শায়লা জাহান:
কথায় বলে, ‘তোমার সম্পর্কগুলো কেবল তোমার মতো স্বাস্থ্যকর হতে পারে’। একটি সুস্থ সম্পর্ক আমাদের সুখ বাড়াতে, স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং চাপ কমাতে অনেক কার্যকর। কিন্তু বাস্তবে সব সম্পর্কেই সবসময় সুখকর অবস্থা বিরাজমান নয়। নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। সম্পর্কগুলো ভালোভাবে চলতে, ভারসাম্য আনতে জেনে নিতে পারো কিছু টিপস।
আতিয়া, বিয়ের বয়স সবে বছরখানেক হলো। তাদের নবদম্পতি বলাই চলে। কিন্তু কিছুদিন ধরে সে যেন লক্ষ করছে তাদের সম্পর্কের সেই ফিলিংস, সেই টান যেন কিছুটা কমে যাচ্ছে। এর পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও কোথায় যেন সুর কেটে যাচ্ছে। ঘটনাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও এমন আতিয়া আমাদের আশপাশে অনেক আছে। সব রোমান্টিক সম্পর্ক অনেক আপস-ডাউনের মধ্য দিয়ে যায় এবং তা সত্ত্বেও সবাই নিজ সঙ্গীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বা পরিবর্তিত হতে চায়।একটি সুস্থ সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করার একটি অংশ হলো তুমি সম্পর্কটি ঠিক কীভাবে দেখতে চাও এবং তা কোথায় নিয়ে যেতে চাও, তার একটি লক্ষ্য সেট করে নেওয়া। সম্পর্ক সবে শুরু হোক বা বছরের পর বছর চলতে থাকুক, একটি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আর এগুলোই হতে পারে সুসম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।
বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা
আমরা সবাই চাই নিজ পার্টনার যেন মনের মতো হয়। কিন্তু কেউই সবকিছু হতে পারে না, যা আমরা তাদের মধ্যে দেখতে চাই। একটি সম্পর্কের মধ্যে থাকা দুজন ব্যক্তি পৃথক অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অর্থ হলো যে যেমন আছে তাকে তেমনই গ্রহণ করা এবং তাদের মধ্যে জোর করে পরিবর্তন করার চেষ্টা না করা।
কমিউনিকেশন ব্যবস্থা
একটি হেলদি এবং স্ট্রং রিলেশনের জন্য স্মুথলি কমিউনিকেশন অপরিহার্য। সঙ্গীকে প্রয়োজনীয়, পছন্দসই এবং প্রশংসা করার জন্য কীভাবে যোগাযোগ ব্যবহার করবে, সে সম্পর্কে চিন্তা করো। যেকোনো ধরনের আগ্রাসন, নীরব আচরণ, গালিগালাজ বা এই ধরনের কার্যক্রম উদ্বেগের সংকেত দেয়। তাই একে অন্যের নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা, অনুভ‚তিএবং আগ্রহ সম্পর্কে জানতে হবে। যেকোনো বিষয়ে তথ্য ভাগাভাগি করা, সে ব্যাপারে মতামত প্রদান করাকে সম্মান জানাতে হবে।
ন্যায্য যুদ্ধ
ব্যাপারটি দেখলে মনে হবে বিধ্বংসী যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়। বেশিরভাগ সম্পর্কের মধ্যেই কিছু দ্বন্দ্ব থাকে। এর মানে এই নয় যে তুমি কোনো বিষয়ে একমত নও; আবার এটাও নয় যে তুমি একে অপরকে পছন্দ করোনা। একসঙ্গে চলতে গেলে এমন মনোমালিন্য থাকবেই। আর এর জন্য যা করতে হবেঃ
-কথা বলার আগে নিজেকে ঠান্ডা করো। রাগের মাথায় মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল ডিসিশন নিয়ে থাকে। তাই কথোপকথনটি আরও ফলপ্রসূ হবে, যদি তোমার আবেগ কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই এমন কিছু বলবেনা, যা পরে অনুশোচনার সৃষ্টি করে।
-অন্যকে সরাসরি ব্লেম বা দোষ দেওয়ার পরিবর্তে ঘটমান পরিস্থিতিতে তুমি কী ফিল করছ এবং তুমি কী চাও, তা শেয়ার করো।
-বলার ভাষা পরিষ্কার এবং নির্দিষ্ট রাখো। সমালোচনা ও বিচার না করে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করো।অর্থাৎ সমস্যাকে আক্রমণ করো, ব্যক্তিকে নয়।
-বর্তমান ইস্যুতে ফোকাস করো। আগে কী হয়েছে না হয়েছে, তা সবকিছু স্তুপ করা এড়িয়ে একেবারে একটি সমস্যা সমাধান করো।
-নিজের ভুল স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। তুমি যদি কিছু ভুল করে থাকো, তবে তা মানার দায়িত্ব নিতে হবে। এই ছোট্ট একটি কাজ অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।
অনুভূতির প্রকাশ
সম্পর্ক গবেষক জন গটম্যানের মতে, সুখী দম্পতিদের প্রতি একটি নেতিবাচক মিথস্ক্রিয়া বা অনুভূতির জন্য পাঁচটি ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া বা অনুভূতির অনুপাত থাকে। সময়ে সময়ে নিজের উষ্ণতা এবং এফেকশান প্রকাশ করো।
কমিটমেন্ট থাকা
প্রতিশ্রুতি মানে একে অপরকে এবং সম্পর্ককে প্রথমে রাখা। এর জন্য অনেক কিছু দিতে হবে এবং অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু প্রতিদান হলো এমন একটি সম্পর্ক, যা একে অপরের জীবনে সত্যিকারের আনন্দ এবং পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে। প্রতিটি ব্যক্তি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বিশ্বাস এবং ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এবং দম্পতিদের ভয় ও সন্দেহ মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
প্রতিটি সম্পর্কই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে এবং মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্য, মেজাজ বা এমনকি তা কর্মক্ষেত্রে ফোকাস করতে পারে। তাই কোনো সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলাই বিচক্ষণের কাজ হবে।
-ছবি সংগৃহীত