রোদসী ডেস্ক
ইঁদুর মানেই আতঙ্ক আর উপদ্রবের অংশ। রোগ জীবণু ছড়ানোই হোক কিংবা বিষ্ঠা বিছিয়ে ময়লা করা আর গায়ের দুগর্ন্ধই হোক না কেন নিত্যকার দিনে রীতিমতো এক অন্তহীন যন্ত্রণা। তাই ইঁদুরের অত্যাচার থেকে দরকার মুক্তির।
ইঁদুরের কারণে যত ক্ষতি
ইঁদুরের কারণে জীবাণু ছড়ায়। ফলে নানা রোগবালাই লেগেই থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সুস্থ ইঁদুরও রোগ ছড়াতে সক্ষম! এমনকি একটি সুস্থ ইঁদুরের দেহ থেকে কমপক্ষে ২০ ধরণের রোগের জীবাণু ছড়ায় মানব দেহে!
খাবার নষ্ট করায় পাকা প্রত্যেকটি ইঁদুর। কারণ প্রতিটা ইঁদুর খাবার খেতে পারে মাত্র ৩০ গ্রাম। এরপরও প্রচুর খাবার খেতে চায় কিন্তু না পারায় ৫গুণ বেশি খাবার নষ্ট করে। এছাড়াও খাবারের উপর বিষ্ঠা ও মূত্র ত্যাগ করে দূষিত করে তোলে।
প্রাণীটি ছোট হলেও দ্রæত বংশবিস্তাওে বেশ পারঙ্গম। কারণ এদের প্রজনন ক্ষমতা অত্যাধিক। এরা দুই থেকে তিনমাসেই প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। ফলে একটি স্ত্রী ইঁদুর বছরে চারবারে কমপক্ষে ১২টি বাচ্চার জন্ম দেয়। ফলে একবার কোন ইঁদুর দম্পত্তি ঘরে ঢোকা মানেই মহাবিপদ।
ইঁদুর কাপড়, ক্যাবল, পাইপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেটে বিশাল ক্ষতিসাধনে ব্যস্ত থাকে।
ইঁদুরের বসতি নির্মূল করা
ইঁদুরের উপদ্রব থেকে বাঁচতে প্রথমেই এর বসতি নির্মূল করতে হবে। আর ইঁদুর অন্ধকার জায়গায় বসতি গড়ে। আলমারির তলা, রান্নাঘর কিংবা গ্যারেজ এসব জায়গা অব্যবহৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এগুলোকে আদর্শ জায়গা মেনে নিয়ে ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করে। তাই এসব জায়গা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে দিতে হবে যাতে বাসা না বাঁধতে পারে। আর যদি বাসা বেঁধে ফেলে তবে নির্মূল করতে হবে দেখামাত্রই।
পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে রান্নাঘর
ইঁদুরের উদরপূর্তির অন্যতম জায়গা রান্নাঘর। আর খাবার না পেলে সহজেই ইঁদুর থেকে মুক্তি মিলবে। তাই রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন খাবার থাকলে ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে। ময়লার ঝুড়ি অবশ্যই ঢাকনাসহ কেনা ভালো। কৌটায় রাখা শুকনো খাবারও পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ কৌটায় অনেকদিন খাবার রেখে দিলে একটা কটু গন্ধ তৈরি হয়। আর এই ধরণের গন্ধ ইঁদুরকে আকৃষ্ট করে। ফলে কৌটা কেটে হলেও সে খাবার খেতে চায়। এছাড়া পুরো রান্নাঘর প্রতিসপ্তাহে একবার নিয়মিত পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
খাবার টেবিল পরিষ্কার রাখা
ইঁদুর প্রধানত রাতে খাবার খায়। আর রাতের খাবারের পর খাবার টেবিলে রাখা বাকি অংশ বেশি আকৃষ্ট করে। কারণ ইঁদুরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ উচ্ছিষ্ট খাবার। তাই কখনোই খাবার ফেলে রাখা ঠিক হবে না। উচ্ছিষ্ট খাবার পরিষ্কার করে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। তা না হলে সারারাত পঁেচ গিয়ে দুগর্ন্ধ ছড়াবে এবং ইঁদুরসহ তেলাপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকাও আকৃষ্ট হবে।
ঘরের ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে হবে
ইঁদুরের শরীর খুবই নমনীয়। ফলে যেকোন ছোট ছিদ্রদিয়েই সহজে ঢুকে যেতে পারে। তাই পানিনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন কারণে যে ছোট ছিদ্রগুলো থাকে সেগুলো সূ² লোহার জালের বেষ্টনী দিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে। এছাড়া দরজা ও জানালা দিয়েও ঘরে ঢুকতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে দরজা ও জানালা খোলা রাখা ঠিক না।
ইঁদুর দমনে ঘরোয়া সমাধান
গোলমরিচের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ ইঁদুরের ফুসফুসে গেলে নিশ্বাস নিতে পারে না ইঁদুর। তাই গোলমরিচের গন্ধ ইঁদুর একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
তেজপাতা ইঁদুরের একেবারেই হজম হয় না। তাই ইঁদুরের উপদ্রব বেশি সেসব স্থানে তেজপাতা গুঁড়ো করে ছড়িয়ে রেখে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ইঁদুর অভ্যাসবশত পেঁয়াজে কামড় দেয়। কিন্তু পেঁয়াজের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই কয়েকটুকরো পেঁয়াজ প্রতিরাতে রেখে দিলে কামড়ে খেতে গিয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
পিপারমিন্ট সবচেয়ে কার্যকরী ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে। এর তীব্রগন্ধ ইঁদুর কোনভাবেই নিতে পারে না। তাই পিপারমিন্ট অয়েল তুলাতে লাগিয়ে রেখে দিলে ইঁদুর পালাবে। যদি না থাকে তাহলে পুদিনা পাতা ছেঁচে অলিভ অয়েলে দিয়ে ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।
ইঁদুর দমনে প্রাকৃতিক ও প্রাচীন একটি উপায় হলো বেড়াল। কারণ ইঁদুর পোষা প্রাণীদের খাবার খেতে পছন্দ করে। তাই বেড়ালেরা খাবার হারানোর ভয়ে ইঁদুর তাড়িয়ে দেয়।
সর্বোপরি ইঁদুর হতে সমাধান পেতে পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। পাশাপাশি ঘরোয়া পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।