সফল ব্যক্তিদের অনুকরণীয় অভ্যাস

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহানঃ

কিসে সফলতা আসে? সবার হয় আমি কেন জীবনের উত্থান-পতনে মুখ থুবড়ে পড়ি? সফলতার চাবিকাঠি কি? এমন এমন হাজারো প্রশ্ন আমাদের মাথায় সবসময় উঁকি মেরে থাকে। যখন একজন সাকসেসফুল ব্যক্তিকে দেখি তখন এইসব চিন্তা আমাদের মাঝে আরও বেশি হানা দেয়। কারণ আমরা যখন একজন সফল ব্যক্তিকে দেখি, তখন কেবল তার সর্বজনীন গৌরব দেখতে পাই কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর জন্য তাদের ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকারের চিত্র দেখতে পাইনা। বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিরা, যারা উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছেন কেউই সেখানে অতি সহজে বা দূর্ঘটনাক্রমে আসেননি। ভাগ্য ছাড়াও, সফল হতে হলে যেমন দরকার কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের তেমনি দরকার ভালো কিছুর অভ্যাস গড়ে তোলার। এই অভ্যাসগুলো কি এবং কিভাবে তা তোমার জীবনে কাজে লাগাতে হয় তা শেখা জরুরী। এমন কিছু অভ্যাসের ব্যাপারে আসো জেনে নিই।

অর্গানাইজেশন

যারা জীবনে সফল তাদের প্রায়শই উল্লেখ করা অভ্যাসগুলোর মধ্যে এটি হল একটি। অর্গানাইজেশনের মানে হল পরিকল্পনার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এর মাধ্যমে সময় পরিকল্পনার সাথে পরিকল্পিত কার্যাবলীর সবকিছুই একটি ট্র্যাকের মধ্যে থাকে। এটি এক ধরনের টু-ডু লিস্ট করে রাখার মতো ব্যবস্থা। সংগঠিত আচরণের উদাহরণ হলোঃ

-কোন কাজ শুরু করার আগে নির্দেশাবলী বুঝা গেছে তা নিশ্চিতকরণ।

-দিন/কাজের জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স বা উপাদান প্রস্তুত আছে তার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা

-একটি পরিকল্পনা ও সে ব্যাপারে সংগঠিত চিন্তা আছে।

লক্ষ্য নির্ধারণ করা

সাফল্যের বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা প্রকাশ করেছেন যে মস্তিষ্ক হল একটি লক্ষ্য নির্ধারণকারী অর্গানিজম। সফল ব্যক্তিরা জানেন যে, তারা যদি তাদের অবচেতন মনকে একটি লক্ষ্য দেন তবে তা অর্জনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করবে। তারা উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করে যা বাস্তবসম্মত এবং পরিমাপযোগ্য উভয়ই, এবং তারা সেই লক্ষ্য পূরনের দিকে কাজ করার চেষ্টা করে।

 অধ্যবসায়

কঠিন চেষ্টা করা এবং হাল ছেড়ে না দেওয়া- খুবই কঠিন একটি কাজ। সফলতা পাওয়ার কোন শটকার্ট ওয়ে নেই। একমাত্র অধ্যবসায় পারে এই লক্ষ্যে পৌছুতে সাহায্য করতে। সাফল্যের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময় মনে রাখতে হবে যে, যাই হোক না কেন অধ্যবসায় করে যেতে হবে। এর অনেকটাই নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং জীবন সম্পর্কে নিজ উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। অধ্যবসায় এবং সাফল্য হলো একটি ম্যারাথনের মতো। সেই ম্যারাথনে তোমাকে দৌড়াতে হবে তবে সফলতা ধরা দিবে।

উপলব্ধি

কিছুই ভালো বা খারাপ নয়- জিনিসগুলো কেবল তুমি যেভাবে উপলব্ধি করো। রায়ান হলিডে তার  ‘দ্য অবস্ট্যাকল ইজ দ্য ওয়ে’ বইয়ে উপলব্ধির ব্যাপারে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন ‘একটি হরিণের মস্তিষ্ক একে দৌড়াতে বলে কারণ জিনিসগুলো খারাপ। এটি সরাসরি একটা ট্র্যাকের মধ্যে চলে’। তোমার উপলব্ধি হলো কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করার এবং এটিকে খারাপ বা ভাল হিসেবে দেখছো কিনা এবং কীভাবে এটি পরিচালনা করবে তা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। তোমার মনোভাব এবং উপলব্ধি তোমাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তের দিকে নিয়ে যাবে।

অ্যাকশন গ্রহণ

সফল ব্যক্তিরা জানেন যে, নিজে যা জানে তার জন্য পৃথিবী মূল্য দেয়না; যা করে দেখানো হয় তাই মূল্য প্রদান করে। সংগঠিত করা, পরিকল্পনা করা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কর্ম ছাড়া একটি পরিকল্পনা সম্ভাবনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইতিবাচক মনোভাব

অনেক সফল মানুষের মতে, একটি ইতিবাচক মনোভাব শুধুমাত্র সফল হওয়ার ফলাফল নয়- এটি সাফল্যের মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি। জোয়েল ব্রাউন অতি সফল ব্যক্তিদের জীবনে কৃতজ্ঞতা এবং ইতিবাচক মনোভাবকে অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন।

নেটওয়ার্কিং

সফল ব্যক্তিরা নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে অন্যদের সাথে আইডিয়া শেয়ারের মূল্য জানেন। একজন সফল ব্যক্তি অন্য সফল ব্যক্তিদের মাঝে নিজেকে ভিড়িয়ে রাখতে পছন্দ করে।

ভোরে উঠার অভ্যাস

আমরা ছোট বেলায় আর্লি রাইজিং এর রাইমস পড়েছি। যেখানে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার ব্যাপারে বলা হয়েছে। সফল ব্যক্তিদের মাঝেও এই অভ্যাস বিদ্যমান। তাদের মতে, সফল হওয়ার জন্য যে যত বেশি সময় দিতে পারে, সাফল্যের সম্ভাবনা তার তত বেশি। এই আর্লি রাইজারদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। যেমন, ভার্জিন গ্রুপের স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, ডিজনির সিইও রবার্ট ইগার এবং সাবেক ইয়াহু সিইও মারিসা মায়ার।

ভূল থেকে শিক্ষা নেয়া

পৃথিবীতে কেউই ভূলের উর্দ্ধে নয়। সাধারন মানুষের পাশাপাশি সফল ব্যক্তিদেরও ভূল করার চান্স থাকে। কিন্তু তারা এতে আশাহত না হয়ে বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নেয় এবং ভবিষ্যতে চলার পথে তার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সজাগ থাকে।

নিজের উপর আত্মবিশ্বাস

সর্বোপরি বিলিভ ইউরসেলফ। তুমি যদি তোমার স্বপ্নের জীবন সফল করার পথে এগুতে চাও তাহলে তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, তুমি এটা ঘটাতে সক্ষম। নিজেকে বিশ্বাস করা মানে নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা। যখন নিজের উপর বিশ্বাস করো, তা তখন আত্ম-সন্দেহ কাটিয়ে উঠতে এবং নতুন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

thirteen − 10 =