ভুলে যাওয়া রোধের উপায়

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহানঃ

আধুনিকতার এই যুগে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছুরই বদল হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে আমাদের লাইফ স্টাইল। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও বেড়ে যাচ্ছে স্ট্রেস, মানসিক অস্থিরতা। যার প্রভাব পড়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। ছোট খাট জিনিস ভুলে যাওয়া খুবই নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার। কিন্তু এর পরিমান যখন বেড়ে যায় তখনই হয় বিপত্তি। ভুলে যাওয়া রোধ করতে এবং ব্রেনকে কর্মক্ষম রাখতে কি করণীয় আসো জেনে নিই।

হতে পারে তুমি একটি রুমে চলে গেছো এবং ভূলে গেছো কেন সেখানে গিয়েছিলে?  এবং অন্তত কয়েকবার তোমার চাবি বা চশমা এক জায়গায় রেখে পুরো ঘর খুঁজে তোলপাড় করে রেখেছ। দোকান থেকে অনেক কিছু কিনে আনলে কিন্তু দেখলে যেটাই বেশি প্রয়োজনীয় তাই ভূলে গেলে। কি পরিচিত লাগছে ঘটনাগুলো? এই ধরনের কাহিনীগুলো প্রায় সবারই জীবনে কমবেশি ঘটে থাকে। অনেকেই এই স্মৃতি ঘাটতি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তারা ভয় পায় যে আলঝেইমারের রোগের মতো গুরুতর অবস্থার দিকে যাচ্ছে কিনা। মাঝে মাঝে ভূলে যাওয়া জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ, যা আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে আরো সাধারণ হয়ে উঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি অ্যালার্মিং কোন বিষয় হয়ে উঠেনা। আমাদের বয়সের সাথে সাথে মস্তিষ্ক সহ সারা শরীরে পরিবর্তন ঘটে। ফলস্বরুপ, লক্ষ্য করলে দেখবে যেকোন নতুন কিছু শিখতে আগের চেয়েও তোমার বেশি সময় লাগছে। সৌভাগ্যবশত স্নায়ুবিজ্ঞানীগণ আশ্বস্ত করেছে যে এইগুলো স্বাভাবিক এবং কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস এবং অনুশীলনগুলো প্র্যাকটিসের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি উন্নত করা যায়।

-যদি তুমি সবসময়ই কিছুনা কিছু ভুলে যাও, তবে এটি কমিয়ে আনার দুর্দান্ত উপায় হলো জিনিস যত্রতত্র না রেখে যথাস্থানে রাখা। হোক সেটা চাবি, মানিব্যাগ কিংবা রিমোট- এগুলো একই জায়গায় রাখা এবং বিশেষত এমন একটি জায়গায় রাখা যা তুমি নিয়মিত দেখ।

-টু ডু লিস্ট করে রাখা। প্রতিদিনকার কি কাজ করতে হবে তার প্রায়োরিটি অনুযায়ী লিস্ট করে রাখলে কাজ সম্পাদনে সুবিধা হবে।

-খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সবুজ শাক, ইলিশ মাছ এসবে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই অনেকেই এসব খেয়ে বুদ্ধি তথা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপদেশ দেন।

-সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকলে একাগ্রতা বাড়ে। ফলে মনযোগী হতে সুবিধা হয়।

-ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করো। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রিস এবং নিউরলজির অধ্যাপক দেবানন্দ এবং ডিউক ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক মুরালি ডোরাইস্বামি বলেন, তারা ৭৮ সপ্তাহ ধরে ১০৭ ভলেন্টিয়ারের উপর স্টাডি করে দেখেছ যে, যাদের নিয়মিত ক্রসওয়ার্ড পাজল করতে বলা হয়েছিল তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা অভাব পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তুলনায় অনেক ভাল ফল করেছে যাদের ভিডিও গেম খেলে একই পরিমাণ সময় ব্যয় করতে বলা হয়েছিল।

-আনন্দের জন্য পড়া শুরু করো। সাম্প্রতিক এক গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা নির্ধারণ করেছে যে এমন জ্ঞানীয় অভ্যাস আছে যা গেম খেলা এবং ক্রসওয়ার্ড পাজল ডুয়িংকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা দেখেছে যে আনন্দের সহকারে পড়া বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করে।

-পর্যাপ্ত ঘুমানো। কীভাবে ওজন কমানো যায় থেকে শুরু করে কীভাবে মেজাজ উন্নত করা যায় সব কিছুর পরামর্শ দেওয়া নিবন্ধগুলোতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর কথা বলা হয়ে থাকে। এ থেকে বুঝা যায় ঘুম শরীর ও মন উন্নত করতে কতটা জরুরী। ঘুমের অভাব কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে তা বিচার করার বিষয়গত ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলি- তাই আমরা জানি না আমাদের স্মৃতি কতটা খারাপ হয়। তাই এর একমাত্র উপায়? ঘুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এই ধরনের টুকিটাকি ভূলে যাওয়া আমাদের জীবনের ব্যস্ততা, স্ট্রেসের পরিমানের উপর নির্ভর করে। একটি হেলদি লাইফ স্টাইল ফলো করা, সুষম খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা ইত্যাদির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তবে পরিস্থিতি যদি মনে হয় আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই উত্তম।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

three × 2 =