শায়লা জাহান
জৌলুসপুর্ন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঘটেছে অনেক উত্থান-পতন। একসময় সোনালি যুগ পাড়ি দেওয়া বিনোদন পাড়াতেও পড়েছিল দূর্দিনের ছায়া। কালক্রমে বাংলা সিনেমার জোয়ারে কি কিছুটা হাওয়া বদল হয়েছে? এইসব কিছু নিয়েই এই আয়োজন–
১৯৫০ এর দশকে সবাক চলচ্চিত্র নির্মানের মাধ্যমেই মূলত এই দেশে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এক হিসেবে দেখা গেছে ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০টির মত আর ২০০৪ সালেই ঢাকাতে বছরে গড়ে প্রায় ১০০টির মত ছবি মুক্তি পায়। এ হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে নিছক ছোট ভাবাটাই ভূল হবে। এদেশের চলচ্চিত্রের ঝুলিতে যেমন “তিতাস একটি নদীর নাম”, “সুজন সখী”, “গোলাপী এখন ট্রেনে”, “সারেং বৌ”, “দুখাই” এর মত জননন্দিত সিনেমা আছে তেমনি “মাটির ময়না”, “শ্যামল ছায়া’’, “নিরন্তর”, “ডুব”, “গেরিলা’র মতও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত ছবি।
কিন্তু সেসব এখন সুদূর অতীত। মাঝে মাঝে ২-১টি সিনেমা ভালো নির্মাণ হচ্ছে না তা না, কিন্তু নিম্নমানের নির্মান শৈলী, যুগোপযোগী গল্প ও চিত্রনাট্যের অভাব, তারকাশুন্যতা, ফিল্ম পলিটিক্স সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে এই খরার সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে কমে যায় সিনেমা হলের সংখ্যা। এর মাঝে পুরো বিশ্বে থাবা হানে করোনা ভাইরাস। যার তান্ডবে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন অনেকটাই লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কিছু কিছু সময়ে চলচ্চিত্র নির্মান ও প্রদর্শন সংশ্লিষ্ট কাজ হলেও পুরোটা সময়ে মূলত সবধরনের কর্মকান্ড বন্ধই থাকে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারনে বিগত দুই বছর সিনেমার বাজারে মন্দাবস্থা চললেও এই বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। দুই ঈদকে ঘিরে মুক্তি পায় বেশ কিছু ছবি। ঈদুল ফিতর-এ মুক্তি পেয়েছিল শাকিব খানের “গলুই” ও “বিদ্রোহী’’। এছাড়াও ছিল সিয়ামের “শান”। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত সমালোচিত হয়েছিল ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো ঘিরে।
অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তের কাজ ,এই মূলমন্ত্র নিয়েই অনন্ত হাজির হয়েছিলেন তাঁর ১০০ কোটি বাজেটের ছবি “দিনঃ দ্য ডে’ নিয়ে। ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার এই ছবি প্রায় শতাধিক হলে মুক্তি পেয়েছিল। বিশাল বাজেট ও আন্তর্জাতিক লোকেশনে চিত্রিত হওয়া সিনেমাটি দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও তার পুরোপুরি সফল হতে ব্যর্থ হয়েছে। অল্প বাজেট এবং বড় কোন তারকাবিহীন ঈদের আরেকটি ছবি ছিল “পরান’। রায়হান রাফি পরিচালিত ছবিটি ২০১৯ সালে শুটিং হলেও করোনার জন্য এই বছর মুক্তি পায়। শরীফুল রাজ, বিদ্যা সিনহা মিম এবং ইয়াশ রোহান অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের গল্প নিয়ে আবর্তিত এই ছবিটি মুক্তির পর পরই ভালোই প্রশংসিত হয়।
এক ভিন্ন ঘরানা নিয়ে ২৯ জুলাই মুক্তি পায় “হাওয়া’ মুভিটি। রিলিজের আগেই অপেক্ষা আর সাদা সাদা কালা কালা গানে বুঁদ হয়েছিল পুরো দেশ। শিল্পীদের অসাধারন অভিনয় এবং শক্তিশালী সিনেমাটোগ্রাফীই মূলত মিস্ট্রি ফিকশন নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি দর্শকদের আবার হলমুখী করে।
আলোচনা সমালোচনা যাই হোক বাংলা সিনেমার হাওয়ায় কিছুটা পালাবদল ঘটেছে তা বলতেই হয়। গল্পে যেমন ভিন্নতা এসেছে তেমনি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। ইদানীংকালের মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর ট্রেলার দেখলেই বোঝা যায়। ছবির কালার গ্রেডিং, গানের চিত্রায়ন, ক্যামেরার কাজ সবকিছুতেই দক্ষতার প্রমান পাওয়া গেছে। আর সামনেই অপেক্ষা করছে “মুজিব: একটি জাতির রুপকার”, “অপারেশন সুন্দরবন” এর মত বিগ বাজেটের মুভি। এই ধারাবাহিকতায় চললে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসতে বেশিদিন আর লাগবেনা।