জীবনে বদলে দিতে পারে যে অভ্যাস

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহানঃ

অভ্যাস এবং রুটিন থাকা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য দিক। তুমি একটি লক্ষ্য পূরণ করতে চাও, আরও উৎপাদনশীল হতে চাও বা আরও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে চাও; অভ্যাসগুলো হল সেই ছোট ছোট পরিবর্তনের সমন্বয় যা সময়ের পালাক্রমে উল্লেখযোগ্য ফলাফল যোগ করতে পারে।

‘সফল ব্যক্তিরা কেবল শীর্ষে চলে যান না। সেখানে পৌঁছানোর জন্য জিনিসগুলো ঘটানোর জন্য প্রতিদিন ফোকাসড অ্যাকশন, ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা এবং প্রচুর শক্তি প্রয়োজন’। আমেরিকান লেখক এবং উদ্যোক্তা জ্যাক ক্যানফিল্ড এর উক্তি দ্বারা বোঝা যায় একটি সুখী এবং আরও উৎপাদনশীল জীবনের জন্য কতিপয় অভ্যাস গড়ে তোলা কত প্রয়োজনীয়। আমরা যা কিছু ভাবি, বলি এবং করি তা বছরের পর বছর ধরে আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকা অভ্যাসের ফল। তারা আমাদের জীবনের সাথে এতটাই অবিচ্ছেদ্য যে একটি গবেষণায় নির্ধারণ করা হয়েছে যে আমরা প্রতিদিন যা কিছু করি তার প্রায় ৪৫ শতাংশ আমাদের অভ্যাস দ্বারা চালিত হয়। তোমার মনোভাবই তোমার উচ্চতা নির্ধারণ করে। তাই পুরাতন অভ্যাসগুলো তোমাকে আটকে রাখতে দেবেনা এবং কিছু সহজ তবে প্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলো তৈরি করা শুরু করে দাও।

ভোরে জেগে উঠো

ভোরবেলা হলো শান্তিপূর্ণ প্রতিফলন এবং পর্যাপ্ত উৎপাদনশীলতার একটি সময়; যেখানে পৃথিবী স্থির এবং ঘুমিয়ে আছে, যা তোমাকে তোমার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলোতে ফোকাস করার অনেক সময় দেয়। হয়তো তুমি দৌড়ের জন্য যেতে চাও অথবা স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ উপভোগ করতে পছন্দ করো। একটি অর্থপূর্ণ সকালে এই ধরনের কার্যক্রম তোমাকে সুপারচার্জ বোধ করায়। এই অভ্যাস ইলন মাস্ক, মার্ক জুকারবার্গের মতো নেতারা প্রতিদিন অনুশীলন করে। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা একটি দৈনন্দিন রুটিনে সেট করবে যা তোমাকে আরও উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করতে পারে।

যা আছে তাতে ফোকাস করো

আমরা আমাদের সমস্যায় ডুবে অনেক সময় ব্যয় করি। কিন্তু সমস্যাগুলোও জীবনের একটি অংশ। তুমি যদি তোমার সমস্যাগুলো থেকে তোমার ফোকাসকে সরিয়ে নিতে চাও তবে তোমার যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হতে হবে। কৃতজ্ঞতা স্বাস্থ্য, সুখ এবং সাফল্যের নিশ্চিত পথ। এটি আমাদের যা নেই তার চেয়ে আমাদের যা আছে তার দিকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

দিন নির্ধারণ করো

তোমার দিন নির্ধারণ করা অভ্যাসের এই তালিকায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন যা তোমার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। বিভ্রান্ত হওয়া এবং ফোকাস হারানো এড়াতে তুমি দিনের জন্য কী করছো তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, দিনের সময় নির্ধারণ করা তোমার অগ্রাধিকার সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে যাতে তুমি তোমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী তা সম্পন্ন করতে পারো।

প্রাণ খুলে হাসো

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সত্যিকারের হাসি হাসে তারা জীবনে সুখী হয়। এটি তোমাকে সময়ের সাথে সাথে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পাওয়ার একটি সেরা অভ্যাস। আমাদের দেহের ফিজিওলজি আমাদের মনের মনস্তত্ত্বকে নির্দেশ করে। যখন আমাদের মাঝে হতাশা ও অসুখের অনুভূতি প্রকাশ হয়, তখন আমাদের মন সেই ইঙ্গিতগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের সাথে চলে। যাইহোক, একবার আমরা সচেতনভাবে নিজেদেরকে সামঞ্জস্য করে আমাদের বাহ্যিক চেহারা পরিবর্তন করি, দেখবে আমাদের অভ্যন্তরীণ অনুভূতিও তা অনুসরণ করে নিবে।

৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ

প্যারোটের নীতি বা ৮০/২০ নিয়ম মানে যে কোন পরিস্থিতিতে, ২০% কাজগুলো ৮০% ফলাফল দেয়। সুতরাং, তুমি সেই কাজগুলোতে তোমার বেশিরভাগ সময় এবং শক্তি বিনিয়োগ করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারো যা সবচেয়ে বড় প্রভাব তৈরি করবে। একবার তুমি সেই কাজগুলো শেষ করে ফেললে, তোমার করণিয় তালিকায় থাকা অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলোতে ফোকাস করতে পারবে।

পড়, পড় এবং পড়

বই পড়া জ্ঞান অর্জন এবং সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করার একটি দূর্দান্ত উপায়। এটি মনোযোগকে উন্নত করে এবং ধ্যানের মতই মনে শান্ত প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, ঘুমানোর আগে পড়া ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।

ইতিবাচক মানুষের মাঝে থাকা

কার সাথে সময় কাটাচ্ছো তা সাবধানতার সাথে বিবেচনা করা উচিৎ। এমন সম্পর্কগুলো ছেড়ে দাও যা তোমাকে উপরে তোলার পরিবর্তে নীচে নিয়ে আসে। এমন লোকদের সাথে মিশো যারা সুখ ভাগ করে নিতে জানে। যেহেতু সুখ সংক্রামক, এটি তোমার জীবনে ইতিবাচকতা তৈরি করার সবচেয়ে সহজ উপায়গুলোর মধ্যে একটি।

প্রতিদিন ব্যায়াম করো

জীবনের সর্বোত্তম অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি হল প্রতিদিন ব্যায়াম করা। এটি ভারি ভারোত্তোলন বা ম্যারাথন দৌড়ানো নয়। রক্তের অক্সিজেন এবং শরীরে এন্ডোরফিন বাড়াতে হালকা কার্যকলাপের সাথে যুক্ত। তুমি যখন এই অভ্যাসটি শুরু করবে তখন কেবল শারীরিকভাবে ভাল বোধ করবেনা, আরও অনুপ্রাণিত বোধ করবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ হবে। ব্যায়াম ডোপামিনিন, অক্সিটোসিন এবং সেরোটোনিনকে সিস্টেমে ছেড়ে দেয়, যা কোন ঔষধের ব্যবহার ছাড়াই ভালো প্রভাব বিস্তার করে।

ভয় মোকাবেলা করো

আমরা অনেক সময় ভয়ে ডুবে থাকি। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটাই চিন্তিত এবং নার্ভাস থাকি যে বর্তমান মুহূর্ত উপভোগ করতে ভুলে যাই। জিনিসগুলোকে ভয় করা আমাদের মনে এতটাই গেঁথে গেছে যে এটি আমাদের অগ্রগতিকে বাধা দেয়। ভয় ভেঙে ফেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি যা তুমি বিকাশ করতে পারো।

নিজের জন্য সময় বের করা

এমন একটি অভ্যাস যা আমাদের অধিকাংশই জীবনে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয় তা হল কিছুটা নিজস্ব সময় উপভোগ করা। প্রতিদিন এমন একটা ছোট কাজ করো যা করতে তুমি পছন্দ করো। এই কাজ করার মাধ্যমে, তোমার মনে শান্তি স্থাপন হবে যা তোমার মেজাজ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্ম-সম্মানের জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। হেডফোনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের মিউজিক শুনো না কেন, পার্কের মধ্যে হাঁটাহাঁটি, প্রিয় রাস্তা ধরে ড্রাইভ অথবা প্রিয় কোন সিনেমা দেখা- যাই করোনা কেন, নিশ্চিত হও যে সর্বদা নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করতে পারছো।

এই অভ্যাসগুলো বিকাশের জন্য দৃঢ় সংকল্প, ধৈর্য এবং অবিরাম প্রচেষ্টা প্রয়োজন। হতে পারে এটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ বা এক বছরেরও বেশি সময় নিতে পারে। তবে হাল ছেড়োনা, জয় হবেই।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

15 + twelve =