কাছে-দূরে হানিমুনে…

করেছে Shaila Hasan

বিয়ে মানেই নানা আয়োজন, হাজারটা আনুষ্ঠানিকতা, এটা-ওটা আরও কত-কী! এসব ঝক্কি-ঝামেলা চুকিয়ে একটু নিরিবিলিতে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য আর নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা পোক্ত করে নিতে নবদম্পতি বেরিয়ে পড়ে মধুচন্দ্রিমায় বা হানিমুনে। আর এইসব আয়োজন নিয়েই লিখেছেন সুমন্ত গুপ্ত।

অনেক কিছুর মতোই সদ্য বিবাহিত দম্পতিদের বেড়াতে যাওয়ার এই সংস্কৃতি এ দেশে আসে ব্রিটিশদের হাত ধরে। ১৯ শতকের শেষভাগে ভারতীয় উপমহাদেশের হানিমুনের প্রচলন হলেও দীর্ঘদিন এটি ছিল আমাদের এলিট শ্রেণির মুঠোবন্দি। যুগের হাওয়া সেই কপাট ভেঙে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে এই রীতিকে। মধুচন্দ্রিমা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন বিয়ে-পরবর্তী গোছানো জীবনের অনুষঙ্গ। আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে দু-চারটা দিন কোথায় কাটাবেন, দেশে না বিদেশে? আমাদের এই সুজলা-সুফলা, শ্যামল-সুন্দর বাংলাদেশেই রয়েছে অনেক অনেক সুন্দর জায়গা। দেশের ভেতর যদি ঘুরতে যেতে চান, তাহলে মনস্থির করে ফেলুন ঠিক কোন ধরনের জায়গায় যেতে চান। যদি পাহাড় পছন্দ হয়, তাহলে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সিলেটের সবুজে ঘেরা পাহাড়গুলো; সমুদ্র চান, তাহলে কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও সেন্টমার্টিন। আর যদি চান জঙ্গল, তাহলে সুন্দরবন, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়াসহ দেশের গোটা বিশেক জঙ্গল। এ ছাড়া যেতে পারেন ময়মনসিংহের বিরিশিরি, বান্দরবানের বগা লেকের সিয়াম দিদিমণির পান্থশালা বা মিলনছড়ির বিলাসী অতিথিশালায়। রাঙামাটির নগর দর্শন না করে পাবলাখালীর জঙ্গল। ভোলার শেষপ্রান্তের মনপুরা দ্বীপ বা ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। কিংবা নিঝুম দ্বীপও খারাপ হয় না মধুচন্দ্রিমার জন্য।

ঝিনুক ফোটা সাগরবেলায়

মধুচন্দ্রিমায় গন্তব্য পছন্দের এক্কেবারে ওপরে থাকে সমুদ্র। তা দেশেই হোক বা দেশের বাইরে। আর এ ব্যাপারে আমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে এগিয়ে। কারণ, আমাদেরই আছে এ ধরিত্রীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ভিড় এড়িয়ে একটু নিরিবিলিতে যারা অপূর্ব সুন্দর এ সৈকতে ঘুরতে চান, তাদের জন্য ঋজু খাল ঘেঁষে গড়ে ওঠা মারমেইড ইকো রিসোর্ট পারফেক্ট। পাশেই ইনানি বিচ, টেকনাফের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ইসলামগঞ্জ-শাপলাপুর গ্রামের অনিন্দ্যসুন্দর সৈকত। ইনানি পেরিয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ যাওয়ার পথের সি বিচগুলো এখনো বাণিজ্যিক হয়ে ওঠেনি। নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু সাবধান থাকলেই সমুদ্র আর বালিয়াড়ির দুটোই বেশ প্রাকৃতিকভাবে উপভোগ করা যায়। টেকনাফ পেরিয়ে নারকেল জিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিন দ্বীপও হতে পারে আপনার মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য। সেন্টমার্টিনের যাত্রায় আপনাকে সঙ্গ দেবে ঝাঁক ঝাঁক গাঙচিল। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটিতে নারকেলগাছের আধিপত্যের কারণে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। পানির স্বচ্ছতায় সাগরতলার প্রবাল আর শৈবালগুচ্ছ আপনাদের মুগ্ধ করবেই। সেন্টমার্টিনের জেটির উত্তর প্রান্তে কিছু রিসোর্ট ও হোটেল গড়ে উঠেছে, সেগুলোর যে কোনোটিতে উঠতে পারেন।

মেঘ-পাহাড়ের মিতালি

পাহাড় যাকে একবার ডাকে, সে বারবার পাহাড়ে ছুটে যায়- কথাটা স্যার এডমন্ড হিলারির। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির পাহাড়গুলো আকাশছোঁয়া না হলেও মেঘছোঁয়া। শীতে উপত্যকায় জমে থাকা কুয়াশা আর তার ওপর সূর্যোদয় দেখার অনুভূতি অতুলনীয়। বান্দরবান থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসা যায় নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির। একটু এগোলেই থানচির তিন্দু, নাফাখুম, অমিয়াখুম, আলীকদম। বান্দরবান শহরের পাশের সাঙ্গু নদে নৌকা নিয়ে দিন পার করে দেওয়া যায়। কটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন বগা লেকের ‘বম’ অথবা ‘মুরং’ পাড়ায়। পাহাড়ের ওপরের লেকের ধারে আদিবাসীদের আতিথেয়তা মন্দ লাগবে না।

খাগড়াছড়িতে আলুটিলা, রিসাং ঝরনা, দেবতাপুকুর, নিউজিল্যান্ডপাড়ায় তো যাবেনই। একটু এগিয়ে দীঘিনালা পেরোলেই দেশের কমলার আঁধার বলে খ্যাত ফ্রুটসভ্যালি রাঙামাটির ‘সাজেক’ উপত্যকা। বেশ কটা ভালোমানের রিসোর্ট তৈরি হয়েছে সেখানে। রাঙামাটিও এখান থেকে কাছাকাছি দূরত্বে। আশপাশে আরও আছে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, কর্ণফুলী পেপার মিল ও কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। রাঙামাটি শহরে এসে কাপ্তাই আর কর্ণফুলীর শীতকালীন মন্থর স্রোতে ভাসাতে পারেন নৌকায়। শহর থেকে শুভলং ঝরনায় যাওয়া যায় নৌপথে। চারদিকে পাহাড়, নৌকায় করে স্বচ্ছ পানির ওপর দিয়ে ছুটে চলা। মাঝেমধ্যে দু-একটি বক ও নাম না জানা পাখির ওড়াউড়ি। কখনো দেখবেন লেকের পানিতে ঝপ করে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে পার হচ্ছে গুইসাপ। দুধারে উঁচু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে নৌকা চলার সময় দূর পাহাড় থেকে আদিবাসী গ্রামগুলোকে ছবির মতো মনে হবে। সঙ্গে বোনাস মনোরম পরিবেশ ও নির্জনে সঙ্গীসহ আপনি। মধুচন্দ্রিমার কল্পনায় এমন জায়গাই তো মানানসই। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিÑ তিন জেলাতেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল। এছাড়া বান্দরবানে মিলনছড়ি রিসোর্ট, সেনাবাহিনীর নীলগিরি রিসোর্ট, সাকুরা রিসোর্টসহ আরও বেশকিছু ভালোমানের রিসোর্ট রয়েছে।

চায়ের দেশে

সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজারে ঘোরাঘুরির জন্য আদর্শ সময় বর্ষা হলেও শীতকাল এখানে উপভোগ্য। হালকা শীতে ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে শ্রীমঙ্গলের টি রিসোর্টের বারান্দায় প্রিয়জনকে নিয়ে বসে থাকা রোমান্টিক নিশ্চয়ই। যে সময়ই আসুন না কেন, চারদিকে সবুজের সমারোহে দৃষ্টি জুড়িয়ে যাবে। এছাড়া আছে মাধবুন্ড ঝরনা, জাফলং, জৈন্তা, খাসিয়াপল্লি। এ সময় সিলেটে এলে অন্যতম আকর্ষণ ভোলাগঞ্জ,  রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পানথুমাই, লক্ষণছড়া মিস করবেন না নিশ্চয়ই। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ টি-রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসোর্ট বুকিং দিতে হয় বেশ আগে। সেখানে ঠাঁই না মিললে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, মৌলভীবাজারে দুসাই রিসোর্ট, সিলেট লালাখালের পাশে নাজিমগড় রিসোর্ট, রাতারগুলের পাশে ইকো রিসোর্ট বনলতাসহ ভালো মানের আরও অনেক হোটেল-মোটেল। চাইলে থাকতে পারেন শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেস্টহাউসেও। বন বিভাগের পাশাপাশি নিসর্গ কটেজও আছে বেশকিছু।বর্ষাকাল সিলেটের হাওর আর বিলে ঘোরাঘুরির মূল সময় হলেও এ শীতে অতিথি পাখিদের সঙ্গে ভ্রমণে পাবেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

ম্যানগ্রোভ বনে

সুন্দরবন মধুচন্দ্রিমায় গন্তব্য হিসেবে মন্দ নয়। নিসর্গ উপভোগ, লঞ্চ থেকে নেমে নৌকায় সূর্যোদয় দেখা, কুমির, বানর, হরিণ, সাপ, হাজারো পাখি দেখার আনন্দই আলাদা। সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ আর বাগেরহাটের মোংলা এ জন্য আদর্শ। মোংলায় পর্যটনের পশুর হোটেলে রাত কাটিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন করমজল, হারবেরিয়ার মতো জায়গাগুলো। খুলনা-মোংলা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়; মোংলা থেকে কিছুদূর গেলে কচিখালী হয়ে যাওয়া যায় কটকা পর্যন্ত। আবার সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ দিয়ে যাওয়া যায় সুন্দরবনের অনেক গভীরে জামতলা পর্যন্ত। দূরের গন্তব্য কটকা আর হিরণ পয়েন্ট। সাতক্ষীরায় বর্ষা রিসোর্ট আর এনজিওগুলোর রেস্টহাউসে রাত কাটিয়ে গভীর অরণ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে। তবে এখানে বেড়াতে অবশ্যই কোনো ট্রাভেল এজেন্সির (ভ্রমণ সংস্থা) সঙ্গে যেতে হবে।

দেশের বাইরে হানিমুন

শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা এশিয়ার অন্যতম হানিমুন স্পট। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সমুদ্রসৈকত, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আপনাকে করবে মুগ্ধ। জীবনকে খুঁজে পাবেন নতুন করে। কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দর এই দেশটি থেকে।

থাইল্যান্ড

এশিয়ার মধ্যে বিশ্বসেরা হানিমুন স্পটের তালিকায় প্রথমেই আসে থাইল্যান্ডের নাম। এশিয়ার অন্যতম রোমান্টিক সমুদ্রসৈকত ‘পাতায়া’ থাইল্যান্ডে অবস্থিত। যেখানে রাতের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় আলোর ঝলকানি। তালে তালে চলে সংগীতের মূর্ছনা। পাতায়ায় আছে অসংখ্য কোরাল দ্বীপ। এর একটি দ্বীপ কোলহার্ন। চারদিকে অসীম জলরাশির মধ্য দিয়ে ছুটে চলে স্টুক্রবা ড্রাইভ, সার্ফিং এবং ফিশিং।

মালদ্বীপ

এশিয়ায় আরেকটি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। ছোট হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেক ওপরে দ্বীপটি। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক মালদ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। দেশটির উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম মিলে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার ছোট ছোট দ্বীপ। আর এই দ্বীপগুলোকে নিয়ে সৃষ্ট মালদ্বীপ।

মালয়েশিয়া

এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র মালয়েশিয়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। দেশজুড়ে রয়েছে বিস্তৃত পাহাড়। পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে আধুনিক শহর। না শীত না গরম চমৎকার একটা আবহাওয়া বিদ্যমান মালয়েশিয়ায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও প্রাচুর্যে ভরা শহর পেনাং। ‘প্রাচ্যের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত। পেনাং এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ। যেখানে অসংখ্য রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও সমুদ্রসৈকত রয়েছে। এশিয়ার একটি ছিমছাম গোছানো দেশ মালয়েশিয়া। প্রতিবছর অসংখ্য বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যান। এদের পছন্দের ভ্রমণ গন্তব্যের তালিকায় মালয়েশিয়ার নাম প্রথম তিনটি দেশের মধ্যেই থাকে। এখানে মাত্র একটিই ঋতু বর্ষা। তাই প্রায় প্রতিদিন কমবেশি বৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে পাহাড়ি রাস্তা আর বন-জঙ্গল। মালয়েশিয়া গিয়ে লাঙ্কাউই না গেলে হয়তো পুরো খরচই বৃথা। কুয়ালালামপুর থেকে ৪১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সমুদ্রসৈকত অঞ্চল আন্দামান সমুদ্রের ১০৪টি দ্বীপের সমষ্টি। ক্যাবল কার, ঝরনার ধনি, সমুদ্রের নিচ দিয়ে রাস্তা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ইত্যাদি রয়েছে এখানে। হানিমুনটা তাই এখানেই সেরে আসতে পারেন।

গোয়া

নবদম্পতিদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভারতের গোয়া অসাধারণ। এখানে রয়েছে অনেক প্রাচীন স্থাপনা। আরব সাগরের সৈকতে প্রিয়জনকে নিয়ে রোমান্টিক মুহূর্ত কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন গোয়া থেকে।

নৈনিতাল নবদম্পতিদের বেড়ানোর জন্য সেরা এক স্থান। পর্বতের জন্য বিখ্যাত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সব সময় মিশে থাকে একটা প্রেমের গন্ধ। নৈনিতাল ঠান্ডা জলের লেক, কেনাকাটার জন্য জমজমাট বাজার, হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটতে নির্জন পাহাড়ি রাস্তা, আর কী চাই?

বলে রাখা ভালো… 

বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমার বিশেষ কয়েকটি দিন স্মরণীয় করে রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন সব দম্পতিই। তবে পরিকল্পনা তো আর বিয়ের পরের জন্য ফেলে রাখলে চলে না। প্রথম কারণ অবশ্যই ছুটি সীমিত। অফিস ও সংসার জীবনে পুরোপুরি সময় দেওয়ার আগে দুজনে একান্তে বেরিয়ে আসা চাই-ই। বিয়ের প্রস্তুতিতে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, হানিমুন প্ল্যানিংটা দুজনে মিলে করলেই ভালো। ছক কষে নিন আপনার হানিমুন পরিকল্পনা। হানিমুন প্ল্যান করার প্রথম শর্তই হলো মনের কথা শোনা। আপনার পাহাড় ভালো লাগে, তাই ধুম করে পাহাড়ে হানিমুন ঠিক করে নিলেন, এমনটা হলে চলবে না। তার চেয়ে দুজনের মনের কথায় সায় দিন। বেটার হাফের কাছে মতামত নিন।কোথায় যাওয়া যায়। দুজনের পছন্দ যদি মিলে যায়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আপনি রিল্যাক্সিং হলিডের পক্ষপাতী, কিন্তু আপনার সঙ্গীর পছন্দ অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর, তাই এমন সমস্যা হলে দুজনে মিলে ভালোমতো বুঝে প্ল্যান করুন। তবে এ ক্ষেত্রে নিজের মতামত জোর করে চাপিয়ে দিলে কিন্তু সারাজীবন কথা শুনে যেতে হবে। ইন্টারনেট ঘেঁটে অজানা জায়গায় সারপ্রাইজ ট্রিপে না যাওয়াই ভালো। জায়গাটা খুব পছন্দ হলেও আগে বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্টের কাছ থেকে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে তারপর যান। যদি একটু অন্য ধরনের হানিমুনের প্ল্যান করতে চান, তাহলে ক্রুজ খুব ভালো অপশন। নানা ধরনের বাজেটে ফিট করে যাওয়া ক্রুজ রয়েছে। ক্রুজে বেড়াতে গেলে জায়গা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আরাম-বিলাসের প্রচুর সুযোগও থাকে। এ ছাড়া জঙ্গল, পাহাড় বা সমুদ্রের কাছাকাছি রিসোর্টেও আরাম এবং অ্যাডভেঞ্চারের অনেক সুযোগ পাবেন। স্পা, সুইমিংপুল, বোর্ড গেমসের সঙ্গে সঙ্গে মাউন্টেন হাইকিং, বিচ অ্যাকটিভিটিজ বা সাফারিও এনজয় করতে পারেন। আর যা-ই হোক, মধুর স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যামেরা নিয়ে যেতে কখনো ভুলবেন না। জায়গা যখন ঠিক, তখন টুক করে ছকে ফেলুন হানিমুন বাজেট। হানিমুনের জন্য যেখানে যাবেন, সেই জায়গা সম্পর্কে একটু জেনে নিন। জেনে নিন দেশে এবং দেশের বাইরে নানা ধরনের হানিমুন প্যাকেজ সম্পর্কে। দেশের সীমানা পেরিয়ে যদি যেতে চান হানিমুনে, তাহলে প্রথমেই চেক করে নিন দুজনের পাসপোর্ট আপডেট আছে কি না। তারপরই কেটে নিন পছন্দসই এয়ারলাইনসের টিকিট। হোটেল বুকিং টু টিকিট কেনা শেষ। লিস্ট বানিয়ে নিন কী কী নেবেন। কোন স্যুটকেস নিয়ে যাবেন, হানিমুনের জন্য কী কেনার আছে তা কিনুন। লাগেজ হতে হবে হালকা। সঙ্গে নেওয়ার জন্য পোশাক-আশাক আর দরকারি জিনিসের স্মার্ট একটা তালিকা করুন। কত দিন থাকবেন, কী কী করবেন, হানিমুন ডেস্টিনেশনের আবহাওয়া হিসেবে জামাকাপড়, জুতা এসবের তালিকা বানান। সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু ওষুধ নিতে ভুলবেন না।  ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে সবকিছু আরেকবার ঝালাই করে নিন। হোটেলগুলোর ঠিকানা, যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার কারও কন্ট্যাক্ট নম্বর এসব ফোনবুক ছাড়াও ডায়েরিতে আলাদাভাবে লিখে রাখুন। ব্যাংক এবং এয়ারলাইনসের যাবতীয় কাজ সেরে ফেলুন। দেশের কোনো লোকেশন হলে আর সেটা যদি বাসে অথবা ট্রেনে যাওয়া হয়, তবে টিকিট করে ফেলুন। শেষ সময়ের কিছু কেনাকাটা দরকার হলে করে নিন। আর মনে রাখবেন, হানিমুন যেন ক্লান্তিকরভাবে শেষ না হয়। যথাসম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার ঘড়ির সঙ্গে চেষ্টা করবেন ঘুমের সময় মিলিয়ে নিতে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

18 − 14 =