সুরাইয়া নাজনীন
আলোহীন জীবনের কথা আমরা ভাবতেও পারি না। আলোর সঠিক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার আমাদের বাড়িকে নান্দনিক করে তোলে। বাড়ির প্রতিটি ঘরে আলোর ব্যবহারে চাই ভিন্নতা। তবেই আমাদের বাড়ির আলোর সাজ হয়ে উঠতে পারে অন্যের কাছে অনুকরণীয়।
বসার ঘর : অতিথি আপ্যায়নে সব সময়ই বসার ঘরটি পরিপাটি করে রাখতে হয়। আমাদের বসার ঘরের আলোকসজ্জাকে অবশ্যই হতে হবে আধুনিক ও সুন্দর। স্ট্যান্ডিং লাইট হলে সোফার ডান বা বাম পাশে লাইট রাখা যেতে পারে। ঝোলানো সুন্দর বাতি হলে তা মাঝে ঝুলিয়ে তার দুই বা চারপাশে সোফা রাখতে হবে। যদি কোনাকুনি করে বাতি রাখা হয়, তবে বসার ঘরটিকে দেখতে বড় দেখাবে। টিভি দেখার সময় অবশ্যই লাইট কমিয়ে নিতে হবে। অতি উজ্জ্বল আলোতে টিভি দেখলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শোবার ঘর : আমাদের দিনের শুরুটা এবং শেষটা হয় বেডরুমে। তাই এই রুমের সাজসজ্জা ও লাইটিং হবে আরামদায়ক, রোমান্টিক ও আধুনিক। বেডরুমের আকৃতি ও আসবাবপত্র বুঝে লাইটিং করুন। আসবাবপত্রে যাতে আলো বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বেডরুমে উঁচু লাইট ব্যবহার না করাই ভালো। আলো যাতে চোখে সরাসরি না পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখা ভালো। অনেক বেশি লাইটিং ঘুম বা আরামে বাধা হতে পারে।
শিশুর ঘর : বাসার ছোট্ট শিশুটির রুমটি হবে তার বয়স অনুযায়ী। সাধারণত আলো ঝলমলে রঙিন পরিবেশ বা”চারা পছন্দ করে। কার্টুনের মলাট দেওয়া নানা আকৃতির লাইট বাচ্চারা পছন্দ করবে। তবে খেয়াল রাখবে যাতে অতিরিক্ত না হয়ে যায়। বা”চার রুমের রং অনুযায়ী লাইট নির্বাচন করো। তার পড়ালেখার টেবিলের ওপর অবশ্যই একটি লাইট দেবে।
খাবার ঘর : খাবার ঘরের সিলিংয়ে উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করতে হবে। এতে ঘরটি বড় ও খোলামেলা লাগবে। খাবার ঘরের আকৃতি বুঝে বাতির সংখ্যা ঠিক করতে হবে। খাবার ঘরটি যদি ডিজাইন করতে চাও, তাহলে সিলিং ও লাইটের রঙে সামঞ্জস্য রাখতে পারো।
রান্নাঘর : রান্নাঘর একটি বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে সবার জন্য রান্না করা হয়। তাই রান্নাঘরের বাতির পরিমাণ হবে বুঝেশুনে। রান্নাঘরটি যদি ১০০ বর্গফুটের হয়, তাহলে সেখানে লাইটের সংখ্যা হবে ২টি, আর ২৫০ বর্গফুটের হলে হবে ৪টি। সবজি কাটার স্থানটি উজ্জ্বল হবে যাতে কাটাকুটিতে দেখার কোনো সমস্যা না হয়। চুলার ওপর অবশ্যই একটি বাতি রাখবে, যাতে রান্না করতে সুবিধা হয়।
বাথরুম : বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো হওয়াটা জরুরি। বেসিনের আয়নার ওপর লাইট প্লেসমেন্ট করো। টাইলসের রং হতে হবে হালকা। যেমন হালকা সবুজ বা হলুদ টাইলস হলে তাতে সাদা লাইট দিলে বাথরুমটি যতই ছোট হোক, তাকে বড় আর খোলামেলা লাগবে। প্রয়োজন আর রুচির সমন্বয় করে বাড়িটিকে আলোকিত করে তুলতে পারো।
করিডরে
করিডরের ক্যাবিনেটে একটি ঝুলন্ত বাতি লাগানো যেতে পারে। তাহলে ঘরের সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বারান্দায় বসার ব্যবস্থা থাকলে একটি বাতি লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। দেশীয় মোটিফের গোলাকার বা বলের মতো বাতি লাগানো যেতে পারে।
সাশ্রয়ী, দীর্ঘমেয়াদি এবং অল্প ওয়াটে তুলনামূলক বেশি আলো পাওয়া যায় বলে এখন ঘরে এলইডি লাইটের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এটি ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় না, তাই গরমের দিনের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। উষ্ণ ও শীতল দুই ধরনের এলইডি লাইটই পাওয়া যায়। সে কারণে গ্রীষ্ম ও শীত সারা বছরই এলইডি লাইট ব্যবহার করা যায়। ঘরভেদে আলোর প্রকৃতি আলাদা হওয়া ভালো। যেমন খাবারের ঘরে চাই উষ্ণ আলো, আবার শোবার ঘরে শীতল আলো মানানসই। মানবদেহের কর্মক্ষমতা ও প্রাণশক্তির ওপরও আলোর প্রভাব রয়েছে। নীলচে বা সাদাটে আলোয় মানুষের মস্তিষ্ক উজ্জীবিত হয় ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সে কারণেই পড়ার ঘরের জন্য সাদা বা শীতল আলো ভালো এবং ঘুমানোর জন্য হলদে বা উষ্ণ আলো সহায়ক।
কৌশলী হতে হয়
আমাদের ঘরে আলোর ব্যবহার একটা ঘরকে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে। ঘরে আলোর ব্যবহারে বেশ কৌশলী হতে হয়। বর্তমান সময়ে যেহেতু ফ্ল্যাট একটু ছোট হয়ে থাকে, তাই ঝাড়বাতির ব্যবহার কমে আসছে। ছিমছাম নকশা ও পরিষ্কার করার সুবিধার জন্য অনেকেই বর্তমানে ঝুলন্ত বাতি বেশি পছন্দ করছে। তাই শুধু বসার ঘর বা খাবার ঘরেই নয় প্যাসেজ, রান্নাঘর সব জায়গাতেই এই ঝুলন্ত বাতির ব্যবহার বেশি দেখা যা”েছ। আলো ও ছায়ার ওপর নির্ভর করে কিছু জায়গাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে সাজানো যেতে পারে। ঝুলন্ত বাতি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘরে কিছুটা নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ছবি: সংগৃহীত