষ্ট।
ওভার থিংকিং- যাকে রিমিনেশন ও বলা হয়, এটি সাধারণত দুই ক্যাটাগরিতে পড়েঃ অতীত সম্পর্কে চিন্তা করা বা ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অতিরিক্ত চিন্তা করা কোন স্বীকৃত মানসিক ব্যাধি নয় ঠিকই কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সাথে যুক্ত থাকে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
- ডিপ্রেশন
- উদ্বিগ্নতা
- অবসেসিভ কম্পুলসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)
- পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)
মুক্তির উপায়
অন্যান্য অভ্যাসের মতো, বিদ্যমান ধ্বংসাত্মক চিন্তার ধরণ পরিবর্তন করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু , ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে, তুমি তোমার মস্তিষ্ককে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে প্রশিক্ষন দিতে পারো। এর জন্য কিছু উপায় রয়েছে। যেমন-
- অতিরিক্ত চিন্তা করা এমন এক অভ্যাসে পরিণত হতে পারে যে যখন তুমি এটি করবে তখন নিজেই বুঝতে পারবেনা। এইজন্য তোমাকে শুরুতেই উদ্ভূত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পূর্ব থেকে সনাক্ত করা সমস্যার যদি কোন ফলপ্রসূ সমাধানের পথ না থাকে, তবে সে ব্যাপারে অহেতুক চিন্তা করা রোধ করা সম্ভব হবে।
- জীবনে ভিড় করা হাজারো সমস্যা নিয়ে চিন্তা না করে সমধান সন্ধানের প্রতি ফোকাস করা বুদ্ধিমানের কাজ। যদি এটি এমন কিছু হয় যা সমাধানযোগ্য তবে তা বিবেচনা করে সম্ভাব্য সমাধান সনাক্ত করার জন্য নিজেকে চ্যালেঞ্জ করো। আর যদি এমন হয় যার উপরে তোমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, সে ব্যাপারে তা মোকাবেলা করার জন্য বিকল্প কৌশল গ্রহণ করো।
- আমাদের মস্তিষ্ক যখনই ফাঁকা থাকবে তখনই এমন অতিরিক্ত চিন্তার বিষয়টি এসে ধরা দেবে। নিত্যদিনের কাজের পাশাপাশি যেকোন সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। মোট কথা মনোযোগ ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে হবে।
- আমরা বর্তমান নিয়েই বসবাস করি। তাই গতকালকে রিহ্যাশ করা বা আগামীকাল নিয়ে চিন্তা করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেস বা মননশীলতা স্কিল প্র্যাকটিস করো, এটি তোমাকে এখানে এবং এখন সম্পর্কে আরও সচেতন হতে সাহায্য করবে।
- দীর্ঘ সময়ের জন্য যে কোন সমস্যার ব্যাপারে চিন্তা ফলদায়ক নয়, তবে সংক্ষিপ্ত প্রতিফলন সহায়ক হতে পারে। তুমি কীভাবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারো বা সে ব্যাপারে তোমার ত্রুটিগুলোকে স্বীকৃতি দিতে পারো সে সম্পর্কে চিন্তা করা তোমাকে ভবিষ্যতে আরও ভাল পারফর্ম করতে সহায়তা করতে পারে। এজন্য তোমার দৈনন্দিন সময়সূচীতেকিছু নির্দিশট সময় ‘চিন্তার সময়’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে পারো। তবে সেই নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে, অন্য কিছুতে চলে যাও। নির্ধারিত সময়ের বাইরে জিনিসগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে হবে।
- সবশেষে, ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করতে হবে। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবকিছুই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠের মতো জীবনে বিদ্যমান। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, ভেঙ্গে পড়ে, চিন্তা করে কোন ফল পাওয়া যাবেনা। তাই সর্বক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চিন্তা ঝেড়ে ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ করতে হবে।
-ছবি সংগৃহীত