মনের রঙে সাজানো ঘর

করেছে Shaila Hasan

রঙের জাদুতে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মনও ফুরফুরে হয়ে ওঠে। তাছাড়া নতুন বর-কনের ঘর বলে কথা। সুন্দর দাম্পত্যের জন্য ঘরের সাজ বেশ ভূমিকা রাখে, এমন মত বিশেষজ্ঞদেরও। তাই বুঝেশুনে রং নির্বাচন জরুরি। লিখেছেন সুরাইয়া নাজনীন।

‘হর ঘর কুছ ক্যাহতা হ্যায়’ বিজ্ঞাপনের এই লাইনটা নিশ্চয়ই মনে পড়ে। কেমনভাবে নানা রঙে সেজে উঠত সাদা বাড়িটা। কোনো দেয়ালে সমুদ্রের নীল, তো কোনো ঘরে ইট লাল রঙের ক্যালাইডোস্কোপে আস্তে আস্তে প্রাণবন্ত হয়ে উঠত বাড়ি। আর সত্যিই তো, রঙের মায়া তো এমনই। নিমেষে বদলে দিতে পারে পুরো বাড়ির চেহারা। আর শুধুই কি বাড়ি, এই রঙের জাদু এমনই যে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মনও ফুরফুরে হয়ে ওঠে। অনেকেই হয়তো জানে না, একেক রঙের আবার একেক রকম মানে আছে। লাল মানে যেমন প্যাশন, প্রেম, ভালোবাসা; হলুদ মানে আবার হাসিখুশি মনমেজাজের ছবি। তাহলেই বোঝো, ঘরে কেমন রং করাচ্ছ, তার ওপর কিন্তু আমাদের ভালো থাকাও অনেকটা নির্ভর করে।

আগেকার দিনে বাড়ির রং নিয়ে মাথা ঘামানো বা চর্চার করার বিশেষ জায়গা ছিল না। চুনকাম করা দেয়াল বা বড়জোর হালকা হলুদ কিংবা সাদা রং বলতে এইটুকুই। টালির ছাদ থাকলে লালের অল্প ছোঁয়া। শেওলা সবুজ রংও বেশ লাগে দেয়ালে। আর সাদারং তো আরও সুন্দর।কিন্তু সাদার একটা আলাদা মাধুর্য আছে। সাদা মানেই তো প্রশস্তি। সারাদিনের পরিশ্রমের পর, ক্লান্তি কাটাতে এর থেকে ভালো আবহ কি আর কিছু হতে পারে? নবদম্পতির মনে একরাশ প্রশান্তি দিতেও সাদা রঙের জুড়ি নেই। আবার সাদা দেয়ালে রঙিন ক্যানভাস বা ওয়াল হ্যাঙ্গিং যেন আলাদাই মাত্রা পায়। আর রঙিন পর্দা, বেডকভার, ম্যাট সাদা বেসে যেন বেশি সুন্দর লাগে। আর ডেকর নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগও প্রচুর। ফলে সাদা কিন্তু একেবারেই ফেলনা নয়। তবে হ্যাঁ, মেইনটেন করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার।

বাড়ির রং নিয়ে এখন অবশ্য এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ প্রচুর। আর হবেই তো, বাড়ির দেয়াল তো এখন শৌখিনতার পরিচায়ক। আর তাই তো কোথাও দেখা যায় পান্না সবুজ, তো কোথাও সূর্যাস্তের কমলা। শেড কার্ডজুড়ে হাজার একটা রঙের অপশন। এর সঙ্গে টেক্সচার্ড দেয়াল তো আছেই। আসলে ঘরের রং থেকেই তো ঘরের চরিত্র নির্ধারণ করা যায়। তবে এখানেও মানতে হবে অন্দরসাজের ব্যাকরণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই পারো, কিন্তু তাহলে মাথায় রাখতে হবে বাড়ির আয়তন, আসবাবের টেক্সচার, মাটির চরিত্র। তার সঙ্গে রুচি তো আছেই। আসলে ঠিক রং প্যাটার্ন এবং টেক্সচারই কিন্তু অন্দরসাজের মূল কথা।

বাড়ি রং করানোর সময় একই কালার ফ্যামিলির রং ব্যবহার করা যেতে পারে। কমপ্লিমেন্টারি রঙের মাধ্যমেও বিস্তার করতে পারো রঙিন মায়াজাল। আবার লাল, নীল, হলুদের মতো রং একসঙ্গে ব্যবহার করে সৃষ্টি করতে পারো ম্যাজিকাল ট্রায়ার্ড। তবে এ ক্ষেত্রে কিন্তু পরিমিতিবোধ থাকাটা খুব দরকার। রঙের সঠিক ব্যবহারে ইলিউশনও তৈরি করা যায়। রঙের কারসাজি এমনই যে ছোট ঘর বড় দেখায়, আবার যে ঘরে তেমন আলো-বাতাস ঢোকে না, তাই মনে হয় খোলামেলা। এই যেমন ছোট ঘরে আইসি ব্লু বা ক্রিম খুব ভালো। আসলে উজ্জ্বল এবং নরম টোন সব সময়ই ঘর বড় দেখাতে সাহায্য করে। রঙের সঙ্গে আসবাবের কিন্তু একটা আত্মিক যোগাযোগ আছে। যতক্ষণ না এরা একে অপরকে কমপ্লিমেন্ট করছে, জানবে অন্দরসাজ একেবারেই অসম্পূর্ণ। আসবাবের রং হালকা হলে, দেয়ালেও হালকা রং করাও। এতে আসবাবের আয়তন ছোট দেখায়। আর ঘরে একটা খোলামেলা আমেজ তৈরি হয়। ঘরের মোল্ডিং সবসময় দেয়ালের থেকে এক শেড হালকা রাখবে। ঘর বড় হলে একটু গাঢ় রং করানোই যায়। তবে ভালো হয় যদি একটা দেয়ালে গাঢ় রং করিয়ে বাকিগুলো নিউট্রাল রাখতে পারো। তাহলে কালার ব্যালান্সটা ঠিক থাকে। আবার ঘরে যদি প্রচুর আলো ঢোকে, তাহলেও সি গ্রিন, টারকোয়াজ, গাঢ় নীল, গাঢ় গোলাপির মতো রং করাতে পারো। এখানেই শেষ নয়। এর সঙ্গে প্যাটার্ন পেন্টিং বা টেক্সচারড ওয়ালও করাতে পারো। নানা রকম স্ট্রোকস আর নানা রঙের সংমিশ্রণে টেক্সচার্ডও কিন্তু সত্যি ম্যাজিক্যাল। পুরো ঘরের ডেফিনেশনটাই বদলে যায়। একটু খরচসাপেক্ষ ঠিকই, কিন্তু বাড়ির জন্য এইটুকু তো করাই যায়। আফটার অল, যেখানে থাকো, যা তোমারই ব্যক্তিত্বের এক্সটেনশন, সেই বাড়ি একটু সুন্দর দেখাতে একটু অ্যাফোর্ট তো দিতেই হবে।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

12 + nineteen =