শায়লা জাহানঃ
ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সাথে সাথে রাত বেড়েই যাচ্ছে। দিনের শেষে স্ট্রেস কম করার সময় বিছানায় বসে হালকা পাতলা কিছু খাওয়ার শখ চেপেছে। কিন্তু মাথার ভেতর থেকে কেউ বলে চলেছে যে রাতে দেরী করে খাওয়া তোমার জন্য খারাপ। এটি একটি সাধারণ বিশ্বাস যে রাতে দেরী করে খেলে ওজন বাড়বে। প্রশ্ন হলো, রাতে খাওয়ার ফলে কি সত্যিই ওজন বাড়বে? ব্যাপারটি কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ? আসো উত্তর খুঁজে নিই।
দেরী করে খেলে, ওজন বাড়ে- এই পৌরাণিক কাহিনীটি বহু বছর ধরে চলে আসছে। এবং এই ব্যাপারে অনেকেই বলে এসেছে যে তাদের গভীর রাতে খাওয়ার অভ্যাসই তাদের ওজন বাড়ানোর পেছনে দায়ী। বলা হয়ে থাকে যে, রাতে আমাদের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়। এর ফলস্বরুপ আমরা রাতে যা খাই তা দিনের বেলায় খাওয়া ক্যালোরির চেয়ে সহজে চর্বিতে পরিণত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের শরীর দিনের বিভিন্ন সময়ে গ্রহণ করা খাবার ভিন্নভাবে প্রক্রিয়া করেনা। মূলত আমরা সারাদিনে যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করি এবং দিনে কতটা ব্যায়াম করি তাই আমাদের ওজনকে প্রভাবিত করে। এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, খাবার গ্রহণের সময়ের সঙ্গে ওজন কম বা বেশি হওয়ার যদি কোন সম্ভাবনা না থাকে, তবে ওজন বৃদ্ধির কারণ কী? এর সহজ উত্তর হলো অভ্যাস। অনেকেরই বেশি খাওয়ার প্রবণতা থাকে এবং রাতে স্ন্যাকস হিসেবে উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেছে নেয়, যার সবই আমাদের অভ্যাস এবং এটিই ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই লেট নাইট খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাজে অভ্যাসের মধ্যে রয়েছেঃ
-সকলেরই প্রতিদিনকার চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণের চাহিদা রয়েছে। তুমি যদি দিনের বেলায় তোমার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পুরোটাই পূর্ণ করে ফেলো এবং তারপরে লেট-নাইট স্ন্যাকসের দিকে হাত বাড়াও, তবে তোমার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ হয়ে যাবে। যা ওজন বৃদ্ধিতে দায়ী।
-আমাদের বেশিরভাগেরই দিনের বেলা স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করার প্রবণতা থাকে। সারাদিনকার খাদ্য তালিকায় আমরা তাই যোগ করি যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু এই লেট-নাইট স্ন্যাকসের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্ডি, চিপস বা আইসক্রিমের মতো খাবারগুলো গ্রহণ করার টেন্ডেসি থাকে। এইগুলোর পরিবর্তে সঠিক কিছু নির্বাচন করতে আমরা সবসময়ই ব্যর্থ হই।
-আরেকটি বাজে অভ্যাস হলো খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল সামনে নিয়ে বসা। দিনের শেষে, টিভির সামনে বসে আরাম করা বা মোবাইল টেপা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যখন টিভির সামনে খাবার খাও, তখন তা তোমার অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে।
রাতে খাওয়ার টিপস
যদিও এটা বিতর্কিত বিষয়, কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞরা ঘুমানোর আগে ছোট কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেন। তুমি যখন খারাপ অভ্যাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তখন এটি তোমাকে ঘুমাতে সাহায্য করার একটি ভালো উপায় হতে পারে। স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে রাতে কীভাবে খাবে তার কিছু টিপস দেয়া হলোঃ
পরিকল্পনা করা
পরিকল্পনা ছাড়া প্রতি রাতে স্ন্যাকস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনানুযায়ী ক্যালোরি অতিক্রম করতে না চাইলে এবং লেট নাইট স্ন্যাকস নিতে চাইলে প্রতিদিনের ক্যালোরি গণনায় পর্যাপ্ত ক্যালোরি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করো। দিনের বেলায় সেই হিসেবে খাবার গ্রহণ করো।
ডেজার্ট এবং জাঙ্ক ফুড পরিহার
এই লেট নাইট খাবারের ক্রেভিংস সবার মধ্যেই কম বেশি থাকে। কিন্তু তুমি যদি এই সময় নিজেকে কোন মিষ্টি খাবার বা চিপসের মাধ্যমে পূর্ণ করো, তবে সেই সেই ক্রেভিংস আরো বাড়বে। এই ক্যালোরিতে ভরপুর খাবারগুলো অতিরিক্ত খাওয়া আরও সহজ করে তোলে।
কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার
বিছানায় যাবার আগে যদি কিছু নিতেই হয় তবে নিশ্চিত করো যে তাতে জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন রয়েছে যা তোমাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, রাতে তাড়াতাড়ি না খেলেও ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেয়া উত্তম। সেই খাবার অবশ্যই হতে হবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে ওজন বাড়ানোর সম্ভাবনাও যেমন থাকবেনা তেমনি দেহ ও মনও থাকবে সুস্থ।