অপরাহ উইনফ্রে একটি কথা বলেছেন, “তুমি তোমার জীবনের যত বেশি প্রশংসা এবং উদযাপন করবে, জীবনে উদযাপন করার মতো আরও বেশি কিছু আছে”। বেশিরভাগ মানুষের কাছে জীবনে উদযাপনের জন্য সবচেয়ে প্রতীক্ষার একটি দিন থাকে, আর তা হল তার জন্মদিন। কি শিশু, কি বুড়ো; সময়ের সাথে সাথে আনন্দের ছটা কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেলেও জন্মদিনের সেই আবেগ, উত্তেজনা কিছুটা হলেও থেকেই যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছো কি, জন্মদিনের সাথে পালিত যে রীতি রয়েছে, কোথা থেকে আবির্ভাব হলো তাদের? এই ব্যাপারে লিখেছেন শায়লা জাহান।
ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে, কেক কাটা; আর চারপাশে করতালি দিয়ে হ্যাপি বার্থডে গান গেয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো আমাদের কাছে একটি চিরাচরিত ও পরিচিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্মদিন কেক ও মোমবাতি ছাড়া যেন সম্পূর্নই হয়না এবং এই আচারটি এমন একটি জিনিস যা সারা বিশ্বে প্রচলিত। কেক কাটা ছাড়াও, জন্মদিনের কেকে মোমবাতি লাগানো রীতি প্রায় কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। ছোটবেলা থেকেই আমরা এই মোমবাতিটি নিভিয়ে তারপর কেক কাটতাম। আমরা কেন তা নিভিয়ে দিই এবং এর অর্থই বা কী? যদিও এই আচারের সঠিক উৎস এবং তাৎপর্য অজানা, তবে এর একাধিক তত্ত্ব রয়েছে যা এই ঐতিহ্যকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। আসো আমরা তা অনুসন্ধান করি।
জন্মদিনের কেকগুলোতে মোমবাতি রাখার ঐতিহ্য গ্রীকদের থেকে এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়। এই তত্ত্ব দাবী করে যে, প্রতি চান্দ্র মাসের ষষ্ঠ দিনে দেবী আর্টেমিসের জন্মকে সম্মান জানাতে তারা মোমবাতি ব্যবহার করতো। তাঁরা চাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বৃত্তাকার কেক বেক করত এবং প্রতিফলিত চাঁদের আলোকে উপস্থাপন করার জন্য তাতে মোমবাতি যুক্ত করা হত। এরপর সবাই মিলে প্রার্থনা করে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেয়া হত। পৌত্তলিকদের কাছ থেকে আরেকটি তত্ত্ব এসেছে, যারা বলেছিল যে জন্মদিনের মোমবাতি গুলোর একটি প্রতীকী শক্তি ছিল। পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্বাস করা হত যে খারাপ আত্মারা তাদের জন্মদিনে লোকেদের সাথে দেখা করে এবং জন্মদিনের ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য, মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল এবং তাকে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছিল যাতে সে মন্দ আত্মাদের থেকে রক্ষা পায়।
কেকের উপর মোমবাতি রাখা জার্মানির একটি বিখ্যাত ঐতিহ্যও ছিল। যেখানে ধর্মীয় কারণে, লোকেরা “জীবনের আলো” প্রতীক হিসেবে কেকের কেন্দ্রে একটি বড় মোমবাতি রেখে তার চারপাশে ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে সাজাত। কারো মতে, নিভে যাওয়া মোমবাতি থেকে নির্গত ধোঁয়া আকাশে আধিপত্যকারী দেবতাদের কাছে তাদের আন্তরিক ইচ্ছা এবং প্রার্থনা বহন করবে, অন্যরা বিশ্বাস করতো যে ধোঁয়া মন্দ প্রানীদের তাড়িয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, ১৮৮১ সালে সুইজারল্যান্ডে মোমবাতি নিভানোর ঐতিহ্যের একটি রেফারেন্সও নথিভুক্ত করা হয়েছিলো।
এই ঐতিহ্যের পেছনে যেই তত্ত্ব থাকুক না কেন, আধুনিক সময়ে এই রীতিকে আরও বেশি আকর্ষনীয় ও অর্থবহুল করা হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, জন্মদিন উদযাপনকারীকে অবশ্যই মোমবাতি নেভানোর আগে একটি নীরব শুভেচ্ছা জানাতে হবে। তারপর ফুঁ দিয়ে একসাথে মোমবাতি নেভাতে হবে। যদি একেবারেই সব বাতি নিভে যায় তবে মনে করা হয় যে, তার ইচ্ছা মঞ্জুর করা হবে এবং সেই ব্যক্তি সারা বছর সৌভাগ্য উপভোগ করবেন।