শায়লা জাহান
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনের পথ পাড়ি দিতে তাকে মিলেমিশে একসাথেই থাকতে হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় অন্যকে খুশি করতে যেয়ে অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত সবার সাথে একমত হতে হয়। নিজ অনিচ্ছাসত্ত্বে অন্যকে এই জোর করে খুশি করা বন্ধ করার জন্য কিছু টিপস নিয়েই আজকের আয়োজন।
না। ছোট একটি সহজ শব্দ। কিন্তু কেন কখনও কখনও না বলাও এত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়? অনেকের কাছেই এই না বলা অপরাধবোধ মনে হয়। হয়তো তুমি কাউকে হতাশ করতে ভয় পাচ্ছ। নতুবা উদ্ধতন কাউকে প্রত্যাখান করতে উদ্বিগ্ন বোধ করছো। কারন যাই হোক না কেন, না বলতে শেখা তোমার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপুর্ন দক্ষতা। আমাদের সময় ও শক্তি হল মূল্যবান সম্পদ যা আমাদের বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করা উচিৎ। আর এর মানে আমরা সব করতে পারিনা। আসো জেনে নিই কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে না বলা যায় এবং কেন কিছু অনুরোধ প্রত্যাখান করা কখনও কখনও হ্যাঁ বলার চেয়ে ভালো।
কেন না বলা কঠিন?
-সাধারনত এই না বলার অক্ষমতা শৈশব থেকেই আসে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের ভদ্রতা শেখানো হয়। যদি একজন অভিভাবক বা শিক্ষক একটি শিশুকে কিছু করতে বলেন, তাহলে না বলাকে অভদ্রতার রুপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, একজন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রত্যাখ্যান করার অর্থ শাস্তি বা নেতিবাচক স্বরুপ। যাইহোক এটি যোগাযোগ এবং আত্মপ্রত্যয় সম্পর্কে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু লোকের জন্য, নিজের পক্ষে কথা বলার এই অক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত থেকে যায়।
-না বলাটা কঠিন মনে হতে পারার আরেকটি কারন হল তোমার যদি নিজের ব্যাপারে কনফিডেন্স না থাকে। নিজে যে ভূমিকায় আছি তা করার জন্য আত্মবিশ্বাস না থাকে তবে এই ধরনের এটিচুয়েড প্রকাশ পায়। এই অনুভূতির কারনে, অন্যদের না বলটা এড়িয়ে যাওয়া হয়। ভয় হবে যে তারা মনে করবে তুমি তোমার ভূমিকা এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষম।
-আরেকটি কারন হতে পারে বিবেচনা করার মত সহানুভূতি এবং মানব প্রকৃতি। সামাজিক প্রানী হিসেবে মানুষের সংযোগের উপর নির্ভর হতে হয়। আর এই জন্যই আমাদের মধ্যে অন্যদের হতাশ করতে বা সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার ভয় কাজ করে।
কখন না বলা উচিৎ?
না বলাটা যদি তোমার জন্য কষ্টকর হয়ে থাকে, ব্যক্তিগত এই অস্বস্তিকর লক্ষণগুলো সনাক্ত করা জেনে নিতে হবে; তবেই বুঝবে কখন নিজের ভালোর জন্য না বলতে হবে।
অস্বস্তিকর অনুভূতি হলে
তোমার লিমিট তোমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। যদি এমন কিছু করতে বলা হয় যাতে তুমি অস্বস্তিবোধ কর, তবে এটা একটা সাইন হতে পারে যে তোমাকে না বলতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু মুহূর্তের জন্য লম্বা শ্বাস নাও এবং নিজের মনের কথা শোনো।
অপরাধী বা বাধ্য বোধ করা
কর্মক্ষেত্রে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে না বলাটা আসলেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চাকরির জন্য বাধ্য করতে হতে পারে যখন ঊর্ধ্বতনরা কাজ অর্পণ করেন। কিন্তু সবসময়ে এর মানে এই নয় যে, নিজের সময় এবং শক্তি তাদের চেয়ে কম মূল্যবান। এজন্য নিজ সিদ্ধান্ত অপরাধবোধ বা বাধ্যবাধকতার উপর ভিত্তি করে করা উচিৎ নয়।
যখন ওভারলোড হও
তুমি যদি কাজে ওভারলোড হয়ে থাকো তবে আরও কাজ বা প্রজেক্টকে না বলো। নতুন কিছু গ্রহন করার আগে কিছু সময় এবং শক্তি খালি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। প্রতিদিন যদি দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে থাকো তবে উইকেন্ডে কাজ করা থেকে বিরত থাকো। না হয় সেসময় পরিবার এবং কাজ উভয়েরই চাপ পড়বে। মনে রাখবে, নিজেকে না বলাটা অন্যদের না বলার মতোই গুরুত্বপূর্ন। নিজের উপর চাপ দেয়া কেবল স্ট্রেস এবং উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
যদি অনুরোধটি ব্যক্তিগত সীমানা অতিক্রম করে
যখন এমন কিছু করতে বলা হয় যা তোমার সীমানা অতিক্রম করে, তখন প্রক্রিয়াটিকে তার ট্র্যাকে থামানো এবং না বলা গুরুত্বপূর্ন।
যদি শুধুমাত্র অন্যকে খুশি করার জন্য হ্যাঁ বলছো
অন্যদের খুশি করা কাজ সম্পাদনের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রনোদনা হলেও, এটি তোমার কঠোর পরিশ্রমের একমাত্র কারন হওয়া উচিৎ নয়। যদি অন্য কাউকে খুশি করা নিজের সুখ এবং মঙ্গলের মূল্যে আসে তবে এটি মূল্যবান নয়।
অন্যকে সাহায্য করা, মিলেমিশে চলা অনেক ভালো গুন। কিন্তু ঘর হোক নিংবা কর্মস্থল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে না বলতে জানাও এমন একটি দক্ষতা যা তুমি সারাজীবন উপকৃত হতে পারো। নিজের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরনা পাওয়া যায়।