সম্পাদকীয়

করেছে Sabiha Zaman

সাবিনা ইয়াসমীন 

ডিভোর্স শব্দটাই ভীতিজাগানিয়া। তারপরও প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে অহরহ ডিভোর্সের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। কত রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিয়ের মাধ্যমে দুটো মানুষ এক হয়। সেই সঙ্গে একই সুতোয় গাঁথে দুটো পরিবার। অথচ ডিভোর্সের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় সব রকম সম্পর্ক। দীর্ঘদিনের বন্ধন।

প্রশ্ন হলো এত ডিভোর্সের ঘটনা কেন ঘটছে? কেন মানুষ বাধ্য হচ্ছে সাধের সম্পর্কের ইতি টানতে? পরিসংখ্যান বলছে রাজধানী ঢাকাতেই প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি করে ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো ডিভোর্সের ৭৫ শতাংশ ঘটনা ঘটছে নারীর পক্ষ থেকে।এ তথ্য আমাদের বিস্মিত করেছে। আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, যে বাঙালি নারীরা সংসারের প্রতি নিবেদিত, তারা কেন সংসার ভাঙায় অগ্রগামী হলো? যে কারণে রোদসীর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে নারীর ডিভোর্সের সেই কারণগুলো।
এই সমাজে এমনিতেই নারীর দোষের অন্ত নেই। কোথাও এতটুকু বিচ্যুতি পেলে সমাজ তেড়ে আসে নারীকে শায়েস্তা করতে, সেখানে ডিভোর্সের মতো এত বড় ঘটনায়ও নারীকে কাঠগড়ায় তোলা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। নারীর শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, নারীর বাইরে কাজ করার মতো বিষয়গুলোকে দায়ী করে ডিভোর্সের কারণ খুঁজতে থাকা লোকের সংখ্যা এই সমাজে নেহাত কম নয়।

কিন্তু আমরা বলি, এগুলোই নারীর শক্তি। নারী আর কতকাল দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী থাকবে? কত দিন স্বামীর সব অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করবে? কেন সংসারের স্যাক্রিফাইসগুলো কেবল নারীকেই করতে হবে?
নারীর পড়াশোনা, নারীর জানাশোনার গণ্ডি বেড়ে যাওয়ায় নারী স্বাভাবিক কারণেই আগের চেয়ে বেশি সচেতন। আর তাতেই আগের মতো সব অন্যায়ে নারী আর চুপ করে থাকার মুডে থাকে না জন্যে নারীর পক্ষ থেকে ডিভোর্সের ঘটনা বেড়েছে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ অবশ্য আছে। তার একটি হলো বাবার সম্পত্তির ওপর মেয়েসন্তানের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া। নারীরা আগে যে হীনমন্যতা এবং ‘নিজের বাড়ি’ নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগত, সেটিও কেটে গেছে। ফলে যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তার জন্য আর ততটা কঠিন নয়।

এরপর যে কারণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি। নারী আর কারও বোঝা নয়। সে নিজেই নিজের যোগ্যতায় সংসারে সমান অবদান রাখতে সক্ষম। তাহলে সংসারে সমান সম্মান সে চাইতেই পারে।
আমরা চাই ডিভোর্স নয়, সংসার হোক নারী-পুরুষের এক সুন্দর সহাবস্থানের জায়গা। সংসার নামক এই বাগানের পুরুষের ভূমিকা ভ্রমরের না হয়ে মালি হলেই না এই বাগান সুন্দর ফুল আর ফলে ভরে উঠবে।
সবার জন্য শুভকামনা।

১ মন্তব্য করো
1

You may also like

১ মন্তব্য করো

Moshiur Rahman ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২২ - ৯:৩৮ অপরাহ্ন

রোদসীর জন্যেও শুভকামনা!

Reply

তোমার মন্তব্য লেখো

20 − 15 =