বিয়ে, ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর গভীরতা বিশাল। এটি হলো একটি নতুন জীবনের শুরু, পরিবারের শুরু এবং সারাজীবন একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকারনামা। আর এই স্পেশাল মুহূর্তের সবকিছুই হওয়া চাই স্পেশাল। সবাই চায় বিয়ের দিনের সাজপোশাকটা এমন হোক, যা তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে শাড়ি ছাড়া নববধূর সাজ যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। আর প্রসঙ্গ যদি হয় বিয়ের শাড়ির, সে ক্ষেত্রে বেনারসি শাড়ি সবসময়ই বিয়ের ফ্যাশনে আধিপত্য বিস্তার করে আছে এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে এর স্থান কখনোই হারায় না। এই বেনারসি শাড়ির টুকিটাকি নিয়েই লিখেছেন শায়লা জাহান।
বেনারসি শাড়ি প্রাচীন ভারতীয় একটি শহর বেনারস বা বারানসিতে তৈরি একপ্রকার শাড়ি, যা এর সোনা এবং রুপার জরি, সূক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সুচিকর্মের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। শাড়িগুলো সূক্ষ্ম রেশম তন্তুর তৈরি এবং জটিল নকশায় সজ্জিত ও নকশাকাটার কারণে তুলনামূলকভাবে ভারী ওজনের হয়ে থাকে। এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সোনার কাজ, ঘন বুনন, পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশা, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, আঁচল এবং জালি কাজ। নকশা এবং বিন্যাসের জটিলতার ওপর নির্ভর করে একটি বেনারসি শাড়ি সম্পূর্ণ হতে ১৫ দিন থেকে এক মাস এবং কখনো কখনো ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বিয়ের পোশাকের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্যাশন, ট্রেন্ডের অনেক ভিন্নতা এলেও বেনারসির আবেদন কখনো ফুরায়নি। এই শাড়ির জমকালো চেহারার সঙ্গে নববধূর সাজের যে রাজকীয় ভাব প্রকাশ পায়, সেটার চেয়ে প্রশংসার আর কী হতে পারে। আজকাল দক্ষ কারিগর এবং তাঁতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য বেনারসি শাড়িগুলো আরও সহজলভ্য এবং বিয়ের কনের পোশাকে একটি পছন্দসই সংযোজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নববধূর জন্য কেমন রঙের বেনারসি যথার্থ?
বিয়ের কনে মানেই আমাদের মাথায় আসে ‘লাল টুকটুকে বউ’। তবে বিয়ের দিন আজকাল নানা রঙের শাড়ি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চলে। তবে অনেকেই সেই চিরাচরিত লাল পরেন। সবার মনোযোগ আকর্ষণ এবং ব্রাইডাল ওয়্যারের ক্ষেত্রে লাল হলো সব রঙের রাজা। এই রং শাড়ির প্রিন্টকে আরও শাইন এবং সমৃদ্ধ করে তোলে। গোলাপি রংও এই বিশেষ দিনের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এটি নববধূর মধ্যে একটা গর্জিয়াস লুক আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে গোলাপি রঙের যেকোনো শেড বা বিভিন্ন রঙের সমন্বয়ে বিয়ের শাড়ি নির্বাচন করা যেতে পারে। যদি কিছুটা ইউনিক লুক ক্রিয়েট করার ইচ্ছা থাকে, তবে শুভ্র সাদা বা সবুজ রঙের দিকে যাওয়া যেতে পারে। সবুজ রঙের ক্ষেত্রে ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের সময়ের ওপর নির্ভর করে হালকা বা গাঢ় উভয় শেডেই পরা যেতে পারে। সবুজ রং ও লাল রঙের মতোই কাপড়ের পুরোটাজুড়ে প্রিন্টকে উজ্জ্বল করে তোলে। মনে রাখতে হবে যে সব মানুষের স্কিন কমপ্লেকশন কিন্তু আলাদা। তাই যে রংই বাছাই করা হোক না কেন, সেই শাড়ির রং যেন আমাদের ত্বকের রংকে আরও বেশি করে হাইলাইট করে।
অথেনটিক বেনারসি চেনার উপায়
খাঁটি বেনারসি শাড়িগুলো দক্ষ কারিগরদের দ্বারা পরম যত্নে তৈরি করা হয়। প্রতিটি বেনারসি শাড়ি আলাদা এবং এটি কীভাবে হস্তশিল্পে তৈরি হয়েছিল, তার একটি গল্প বহন করে। আর সেই সূক্ষ্ম, অথেনটিক শাড়ি খুঁজে পাওয়ার কিছু টিপস হলো :
-খাঁটি বেনারসি শাড়িগুলো উচ্চ মানের সিল্ক এবং আসল সোনা এবং রুপার জরি থেকে তৈরি করা হয়। এই ধরনের তাঁত বয়ন সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত জটিল। আর এটিই শাড়িকে অনন্যতা দেয় এবং দামেও কিছুটা উচ্চমানের হয়। কম দামে অনেকেই সাধারণ শাড়িকে বেনারসি বলে চালিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সস্তা বিকল্পগুলো থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
-শুধু শাড়ির বিপরীত দিকটি পরীক্ষা করেও এর আসলতা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাঁতে বোনা বেনারসি শাড়ি সবসময় পাটা এবং তাঁতের গ্রিডের ভেতরে ভাসমান থাকবে। মেশিনে বোনা শাড়ি হবে মসৃণ ফিনিশিং।
Ñএর জটিল কারুকার্যের জন্য এক একটি বেনারসি তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যায়। উন্নত মানের সুতা ও সিল্ক দিয়ে তৈরি এই বেনারসির আসল শাড়ির কাজ হবে নিখুঁত ও রং হবে পাকা।
-আসল বেনারসি শাড়িতে আমরু, আম্বি এবং ডোমকের মতো মোগল মোটিফ, সেই সঙ্গে কলগা এবং বেলের মতো সূক্ষ্ম ফুল ও পাতার মোটিফ থাকবে, যা নকল নয়।
-শাড়ির আঁচলে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, সাধারণ সিল্কের একটি প্যাচ থাকবে। যা শুধু আসল বেনারসি শাড়িতেই থাকবে।
বেনারসি শাড়ির যত্ন-আত্তি
শখের বেনারসি শাড়ি কেনার আগেও যেমন সতর্ক থাকতে হয়, তেমনি এর যত্নের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। কখনো যদি এটি ধোয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তা বাসায় ধোয়া যাবেনা। লন্ড্রিতে ড্রাই ওয়াশ করাই এর একমাত্র সমাধান। আর আলমারিতে অনেক শাড়ির সঙ্গে গাদাগাদি করে এটা রাখতে যাবেনা। এতে ঘষা লেগে এর সুতার কাজ উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় অন্য সুতি কাপড়ের ভেতরে শাড়িটি মুড়িয়ে রেখে দিলে।
-ছবি সংগৃহীত