শায়লা জাহান
বয়স যখন ৪৫ থেকে ৬৫, জীবনের এই প্রান্তে এসে নিজ পরিচয় ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে একটি পরিবর্তন আসে; যা সংকটের মধ্য বয়স হিসেবে পরিচিত। আমাদের সমাজে তা বুড়ো বয়সের ভীমরতি বলে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু আসলেই কি এমন কিছু? এসব কিছু নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
বেলাশেষে মুভিটির কথা মনে আছে? সংসার জীবনের এক পর্যায়ে এসে বিশ্বনাথ মজুমদার তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী আরতি দেবীকে প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের মধ্যে কি প্রেম ছিল? না কি শুধুই অভ্যাস?’’ জীবনের এই দোরগোড়ায় এসে তাঁর কাছে মনে হল আমি কি পেলাম? রিল লাইফের এই বিশ্বনাথের মত মানুষের জীবনেও বয়সের এই পর্যায়ে এক ধরনের অনুভূতির উদ্রেক হয়। চাওয়া পাওয়ার মধ্যে হিসাব কষতে গিয়ে মনে জমে উঠে হতাশা আর অভিমান। সম্পর্কগুলোতেও কেমন যেন তাল কেটে যায়। আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি এবং উদ্বেগ বা হতাশার অনুভূতিকে মনোবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন মিডলাইফ ক্রাইসিস বা সংকটকালীন মধ্যবয়স। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন এটা আমার সাথে কখনোই ঘটবেনা। কিন্তু আজ না হোক কাল এই সংকটাবস্থা আঘাত হানতে পারে। হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে গত কয়েক দশক ধরে সম্পন্ন করা কাজ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করছেন। পরিকল্পিত করা পরিকল্পনাগুলোর আর কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। হঠাৎ করেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে। মানসিক অবস্থার এই টানাপোড়েন নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনে ঘটে থাকে। যদিও উভয়ের সংকটের ধরনে কিছুটা ভিন্নতা হতে পারে। এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩-১০ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ২-৫ বছর স্থায়ী হতে পারে।
সংকটের কারন
মধ্যবয়সের এই সংকটের নিয়ামক হিসেবে থাকতে পারে-
-শারীরিক পরিবর্তন
-কাজ বা কর্মজীবন
-প্রিয়জনকে হারানো
-দাম্পত্য সংকট
লক্ষন
এই ক্রাইসিস সঠিকভাবে নির্নয় করা সম্ভব নয়। কারন একজনের কাছে যেটিকে সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয় তা আরেকজনের কাছে বিবেচিত সংকটের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নাও হতে পারে। তবে সম্ভাব্য কিছু লক্ষন রয়েছে-
-জীবনে যেসব বযাপারগুলো উপভোগ্য ছিল সেগুলোর প্রতি হঠাৎ আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এটি আগমনী মানসিক সংকটের লক্ষন হতে পারে। এই উদাসীন মনোভাব সংকটে আরো গভীর ও জটিল স্তর যুক্ত করে।
-নিজের জীবন ও জীবনযাত্রার গুনে-মানে সবসময় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা
-জীবনের সকল সোনালী সময় আগেই ঘটে গেছে এমন ধারনা পোষণ করা
-ক্রমাগত অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা
-স্বামি-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনও ভালোবাসায় ফাটল ধরা
-সবকিছুর উপর বিরক্ত ও একঘেয়েমি বোধ করা
প্রতিকার
আধুনিক কিছু গবেষণায় অনেকে মিডলাইফ ক্রাইসিসের অস্তিত্ব আছে কি নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আদতে তা আছে কি নেই তা নিয়েও আছে অনেক মতানৈক্য। তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত শরীর ও মনকে ভালো রাখতে যা করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন-
-সবার আগে চাই শরীরের যত্ন। এই সময় হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা রোগ বাসা বাঁধে। এজন্ন চাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা।
-চলার পথে অনেক ঘটনাই জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য বিচক্ষণতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অতীতকে ঝেড়ে ফেলে, বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যতের লক্ষে যেতে হবে।
-গৎবাঁধা গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল যে কোন কাজই টনিকের কাজ দেবে
-শরীরের পাশাপাশি মনেরও যত্ন-আত্তির প্রয়োজন হয়। পরিবারের পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সাথে আড্ডা দেয়া যায়
-এই সময় স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিৎ। একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, পছন্দের কাজ করা যেতে পারে।
-সর্বোপরি নিজেকে ভালোবাসা। জীবন উপভোগ করার বিষয়টির সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই। বরং তা জড়িত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের উপর।
-ছবি সংগৃহীত