দৌড়
তন্ময় সিকদার
তাদের নরম চোখের পাতায়
এই শহরের বুকের খাতায়
দৃষ্টিগুলো থমকে আছে ।
পকেট ফোনে রিংটোনে
হাতের আঁচড় টাচস্ক্রিনে
মুখবইয়ের ছবির মনে
অনুভূতি আটকে গেছে ।
হাতের মুঠোয় এই দুনিয়া
তবু নাকি সবাই একা
রাজপথে তাই শুধুই হাটা
ঘাড় মুড়িয়ে তাই দেখছে না সে ।
এখন সবাই কাঁকের মত
ডাস্টবিনে জমা নোংরা যত
করছে শুধু কেবল কা কা
অন্তরে তাই সবার ফাঁকা ।
বাতসে যেন উড়েছে টাকা
হাত মেলে শুধু ধরতে হবে
করতে হবে গাড়ি বাড়ি
তাই টাকা চাই কাড়ি কাড়ি ।
দৌড় শুধু তাই দৌড়ে চল
হিসাব করে কথা বল
না দৌড়ালে কি জীবন চলে
নাকি এই দৌড়ানোকেই জীবন বলে ?
অযাচিত ভালবাসা
তন্ময় সিকদার
তুমি তো নির্বাসিত জোৎস্নার মত ,
শুধু উদ্যম আকশে আলো ছড়িয়ে দাও ।
তোমাকে অনুভব করা যায় কিন্তু স্পর্শ করতে পারি কই ?
তুমি গাড় অন্ধকার পরে চাঁদের আলোর বেদনার মত
ক্ষত সারাতে তৈরি করে দাও আরেক ক্ষত ।
তুমি অযাচিত আক্ষেপ, যেন তোমাকে ভালবাসাই অপরাধ
তুমি চাঁদের বিকিরণের সেই কণা
যা ছিদ্র করে ঢুকে যায় বুকের বা পাশে ।
তুমি শুক্লা পক্ষের উন্মত্ত নর্তকী
উত্তাল নৃত্যে বিভোর কর সমস্ত রাত্রি,
আর ভোর হতেই নির্জন বৈরাগ্য নিয়ে হয়ে যাও নিরুদ্দেশ ।
তুমি কোন ছলনা নও ,তারপরও আমি প্রতারিত
তুমি কোন মরীচিকা নও তারপরও আমি অযাচিত
জানি তুমি সূর্যের আলোর অন্য প্রকাশ
তবু কেন ভালোবেসে ফেলি তোমায়
সির্দ্ধাতের ন্যায় সর্বস্ব ত্যাগের মোহের মত ।
আত্মশুদ্ধির বৃষ্টি
তন্ময় সিকদার
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
অনুভূতির অনুর্বর মরুভূমিতে
যেখানে উত্তপ্ত বালুর মত বসবাস করে হিংসা।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
সেই সেচ্ছা ব্যাথার কষ্টে যা অঙ্কুরিত হয়
তীব্র পরশ্রীকাতরতায়।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
অযাচিত চাই চাই স্বভাবে,
শুধু না পাওয়ার আক্ষেপে ।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
প্রচন্ড ঘৃণার চৌচালে
যেখানে সামান্য সহানুভূতিও জন্মায় না ।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
মনের সেই প্রান্তে যেখানে
সহস্র ক্রোশ ভুমি শুধু আক্রোশে ভরা ।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
মস্তিষ্কের সেই কোষে
যেখানে অনুভূতি কেবলই
লালসায় নিম্মজিত এক নিকৃষ্ট অন্ধকার ।
এক পশলা বৃষ্টি নামুক
অনুভুতির বিরান চত্বরে ।
অঙ্কুরিত হক ভালবাসা,
ভালবাসার কমল পুষ্পের সুবাস
প্লাবিত করুক অনুভূতির
অবরুদ্ধ মরুভূমিকে,
ভরিয়ে তুলুক সন্তুষ্টি আর প্রশান্তির
শীতল কোমলতায় সকল মনের অফুরন্ত ভূমিকে।
প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গ
তন্ময় সিকদার
আমি আর আমারা কিই বা করতে পারি
পৃথিবীর এই রংচটা মঞ্চে,
ন্যায় বিহীন বার বার অন্যায় এর আগ্রাসনে।
পৃথিবীর বয়স হয়েছে যত
সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে তত ,
তবে কেন এখনও রুঢ় আবদ্ধ শেকল হয়ে আটকে থাকে অন্যায় ।
তবে কেন এখনো দেশে দেশে অপরাধী থাকে বিচারহীন,
দোর্দন্ড প্রতাপে শাসন করে স্বৈরাচারী ।
তবে কেন ক্ষুধা বর্তমান থাকা শর্তেও কিনতে হয় মেশিনগান
তৈরি করতে হয় ফাইটার প্লেন আণবিক মরনাস্ত্র ।
আমি তো দেখি চোখের পলকেই বার বার ফিরে আসে মধ্যযুগীয় বর্বরতা,
ধর্ষণ ,নিপীড়ন , সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা , খুন রাহাজানি বেঁচে ওঠে থেকে থেকে।
চলে এক জাতি দ্বারা অন্যজাতিকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তাড়া
গনহত্যা , নারকীয় তান্ডব আর নির্মম আর্তনাদে পৈচাশিক উল্লাস ।
চলে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন
মুক্ত বাণিজ্যের নামে অর্থনৈতিক আগ্রাসন ।
সম্পদের পাহাড় জমায় ধনিক শ্রেণী
বাঁচতে হয় সেই বুর্জুয়া আর ফ্যাসিবাদীয় শাসন অনুশাসনে ।
তারপর ও এই পৃথিবীতে বার বার গর্জে ওঠে প্রতিবাদ,
ন্যায়ের মশালে লাগে আগুন
চলে সংগ্রাম , হয় দাবানল
শক্তি হয়ে প্রবল আঘাত করে অন্যায় কে ।
আর কোন একদিন সেই প্রতিবাদের ফসল
একটি স্নিগ্ধ গোলাপ হয়ে ফোটে
সত্য , ন্যায় আর মানবিকতার নির্মল বাগানে ।
আমি বা আমার আর কিই বা করতে পারি
হ্যাঁ ভাবতে পারি ,ভাবাতে পারি
গর্জে উঠতে পারি ওই প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গে
মশালের আগুন হয়ে ।
তুমুল করাঘাতে আঘাত করতে পারি ওই অন্যায় এর
হিমালয়ে বারং বার ।