বাংলা নববর্ষ : শিল্পকলাময় সারা দিনমান

করেছে Rodoshee

লেখা : দিব্যদ্যুতি সরকার

বাংলা নববর্ষের দিনটি যে পৃথিবীর সুন্দরতম একটি দিন, অনেক সময় আমরা তা বুঝতে পারি না। অনেকের মনে হতে পারে, আমরা বাঙালিরা যেহেতু গরিব মানুষ, নববর্ষে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারি না, অতএব আমাদের নববর্ষ আর কিবা এমন! এটা ঠিক যে আমরা খুব বড়লোকের জাতি নই। আমাদের শত শত পাঁচ তারকা সাত তারকা হোটেল নেই, তাই বলে আমাদের নববর্ষ মোটেই ঐশ্বর্যহীন নয়। যারা সব সময় জেনে এসেছে যে ঐশ্বর্য মানে হলো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করার ক্ষমতা, বাংলা নববর্ষ ভালো করে দেখলে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের দেশ ও সংস্কৃতির প্রতি অপরিসীম মায়া থাকলে একটি দিনকে সুন্দর করতে খুব টাকাপয়সা খরচ করা লাগে না। দিনটি আপনা-আপনিই হয়ে ওঠে ঐশ্বর্যময়। সেই ঐশ্বর্য দেখতে হলে পয়লা বৈশাখের বাংলাদেশকে দেখতে হবে।

পহেলা বৈশাখ শুরু হয় সকালে, দিনেরই অনুষ্ঠান। ফলে এখানে আলোকসজ্জার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। মূলত মাঠে মাঠে আর পথে পথেই এই অনুষ্ঠান হয়। আমাদের সবগুলো মাঠ এদিন রূপান্তরিত হয় সবুজ অডিটরিয়ামে। এই নববর্ষ উদ্যাপনে কোনো রংমহল লাগে না। পৃথিবীর কোন জাতির এমন নববর্ষ আছে, যাদের বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জলজ্যান্ত একটি অশ্বত্থগাছের ছায়ায়! সারা বছর ওই অশ্বত্থ শাখায় অজস্র শিল্পী পাখিরা বসে গান গায়, নববর্ষের দিনে সেসব পাখির সঙ্গে যোগ দেয় শিল্পী মানুষেরা। বাংলার সব পাখি ও মানুষের সব সুর ওই রমনার অশ্বত্থগাছটির শোনা আছে। ওটি যেন বাঙালির গানের বটগাছ। পহেলা বৈশাখে আমাদের ধুলোভর্তি রাস্তাগুলো হয়ে যায় চিত্রশিল্পীদের ক্যানভাস, আমাদের সকল চিত্রকর সেদিন ছবি আঁকার জন্য রংতুলি হাতে রাস্তায় ছুটে যায়। বাংলাদেশের অসংখ্য রাজপথ এদিন পরিণত হয় আলপনার রাজপথে। যেন কোনো সম্রাজ্ঞী হেঁটে যাবে ও পথে, বাংলার শিল্পীরা তাই রংতুলি নিয়ে এদিন রাস্তাকে রাঙিয়ে দেয়।

বর্তমানে পহেলা বৈশাখ পরিণত হয়েছে পুরোপুরি একটি সাংস্কৃতিক দিবসে। সত্যি বলতে কি বাঙালির এমন আর একটি দিনও নেই, যেদিন সে পুরোপুরি সাংস্কৃতিক হয়ে উঠতে পারে। এটি একটি অনন্য শিল্প-পার্বণ। পহেলা বৈশাখের উদ্যাপনের যে দিকে তাকাবে সেদিকেই শিল্প। এই শিল্প-পার্বণের শুরুটা হয় ভোরে। পহেলা বৈশাখের ভোরে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই যদি তোমার মনে পড়ে যে আজ বাংলা নববর্ষ, তাহলে অকারণেই মনটা ভালো হয়ে যাবে। এই মন ভালোর সঙ্গে সঙ্গে তোমার মনে পড়বে বাঙালির শোভন ও সুন্দর সব পোশাক, গান অথবা খাবারের কথা। এদিন সকাল থেকে বাঙালিরা যে পোশাক পরে, যে গান গায়, যে নৃত্য পরিবেশন করে, কিংবা যে অন্ন-ব্যঞ্জন আহার করে তার সবকিছুই শিল্পশোভাময়। সকালে সারা দেশে নানান রূপে ও রঙে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা নামটাও কত সুন্দর। র‌্যালি শব্দের বাংলা এ তো নয়ই। শোভাযাত্রার কোনো প্রতিশব্দই তোমার ভালো লাগবে না। এই যাত্রায় থাকে শুধু অশেষ শোভার সমারোহ—ফুল ও পরাগের শোভা, শুভ্রতা ও রঙের শোভা, পঙ্্ক্তি সুর ও নৃত্যের শোভা, তরুণ-তরুণী ও শিশুর শোভা। পোশাক, চুলের সাজ, নখের রং, শাড়ি, নাগরদোলা, পুতুলনাচ, রঙিন চুড়ি, মাথাল মাথায় কৃষক, গেরুয়া রঙের পোশাকের বাউল, শরীর আলপনা, বাহারি ব্যঞ্জন ও পিঠা, যেটার দিকে তুমি তাকাবে সেখানেই পাবে বাঙালির শিল্পবোধ ও সৌন্দর্যের ছোঁয়া।

 

বাংলার নববর্ষ সর্বজনীন, গ্রামের দরিদ্র কৃষক থেকে রাজধানীর অট্টালিকার চুড়োয় বাস করা ধনাঢ্য বাঙালি সবার জন্যই নববর্ষের রয়েছে অসংখ্য শিল্প উপাচার। নববর্ষে প্রত্যেক বাঙালি যেন একেকজন শিল্পীতে রূপান্তরিত হয়। কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ বাদ্যশিল্পী, কেউ নৃত্যশিল্পী, কেউ সৌন্দর্যশিল্পী, কেউ পোশাকশিল্পী, কেউ শিশুশিল্পী, কেউ ফেরিশিল্পী আর কেউ ক্রেতাশিল্পী, কেউ রন্ধনশিল্পী, কেউ ভক্ষণ শিল্পী, কেউবা আবার প্রণয়শিল্পী; আর এসব শিল্পচর্চার যারা ধার ধারে না তারা সবাই হয়ে যায় দর্শন ও শ্রোতৃশিল্পী। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা বাংলাদেশ যেন সুরের ভেরি বাজিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। রমনার বটমূলে সকাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান হচ্ছে, আর বাসার টেলিভিশনে তা শুনতে শুনতে অনেকবারই আমাদের পহেলা বৈশাখের ঘুম ভাঙে। এই মধুময় জেগে ওঠার যে আনন্দ তার তুলনা হয় না। রমনার এই বর্ষবরণ এমন এক শোভন সৌকর্যের মেলা যেখানে ছোট একটি শিশুও তার পুরো পরিবার নিয়ে সারা দিন আনন্দ করতে পারে।

বাংলা নববর্ষে কোনো দুশ্চিন্তার দৃশ্য নেই। হিংস্রতা বিদ্বেষ তো নেই-ই, এমনকি সামান্যতম অশালীন কিছুও এখানে নেই। আমাদের দেশের সবচেয়ে ধর্মভীরু ও পর্দানশীন পরিবারটিও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অস্বস্তিকর কিছু খুঁজে পাবে না। এই অনুষ্ঠানে বাঙালির জন্য অস্বস্তিকর কোনো দৃশ্য নেই।

পহেলা বৈশাখের বাংলার নারীদের পোশাক দেখে মনে হয় যেন আজ তারা কোথাও ধ্রুপদী নৃত্য পরিবেশন করতে যাচ্ছে। তার পায়ের কনিষ্ঠা ও চুলের খোঁপায় উড়তে থাকা চিকচিকে চুলটি যেন এদিন নৃত্যশিল্পীর মতো সুন্দর হয়ে ওঠে। পহেলা বৈশাখের বাংলার শিশুরা যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবশিশু। বাংলার মা, বাংলার কিশোর ও তরুণ-তরুণী, বাংলার শিশু ও প্রবীণতম মানুষটিকে তুমি যদি বাঙালির শ্রেষ্ঠতম মোহন রূপে দেখতে চাও, তাহলে চলে যাও বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এই সজ্জা ও সম্মিলনের কোনো কোরিওগ্রাফার নেই; কিন্তু কী সুন্দররূপে বাঙালি সুন্দর হয়ে উঠতে পারে, পহেলা বৈশাখের দিনে তা বোঝা যায়। এমন স্বস্তিকা সুন্দর মাতৃরূপ, এমন প্রজাপতির মতো তরুণী, এমন আশ্চর্য সুন্দর কিশোর-কিশোরী, এমন শুভ্র হাসির দেবশিশু আর গাছের ছায়ায় চাদর বিছিয়ে গান গাইতে থাকা শিল্পীসমাজ—এই বাংলা ছাড়া আর কোথায় মিলবে!

নববর্ষে আমাদের সকল গৃহিণী এদিন শিল্পীতে রূপান্তরিত হয়। আটপৌরে হাঁড়ি কড়াই আর বাসনকোসন সম্বল করেই এদিন তারা হয়ে ওঠে একেকজন অপরাজেয় শেফ। এদিন তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করবেই। নববর্ষের পানতা আর ইলিশ অথবা শুকনো লংকা ভাজি দিয়ে মাখানো আলু ভর্তা, কিছু একটা নতুন রাঁধবেই। পাশাপাশি হেলেঞ্চার সুক্ত, উচ্ছে ভাজি, আমডাল, পিঠা কিংবা পায়েস, পঞ্চশাক, পঞ্চমিষ্টি, গব্যঘৃত, পঞ্চশস্য, পঞ্চফল এসব অনিয়মিত পদের কিছু না কিছু বাঙালি গৃহিণী তার আয়োজনে রাখবেই। অনেকে এক ভাড় দইও পাতে। ঘোল টানাও হয় এমনকি শহরের ভাড়া বাসায়ও।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রধানতম নন্দন মেলা। সংগীত, বাদ্য, কবিতা, নাটক, আলপনা, চিত্র, ভাস্কর্য, ঘুড়ি, মুখোশ, মঙ্গল প্রদীপ, কুলা, মৃৎপাত্র, পান্তা-ইলিশ, মাটির গয়না, রঙিন চুড়ি, একতারা, মন্দিরা, মেহেদি এসব অসংখ্য উপাচার ও অনুষঙ্গ নিয়েই পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ নির্বিরোধ ও নম্র, অহিংস ও সুশোভন; এই একটি দিনে বাঙালি কল্পনার সমান সুন্দর হয়ে উঠতে চায়। পহেলা বৈশাখ অশেষ শক্তিমানও; সৌন্দর্য, শিল্প, সম্প্রীতি ও চারুচর্চার শক্তিতে শক্তিমান এই দিনটি। শিল্পকলা ও সংস্কৃতির শক্তি আসলে সার্বভৌম ও অনন্ত। কতবার কত ফরমান, রাজদ-, রক্তচক্ষু ও বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে এই সৌন্দর্য-দিবসটি; কিন্তু প্রতিবারই দুর্দান্ত সুকুমার সৌন্দর্য নিয়ে টগবগিয়ে ফিরে এসেছে এই বিশাখা নক্ষত্রের দিন।

বাঙালির নববর্ষ হলো সামান্য আয়োজনের অসামান্য এক উদ্যাপন। খুব ধনবান কেউ যদি বিলিয়ন ডলার অর্থ ঢেলে বাংলা নববর্ষকে মহিমান্বিত করতে চেষ্টা করে, তাহলে খুব শীঘ্র সে তার টাকার নিরর্থকতাকে আবিষ্কার করবে। বঙ্গোপসাগরের সব ইলিশ আর দিনাজপুরের সব কাটারিভোগ রান্না করে পান্তার আয়োজন করলেও নববর্ষ মহিমান্বিত হয়ে ওঠে না। কারণ বাংলা নববর্ষ মোটেই অর্থনৈতিক আনন্দের নয়, এটি পুরোপুরি সাংস্কৃতিক। যার শুধু অনেক টাকা আছে, কিন্তু চিন্তারাজ্যের মধ্যে কোনো সুর, সংগীত, রং, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা নেই, সে পয়লা বৈশাখের মেলার মাঠে এসে খুব বিপন্ন বোধ করতে পারে। একবার সে ভাবতে পারে এই গোটা মেলায় যা যা আছে তা সে সব একাই কিনে নিতে পারে। সবকিছু যদি সে কিনেও ফেলে তাহলে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে সে হতাশ বোধ করবে। কারণ সেসব দেখতে খুব সামান্য, একমাত্র বাঙালি হলেই এই সামান্য জিনিসের অসামান্য গুরুত্ব বোঝা সম্ভব।

নববর্ষ যেন একটি উত্তরাধিকার উৎসবও। বাঙালির রক্তে হঠাৎ এদিন খেলা করে হাজার বছরের পূর্বপুরুষ। হঠাৎ যেন তার স্বভাবে আসে সুবাসিত উজান। তার মনের মধ্যে একতারা বাজাতে থাকে বাউল, তার শহুরে পেলব হাত হঠাৎ বৈঠা আর ডিঙির জন্য উন্মনা হয়ে পড়ে। রাস্তার অবাধ রিকশায় উঠে তার স্নায়ুতন্তে খেলা করে পাল তোলা ভাটির নাইয়া, নিজের একবিংশ এই মনটা ঘুরে আসে বাঙালির প্রাচীন সব পূর্বপুরুষের বাস্তুভিটেয়। হঠাৎ যেন কী জাদু ঘটে যায় বাংলাদেশে, বৈশাখের বাংলাদেশ যেন জাদুর বাংলাদেশ। প্রতিদিনের চিরচেনা সকাল এদিন যেন হয়ে যায় জাদুবাস্তবের সকাল, আটপৌরে সব পঞ্জিকার দিনগুলো এই দিনে এসে অকস্মাৎ রক্তিম হয়ে যায়। যেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া অবধি পড়া সূর্যের সবটুকু আলো বর্ণালির রূপ ধারণ করে, যেন কোনো হিরন্ময় পাখি ঠোঁটে আবির নিয়ে সব বাঙালির কপালে একটি করে চুম্বন এঁকে দেয়।

বাংলা নববর্ষ খুব সৃজনশীল একটি পার্বণ। একদিন পয়লা বৈশাখে পান্তার চল ছিল না, ইলিশেরও চল ছিল না। এখন এর চল হয়েছে, তবে এও চিরস্থায়ী কিছু নয়। যত দিন যাবে ততই নতুন কোনো খাদ্য বা পোশাক অথবা নতুন কোনো গান এতে যুক্ত হবে। কারণ বাঙালিত্ব কোনো ধর্মীয় প্রজ্ঞাপন নয় যে চিরকাল তা একইভাবে অনুসরণ করতে হবে, কখনো কিছু পাল্টে ফেলা যাবে না। বাঙালির নববর্ষ মূলত সাংস্কৃতিকতার সমাহার, চলমান নদীর মতো তাতে যোগ হবে নতুন জলধারা। নববর্ষ উদ্যাপনের কোনো আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি-শাস্ত্র নেই। নববর্ষ স্বরূপতই একধরনের মুগ্ধতার নাম, এই দিনটি এলে বাঙালি আপনা আপনি আনন্দ আর মুগ্ধতার একটি সংক্রান্তিতে প্রবেশ করে। নববর্ষের সকালে উঠে বাঙালি দেখে যে চারদিকের পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে গেছে। নববর্ষে বাঙালি হয়ে ওঠে মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম। কারণ নববর্ষবিষয়ক কোনো পারলৌকিক প্রজ্ঞাপন নেই; অথবা নেই কোনো প্রাচীন পুঁথির প্রতাপ।

বাঙালি জাতি বড় মরমি মনের, জাতিগতভাবে সে কখনো খুব গোঁড়া ও হিংস্র হয়ে ওঠেনি। বাঙালিত্বের একটি অপরিহার্য উপাদান তাই অসাম্প্রদায়িকতা। যে অসাম্প্রদায়িক নয়, সে বাঙালিও নয়, বিশ্বমানবও সে নয়। কারণ যে সাম্প্রদায়িক, তার ভালোবাসার মধ্যে একধরনের একপেশে এজেন্ডা ও ঘৃণার প্রকল্প লুকিয়ে থাকে। আজকাল এমন কিছু ঘৃণাজীবীরও দেখা মিলছে। বাংলার অন্ধকার কিছু স্তূপে বেড়ে উঠছে বীভৎস কিছু চামচিকে। এদের সব সময় মনে হতে থাকে, নববর্ষ পালন খুব খারাপ ব্যাপার। নববর্ষের এত সুর এত রং এত গান এত মেলা আর দলবদ্ধ মঙ্গলযাত্রা দেখে এরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এদের মনে হয়, এসব করলে সৃষ্টিকর্তা খুব রাগ করবে আর তাতে এই জাতির খুব অমঙ্গল হবে। এরা জানে না যে বাঙালি কখনো শিল্পহীন, সংগীতহীন, আনন্দহীন জাতি ছিল না; বাঙালি কখন তা হতে পারবেও না। আর শিল্পকলাহীন মানুষ হওয়ায় গৌরবের কিছু নেই।

অধুনা কিছু ধর্মান্ধ উন্মাদ বৈশাখকে ভয় পায়, ভয় পায় বাংলা নববর্ষকে। তাদের কাছে নববর্ষ একটি কাল্পনিক বিভীষিকা ও নিষিদ্ধ বস্তু। ও দিন তারা শুয়ে শুয়ে দিন পার করে দিতে রাজি, কিংবা রাজি রাক্ষসের মতো হাউ মাউ খাউ করে দিন পার করতে, তবু সবার সঙ্গে মিলেমিশে নির্মল আনন্দের দিনটা উদ্যাপনে তাদের বড় দ্বিধা। কেউ কেউ অবশ্য শুধু দ্বিধাতেই সন্তুষ্ট নয়, তার স্বপ্ন জাগে ব্যাগভর্তি বোমা নিয়ে নববর্ষের অপূর্ব সব গান আর বাদ্যের মধ্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটাতে; নববর্ষের আনন্দমগ্ন সকালটি তাদের স্নায়ু সহ্য করতে পারে না। উৎসবমগ্ন মানুষের সুখী মুখম-ল এরা সহ্য করতে পারে না। খুব অপরিচিত লাগে সংবেদনহীন এই মানুষগুলোকে। কীভাবে এদের মস্তিষ্ক কাজ করে আর কীভাবে এরা মঙ্গল-অমঙ্গল সম্পর্কে চিন্তা করে, আমরা জানি না। কিন্তু নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বোমারু এই মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা বুঝতে পারি, সংস্কৃতিহীন মানুষ কী বীভৎস!

 

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

thirteen + 9 =