শশী
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অবশ্যই স্বাস্থ্যকর । শরীরের রিদম বজায় রাখতে একটি নিয়মিত রুটিন থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কঠিন কোনো রুটিনে না গিয়ে সাধারণ রুটিন অনুসরণ করতে হবে। ব্যায়াম কিংবা শারীরিক কর্মকা- চলাকালে ধীরে সঞ্চালন করতে হবে। ধীরগতি সব কাজকে সহজ করবে এবং শরীরকে রাখবে নিরাপদ।
কাজ হবে পরিমিত
নারীর গর্ভকালীন প্রথম দু-তিন মাস ও শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
খাবার
গর্ভবতী মায়ের জন্য দরকার সুষম খাদ্যতালিকা, এতে করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত ও খাদ্যঘাটতি দূর করা সম্ভব। এ সময় প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। কেনা শাকসবজি, ফলমূল বাজার থেকে আনার পর আধা ঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে খেলে ফরমালিনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
ঘুম
এ সময় দিনের বেলা কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ঘুমানো বা বিশ্রামের সময় বাঁ কাত হয়ে শোয়া ভালো।
পোশাক
গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরি”ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। সঠিক মাপের এবং নরম জুতা পরতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই হিল পরিহার করা উচিত।
ভ্রমণ
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যর পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে। তাই ফুলের বাগান, লেকের পাড়, পার্ক এসব স্থানে ভ্রমণ করা উচিত।
ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অবশ্যই স্বাস্থ্যকর। শরীরের রিদম বজায় রাখতে একটি নিয়মিত রুটিন থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কঠিন কোনো রুটিনে না গিয়ে সাধারণ রুটিন অনুসরণ করতে হবে। ব্যায়াম কিংবা শারীরিক কর্মকা- চলাকালে ধীরে সঞ্চালন করতে হবে। ধীরগতি সব কাজকে সহজ করবে এবং শরীরকে রাখবে নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের সময় ওয়ার্মআপ এবং কুলডাউন গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের সময় গর্ভবতী নারীদের শরীরের সঠিক অবস্থান কেমন হবে, তা জানতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যায়ামের সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় মা আর বাচ্চার- দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে। ব্যায়ামের সময় শরীর অত্যধিক গরম করা যাবে না। এ অবস্থা শরীরকে ক্লান্ত করতে পারে, যাতে হতে পারে শারীরিক সমস্যা। এ সময় পোশাক পরতে হবে ঢিলেঢালা। নিজের ঘর কিংবা ঘরের বাইরে যেখানেই ব্যায়াম করা হোক না কেন, তাপমাত্রার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে। বাচ্চা প্রসবের দিন ঘনিয়ে এলে ব্যায়ামের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিশ্রম বিষয়ে চিকিৎসকের নির্দেশনার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত।
মর্নিং সিকনেস
গর্ভবতী মায়েদের, বিশেষ করে যারা প্রথমবার সন্তানের মা হবে, তারা মর্নিং সিকনেসে বেশি ভুগে থাকে। এ সময় ঘন ঘন বমি পায়, সবকিছুতেই গন্ধ লাগে, খাবারে অরুচি ধরে যায়, শরীরে এনার্জি থাকে না। গর্ভাবস্থায় শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে, তার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে খুবই অস্বস্তি বোধ করে। এ সময় যদি হালকা ব্যায়াম করা যায়, তাহলে এই সমস্যাগুলো কম হয়। ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মাংসপেশি ও হার্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং হবু মায়ের শরীরকে এই সময়ের জন্য প্রস্তুত করে দেয়। ব্যায়ামের ফলে কোমর বা জয়েন্টে ব্যথা এবং পিঠের ব্যথারও উপশম হয়।
যোগব্যায়াম
যোগব্যায়াম স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং প্রসবকালীন যন্ত্রণাও কম করে। ব্যায়ামের ফলে কোমর, ঊরু, পিঠ এবং শরীরের পেশি শিথিল হয় এবং শরীর স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। অনেক মায়েরই গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের ওজন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, পায়ে পানি জমতে থাকে, পায়ের শিরা ফুলে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এই সবকিছুর ওষুধ একমাত্র যোগব্যায়াম। যেসব মা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত যোগব্যায়াম করে, তাদের গর্ভ বাচ্চার শরীরেও রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ে। ব্যায়াম করলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তা মা এবং গর্ভ সন্তান, দুজনের জন্যই উপকারী। এতে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ হয় এবং স্মৃতিশক্তিও বেশি হয়।
একই ব্যায়াম নয় : শুধু ভারোত্তোলন ব্যায়াম করলেই হবে না। সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে হলে সঠিকভাবে নড়াচড়া করার সামর্থ্যও থাকতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় ‘স্ট্রেচিং’ করতে হবে। ‘স্ট্রেচিং’ এবং সঠিকভাবে নড়াচড়া করার সামর্থ্য অর্জন করতে পারলে পেশির শক্তভাব দূর হবে এবং ভারোত্তোলন ব্যায়াম করা সহজ ও উপকারী হবে।
ছবি: সংগৃহীত