দেখতে দেখতে রমজান চলে এল। এবার গরম থাকবে ভীষণ। সে জন্য খাবারে সচেতন থাকতে হবে অনেক বেশি। করোনা পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে আসেনি। আবার বাড়ছে ভয়াবহতা। রমজানের খাবার পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। তবে কী খাবে আর কী খাবে না, তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে।
রমজান মাসে সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অত্যধিক চিনিযুক্ত খাবার ও অতিমাত্রায় তেল-চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। অবশ্যই অতিভোজন থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে তুমি এক মাসে যে পরিমাণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে, তা সারাতে অনেক মাস লেগে যাবে। রমজানেও আমরা সুষম খাদ্য (ব্যালান্সড ডায়েট) গ্রহণ করতে ভুলব না। সুষম খাদ্য বলতে এমন এক ধরনের খাদ্যকে বোঝায়, যাতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও পানি। রমজান মাসে ভাত, মাছ, সবজি, ফলমূল ইত্যাদি বাদ দিয়ে যদি পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, কাচ্চি, ভাজাপোড়া খাবার, মিষ্টি, খিচুড়ি, ফিরনি, পায়েস ও মন্ডা-মিঠাই ইত্যাদি খাদ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাই, তবে শাকসবজি, ফলমূল, ভাত-রুটি ও ফাইবারজাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাত্রা কমে গিয়ে, সুষম খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। তার মানে এই নয়, রমজানে আমরা ইফতারের মজাদার খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকব।
তবে এসব মজাদার খাদ্য অবশ্যই স্বল্প মাত্রায় গ্রহণ করব এবং রাতের খাবার ও সেহেরীতে প্রয়োজনীয় শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-ভাত অবশ্যই গ্রহণ করব। দুধ-দধিও পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। এ মাসে রোজা রাখার ফলে অনেকেই কাজকর্ম কমিয়ে, ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলে এবং অনেকেই নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলে। এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রোজার সময় প্রত্যেককে তার কর্মতৎপরতা বজায় রেখে রোজা পালন করতে হবে। তবে হাঁটা ও ব্যায়ামের সময়সূচি পরিবর্তন করে নিতে পারো। ছাদে বা একটু বড় বারান্দায় বিকেলে হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করতে পারো। তবে শরীর অত্যধিক ঘেমে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়, এমন ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে।
ইফতারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত যেসব খাবার
যা শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে, যেমন পানি, জুস, শরবত, খেজুর, কলা, পেঁপে, শসা, ক্ষীরা, কাঁচা ছোলা, ভেজা চিড়া, খিচুড়ি, পায়েস, মিষ্টি, হালিম, কাঁচা ফলমূল ইত্যাদি।
রোজার সময় প্রতিদিনের খাবারের তালিকা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তবে পানি বেশি করে খাওয়া উচিত।
রাতে ও সাহ্্রির সময় বেশি করে পানি, ভাত, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম একটু ঝোল কওে খেতে পারো। তবে বেশি মসলা ও তেল-কষানো তরকারি খাওয়া উচিত নয়। ইফতারে স্যুপজাতীয় খাবার খাওয়া ভালো।
শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ভাজাপোড়া, শুকনো খাবার ও তৈলাক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে খেলেও কম খাওয়া উচিত। কারণ, এ-জাতীয় খাবার বুকে জ্বালাপোড়া, বদহজম ও গ্যাসের সৃষ্টি করে।
রোজা রেখে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে দূরে থাকো। বেশি পরিশ্রমের ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে পরিমাণমতো খাবে। রোজায় যেসব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়, সেসব খাবার না খাওয়াই ভালো।
ইফতারে খেজুর তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায় এবং পানি দেহকে রিহাইড্রেট করে।
পর্যাপ্ত ঘুমের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কেননা, সাত-আট ঘণ্টার কম ঘুম তোমার রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে।
সারা দিন রোজা রেখে ইফতারে পানি কম খাওয়ার কারণে হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে ইফতারের সময় থেকে সাহ্রির সময় পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি খাবে।
রোজায় ধূমপান থেকে দূরে থাকো এবং ধূমপান না করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। চা-কফি পান না করাই মঙ্গল। এতে করে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। চা-কফির স্থলে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা পানীয় পান করো। যারা ডায়েট করে, রোজায় খাবারের পরিমাণ সীমিত বলে তাদের ডায়েট করার প্রয়োজন নেই। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করতে হবে। ভুল এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
প্রতিদিন যারা ব্যায়াম করে, তারা রোজায় ব্যায়ামের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের কিছুক্ষণ পর আধা ঘণ্টা করতে পারো। রাতে বা সাহ্রির সময় নিয়মিত হাঁটাচলা ভালো।
ইফতার, সাহ্ররি ও ইফতারের পরবর্তী সময়ে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি খাওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশেষজ্ঞরা অন্তত ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি খাওয়ার কথা বলে থাকেন। সুতরাং ইফতারের আগেই পানি পরিশোধনকারী মেশিনে যথেষ্ট পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখতে হবে। একবারে খুব বেশি পানি পান না করে, অল্প অল্প করে বারবার খাও। নয়তো অস্বস্তি বোধ হতে পারে। অনেকেই আছে, যারা শুধু পানি খেতে পছন্দ করে না, তারা পানির সঙ্গে লেবু কিংবা বিভিন্ন ফ্লেভার মিশিয়ে খেতে পারো। আরও কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প হলো জিরো-ক্যালরি ভিটামিন অথবা ফ্রুট ওয়াটার।
ফল এবং সবজি তোমাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করবে। অনেকেই আছে, যারা সঠিক খাবার ও পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাবে রমজানের প্রথম দিনগুলোয় কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয়।
লেখা: রোদসী ডেস্ক
ছবি : সংগৃহীত