রোদসী ডেস্ক: বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে শুরু করে সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত দুই পরিবারের ওপর দিয়ে মাস কয়েক খুব ঝক্কি যায়। আর বর-কনের ওপর চলতে থাকে মানসিক নীরব চাপ। বিয়ের পর স্থিতিশীল হলেই আবার চলে আসে সন্তান নেওয়ার চিন্তা। এতে বর-কনের থেকে বাড়ির মুরব্বিদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। তাই বলে কি হুট করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া চলে? অনেকগুলো বিষয় হিসাবনিকাশ করেই নতুন চিন্তার আগমন ঘটানোই ভালো। বিয়ের পর কোন সময়টায় পরিবারে নতুন সদস্য আসবে, সেটার একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা থাকা চাই। নতুবা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক গঠনেও পড়তে পারে।
কিছু বিষয় আগেভাগেই ভেবে নাও :
মা ও শিশুর দেখভাল
কর্মব্যস্ত জীবনে চিন্তাভাবনাগুলোও গণিতের মতো। নতুন সদস্যকে পৃথিবীতে আনতে হলে তার জন্য সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত আগে থেকেই করে ফেলো। নবজাতকের পাশ থেকে এক মিনিট সরা যাবে না। সেই সঙ্গে একজন মা-ও কিš‘ সমান গুরুত্ব বহন করে। প্রসব-পরবর্তী সময়ে একজন মায়েরও পরিপূর্ণ বিশ্রামের দরকার আছে। এ সময়টায় মা ও শিশুর যত্ন কে নেবে, তা আগেই ঠিক করে ফেলতে হবে। পরিবারের কেউ হলে ভালো, তেমন সুবিধা না থাকলে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পরিিস্থতি হলে তা গর্ভবতী অবস্থাতেই দেওয়া উচিত। গর্ভবতী মায়েরও পরিচর্যার জন্য একজন সাহায্যকারী দরকার।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
পরিবারে নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর জন্য অবশ্যই একটা সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। ডাক্তার-হাসপাতাল এসবের খরচ তো আছেই, সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত চিকিৎসকের কাছে মায়ের সার্বক্ষণিক চেকআপ তো লাগবেই। এসব বিষয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েই করে ফেলো। বা”চা জন্ম নেওয়ার পর তার সুন্দর জীবনের জন্যও পরিকল্পনা করতে হবে।
নির্ভরতায় স্বামীর অবস্থান
বিয়ের পর থেকেই স্বামীর ভূমিকা সবার থেকে আলাদা। গর্ভবতী নারীর বা একজন সদ্য মায়ের জন্য তার স্বামীর উপিস্থিতি টনিকের মতো। এই সময় একজন স্বামীই পারে তার স্ত্রীকে হাত ধরে সাহস জোগাতে। তাই গর্ভধারণের আগে ভেবে দেখতে হবে তোমার স্বামীর কাজের ক্ষেত্র তোমার কাছাকাছি কিনা। হঠাৎ প্রয়োজন হলে সবার আগে যেন সেই আসতে পারে, সেই বিষয়টি প্রসবের আগ পর্যন্ত বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রাথমিক যে দুটি পরীক্ষা
গর্ভবতী হওয়ার পথে ডায়াবেটিস ও উ”চ রক্তচাপ ভয়ানক বিপদ তৈরি করতে পারে। অনাকাক্সিক্ষত গর্ভপাতের জন্য মায়ের শরীরের ডায়াবেটিস ও উ”চ রক্তচাপ দায়ী থাকে অনেক ক্ষেত্রেই। উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারিও হয়ে যায় অনেক সময়। মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয় এ অবস্থায়। তাই গর্ভধারণের আগেই ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করিয়ে নিতে হবে। এতে শরীর যেমন গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হবে, তেমনি মায়ের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাবে বহুগুণে। মায়ের মানসিক স্থিতিশীলতা এ সময়ের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
ওজন যখন বিপদের কারণ
বাড়তি ওজন এ সময় অনেক সমস্যার জন্ম দেয়। শরীরে অন্য কোনো অসুখ না থাকলেও ওজন বেশি থাকার কারণে গর্ভবতী হতে সমস্যা হয়। ওজন বেশি থাকলে গর্ভাবস্থায় সময় ডায়াবেটিস ও উ”চ রক্তচাপ এসে হানা দেয়। পরিণতিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। গর্ভবতী হতে চায় এমন নারীদের উচিত জীবনযাপনের একটি ভালো পদ্ধতি অনুসরণ করা। কোনো মাদক বা ধূমপান থেকেও বিরত থাকতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সকাল-বিকেল হাঁটা, বা জিমে যাওয়া যেতে পারে। সাঁতার কাটা শরীরের ফ্লেক্সিবেলিটির জন্য অনেক ভালো। সেই সঙ্গে খেতে হবে সুষম খাবার। প্রয়োজনে একজন ডায়েটেশিয়ানের কাছ থেকে খাদ্যতালিকা তৈরি করিয়ে নিয়ে সে অনুযায়ী খাবার খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখবে, চিনিযুক্ত খাবার ওজন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। রাতের বেলার পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের অনেক স্ট্রেস কমিয়ে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার সময়সীমা নিয়ে:
দুজনের কোনো সমস্যা না থাকলেও দেখা যায়, অনেক দম্পতির বাচ্চা হচ্ছে না। এর কারণ অপর্যাপ্ত সেক্স অথবা সেক্সের টাইমিং মিলিয়ে নিতে না পারা। হিসাব করলে দেখা যাবে, স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার সময় হয়তো মিলন ঘটেনি, যার ফলে গর্ভধারণও হয়নি। একজন নারীর ডিম্বাশয় মাসে একবার ডিম্বাণু তৈরি করে। যখন এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, শুধু তখনই বীর্যের সংস্পর্শে এলে ডিম্বাণুটি নিষিক্ত হতে পারে। তবে শুক্রাণু নারীর গর্ভে গিয়ে প্রায় পাঁচ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তখন যদি নারীর ডিম্বাণু প্রস্তুত হয়, তখনই শুক্রাণু ডিম্বাণুটির সঙ্গে মিলিত হতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনায় চিকিৎসকের পরামর্শ
গর্ভবতী হওয়ার আগেই একবার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। নানা ধরনের টেস্ট করে শরীরকে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শই সবচেয়ে ভালো। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার জন্য চিকিৎসকের সুপরামর্শ খুবই জরুরি-
এ বিষয়ে সিনিয়র সার্জন শার্লী হামিদ বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওসিপি সবচেয়ে ভালো। এটা সব বয়সীদের জন্যই অ্যাডজাস্ট হয়ে যায়। ফ্যামিলি কমপ্লিট থাকলে অনেকে কপার টিও ইউজ করে। ইনজেক্টেবল কন্ট্রাসেপটিভও ইউজ করে কিন্তু এটাতে ইন্টার মিন্সট্রুয়াল ব্লিডিং হয় বলে সাধারণত অনেকে প্রেফার করে না।
মেডিকেল অফিসার শুভজ্যোতি সমাদ্দার বলেন, সদ্য বিবাহিত দম্পতির জন্য ওরাল বড়ি সেরা গর্ভনিরোধক। কনডমগুলো এখনো গর্ভনিরোধের সর্বাধিক জনপ্রিয় ফর্মে আছে। গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ক্যাপস, ওরাল গর্ভনিরোধক বড়ি, কনডম, গর্ভনিরোধক ইমপ্লান্ট, গর্ভনিরোধক ইনজেকশন, গর্ভনিরোধক প্যাচ, ডায়াফ্রামস, ইন্ট্রুটারাইন ডিভাইস (আইইউডি), ইন্ট্রুটারাইন সিস্টেম (আইইউএস), প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা, প্রজেস্টোজেন একমাত্র বড়ি এবং যোনি রিং। কর্মজীবী নারীর জন্য হতে পারে : আইইউসিডি, ওসিপি
ছবি: সংগৃহীত