যে ছবি কথা বলে

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহান

বর্তমান বিশ্ব উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নিত্যনতুন আবিষ্কার একদিকে যেমন মানুষকে শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর করে তুলছে অপরদিকে এগুলো বিস্তৃতভাবে বৈশ্বিক বিভাজনকেও ত্বরান্বিত করছে।

সাল ২০১৫, তুরস্কের অন্যতম অবকাশ যাপন কেন্দ্র বোদরামের সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে লাল টি-শার্ট  আর নীল প্যান্ট পরা এক শিশু। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে সেদেশের হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে ইউরোপের দিকে ছুটছে। অন্যদের  মত সাগরপথ পাড়ি দিতে যেয়ে নৌকাডুবিতে প্রান হারায় তিন বছর বয়সী এই আয়লান কুর্দি। তুরস্কের ফটোসাংবাদিক নিলুফার দেমিরের তোলা এই একটিমাত্র ছবি বিশ্বের বিবেক যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাকেই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে প্রচন্ডভাবে।ওমরান দাকনিশ, যার রক্ত এবং ধূলায় ঢাকা মুখ সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়েছে। শুধু এরা নয়,এমন অনেক হৃদয়বিদারক ছবি রয়েছে যা ঘুমন্ত বিশ্বকে কড়া নাড়িয়ে দিয়ে গেছে বারবার।

                                                                       

 

তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছে ইস্তানবুলের এক চিত্রগ্রাহকের ছবি। উহুর গ্যানলিয়েনকুস, একজন তুর্কী গ্রাফিক ডিজাইনার। যিনি পুরো বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অবিচার তুলে ধরে নজরে পড়েছেন। তাঁর ছবির বিষয়বস্তু খুব একটা নতুন না হলেও একটি একক চিত্রের মধ্যে দুটি পৃথক বিশ্বের (একটি পশ্চিমা বিশ্ব অন্যটি মধ্যপ্রাচ্য) প্রতিকৃতি অঙ্কন করেছেন। পাশাপাশি জুড়ে দেয়া একজোড়া ফটোগ্রাফ যুক্ত করে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একই গ্রহে থাকার পরেও এই জায়গাগুলো কত আলাদা।শিল্পী উহুরের কোলাজগুলো সুবিধাভোগী ও নিপীড়িত, দুঃখ ও আনন্দ, সম্পদ ও দারিদ্র্য এবং প্রেম ও হতাশাকে একত্রিত করেছে। উহুরের মতে, একটি চিত্র হাজার হাজার শব্দের চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে। কোন সংকটের সমাধান অনেক জটিল শব্দ দ্বারা বর্ননা করা যেতে পারে। কিন্তু কোন শিল্প বা আর্ট পড়ার এবং বুঝার কোন ভাষা জানার দরকার পড়বে না। মূলত ২০১৬ সালে উদ্বাস্তু শিশুদের চোখে যে ভয় ও হতাশার ছায়া তিনি দেখেছেন সেটিই দুটি ভিন্ন জগতের তুলনা করে কাজ করার অনুপ্রেরনা জুগিয়েছিল।

                                                         

তাঁর এডিট করা ছবিতে অর্ধেক অংশে দেখা যায় যে, একটি বিলাসবহুল সাদা ইয়ট  সমুদ্রে ভাসছে অন্যদিকে লাইফ জ্যাকেটে শরনার্থীদের একটি উপচে পড়া ভিড় নৌকা,  যা মরিয়া হয়ে এক টুকরো  নিরাপদ জমি খোঁজার চেষ্টা করছে।

                                                               

যুদ্ধের ফলে শিশুদের জীবনে কিভাবে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলে তাও তিনি দেখিয়েছেন। ছবির এক অংশে দেখাচ্ছে ওয়ান্ডার ওম্যান এর ড্রেস পড়া এক ছোট বাচ্চা। পাশের অংশে আছে একই বয়সের ছোট মেয়ে, রক্ত এবং ব্যান্ডেজে মোড়ানো।  যার মুখজুড়ে রয়েছে অকল্পনীয় ট্রমা সহ্য করার চিহ্ন।

হৃদয়বিদারক এই ছবিগুলো দিয়ে যদি বিশ্ব মোড়লদের টনক নড়ে উঠে, তাহলে  জেগে  উঠবে মানবতা। তবেই “পিস এ্যাট হোম, পিস ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড” মুস্তফা কামাল আতার্তুক এর উক্তিটির মত পুরো বিশ্ব বাঁচবে।

-ছবি সংগৃহীত।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

16 + eleven =