শায়লা জাহান
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে পুরো বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ঘরে বসেই নিমিষেই দেশ বিদেশের সকল নিউজ জেনে আমরা আপডেট হচ্ছি। এতে একদিকে আমরা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেলেও অন্যদিকে এর ফলাফলস্বরুপ অন্যায় অবিচার বেড়েই চলেছে। যার বড় প্রমান সাইবার বুলিং বা সাইবার ক্রাইম।
আনিকা, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলো। কয়দিন পরেই তার বিয়ে। চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সে। হঠাৎ করেই তার কিছু আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়েছে। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই শুরু হয়ে যায় সাইবার বুলিং। ফলাফল বিয়ে ক্যান্সেল, আর আনিকার আত্মহননের পথ বেছে নেয়া। ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও আনিকাদের এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটেই চলেছে। আর এসব কিছুই হচ্ছে মূলত প্রযুক্তির যথেচ্ছা ও লাগামহীন ব্যবহারের ফল।
অনলাইন ব্যবহারকারীদের জীবনে এক বিভীষিকাময় সমস্যার নাম হল সাইবার বুলিং। কি এই সাইবার বুলিং? পরিচয় লুকিয়ে রেখে যখন কেউ ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল স্পেসে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে আক্রমণ বা হয়রানি করে। এই ধরনের আচরন গুজব ছড়ানো, হুমকি, সেক্সুয়েল হ্যারেজমেন্ট, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ঘৃণাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যারা এর শিকার হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী। এর চাইতেও বেশি এলার্মিং ব্যাপার হল এদের বয়সের পরিধি ১৪ থেকে ২২ বছর। চলতি বছরেই ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ মানুষ সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়েছেন। অনলাইনে হয়রানি স্বীকারের কারনে অনেকেই হতাশায় ভোগে এবং অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বেই এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে। ২০১২ সালের ১৭ জুন সাইবার বুলিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথম ‘স্টপ সাইবারবুলিং ডে’ উদযাপন করা হয়।
সাইবার বুলিং থেকে সুরক্ষার উপায়ঃ
-সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পরিচয় গোপন করা অনেক সহজ ব্যাপার। সেজন্য এসব প্ল্যাটফর্মে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। কারন যেকন ফেক প্রোফাইল হতে পারে অনেক বড় বিপদের কারন।
-নিজের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফোন নাম্বার, মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবেনা।
-নিজ আইডিতে প্রাইভেসি গার্ড দিয়ে রাখলে আপলোডকৃত কোন কিছুই অপরিচিত কেউ দেখতে পাবেনা।
-অনলাইন বা অন্য কোথায় কেউ হ্যারাজ করার চেষ্টা করলে সব কিছুর প্রমান নিয়ে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
-এইসব ব্যাপারে মুখ লুকিয়ে না রেখে আত্মবিশ্বাসের সাথে সামনে বেরিয়ে আসতে হবে।
-গুজব এড়িয়ে যেতে হবে। জেনে বা না জেনে কোন কিছু যাচাই না করে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের দেশে ২০০৬ সালে প্রথম সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া সাইবার হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে হটলাইন ‘৯৯৯’ চালু করা হয়। এ বছরেই অক্টোবর মাসকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’।
-ছবি সংগৃহীত