আবার বেড়ে চলেছে করোনা। সেই ঘরবন্দী জীবন আবারও। তবে মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন। ঘরে থাকলেও দরকার মনের ভ্যাকসিন। যেহেতু পারলারে যাব কি যাব না এ নিয়ে সংকোচ। তবে কি সৌন্দর্যচর্চা হবে না? তবে হোক না ঘরই পারলার। দেখে নিই কীভাবে সম্ভব-
সারা দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময়টুকু পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু সময় তো রাখতেই হবে। কারণ, বৃষ্টির দিনগুলোতে ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়। তার ওপর ব্রণ ও র্যাশের সমস্যা তো আছেই।
অতিমারিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম আবার কয় দিন পরপর লকডাউন। এখন রূপচর্চার সামগ্রী কিনতে যাওয়াতেও আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। রূপচর্চার জন্য কিন্তু বাহারি জিনিসপত্রের প্রয়োজন নেই। বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া যায় ফেসপ্যাক। ঘরোয়া কিছু উপাদান নিয়মিত ব্যবহার করে পাওয়া যাবে উজ্জ্বল ত্বক।
মসৃণ ত্বকের জন্য-
একটি বাটিতে দুধের সর নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ বেসন দিতে হবে। এরপর এক চিমটি হলুদ দিতে হবে। তারপর সব উপাদান মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। মুখে লাগানোর আগে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে ভোলা যাবে না। মুখ ধুতে ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এরপর তোয়ালে দিয়ে মুছে, মুখ শুকিয়ে নিতে হবে।
এবার দুধের সর, হলুদ আর বেসনের পেস্ট চুলে রং লাগানোর ব্রাশ দিয়ে ভালো করে মুখে মেখে নাও। এ সময় চোখের চারপাশের অংশ বাদ রাখো। ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ভেজা রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলো। রাতে শুয়ে পড়ার আগে এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবে। এতে ত্বক হবে নরম ও উজ্জ্বল। সপ্তাহে দুই দিন এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবে।
মেনিকিউর ও পেডিকিউর ঘরেই
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি হাত ও পায়ের যত্ন না নিলে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না। অনেক সময় আমাদের হাত রুক্ষ হয়ে যায়, সাদা সাদা ছোপ পড়ে। পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। নিষ্প্রাণ হয়ে যায় নখগুলো। তাই আমাদের সবারই উচিত নিয়মিত নেওয়া।
উপাদান
একটি পাত্র বা বোল, গোলাপের পাপড়ি, মৃদু গরম পানি, গোলাপজল, লেবুর রস, শ্যাম্পু, পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, চিনি, তুলা, ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, একটি ছোট পরিষ্কার টাওয়েল, প্যাকের জন্য মুলতানি মাটি ও নেইলকাটার সেট।
যেভাবে করতে হবে
প্রথমে হাত ও পায়ের নখগুলো সাইজ করে কেটে নিতে হবে। একটি পাত্রে বা বোলে মৃদু গরম পানি নিতে হবে। এতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস, আধা চামচ শ্যাম্পু, গোলাপজল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এবার প্রথমে পা এবং পরে হাতগুলো ওই মিশ্রণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখবে ১০-১৫ মিনিট। কিছুক্ষণ পরপর পা ও হাতে মিশ্রণটি মেশাবে। ভেজানো অবস্থায় নেইল ব্রাশ দিয়ে নখগুলোকে ভালো করে ব্রাশ করতে হবে, যাতে নখের ওপর থাকা বাড়তি মৃত কোষগুলো চলে যায়।
এক টেবিল চামচ লেুবুর রস ও এক চা চামচ চিনি দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। তারপর ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। হাত ও পায়ের গোড়ালি ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজ হয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর টাওয়েল দিয়ে হাত ও পা মুছে ফেলতে হবে। এখন প্যাকের জন্য একটি ছোট পাত্রে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, এক টেবিল চামচ গোলাপজল ও এক চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং হাত ও পায়ে একটি নরম ব্রাশের সাহায্যে লাগাতে হবে। নখগুলোতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিতে হবে। এবার অপেক্ষা করতে হবে প্যাকটি শুকানো পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সবশেষে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। প্রতি সপ্তাহে এটি একবার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
রাতে মুখ পরিষ্কার
দিনের শেষই হলো ত্বকের যতœ নেওয়ার সেরা সময়। সুতরাং, অন্য কোনো কিছুর আগে তোমার ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কেন রাতে মুখ পরিষ্কার করে বিছানায় যাওয়া উচিত, তার কারণগুলো একবার দেখতে হবে। চোখের পাতাকে রক্ষা করে আমরা চোখের ওপর যে আইলাইনার লাগাই, তাতে এমন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা দীর্ঘ সময়ের জন্য চোখে রাখা ঠিক নয়। চোখে দীর্ঘক্ষণ মেকআপ রাখলে চোখ জ্বালা হতে পারে এবং চোখে ইনফেকশনও হতে পারে। তাই অবশ্যই রাতে শোয়ার আগে এগুলো ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর ত্বককে না চায়। আর সেটি যদি হয় মুখ, তাহলে আর কোনো কথাই নেই। কেননা ত্বকের মাধ্যমেই মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।
ত্বকের পুনর্জীবন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় রাতে ভালো ঘুম, আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ, রাতের বেলা ত্বক পুনরায় জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং মৃত ত্বকের কোষগুলো দূর হয়। এ জন্য ছয়-আট ঘণ্টা ভালোভাবে ঘুমের পর আমাদের ত্বক বেশ সতেজ হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি রাতে মুখ না ধুয়ে শুয়ে পড়া হয়, তাহলে ত্বকের নিরাময় প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়।
চাই প্রাকৃতিক উপাদানও
লেবু, মধু এবং দুধ
১ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ, ১ চা-চামচ লেবুর রস, ১ চা-চামচ মধু এবং ১/২ চা-চামচ বাদাম তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এটি ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর।
২. ওটমিল
ওটমিল এবং টমেটোর রস ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবার এটি ত্বকে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ওটমিল ত্বক এক্সফলিয়েট করে ত্বক পরিষ্কার করে থাকে।
৩. টক দই
১ টেবিল চামচ টক দই, ১ থেকে ২ চা-চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে, এবার এটি ত্বকের কালো স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফলতে হবে। এ ছাড়া শুধু টক দই ত্বকে ব্যবহারও করা যায়।
৪. চন্দনের পেস্ট
সমপরিমাণ লেবুর রস, টমেটোর রস, শসার রস এবং চন্দনের গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। পেস্টটি ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
লেখা : সুরাইয়া নাজনীন