আমাদের ত্বকের রঙের মতোই, ঠোঁটের রঙ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ঠোঁটের রঙ বা অবস্থার পরিবর্তন আমাদের নির্দেশ করতে পারে যে ঠোঁটের আরও যত্নের প্রয়োজন। তোমার ঠোঁট যদি কিছুটা কালচে হয়েই যায়, চিন্তার কোন কারণ নেই। ঘরোয়া এমন অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে তুমি এর স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারবে। আর এইসব কিছু নিয়ে আইডিয়া শেয়ার করেছেন শায়লা জাহান।
আমরা সকলেই গোলাপি ঠোঁট চাই যা দেখতে গোলাপী এবং স্পর্শে নরম মনে হয়, তাই না? আসলেই কি আমাদের সকলের ঠোঁট এমন কি? প্রায় অধিকাংশেরই উত্তর আসবে না। আমরা শুধুমাত্র কালো, পিগমেন্টেড ঠোঁট আড়াল করতেই তা লিপস্টিকের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দিই। কিন্তু এই ভারী লিপস্টিকের স্তরগুলো ছাড়াই তোমার ঠোঁটের প্রাকৃতিকভাবে কি গোলাপী ভাব আনা কি সম্ভব? এর উত্তর, অবশ্যই সম্ভব। ভাবছো কীভাবে? এই সমস্যার পেছনে সমস্ত কারণ এবং সমাধান জানিয়ে দিচ্ছি। সবার আগে আমাদের জানতে হবে ঠোঁট কালচে হবার পেছনের কারণ কি? একে আমরা দু’ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি-
লাইফস্টাইল ইস্যু
হাইপারপিগমেন্টেশনের ফলে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে। এটি মেলানিনের আধিক্য দ্বারা সৃষ্ট একটি অবস্থা। ঠোঁটের হাইপারপিগমেন্টশনের কারণে হতে পারেঃ
– সূর্্যের অত্যধিক এক্সপোজার
– হাইড্রেশনের অভাব
– সিগারেট বা ধূম্রপান
– লিপস্টিক বা টুথপেস্টে (ফ্লোরাইড) উপস্থিত রাসায়নিকের এলার্জির কারণ
– বেশিমাত্রায় ক্যাফিন গ্রহণ
মেডিকেল ইস্যু
– রক্তস্বল্পতা, নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাব
– কেমোথেরাপি
– অত্যধিক ফ্লোরাইড ব্যবহার
কালচেভাব দূরীকরণের উপায়
ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করা
ঠোঁট যাতে সর্বদা ময়েশ্চারাইজ থাকে তার জন্য লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত উচ্চ এসপিএফ যুক্ত বাম, কালো ঠোঁট হালকা করতে সাহায্য করতে পারে। এই বামগুলো ঠোঁটকে আর্দ্র রাখে, এর রঙ আরও কালচে হতে বাধা দেয়।
সানব্লক ব্যবহার করা
ঘরের ভেতর বা বাহির, সবসময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরী। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিগুলোকে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে বাধা দেয়ার জন্য একে ঠোঁটেও ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।
এক্সফোলিয়েশন করা
ঠোঁটের রঙ হালকা করতে, এক্সফোলিয়েটর দিয়ে আলতো করে স্ক্রাব করতে পারো। ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করতে সামান্য মধু ও চিনি মিশিয়ে কিংবা লেবুর রস ও চিনি দিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে তা ঠোঁটে এপ্ল্যাই করতে পারো।
গ্লিসারিন দিয়ে ময়েশ্চারাইজ
গ্লিসারিন ঠোঁটের সূক্ষ্ম ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে, এটি নমনীয় এবং মসৃণ রাখে। লেবুর রসের সাথে একে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর করার পাশাপাশি ঠোঁটের রঙ হালকা করে।
প্রাকৃতিক প্রতিকার
- গবেষণা দেখায় যে, অ্যালোভেরা জেলে মেলানিন প্রতিরোধকারী উপাদান রয়েছে। ঠোঁটে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে তা শুকিয়ে ধুয়ে ফেললে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
- ঠোঁটে কয়েক ফোঁটা এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগাতে পারো। এটি হাইড্রেট করবে এবং গাঢ় রঙ হালকা করতে সাহায্য করবে।
- ২০১০ এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, হলুদ একটি মেলানিন ইনহিবিটর হিসেবে কাজ করতে পারে। দুধের সাথে কিছুটা হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে সেই পেস্ট ঠোঁটে লাগিয়ে রাখতে হবে। পরে ধুয়ে ফেলে তোমার প্রিয় ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নাও।
- শসা খাওয়ার পাশাপাশি এর রস লাগালে ঠোঁটের কালচে ভাব কমানো যায়। বিটরুট পেস্ট দিয়েও একই কাজ করা যায়। ধুয়ে ফেলার পর লিপবাম লাগিয়ে নাও।
পিগমেন্টেড ঠোঁট পরিস্থিতি বর্তমানে সারা বিশ্বে সাধারণ একটি সমস্যা। তবে একটু যত্ন ও মনোযোগ দিতে পারলে খুব সহজেই এগুলো প্রতিরোধ করা যায়। ঠোঁটের প্রসাধনী যেমন লিপস্টিক, লিপগ্লস বা এমনকি লিপবাম নির্বাচন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। কারণ এসবের কিছু রাসায়নিক ঠোঁটের রঙ বদলে দিতে পারে।