রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
লেখক

Rodoshee Magazine

Rodoshee Magazine

এই সংখ্যায়কর্মক্ষেত্র

অফিস-সম্পর্ক

করেছে Rodoshee Magazine ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১৯

আমাদের প্রতিদিনকার সময়ের প্রায় অর্ধেকই কাটে কর্মক্ষেত্রে। তাই অফিসে ইতিবাচক পরিবেশ, উচ্চপদস্থ, অধীনস্থ এবং সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে অনেক কিছুই। বিস্তারিত লিখেছেন লিহান লিমা।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্টাডিজের মতে, চাকরি পাওয়া, চাকরি ধরে রাখা এবং চাকরিতে পদোন্নতি লাভ করার ক্ষেত্রে ৮৫% নির্ভর করে দক্ষতা এবং অফিসে নিজের আচরণের ওপর। বাকি ১৫% টেকনিক্যাল জ্ঞানের ওপর।

কেন রাখবে ভালো সম্পর্ক?

মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সামাজিক জীব। আর এর কারণেই কর্মক্ষেত্রে সুন্দর সম্পর্ক আমাদের আরও সুখী এবং উৎপাদনশীল করে তোলে। অ্যারিস্টটল এবং মায়মনিডিসের মতো দার্শনিকেরা অনেক আগেই বন্ধুত্ব এবং সুস্থতার মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ কাজের প্রতি আন্তরিকতার ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গ্যালাপ অর্গানাইজেশনের মতে, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সাত গুণের বেশি কাজের সঙ্গে আমাদের বন্ধনকে দৃঢ় করে। কাজ তখন উপভোগ্য হয়ে ওঠে, আমরা তখন সৃষ্টিশীল হয়ে উঠি। ভালো সম্পর্ক আমাদের দেয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা। সম্পর্কের নেতিবাচক দিকগুলো মোকাবিলায় সময়ক্ষেপণের পরিবর্তে আমরা আমাদের মেধাকে তখন সুযোগের সন্ধানে কাজে লাগাই। বিশেষ উচ্চপদস্থের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি তোমার বস তোমাকে বিশ্বাস না করেন, তিনি অবশ্যই নতুন কোনো দায়িত্বের জন্য তোমাকে ভাববেন না।

ভালো সম্পর্ক মানে কী?

সম্পর্কের কি যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ আছে? কিংবা সম্পর্কের সমীকরণ কী? একে কি দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায়? যায় ওজন করা? উত্তরটা হবে, নিশ্চয়ই না। তবে কিছু দিক তো অবশ্যই আছে যাতে কিনা আমরা বুঝতে পারি অধীনস্থ, উচ্চপদস্থ কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ভালোই চলছে। যে কোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্মান, মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি, বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও খোলাখুলি যোগাযোগ। যখন তুমি সহকর্মীদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারবে, স্বাধীন এবং সৎভাবে কাজ করতে পারবে। পেছনে কী হচ্ছে, তা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। অন্যদিকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের কারণে একে অপরের কাজ ও দক্ষতাকে মূল্যায়ন করার বিষয়টি কর্মপরিবেশকে করবে আন্তরিকতাপূর্ণ।

কীভাবে কর্মক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক রাখবে?

দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা ও মতানৈক্যের কর্মপরিবেশে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাটা চ্যালেঞ্জ বললে ভুল হবে না। সেই সঙ্গে অফিস পলিটিকসের ঝক্কি-ঝামেলা তো আছেই। কিছু বিষয় তো অবশ্যই থাকবে। তবে ভালো সম্পর্কের স্বাদ পেতে হলে সবার আগে নিজকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য অবশ্য হাসিমুখের বিকল্প নেই। প্রাণখোলা হাসিমুখে সম্ভাষণ, অভিনন্দন কিংবা শুভকামনা অনেক নেতিবাচক দিককে দূরে ঠেলে দিতে সক্ষম।

প্রথমেই জানো তোমার সহকর্মীদের। তারা কেমন, কীভাবে এবং তারা কী পছন্দ করে তা জানলে ভবিষ্যতে তুমি হয়ে উঠবে তাদেরই কাছে একজন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে হওয়া চাই কিছুটা কৌশলীও। সন্ধান করো পারস্পরিক স্বার্থের। যেমন, তোমরা হয়তো একই টিভি শো ভালোবাসো, কেউ পোষা প্রাণী অন্তপ্রাণ, আবার কেউ কোনো একটি ফুটবল দলের ভক্ত, এ রকম অনেক কিছু।

মনে রাখো, কর্মক্ষেত্র শুধু টাকা আয় করার স্থান নয়। বিশ্বাস রাখো এবং বিশ্বাস তৈরি করো, ইতিবাচকভাবে কথা বলো এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করো। এটি অবশ্যই কর্মক্ষেত্রে পরিবেশকে সুন্দর করে তুলবে।

শক্তিশালী সম্পর্কের আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্যকে সহায়তা করা। টাইম টু চেঞ্জের ডিরেক্টর শু বেকারের মতে, ‘সহকর্মীকে সহযোগিতা করার জন্য এক্সপার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। তার কথা মন দিয়ে শোনা এবং তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করানোই যথেষ্ট।’

খেয়াল রাখতে হবে যেসব বিষয়ে

জার্মান মনোবিজ্ঞানী হাইকে স্ট্রুভেলের মতে, ‘শারীরিক বা পারিবারিক সমস্যার কথা সহকর্মীদের সাথে বেশি না বলাই ভালো। এতে অনেকে মনে করতে পারে তুমি সহানুভূতি বা বাড়তি সুবিধা পেতে চাও। তা ছাড়া সমস্যার কথা সুন্দর পরিবেশকে খানিকটা হলেও নষ্ট করে। তাই যতটা সম্ভব হাসিখুশি থাকো। তবে কারও সাহায্যের প্রয়োজন হলে এগিয়ে যেতে দ্বিধা করবে না।’
ভাগাভাগি করো জ্ঞান, কাজ, পছন্দ ও অপছন্দ। থাকো ইতিবাচক। নিজেকে প্রকাশ করো, সামাজিক যোগাযোগ বাড়াও। অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে রেষারেষি-বিদ্বেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো বিষয়ে নালিশ দেওয়ার আগে ভাবতে হবে বিষয়টি এমন হয় কি না ‘মা, দেখ না সে আমাকে পছন্দ করে না’। যেন কর্তৃপক্ষ না ভেবে বসে যে পাঁচ বছরের এক বাচ্চা আরেক বাচ্চার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। সততা এবং সহনশীলতা তোমাকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আয়নাঘরবসন ভূষণরূপ ও ফ্যাশন

অফিস আউটফিট

করেছে Rodoshee Magazine ফেব্রুয়ারী ৩, ২০১৯

অফিস এখন আর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের একটি কর্মস্থলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং দিনের সবচেয়ে বেশি সময় অফিসেই কাটে। শুধু সময় কাটিয়েই অফিস আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেয় না। আসলে অফিস এখন আমাদের জীবনের একটি প্রধান অংশ। যতই অবকাশযাপনের জন্য দূরেই যাই না কেন, মুঠোফোনের বদৌলতে অফিস সব সময়ই আমাদের সঙ্গে থেকে যায়।

অন্যদিকে এখন আর শুধু টেবিলে মুখ গুঁজে একমনে কাজ করে গেলেই সাফল্য আসে না। বরং নিজের বাহ্যিক এবং ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনা পারফরম্যান্সের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আর সঠিক পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের প্রকাশও যে অনেক উন্নত হয়ে যায়, তা বলা বাহুল্য। এই পোশাক যেহেতু আমাদের ক্যারিয়ারে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সুতরাং অফিস আউটফিট নিয়ে কিছুটা আলোচনা না করলেই নয়।
পোশাক তথা অফিসের সাজপোশাক নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্র্ণ।
তাই এ বিষয়ে এখানে নারী ও পুরুষের সাজপোশাক সম্পর্কে আলাদাভাবে আলোচনা করা হবে। তারপরও কিছু সাধারণ নিয়ম নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন পারফিউমের ব্যবহার, পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্য, পরিবেশ উপযোগিতা, যথার্থ ফিটনেস ইত্যাদি নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে খুব কমই ভিন্ন হয়ে থাকে। এই কারণে মূল আলোচনা ছাড়াও থাকবে কিছু টিপস, যা নারী ও পুরুষ উভয়েই সহজে মেনে চলতে পারবে।

নারীদের অফিসের পোশাক
নারী সভ্যতার আদিকাল থেকেই দশভুজার মতো দুই হাতে চারপাশের গোটা পৃথিবীটাকে আগলে রেখেছে। হাউসওয়াইফ হও বা কর্মজীবীই হও নারীকে একই সঙ্গে ঘর ও বাহির উভয়ই সামলাতে হয়। কখনো এই যুদ্ধে তার সঙ্গে থাকে সহযোগিতার এক বা একাধিক হাত, আবার কখনোবা একাই তাকে এই যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু যুদ্ধ যতই সাধারণ বা সাংঘাতিক হোক না কেন, নারীকে একই সঙ্গে গুণবিচারী ও দর্শনধারী দুই-ই হতে হবে।
এই জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত প্রস্তুতির। পরদিন অফিসে কী পরে যাবে, তা আগের দিন রাতেই প্রস্তুত করে রাখো। এ জন্য পরের দিনের কার্যাবলি সম্পর্কেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তুমি যদি জানো যে পরদিন তোমার কাজের তালিকায় কী কী আছে যেমন কোনো বিশেষ মিটিং, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, দাওয়াত বা অন্য প্ল্যান আছে কি না। থাকলে সে অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করে রাখো।
তবে সব সময় মনে রাখবে, এমন কোনো পোশাক নির্বাচন করবে না যেন তোমার মূল কাজে বাধা আসে। যদি তোমার দিনটি কাজে ভরপুর হয়, তাহলে যে ধরনের পোশাকে তুমি সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করো, তা-ই পারবে।
যদি সালোয়ার-কামিজে তুমি বেশি স্বচ্ছন্দ থাকো, তাহলে সেটি পরো। মনে রাখবে, বাঙালি নারী বাঙালি পোশাকেও একই রকম আধুনিক।

আর যদি তোমার স্বাচ্ছন্দ্য পশ্চিমা পোশাকে বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও কিছুটা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করো। আঁটসাঁট পোশাকে না তুমি স্বচ্ছন্দবোধ করবে, আর না দেখতে ভালো দেখাবে। আর অফিসের জন্য পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় সব সময় খেয়াল রাখবে, পোশাক হতে হবে এলিগেন্ট, কিন্তু জমকালো নয়। পোশাকের ফিটনেস, কাট, প্যাটার্ন ও স্টিচিং হতে হবে নিখুঁত। পোশাক প্রিন্টেড না হয়ে সলিড রঙের হলেই বেটার। তবে হালকা রঙের ওপর ছোট ছোট প্রিন্ট মন্দ নয়। কিন্তু অতিরিক্ত রঙিন বা বড় বড় ছাপার পোশাক অফিসের জন্য মোটেও মানানসই নয়। সেই সঙ্গে পোশাকে সিকুইন বা অন্য অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার না হওয়াটাই ভালো। পশ্চিমা পোশাকের নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরামর্শ এই যে জিনস পরবে না। তোমার অফিসের পরিবেশ যদি পুরোপুরি ক্যাজুয়াল পোশাকের জন্য উপযোগী, তাহলে অবশ্য কথা ভিন্ন। আর সেমি ক্যাজুয়াল পোশাকের ক্ষেত্রে জিনসের সঙ্গে লম্বা কুর্তি পরো।
ফেব্রিকের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভারী ফেব্রিক বা সুতি কাপড়কেই বেছে নিতে চেষ্টা করো। সিল্ক বা জর্জেট দেখতে ভালো লাগলেও বা আরামদায়কবোধ হলেও ঠিক ফরমাল হিসেবে মানায় না। আর ভালো মানের জামদানি ও সুতির শাড়ি এবং সঙ্গে মানানসই শাল যেন সব সময়ই সংগ্রহে থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। শীতে ব্যবহারের জন্য শালে সবচেয়ে বেশি ফরমাল দেখাবে। আর যদি পশ্চিমা পোশাক পরো, তাহলে ব্লেজার পরাই উত্তম। তবে জ্যাকেট বা সোয়েটার কোনোটাই কিন্তু মেয়েদের অফিসের পোশাক হিসেবে মানানসই নয়। বরং বেখাপ্পাও লাগতে পারে।

জুতোর বেলায় বলব

সব সময়ই সামনের দিকে ঢাকা সামান্য হিলওয়ালা জুতা অর্থাৎ পাম্প হিল ব্যবহার করো। যদি হিলে সমস্যা থাকে, তাহলে লোফার ব্যবহার করো। চামড়ার জুতোয় তোমার পোশাকের আভিজাত্য এমনিতেই এক ধাপ বেড়ে যাবে। হাতে সব সময়ই মানানসই ঘড়ি পরো। এতে দেখতে যেমন স্মার্ট লাগবে, তেমনি তোমার পোশাকের পেশাদারি ভাবটিও ফুটে উঠবে। আর ব্যাগের ব্যাপারে বলব টোট ব্যবহার করো। এটি একদিকে যেমন বেশ অনেক জিনিস একসঙ্গে এঁটে যাবে, তেমনি ব্যবহারেও সুবিধা। তা ছাড়া আজকাল প্রায়ই পার্টিতে সোজা অফিস থেকেই যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেকআপ, একটা জমকালো স্টোল অনায়াসেই এই ব্যাগে করে নিয়ে যেতে পারবে। এমনকি অফিসের জন্য লাঞ্চও এতেই নেওয়া যাবে। ভুলেও কখনো অফিসে ব্যবহারের জন্য কারুকার্যখচিত ব্যাগ, জুতা বা অন্য কোনো কিছুই ব্যবহার করবে না। জুয়েলারির বেলায় হালকা ডিজাইনের প্লাটিনাম বা ইমিটেশন বা প্লেটেড সোনার চুড়ি পরতে পারো, সঙ্গে একই রকম মানানসই কানের দুল। তবে কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি যেন না হয়। আংটিও থাকতে পারে সঙ্গে।

পুরুষদের অফিসের পোশাক
পুরুষদের বেলায় এখন আর ফ্যাশন বা সাজসজ্জা নিয়ে রাখঢাক চলে না। এখন তারাও ফ্যাশন ব্যবসার অন্যতম ক্রেতা। আজকাল পুরুষেরাও অফিসে ফিটফাট থাকতে সচেষ্ট। কারণ বলাই বাহুল্য, নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে যে কেউ চাইবে। আর সেই সঙ্গে যদি নারী সহকর্মী থেকে প্রাপ্ত কর্মসংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়, তাহলে এই ব্যাপারেও সচেষ্ট থাকতে হবেই। পুরুষের পোশাকের মধ্যে এখন আর শুধু মানানসই টাই বা ব্লেজারই প্রাধান্য পাচ্ছে না। বরং, ফর্মাল শার্ট পুরুষদের ফ্যাশনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ফুল স্লিভ শার্টের পাশাপাশি হাফ স্লিভ শার্টও সমানভাবে জনপ্রিয়। আর রঙের বেলায়ও পুরুষেরা ভালোই এক্সপেরিমেন্ট করছে। তবে অফিসের পোশাক হিসেবে গাঢ় রংকে বেছে না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সেই শার্টটি কোনো গর্জিয়াস পার্টির জন্যই তুলে রাখবে। তার চেয়ে বরং হালকা রঙের শার্টকেই বেছে নাও অফিসের জন্য, সেই সঙ্গে থাকতে পাওে স্ট্রাইপস বা চেক। রংচঙা প্রিন্টের শার্টটিও রেখে দিতে পারো কোনো বিচে ভ্রমণের জন্য। আর টি-শার্ট তো অফিসে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, যদি না কোনো স্পোর্টস ইভেন্ট থেকে থাকে।
অফিসের পোশাকের জন্য অবশ্যই ভালো মানের ভারী ফেব্রিক নির্বাচন কর। হালকা ফেব্রিক পোশাকের পেশাদারি আবেদন বেশ খানিকটাই নষ্ট হয়ে যায়। ভালো মানের ও হালকা রঙের সুতি বা খাদির পাঞ্জাবি অফিসের ইভেন্টের জন্য বেশ মানানসই। কিন্তু সিল্কের পাঞ্জাবি না পরাই ভালো। সেই সঙ্গে ভালো স্যান্ডালও আবশ্যক। আর শীতের দিনে সোয়েটারের বদলে শাল ব্যবহার করো। তবে শার্টের সঙ্গে স্লিভলেস সোয়েটার ভালোই মানাবে। কিন্তু জ্যাকেট অফিসের পোশাকের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। বরং ব্লেজার ব্যবহার করো। এ ক্ষেত্রেও ন্যুড শেডের দিকে গুরুত্ব দিতে পারো আর একগাদা পোশাকের পরিবর্তে তোমার সংগ্রহে মানসম্পন্ন কয়েকটি পোশাক রাখো।
হাতঘড়ি আর টাই এই দুটি অ্যাক্সেসরিজ যে পুরুষের অফিস পোশাকের জন্য অত্যন্ত আবশ্যক, এটা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে ক্লোজেটভর্তি দামি দামি ঘড়ি আর টাই থাকতে হবে। বরং ভালো মানের দু-তিনটি সংগ্রহ থাকলেই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে রং নির্বাচনের বেলায় একটু সচেতন হতে হবে। সাধারণত ন্যুড শেডের টাই এবং রুপালি রঙের চেনওয়ালা ঘড়ি বা চামড়ার বেল্টের ঘড়ি সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই মানানসই। জুতার বেলায় চামড়ার সঙ্গে কোনো বিতর্কে যাওয়াই বোকামি। ল্যাটেক্স সব ক্ষেত্রে মানানসই যেমন হয় না, তেমনি পোশাকের আভিজাত্যও বেশ কমে যায়। তবে চামড়ার জুতা মানেই কিন্তু দামি জুতা নয়। বরং আমাদের দেশে এখন বেশ সাধ্যের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের চামড়ার জুতো তৈরি হচ্ছে।
পারফিউম ও আফটার শেভ লোশনের সঙ্গে কোনো রকম আপস একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। চুলের জেল এখনকার যুগে বেশ সাধারণ একটি বিষয় হলেও সেটা যেমন সবাইকে মানায় না, তেমনি সবার চুলের জন্য উপযুক্তও নয়। তাই ব্যবহারের আগে একটু যাচাই করে নেবে। ব্যাগের বেলায় তুলনামূলক বড় সাইজের চামড়ার ব্যাগ ব্যবহারেরই পরামর্শ দেব।

প্রো টিপস
 জুতা সব সময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে রাখো।
 অফিসে ব্যবহারের পারফিউম হালকা হতে হবে।
 জমকালো পোশাক অফিসে ব্যবহার থেকে বিরত থাকো।
 পরের দিনের পোশাক আগের দিন রাতেই নির্বাচন করে, ইস্ত্রি করে রাখো।
 চুল পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখো।
 পোশাকের যত্নে সচেতন হও ছেঁড়াফাটা পোশাক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করবে না।
 টাকাপয়সা ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্ড আলাদাভাবে ওয়ালেটে রাখো।
 সংখ্যার চেয়ে, পোশাকের মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দাও।

লেখা : সোহেলী তাহমিনা

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
কর্মক্ষেত্রজীবনযাত্রা

উদ্যোক্তা হবে নাকি চাকরি করবে?

করেছে Rodoshee Magazine ফেব্রুয়ারী ৩, ২০১৯

চাকরি নাকি ব্যবসা? জীবনের চাকা কোন দিকে ঘুরবে বেশি? এই সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়। আগের দিনে মনে করা হতো শিক্ষা কম থাকলেই সে ব্যবসা করবে, কিন্তু এখন এর চিত্র ভিন্ন। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা, মনন, চিন্তাচেতনা কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হচ্ছে। নিশ্চয়ই এর ভবিষ্যৎ ভালো, তা ছাড়া কেন ঝুঁকছে এই কাতারে। তাহলে প্রশ্ন চাকরিজীবীরা কি ভালো নেই? হ্যাঁ, এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা এবং সফল চাকরিজীবী। লিখেছেন সুরাইয়া নাজনীন।

পেশা নির্বাচন জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত। এখানে তুমি কোনটা বেছে নেবে তা তোমার চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা, ব্যক্তিত্ব সবকিছুর সমন্বয়ে বাস্তবায়ন হবে। এখন ছোটবেলা থেকে তুমি সৃজনশীল হয়ে গড়ে উঠেছ কিন্তু তুমি সেটা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছো না, সে ক্ষেত্রে তুমি উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারো।
পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনটা বিবেচ্য বিষয়? এই প্রশ্নে কর্মজীবী নারী সাবিরা ইসলামের মতামত নেওয়া হলে তিনি বলেন, সময়টা এখন প্রযুক্তিনির্ভর। চলমান বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও এগোচ্ছে। যে কারণে প্রযুক্তি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি যারা চাকরি দেন তাদের পছন্দ বা চাহিদার বিষয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে নিজের পছন্দে পেশা বেছে নেওয়ার সুযোগ কম। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী এগুলো ছাড়া অন্য অনেক পাঠ্যবিষয় রয়েছে, যেখানে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে শিক্ষিত করে তুলছে কিন্তু সে-ই বিষয়সংশ্লিষ্ট পেশায় যুক্ত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ রকম উদাহরণ আমাদের দেশে ভূরি ভূরি রয়েছে। তবে বিষয়সংশ্লিষ্ট পেশায় একেবারে যে কেউ যুক্ত হচ্ছে না তা নয়। পেশা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সম্মানী, পদ ও পজিশন, কাজের ধরন, বাসা এবং কর্মক্ষেত্রের মধ্যে দূরত্বএগুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি। অন্যথায় কাজে যোগ দেওয়ার পর অসন্তুষ্টি এবং অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে এবং তা ক্যারিয়ার গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সব ভাবনা কাটিয়ে সিদ্ধান্ত কোনটি উদোক্তা নাকি চাকরিজীবী, তোমার দৃষ্টিতে কী মনে হয়? তিনি বলেন, নিজে থেকে কিছু করতে পারার বিকল্প আনন্দ আর কিছুতে তো নেই। যে শ্রম, সময়, মেধা অন্যকে দেওয়া হচ্ছে তা যদি নিজের নিজস্ব কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়, তবে তা নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পাশাপাশি আরও অনেকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিতে পারে। তবে এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিনিয়োগটাও যেহেতু উদ্যোক্তাকেই করতে হয়, তাই অনেকেই এগোন না। নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য সরকার নতুন উদ্যোক্তাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দিচ্ছে। আজকাল অনেক ব্যাংক নামমাত্র সুদে লোনও দিচ্ছে। সেগুলো গ্রহণ করে যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে। তবে সবাই উদ্যোক্তা হবে, সবাই চাকরি করবে এমনও নয়। দুটি ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ রয়েছে। যার ক্ষেত্রে যেটা সুবিধাজনক সেটাই বেছে নেওয়া উচিত।
চাকরিজীবী হিসেবে কোন বিষয়টি প্রাধান্য পায় তোমার কাছে? এ বিষয়ে সাবিরা বলেন, প্রথমত পদ এবং সম্মানী। দ্বিতীয়ত পরিবেশ। হোক একটি ছোট পদ। কিন্তু সেখানে যদি নিজের মেধা, সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ থাকে, তবে তা মানসিক প্রশান্তি তৈরি করবে এবং উদ্যমী হতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে সম্মানীর বিষয়টিও ভাবতে হবে। কারণ পছন্দের পদ পেলাম, নিজেকে প্রকাশেরও সুযোগ পেলাম অথচ সন্তোষজনক সম্মানী নেই। সে ক্ষেত্রে আত্ম-অসন্তুষ্টি সব ধরনের সক্ষমতাকে বিনষ্ট করবে। আবার কাজের পরিবেশ যদি পছন্দ না হয় তবে যত ভালো পদ, ভালো সম্মানীই হোক না কেন কাজ করার আগ্রহ রক্ষা করা যাবে না। সুতরাং তিনটি বিষয়ে মোটামুটি একটি সমন্বয় হলেই কেবল কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া উচিত।
যদি পছন্দ চাকরি হয় তাহলে কেন? তিনি বলেন, ‘পেশা হিসেবে চাকরির কিছু সুবিধা তো রয়েছেই। যেমন নির্দিষ্ট কাজের বাইরে নিজেকে অনেক দায় থেকে মুক্ত রাখা যায় যেটা উদ্যোক্তা হলে এড়ানোর উপায় নেই। একজন উদ্যোক্তাকে অনেক কিছু মাথায় রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয়। চাকরিতে কোনো রকম মাস শেষ হলেই নগদ অর্থপ্রাপ্তি। উদ্যোক্তা হলে সেটা সম্ভব নয়। একজন উদ্যোক্তাকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কঠিন লড়াই করতে হয়। এরপর এর থেকে আয় করার বিষয়ে ভাবতে হয়।’

অনেকে ভাবেন, কারও অধীনে কাজ করার চেয়ে নিজেরাই নিজেদের পছন্দমতো কাজ তৈরি করে নেওয়াটা সর্বোত্তম। কারণ, এ ধরনের কাজ মূলত ব্যক্তির ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা এবং জীবনের লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে কথা হলো স্টেপ ওয়ান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর এবং ওমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউর অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট নাজমা মাসুদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান শর্ত হলো আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রচেষ্টা। আগে নিজেকে বুঝতে হবে আমি কী করব? অধিকাংশ মানুষের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে পরিপূর্ণ পরিকল্পনার অভাব। তাই একটি পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। এটি ব্যবসা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’
উদ্যোক্তা হতে তো সবাই পারে না, চ্যালেঞ্জ নিতে হয় এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সফল উদ্যোক্তা হতে হলে নিজেকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। এমন সব উপায় খোঁজ করতে হবে যেন প্রতিদ্বন্দ্বী উদ্যোক্তাদের থেকে ভিন্ন কিছু করা যায়। নতুন এবং কঠিন কাজ করার জন্য নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে এবং ক্রমাগত নতুন চ্যালেঞ্জসমূহ গ্রহণ করতে হবে।’

 

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

চাকরি নাই?

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

ধরা যাক যে কোনো কারণেই হোক, নিত্যদিন অফিসে যাওয়ার আর প্রস্তুতি নিতে হয় না তোমাকে। অর্থাৎ তুমি এখন চাকরিহীন। হুট করেই চাকরিটা চলে গেল। সময়টা কিছুটা কষ্টের, হতাশার এবং একই সঙ্গে বাস্তবতার। তাহলে এই সময়ে নিজেকে চালিত করবে কোন দিকে? জানিয়ে দিচ্ছে রোদসী। লিখেছেন লিহান লিমা।

সময়ের ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনের গতিকে যারা চালিয়ে নিতে জানে, সফলতার কণ্টকাকীর্ণ সোনালি দ্বারটা শুধু তাদেরই জন্য।

‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন জানায়, চাকরিদাতা এবং ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা চাকরিহীনতার সময় নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও যোগাযোগকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিতে পারে।

সময়টা এখন তোমার

প্রথমেই এক সপ্তাহের জন্য নিজেকে ছুটি দিতে পারো। এত দিন তো অনেক কাজ করলে, এবার মস্তিষ্ককে একটু আরাম না হয় দিলে। দেখে নিও পছন্দের কোনো মুভি, ভেবেচিন্তে আপডেট করে নিতে পারো সিভি এবং অবশ্যই সেই সঙ্গে যতœ নিতে হবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের।

চাকরিহীনতার সময় যদি তুমি মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে না পারো, তবে অবশ্যই তোমার পরবর্তী সুযোগের সন্ধান যথাযথভাবে করতে পারবে না।

চাকরিহীন, তবে বেকার নও!

৭৯ ভাগ বিশেষজ্ঞই পরামর্শ দেন চাকরিহীনতার সময় সাময়িক বা চুক্তিভিত্তিক কোনো কাজ নেওয়ার জন্য। এটি তোমার কাজ ও তুমি কী করতে সক্ষম তা জানান দেবে।
ফ্রম গ্র্যাজুয়েশন টু করপোরেশনের লেখক অ্যান্ডি টেচ বলেন, ‘সাময়িক চাকরিতে তুমি যদি সেরাটা দিতে পারো, তবে হতে পারে চাকরিদাতা তোমাকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে ভাববে।’

দক্ষতা বাড়াও

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, চাকরির ব্যস্ততা কিংবা পারিবারিক কারণে শখের পিয়ানোটা শেখা হয়নি, কিংবা কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা গ্রাফিক ডিজাইন শেখার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আর হয়ে ওঠেনি। অনেকে হয়তো নতুন ভাষা শিখতে আগ্রহী। ৬১ ভাগ চাকরিদাতা সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মহীনতার সময় শিক্ষামূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
টিচ বলেন, ‘নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে শেখা কখনোই বন্ধ করবে না।’ শিক্ষা গ্রহণের আরেক সুবিধা হলো অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি। এটি তোমাকে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে, যা তোমার জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করতে পারে। যোগাযোগের অবশ্যই বিকল্প নেই।

যা ভালোবাসো তাই করো

তোমার হাতে থাকা সময়কে সাম্প্রতিক ঘটনা ও আলোচিত বিষয়গুলো জানার ক্ষেত্রে কাজে লাগাও। এটি তোমাকে তথ্যবহুল ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করবে। পড়তে পারো বই, ম্যাগাজিন কিংবা যা ইচ্ছে তাই। তাই করতে পারো যা ভালো লাগে। সেটি হতে পারে অঙ্কন, লেখালেখি, সাইক্লিং কিংবা ট্রাভেলিং।

আর্থিক বাজেট

হাতে টাকা থাকার কারণে হুট করেই অনেক কিছু করে ফেলা হয় আমাদের। সময় এখন তোমার পয়সাকে সঠিক খাতে খরচ করার। বাজেট নির্ধারণ করো এবং তোমার ব্যয়ের সঠিক খাতগুলো তৈরি করো। যদি তুমি এ অভ্যাসকে জীবনে জায়গা করে দিতে পারো, তবে পুনরায় চাকরিজীবনে প্রবেশের পর তোমাকে আর পেছনে ফিরতে হবে না।

স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ

৬০ ভাগ চাকরিদাতা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ব্যক্তির মার্কেট ভ্যালু বাড়িয়ে দেয়। এটি তোমার প্যাশন এবং অন্যকে সাহায্য করার সুন্দর মনোভাবের পরিচায়ক। স্বেচ্ছাসেবী মানে অর্থই তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।

টিচ বলেন, ‘কোনো কোম্পানি যখন কাউকে কর্মী হিসেবে নেয়, তখন তারা কেবল লোকটি কর্মী হিসেবে কেমন তা দেখে না, সেই সঙ্গে তার চরিত্র এবং সততাকেও প্রাধান্য দেয়।’

নিজেই উদ্যোক্তা

২৮ ভাগ পরামর্শ দেন, ব্যবসা আরম্ভ করা সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর অন্যতম উপায়। এটি তোমার জীবনবৃত্তান্তকে শক্তিশালী করবে।

ব্লগ লিখতে পারো

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১১ ভাগ চাকরিদাতা মনে করে নিজেকে জানানোর অন্যতম সেরা উপায় হচ্ছে ব্লগ লেখা। এটি মানুষকে তোমার দক্ষতা জানানোর সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে তুমি নিজের প্যাশন, অর্জন এবং জ্ঞানকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারবে।

নির্দিষ্ট জায়গায় চাকরি খুুঁজে নিও

ক্যারিয়ারবুল্ডার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্য খাত, বিক্রয়, সেবা খাতগুলো কর্মী নিয়োগের শীর্ষে। তাই খাতগুলোতে নজর রাখতে হবে। তবে অবশ্যই তুমি যে কাজে যোগ্য, সে খাতগুলোতে আবেদন করবে।

সূত্র : ফোর্বস, ক্যারিয়ারবুল্ডার।

মডেল : শেফালী

ছবি : আরাফাত সৈকত লালন

 

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

চাকরির প্রথম দিনে

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

ব্যাটে-বলে মিললে চাকরি জুটে যায় ভাগ্যের গোলপোস্টে। কিন্তু এটা পাওয়ার পর টিকিয়ে রাখতে গেলে দরকার পড়ে বাড়তি ক্যারিশমা। তাই চাকরির প্রথম দিন থেকেই হতে হয় সচেতন। প্রথম দিন অফিসে গেলে সবকিছু গোলমাল মনে হবে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু উপায় আছে কাটিয়ে ওঠার। লিখেছেন সুরাইয়া নাজনীন।

প্রথমত শারীরিক ও মানসিকভাবে থাকতে হবে ফুরফুরে। তাই আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। আর অবশ্যই সময়মতো অফিসে পৌঁছাবে। অফিসে প্রথম দিন হয়তো তেমন কোনো কাজ দেওয়া হবে না। তাই বলে গা এলিয়ে দেবে না।

চাকরির প্রথম দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন, একটা সময়। অনেকে ভাবতে পারো আজ সবে প্রথম দিন, আস্তে আস্তে সব ঠিক করে নেব। এটা ঠিক নয়।

প্রথম দিনেই তোমার কাজ বুঝে নেওয়ার সময় শান্ত হয়ে শুনতে হবে তোমার ঊর্ধ্বতন কী বলছেন, কিছু না বুঝলে কিংবা কিছু জানার থাকলে পরে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
তবে কথা বলার দরকার না হলে তেমন কথা বলা উচিত নয়। এতে করে প্রথম দিনেই তোমার প্রতি সহকর্মীদের একটা খারাপ দৃষ্টি চলে আসতে পারে।
চাকরির প্রথম দিন প্রত্যেক মানুষের জন্য গুরুত্বের বার্তা বয়ে আনে। আর সংকোচবোধ করা খুবই স্বাভাবিক। আবার বেশি বোঝাও ভালো না। তাই নিজের কাজ বুঝে নিয়ে কম কথা বলাই ভালো। আগে অফিসের হাওয়া বুঝে নিতে হবে। কারণ, চাকরির জায়গায় রাজনীতি কম হয় না।

কার সঙ্গে কার সম্পর্ক কেমন সেগুলো না জেনে, না বুঝে একটা কথা বলে দিলে দেখা যাবে প্রথম দিন থেকেই তুমি কারও চোখের বিষ হয়ে গেলে! সে জন্য একটু সংযত থাকতে হবে।
নিজের যোগ্যতা প্রথম দিনেই প্রমাণ করার দরকার নেই। সময় অফুরন্ত তোমার হাতে। তাই একটু ধীরে ধীরে এগোও না! দেখবে কৌশলী হলে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে।

অফিসে প্রথম দিন যাওয়ার পর রাজ্যের কাজ আর মিটিং-সিটিং দেখে ঘাবড়ে যাবে না। প্রয়োজনে কিছু না বুঝতে পারলে তার নোট নিয়ে নিও। তারপর আস্তে আস্তে সমাধানের চেষ্টা করতে পারবে।
চোখ-কান খোলা রাখবে। নতুন সমকর্মীদের সঙ্গে খুশিমনে কথা বলো, শুভেচ্ছা বিনিময় করো। অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহ দেখাও। প্রশ্ন করো। তবে যেন তা বিরক্তিকর হয়ে না ওঠে। এতে সহজে তাদের আস্থা অর্জন করতে পারবে।

তাসনিম ও ফারিয়া

আত্মবিশ্বাসে যেন ঘাটতি না থাকে

এ বিষয়ে একজন কর্মজীবী কী বলেন জেনে নেওয়া যেতে পারে। চাকরির প্রথম দিনের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাংকে কর্মরত ছবি রানী পাল বলেন, ‘প্রথম দিন অফিসে গিয়ে ঘাবড়ে যাওয়া চলবে না। সবাই তাহলে বোকা, দুর্বল ভেবে নেবে। আত্মবিশ্বাস ঠিক রাখতে হবে। বিচলিত বোধ করলে নিজেকে মনে মনে বলো, আজ তো আর কোনো চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছো না। বরং যোগ্য বলেই অন্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে বাছাই করে তোমাকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

যেন ভুল না হয়

অনেক সময় দুশ্চিন্তা মনকে দুর্বল করে দেয়। হয়তো বস ডাকতে পারে, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করো। যেগুলো জানা নেই, আগ বাড়িয়ে সেগুলো বলার দরকার নেই। এতে তোমার সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

এ ছাড়া যেসব কাজ দেওয়া হবে, সেগুলো নোট করে রাখতে পারো। এতে কাজগুলো ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না। প্রথম দিন সবার সঙ্গে মুখে হাসি রেখে কথা বলতে হবে। গম্ভীর মুখে থাকবে না।

পোশাক প্রসঙ্গে

অফিসে ড্রেস কোড থাকলে তা অবশ্যই তোমাকে মানতে হবে। অফিসে ড্রেস কোড আছে কি না, তা আগেভাগে জেনে নাও। সহকর্মীরা কেমন পোশাক পরছে বা পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচন করতে পারো।
পরিষ্কার ও ইস্ত্রি করে পোশাক পরিধান করবে।
গাঢ় রঙের প্যান্ট ও হালকা রঙের শার্ট ছেলেদের জন্য হতে পারে ভালো কম্বিনেশন। এ ছাড়া স্ট্রাইপ, চেক বা হালকা সলিড রঙের শার্টও বেছে নিতে পারো।

মেয়েরা পরতে পারো মানানসই রং ও নকশার শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ। অনেক মেয়ে অফিসে শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সে ক্ষেত্রে সাবলীল পোশাক হতে পারে সালোয়ার-কামিজ, জিনস-ফতুয়া।
অফিসে এমন পোশাক চাই, যা তোমার সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে ধারণা দেবে তুমি প্রফেশনাল, বিচক্ষণ ও রুচিশীল। অফিসে যতটা সম্ভব মার্জিত, রুচিসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করাই ভালো।

মডেল : অপু , তাসনিম ও ফারিয়া

ছবি : আরাফাত সৈকত লালন

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

সহজ হোক ইন্টারভিউ বোর্ড

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

জীবনের চ্যালেঞ্জ প্রতিটি মানুষকেই নিতে হয়। নিজের প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে। তেমনি একটা অন্তিম সময় হলো চাকরিতে যোগদানের আগের মুহূর্তগুলো। প্রথমে চলে আসে ইন্টারভিউ বোর্ড ফেস। ইন্টারভিউ বোর্ড ফেস তো অনেকেই করে বা করে চলেছে, কিন্তু সবাই কি টিকতে পারে? না। টিকতে হলে কিছু গুণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। এ বিষয়ে কথা হলো স্টেপ ওয়ান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজমা মাসুদের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন এই সংখ্যায়। লিখেছেন সুরাইয়া নাজনীন।

ইন্টারভিউ বোর্ডে যাওয়ার আগে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে মাথা থেকে। কোনো প্রশ্ন করলে ইনিয়ে-বিনিয়ে উত্তর কিংবা ‘অ্যা’ ‘উ’ এগুলো করা যাবে না। যতটুকু জানো, স্মার্টলি উত্তর দিতে হবে। আর নির্দিষ্ট কোন পোস্টের জন্য অ্যাপ্লাই করা হচ্ছে তার প্রাথমিক জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। তা ছাড়া নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে কিছু জেনে যাওয়া ভালো। এভাবেই বলছিলেন নাজমা মাসুদ।

নাজমা মাসুদের পরামর্শ হলো ‘বাচনভঙ্গি খুব জরুরি বিষয়। চাকরিপ্রার্থীকে ভদ্র, বিনয়ী হতে হবে। কাজ করতে পারার সদিচ্ছা, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতে হবে। প্রশ্ন করলে উত্তরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে। তবে আঞ্চলিকতা পরিহার করাই ভালো। উচ্চারণ সুন্দর হলে কথা বলার ধরনই পাল্টে যায়। উচ্চারণে সমস্যা থাকলে কিছুদিন নিজে চর্চা করলেই এটা ঠিক হয়ে যায়।’

ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় পোশাক অনেকাংশেই গুরুত্ব বহন করে। পোশাক রুচিবোধের প্রকাশ ঘটায়। ছেলেদের কোনো রকম জুয়েলারি ব্যবহার এখানে দৃষ্টিকটু দেখায়।
মেয়েদেরও মার্জিত পোশাক পরতে হবে। ঝাঁজালো গন্ধের বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার না করাই ভালো। সব ক্ষেত্রে রুচিশীল হলে ইন্টারভিউ বোর্ডও তা মার্ক করবে। অনেকে আছে যারা ফ্রেশার, তারা অনেক সময় ছাত্রদের মতো পোশাক পরেই ইন্টারভিউ দিতে চলে যায়। এগুলো পরিবর্তন করতে হবে।

সঙ্গে রেখো
ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় অবশ্যই সিভি, কভার লেটারের একটি কপি প্রিন্ট করে নিয়ে যাবে। সঙ্গে কলম রাখতে হবে। সময়জ্ঞান প্রতিটি মানুষের জন্যই জরুরি। আর ইন্টারভিউ বোর্ডে এই ব্যাপারটা আরও খেয়াল রাখতে হবে। ফোন সাইলেন্ট রাখবে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে মিথ্যা বলবে না। ইন্টারভিউ দিতে ঢোকার আগে সিগারেট খাওয়া ঠিক নয়।

আত্মবিশ্বাস বাড়াও
ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হওয়ার আগে একবার নতুন করে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাগুলো যাচাই করে নিতে হবে। তুমি এই পদে কেন প্রার্থিতা করছ এবং এর জন্য তুমি কতটা যোগ্য, সেটা ভালোভাবে বুঝে নিও।

এর ফলে তোমার নিজের ওপর আস্থা বাড়বে। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে যাওয়াটা খুবই সাধারণ ঘটনা। অনেকেই নার্ভাস হয়ে জানা প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারে না। অনেকে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। তাই এ-জাতীয় সমস্যা এড়াতে তুমি বাসায় বসে ইন্টারভিউর প্র্যাকটিস করে নিতে পারো। তাহলে ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। আর ম্যানারস ঠিক রাখতে হবে। ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় তোমাকে হতে হবে ভদ্র, বিনয়ী ও বন্ধুসুলভ। সঙ্গে সঙ্গে সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত। তারা যেন তোমার আচরণে সন্তুষ্ট হন তার চেষ্টা করো। তাহলে ইন্টারভিউ দেওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।

নো নার্ভাসনেস
নার্ভাস হওয়া যাবে না। তাহলেই সব গুলিয়ে যাবে। বিভিন্নমুখী প্রশ্ন এলে ধৈর্য ধরে শান্তভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলে সেটা ঠিক না-ও হতে পারে। বোর্ডের মধ্যে পানি খেতে চাওয়া, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বক্তব্য বুঝিয়ে বলার জন্য যে সময়টুকু নেওয়া প্রয়োজন, নেওয়া যেতে পারে। এতে চিন্তাগুলোও সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে বেশি সময় নয়।

ভাষার ব্যাপারে
ইন্টারভিউ গ্রহীতা বাংলায় প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়া যাবে না। এটা ওভার স্মার্টনেসের পরিচয়। আবার ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করতে হবে। তবে ইংরেজিতে গুছিয়ে বলতে না পারলে তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে বাংলায় উত্তর দিতে হবে। আর ভাবা যাবে না এটাই আমার সবচেয়ে ভালো চাকরি কিংবা শেষ সুযোগ, এমনটা ভাবলে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাবে।

ইন্টারভিউ যদি খারাপও হয়, তাহলেও আস্থা রাখতে হবে, সামনে হয়তো এর চেয়েও ভালো সুযোগ আসতে পারে।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

ভালোবাসার কাজটি করছেন তিনি : শামীম রফিক, কবি, গবেষক এবং ব্যাংকার

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

সরকারি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন শামীম রফিক। একজন ব্যাংকার হয়ে গবেষণা করছেন বাংলা সাহিত্য। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলা কবিতায়। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন সাহিত্যচর্চায়ও। ‘অরণ্য’ নামে লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছেন ছাত্র অবস্থা থেকেই। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যাও বেশ। ব্যাংকিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় এসেও দমে জাননি। বরং ভালোবাসেন কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো উপভোগ্য করে তুলতে।

কী হতে চেয়েছিলেন?

আমি প্রথমে বুয়েটে পড়তে চেয়েছিলাম এবং সেই রিলেটেড কোনো পেশায় নিয়েজিত হতে চেয়েছিলাম। পরে সে ইচ্ছা পাল্টিয়ে শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে ইচ্ছা অটুট থাকবে। যদিও সেটা আর কখনোই হয়তো সম্ভব হবে না।

আপনার বেড়ে ওঠার গল্প জানতে চাই।

সেটা একটা বড় গল্প। আলাদা একটা ইন্টারভিউয়ের দাবিদার। বাবা-মায়ের খুব আদরের সন্তান। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। সারাক্ষণ পড়াশোনায় ব্যয় করেছি। প্রত্যেক ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি। তখন থেকেই লিখি। সংসারজীবন একবার আমার লেখার ওপর হামলা করেছে। আর চাকরিজীবন আমাকে সারাক্ষণ হামলা করছে।

বর্তমান কর্মস্থল, মানসিক সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি
ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই আমাদের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হয়ে যায়। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই বলত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। কিন্তু আমি পড়ালেখা করলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে। চাকরি শুরু করেছিলাম জনতা ব্যাংকে, বর্তমানে আছি মার্কেন্টাইল ব্যাংকে। ভেবে দেখলাম এই পর্যন্ত যা চাওয়া হলো, যা করতে পারলাম তার কোনোটাই আমি চাইনি। যাহোক, বর্তমানে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে সিলেটের সুবিদবাজার শাখায় কর্মরত। ব্যাংকিং খাতে কাজ করব বলে আগে ভাবিনি। বলতে গেলে নিজের অজান্তেই এ পেশায় আসা। যখন অনার্স পরীক্ষা শেষ হলো রেজাল্টের জন্য ঘোরাঘুরি করছি ঠিক তখনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিআরসি রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষার সার্কুলার হলো। নিতান্ত বন্ধুদের দেখাদেখি অনার্স পরীক্ষা এপিয়ার্ড দেখিয়ে আবেদন করলাম। তারপর প্রিলিমিনারি অ্যালাউ হলাম, রিটেন অ্যালাউ হলাম, ভাইভা অ্যালাউ হলাম অর্থাৎ ফাইনালি পাস করলাম। একটা সরকারি চাকরি পেয়ে গেলাম, তখন চাকরির দুর্মূল্যের বাজারে যোগদান করার লোভটা সামলাতে পারলাম না, বলতে পারেন এ রকম সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না। আমি দায়িত্বশীল। চাকরিতে যখন জয়েন করেই ফেললাম, আর পিছপা হইনি। ব্যাংকিংয়ে হয়ে গেলাম সিরিয়াস।

তাই বলে সরকারি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বেসরকারি ব্যাংকে?

যখন বুঝলাম তখন আর সময় নেই। অবশ্য জনতা ব্যাংকে আমি ভালো ছিলাম। তারপরও প্রাইভেট ব্যাংকে চলে এলাম। কিছুদিন হতাশ ছিলাম, এখন আবার পুরোদমে নিজের কাজটি করে যাচ্ছি।

ক্যারিয়ার কাঠামো নিয়ে ভাবনা আপনার ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে?

আমি বরাবরই খুব ভালো ছাত্র ছিলাম। ক্লাস টেন পর্যন্ত প্রতি ক্লাসেই ফার্স্ট হতাম। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই বলত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। মাথার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ঢুকিয়ে দিয়েছিল এই ভুতুড়ে বীজ। সেটাই লালন করতে বাধ্য ছিলাম বা বুঝবার গণ্ডি বেশি ছিল না। তা ছাড়া আমাদের সময় বিশ্ব এত উন্মুক্ত ছিল না। ব্যাংকের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য চাকরির চেষ্টা করব সে সাহস নিজের যেমন ছিল না, পরিবারের তো ছিলই না। কারও হাতে-পায়ে ধরা ছাড়া, কোনো ঘুষ ছাড়া পাওয়া চাকরিটা ছাড়ার মতো রিস্ক আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় খুবই কঠিন কাজ। আর একটা চাকরি সিরিয়াসলি করে অন্য চাকরির চেষ্টা করা মোটেই সহজ নয়। তা ছাড়া পড়াশোনা রিলেটেড জব তো আমাদের এই সমাজব্যবস্থায় নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে পড়েছি। আমাদের মাঝে যে লাস্ট অর্থাৎ ৭৩তম ছিল, সে আজ আমাদের সবার চেয়ে ভালো চাকরি করে। কীভাবে, তা জানি না। এ তো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যই।

করপোরেট কালচার নিয়ে কী বলবেন?

করপোরেট কালচার কী তা আমরা বুঝি না বলে করপোরেট কালচারের নামে নীরবে ক্রীতদাসপ্রথাকে নিয়ে এসেছি। ব্যবসায় নতুন পলিসি, নতুন এন্ট্রাপ্রেনিউর, নতুন প্রডাক্ট বিল্ডআপ, বিপরীতে আছে কর্মী ছাঁটাই, প্রমোশন না দিয়ে লেস পারফরমার বানানো, এক্সপেন্ডিচার কমানো। প্রতিষ্ঠান তার নিজের পলিসিতেই চলবে, সে ক্ষেত্রে নিজে নিজের ওপর আস্থা হারালে চলবে না।

কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে উপভোগ্য করে তোলেন?

কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো উপভোগ্য করে তোলার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

ক্যারিয়ার উপভোগ্য করে তোলার জন্য

ক্যারিয়ারকে উপভোগ্য করে তুলতে না পারলে তো আপনি সেই ক্যারিয়ারে থাকতেই পারবেন না। আপনি যেভাবেই আপনার ক্যারিয়ারকে গড়–ন না কেন, তাতে আপনার আনন্দ থাকতে হবে।

মাল্টিওয়ার্কে একজন মানুষ কীভাবে সফল হতে পারে?

মাল্টিওয়ার্ক একটা বিশ্লেষণযোগ্য শব্দ। একটা সবজিগাছ লাগানো থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি পর্যন্ত সবই মাল্টিওয়ার্ক। প্রতিটা মানুষেরই কিছু না কিছু প্রতিভা আছে। যার যা প্রতিভা আছে, সে যদি তার মূল কাজের পাশাপাশি সেই কাজটি করে তবে সে কোনো না কোনোভাবে সফল হবেই। মনের ভালো লাগাটা কি একটা সফলতা নয়। সফলতা মানে কি শুধু প্রমোশন বা টাকা উপার্জন?

গবেষণার বিষয় বাংলা, আপনার পেশায় কি কোনো উপকারে আসবে

আমার প্রেম, আমার নেশা, আমার আড্ডা সবকিছু। প্রবন্ধ লিখি তাই গবেষণার দিকে ঝোঁক। বাংলা সাহিত্যে পিএইচডি গবেষণার প্রথম পর্ব পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছি।

আপনি নিজেকে ব্যাংকিং সেক্টর ছাড়াও সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত রেখেছেন এবং গবেষণা করছেন, কেন?

আগেই বলেছি কীভাবে ব্যাংকে আসা। করপোরেট কালচার নিয়েও বলেছি। ক্যারিয়ার উপভোগ্য করার লক্ষ্য নিয়েও বলেছি। বর্তমানের ব্যাংকিং সেক্টর এতটাই জঘন্য যে যা বললে আমার চাকরিটা না-ও থাকতে পারে। ব্যাংকিং নিয়ে আর না বলে সাহিত্য নিয়ে বলি, সেই মঙ্গলের হবে। সাহিত্য আমার জান, আমার প্রাণ। চাকরি না থাকলে না খেয়ে মরব। কিন্তু সাহিত্য না করলে সব খেয়েও মরে যাব। সেই সাহিত্যকেও প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে এই কর্ম, এই পেশা, এই দাসত্ব। সাহিত্য ভালোবাসি আজ থেকে নয়, সেই ছোটবেলা থেকেই। কতটুকু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সাহিত্য ধরে রেখেছি, সে আলাদা ইন্টারভিউয়ের দাবিদার।

এখন কী করছেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমি একটা বিভাগীয় শহরের ব্যাংক ম্যানেজার। আমার ওপর অনেক রকম দায়িত্ব। আমার বন্ধুবান্ধব খুব কম, আড্ডা নেই বললেই চলে। চাকরি করি, পড়াশোনা করি, লেখালেখি করি, পারিবারিক সব দায়-দায়িত্ব পালন করি, আগামী জুনে পিএইচডি শেষ হবে ইনশা আল্লাহ। আরও পড়াশোনা করতে চাই, বাংলা সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

ছবি : তৌহিন হাসান

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

তিনি কথার জাদুকর : সোলাইমান সুখন, মোটিভেশনাল স্পিকার, মার্কেটিং এক্সপার্ট

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নৌবাহিনীতে, তারপর চাকরি ছেড়ে হয়েছিলেন সেলসম্যান। বলছি সুলাইমান সুখনের গল্প। যাকে আমরা চিনি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার বা ভিডিও ব্লগার হিসেবে। বর্তমানে তিনি ‘নগদ’-এর করপোরেট অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। ধাপে ধাপে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে গেছেন সুলাইমান সুখন। পছন্দ করেন গতি। তাই তার গল্পটাতেও কোনো বিরাম নেই। ক্যারিয়ারের পথে সেই অবিরাম হেঁটে যাওয়ার গল্পটাই শুনে নাও। কথপোকথনে স্বরলিপি।

ক্যারিয়ার শুরুর কথা

গতি আমার পছন্দ। আমি চেয়েছিলাম এয়ারফোর্সের ফরম কিনতে, আমি ভুলে নেভির ফরম কিনে ফেলি। এরপর ১৯৯৭ সালে নেভিতে জয়েন করি; যুদ্ধজাহাজে কাজ করি প্রায় আড়াই বছর। ২০০২-এর মাঝামাঝি আমি নেভি থেকে চলে আসি।
নেভি ছেড়ে চলে আসার কারণ?
স্বেচ্ছায় চলে এসেছিলাম। আমি আর একটু ওপেন আর একটু অন্য ধরনের লাইফস্টাইল চাচ্ছিলাম। তার জন্য আমি চাকরি পরিবর্তন করি। ঢাকায় এসে এইবিএ থেকে এমবিএ কমপ্লিট করি। কনসাল্ট্রেশন ছিল মার্কেটিং। ২০০৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়।

এরপরের ক্যারিয়ার

মিলিটারি লাইফের পরে ক্যারিয়ার শুরু হয় সেলস অ্যান্ড ট্রেড মার্কেটিং দিয়ে। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশে জয়েন করি ২০০৫ সালে। সেখানে ২০০৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চাকরি করি। এরপর জয়েন করি বাংলালিংকে। সেখানে আমার কাজ ছিল মার্কেটিং সাইট এবং মার্কেট রিসার্চ। ওখানে সাড়ে পাঁচ বছর কাজ করেছি। বাংলালিংকে আমার লাস্ট পোর্টফোলিও ছিল বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড হেড অব মার্কেট রিসার্চ। ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ১০০টা ইন্টারনাল কমার্শিয়াল প্রজেক্ট হ্যান্ডেল করেছি।
এরপর তিনটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে কাজ করেছি। ওখান থেকে বের হয়ে ২০১৩-এর শেষের দিকে এলিট টেকনোলজিস্ট কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছি কিছুদিন। সেখান থেকে চলে আসি ‘আমরা’তে। ওরা একটা হ্যান্ডসেট নিয়ে কাজ করছিল। ওই বিজনেসটা দাঁড় করানোর পরে ওদের যে মেইন বিজনেস ছিল ‘আমরা নেটওয়ার্কস’ ওই প্রজেক্টে কাজ করেছি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এরপর জয়েন করি ‘নগদ’-এ। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আমি করপোরেট অফিসার।

ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া বিষয়ে কী বলবেন

কেউ যদি বুঝে থাকে, জানা থাকে, কথা বলার ক্ষমতা থাকে, তাহলে তার বলা উচিত। কারও যদি আঁকার ক্ষমতা থাকে তাহলে তার সেটা ব্যবহার করা উচিত। কেউ ব্যাংকার হয়ে যদি ভালো তেহারি রান্না করতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় ছুটির দিনে তার তেহারি রান্না করে বিক্রি করা উচিত। এলাকার সবার জন্য শুক্রবারকেন্দ্রিক দোকান খোলা উচিত। বিদেশে আমি দেখেছি, একজন ব্যাংকার ছুটির দিনে তেহারি বিক্রি করছেন। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি বিদেশে আছে যে হাইলি প্রফেশনে আছে, সে আবার ফাঁকা সময়টাতে নিজের পছন্দের কাজটিও করছে। সুইডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখেছি, দিনের বেলায় বিশাল কোনো কোম্পানিতে কাজ করে আর রাতের বেলায় নিজের ছোট্ট একটা দোকান পরিচালনা করে। তো এই রকম ভেরিয়েশন দরকার।

২০১৯ সালে যা করতে চান

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যারা ভালো কাজ করছেন, আমি তাদের এই বছরে আরও হাইলাইট করতে চাই। অন্যরা যেন আরেকটু ইন্টারেস্টেড হয়। শুরুটা হয়ে গেলে আরও অনেকে কথা বলবে। এটা প্রয়োজন। আমাদের দেশে এটা খুব দরকার।
ভিডিও ব্লগার হিসেবে মানুষের কাছ থেকে কেমন?
ঢাকায় ‘ভিডিও ব্লগার’ কী, হয়তো অনেকে বোঝে না। আমি যখন দেশের বাইরে যাই, ‘আমি কী করি’Ñ এই প্রশ্নের জবাবে বলি, ‘আমি ভিডিও ব্লগার। তখন ওরা বলে ‘ওয়াও’।

সফলতা মানে

রাতে ঠিকমতো ঘুম হওয়া। এর সঙ্গেই সফলতা আর মানসিক স্বস্তি জড়িত।

ক্যারিয়ার এবং আমাদের সমাজবাস্তবতা

ঢাকা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম চাপের শহর। আমাদের এখানে অসুস্থতা বলতে যে সাইকোলজিক্যাল বিহেভিয়ার বা ডিপ্রেশন বোঝায়, প্যানিক এসব কিন্তু ধরি না। ওভারঅল সোসাইটিতে অস্থিরতা অনেক বড় ইস্যু। অস্থিরতা আসে সাধারণত এক্সপেকটেশন ম্যানেজমেন্ট থেকে। বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধুরা আমাদের ওপর অনেক এক্সপেকটেশন চাপিয়ে দেয়। আমার মনে হয়, এটা হওয়া উচিত না।

তরুণদের জন্য কী বলবেন

সময়কে সময় দিতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুত করার মধ্যে থাকতে হবে। থেমে গেলে চলবে না। কোনো কিছু চাওয়ার আগে পাওয়ার মতো অবস্থানে যেতে হবে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলেই ভাবি যে সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ, এটা ভুল। একটা কথা তো সত্য যে শেখাটা কখনো শেষ হয় না। আমি যদি ভাবি নতুন করে শিখতে হবে, তখন নিজের ওপর প্রেশার পড়বে। কিন্তু আমি যদি ধরেই নিই শেখাটা কখনো শেষ হবে না, তখন নতুন কোনো কিছু শেখা নিজের কাছে প্রেশার মনে হবে না।

ক্যারিয়ার, পদ, পদবি ও মানুষ; কীভাবে বিবেচনা করেন?

আমি প্রত্যেককে তার মতো করে বিবেচনা করি। এটা বুঝতে এবং শিখতে অনেক সময় লেগেছে এবং অনেক কষ্ট হয়েছে।
টাকা, সামাজিক অবস্থান, বাহ্যিক লুক, শরীর কিংবা শক্তি দিয়ে আমি মানুষকে ট্রিট করি না। আমি প্রত্যেককে ট্রিট করি তার নলেজ বা জ্ঞান দিয়ে। প্রথমত আমি একজন মানুষকে বিবেচনায় নিই মানুষ হিসেবেই। গভীরতাকে প্রাধান্য দিই। আমি সব জায়গায় সিমিলারিটি খুঁজি। একজন অল্প আয়ের মানুষ আর একজন বিলিয়নিয়ারের আচরণের মধ্যে মিল খুঁজে পাই। আমি পার্থক্য খুঁজে পাই না। সিমিলারিটি খুঁজে নেওয়ার জন্য পেছন থেকে রেফারেন্স নিই।

ছবি : আরিফ মাহমুদ রিয়াদ

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়

একাই একশো! রাবা খান, ইউটিউবার, রেডিও জকি

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

জনপ্রিয় ইউটিউবার রাবা খান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফানি ভিডিও দিয়ে হয়েছেন আলোচিত। এসব ভিডিওতে মানুষের নানা রকম স্বভাবকে সাবলীলভাবে দেখিয়ে যাচ্ছেন। এক রাবা খান ধারণ করছেন শত মানুষের বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি ইউনিসেফ-এর ইয়ুথ এডভোকেট হিসেবে কাজ করছেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন নিজে ইউটিউবার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি একাধারে রেডিও জকি আবার বেশ কিছু কোম্পানির ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। দূরদৃষ্টি আর একাগ্রতা দিয়ে হয়েছেন সফল একজন। তার সফলতা গল্প জানতে-জানাতে রোদসীর এই আয়োজন। কথপোকথনে স্বরলিপি।

শুরুটা কিভাবে?

আমি টিভি দেখা খুব একটা পছন্দ করতাম না। টিভি সিরিজগুলো ডাউনলোড করে কম্পিউটারে দেখা হতো। আমি সিনেমা এবং ইউটিউবের অনেক বড় ফ্যান। ইন্ট্যারন্যাশনাল ইউটিউবারদের দেখেই ইন্সপিরেশন পাওয়া। বাংলাদেশে তখন হাতে গোনা কয়েকজন ইউটিউবার ছিল। তাদের ভিডিও কন্টেন্ট দেখতাম। আমার হাতে তখন ক্যামেরা ছিল, কম্পিউটার ছিল। পরে মনে হলো ‘আমি কেন কন্টেন্ট বানাব না’। এরপরই শুরু করে দেওয়া।

তখনই মনে হয়েছিল এটি ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে উঠবে?

শুরু থেকেই আমি এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ, তখনই ইন্টারন্যাশনাল ইউটিউবারদের দেখতাম, তারা বই লিখছে। আরও অনেক কাজ করছে। তো ইউটিউবার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব এ কথা আমি আরও আগে থেকেই জানতাম। প্রথম কন্টেন্ট বানানোর দেড় বছর পর আমি আর একটি ভিডিও কন্টেট বানিয়েছি। ইউটিউবের তরফে আর্ন করা শুরু করেছি, ভিডিও কন্টেট তৈরি করার এক মাস পর থেকেই।

কি রকম ভিডিও

আমি ব্র্যান্ড ফ্যামিলি কন্টেন্ট বানিয়ে থাকি। আমার কন্টেন্টে কোনো গালি দিচ্ছি না, পলিটিকস বা রিলিজিয়ন বিষয়ে কোনো কথা বলছি না। ব্র্যান্ড ফ্যামিলি কাজ করার ফলে ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। সেভাবে করেই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

অনুপ্রেরণার গল্প

আমি যে কারও কাছ থেকে ইন্সপিরেশন নেবÑ এই রকম সুযোগ তেমন একটা নেই। আমি অনেক ইন্ডিয়ান ভিডিও দেখি, আমেরিকানস ভিডিও দেখি, যেগুলো থেকে ইন্সপিরেশন নেওয়া সম্ভব হয়। সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করতে হয়, তা হলো রিসার্চ। আমি হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলছি, তার সঙ্গে এক-দুইটা লাইন যোগ করে একটা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে ফেলি। আমি সব সময় কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলেই কিছু না কিছু ভাবতে থাকি।

অবসরে যা কিছু

আমার অবসর বলতে কোনো কিছু নেই। একই সঙ্গে কাজ ও পড়াশোনা দুই-ই করতে হয়। কাজের জন্য অনেক সময় দিই। রাতে ঘুমানো কখনো কখনো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার খুব মজা লাগে, যখন দেখি খুবই ডিফরেন্ট লাইফটা। একটা দিনের সঙ্গে আর একটি দিন কখনো মেলে না। এই বিষয়টা খুব এক্সাইটিং লাগে। কোনো ধরাবাধা জব নেই। নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছে। ইটস আ ফান।

পড়াশোনা

‘এ লেভেল’ শেষ করেছি। কিছু বছর আগে ‘ও লেভেল’ শেষ করেছি। এরপর কিছুদিন পড়াশোনা বন্ধ রেখেছিলাম। কাজের জন্য এটা করতে হয়েছিলো। আবার পড়াশোনা শুরু করেছি।

ক্যারিয়ার ফোকাস নিয়ে ভাবনা

সবকিছুরই ডিমান্ড অনেক বেশি। যেহেতু সবকিছুুরই একটু কমতি আছে। আমার মনে হয়, যে কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেই কাজটিই ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। তাহলে কাজকে কখনো কাজ বলে মনে হবে না।

কাজ, কাজ আর কাজ

কাজকে কাজ না মনে হয়ে প্যাশন মনে হলে তবেই এনজয় করা সম্ভব। কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো- টাইম মেইনটেইন, কন্ফিডেন্ট। ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক, দেড় বা দুই বছরের এক্সপেরিন্সও অনেক কাজে লাগে। এক্সপেরিয়েন্স গেদার করা থামিয়ে দেওয়া চলবে না।

প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা

আমি এতো বেশি কাজ করি, গত তিন বছর ধরে প্রপার ভ্যাকেশনে যেতে পারিনি। দেশের বাইরে গেলে দুই দিনের বেশি থাকা আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়। যেহেতু আমার দুইটা রেডিও শো আছে, আমি একটা শো-স্পন্সর। এখানে সময় দিতে হয়। মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য কলকাতায় গিয়ে বলিউডের সিনেমা দেখার চেষ্টা করি। আমি বলিউডের খুব বড় ফ্যান। বড় কোন রিলিজ হলে, আমি কলকাতায় চলে যাই। ছুটির দিন আমার পছন্দ না। কারণ আমার কাজ করতে অসম্ভব ভালো লাগে। যদিও ছুটিতে থাকার দরকার আছে।

ভালোলাগা-ভালোবাসা

ভালোলাগে ব্রান্ডন জনসনকে। তিনি দুই মিনিটের একটি মিটিংয়েও যোগ দেন। তিনি তার কাজের সময়টাকে, দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট, পনেরো মিনিট, বিশ মিনিটের জন্যও ভাগ ভাগ করে রাখেন। এই রকম মানুষ আমরা খুব কম দেখি। একটি সুন্দর ক্যারিয়ার জন্য পরিকল্পিত কাজ করার দরকার আছে।

২০১৯ ইয়ারলি প্ল্যান

এই বছরটা ইউনিসেফ-এর সঙ্গে কাজ করবো। কয়েকটা কোম্পানীর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আছি। এগুলো ঠিকঠাক মতো করবো। নিজস্ব কন্টেন্টতো অবশ্যই বানাবো। এই বছর গান ফোকাস করার চেষ্টা থাকবে।

নিজের কাজ সম্পর্কে মন্তব্য

আমার কাজ আমার কাছে ফান।

নতুন কাজের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সূত্র

আমি আমার ক্ষেত্র নিয়ে বলি, ছেলেরা ইউটিউবের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করছে। অনেক ছেলে ইউটিবিউব কেন্দ্রিক অর্থ-উপার্জন করছে। কিন্তু মেয়ে কই? পেছনের গল্প হলো-ফ্যামিলির প্রেসার আছে, ফ্যামিলি থেকে চায় না, ফ্যামিলি করতে দেয় না ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই সবকিছু থাকবে। প্রয়োজন হলো- কন্ফিডেন্ট। নিজে বুঝতে হবে, আমাকে দিয়ে কি হবে, আমি কি করতে পারবো। কাজের পরিকল্পনা থাকতে হবে। তিন বছর আগে আমি যে প্ল্যান করেছিলাম, তা পুরোপুরি করতে পেরেছি। প্ল্যান হতে হবে রিয়েলিস্টিক। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে প্ল্যান সফল করতে হবে। একটা রিয়েলিস্টিক প্ল্যান মানুষকে হতাশ করে না।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.এই সংখ্যায়

অসি নয়, মসিতে আস্থা তার : কাজী রাফি, কথাসাহিত্যিক, মেজর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সেকেন্ড লেফ্টেন্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু। কিন্তু প্রচুর পাঠাভ্যাসের কারণে ছোটবেলা থেকেই ভেতরে ভেতরে লালন করেছেন লেখক হয়ে ওঠার প্রবল ইচ্ছা। বাংলার মাটির সন্তান হিসেবে এই ভূমির প্রতি নিজের দায়বোধ আছে বলে মনে করেন তিনি। বলা হচ্ছে, কথাসাহিত্যিক কাজী রাফির কথা। প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ লিখে অর্জন করেছেন এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার। কাজী রাফি বর্তমানে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার (মেজর) হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন। অথচ এক সময় এই চাকরি থেকেই অব্যাহতি চেয়ে বসেছিলেন তিনি! কিন্তু কেন? জানা যাবে রোদসীর এই আয়োজনে। কথপোকথনে স্বরলিপি।

কী হতে চেয়েছিলেন?

ছোটবেলা থেকেই অনেক বই; বিশেষত গল্প-উপন্যাস পড়তাম। একদিন আমার ছোটবোন আমাকে প্রশ্ন করেছিলো ‘ভাইয়া, এই যে তুমি এতো বই পড়ো, তুমি আসলে কী হতে চাও?’ আমি তাকে বললাম,‘কী হতে চাই, তাতো বলতে পারছিনা, তবে আমি একজন ভালো পাঠক হতে চাই। আর সম্ভব হলে লেখক হবো।’ এই কথাটি আমি দুষ্টুমি করেই বোনকে বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারি, অবচেতনে-আনমনে আমি হয়তো লেখক হওয়ার ইচ্ছাটা লালন করতাম বলেই অনেক পরে হলেও কলম ধরেছি। আমার আটাশ বছর বয়সে আমি প্রথম লেখা শুরু করলাম। ঘোরের বসেই আট মাসের মধ্যে লেখা শেষ হলো আমার প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’।

পরিবার কী চাইছিলো

আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাস বাবার ছিলোনা। তিনি পড়াশোনাটা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে বলতেন। কিন্তু আমি তো কেবল পরিবারের একজন সদস্য না, একটি সমাজেরও সদস্য। আমাদের সময় প্রচলিত ধারণা ছিল-ভালো ছাত্র হলে হয় ডাক্তার, না হয় ইঞ্জিনিয়ার অথবা সশস্ত্রবাহিনীর একজন অফিসার হতে হবে। তাই সেভাবেই আমার ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। বড়দের কারও কাছে কখনো বলা হয়নি ‘বড় হয়ে লেখক হতে চাই’। কারণ, এই সমাজ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের এই কথা বলার স্পেসটুকু দেয় না। কেননা এখানে আর্থিক উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

অদম্য ইচ্ছা

ইচ্ছা ছিলো ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। চান্সও পেলাম কিন্তু যেদিন বিশ্বাবিদ্যালয়ে ভর্তির তারিখ ছিল সেদিন আমি আটকা পড়ে গিয়েছিলাম আইসএসবি পরীক্ষার জন্য। আমি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেতে পারিনি। আমার কখনো বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা হয়নি। তবে অফিসার হওয়ার পর নিজ উদ্যোগে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি।

ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা

আমি মনে করি একজন মানুষ কী করতে ভালোবাসে আগে সেটা জানা উচিত। মানুষ যদি তার ভিতরের শক্তিটা আবিষ্কার করে ফেলতে পারে তবে সেদিকেই তার পদচারণা হয়। মানুষের যেদিকে অভিযাত্রা থাকে, যদি তার ইচ্ছার প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে সেই কাজের জন্য তার মগ্নতা তৈরি হয়। এই মগ্নতা থাকলে মানুষ জীবনের যে দিকটায় বিস্তৃত হতে চায় সেখানেই তার অবস্থানকে বড় এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

লেখক হয়ে ওঠা

চিঠি লেখার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছিলো অষ্টম শ্রেণি থেকে। বাবাকে লম্বা লম্বা চিঠি লিখতাম। বাবা শিক্ষক ছিলেন, সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লিখতেন। আমিও চেষ্টা করতাম যথাসম্ভব গুছিয়ে চিঠি-লিখতে। মাকেও চিঠি লেখা হতো। কিন্তু মা কখনো ফিরতি চিঠি লিখতেন না। এরপর আমার যখন অ্যানগেইজমেন্ট হয়ে গেল-তখন স্ত্রীকে লম্বা চিঠি লিখতাম। আমি যেখানেই থাকতাম প্রতিটি চিঠিতে তার চারপাশের প্রকৃতি নিয়ে কোনোনা কোনোভাবে লেখা হতো। এমনকি আমি যখন বাবাকে চিঠি লিখতাম তখনও। মিলিটারি একাডেমিতেও লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তাম। তবে আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমার মা এবং আমার গ্রামের প্রাকৃতিক অবগুণ্ঠনে ঢাকা আমাদের সুনশান বড়-বাড়িটা। এমন সুনশান পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছাড়াও মা’র মুখের ফল্গুধারার মতো ঝরে পরা কবিতা শুনেশুনে কৈশোর অতিক্রম কালে আমার ভিতরে এক ধরণের অনুপ্রাস তৈরি হয়েছিল। সেই অনুপ্রাস আমাকে সবকিছু দেখে অবাক হতে শিখিয়েছিল। অবাক হয়ে গভীর মনোযোগে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার প্রবণতাই আমার লেখকসত্তার শক্তি হয়ে উঠেছিল আমার অজান্তেই।

চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন

(হাহাহা)। হ্যাঁ। ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাস লেখার সময় আমার খুব সমস্যা হচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে আর একটা গল্প বলতে হবে। আমার বাড়ি বগুড়া। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বাড়িও বগুড়ায় ছিলো। উনার ইচ্ছা ছিলো একটা উপন্যাস লিখবেন, যেখানে পুন্ড্রু-সভ্যতার ছায়া থাকবে। কিন্তু তিনি লিখে যেতে পারেননি। একথা আমি যখন জানতে পারি, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর ২০০৭ বা ২০০৮-এর দিকে এশিয়ান উইক-এ একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য ছিলো পান্ডুয়া নামক স্থানে (মহাস্থান গড়ের মতো যে নিদর্শন) সেগুলো পাওয়া গেছে। পত্রিকাটি আর্য-মৌর্য হয়ে পালদের গড়ে ওঠা সভ্যতা এবং তার অবস্থান হিসেবে ভারতের কথা লিখেছিল। ওই প্রতিবেদন পড়ার পর, সেই পু-্রভূমির সন্তান হিসেবে আমার মনে হয়েছে; আমারও একটা দায় আছে। আমাদের এই সভ্যতাকে একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে আমি অন্যের হয়ে যেতে দিতে পারিনা। ভাষা এবং সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপন্যাসের চেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার আর কিছু হতে পারেনা। সেই অনুভব থেকেই লেখা শুরু করলাম ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাসটি। কাজটি আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো। আমার গল্পকে সাজানোর ইচ্ছা ছিলো কাশ্মির থেকে জয়াপীড় এবং পুন্ড্র সভ্যতা হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। আমি আসলে বাঙালির জাতি সত্তার সভ্যতা, ঐতিহ্য এবং কৃষ্টির স্থান থেকে শনাক্ত করতে চেয়েছিলাম। কাজটাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিলো। ২০০৮ সালে উপন্যাসটি লিখতে শুরু করলাম, তবে একটা সময় খুব ক্লান্ত বোধ হলো। পেশাগত কারণে তা ঠিক মনমতো হয়ে উঠছিলো না। তারপর আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে অবশ্য চাকরিটা ছাড়তে হয়নি- বরং সহযোগিতা পেয়েছি। আমার অ্যাপেনডিক্স লেটার কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেননি। ২০১৩ সালে উপন্যাসটি লেখা সম্পন্ন করেছিলাম।

এতো বড় সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন?

আমি উপন্যাসটি শেষ করতে চাইছিলাম। ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাস সৃষ্টিকালে মনে হচ্ছিল চাকরির চেয়ে উপন্যাস সৃষ্টিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি করার সময় আমার বারবার মনে হয়েছে একজন শিল্পীর জন্য তার পেশাটা অন্তরায় হয়ে ওঠে। আমার স্ত্রী এই কাজে সবার আগে সম্মতি দিয়েছিল।

তরুণদের জন্য কী বলবেন

ব্রিটিশরা আমাদের নেটিভ বলতো। শোষণ করতো। ওদেরকে আমরা ঘৃণা করতাম। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ৮০০ বছরের শাসন-শোষণে ভারতবর্ষের মানুষদের ডিএনএর মধ্যেই এক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। তা হলো শাসক শ্রেণির প্রতি ঘৃণাবোধ করা। অনৈতিকভাবে অর্জন করা অর্থবিত্ত প্রতিপত্তি, ক্ষমতাকে বাঙালিরা পছন্দ করতো না। তাই শাসক শ্রেণিকে তারা যেমন ঘৃণা করে তেমনি আবার ওদের মতোই হয়তো হতে চায়। সেজন্য বাঙালি ক্ষমতা লাভ করলে মাঝে মাঝে তাদেরকে আমরা শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখি। যে কাজে ক্ষমতা বেশি, প্রভাব বেশি আমাদের সমাজে সেই কাজের মূল্যায়ন করা হয়। সেদিকেই সন্তানদের এগিয়ে দিতে চান-পরিবারের সদস্যরা। মহৎ জীবনাভ্যাস ব্যাতিত এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • সঠিক হুইস্ক বাছাই করবো কীভাবে?

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook