ঈদ এক অন্য রকম অনুভূতির নাম। এই অনুভূতি পূর্ণতা পায় পরিবারের সান্নিধ্য পেলে। শিকড়ের কাছে গেলে। আমরা যারা পরিযায়ী জীবনযাপন করি, এই সত্যটা তারা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি। জীবনের প্রয়োজনেই শিকড় ছেড়ে কেউ নিজ শহরছাড়া, কেউ দূরদেশে। ‘স্বভাবদোষে’ আমাদের মন পড়ে থাকে মায়ের কাছে। বাড়ি ছাড়ার পর ঠিকানা অনেক হয়, কোনোটাই আর বাড়ি হয়ে ওঠে না। কেননা আমাদের কাছে বাড়ি তো সেটাই, যেখানে মা থাকেন!
ঈদ এলে বাড়ি ফেরার সেই আকুলতা বেড়ে হয় কয়েক গুণ। কিন্তু চাইলেই তো আর ফেরা যায় না। জীবনের নানা মানে। নানা রং। শেষ পর্যন্ত শিকড়ে ফিরতে না পারায় ব্যক্তি হয়তো কিছুটা ব্যথিত হন, ফিরে যেতে চান শিকড়ে।
সময় বদলের কারণে চিন্তার বদলও ঘটেছে। ‘ডেস্টিনেশন ঈদ’ কনসেপ্ট ইদানীং বেশ জনপ্রিয়। ‘ঘরে তো অনেক হলো’ এই চিন্তা থেকে ঈদ এলে কেউ কেউ বাহিরমুখী হয়। তার সংগত কারণও অবশ্য আছে। ঈদের মৌসুমে লম্বা ছুটিছাটা মেলে। হাতেও থাকে কিছু বাড়তি পয়সাকড়ি। ঈদের আনন্দ, সঙ্গে বাইরে ঘোরার উচ্ছাস দুয়ে মিলে ঈদটাও হয়ে ওঠে দুর্দান্ত। সামর্থ্যরে সঙ্গে মিলিয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভিনদেশেও ঈদের আনন্দে মাতে অনেকে। এগুলোই এখন ট্রেন্ড। আমরা ঈদ নিয়ে এই মাতোয়ারাকে সাদরে স্বাগত জানাই।
ঈদের মূল ভাবনা আনন্দ আর খুশি হলেও এই আনন্দিত হওয়াটা আসলে সবাইকে নিয়ে খুশি থাকা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকেই খারাপ পরিস্থিতি পার করছে। আমাদের পাশেই হয়তো এমন কেউ আছে, যে তার সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে সামান্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। আমরা যেন খুশির এই উপলক্ষে তাদের কথা ভুলে না যাই। পাশে কাউকে অভুক্ত রেখে নিজে নতুন জামা পরে, কোরমা-পোলাও খেয়ে ঈদ করলে সেই ঈদের কোনো মাহাত্ম্য থাকে না আসলে। খুশি ভাগ করতে পারলে খুশি বাড়ে এই কথাটি মনে রাখলে সবার জন্য সুন্দর হয়ে আসবে ঈদ।
ঈদে অনেকেই বাড়িমুখী হবে, তোমাদের জন্য শুভকামনা। যাত্রাপথের সাবধানতাগুলো ঠিকঠাক মেনে চলবে। ঈদ করে সুস্থভাবে আবার ফিরে আসো তিলোত্তমা এই নগরীতে।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছ। ঈদ মোবারক।
সাবিনা ইয়াসমীন
সম্পাদক প্রকাশক, রোদসী