শায়লা জাহানঃ
ঋতুর পালাচক্রে শীতের আবহ ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। আর কিছুদিন পরেই আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। শীতের কনকনে ঠাণ্ডা একদিকে জনজীবনে প্রভাব ফেললেও এই মরশুমে পাওয়া খেজুরের রস, টাটকা শাক-সব্জীর কোন তুলনাই হয়না। উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও কলা-কৌশলের জন্য সারা বছরই কিছু সবজীর যোগান থাকলেও দামের দিক থেকে এগুলো অনেক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে। তাই এখনই সময় শীতকালীন সবজী সংরক্ষণ করে রাখার জন্য। এই ব্যাপারে কিছু টিপস আসো জেনে নিই।
গাজর
সারা বছর রঙিন শাক-সব্জী খাওয়া শরীর ও আত্মার জন্য খুবই পুষ্টিকর। গাজর সবচেয়ে বহুমুখী অভিযোজিত সবজী। এগুলো স্যুপ, ফ্রাইড রাইস, সালাদ এবং ডেজার্টের একটি মূল উপাদান এবং তুমি এগুলো নাস্তা হিসেবে কাঁচা খেতে পারো। ভিটামিন এ-তে ভরপুর এই আইটেম যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারো তবে এর আয়ুষ্কাল তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। এটি দ্রুত ভিজে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। এর কিছু সহজ স্টোরেজ কৌশল রয়েছে যা তোমাকে গাজরের দীর্ঘায়ু বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং সম্ভাব্য খাদ্য অপচয় কমিয়ে আনতে পারে।
-সমস্ত গাজর ফ্রিজে একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিৎ, হোক সেটা আস্ত, খোসা ছাড়ানো বা কাটা যাই হোক না কেন।
-আস্তভাবে গাজর রাখতে চাইলে তা কোনভাবে পানিতে ধোয়া যাবেনা, যদিনা তা ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকে। কারণ পানির সংস্পর্শে আসলে তা নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এরপর এর মাথার কাছে সবুজ পাতা থাকলে তা ছেঁটে দিতে হবে। তা না হলে এটি মূল গাজর থেকে আর্দ্রতা শুষে নিতে পারে। সবশেষে পেপার টাওয়ালে মুড়ে বায়ুরোধী পাত্রে রেখে দিতে হবে। ফ্রিজে রাখা এমন ফল থেকে দূরে রাখো যা ইথিলিন গ্যাস তৈরী করে।
-খোসা ছাড়ানো গাজরের প্রতিরক্ষামূলক বাইরের স্তর সরে গেলে তা শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই অবস্থায় যদি সংরক্ষণ করতে চাও তবে তা প্রতিরোধের জন্য তোমাকে আর্দ্রতা সরবরাহ করতে হবে। এইজন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে গাজর ধুয়ে তা পাত্রে পানি সহকারে রাখতে হবে। এমনভাবে পানি যোগ করতে হবে যাতে গাজরগুলো সম্পূর্নরুপে পানি দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। এইভাবে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা যাবে। তবে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করতে পর্যায়ক্রমে ৪-৫ দিন পর পর পানি পরিবর্তন করলে ভালো হয়।
টমেটো
টমেটোও সারা বছর পাওয়া গেলেও এই সময়ে এর স্বাদ থাকে অতুলনীয়। তরকারি রান্না থেকে শুরু করে, নাস্তা, সালাদ, সস তৈরিতে একে ছাড়া তো ভাবাই যায়না। ভিটামিন সি-তে ভরপুর একে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব। অনেকেই টমেটোকে আস্তভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখে। এতে কিন্তু পরবর্তীতে তা ব্যবহারের জন্য বের করে আনলে কাটতে সমস্যা হয়।
-প্রথমেই টমেটোগুলোকে আস্ত ভালোভাবে ধুয়ে, পুরো পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এর পর তা পছন্দ মত টুকরো করে কেটে থালায় এমনভাবে বিছিয়ে দিতে হবে যাতে একটার গায়ের সাথে অন্যটা না লেগে যায়। এভাবে ফ্রিজে ভালোভাবে ফ্রোজেন করে পরবর্তীতে তা কোন পাত্রে বা পলিথিনে রেখে দেয়া যাবে।
-এছাড়াও টমেটো পেস্ট করে তা প্রয়োজনমত ছোট ছোট কিউব আকারে রেখে বরফ করে সংরক্ষণ করা যায়। চাইলে টমেটো পাতলা স্লাইস করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়া করেও বায়ুরোধী পাত্রে অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।
বাঁধাকপি
শীতের সবজীর কথা বললেই বাঁধাকপির প্রসঙ্গ আসবেই। এতে রয়েছে ভরপুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফাইবার তো আছেই, সাথে আছে ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, কে সহ নানা উপাদান। বাঁধাকপি হিমায়িত করতে প্রথমে একে ব্লাঞ্চ করে নিতে হবে। এইজন্য প্রথমেই একে ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিতে হবে। কাটা টুকরোগুলোকে ফুটন্ত পানিতে প্রায় ৯০ সেকেন্ডের জন্য ব্লাঞ্চ করে নাও। তারপর তা ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে পুরোপুরি শুকিয়ে নাও। এভাবে ডিপ ফ্রিজে অনেকদিন রেখে দিতে পারবে।
ফুলকপি, ব্রকলি
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য ব্রকলি ও ফুলকপি দুটোই বেশি জরুরী। এ দুটোই উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। নিয়মিত এগুলো খেলে বিপাক বৃদ্ধি পায়। সংরক্ষণের জন্য এগুলো টুকরো করে পানিতে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে ঢুকিয়ে রাখলেই হবে।
শিম
তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া এই সবজী। শিমের বিচি চাইলে অনেক দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। বিচি জিপার ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখা যায়। আবার এগুলো রোদে ভালো করে শুকিয়ে বক্সে ভরে দীর্ঘদিন রাখতে পারবে।
ধনেপাতা
ফ্রেশ ফ্রেশ ধনেপাতার যোগে তরকারীর স্বাদ বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। ধনেপাতা বেছে তা পেপার টাওয়ালে জড়িয়ে বক্সে রাখা যায়। আবার চাইলে তা ধুয়ে কুচি করে রোদে ছড়িয়ে দিলে শুকিয়ে যাবে। তারপর তা গুঁড়ো করেও অনেকদিন রেখে দেয়া যাবে।
-ছবি সংগৃহীত