বিয়ে মানে এখন একেবারে বিয়ে অভিযান। পাত্র অথবা পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে দিনক্ষণ ঠিক, তারপর বাজার-হাট করা, সব মিলিয়ে মহাযজ্ঞ। কিন্তু এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচাপাতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুষ্ঠুভাবে বিয়ের পুরো আনন্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা। এই শীতেই যারা বিয়ে করতে চলেছ, তাদের জন্য রইল খরচ কমানোর কিছু টিপস।
বিয়ের বাজেট
এককথায় আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনাই হলো বাজেট। আর বিয়ের খরচ যেহেতু আসে রোজগার এবং জমানো টাকা থেকে, তাই তারও পরিকল্পনা করা জরুরি। প্রথমেই বিভিন্ন সূত্র থেকে আয় ধরে তহবিলের একটা হিসাব ছকে ফেলো। তাহলে হাতে মোট কত টাকা আছে, গোড়াতেই তার একটা আন্দাজ পাবে। অনেকে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ নেয়। যার সুদ বেশ চড়া। একেবারে একান্ত প্রয়োজন না হলে, এই ধার কিন্তু এ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা উচিত। অন্তত অনুষ্ঠানের চাকচিক্য বাড়ানোর জন্য তা নেওয়া বোকামি। বিয়ের বাজেটের অন্তত ১০% শুরুতেই আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখো। তাতে সুবিধা অনেক। জোগাড়যন্ত্রের সময়ে আসল খরচ অনুমানের থেকে বেড়ে গেলে, তা সামাল দিতে অসুবিধা হবে না। আর যদি কিছু টাকা শেষে বাঁচাতে পারো, তাতে তো তোমারই ভালো।
খরচের খাত
বিয়ের অনুষ্ঠান তো একটু বড় করে করার ইচ্ছা থাকেই। এটাও ঠিক যে অনেক খরচে কাটছাঁট করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু খাত ধরে ধরে হিসাব করলে টাকা বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। যে খাতে বেশি খরচের সম্ভাবনা সেগুলো হলো :
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, লাইটিং, ডেকোরেশন, ফুল, খাওয়াদাওয়া, গয়না, সাজ, গাড়ি ভাড়া, কার্ড, ছবি, ভিডিও, মধুচন্দ্রিমা।
এর বাইরে কোনো খরচ মাথায় এলে তা-ও লিখে ফেলো। তোমার প্রথম কাজ হলো, এগুলোতে কে কেমন টাকা চাইছে, তা যাচাই করতে একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলা। একজনের দর শুনেই ‘হ্যাঁ’ করে দেওয়া ঠিক নয়।
খুচরো খরচ
খরচের রাশ টানতে কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখতে পারো-
- বর-কনে নিজেরা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে লোক না ডেকে রেজিস্ট্রি করে নিতে চায়, তাতে কিন্তু অনেক সাশ্রয় হয়, নবদম্পতির সংসার শুরু করার সময় অনেকটা কাজেও লাগে তা।
- জয়েন্ট রিসেপশনও এখন নতুন কিছু নয়। এতে দুই পরিবার মিলে খাওয়াদাওয়া এবং অনুষ্ঠানের খরচ জোগায়। তাতে খরচ ভাগ হয়ে যায় দুই ভাগে। ফলে টাকা বাঁচে।
- ক্যাটারারকে খাওয়ানোর দায়িত্ব দিলেও দেখো, নিজে কিছুটা বাজার-দোকান করে দিলে খরচ কিছুটা কমে কি না। যেমন মিষ্টি, আইসক্রিম নিজে কিনে দিলে অনেক সময়ে খরচ কিছুটা কমার কথা।
- অনেকে বিয়ের ঠিক আগে গয়না গড়াতে গিয়ে চাপে পড়ে। তাই অনেক আগেই লকারে থাকা গয়নায় চোখ বুলিয়ে নাও। বিয়ের আগে আদৌ নতুন গয়না কতটা কিনতে হবে, সে ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট হবে। কারণ, এটা এমন একটা খরচ, যেখানে দরাদরির বিশেষ জায়গা নেই।
- ব্যবস্থাপনার ঝামেলা ঘাড় থেকে নামাতে অনেকেই আজকাল /বিয়ের অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হাতে। তাতে কিন্তু খরচ বাড়ে।
হানিমুন
মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা করে রাখো বিয়ের আগেই। প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিং আগে থেকে করে রাখলে খরচ কমতে পারে। বিয়ে যখন ঠিক হয়ে গেল, তখন থেকে শুরু করলেও ফারাক টের পাওয়া যাবে।
ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্য অনেক মা-বাবাই আগে থেকে টাকা জমায়। কেউ কেউ গয়না কেনার প্রকল্পে টাকা রাখে। সেই সব পার করে এখন মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইপির যুগ। তুমি কিছুটা ঝুঁকি নিতে চাইলে শুধু ব্যাংকে টাকা না রেখে ওই সব প্রকল্পে টাকা রাখতে পারো। দীর্ঘদিন ধরে জমালে রিটার্নও বেশি মিলতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা বিয়েতে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সংগতি থাকুক। অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে বিয়ের আনন্দ মাটি করার কোনো মানেই হয় না।
লেখা : রোদসী ডেস্ক
ছবি : সংগৃহীত