শায়লা জাহানঃ
শরীর সুস্থ ও ভালো রাখতে হাইড্রেটেড থাকা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই মনে করে পানিতে অতিরিক্ত উপাদান যোগ করলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বাড়ে। ফলাফল, যাকে ডিটক্স ওয়াটার বলা হয়। এই ডিটক্স ওয়াটার এর অনুমিত স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অনেক হাইপ রয়েছে। কী এই ডিটক্স ওয়াটার? এর গুণাগুণ কী? এইসব নিয়েই আজ আমরা জানবো।
অনেকেরই ধারণা ডিটক্স ওয়াটার শুধুমাত্র ওজন কমাতেই কাজ করে, এ ধারণা কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়। শরীর সুস্থ রাখতে এবং সঠিকভাবে ডিটক্সিন করতেই এই পানীয়ের কথা বলা হয়ে থাকে। ডিটক্স ড্রিংকগুলোতে সাধারণত ফল, শাকসবজি, ভেষজ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সাথে পানির কিছু সংমিশ্রণ থাকে যা শরীরের সিস্টেম থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো দূর করে শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে পরিচিত। প্রতিদিন আমরা পরিবেশগত দূষণকারী, কীটনাশক এবং কৃত্রিম রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকি। এগুলোর পাশাপাশি প্রচুর প্রক্রিয়াজাত খাবারও খেয়ে থাকি। ডিটক্স ড্রিংকগুলো এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকারক টক্সিনগুলোকে ফ্ল্যাশ করে সাহায্য করতে পারে যা গ্যাস থেকে শুরু করে মাথাব্যথা, ব্রণ এবং ক্লান্তি পর্যন্ত সমস্ত কিছুর দিকে পরিচালিত করে। শুধু তাই নয় এই পানীয় লিভার পরিষ্কার করার, পাচনতন্ত্রকে সাপোর্ট করার এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি করার অন্যতম সহজ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও ওজন কমাতে, শক্তি বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। তবে এই সুবিধাগুলো তখনই পাওয়া যাবে যখন সঠিক উপাদানগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে।
ডিটক্স ওয়াটার অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বেস্ট উপাদান কী কী?
ডিটক্স শব্দটি শুনলেই কিছু জটিল উপাদানগুলোর একটি জটিল সংমিশ্রণের কথাই মনে আসে। আদতে, ডিটক্স পানীয় তার চেয়ে অনেক সহজ। এর উপাদানগুলো সব কিছুই হাতের কাছেই পাওয়া যাবে, তাই এটি যেকোন সময়েই বাসায় চটজলদি বানিয়ে নেয়া যাবে। এর মূল উপাদানগুলো হল-
লেবু
লেবুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি মূল ভিটামিন, পুষ্টি এবং দ্রবনীয় ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হৃদরোগ, রক্তশূন্যতা, কিডনি, পাথর, হজমের সমস্যা এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
আদা
আদা হল ডিটক্স বেভারেজের আরেকটি স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু উপাদান। একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , আদার প্রধান বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ হল জিঞ্জেরল। এই পদার্থটি আদার অনেক ঔষধি গুণের জন দায়ী। রক্তে শর্করা কমাতে, কোলেস্টেরল কমাতে এবং বদহজমের চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার এড না করে আমরা ডিটক্স পানীয় উপাদানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে পারিনা। প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানকারী এই ভিনেগারে আছে প্রচুর পরিমানে ভিতামিন, খনিজ এবং এনজাইম যা অন্ত্রের জন্য ভাল ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ, পিএইচ ভারসাম্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা , স্বাস্থ্যকর হজম আরও অনেক কিছুকে সমর্থন করে।
পুদিনা
পেপারমিন্ট এবং স্পিয়ারমিন্ট সহ এক ডজনেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পুদিনা রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং পানীয়তে জনপ্রিয়। তোমার ডিটক্স পানীয়তে পুদিনা যোগ করলে তা আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফোলেটের মত অতিরিক্ত পুষ্টি যোগ করতে পারে।
তরমুজ
৯২% পানি দিয়ে তৈরি, তরমুজ যে কোনো ডিটক্স পানিয়তে যোগ করার জন্য একটি দূর্দান্ত কম-ক্যালোরি উপাদান। যেকোন পানীয়তে একটি হালকা, সতেজ মিষ্টি যোগ করার পাশাপাশি, রসালো তরমুজ তোমাকে হাইড্রেটেড থাকতে, ক্ষুধা নিবারণ করতে এবং হার্টের উন্নতিতেও সাহায্য করতে পারে। এটিতে ভিটামিন এ, সি, বি১, বি৫ এবং বি৬ এর পাশাপাশি পটাশিয়াম এবং ম্যাগ্নেসিয়াম রয়েছে-যা একটি সুস্থ শরীর এবং মনের চাবিকাঠি।
শসা
পানীয়ের জন্য শসা হল আরেকটি কম-ক্যালোরি, পুষ্টি এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ উপাদান। আশ্চর্যজনকভাবে শসাতে তরমুজের চেয়েও বেশি পানি থাকে। শসা ভিটামিন কে এবং ম্যাঙ্গানিজ সরবরাহ করে, সেইসাথে শরীরকে প্রোটিন এবং ফাইবার সরবরাহ করে। ফাইবার একটি ডিটক্সিফায়ার হিসেবে বিষেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শরীরের বর্জ্য ফ্ল্যাশ করার জন্য দায়ী। একটি সতেজ, সবুজ এবং সামান্য তিক্ত স্বাদের সাথে শসা ডিটক্স পানীয়ের রেসিপিতে একীভূত করার জন্য নিখুঁত উপাদান।
কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই এই পানীয় শরীরে ভালোই কাজে দেয়। এই পানিতে পুষ্টি পাওয়া যাবে কোন ধরনের ক্যালোরি যোগ হওয়া ছাড়াই। যে কোন সময়েই পান করা যায় এই পানীয়। তবে আদা, লেবু- এসবে যাদের গ্যাসের প্রবলেম হওয়ার সম্ভাবনা আছে তারা তা এড়িয়ে গেলেই ভালো হয়। এছাড়াও অন্যান্য কোন শারীরিক প্রবলেম থাকলে তা বিবেচনা করেই বুঝে উপাদান নির্বাচন করতে হবে।