বিশ্বের অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশও কঠিন সময় পার করছে। করোনাভাইরাস আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতিকে থামিয়ে দিতে চাইছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রেখে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে ই-কমার্সের বিকল্প নেই বলে মনে করেন আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের ডিরেক্টর এবং অলেশামার্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাদিয়া চৌধুরী। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ডিজিটাল উন্নয়ন নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে, সেসব কথার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উঠে এলো রোদসীর ডিজিটাল সংখ্যায়। সাক্ষাৎকারে- সুরাইয়া নাজনীন
রোদসী – বাংলাদেশে বর্তমানে ই-কমার্স সাইটগুলোর উপযোগিতা কেমন?
সাদিয়া চৌধুরী – বিশ্বের অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। করোনাভাইরাস আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। দেশের অর্থনীতিসহ সবকিছু স্বাভাবিক করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রেখে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে ই-কমার্সের মতো আর কোনো কার্যকর অপশন আমার মনে পড়ছে না।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ই-কমার্সের দিকে প্রলুব্ধ করলে এ সেক্টরের উপযোগিতা বেড়ে যাবে না। এরকম জরুরি পরিস্থিতিতে একদম সময়মতো মানসম্মত সেবা দিতে হবে। এখন অনেক মানুষ অনেক জরুরি সেবার জন্য ই-কমার্সের সহায়তা নেবে। তাই এখনই যদি আমরা কেউ কেউ সময়মতো মানসম্মত সেবা দিতে না পারি, কাস্টমারদের মনে আসতে পারে অনাস্থা। তখন ই-কমার্স হেরে যাবে, জনগণের আস্থাও হারাবে। এমনটা যেন কিছুতেই না হয়।
রোদসী – আলেশা মার্টের বিশেষত্ব কী?
সাদিয়া চৌধুরী – নিউ জেনারেশন ই-কমার্স সাইট আলেশা মার্ট কাস্টমাইজড সেবার মাধ্যমে ঝামেলাহীন দ্রুত অনলাইন কেনাকাটা নিশ্চিত করেছে। ই-কমার্স নিয়ে দেশের মানুষের মনে যে কিছুটা নেতিবাচকতা দেখা যায়, তা আলেশা মার্টই দূর করতে পারবে বলে আমি জোর আশাবাদী।
আপনি লক্ষ্য করবেন, আর সব ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মতো শুধুই ডিসকাউন্টের লোভ আমরা দেখাইনি। কাস্টমারদের জন্য বিশ্বস্ততার পাশাপাশি আমাদের এ উদ্যোগটি নিশ্চিত করেছে মানসম্মত পণ্য এবং দ্রুত ডেলিভারি।
দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। প্রায় ২২ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা এ প্ল্যাটফর্মের হয়ে কাজ করতে পারছে। আমরা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি।
করোনাকালে যখন কাজ হারানো ভয়াবহ গল্প চারপাশে, তখন আলেশা মার্ট ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরেছে আলেশা মার্ট। এ প্ল্যাটফর্মে ৫০ হাজার মানুষ মানে কিন্তু ৫০ হাজার পরিবার। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আমাদের এ উদ্যোগটি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন। একটি কঠিন সময়ে এতগুলো মানুষের ভালোর জন্য কিছু করতে পারাটা দিন শেষে আমার মনে শান্তি এনে দেয়।
রোদসী- গ্রহণযোগ্যতার জায়গা আলেশা মার্ট কতটুকু রাখতে পারবে বা পারছে বলে মনে করেন?
সাদিয়া চৌধুরী – আলেশা মার্ট তার কার্যক্রম শুরু করেছে মাত্র ছয় মাস আগে। এরকম উদ্যোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী গ্রাহক আর বিক্রেতা, সবার সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। এটা ছাড়া এমন উদ্যোগ দীর্ঘসময় টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। আমাদের এ উদ্যোগের মাঝেই আমাদের সম্মানিত গ্রাহক আর বিক্রেতাদের মনে আস্থা জন্মাতে পেরেছে। এখন আমাদের কাজ হবে সফলভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আস্থা টিকিয়ে রাখা।
গ্রাহক ও বিক্রেতা জানে যে, তাদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্বপালনের পাশাপাশি আলেশা মার্ট ব্যবসা করতে চায়। সেই ভাবনা থেকেই করোনাকালে আলেশা মার্টের কাস্টমারদের জন্য আসছে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা। রেগুলার ও আইসিইউ সম্বলিত ৬টি অ্যাম্বুলেন্সের এ সেবায় আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সবসময় ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। আমাদের কাস্টমার ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, সিনিয়র সিটিজেনস এবং যেকোনো জরুরি সেবাদানকারি সংস্থা শর্তসাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবাটি পেতে যাচ্ছেন।
রোদসী- আপনাদের নতুন একটি প্রজেক্ট ‘ইনস্ট্যান্ট স্যালারিজ’। এটা নতুন ও কার্যকরী। এ সম্পর্কে বলুন।
সাদিয়া চৌধুরী- আলেশা হোল্ডিংসের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইনস্ট্যান্ট স্যালারিজ’। মূলত সমাজের কম সুবিধাপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের কথা মাথায় রেখে আমরা এটি করেছি। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের এমপ্লয়িদেরকে সময়মতো স্যালারি দিয়ে উঠতে পারছে না। নানা কারণে এ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। এরকম সময় পার করতে গিয়ে ‘ইনস্ট্যান্ট স্যালারিজ’ শুরু করার কথা আমাদের মাথায় আসে। আমরা এ পরিস্থিতি সামলাতে পারি, যদি সবার হাতে তাদের সুবিধামতো সময়ে টাকা পৌঁছে দেয়া যায়। আমাদের আরেকটি উদ্যোগ ‘আলেশা সলিউশনসের’ ডেভেলপ করা এ সার্ভিস থেকে মাসের প্রথমেই নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি’র বিনিময় টাকা তোলা যাবে। ফলে মাসের শুরুতেই সবাই তাদের মাসের বড় খরচগুলো সামলে নিতে পারবেন। সম্পূর্ণ সুদমুক্ত এ ঋণসুবিধা ব্যবহার করে দেশের মানুষ তাদের জীবন টেনশনমুক্ত করতে পারবেন।
‘আলেশা সলিউশনস’ আরও গণমুখী কাজের মাধ্যমে দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিবাচক ছাপ ফেলতে আগ্রহী। এর মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি, অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে আমরা গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা আমাদের কাস্টমারকে শুধুমাত্র সবচেয়ে আধুনিক সেবা দিয়েই থামতে চাচ্ছি না। বরং পরবর্তীতে সেবার ব্যবহারযোগ্যতাকে সর্বাধুনিক আর চলমান রাখা, আইটি ওয়ার্ল্ডে কাস্টমারকে তার চাহিদা অনুযায়ী দৃশ্যমান রাখা, সব মিলিয়ে কাস্টমারকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট রাখতে বদ্ধপরিকর আলেশা সলিউশনস।
এক ঝাঁক মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার আমাদের কাস্টমারদেরকে প্রায় সব ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা দিচ্ছেন। ‘আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের’ এ ইঞ্জিনিয়ারগণ জ্ঞানে, দক্ষতায় একদম হালনাগাদ। ঠিক এ মুহুর্তে তারা মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় স্কুল আর রাস্তা তৈরির কাজ করছেন। তাদের সম্পর্কেও বিস্তারিত আমাদের ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারবেন।
আমাদের আসন্ন আরেকটি উদ্যোগ ‘আলেশা ফার্মেসি’ মানসম্মত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দেবে। দেশের সিনিয়র সিটিজেনগণ এখান থেকে ওষুধ কিনতে পারবেন ফ্রি হোম ডেলিভারিতে। দেশের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদেরকে আমরা ১০ শতাংশ ছাড়ে সেবা দেব। দ্রুতই দেশের ৬৪ জেলায় এ সার্ভিস আমরা নিয়ে যাব।
রোদসী- দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখন অনলাইননির্ভর। এটা ডিজিটাল উন্নয়নের জন্য কি ইতিবাচক দিক?
সাদিয়া চৌধুরী- ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে গণমানুষের জন্য যে সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তা পূর্ণতা পাবে ডিজিটাল বাংলাদেশে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর একটি উন্নত দেশ গড়ার কাজ চলমান রেখেছেন। একটি সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এ যাত্রা তাঁর একার বলে মনে করি না। দেশের একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি আমারও কিছু দায়িত্ব আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরাও ভূমিকা রাখছি। আলেশা মার্টের মাধ্যমে দেশের যেকোনো অঞ্চলের মানুষ এখন যেকোনো পণ্য কিনতে পারবে। যেকোনো অঞ্চলের কাস্টমারের কাছেই আলেশা মার্ট পণ্য ডেলিভারি করে থাকে।
সরকারি-বেসরকারি সিংহভাগ কাজই ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এনে ফেলেছে বর্তমান সরকার। দেশের প্রতিটি মানুষকেই অনলাইনের সুবিধার আওতায় আনা অচিরেই হয়তো সম্পূর্ণ হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এ পথচলায় আমরাও আছি।
রোদসী- গ্রাহকের নানামুখী অভিযোগ থাকে, এগুলোকে কীভাবে দেখেন? আপনাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী?
সাদিয়া চৌধুরী- আসলে দেশের ই-কমার্স সেক্টরে আগে থেকে তৈরি হয়ে থাকা কিছু পরিস্থিতির কনসিকোয়েন্স আমাদেরকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এখানে আলেশা মার্টের কথাই বলবো আমি, দেরিতে পণ্য ডেলিভারি দেয়া এবং ভুল পণ্য ডেলিভারি দেয়া, এ দুটি অভিযোগের একটিও আমাদের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা পণ্য ডেলিভারি করি।
কাস্টমারদের যেকোনো অভিযোগ আমরা ইতিবাচকভাবে নিতে প্রস্তুত। আমাদের সিস্টেমে যদি এখনো কোনো ত্রুটি গাফিলতি থেকে থাকে, তা আমাদের চোখ এড়ালেও কাস্টমারদের চোখ কখনোই এড়াতে পারবে না। তাদের জন্য আলেশা মার্টের একটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার আছে। সেখানে তারা যেকোনো অনুসন্ধান, অভিযোগ ও পরামর্শ আমাদেরকে জানালে আমরা তা সাদরে গ্রহণ করি। আমাদের নিজেদেরকে ত্রুটিমুক্ত করে সবার সেরা হয়ে ওঠা সম্ভব তখনই, যখন কাস্টমারদের অভিযোগগুলোর সমাধান আমরা দিতে পারবো এবং এগুলোর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে পারবো।
অল্প সময়ের মধ্যে চমৎকার সাফল্য অর্জন করায় আলেশা মার্ট তার কাস্টমার ও সরবরাহকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আন্তরিক চেষ্টা আর নিষ্ঠার জন্য এ প্ল্যাটফর্ম তার কর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।
চ্যালেঞ্জের কথা যদি জানতে চান, আমি বলবো, এত অল্প সময়ে টিম আলেশামার্ট যে মান আর সাফল্য অর্জন করেছে তা ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্ল্যাটফর্ম খুব দ্রুত দেশিয় পণ্যের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ই-কমার্স হয়ে গড়ে উঠছে। আলেশা মার্ট থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কাস্টমারদের যে অভূতপূর্ব সাড়া, কোম্পানির প্রতি যে অবিচল বিশ্বাস, এটা আমরা কিছুতেই হারাতে চাই না।