মুখরোচক লাগলেই আমরা হুটহাট খাবার খেয়ে ফেলি। কিন্তু একটিবার ভাবি না ওই খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কি না। এখন মহামারির এই সময়ে অনেকগুলো সচেতনতার মধ্যে প্রধান সচেতনতা হলো সঠিক খাবার খাওয়া। তবে এ-ও বিবেচনায় আনতে হবে কোন কোন খাবারে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদÑ ফারজানা রহমান কান্তা
প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর খাবারগুলো-
রসুন :
রসুন যে শুধু খাবারের স্বাদই বৃদ্ধি করে তা নয়, বরং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে সর্দি-কাশির হাত থেকেও নিস্তার পাওয়া যায়। ভাইরাস, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকে রসুনে।
আদা :
ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ উপাদান। আদা আক্ষরিক অর্থেই একটি সুপারফুড। আদা ইনফ্লেমেশন কমায় ও ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। পাশাপাশি বমিভাব কমাতেও সাহায্য করে।
চিয়া বীজ :
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ চিয়া বীজ। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সব বীজের তুলনায় চিয়ায় দ্বিগুণ পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়।
গ্রিন টি ও মাচা টি :
মাচা টি আসলে গ্রিন টির গুঁড়া। আবার কফির বিকল্পও বটে। ভিটামিন, মিনারেল, ট্রেস এলিমেন্ট, মুক্ত র্যাডিক্যালসমৃদ্ধ। গ্রিন টি ও মাচা টি সর্দি, কাশির সঙ্গে লড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন সি :
শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। ভিটামিন সি মানবদেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন সি-ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আমলকী:
কয়েক শতাব্দীজুড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর একটি কার্যকর উপাদান হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছে আমলকী। এতে আছে ভিটামিন সির প্রাচুর্য, যা শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এই শ্বেত রক্তকণিকা অসংখ্য জীবাণুর সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। পাশাপাশি আমলকী জোগায় শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
কমলা :
এতেও আছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জোর বাড়ায়। কোষকে সংক্রামক ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ‘ইমিউন সেল’ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি।
পেয়ারা:
ভিটামিন সি তো আছেই, পাশাপাশি সর্বোচ্চ পুষ্টিকর ফলের তালিকায় প্রথম সারির সদস্য পেয়ারা। কমলায় যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে, তার থেকে চার গুণ বেশি থাকে পেয়ারায়।
হলুদ :
‘কারকিউমিন’ হলো হলুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর অস্ত্র। কারকিউমিন প্রদাহনাশক গুণসম্পন্ন। ভাইরাসের আক্রমণে শরীরে যে ক্ষতি হয়, তা আসলে বিভিন্ন প্রদাহ সৃষ্টিকারী ‘মলিকিউল’-এর কারণে হয়। আর সেই মলিকিউল ধ্বংস করাই হলো ‘কারকিউমিন’-এর কাজ। এ ছাড়া ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির গতিও কমায় এ উপাদান।
তুলসী :
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ধ্বংস করতে তুলসী একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ। খালি পেটে দুই থেকে তিনটি সতেজ তুলসী পাতা খেতে পারলে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়।
গোলমরিচ :
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ উপাদানসমৃদ্ধ এ গোলমরিচ। আরও রয়েছে ভিটামিন সি। ফলে প্রাকৃতিকভাবে তা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
প্রোটিন :
প্রোটিন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়, রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। এ মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে উন্নত মানের প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল থেকে পাওয়া যাবে প্রোটিন।
ভিটামিন বি১২ :
শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি রয়েছে সামুদ্রিক মাছে, শাকসবজি, ডিমে। এ ছাড়া দিনের কিছুটা সময় রোদে কাটানো উচিত।
জিঙ্ক :
শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। বাদাম, শিম, দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে জিঙ্কের পরিমাণ কমে গেলে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
ফারজানা রহমান কান্তা
ডায়েট ও ওবেসিটি ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড
রিলিফ মেডিকেল অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার