মেকআপ টিপস এন্ড ট্রিকস

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহান:

কর্মক্ষেত্রে যাওয়া হোক কিংবা কোন পার্টি, প্রতিনিয়তই আমরা সকলেই মোটামুটি মেকআপ করে থাকি। এই ব্যাপারে তুমি একজন বিগেইনার বা এক্সপার্ট হও না কেন, মেকআপ বিষয়ক কিছু টিপস এবং কৌশলের ব্যাপারে জানা থাকলে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হয়ে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে সর্বদা কাজে আসবে। আর এই লেখাটি সাজানো হয়েছে এমন কিছু মেকআপ কৌশল নিয়ে।

মেকআপ হল একটি শিল্প। একজন আর্টিস্ট যেমন রঙ তুলির ছোঁয়ায় একটি সাধারণ কাগজে অসাধারণ চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে, তেমনি মেকআপের সাহায্যে আমরা আমাদের চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রেখেই একে আরও উন্নত করতে পারি। আর নিখুঁতভাবে তা ফুটিয়ে তুলতে ধৈর্য ও মনোযোগের পাশাপাশি জানা দরকার কিছু কৌশলের। যা অনেক কাজে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ কৌশল তোমাকে আইশ্যাডো ব্যবহার করে নিখুঁত উইং ডিজাইন পেতে সাহায্য করতে পারে। আবার কন্ট্যুর করতে কিংবা হাইলাইট করতে একই আইশ্যাডো প্যালেট কীভাবে কাজে আসতে পারে। এমন অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে তুমি খুব সহজেই ত্রুটিবিহীন এবং মার্জিত একটি লুক ক্রিয়েট করতে পারবে।

  • একটি স্মার্ট মেসি-মুক্ত মেকআপ চাও? তবে মুখের মেকআপ শুরু করার আগে চোখের মেকআপ করে নাও। আগে বেজ তৈরি করে নিলে পরবর্তীতে গালে পাউডার শ্যাডো পড়ে যাওয়া বা আই লাইনার স্ম্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই তা এড়াতে এই পদক্ষেপটি নিতে পারো। এবং চোখের কিছু দেয়ার আগে প্রাইমার বা ক্রিম শ্যাডো দিয়ে বেস ঠিক করে নিতে পারো। এতে চোখের মেকাআপের সতেজ ও মসৃণভাব দেখাবে।
  • শ্যাডোর ক্ষেত্রে ডার্ক আইয়ের জন্য ওয়ার্ম টোন এবং লাইট আইয়ের জন্য শীতল বা হালকা টোন, কখনোই তোমাকে নিরাশ করবেনা। চোখের লিডে কিছুটা ফ্যাকাশে, শিমারী শ্যাডো তোমার টায়ার্ড চোখে স্পার্কল যোগ করবে। ক্রিজের জন্য চুজ করবে মাঝারি শেড, যা যেকোন ফ্লেশিভাব দূর করতে ও চোখকে বড় দেখাতে সাহায্য করবে।
  • মেকআপকে দীর্ঘসময়ের জন্য ধরে রাখার জন্য প্রাইমারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তো সবারই জানা আছে। তেল বা ওয়াটার বেইসড যে প্রাইমারই ব্যবহার করোনা কেন, তোমার প্রাইমার এবং ফাউন্ডেশন যেন একই ধরনের হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এদের একসাথে মিশাতে কঠিন করে তুলবে।
  • ফাউন্ডেশন এপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে কি ধরনের কভারেজ চাও আগে তা ঠিক করে নাও। যদি তুমি নিখুঁত কভারেজ চাও, তবে আঙুল দিয়ে নিয়ে তা স্কিনে ড্যাব ড্যাব করে লাগিয়ে নাও। আর যদি ফুল কভারেজ চাও তবে একটি ফাউন্ডেশন ব্রাশ বেছে নাও। সেক্ষেত্রে একসাথেই একেবারে পুরে মুখে ফাউন্ডেশন না দিয়ে অল্প অল্প করে ব্রাশ বা আঙুলের সাহায্যে লাগিয়ে তারপরে স্পঞ্জ দিয়ে যে কোন লাইন ব্লেন্ড করে দিতে পারো।
  • সবসময় নীচের দিকে স্ট্রোক করে ফাউন্ডেশন লাগাও। আমাদের বেশিরভাগের মুখে চুলের পাতলা স্তর থাকে এবং উপরের দিকে ফাউন্ডেশন লাগালে চুলের স্ট্র্যান্ডগুলো আলাদা হয়ে যায়। ফাউন্ডেশন ব্রাশ মেকআপকে ফাটল ধরা থেকে বাধা দেবে। মুখের মাঝখান থেকে শুরু করো এবং ফাউন্ডেশনকে বাইরের দিকে মিশিয়ে দাও। নাকের ছিদ্র, নাকের নীচে, ঠোঁটের চারপাশে এবং নাক থেকে মুখের ক্রিজগুলোতে নিয়ে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে নাও। চোখের নীচে, নাকের পাশে ভেতরের কোণের জন্য ছোট কনসিলার ব্রাশ ব্যবহার করো।
  • মুখের ছোট ছোট দাগ, ডার্ক সার্কেল, পিগমেন্টেশন আড়াল করতে কনসিলারের জুড়ি নেই। সবসময় ফাউন্ডেশন থেকে এক শেড হালকা কনসিলার নির্বাচন করো। আমরা বেশিরভাগই চোখের নিচে অর্ধবৃত্তাকার প্যাটার্নে কনসিলার প্রয়োগ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, চোখের নিচে ত্রিভুজাকৃতি করে কনসিলার দিলে ভালো। এতে শুধুমাত্র যে তোমার পিগমেন্টেশন বা ফোলাভাব লুকানোর জন্য ভালো কাজ করে তা না, এটি মিশ্রিত করাও সহজ।
  • মুখের গুরুত্বপূর্ণ ফোকাল পয়েন্টগুলো সম্পর্কে জেনে নাও। এই হ্যাকটি তোমার তখনই বেশ কাজে দেবে, যখন তোমার তাড়া আছে বা কনসিলার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে আলসে বোধ করছো। এক্ষেত্রে একটি ব্রাশ দিয়ে কিছুটা কনসিলার নিয়ে তোমার চোখের নীচে, মুখের কোণে এবং নাকের কাছে লাগিয়ে নাও। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র তোমার মুখের কেন্দ্রটি হাইলাইট করাই হয়েছে।
  • মুখের বেজ মেকআপের শেষ স্তর বলা হয় ফেস পাউডার। ফেস পাউডার প্রাধানত দুই ধরনের হয়- লুজ পাউডার এবং প্রেসড পাউডার, এবং উভয়ই ডিউয়ি এবং ম্যাট ফিনিশের মধ্যে আসে। কোনটা কোন কাজে ব্যবহৃত হয় তা জানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। লুজ পাউডার মেকাপকে সঠিকভাবে সেট করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যবহার করা হয়। আর প্রেসড পাউডার টাচ-আপের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
  • ত্বকে একটুখানি ব্লাশনের ছোঁয়া তোমাকে তাৎক্ষণিক স্নিগ্ধ ও সজীব দেখাবে। একটু অন্যভাবে ব্লাশন ব্যবহার করতে পারো। এর জন্য তোমাকে প্রথমে ব্লাশ লাগিয়ে তার উপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। ফলাফল দেখলে তুমি নিজেই চমকে উঠবে। মনে হবে তুমি ভেতর থেকে যেন গ্লো করছো। তবে ব্লাশটি হতে হবে ক্রিম বা লিকুইড ফর্মের। পাউডার ব্লাশের ক্ষেত্রে তা প্যাচিনেস সৃষ্টি করতে পারে।
  • পাউডার দিয়ে ব্লাশ ব্লাটিং করার পরিবর্তে একটি টিস্যু পেপার ব্যবহার করো। প্রয়োগ করার পর এটিকে হালকাভাবে ব্লাশের উপর প্রেস করে নাও। তারপর ব্রাশ বা স্পঞ্জ দিয়ে বাকি কাজ শেষ করে নাও।
  • চোখে আই লাইনার লাগাতে যেয়ে বেশ হ্যাপায় পড়তে হয়না এমন সংখ্যা খুব কমই আছে। এক চোখে পারফেক্টলি ওকে থাকলে দেখা যায় আরেক চোখে সব ভন্ডুল হয়ে যায়। এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে তোমার ল্যাশ লাইনে একেবারেই সরল রেখা আঁকার চাইতে লাইনার দিয়ে ছোট ছোট ডট বা ড্যাশ এঁকে নাও এবং তাদের একসাথে মিলিয়ে দাও। নিখুঁতভাবে করা আইলাইনার পেয়ে যাও নিমিষেই।
  • সব তো হলো। কিন্তু ঠোঁট রাঙানো ছাড়া সব সাজ যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ঠোঁটের আকৃতি সুন্দর দেখাতে লিপ লাইনার দিয়ে এর আউটার লাইন এঁকে নাও। লিপ লাইনার এবং লিপস্টিক সবসময়ই একই শেড নির্বাচন করো, না হলে তা দেখতে দৃষ্টিকটু দেখাবে। লিপস্টিক লাগাতে সবসময় মাঝখান থেকে শুরু করে বাইরের দিকে লাগাতে হবে। ঠোঁটকে আরও সুন্দর ও ডিফাইন করতে এর আউটার লাইনের বাহিরে কনসিলার দিয়ে সেট করে নাও। সবশেষে লিপস্টিকের স্থায়িত্ব ধরে রাখতে এর উপর টিস্যু পেপার ধরে কিছু পাউডার বুলিয়ে নাও।

একদিনেই কেউ রাতারাতি মেকআপে এক্সপার্ট হতে পারেনা। যত তুমি প্র্যাক্টিস করবে ততই তুমি অভিজ্ঞ হবে। তবে হ্যাঁ, শুধু মেকআপ করলেই কিন্তু হবেনা; সাথে তোমার ব্যবহার করা মেকআপ ব্রাশ, বিউটি ব্লেন্ডারগুলো সময়ে সময়ে পরিষ্কার করা জরুরী। কারণ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু এসব থেকেই হয়ে থাকে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

three × three =