শায়লা জাহান:
একটা কথার সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত- “ ভুল করে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে ভূলই ভালো’। আর এই কথাটিই আমাদের আজকের লেখার জন্য একেবারেই প্রাসঙ্গিক। কীভাবে? আচ্ছা কখনও ভেবে দেখেছো কি, আমাদের প্রিয় যে খাবারগুলো রয়েছে তা কিভাবে এসেছে? প্রতিভাধর শেফরা সবসময় নতুন নতুন রেসিপি উদ্ভাবনে সচেষ্ট থাকে এবং তার স্বাদ আস্বাদনে আমাদের জন্য সুযোগ করে দেয়। তবে তুমি জেনে আশ্চর্য হবে যে, এমন কিছু জনপ্রিয় খাবার আছে যেগুলো নিয়মতান্ত্রিক ভাবে না হয়ে দূর্ঘটনার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছিল। আর এমনই কিছু খাবারের তালিকা আসো দেখে নিই।
চকলেট চিপ কুকিজ
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হওয়া এই চকলেট চিপ কুকিজ দুর্ঘটনাক্রমেই তৈরি হয়েছিলো। ম্যাসাচুসেটসের হুইটম্যানের টোল হাউস ইনের মালিক রুথ ওয়েকফিল্ড ঘটনাক্রমে ১৯৩০-এর দশকে আইকনিক চকলেট চিপ কুকিজ তৈরি করেছিলেন। কীভাবে করলো? গল্পটি বলে যে, তিনি একটি চকলেট ডেজার্ট তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার কুকির ব্যাটারে ভাঙ্গা চকলেট বারের টুকরো যুক্ত করেছিলেন। ভেবেছিলেন যে তারা চুলায় গলে যাবে। তার আইডিয়াটি ভুল ছিলো কিন্তু বিনিময়ে বিশ্ব পেলো এক দূর্দান্ত ও জনপ্রিয় কুকি।
আইসক্রিম
এটি কীভাবে এসেছিল, তা নিয়ে কয়েকটি ভিন্ন গল্প রয়েছে, তবে সবচেয়ে সাধারণভাবে গৃহীত একটি হল যে এক চীনা বাবুর্চি একটি ঠাণ্ডা মিষ্টি তৈরি করার চেষ্টা করে দূর্ঘটনাক্রমে চিনির মিশ্রণের সাথে বরফ মিশ্রিত করেছিলেন, এর মাধ্যমে তিনি একটি সুস্বাদু খাবার তৈরি করেছিলেন যা আমরা আজও উপভোগ করি।
পটেটো চিপস
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ন্যাক খাবারগুলোর মধ্যে একটি ১৮৫৩ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিলো। নিউইয়র্কের মুন’স লেক হাউসের একজন শেফ জর্জ ক্রাম রাতে কাজ করছিলেন, সেই রাতে একজন অতিথি ফ্রাইয়ের প্লেট পরে প্লেট ফেরত পাঠাচ্ছিলেন। তার অভিযোগ ছিলো যে, আইটেমগুলো যথেষ্ট ক্রিসপি ছিলোনা। তার পছন্দ আনাতে ক্রাম অবশেষে আলুগুলোকে পাতলা করে কেটে গরম তেলে ভেজে, উপরে লবণ দিয়ে টস করে প্রেরণ করেন। পরে বাকিটা তো ইতিহাস। সেই সময়ে এগুলোকে সারাতোগা চিপস বলা হত। যা আমরা বর্তমানে আলুর চিপস বলে ডাকি।
কোক
কোমল পানীয় হিসেবে যা এখন কোকাকোলা নামে পরিচিত, জন পেম্বারটন প্রথম দিকে এটি কোন ড্রিংকস হিসেবে বানাতে চাননি। তার লক্ষ্য ছিল একটি মেডিকেল টনিক তৈরি করা যা মাথাব্যথা থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা পর্যন্ত সব ধরনের রোগ নিরাময় করতে পারে। পেম্বারটন মূলত এটিতে অ্যালকোহল দিয়ে একটি টনিক তৈরি করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তা মিষ্টি স্বাদযুক্ত অ-অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে পরিণত হয়েছিলো।
দই
বেশিরভাগই একমত আছে যে, এটি খ্রিষ্টপুর্ব ৬শতকের প্রথম দিকে তুরস্কে তৈরি করা হয়েছিলো। এবং কীভাবে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিলো? ইতিহাস বলে যে মধ্য এশিয় পশুবালকেরা তাদের অতিরিক্ত ছাগলের দুধ পশুর পেট থেকে তৈরি পাত্রে সংরক্ষণ করত, যা দুপুরের খাবার প্যাক করার একটি সহজ উপায়। কিছু পশুপালক অবাক হয়ে গেল যখন তারা পাত্রে দুধ দেখতে পেল যেটা ঘন হয়ে গেছে এবং টার্ট হয়েছে। কেন? যখন দুধ পেটের ব্যাগে ছিলো, ভাল ব্যাকটেরিয়া প্রস্ফূটিত হয়েছিল, এইভাবে দইয়ের আকস্মিক আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত হয়েছিল।
পপসিকল
জানলে অবাক হবে এই পপসিকল মাত্র ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে তৈরি করেছিলো। ১৯০৫ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে, ফ্র্যাঙ্ক এপারসন নামে একটি ছেলে এক কাপ চিনিযুক্ত সোডা পাউডার মিশিয়ে লাঠি দিয়ে রেখে দেয়। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যে সোডা কাঠির চারপাশে জমে গেছে। সে এর স্বাদ গ্রহণ করে এবং এটিকে এপসিকল বলার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১৯২৪ এর দিকে তিনি হিমায়িত ট্রিটটির পেটেন্ট করেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে দেন পপসিকল।
-ছবি সংগৃহীত