ভোরে ওঠার উপকারিতা

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহানঃ

 

বলা হয় ‘স্লিপ ইজ দ্যা বেস্ট মেডিটেশন।‘ দেহ ও মনের সুস্থতার জন্য ঘুম কতটা জরুরী তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ছোট থেকেই আমরা জেনে আসছি তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া কিভাবে একজন মানুষকে স্বাস্থ্যকর, সম্পদশালী এবং জ্ঞানী বানায়। যদিও মানুষের মধ্যে ঘুমের সময়সূচী আলাদা, কিছু স্বাভাবিকভাবেই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে পছন্দ করে তো অন্যরা দেরি করে ঘুমাতে পছন্দ করে। দৈনন্দিন পরিভাষায়, দেরি করে জেগে থাকার প্রবণতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রায়শই নাইট আউল বা রাত্রি পেঁচা বলা হয় এবং তাড়াতাড়ি জাগে তাদের বলা হয় আর্লি বার্ড। এই আর্লি বার্ড যারা তাদের বেনেফিট হলো একটি নিরবচ্ছিন্ন শান্তি, নির্মল আকাশ এবং সারাদিনের জন্য রিচার্জ করার জন্য প্রচুর সময় হাতে পাওয়া। ‘বিলিওনিয়ার’স রুটিন’ অনুসরণ করার বিভিন্ন ট্রেন্ডের মধ্যে একটি হল ভোরে ঘুম থেকে উঠা। ভোরে উঠার বিনেফিট টাই বা কী, তার কারণ নিয়েই আমরা এসেছি।

নিজের জন্য সময়

যখন তুমি তোমার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আগে ঘুম থেকে উঠো, তখন কেবল যে সকালের কফি বা চায়ের স্বাদ নিতে পারবে তা কিন্তু নয়, বরং অনেক কাজও করতে পারবে। এই কর্মব্যস্তময় জীবলে নিজের একান্ত যে শখ রয়েছে তার জন্য সময় নেই? খুবই সহজ সমাধান, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরো। যোগব্যায়ামকে রুটিনে অন্তর্ভূক্ত করতে চাও? তড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠো। বিজ্ঞানীরা ঘুমের জড়তার অস্তিত্বও প্রমাণ করেছেন। ঘুম থেকে উঠার পর দুই-চার ঘন্টার সময় আমাদের মস্তিষ্ক পূর্ণ ক্ষমতায় তার ক্রিয়াকলাপ করতে পারেনা। ঘুম থেকে উঠার এই অভ্যাস একবার রপ্ত করলে, তোমার ভেতরকার সতেজতা এবং কাজের প্রতি স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।

রাতে ভালো ঘুম

যারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারাও রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যেহেতু ভোরে উঠার কারণে রাতে ক্লান্তি বোধ করে, এতে অহেতুক রাত জাগার পরিবর্তে তাড়াতাড়ি নিজেকে বিছানায় যাওয়ার ঝোঁক বাড়তে পারে। এটি তোমাকে ঘুমের সমস্ত চার-ছয়টি চক্র সম্পূর্ণ করতে দেয় যাতে তুমি পরের দিন পুনরুজ্জীবিত বোধ করতে পারো।

সতেজ ত্বক

এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে ত্বককে সতেজ ও সুন্দর দেখাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের অভাব বা অনুপযুক্ত ঘুমের চক্রের কারণে ফাইন লাইন, বলিরেখা, ডার্ক সার্কেল এবং ব্রণ হতে পারে। ঘুমানোর সময় ত্বকের কোষগুলো পুনরুত্থিত হয়, ইউভি ক্ষতি ঠিক করে এবং কোলাজেন ও রক্ত প্রবাহ বাড়ায়।

উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য

গবেষণা দেখায় যে, যারা দেরীতে ঘুমাতে ও জেগে উঠার প্রবণতা বেশি তাদের ভেতরে উদ্বেগ এবং বিষন্নতা, যারা আগে ঘুমায় এবং জেগে উঠে তাদের তুলনায় বেশি। ভোরে যারা উঠে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণগুলো ভালো দেখায়। তারা আশাবাদী, সন্তুষ্ট এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক বোধ করে। যাইহোক, একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে যারা দেরীতে ঘুমাতে পছন্দ করে তারা তাদের ঘুমের সময় সামঞ্জস্য করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম হতে পারে।

সকালের ব্যায়ামের সময়

যেকোন প্রকারের শরীরচর্চা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই উপকারী। হোক সেটা হার্ড কোন এক্সাইরসাইজ কিংবা শুধুমাত্র হাঁটা, নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা ভালো মানের ঘুমেরও নিশ্চয়তা দেয়। দেখা গেছে যে, যাদের ঘুমের সমস্যা হয় তাদের ঘুমের মান উন্নত করতে সন্ধ্যার ব্যায়ামের তুলনায় সকালের ব্যায়াম অনেক কাজে দেয়।

সুষম খাদ্য নিশ্চয়তা

সকালের নাস্তা হল দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন খাবার। এটি তোমাকে সারাদিনে চলার জন্য জীবনীশক্তি বাড়ায়। সকালে তাড়াতাড়ি উঠলে একটি সুষম ও সুস্বাদু প্রাতঃরাশ গ্রহণের নিশ্চয়তা করা যায়। দেখা গেছে যারা সকালের নাস্তা খায় তারা সকালে বেশি সতর্ক বোধ করে এবং যারা এই খাবার এড়িয়ে যায় তাদের তুলনায় তাদের মেজাজ ভালো থাকে।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার টিপস

রাত্রি পেঁচা যারা তাদের জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং ভোরে উঠা কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু টিপস ফলও করলে তারা সফলভাবে নিজেদের রুটিন রুপান্তর করতে পারে-

-হঠাৎ করেই সম্পূর্ণ নতুন ঘুমের সময়সূচী শুরু করার পরিবর্তে, ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু করো। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থে উঠার সময় ১৫ মিনিট করে সময় আগপিছ করে নাও। আস্তে আস্তে যখন এতে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে তখন আবার সময়সূচী পরিবর্তন করো যতক্ষন পর্যন্ত না কাঙ্ক্ষিত সময়ে পৌঁছাও।

-মানসিক ভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। এই নিমিত্তে অ্যালার্ম সেট করে তা হতের কাছে না রেখে দূরে রাখতে হবে।

-আগেই বলেছি সকালের ব্যায়াম ভালো ঘুমের নিশ্চয়তা দেয়। তাই নিয়মিত ভোরে উঠে ব্যায়াম করার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে।

-সকালের ব্যায়ামের মত তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ করাও জরুরী। সকালের প্রাতঃরাশ খাওয়ার পাশাপাশি দুপুরের খাবার এনং রাতের খাবার সবসময় একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ঘুমানোর আগে আগে কোন কিছু খাওয়া পরিহার করতে হবে।

-ক্যাফেইন একজন ব্যক্তির ঘুমের ক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। আগে ঘুমানো এবং জেগে যদি উঠতে চাও, তবে দিনের পরে কফি, চা এবং ক্যাফিনের অন্যান্য উৎস এড়াতে হবে।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

four × two =