শায়লা জাহানঃ
শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠেছে? শুষ্কতার পাশাপাশি চুলকানি ত্বকের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে? আমরা জানি, ত্বকের চুলকানি, র্যাশের সাথে মোকাবিলা করা কতটা হতাশাজনক হতে পারে- বিশেষত এই শীতকালে! তবে জেনে নাও এই পরিস্থিতিতে তুমি একা নও, আমাদের বয়স যাই হোক না কেন, আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে গেলে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফ্লেকি, চুলকানি ত্বকের সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি শুষ্ক ত্বককে প্যাম্পার এবং প্রতিরোধ করতে? আসো এই ব্যাপারে জেনে নিই।
শীতকালীন চুলকানি, যা প্রুরিটাস হিমেলিস নামেও পরিচিত, এটি এক ধরনের ডার্মাটাইটিস যা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। এটি শরীরের যেকোন অংশে হতে পারে। শীতের এই সময়টাতে বাতাসে শুষ্কভাব বেড়ে যায়। এই শুষ্ক বাতাস ত্বকের উপর থেকে কেড়ে নিচ্ছে আর্দ্রতা। এর ফলে ত্বকও হচ্ছে শুষ্ক। এই শুষ্ক ত্বক ফেটে গিয়ে চুলকানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি চুলকাতে চুলকাতে রক্ত পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে। এই শীতকালীন চুলকানির চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। প্রায়শই এগুলোর সংমিশ্রণ চুলকানি ত্বক থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।
উষ্ণ পানিতে গোসল করা
শীতে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় অনেক গরম পানি ব্যবহার না করে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করলে ভালো হবে। এই সময় ক্ষারীয় সাবান যতটুকু সম্ভব পরিহার করলেই ভালো। শরীরের যে অংশে সত্যিই প্রয়োজন সেগুলোতে শুধু ব্যবহার করো। এছাড়া এর স্থলে হালকা ক্লিনজার বা সাবান মুক্ত পণ্য ব্যবহার করো যা তোমার শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তেল অপসারণ করবেনা।
ময়েশ্চারাইজার, ময়েশ্চারাইজার এবং ময়েশ্চারাইজার
শুষ্ক ত্বকের রক্ষায় ময়েশ্চারাইজারের কোন বিকল্প নেই। গোসলের পরে শরীর ভেজা থাকা অবস্থায় এবং তোমার ত্বক শুষ্ক বা চুলকানি অনুভব করার পরে লোশন, ক্রিম বা তেল প্রয়োগ করো। একটি ঘন, সুগন্ধ মুক্ত ক্রিম ব্যবহার করো এবং তোমার সাথে সর্বদা একটি ছোট টিউব রাখো। এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল চলতে পারে। এক্ষেত্রে চুলকানি দমনকারী ক্রিম ব্যবহার করা এড়িয়ে চলো, কারণ এতে এমন ক্যামিকেল রয়েছে যা শীতের চুলকানিকে আরো খারাপ করতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান
শীতের দিনে আমাদের দেহ থেকে ঘাম কম নির্গত হওয়ার দরুন আমরা তেমন তৃষ্ণা বোধ করিনা। এতে করে আমাদের মাঝে পানি পানেও তেমন দেখা যায়না। কিন্তু শীতের দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল পান করা অত্যন্ত জরুরী। পানির অভাবজনিত রুক্ষতা কিন্তু কোন ময়েশ্চারাইজারেই দূর হবেনা। তাছাড়া শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন বের করে দিতেও পানি তোমার প্রধান সহায় হতে পারে।
বিজ্ঞতার সাথে পোশাক নির্বাচন
সিল্ক এবং সুতির মতো হালকা ওজনের পোশাক পরুন এবং ফ্ল্যানেল ও উলের মতো ত্বক জ্বালাদায়ক কাপড় থেকে দূরে থাকো। বিরক্তিকর সংস্পর্শ কমাতে সুগন্ধ মুক্ত লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করো।
সূর্যের আলো শরীরে লাগানো
সকালের রোদ অন্তত আধ ঘন্টার জন্য রোদ লাগানো জরুরী। ভিটামিন ডি স্তরে কোন ঘাটতি না থাকলে ত্বক ভালো থাকবে।
অতিরিক্ত সমাধান
-ঘরোয়া প্রতিকার এড়িয়ে চলো যাতে অ্যালকোহল বা উইচ হ্যাজেল অন্তর্ভূক্ত থাকে
-শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করো
-ওমেগা ৩ এভং ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খাও
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবে
যদিও ত্বক বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা কখনই খারাপ ধারনা নয়, তবে কখনও কখনও তোমার লক্ষণগুলো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট গুরুতর কিনা তা বলা কঠিন। উপরের টিপস ফলো করার পরেও যদি ত্বকে এখনও চুলকানি, ফ্ল্যাকি দেখা দেয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া এটাই হাই টাইম। বেদনাদায়ক, চুলকানি ত্বকের বোঝা কেউই ইচ্ছা করে বহন করতে রাজি নয়। তাই চুলকানি থেকে পরিত্রান পেতে টিপস গুলো ফলো করো আর যন্ত্রনামুক্ত শীত উপভোগ করো।