একটা সময় ছিল যখন বিদেশেই পার্টটাইম চাকরির বেশ প্রচলন ছিল। ছুটির সময়গুলোতে ছাত্রদের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে পার্টটাইম চাকরির ট্রেন্ড এখন আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। শুধু ছাত্ররা নয়, যারা কিনা একটি চাকরি করছ, তারও মূল চাকরির পাশাপাশি আরেকটি পার্টটাইম করতে পারবে নিশ্চিন্তে। তার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট আর একাগ্রতার জায়গাটিকে একটু শাণিত করলেই হয়ে যায়।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, বাড়তি আয়ের জন্য যে কাজ করা হয়, সেটাই পার্টটাইম জব। কিন্তু একটি বিষয় কিন্তু ভুলে যাও অনেকে, সেটি হলো এই পার্টটাইম জবটি তোমাকে আর্থিকভাবে ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি তোমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা আর সিভির এক্সপেরিয়েন্স আইকনটির পাল্লাটিও কিন্তু ভারী করছে। আর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি তো আছেই।
বয়স, ছাত্রাবস্থা কিংবা নিজের অর্জিত মূল চাকরিভেদে অনেক রকমের পার্টটাইম চাকরি আছে করার মতো। বাংলাদেশের অনলাইনগুলোতে তুমি সহজে এ ধরনের খোঁজ পেয়ে যাবে ক্লিক করলেই। মূলত পার্টটাইম জবের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে দুভাবে।
প্রথমত, সরাসরি বা পরিচিতদের রেফারেন্স। দ্বিতীয়ত, পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে বিভিন্ন জবসাইটের মাধ্যমে। তোমাকে যেটা করতে হবে তা হলো চাকরির পত্রিকা ও অনলাইনে বিভিন্ন জবসাইটে নজর রাখা। তাহলেই যোগ্যতা অনুযায়ী সহজেই পেতে পারো কাক্সিক্ষত চাকরি।
পার্টটাইম জব অনেক ধরনের আছে, চাইলে তুমি পছন্দমতো বেছে নিতে পারো। যারা একটু ক্রিয়েটিভ কাজ পছন্দ করো, তারা ওয়েব ডিজাইনের দিকে ঝুঁকতে পারো। বর্তমানে ওয়েবসাইট ডিজাইনের ব্যাপক চাহিদা। এসব চাহিদার মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন, ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ও সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের কাজ।
এ ছাড়াও দারুণ আরেকটি ফ্রিল্যান্সিং জব হলো সাংবাদিকতা। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন ও রেডিওতে সাংবাদিকতা করতে পারো। যারা নবীন লেখক, তারা বিভাগীয় সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারো। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকার ফিচার পাতায় কাজ করেও উপার্জন করতে পারো বাড়তি টাকা। আর ঘুরেফিরে এখানে কিন্তু চলে আসছে লেখালেখি করার ব্যাপারটাই। চিন্তার উৎকর্ষ আর মস্তিষ্ক সঞ্চালনার দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে তোমার। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ থেকে তুমি আরও বড় চাকরি করার উৎসাহ পাবে।
উপস্থাপনার দিকটিও বেশ জনপ্রিয় এখন অনেকের কাছে। বর্তমানে অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থা অনেক নবীন মডেলকে সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে। এ ছাড়াও বিভিন্ন এফএম রেডিওতে আরজে বা বেতারকেন্দ্রের চমৎকার শব্দশিল্পী হতে পারো। তাই সময় ও সুযোগ করে যোগ্যতা অনুযায়ী তুমি যোগ দিতে পারো এসব মিডিয়াভিত্তিক যে কোনো অ্যাকটিভিটিসে।
শিক্ষকতার সুযোগ আমাদের দেশেও অনেক। কারণ, দেশের প্রায় প্রতিটি শহরেই রয়েছে কোচিং সেন্টার, প্রশিক্ষণ একাডেমি, কিন্ডারগার্টেন, চাইল্ড কেয়ার হোম, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনা বা চাকরির পাশাপাশি সময় বের করতে পারলেই বাড়তি আয়ের দরজা খুলে যাবে। এটি ফুলটাইম চাকরির পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের আরেকটি দারুণ সুযোগ।
নির্মাণ ও প্রযোজনা হতে পারে অর্থ উপার্জনের আরেকটি দারুণ উৎস। কেননা বর্তমান প্রজন্ম নির্মাণ ও প্রযোজনার দিকে ঝুঁকছে বেশ। ছোট ছোট শর্টফিল্ম তৈরি বা ওয়েব সিরিজ তৈরি করা এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পড়াশোনার ফাঁকে ছুটির দিনগুলোতে হাত পাকানো যেতে পারে। যারা কিনা একটু বিত্তশালী পরিবারের সন্তান, তাদের জন্য প্রযোজনা করা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে উঠতি ব্যবসায়ীরাও কিন্তু হালকা-পাতলা বিনিয়োগ করতে পারো। অনুষ্ঠান প্রচার হলে তুমি তোমার লভ্যাংশ পেয়ে যাবে। তবে বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ করতে হবে নির্মাতাদের সঙ্গে।
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য নির্মাণ করতে পারো নানা রকম অনুষ্ঠান। হতে পারো নাটক, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা। মূলত সরকারি ছুটির দিনগুলোতেই নির্মাণের কাজ হয়ে থাকে। তাই এ সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারো। ক্যারিয়ারে যোগ করতে পারো একটি নতুন অধ্যায়।
এখন কথা হলো, যারা পড়াশোনা করছ তারা একটি পার্টটাইম চাকরিই করো। বেশি করতে গেলে জীবনের এইমের মূল ফোকাস থেকে সরে যেতে পারো। আর যারা অলরেডি ফুলটাইম জব করছ কিন্তু একটু বাড়তি আয়ের জন্য মূল চাকরির পাশাপাশি আরেকটি পার্টটাইম জব করতে চাচ্ছো, তারাও কিন্তু সময়টাকে রুটিন করে ভাগ করে নেবে। যাতে করে একটি চাকরির জন্য অন্য একটি চাকরি বাধাগ্রস্ত না হয়। কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান সেট করে রাখো আগে থেকে। যেমন একটু সকাল করে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা, এতে দিনের অনেক সময় বাঁচে। কিংবা ছুটির দিনগুলো নষ্ট না করে মূল কাজের ফাঁকে অন্য কাজটি প্রতিদিন সামান্য করে এগিয়ে রাখা। দেখবে এভাবে কিন্তু দারুণ কাজে দেবে।
আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, পার্টটাইম জবটি কত ছোট বা বড় সেটি কোনো কথা নয়, বরং জেনে রাখো এটি ব্যক্তি পরিচয় আর আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে সহযোগিতা করে। রুটিন করে চলতে পারলে এটি যাপিত জীবনকে করবে আরেকটুকু সাবলীল, আরেকটু স্বচ্ছন্দ।
লেখা : তাহমিনা সানি
রোদসী/আরএস