বলছি আমাদের নানী-দাদীদের সময়কার কথা। আট-দশ বছর বয়সে বিয়ে, ১২-১৪বছর বয়সের মধ্যে কোলে সন্তান আর ত্রিশ না পেরুতেই নানী-দাদী! সে সময় নিয়ম করে ফি বছর গর্ভবতী হতেন তারা। অজানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ‘বংশের বাতি’ পৃথিবীতে আনার তাগিদের কারণে প্রত্যেক বছর সন্তান নেয়া ছিলো একরকম স্বাভাবিক ঘটনা।
এরপর সময় বদলালো। সরকার এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসায় সচেতন হলাম আমরা। এলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিপুল সহামার। ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই শ্লোগান থেকে আমরা চলে এলাম ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’-এই বিশ্বাসে। যে কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি বোধহয় এখন আর আমাদের মূল চিন্তার জায়গা নয়। মূল বিষয় দাঁড়াচ্ছে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সেটি। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি।
বিশ্বায়নের এই কালে জন্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষিত অনেক পদ্ধতি আজকাল বাজারে সয়লাভ। অথচ আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো নারী কেন্দ্রিক। অথচ পুরুষসঙ্গীটিও জন্মনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর এসব পদ্ধতি নারীর প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর। এতে নানা রকম শারীরিক ঝুঁকি থেকে নারী রেহাই পেতে পারে। অথচ কেবল পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্ম অহমের কারণে অনেক পুরুষই সে পথে হাটেন না। আমরা মনে করি সময় এসেছে পরিবর্তিত হবার। সংসারের অন্যান্য কজের মতো জন্মনিয়ন্ত্রণেরও স্বামী-স্ত্রী রাখতে পারে সমান অংশগ্রহণ।
আজকাল প্রচার মিডিয়া থেকে শুরু করে মাঠে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যলয়ের দুয়ারে দুয়ারে দেখি আইপিল নিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় হয়তো নেই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ার আইপিল ব্যবহার হচ্ছে সেটি নিয়ে সচেতন হবার দরকার অবশ্যই আছে। পরিসংখ্যান বলছে, অরক্ষিত সঙ্গমের পর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল এখন বেশ ভালো মাত্রায় ভোক্তাপ্রিয়তা পেয়েছে। সব থেকে বেশি ক্রেতা মেয়েরা, যাদের বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে। গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই এই পিল সমান জনপ্রিয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে যে কেউ এই পিল সংগ্রহ করতে পারে। অথচ এই ওষধ বহু ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও এই মেয়েদের সচেতন করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ গর্ভপাত করানো হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ করানো হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় পুরোটাই হয় উন্নয়নশীল দেশে। এর ফলে অন্তত ৭৮ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং আরও বিপুলসংখ্যক নারী স্থায়ী কিছু না কিছু সমস্যা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে বাধ্য হয়।
আমি বলব এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘সেক্স এডুকেশন’। জরুরি জন্মনিরোধক পিলের ওপর ভরসা করে অবাধ সঙ্গমের আনন্দে গা ভাসানোর আগে একটু ধৈর্য ধরে অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জেনে রাখা অবশ্যই দরকার, এই পিল গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে। তবে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস সি-জাতীয় ভয়ংকর রোগগুলোর আশঙ্কার কথা মনে রাখতে হবে সচেতন ভাবে!
সবার জন্য শুভকামনা।
লেখা : সাবিনা ইয়াসমীন
আরও লেখা :
প্রথম সেক্সের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট- ১
সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-২
সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-৩
রোদসী/আরএস