শায়লা জাহান
ত্বক আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে বড় অঙ্গ, তাই এটির যত্ন নেয়া দরকার। স্কিনকেয়ার অতিরিক্ত কোন কাজ নয়, বরঞ্চ এটি প্রয়োজনীয় একটি স্বাস্থ্যসেবা। তোমার সুন্দর ত্বকই বলে দেবে যে, তোমার একটি সুস্থ মন এবং শরীর আছে। অন্যদিকে, নিস্তেজ বা শুষ্ক ত্বক তোমার কনফিডেন্সকে লো করে দিতে বাধ্য। বিয়ে অনুষ্ঠান হোক, কিংবা যে কোন ধরনের পালা-পার্বণ; নিজেকে সুন্দর ও মোহময় করে উপস্থাপন করার বাসনা সবারই থাকে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আগে থেকেই তুমি মসৃণ, উজ্জ্বল এবং ময়েশ্চারাইজড ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকো। উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাও? নাহ, এটার জন্য তোমাকে নামী-দামী কোন সেলুনে দৌড়াতে হবেনা। ঘরে বসেই কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমেই তুমি কাঙ্খিত ফল পেয়ে যেতে পারো।
নারিকেল তেল
শুধু চুলের যত্নের ক্ষেত্রেই নয়, ত্বকের ক্ষেত্রেও ভার্জিন নারিকেল তেলের চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। প্রদাহরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও নিরাময়ের বৈশিষ্ট্যের জন্য নারিকেল তেল হলো বিশ্বস্ত উৎস। ক্লিনজার এবং ময়েশ্চারাইজিং- উভয় কাজের মাধ্যমে এটি স্কিনকে সহজেই স্মুথ করে। মুখে ক্লিনজারের মাধ্যমে ক্লিন করার আগে অল্প পরিমাণে কিছুটা তেল নিয়ে আলতোভাবে ত্বকে ম্যাসেজ করে রেখে দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, সকল ত্বকের জন্য এটি উপযোগী নাও হতে পারে। ত্বকে কোন ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এর থেকে বিরত থাকতে হবে।
হলুদ
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলুদ হচ্ছে এমন এক ঐশ্বরিক মশলা যা কখনোই তোমাকে হতাশ করবেনা। প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে বর্তমানেও ত্বকের যত্নে এটি চমৎকার কাজ করে। ত্বকে এক বিস্ময়কর আভা এনে দিতে সক্ষম। এতে রয়েছে কারকিউমিন যা একটি প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট এবং ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে। বেসন সহকারে এই হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে সাথে দুধ/পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা মুখে, ঘাড়ে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে।
পেঁপে
ইন্সট্যান্ট ত্বকে গ্লো পেতে চাও? পেঁপে ত্বকের জন্য বিস্ময়কর কাজ করে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই উজ্জ্বলতা দেয়। পেঁপে একটি গোপন সৌন্দর্য উপাদান সাথে নিয়ে আসে- পেপেইন। ত্বকের গঠন এবং বর্ণকে উন্নত করতে সাহায্য করে এটি। এক টুকরো পেঁপে নিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ত্বকে ঘষে নাও। তারপর কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নাও। আর তাৎক্ষণিক এর ফলাফল দেখে নাও।
মধু
মধু একটি দারুন প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। ব্রণ কমাতে ও দাগহীন ত্বক নিশ্চিত করতে মধু কার্যকর। এছাড়াও এতে আছে ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য যা পিগমেন্টেশন ও দাগ দূর করে। যে কোন উপটানের সাথে কিংবা সরাসরিও মধু ত্বকে লাগাতে পারো তবে তার আগে নিশ্চত করতে হবে স্কিন পরিষ্কার এবং কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে আছে কিনা। আলতো ম্যাসেজ করে এপ্লাই করার পর তা শোষিত হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। তারপর কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিলে ব্যস কাজ শেষ।
রোজওয়াটার
ঠান্ডা গোলাপ জল দিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে ত্বকে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও কটন বলে ভিজিয়েও এটি এপ্লাই করা যায়। একটি পরিষ্কার, রিফ্রেশিং লুক পেতে এটি সহায়ক।
বাদাম
তোমার স্কিনের ধরণ যদি শুষ্ক হয়ে থাকে তবে কিছু বাদাম পিষে মধুর সাথে মিশিয়ে প্যাকটি মুখে লাগাও। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো। এটি মুখ ময়েশ্চারাইজ করবে।
জীবনধারা পরিবর্তন
সামান্য কিছু কাজ যা তোমার ত্বকের বুস্ট আপ করতে সাহায্য করবে। এই গুলো হলোঃ
-পর্যাপ্ত ঘুম। নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে ঘুম তোমাকে ফ্ললেস স্কিন পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। তুমি যখন ঘুমাও, তোমার কোষগুলো দিনে উৎপাদিত টক্সিনগুলোকে বের করে দিতে সক্ষম হয় এবং সাথে এটা নিশ্চিত করে যে তুমি একটি সতেজ এবং মসৃণ ত্বক নিয়ে জেগে উঠছো। বিশেষজ্ঞরা তাই সর্বোত্তম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের পরামর্শ দেন।
-ত্বককে সুন্দর দেখাতে আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ কাজ হলো সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। অন্যান্য তরল ছাড়াও সারাদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সঠিক হাইড্রেশন অপরিহার্য।
-যে কোন ধরনের একটিভিটিস তোমাকে প্রাণচাঞ্চল্য রাখতে সাহায্য করবে। সামগ্রিক সুস্থতা বজার রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
কথায় আছে, তোমার স্কিনকেয়ার রুটিন হল একটি ব্যাঙ্ক একাউন্টের মতো। বিজ্ঞতার সাথে এতে বিনিয়োগ করো তাহলেই এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল পরিলক্ষিত করতে পারবে।
-ছবি সংগৃহীত