শায়লা জাহানঃ
কথায় বলে, “হোম ইজ হোয়ার ইউর হার্ট ইজ।“ বাসা ছোট হোক কিংবা বড় সকলেই তা মনের মত করে সাজাতে চায়। পর্যাপ্ত ধারনা না থাকায় দেখা যায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে কমন কিছু মিসটেকের কারনে পুরো শ্রমটাই পন্ড হয়ে যায়। এই ধরনের কিছু কমন মিসটেক নিয়েই আজকের আয়োজন।
মনের মত করে একটি ঘর সাজানো সহজ মনে হলেও ব্যাপারটি আসলে ততটা সহজ নয়। সঠিক আসবাবপত্র নির্বাচন, নিখুঁত রঙ, স্থানভিত্তিক সর্বোত্তম আনুষঙ্গিক সাজসজ্জা, সঠিক লাইটিঙের ব্যবস্থা এবং এসব কিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা রীতিমত সংগ্রামের মত অবস্থা। আর সবকিছুর মধ্যে যদি কিছুটা পারফেকশনের ভাব না আসে তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মতে, ঘর ডেকোরেশনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই কিছু কিছু ব্যাপারে সাধারণ কিছু ভূল করে থাকে। এগুলো চিহ্নিত করে তা সামঞ্জস্য করে নিলে ঘরকে আরও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা যাবে। তাদের মতে এই কমন মিসটেকগুলো হল-
ভুল আলো নির্বাচন করা
ঘর ডেকোরেশনে সঠিক আলো বা লাইটিঙের ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তোমার ঘর বা রুমটি দেখা যায় সব দিক দিয়েই পারফেক্ট, কিন্তু যখনই তুমি সেখানে কোন হার্শ আলো অথবা একদমই ডিম আলো যোগ করো; এটি তৎক্ষণাৎ সব ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। সঠিক আলোক ব্যবস্থা শুধুমাত্র দেখতে সহজ করেনা- এটি একটি স্থানকে আরও গতিশীল অনুভব করতে সহায়তা করে। তাই স্থান ভেদে ওয়ার্ম এবং উজ্জ্বল আলো ব্যবস্থা রাখতে হবে। ক্ষেত্রেবিশেষে লেয়ার লাইটিংও একটা ডিফারেন্ট লুক দেয়। এজন্য পাশাপাশি ফ্লোর ল্যাম্প বা টেবিল ল্যাম্পও যোগ করা যেতে পারে।
রঙ নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের ভয়
রঙের সংযোজন একটি ঘরের অনুভূতিকে পুরোপুরি পরিবর্তন করতে পারে। ঘরকে রঙ করার ক্ষেত্রে আমাদের বেশিরভাগই পছন্দ থাকে সাদা বা হালকা ধাঁচের রঙের দিকে। কিন্তু কিছু কিছু উজ্জ্বল রঙ আছে, যার ব্যবহারে জিনিসগুলোকে উজ্জ্বল করে এবং একটি স্থানকে আরও ভাল দেখায়। কিন্তু অনেকেই এই কালার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পায়। প্রতিটি রুমকে যে বোল্ড হতে হবে তা কিন্তু নয়, কিন্তু সমস্ত সাদা বা সমস্ত বেইজ স্পেস সাদারণত অনুপ্রাণিত করেনা। রঙের একটি সুবিবেচিত এবং রুচিশীল ব্যবহার- এমনকি তা যদি হয় শুধুমাত্র ফোকাল প্রাচীরেও, তবে রুমটি হবে আরও প্রাণবন্ত।
ফার্নিচার এরেঞ্জমেন্ট
রুম ডেকোরেশনের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটি প্রবৃত্তি থাকে সকল ফার্নিচার স্বয়ক্রিয়ভাবে দেয়ালের বিপরীতে ধাক্কা দিয়ে রাখা। যদিও কখনও কখনও এটি কাজ করে, বিশেষ করে ঘরটি যদি খুবই ছোট হয়। তবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে একেও ভুল হিসেবে গন্য করা হয় যা বেশিরভাগ লোকেরা বুঝতে পারেনা। একটি বড় বা লম্বা রুমে সকল বসার সিট একসাথে জড়োবদ্ধ না করে আলাদা আলাদা বসার জায়গা করলে ভালো দেখায়।
মাত্রাতিরিক্ত জিনিস যোগ করা
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাজসজ্জার আনুষঙ্গিক (বড় এবং ছোট উভয়ই) যুক্ত করা সহজেই একটি ঘরকে বিশৃঙ্খল এবং অগোছালো দেখাতে পারে। যেখানে যা দরকার, যতটুকু দরকার তা প্রথমে বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী সংযোজন করতে হবে। এতে দেখতেও ভালো লাগবে, চোখেরও আরাম লাগবে।
স্থান পরিমাপ না করা
প্রায় প্রতিটি ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা সম্মত হন যে অনেকেই বিভিন্ন আসবাবপত্র যোগ করা আগে ঘরের অনুপাত এবং আকার বিবেচনা করেনা। কোন কিছু কেনার আগে রুমের পরিমাপ করা জরুরী। সঠিক পরিমাপের অভাবে কক্ষগুলোকে সঙ্কুচিত ও জনাকীর্ণ দেখায়। পর্যাপ্ত পরিমানে হাঁটাচলার জন্য স্পেস ছেড়ে রুমের সাথে মানানসই সঠিক আসবাব নির্বাচন করা জরুরী।
পর্দার ঝুল কম দেয়া
বেশিরভাগ মানুষই পর্দাগুলো সঠিক উচ্চতায় দেয়না, কিন্তু এটি একটি ভুল যা সহজেই একটি জানালা বা দরজার সম্পূর্ন চেহারা পরিবর্তন করিয়ে দেয়। সঠিক উচ্চতায় পর্দা না রাখলে তা জানালাকে ছোট করে এবং সিলিংকে নিচু মনে করে। এর সমাধান হল এর রডটিকে প্রায় সিলিং পর্যন্ত তোলা। একে উপরে ঝুলিয়ে রাখলে ঘরকে আরও বড় দেখায়। এটি জানালাগুলোকে লম্বা করে তুলবে এবং জাদুকরীভাবে সিলিংকে আরও উঁচু মনে করবে।
ভুল গালিচা নির্বাচন
রুমের মাঝে ব্যবহৃত রাগ বা গালিচা যদি ছোট হয় তবে তা সম্পুর্ণ ঘরের নকশাতে প্রভাব ফেলবে এবং ঘরকেও ছোট দেখাবে। যদি রুমের জন্য ছোট গালিচা ইতোমধ্যে কেনা হয়ে যায়, তবে চিন্তা নেই। এই পরিস্থিতিতে তা সেট করার জন্য নিচে আরেকটি বড় গালিচা যোগ করে দিতে পারো। এতে ব্যাপারটি আরও ইউনিক দেখাবে।
ছোটখাটো ব্যপারগুলো উপেক্ষা
রুমকে আরও দূর্দান্ত ও পারফেক্ট দেখাতে ছোটখাটো সকল ব্যপারগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। দরজার হ্যান্ডেল তেকে শুরু করে ছোট ছোট হার্ডওয়্যার, কেসিং স্কেল এমনকি সুইচ এবং আউটলেটগুলোর বিষয়গুলো উপেক্ষা করা যাবেনা। এই কলের ক্ষেত্রে একটু ভালো মানের এবং সুন্দর পণ্য বিবেচনা করলে তা রুমকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলবে এবং তা অতিথিদের নজরও কাড়বে।
-ছবি সংগৃহীত