আগুনে পুড়লে

করেছে Suraiya Naznin

রোদসী ডেস্ক: শরীরের কোথাও গভীরভাবে পুড়ে গেলে ব্যথা অনুভব করার জন্য প্রয়োজনীয় নার্ভ বা স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে অবহেলা না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত-

পানি ঢালা: শরীরের কোথাও হালকা পুড়ে গেলে পোড়া স্থানের ওপর প্রায় ২০ মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, তবে ফ্রিজের পানি নয়। তারপর পোড়া স্থানকে ত্বক সহনীয় সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ঠান্ডা সেঁক : পোড়া স্থানের ওপর কোল্ড কমপ্রেস বা কাপড়ে পেঁচানো বরফের টুকরো ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখলে ব্যথা ও ফোলা উপশম হবে। ১০-১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে প্রয়োজন পড়লে পুনরায় সেঁক দেওয়া যেতে পারে । তবে খুব বেশি ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যাবে না, কারণ ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম: অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম পোড়া স্থানে ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে। পোড়া স্থানের ওপর ব্যাসিট্রাসিন বা নিওসপোরিন অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট লাগানো যেতে পারে। তারপর জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

অ্যালোভেরা জেল: পোড়া স্থানের চিকিৎসায় অ্যালোভেরা এত বেশি কার্যকর যে, এটা বার্ন প্লান্ট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন ও সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন নিরাময়ে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরা প্রদাহ কমায়, রক্ত সংবহন বাড়ায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঠেকায়। অ্যালোভেরার পাতা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জেল নিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিতে হবে। অথবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কোম্পানির অ্যালোভেরা ক্রিম কিনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মধুর প্রলেপ: মধু খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এটা কে না জানে? চমকপ্রদ তথ্য হলো, মধু ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে, মৃদু পোড়া স্থানে মধুর প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে ওঠে। মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিনাশক শক্তি রয়েছে। এছাড়া প্রদাহও কমাতে পারে।

ফোসকা ফাটানো যাবে না: ফোসকা চোখে পড়লে ফেটে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ফোসকাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে। এটা সময়মত নিজ থেকে ফেটে যাবে। ফেটে ফেললে ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে। তবে ফোসকাকে উদ্বেগজনক মনে হলে চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে।

ব্যথানাশক ওষুধ: পোড়া স্থানে ব্যথা অনুভব করলে ওভার-দ্য-কাউন্টার (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না) ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন, যেমন- আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন। অবশ্যই বয়স অনুসারে সঠিক ডোজে ব্যবহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত ধারণা না থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

যা ব্যবহার করা যাবে না

পোড়া স্থানে মাখন, তেল, ডিমের সাদা অংশ ও টুথপেস্ট লাগাবে না। এসবকিছু ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলে জাতীয় ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসবের প্রয়োগে পোড়া স্থানের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। মাখন তাপ ধরে রাখে ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটাতে পারে। তেলও তাপ ধরে রাখে, এমনকি নারকেল তেলও। ডিমের সাদা অংশ লাগালে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের ঝুঁকি আছে। টুথপেস্ট ত্বককে উক্ত্যক্ত করার পাশাপাশি ইনফেকশনের উপযোগী করে তোলে।

যখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরে করলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বললেই চলে। তবে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরোয়া উপায়ে করলেও বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন আছে, কারণ ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যখন চিকিৎসক দেখাবে-

* পোড়া স্থানের ডায়ামিটার ৩ ইঞ্চির বেশি হলে।

* মুখমণ্ডল, হাত, নিতম্ব ও কুঁচকিতে পুড়ে গেলে।

* পোড়া স্থানের যন্ত্রণা অসহনীয় হলে বা দুর্গন্ধ ছড়ালে।

* উচ্চ মাত্রায় জ্বর আসলে।

* যদি মনে করেন যে থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়েছে।

* যদি পোড়ার মাত্রা বুঝতে না পারেন।

* সবশেষ টিটেনাস শট নিয়েছেন ৫ বছরের বেশি হলে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

2 × 1 =