সারা বিশ্বকে কাঁদানো কিছু ফটোগ্রাফ

করেছে Shaila Hasan

শায়লা জাহানঃ

 

আমাদের মানুষ করে তোলার সঠিক পরিমাপ কি? অন্যান্য প্রানী থেকে আমাদের আলাদা করার প্রাথমিক অনুভূতি কি? অন্যের দুঃখ বেদনার সাথে নিজেকে একাত্মতা প্রকাশ করা আমাদের অনন্য ক্ষমতা? একটি ছবি হাজার কথা বলে। এমন কিছু ছবি আছে যা কিছু না বলেও অনেক কথা বুঝিয়ে দেয়। মানুষের দুঃখ যন্ত্রনার অনুভূতি আছে বলেই এই ছবিগুলো বিশ্ববাসীকে করেছে বাকরুদ্ধ। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক এবং দুঃখজনক কিছু ফটো বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং দাঙ্গায় বেঁচে থাকা এবং একটি উন্নত জীবনের জন্য লড়াই করা কেমন লাগে। যে ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার সাহস ছিল তারাই পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা ট্রমার মুখোমুখি হয়েছেন তারাই বিশ্বের আসল নায়ক। অনেক ছবি থেকে কিছু ছবি এখানে তুলে ধরা হলো।

ওমায়রা সানচেজ

ওমায়রা সানচেজ, ১৩ বছর বয়সী এক মেয়ে যে ১৯৮৫ সালে কলম্বিয়ার আরমেরো গ্রামকে ধ্বংসকারী আগ্নেয়গিরি নেভাডো দেল রুইজের অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধ্বসের পরে নির্মান বর্জ্যের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। উদ্ধারকারীরা উদ্ধার করতে পারেনি। তার আটকে থাকার প্রায় ৬০ ঘন্টা পরে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফ্রাঙ্ক ফোর্নিয়ারের তোলা ছবিতে ওমায়রা সানচেজের সেই নিষ্প্রাণ অসহায় চোখের দৃষ্টি পুরো বিশ্বকে কাঁদিয়েছে।

ফান থি কিম ফুক

১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী এবং সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধের ছবি। কিম ফুক একটি বায়বীয় নেপালম আক্রমনের পরে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ট্রাং ব্যাং এর কাছে একটি রাস্তা ধরে দৌড়াচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য, কিম তার শরীরের আগুনে তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছিল।

সুদানে দুর্ভিক্ষ

১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত ছবি এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে কেভিন কার্টারের উত্থানের জন্য দায়ী। ১৯৯৪ সালে, কেভিন ফটোগ্রাফির জন্য পুলিৎজার পুরষ্কার জিতেছিলেন। ছবিতে সুদানের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা চরম ভাবে ফুটে উঠেছে। দুর্ভিক্ষের ছোবলে কঙ্কালসার এক বালককে দেখা যাচ্ছে যার অদূরেই এক শকুন অপেক্ষা করছে কখন ছেলেটির প্রান যায়। যদিও পরবর্তীতে ছবিটি অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং সৌভাগ্যবশত ছেলেটি সে যাত্রায় বেঁচেও গিয়েছিল।

উগান্ডা

মাইক ওয়েলসের করা ফটোগ্রাফি, এপ্রিল ১৯৮০ সালে, উগান্ডার কারামোজা প্রদেশে একটি শিশুকে একজন মিশনারির হাত ধরে দেখায়। দুই হাতের মধ্যে বৈপরীত্য যেন উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোকে আলাদা করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ছবিটি বছরের পর বছর অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল।

ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি

পাবলো বার্থোলোমিউ হলেন একজন প্রশংসিত ভারতীয় ফটোসাংবাদিক যিনি ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডিকে তার লেন্সে ধরেছিলেন। ভারতের সবচেয়ে খারাপ শিল্প বিপর্যয় ৫৫৮১২৫ জন আহত এবং ১৫০০০ জনের মতো নিহত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড কীটনাশক প্ল্যান্টে নিরাপত্তার মান এবং রক্ষণাবেক্ষনের পদ্ধতি উপেক্ষা করায়, মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের একটি ফাঁস একটি ব্যাপক পরিবেশগত এবং মানবিক বিপর্যয় ঘটায়।

আয়লান কুর্দি

সাল ২০১৫, তুরস্কের অন্যতম অবকাশ যাপন কেন্দ্র বোদরামের সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে লাল টি শার্ট আর নীল প্যান্ট পরা এক শিশু। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে প্রানে বাঁচতে সে দেশের হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে ইউরোপের দিকে ছুটছে। অন্যদের মত সাগর পাড়ি দিতে আয়লানের পরিবার নৌকায় চেপে বসে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত নৌকা ডুবিতে প্রান হারায় তিন বছর বয়সী এই আয়লান কুর্দি। তুরস্কের ফটোসাংবাদিক নিলুফার দেমিরের তোলা এই একটি ছবি বিশ্বের বিবেক যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাকেই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে প্রচন্ডভাবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0

You may also like

তোমার মন্তব্য লেখো

nineteen − twelve =