প্রতিবছরই আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে পর্যটনশিল্প। পর্যটকেরা পালা করে ঘুরে বেড়ায় দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। দিন দিন বেড়েই চলেছে ট্রাভেলের প্রতি মানুষের বাড়তি আকর্ষণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাই কাজ করছে সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্প নিয়ে। ট্রাভেল বাংলাদেশ এমনই একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি বাংলাদেশের ট্রাভেল ও ট্যুরিজমের নানান তথ্য দিয়ে আমাদের পর্যটন খাতে ভূমিকা রাখছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসকে কেন্দ্র করে থাকছে রোদসীর বিশেষ আয়োজন। পর্যটন শিল্পের নানান দিক নিয়ে ট্রাভেল বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও সিইও আহসান রনি কথা বলেন রোদসীর সঙ্গে। লিখেছেন সাবিহা জামান
ট্রাভেল বাংলাদেশ কীভাবে কাজ শুরু কওে, এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আহসান রনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি ভ্রমণ করতে ভালোবাসতাম। যত বড় হতে থাকি, ভ্রমণের প্রতি ভালোলাগা বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হই এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হয়। বিভিন্ন দেশে গিয়ে ওই দেশসমূহে ভ্রমণ নিয়ে দারুণ দারুণ সব উদ্যোগ দেখি এবং বাংলাদেশের ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করতে গিয়ে দেখি বাংলাদেশে ভ্রমণ নিয়ে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। তথ্য থেকে শুরু করে ইনোভেটিভ ট্যুর, এ দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, খাবার, স্থান, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ে নানা এক্সপেরিয়েন্সের সুযোগ দিতেই ট্রাভেল বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম শুরু করি। শুরুতে শুধুমাত্র তথ্য নিয়ে কাজ করতে থাকি। দেশের ৬৪ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান, খাবার, থাকার স্থানবিষয়ক তথ্য নিয়ে ট্রাভেল বাংলাদেশের ওয়েবসাইট শুরু করি এবং সময়ের সাথে এটি হয়ে ওঠে দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণবিষয়ক তথ্যবহুল ওয়েবসাইট।’
আহসানর রনি আরও বলেন, ‘শুরুতে তথ্য সংগ্রহ, রিসার্চসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। কিন্তু ট্রাভেল বাংলাদেশ থেমে থাকেনি। ক্রমে ক্রমে নতুন নতুন ইনোভেশন নিয়ে কাজ হয়েছে এবং পচুর মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে আমাদের উদ্যোগটি দিনে দিনে বড় হয়েছে। ট্রাভেল বাংলাদেশের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ওয়েবসাইট, ভিডিও, ট্যুর মার্কেট, এক্সপেরিয়েন্স, ট্রাভেল কোম্পানিগুলোর জন্য প্রমোশনাল সেবা; সবগুলোই ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভ্রমণবিষয়ক নানা সমস্যার সমাধান দিচ্ছে। ট্রাভেল বাংলাদেশকে আমরা একটি সমস্যার সমাধানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। করোনার কারণে পুরো ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে; আমরাও হয়েছি। কিন্তু আমরা এই সমস্যার কীভাবে সমাধান সম্ভব এবং সমস্যার সমাধানে কী কী করা সম্ভব, তার চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি।’
ট্যুর আয়োজন করার বিষয় নিয়েও কথা বলেন ট্রাভেল বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও সিইও আহসান রনি। তিনি জানান, ‘আমরা সরাসরি ট্যুরের আয়োজন করি না। আমাদের ট্যুর মার্কেট নামে একটি পার্ট আছে, সেখানে বাংলাদেশের সেরা সেরা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সাথে আমাদের পার্টনারশিপ আছে। দেশের সেরা ট্যুর কোম্পানিগুলোর ট্যুরগুলো আমাদের মাধ্যমে বুক করা যায়। এটি ট্যুর প্যাকেজের একটি ই-কমার্স সাইট বলতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের “এক্সপেরিয়েন্স” নামে একটি সেবা আছে। এই সেবার আওতায় আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব, খাবারবিষয়ক নানা অভিজ্ঞতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ। এগুলোকে একধরনের ট্যুরও বলা যেতে পারে। তবে গতানুগতিক ট্যুরের চেয়ে আমরা এই আয়োজনে অভিজ্ঞতা অর্জনকেই প্রাধান্য দিই।’
নারীদের জন্য তাদের আয়োজনের বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে রনি বলেন, ‘ট্রাভেল বাংলাদেশ নারীদের আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। আমাদের ওয়েবসাইটে নানান তথ্য রয়েছে, যেখানে নারীদের ভ্রমণ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। ভ্রমণের সময় নারীদের নিরাপত্তাকে আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করি।’
করোনাকালীন বিভিন্ন সমস্যা ও বর্তমান অবস্থা নিয়েও রোদসীর সঙ্গে কথা বলেন রনি। রনি বলেন, ‘করোনাকালে সারা পৃথিবীর প্রতিটি ট্রাভেল কোম্পানিই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিও এর ব্যতিক্রম নয় এবং ট্রাভেলবিষয়ক কোম্পানি হিসেবে আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। তবে ট্রাভেল বাংলাদেশের ইনোভেশন প্রক্রিয়া করোনার সময়ে থেমে থাকেনি। আমরা আমাদের কার্যক্রম দারুণভাবে পরিচালনা করে গিয়েছি। আমাদের ট্যুর মার্কেট দারুণভাবে যাত্রা শুরু করেছে, বাংলাদেশের ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা এক্সপেরিয়েন্স বিষয়টিকে নিয়ে এসেছি এবং নতুন নতুন এক্সপেরিয়েন্স লঞ্চ করেছি। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে আবার যেহেতু ভ্রমণ শুরু হয়েছে, আমরাও চেষ্টা করছি আমাদের সব সার্ভিস আবার ফিরিয়ে আনতে। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানি যেহেতু করোনা-পরবর্তী এই সময়ে তাদের প্ল্যাটফর্মটিকে আরও বেশি মানুষের সামনে তুলে ধরতে চায়, তাই আমরা তাদের জন্য বিশেষ প্রমোশনাল প্যাকেজ চালু করেছি এবং আমরা দারুণ সাড়া পাচ্ছি। আশা করি সেপ্টেম্বর থেকে আমরা আবার পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারব।’
বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প নিয়ে নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে বলতে গিয়ে রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প নিয়ে অনেক অনেক নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টর নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রত্যাশা অনেক।
বাংলাদেশের যে যে প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগত সম্পদ আছে, সেগুলোকে যদি আমরা যথাযথ ব্যবহার করতে পারি এবং আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারি, তাহলে শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। পর্যটন সেক্টর নিয়ে অনেক তরুণ এগিয়ে আসছে, ফলে সামনের দিনগুলোতে দারুণ আরও অনেক উদ্যোগ আমরা দেখতে পাব, তা বলাই যেতে পারে। সরকার থেকেও পর্যটন সেক্টরে দারুণ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগগুলোকে সরকার যদি আরও বেশি সহায়তা প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিক নানা পর্যটন প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশেও ইনভেস্টমেন্টের সুযোগকে আরও সহজ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টরটি আন্তর্জাতিক মানের একটি পর্যটন ডেস্টিনেশন হতে পারে। তবে শুরুতে যদি এ দেশের পর্যটন সেক্টরকে সরকারি সহায়তায় বা বেসরকারি উদ্যোগে আরও বেশি প্রফেশনাল করা সম্ভব হয়, তাহলে পর্যটন সেক্টর আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।’