রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
লেখক

Rodoshee

Rodoshee

স্বাস্থ্য

ইউরিনে ইনফেকশন হলে যা করতে হবে

করেছে Rodoshee জানুয়ারী ২৪, ২০২২

রোদসী ডেস্ক

শহরে নারীবান্ধব টয়লেট অপ্রতুল থাকায় দীর্ঘক্ষণ টয়লেট চেপে নারীরা। টয়লেটের বেগ কমাতে পানিও কম পান করে থাকে। ফলে মূত্রনালীতে সংক্রমনসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। তাই ইউরিন ইনফেকশনে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ভোগে।

ইউরিন ইনফেকশন যেভাবে হয়

ইউরিন ইনফেকশন যেভাবে হয়
ইউরিন ইনফেকশন যেভাবে হয়

মানবদেহে দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি বøাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। আর এই রেচনন্ত্রের যে কোনও অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’ হয়। কারণ প্রস্রাবে ইউরিয়া এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো টক্সিন জাতীয় পদার্থ থাকে। আর বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে বøাডারে যে জীবাণু জন্মায়। এছাড়া বøাডার ফুলে যেতে পারে। আর নিয়মিত প্রস্রাব চেপে রাখলে ধীরে ধীওে কিডনি কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। রক্তের বিভিন্ন সংক্রমণসহ নানা ধরণের সংক্রমণ হতে পারে।
এটি নারীর প্রজনন ক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

লক্ষণ

লক্ষণ
লক্ষণ

ইউরিন ইনফেকশন হলে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ পায়। যেমন, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া, রং বদলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হয় , বমি ভাব বা বমি হয়, একটু পর পর প্রস্রাবের বেগ অনুভব করলেও ঠিক মতো প্রস্রাব হয় না, তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া, জ্বর জ্বর ভাব লাগা বা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর আসা ইত্যাদি।

করণীয়

করণীয়
করণীয়

ইউরিন ইনফেকশ হলে প্রচুর ভিটামিন সি খেতে হবে। কারণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতেও সহায়তা করে ভিটামিন সি। এটি মুত্রথলি ভাল রাখে এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালা ভাব কমাতে সাহায্য করে।

পরিমিত পানি পান করতে হবে। দিনে অন্তত তিন লিটার। যদি প্র¯্রাবের হলুদভাবে দেখা দেয় তাহলে অবহেলা না করে তখনই পানি খেয়ে নিয়ে হবে।

রসালো ফল খেতে হবে। এক্ষেত্রে আনারস বেশ উপকারি। এসময় ডাক্তাররাও আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। আর আনারসে ব্রোমেলাইন নামক উপকারী এনজাইম থাকে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

প্রতিকার

প্রতিকার
প্রতিকার

যখনই প্র¯্রাবের বেগ আসবে তখনই ত্যাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাস্তাঘাটের পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা দায়ী না করে আশে পাশে থাকা শপিং মল, হাসপাতালের টয়লেট অর্থ্যাৎ ব্যবহারযোগ্য কোন একটি জায়গায় গিয়ে মূত্রত্যাগ করে নিতে হবে।

টয়লেট টিস্যু রাখতে হবে। টয়লেট শেষে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে। কারণ প্র¯্রাবের জায়াগাটি ভেজা থাকলে সংক্রণ ছড়াতে পারে।

হাই কমোড ব্যবহার করতে গেলে সেটি টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে। যদি পাবলিক প্লেসের টয়লেট হয় তবে আরো সতর্ক হতে হবে।

বাইরে গেলে পর্যাপ্ত পানি নিয়ে যেতে হবে। পিপাসা লাগলেই পান করে নিতে হবে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আড্ডাতুমিই রোদসী

রোদসীর আড্ডায় আমেনা সুলতানা বকুল

করেছে Rodoshee ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

আমেনা সুলতানা বকুল। নানাভাবেই তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া চলে। তিনি একাধারে রাজনীতিক, সমাজসেবী এবং সফল উদ্যোক্তা। তবে এত পরিচয়ের বাইরে সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো- তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবেলা করেছেন। যুদ্ধ শেষ হলেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে এখনো নিজেকে সমানভাবে সক্রিয় রেখেছেন তিনি। রোদসী’র এবারের আড্ডায় মুখোমুখি হয়েছেন  এই বীর সৈনিক।

রোদসী : ভিন্নধর্মী কিছু করতে ভিন্ন মানসিকতার দরকার হয়। সে জন্য দরকার উপযুক্ত পরিবেশ। ছোটবেলায় আপনি তেমনি কোনো পরিবেশ পেয়েছিলেন? অর্থাৎ কেমন ছিল আপনার ছোটবেলার পরিবেশ?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন দেশের অবস্থা ভালো ছিল না। সময়ের প্রয়োজনেই আমার মানসিকতা সে রকম হয়ে গিয়েছিল। আর আমার বাসার পরিবেশে বিশেষ কিছু ছিল না। অন্য দশটা পরিবারের মতোই ছিল আমার পরিবার। আমাদের স্কুলে ‘কচি-কাঁচা’ নামে একটি সংগঠন ছিল। সেটা পরিচালনা করতেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বড় ভাইবোনেরা। তারা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তারাই আমাদের নিয়ে মিটিং-মিছিল করতেন।
রোদসী : আপনি যে এই সংগঠনে যেতেন, এটা কি আপনার পরিবার জানত?
আমেনা সুলতানা বকুল : হ্যাঁ, জানত। কিন্তু তারা বাধা দিত না। আমি লেখাপড়া ঠিকমতো করতাম। আমার ওপর তাদের বিশ্বাসও ছিল। সংগঠন থেকে মিছিলে যেতাম, কিন্তু বুঝতাম না মিছিল কী। সবাই যায়, আমিও যেতাম। এখানে বাধা দেওয়ার কিছু ছিল না। তখন মিটিং-মিছিল ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
রোদসী : তখন মেয়ে হয়ে মিছিলে অংশ নিতে কোনো সমস্যা হতো না?
আমেনা সুলতানা বকুল : না। মেয়েদের প্রতি সবার অনেক সম্মান ছিল, শ্রদ্ধাবোধ ছিল। আমরা ছেলেদের সঙ্গে মিছিলে যেতাম, রাত করে বাসায় ফিরতাম, আমাদের কোনো প্রকার ভাবনাই ছিল না যে কখনো বিপদে পড়ব।
রোদসী : আপনি কীভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমরা কখন যে এই মহাসড়কে উঠে গেছি, নিজেরাই বুঝিনি। রাজনৈতিক ট্রেনিং দেওয়ার জন্য আমার মতো কয়েকজনকে নির্বাচিত করেছিলেন সংগঠনের বড় ভাইয়েরা। এভাবেই ধীরে ধীরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। তখন কিন্তু আমাদের যা খুশি তা করার স্বাধীনতা ছিল না। একটি দেশের আইন অগ্রাহ্য করে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছি। স্লোগানে বলছি, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।’ পরে জেনেছি, এসব স্লোগান তৈরি করেছেন তৎকালীন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা। তখন ওপেন প্ল্যাটফর্মে ছিল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ, আর ওপর প্ল্যাটফর্মে ছিলেন ভিন্ন কিছু মানুষ, যারা মূল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন, প্রভাবিত করতেন, সিদ্ধান্ত নিতেন, তারাই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তৈরি করেছেন, তারাই স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরি করেছেন। তারা ছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’।
রোদসী : অর্থাৎ তখন পরিকল্পনাই ছিল আলাদা একটা দেশ গড়ার?
আমেনা সুলতানা বকুল : হ্যাঁ, আর সে লক্ষ্যেই আমাদের আন্দোলন এগিয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার পেছনে ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে এমন নিরঙ্কুশ বিজয় ছিল একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার, কিন্তু এটাকেও সম্ভব করেছে সেই সংগ্রামী ছাত্রসমাজ।
রোদসী : আপনি জাতীয় চার নেতার কুচকাওয়াজে ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে পতাকাও দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
আমেনা সুলতানা বকুল :আমরা ছাত্রলীগের কর্মীরা ২৩ মার্চ মিছিল থেকে পল্টনে জাতীয় চার নেতাকে গার্ড অব অনার দিই।
রোদসী : গার্ড অব অনার কেন দেওয়া হলো?
আমেনা সুলতানা বকুল : ২ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের যে পতাকা তৈরি হলো, আমরা সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করব, এটাই আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তখন কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা প্যারালাল গভর্নমেন্ট চালু হয়ে গেছে। শুধু ছাত্ররা হাতে পতাকা নিয়ে মিছিল করলেই তো আর এই অথরিটি প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই আমরা এটাকে আরেকটু প্রকাশ্যে আনতে চাইলাম। সে জন্য আমরা চার ছাত্রনেতাকে গার্ড অব অনার দিয়ে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেলাম। সেখানে মিছিল নিয়ে সবাই বসে থাকল, আমাদের নেতা যারা ছিলেন, তারা পতাকা নিয়ে এগিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু দোতলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, ওনার বাসার সামনের গেটে উঠে আমাদের এক ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধুর হাতে পতাকা তুলে দেন। এটা এখনো ছবিতে দেখা যায়।
রোদসী : এরপর তো যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আপনি ট্রেনিং নিয়েছিলেন কোথায় ও কীভাবে?
আমেনা সুলতানা বকুল : তৎকালীন ইকবাল হলের ভেতর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে বড় ভাইয়েরা ডামি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং দিতেন। তারা যুদ্ধের জন্য আমাদের তৈরি করছিলেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে আমাদের কী করতে হবে, কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখব, সবকিছুর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছিল।
রোদসী : অর্থাৎ আপনারা বুঝে গিয়েছিলেন যে সামনে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী।
আমেনা সুলতানা বকুল : হ্যাঁ, আমরা বুঝে ফেলেছিলাম, যুদ্ধ ছাড়া দেশ স্বাধীন করা সম্ভব নয়। ওই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করব। সে জন্যই আমাদের ট্রেনিং নেওয়া।
রোদসী : কতজন ছিলেন সেখানে বা কত মানুষ সম্পৃক্ত ছিল এর সঙ্গে?
আমেনা সুলতানা বকুল :তখন এর সঙ্গে ছাত্ররা ছাড়াও সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানের নেতাদের দেনদরবার চলছিল, পাকিস্তানিরা আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছিল। কারণ, তারা তখন ভেতরে ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সে সময় এ দেশের ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনেও স্বাধীনতার চেতনা জেগে উঠেছে। তারাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ২৫ মার্চও সারাদিন আমরা ট্রেনিং করেছি।
রোদসী : তখন আপনার বয়স কত ছিল? আপনার কি বিয়ে হয়েছিল?
আমেনা সুলতানা বকুল : না। তখনো আমার বিয়ে হয়নি। বয়সও আঠারোর নিচে।
রোদসী : আপনার পরিবার কি জানত যে আপনি যুদ্ধের ট্রেনিং করছেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : আসলে আমার বাবা-মা থাকত কুমিল্লা, আমি থাকতাম ঢাকায় বড় খালার বাসায়। এই কাজগুলো খুব একটা বলে করতাম না। তাই কেউই সেভাবে প্রশ্ন করেনি যে কী করছি।
রোদসী : ২৫ মার্চের ঘটনাটা বলবেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমি তখন ইডেন কলেজে পড়তাম। আমার খালার বাসা ছিল নাখালপাড়ায়। ২৫ মার্চ রাতে আমি বাসায় থেকেই জানতে পারলাম পাক হানাদারদের আক্রমণ শুরু হয়েছে। সবাই খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি জানতাম, আক্রমণ হতে পারে যে কোনো দিন। আমাদের আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া ছিল, হামলা হলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সবাই সুরক্ষিত জায়গায় চলে যাবে। পরদিন আমরা গ্রামের বাড়ি চলে গেলাম। আমার এক বোন সঙ্গে ছিল, সে ছিল প্রেগন্যান্ট। নারায়ণগঞ্জের কাছে গেলে তার ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখন রাস্তার পাশেই এক বাড়িতে অবস্থান করি। সেখানে তার বাচ্চা জন্মের পর বাচ্চাকে কোলে নিয়েই আবার হাঁটা শুরু করি।
রোদসী : যুদ্ধে যোগ দিলেন বা আপনারা সংগঠিত হলেন কীভাবে?
আমেনা সুলতানা বকুল : গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। সেখানে যুদ্ধের জন্য একটি ক্যাম্প ছিল, থানা কমান্ডার ছিল আমার মামাতো ভাই। তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখতাম। প্রায় দুই মাস ওই ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে থাকলাম। সেখানে আশপাশে যারা মুক্তিযুদ্ধে যেতে চায়, যাদের যাওয়ার সামর্থ্য আছে, তাদের সংগঠিত করতে থাকলাম। প্রথমে গেলাম শাহাপুরে, আমার ছোট খালার বাসায়, সেখান থেকে আগরতলা। আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতাম। সেখানে একটি হাসপাতাল ছিল, যুদ্ধাহতদের সেখানে নিয়ে আসা হতো। আমরা তাদের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতাম। এরপর সেখানে আমরা যুদ্ধের ট্রেনিং নিই প্রায় দেড় মাস।
রোদসী : আপনি সরাসরি কোনো অপারেশনে গিয়েছিলেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : হ্যাঁ। ট্রেনিং শেষ করে মেলাঘর থেকে আমরা একটা অপারেশনে যাই। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে আমাদের এক সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়। তার পেটের ভেতর বোমার স্প্রিন্টার ঢুকে গিয়েছিল। তখন তাকে গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।
রোদসী : সেখানে আপনার ভূমিকা কী ছিল?
আমেনা সুলতানা বকুল : যুদ্ধের ময়দানে প্রত্যেকের দায়িত্বই ভাগ করা থাকে। আমারও ছিল। সেখানে আমি সরাসরি অস্ত্র হাতে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছি।
রোদসী : আপনার কি যুদ্ধের এমন কোনো স্মৃতি আছে, যা এখনো নাড়া দেয়?
আমেনা সুলতানা বকুল : ডিসেম্বর মাসে কসবায় আমরা একটা ফিল্ডে ছিলাম। সেখানে দু-তিনবার শত্রুর মোকাবেলা করে আমরা চলে আসছিলাম। পথে একটা জায়গায় আমরা হঠাৎ অদ্ভুত আওয়াজ শুনলাম। মানুষ খুব কষ্ট বা ব্যথায় কাতরালে যেমন আওয়াজ হয়, তেমন আওয়াজ শুনলাম। আমরা শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলাম। একটা গর্তের ভেতর থেকে আওয়াজটা আসছিল। আমরা সেদিকে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি পাঁচ-ছয়জন নারী, সবাই সম্পূর্ণ উলঙ্গ, গায়ে এক টুকরো কাপড় নেই। তাদের সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। ওরা আমাদের দেখেও ছিল ভাবলেশহীন, হতবিহ্বল। তারা কাউকে চিনতে পারছে না, কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। তাদের সেখান থেকে উঠিয়ে আমরা উদ্ধার ক্যাম্পে নিয়ে আসি। একটা মেয়ে হিসেবে ওদের ওই অবস্থায় দেখে আমার মন দুর্বল হতে পারত। কিন্তু না, আমার আরও জেদ বেড়ে গেল। আমি আরও সাহস নিয়ে যুদ্ধ করলাম।
রোদসী : যখন বিজয়ের ঘোষণা এলো তখন আপনি কোথায়? কী করছিলেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমি ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঘোষণা শুনতে পাইনি। আমি শুনেছি ১৭ তারিখে। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা শুনে ঢাকায় আসতে আসতে ১৯ তারিখ লেগে যায়।

DSC_8607 - Copy

আমেনা সুলতানা বকুলের সাথে রোদসী’র সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমীন

রোদসী : যুদ্ধে আপনার পরিবারের কোনো ক্ষতি হয়েছিল কি?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমাদের বাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল। সৌভাগ্যবশত বাড়িতে কেউ ছিলেন না।
রোদসী : আপনার পরিবারের আর কেউ কি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমি ছাড়াও আমার দুই চাচাতো ভাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ওরা আমার চেয়ে দু-তিন বছরের বড়। তখন তারাও কলেজে পড়ত। আর মামার বাড়িতে মামাতো ভাই কমান্ডার হিসেবে ছিল।
রোদসী : তখন যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের সাড়া কেমন ছিল?
আমেনা সুলতানা বকুল : বর্তমানে নারীরা যতটা স্বাধীন, তখন তো পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন মেয়েরা রান্নাবান্না আর সন্তানের যত্ন ছাড়া আর কোনো কিছু তেমন একটা বুঝত না। একটা সময় পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তারপর বিয়ে দিতে হবে এমনই ছিল ধারণা। মেয়েরা যে পড়াশোনা করে চাকরি করবে বা সংসারের বাইরে এসে কিছু করবে, সেটা অতটা সহজ ছিল না। আমি তো ভালো একটা পরিবেশ পেয়েছি, সুযোগ পেয়েছি, তাই সহজেই সরাসরি যুদ্ধে আসতে পেরেছি। কিন্তু সমগ্র সমাজের চিত্র সে রকম ছিল না।
রোদসী : আপনি কী কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
আমেনা সুলতানা বকুল : না। আমাকে কোথাও কেউ বাধা দেয়নি। এমনকি যুদ্ধকালে একটা মেয়ের জীবনযাপন কী ছিল, খুব সংগত কারণেই প্রশ্নটা আসে। কিন্তু তখন আমি যে এতটা অনিশ্চিত পরিবেশে থেকেছি, দেখা যাচ্ছে আমি একা একটা মেয়ে, আর সঙ্গে সাত-আটজন ছেলে। কিন্তু তখন কারোরই মনে হয়নি যে আমি একটা মেয়ে, বা আমারও মনে হয়নি ওরা ছেলে। সবারই একটা কথা মনে হয়েছে, সবাই মুক্তিযোদ্ধা। একে অপরের সহযোদ্ধা। সেখানে ছেলেমেয়ে কোনো বিভেদ ছিল না।
রোদসী : দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আমেনা সুলতানা বকুল : দেশ স্বাধীন করা আমাদের অনেক বড় একটা অর্জন। কিন্তু সেই পরাজিত শক্তিকে আমরা শেষ করতে পারিনি। তারা দীর্ঘ সময় পর নিজেদের গুছিয়ে বা সংগঠিত হয়ে মাঠে নেমেছে। সেই তুলনায় আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিরা নিজেদের এখনো সংগঠিত করতে পারিনি। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশ এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, যেখানে আমি যে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেটা কাউকে বলতে পারিনি। ফলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। এই ব্যর্থতা আমাদের। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তিরা চায় না আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। তারা দেশকে সেই আগের জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। তারা সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের রুখতে স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ এখনো একজোট হতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমার অনেক বড় ব্যর্থতা। সেই যুদ্ধের সময় আমাকে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি, কিন্তু আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আমাকে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আজ ঘরে-বাইরে কোথাও কেউই নিরাপদ নয়।
রোদসী : এটা থেকে মুক্তির উপায় কী?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমরা যারা স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ, তারা যদি একজোট হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তবেই এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একা এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে একপ্রকার সামাজিক অবক্ষয়। সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হবে এর থেকে মুক্তির উপায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমি এখনো মিছিল-মিটিং, সমাবেশে অংশ নিই। কিন্তু আমার এই কাজ তো যথেষ্ট নয়। কারণ, বিরোধীরা কাজ করছে আধুনিক উপায়ে, তারা কম্পিউটারের বাটন টিপে হাজারো লোকের কাছে মেসেজ পৌঁছে দিচ্ছে। আর আমি একটা মানববন্ধন করলাম, কিন্তু সেটা কতজনে দেখছে বা জানছে।

IMG_0001

(একাত্তরের রণাঙ্গনে সহযোদ্ধাদের সাথে…)
রোদসী : বর্তমান সময়ের মেয়েরা কি ঠিক পথে চলছে?
আমেনা সুলতানা বকুল : আমি এখনকার মেয়েদের নিয়ে আশাবাদী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চে যেসব মেয়েকে দেখেছি, ভেবেছিলাম তারা শুধু কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টক শোতেই আছে। কিন্তু না, সেই ২০১৩ সাল থেকে তারা এখনো মাঠেই আছে। তবে তারা সংঘবদ্ধ নয়। তাদের সংঘবদ্ধ করে যদি একটি আওয়াজ তুলে দেওয়া যায়, তবেই সাফল্য আসবে। উনিশ শতকে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে, যুদ্ধ হয়েছে, সেটা এ যুগে সম্ভব নয়। যুদ্ধের সেক্টর বদলাতে হবে, কৌশল বদলাতে হবে। প্রতিপক্ষ যে কৌশলে লড়ছে, আমাদের সে পথেই জবাবটা দিতে হবে। অন্যথায় এই সংকট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না।
রোদসী : মেয়েদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে?
আমেনা সুলতানা বকুল : মেয়েদের ভাবতে হবে, আমিও মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য লড়াই করব। গোটা পৃথিবীটাই আমার এলাকা। নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখায় বন্দি করে রাখা যাবে না। সে যদি ইচ্ছা করে, তার ইচ্ছা যদি মানুষের ভালোর জন্য হয়, তবে সে ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ হবে।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
প্রধান রচনা

শৈশবহীন একদল মানুষ || জাহীদ রেজা নূর

করেছে Rodoshee ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

১.
শাওনকে যখন ফোন করে বললাম, তোমার ছোটবেলার কথা তো জানাই হয়নি কখনো! তখন শাওনের সে কী হাসি! ‘এতদিনে ছোটবেলা!’
তেতাল্লিশ বছর আগে আমাদের অনেকের জীবনেই যে ঝড় বয়ে গিয়েছিল, সে কথা এতদিন পর শুনতে হবে কেন? শুনে কী হবে? এই প্রশ্ন তো যে কারো মনে হতেই পারে।
ডিসেম্বর এলেই বিজয়ের কথা আসে, বিজয়ের কথা এলেই সংগ্রাম আর বীরত্বের পাশাপাশি আত্মদানের কথা আসে। আত্মদানের কথা এলেই আমরা কতিপয় মানুষ বুঝতে পারি, ওই ছোটবেলায়ই আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমাদের শৈশব। শিশুকালে আমাদের শৈশব ছিল না। আমরা অতি দ্রুত যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনের ওঠা-নামার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখেছি। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো এখনও সবার অগোচরে খুঁজতে থাকি আমাদের শৈশব। কল্পনায় দেখতে পাই বাবার সঙ্গে নিজেকে। যে বাবার অবয়ব হয়তো ছবিতেই আটকে আছে, তাঁকে মনের গহিন কোনো নিয়ে কত গল্পের জন্ম দিই আমরা! আর আজ যে সত্য গল্পটি বলব, তাতে থাকবে আমার বাবা ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন আর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র অমর সুরস্রষ্ট্রা আলতাফ মাহমুদের কথা। শাওন আর আমি ছাড়াও আরো কয়েকজন ঘুরেফিরে আসবে গল্পে। আসতেই হবে। নইলে শৈশবহীন মানুষের গল্প পূর্ণতা পায় না।
২.
২৫ মার্চ রাতে আমার ঘুম ভাঙানো হলে প্রথমেই দেখেছিলাম আয়নায় প্রতিফলিত দাউ দাউ আগুন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের খুব কাছে চামেলীবাগে ছিল আমাদের ভাড়া বাড়ি। আমি তখন পাঁচ। বাড়িওয়ালার শ্যালক লুলু মামা আমাকে পাঁজাকোলা করে আমাদের বাড়ি থেকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ এদিকটায় রাজারবাগ। কানফাটানো গোলাগুলি আর আগুনের লেলিহান শিখা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে কি না, সেটাই ছিল প্রশ্ন। আমাদের পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য যদি থ্রি নট থ্রি রাইফেল থেকে একটা গুলি করে, তবে শত শত স্টেন গানের গুলি ছুটে আসে রাজারবাগের দিকে। সে এক অবিশ্বাস্য যুদ্ধ। ইউনিফর্ম পরা পুলিশেরা সে রাতে চলে আসতে থাকে আমাদের পাড়ায়। খুব দ্রুত হামলে পড়ে আমাদের পোশাকের আলমারিগুলোয়। আরও দ্রুততার সঙ্গে তারা পাল্টে ফেলে পোশাক। এমনকি কোনো কোনো পুলিশ সদস্য আলমারির তাকে রাখা আম্মার ইস্ত্রি করা শাড়িও পরে ফেলেন লুঙ্গির মতন। সেদিন আমার বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেন অফিসেই আটকা পড়েছিলেন। ফিরেছিলেন তিনদিন পর।
কিন্তু ১০ ডিসেম্বর তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী আর আল বদর সদস্যরা।
তিনি আর ফিরে আসেননি।
এরপরের নয় মাস আমাকে, আমার ভাইদের জীবনকে শৈশবহীন করে দিল।
এরপরের নয় মাস ৩০ লাখ নিহত মানুষের সন্তানদের জীবন শৈশবহীন করে দিল।
৩.
সে সময়ের শিশুরা খেলার মাঠে যাওয়ার বদলে আকাশে বোমারু বিমানের ওড়াওড়ি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বড় কারো হাত ধরে রাস্তায় বের হয়ে মোড়ের দোকানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখলে কথার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া শিখে গিয়েছিল। যেমন, কোনো শিশু চলতিপথে যদি গুনগুন করে গাইত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি, তবে পাকিস্তানি সেনাদের দেখামাত্রই চিৎকার করে গেয়ে উঠত ‘পেয়ারা পাকিস্তান হামারা পেয়ারা পাকিস্তান’, পাকিস্তানিটা চলে গেলেই আবার কণ্ঠে উঠে আসত সোনার বাংলার গান। অর্থাৎ ওই বয়সেই কূটনীতি শিখে গিয়েছিল তারা। পড়ার চাপ নেই, রাতে ব্ল্যাকআউট, রাস্তাঘাটে লোকজন কম, মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দ শিশুদের করে তুলেছিল অন্যরকম। আর সেই অন্যরকম শিশুদের কেউ কেউ একাত্তরে স্বজন হারালো। তাদের হারানো শৈশব এবার হারিয়ে গেল আরো বেশি গাঢ় অন্ধকারে। সেই গল্পই বলব এবার।

৪.
আমরা আশরাফুল হক নিশানের গল্পও শুনতে পারি। প্রায় একই রকম গল্প। তবে, একটু আলাদাও। আমরা যারা বাবা কিংবা মাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি কিংবা পাকিস্তানি সেনা বা রাজাকার-আলবদরদের হাতে নিহত হতে দেখেছি, তারা যত ছোটই থাকি না কেন, স্মৃতিতে বাবা কিংবা মা রয়েই গেছেন। যেমন, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা হোসেন আর তাঁর একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদ। একাত্তরে সুমনের আট বছর বয়স। ওর সামনে থেকেই ওর মাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হানাদারেরা। সুমনের স্মৃতিতে আছে ওর মা।
কিন্তু নিশানের ক্ষেত্রে আমরা কী বলব? নিশানের বাবা ডা. আজহারুল হককে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ওর মা সালমা হক অন্তঃসত্ত্বা। মাঝ নভেম্বরে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরদিনই ডা. হকের লাশ পাওয়া যায় নটরডেম কলেজের উল্টোদিকে কালভার্টের গর্তে। নিশানের জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশে।
একটু আগে বলছিলাম শৈশবহীন মানুষদের কথা। নিশানকে কী বলব? জন্মের পর বাবার ছবিই ওর সম্বল। ও কি শুধু শৈশবহীন, নাকি শৈশব শব্দটিই ওর নামের পাশে একেবারেই যুক্ত হতে পারে না? এই তো সেদিন ফেসবুকে ছবি দিয়ে বাবাকে স্মরণ করেছে নিশান। আর ধক্ করে উঠেছে আমার বুক। একাত্তরে নিশানের মায়ের বয়স ছিল বিশের কোঠায়। স্বাধীন বাংলাদেশে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কী সংগ্রামটাই না করতে হয়েছে তাঁর! টিকে থাকার সংগ্রাম করতে করতেই তাঁকে যোগ দিতে হয়েছে একাত্তরের ঘাতকবিরোধী আন্দোলনে। কখনো শহীদ মিনারে, কখনো জাতীয় স্মৃতিসৌধে, কখনো বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে তাঁকে সোচ্চার হতে হয়েছে।
এ গল্প পৃথিবীর সবচেয়ে ট্র্যাজিক রূপকথাকেও হার মানায়। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের মৎস্যকন্যা শেষপর্যন্ত রূপান্তরিত হয়েছিল ফেনায়। সালমা হক ফেনার মতোই ভেসে আছেন স্বাধীন বাংলাদেশে। কোনো স্বপ্নই তাঁর চোখে নেই।

৫.
ছড়িয়ে যাওয়া গল্পটিকে আবার গুটিয়ে নিয়ে আসি। আবার শাওনে ফিরে যাই। গত বছর কোনো এক সন্ধ্যায় হঠাৎ একটি ফোন পেলাম ওর, ‘জাহীদ ভাই, আমি না গানটা করেছি।’
আমি তখন গাড়িতে। জ্যামে আটকে আছি। তাই আগ্রহবিহীনভাবেই বলি, ‘কোন গানটা।’
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। বাবার গানটা।’
‘খুব ভালো।’ এবারও আমার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল না, যা ওকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
কিন্তু ফোন ছাড়ার পরই আমার মাথায় ঝলক দিয়ে ওঠে শব্দদুটো। ‘বাবার গানটা’ শব্দযুগল আমাকে নিঃস্ব করে দেয়। আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা এই গানটি যে কারণে অমর হয়ে উঠল, তা তো আলতাফ মাহমুদের দেওয়া সুর! সেই গানই করেছে তাঁর মেয়ে শাওন মাহমুদ! আমি অফিসে পৌঁছেই শাওনকে ফোন করি। জেনে নিই বিস্তারিত। তারপর ‘মেয়ের কণ্ঠে বাবার গান’ নামে একটি ফিচার লিখি প্রথম আলোয়।
গানটা শুনি শাওনেরই দেওয়া ফেসবুক লিংকে। ভালো লাগে। অবসকিউরের টিপু ভাই শাওনের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। মেয়ের কণ্ঠে বাবার গান গাওয়ার আয়োজনটার সঙ্গে তাঁর আন্তরিক যুক্ততা আমাকে স্পর্শ করে।
৬.
সেটা জোট সরকারের আমল। একের পর এক মূল্যবোধের সমাধি ঘটছে তখন। নিজামী আর মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়েছে সরকার। ওদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা দেখে আহত হয় আমাদের মায়েরা, আহত হই আমরা। তখনো আমরা বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার হতে পারে।
১৪ ডিসেম্বর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেছি আমরা প্রজন্ম ’৭১-এর পক্ষ থেকে। সেখানে টেলিভিশনের রিপোর্টাররা নানা প্রশ্ন করছে। একটি প্রশ্নের উত্তরে শাওন বলেছিল, ‘ওরা আমাদের মারলে আমরাও ওদের মারব!’ ‘আঘাতের জবাব প্রত্যাঘাত’ কিংবা ‘মারের জবাব মার’ কথাগুলো যেন শাওনের কথায় মূর্ত হয়ে উঠল। তখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে এতটা মনোবল আমাকে বিস্মিত করেছিল। এরপর সে বছরই দু-একটি টকশোতে শাওনের সঙ্গে অংশ নিয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলেছি।

৭.
কি্ন্তু লক্ষ করে দেখলাম, আমাদের সবার শৈশব আমাদের জানা নেই।
এ কারণেই শাওনকে জিজ্ঞেস করলাম ওর শৈশবের কথা।
বলে নেওয়া ভালো, শৈশবহীন আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একটি মিল আছে। আমরা সবাই বছরে একবার কোনোভাবে এক সেট পোশাক বানাতে পারতাম। শৈশবে সবাই খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে, তাই সেই পোশাক খুব দ্রুত আঁটো হয়ে যেতে থাকে। কিন্তু নতুন আরেক সেট পোশাক বানানো বা কেনার মতো সামর্থ্য আসলে গুটিকয় শহীদ পরিবার বাদে কারোরই ছিল না। ফলে আমাদের প্যান্ট যখন গোড়ালির ওপর উঠে যেত, তখনও বন্ধুদের রসিকতা মুখ বুজে সয়ে আমরা স্কুলের ক্লাস করতাম, একই পোশাক পরে স্কুলে আর মেহমানের বাড়িতে যেতাম। এই তো, আমাদের সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ইউনিফর্মের শার্টের রং ছিল হালকা নীল। ফলে, এই শার্ট পরে স্বজনদের বাড়িতে গেলে কেউ বুঝতেই পারত না, স্কুলের পোশাকেই চলে এসেছি।
শাওনের জীবনের কাহিনীই বা ব্যতিক্রমী হবে কী করে?
শাওন পড়ত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। ওর ক্লাসে যারা পড়ত, তাদের সবার বাবার গাড়ি ছিল। ক্লাসের একমাত্র ছাত্রী শাওন, যাকে আসতে হতো রিকশায় করে। ছোটবেলার এই বৈপরীত্য শাওন এখনো ভুলতে পারে না। আর স্কুলের খাতার বিষয়টি? খাতা তো কিনতে হতো স্কুল থেকেই। সে খাতার যে দাম ছিল, তাতে এক ক্লাসের পুরনো খাতার লেখা হয়ে যাওয়া পাতাগুলো মলাটের ভিতরে রেখে সেই খাতা দিয়েই শুরু করত পরের ক্লাসের লেখালেখি। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়া হয়নি অনেকের মতো, পুরনো বই দিয়েই চালাতে হয়েছে পড়াশোনা।
স্কুল জীবনের শুরুতে শাওনের নাম হয়েছিল ক্রাইং বেবি। স্কুলে গেলেই কাঁদত ও। আর স্কুলে যাওয়া শুরু করার প্রথম ৬-৭ মাস বমি করত খুব। এই বমির পেছনের গল্পটি অনেকেই জানে না।
একাত্তরে শাওনের বয়স ছিল তিন বছর। ওর বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তিন বছরের শিশুটির মনে আতঙ্ক ভর করেছিল। ভোরে বা সকালে হঠাৎ উঠলে ওর বমি হতে থাকে। বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে চুপ হয়ে গিয়েছিল শাওন। প্রথম দুই বছর আতঙ্ক ছিল প্রকট। ক্লাসরুমের বাইরে বসে থাকতেন মেজ মামা। তাঁর পা দেখা যেত দরজার বাইরে। তবেই আতঙ্ক কাটত শাওনের। শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন ওর বেড়ে ওঠার ব্যাপারে।
উইকএন্ডে দিনু মামা যখন কোকা-কোলা খাওয়াতেন, তখন সেটা ছিল জীবনে উল্লেখ করার মতো একটি বিষয়। মধুমিতা সিনেমা হলে তিন মাসে একবার সিনেমা দেখার আনন্দও ভোলা যায় না, এ যেন ঈদের আনন্দ এনে দিত মনে।
শাওনের মনে আছে ওর দিদু (নানি) নিজের সময়ের একটা বড় অংশই দিতেন শাওনকে। মা তখন জীবন সংগ্রামে রক্তাক্ত। দিদুই ছিলেন ভরসা। শুক্র আর শনিবার এই দিদু মাজারে মাজারে গিয়ে খুঁজতেন আলতাফ মাহমুদকে। ভাবতেন, কোনো একদিন দেখা পেয়ে যাবেন তাঁর।
৮.
দাদি আশরাফুন্নেসা আমার মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন, ‘কাঁদছ কেন? আমি বিশ্বাস করি সিরাজ বেঁচে আছে। পাকিস্তানের কোনো কারাগারে ওকে রেখে দিয়েছে। ও তো কোনো অন্যায় করেনি। ওকে কেন মেরে ফেলবে?’
মৃত্যুর আগপর্যন্ত দাদি বিশ্বাস করেননি, তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মা, নূরজাহান সিরাজী আটটি সন্তান নিয়ে বিধবা হলেন। এরপর যে সংগ্রাম তিনি শুরু করলেন, তা থেকে জীবনের শেষদিন অবধি রেহাই পাননি। অল্প কটি টাকায় বিশাল সংসার টেনে নিয়ে এগিয়ে চলা, সে এক বিশাল যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ময়দান হাহাকারে ভরা, না পাওয়ার বেদনায় পূর্ণ, হতাশায় ঢাকা। আবার এরই মধ্য দিয়ে যখন কোনো সাফল্যের খবর আসে, তখন হৃদয়ে উৎসবের জন্ম হয়। সেই আনন্দ-বেদনার কাব্যই তিনি লিখেছেন আজীবন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার হতাশা বা ঈর্ষার জায়গাটি কিন্তু অন্যভাবে আমাদের জীবনেও ছিল। রয়্যাল গুলি কিংবা রাস উৎসব নিয়ে আমাদের আক্ষেপ ছিল না সত্যি, কিন্তু যে জীবন পাওয়া উচিত ছিল, সেটা পাইনি বলে কষ্টও ছিল।
বাসের পাদানিতে কোনোমতে পা রেখে কলেজ যাওয়া, একদিন বন্ধুদের শিঙাড়া খাওয়ালে পর পর চারদিন হেঁটে কলেজে যাওয়া, ফুটপাত থেকে প্যান্ট কিনে পাড়ার দর্জিদের দিয়ে ‘ফিটিং’ করিয়ে নেওয়া-কী জীবনই না ছিল আমাদের! আর পঁচাত্তরের পর থেকে দেশ যখন উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করল, তখন আমাদের স্বজনদের আত্মবলিদানের প্রসঙ্গটিই দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে লাগল। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এটা একটা ভরসার জায়গা। এই বিচার আমাদের দুঃখ ভোলাতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু জাতি তাঁর মাটিতেক জন্ম নেওয়া কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে সাজা দিতে পারছে, এটাও কম বড় পাওয়া নয়।
আমরা শৈশব হারানো কতিপয় মানব সন্তান সময়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখেছি। স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হওয়ার পর প্রজন্ম ’৭১-এর সদস্যরা নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।
সবসময় মনে হয়, আমরা কাছাকাছি আছি। রক্তের বন্ধন বলে একটা কথা আছে। আমাদের স্বজনেরা রক্ত দিয়ে আমাদের সবাইকে সেই বন্ধনে আবদ্ধ করে গেলেন। তাই শাওন মাহমুদ, আসিফ মুনীর, শমী কায়সার, নুজহাত চৌধুরী শম্পা, আশরাফুল হক, গোলাম মোর্তজা কিংবা সুমন জাহিদ কিংবা একাত্তরে স্বজন হারানো কেউ একজন যখন পাশে এসে দাঁড়ায়, তখন হৃদয়ের খুব কাছের তন্ত্রীতে বুঝি ঝংকারের শব্দ পাই। সেই ঝংকারই আমাদের সম্পর্ককে গাঢ় করে, নিবিড় করে। আমাদের বাঁচতে শেখায়।

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রা

পিঠা দিয়ে জামাই-বরণ!

করেছে Rodoshee ডিসেম্বর ৮, ২০১৮

সিক্ত হাওয়া দখিনের বারান্দায়। জানালার কোল ঘেঁষে শীতের লুকোচুরি। রোদের জন্য অপেক্ষা! অনেকে রোদকে তোয়াক্কা না করেই আগুন পোহাচ্ছে। আর ওদিকের চুলায় পড়েছে পিঠা তৈরির ধুম। জামাই আসবে! হবে জামাই-বরণ! অনেক অঞ্চলের প্রাণের উৎসব জামাই-বরণ। শীতের সময় আঞ্চলিক মজার মজার পিঠা দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। দুপক্ষের মধুর অপেক্ষা এই উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে-

আগে থেকেই গ্রামীণ মানুষের কাছে পিঠা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পিঠার এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রাম ও শহরের সবখানে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ অন্য ঋতুর চেয়ে শীত ঋতু এলেই যেন খুব বেশি পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। যুগ যুগ ধরে পিঠা উৎসব হয়ে আসছে।

হেমন্ত আসতে না আসতেই বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন। চলে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে গ্রামেগঞ্জে তৈরিও হচ্ছে নানান স্বাদের পিঠা। শীতকালের আমেজে খেজুর গুড় আর রস ছাড়া তো পিঠা তৈরির পূর্ণতা কখনোই উৎকৃষ্ট হয় না। খেজুরের রস দিয়ে ভাপা পিঠা, পুলি, দুধ চিতই, পায়েস যা-ই হোক না কেন শীত ঋতু আর খেজুর গাছ ছাড়া অসম্ভব। শীত ঋতুতে গ্রামে-গঞ্জে খেজুর রস আর শীতের হরেক রকম পিঠা নিয়েই তো হয় উৎসবের আমেজ। বাড়িতে তাদেরই নিজ আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো ও জামাই মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে এসে নতুন কাপড়চোপড় উপহার দেওয়ার যেন হাজার বছরের রীতি। উনুনের পাশে বসে গরম গরম ধোঁয়া বা ভাপ ওঠা ভাপা পিঠা খেজুর গুড় বা গাঢ় খেজুর রসে চুবিয়ে খাওয়ার ষোলোকলা পূর্ণ হয় না শীত ঋতু ছাড়া। শুভ সকালে সারারাত্রির বাসি, ঠান্ডা ভাপা পিঠা খেজুর রসে চুবিয়ে খেতে মন্দ লাগে না।

এলাকাভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামকরণে চিহ্নিত পিঠা বা আলাদা গঠনে নকশাকৃতির পিঠা লক্ষণীয়। গ্রামীণ জনপদের মানুষ অগ্রহায়ণ মাসে সাধারণত নতুন ধান ওঠার পরপরই যেন পিঠা তৈরির আয়োজন শুরু করে। শীত ঋতুতে হরেক রকম পিঠার বাহারি উপস্থাপন এবং আধিক্য হয় বলেই কিশোর-কিশোরীরা মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ততা দেখায়। মামার বাড়ি মধুর হাঁড়ি- এই কথাটি যে যুগে যুগে হয়তো সত্যিই রয়ে যাবে। গ্রামবাংলার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পিঠার অনেক নাম গ্রামের মানুষের দ্বারে এসে হানা দেয় আজও। বিভিন্ন পিঠা উৎসবের প্রস্তুতি গ্রামাঞ্চলের ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিটি ঘরে ঘরেই শুরু হতে দেখা যায়। নানার বাড়িতে কিশোর-কিশোরীরা শীতকালীন ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাবে বলে তাদের যেন দুচোখে ঘুম আসে না। মেয়েজামাই তাদের সন্তানদের সঙ্গেই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার ইচ্ছাটাও পোষণ করে। সে সময় হয় এক নতুন উৎসব।

খেজুরগুড়ের পিঠার জন্য বিখ্যাত যশোর। শীতে প্রতি ঘরে ঘরে ভুর ভুর করে খেজুর গুড়ের ঘ্রাণ। চলতে থাকে জামাই আমন্ত্রণের তোড়জোড়। সাইকেল কিংবা মোটরবাইক নিয়ে ছুটে যান নতুন-পুরোনো জামাইয়ের দাওয়াত দিতে। জামাই আসার আগের দিন থেকে শুরু হয় নানান রকম পিঠা বানানো। তবে জামাইয়েরও কিন্তু খরচ আছে! বড় মাছ, নানান রকম মিষ্টান্ন নিয়ে জামাই চলে আসে। শুরু হয় জামাই-বরণ।

মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য দেখা না গেলেও জামাই এলে কিন্তু এখনো এই পিঠা তৈরি হয়। বাজারে মাছের মেলা বসে। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হালকা মসলা দিয়ে ভেজে দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারকেলের পিঠা পরিবেশন না করলে যেন লজ্জায় মাথা কাটা যায়। জানা যায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে এবং কমলগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেত। তম্নধ্যে চুঙ্গাবাড়ীও একসময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢলুবাঁশের জন্য। পাহাড়ে বাঁশ নেই বলে বাজারে এই ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না কারণ ঢলুবাঁশে একধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সেদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে হয় জামাই-বরণ ও মাছের মেলা। মেলার নাম কুড়িগাই, এ মেলার পেছনে রয়েছে ৮০০ বছরের ইতিহাস। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর পালন করা হয় মেলা। এ মেলা মাছে নতুন মেয়ের জামাইকে বরণ করে নেওয়া হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ৫০টি গ্রামে উৎসবের আমের বিরাজ করে। আর পিঠা খাওয়া তো অবিচ্ছেদ্য। মেলায় মিষ্টি, খেলনা, মিঠাই-মন্ডা, ফিরনি-বাতাসা, বিন্নি খই ছাড়াও সার্কাস, পুতুলনাচ, নাগরদোলাসহ আরও অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্যান্যঘরকন্যা

তুমি কি পারফেক্ট গৃহিণী?

করেছে Rodoshee নভেম্বর ২৭, ২০১৮

রোদসী ডেস্ক : 
অনেকের ধারণা, গৃহিণী হওয়া অনেক সহজ কাজ। যে কেউই ভালো গৃহিণী হতে পারেন। কিন্তু এটি আসলে ভুল ধারণা। একজন গৃহিণীকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়, অনেক কিছু একসঙ্গেই সামাল দিতে হয়। একজন সুগৃহিণী সব সময় চাইবেন সঠিকভাবে তার পরিবার ও ঘর সামলাতে। কিন্তু নানা ঝামেলার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব সময় সব কাজ করা ঠিকমতো হয়ে ওঠে না। যদি পারফেক্ট গৃহিণী হওয়ার কোনো ফর্মুলা থাকত তাহলে দারুণ হতো, তাই না?

মনস্থির করো
‘সবকিছুর আগে পরিবার, তারপর অন্য কাজ’-এই কথাটি মনে গেঁথে নাও। তারপর তোমার সারাদিনের পরিকল্পনাগুলো করো।

লিস্ট তৈরি করো
প্রতিদিনকার কাজের লিস্ট তৈরি করে নাও। রান্না করা, পরিষ্কার করা, কেনাকাটা এমনকি বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়াসহ সব কাজের একটি লিস্ট তৈরি করে নাও। তোমার নতুন বিয়ে হয়ে থাকলে, কী কী কাজ করতে হবে এবং কী কী কাজ তুমি শিখতে আগ্রহী, তার একটি লিস্ট তৈরি করে নিতে পারো। এটি তোমার কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজকে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করবে। কাজের সময় নির্দিষ্ট করে নিতে পারো। যেমন তুমি ঠিক করে রাখতে পারো ১৫ মিনিটে শোবার ঘরটি গোছাবে। এতে কাজ করা সহজ হবে, সঙ্গে সময় ম্যানেজ করা হয়ে যাবে।
ঘর গোছানো
ঘর প্রতিনিয়ত অগোছালো হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি ঘরে বাচ্চা থাকে, তবে তো কোনো কথাই নেই! বাচ্চা হোক বড় ঘর অনেক বেশি অগোছালো থাকে। তোমার ঘরে কোন জিনিসটি কোথায় রাখবে, তা আগে পরিকল্পনা করে রাখো। এ ছাড়া ঘর অগোছালো হলে দ্রুত গোছানোর চেষ্টা করো। পরে করব বলে রেখে দিলে দেখা যাবে ঘরটি আর গোছানো হয়ে উঠছে না।
ঘর পরিষ্কার রাখা
ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখো। একজন মানুষের পক্ষে একা ঘর পরিষ্কার করা কঠিন। তাই ঘর পরিষ্কার করতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নাও। বয়স অনুযায়ী ঘরের সদস্যদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দাও। ঘর পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে ঘর সাজানোর দিকে লক্ষ রাখবে। তবে খেয়াল রাখবে ঘর যেন অতিরিক্ত সাজানো না হয়ে যায়।

নিজেকে সময় দাও
সংসারের কাজ করতে করতে নিজের কথা ভুলে গেলে চলবে না। একজন পারফেক্ট গৃহিণী ঘরে সব কাজ করে নিজের জন্য কিছু সময় বের করে রাখেন। সুতরাং দিনে কিছুটা সময় নিজেকে দাও। ত্বকের যত্ন করো বা চুলের যত্ন। সম্ভব হলে পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করে আসতে পারো। মনে রাখবে, তুমি যদি সুস্থ-সুন্দর থাকো, তবে তোমার পরিবারও সুস্থ-সুন্দর থাকবে। তারা তোমার ওপর নির্ভরশীল।
ইতিবাচক থাকো
সব সময় ইতিবাচক মত পোষণ করো। কারণ, তোমার থেকে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। তাই তোমাকে নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হবে।
মজার কিছু রান্না
কথিত আছে, ছেলেদের হৃদয়ের রাস্তা পেট দিয়ে যায়। এই কথাটি তোমার বর এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য। নতুন কিছু মজাদার খাবারের রেসিপি শিখে নাও চটজলদি। এই খাবারগুলো তৈরি করে চমকে দাও প্রিয় মানুষদের।
মনে রাখবে, একজন পারফেক্ট গৃহিণী হওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আর মমতা।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গরূপ ও ফ্যাশন

রূপচর্চায় কয়লার ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’!

করেছে Rodoshee নভেম্বর ৫, ২০১৮

রোদসী ডেস্ক : যদি ভাবো, নিজে জ্বলে পুড়ে বাড়িতে বিদ্যুতের যোগান দিয়েই কয়লার গুণের খতিয়ান খতম, তা হলে কিন্তু বেজায় ভুল ভাবছো। রূপ-লাবণ্য ধরে রাখতেও কয়লার জুড়ি মেলা ভার।

কোনও এক সময় রূপচর্চার বাজারে কয়লার হেব্বি দর ছিল। মাঝের সময়ে এটা-ওটা-সেটার দাপটে কয়লা ব্যাক বেঞ্চার হয়ে গেলেও নিজ ক্যারিশমাতেই আবার সে সামনের সারিতে চলে এসেছে। এক গাদা কেমিক্যাল প্রোডাক্টের মিথ্যে দাপটে যদি তোমার ত্বক পালাবার পথ খোঁজে, তা হলে চোখ বন্ধ করে কয়লার শরণাপন্ন হও। এক মাস টানা চারকোল দেওয়া প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখো, আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চমকে যেতে বাধ্য।

 

নিজের ওজনের থেকে ১০০ থেকে ২০০ গুণ বেশি ওজনের ময়লা ত্বক থেকে শোষণ করতে পারে এক একটা চারকোল কণা। গায়ের দুর্গন্ধ তাড়াতেও ভারী কার্যকরী এটি। ব্রণের অব্যর্থ দাওয়াইও। সময় তো আটকানো যায় না, কিন্তু চারকোলের গুণে চামড়ায বয়সের ছাপ পড়ে না। কয়লার কণা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের কোষের ক্ষতি আটকে দেয়। শরীর থেকে টক্সিন এবং ক্ষতিকর রাসয়ানিক পদার্থ দূর করে। ডাক্তার এবং রূপ বিশেষজ্ঞরা তাই আজকাল প্রায়শই এমন ক্রিম, ফেস ওয়াশ বা ফেস প্যাক ব্যবহার করতে বলেন, যাতে চারকোল থাকে। চারকোল চামড়ার কুঁচকে যাওয়া আটকে দেয়। বলিরেখা পড়তে দেয় না।

এই মুহূর্তে যে বিভিন্ন প্রোডাক্টে কয়লার দাপুটে উপস্থিতি, তার একটা খুদে তালিকা :

ফেসওয়াশ : এখন একটার পর একটা ফেসওয়াশে শুধুই চারকোলের ছড়াছড়ি। সব ধরনের ত্বকে অ্যাকনে আর পিগমেন্টেশন আটকাতে সবার পছন্দের লিস্টে এখন এক নম্বরে কয়লার কণা মেশানো ফেসওয়াশই।

টুথপেস্ট : টুথপেস্টে চারকোল থাকলে তোমার মাড়ি নিয়ে নিশ্চিত থাকো। দূর হবে দাঁতের হলদেটে ছাপও।

সাবান : স্নানের সময় নিয়মিত চারকোল দেওয়া সাবান ব্যবহার করো। ত্বকের বহু সমস্যা, র‌্যাশ বিনা আয়াসেই চলে যাবে। এমন কী দু্র্গন্ধের জন্য আর কারও নাক সিঁটকানিও সহ্য করতে হবে না।

তা হলে আর দেরি কেন? জীবনে নিয়ে এসো কয়লার ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’। এবং হয়ে উঠো আরও সুন্দর।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রা

চল্লিশ পার করেছি তো

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৯, ২০১৮

চল্লিশ চালসে কি না তা নিয়ে গান, গল্প, কথকতা থাকলেও এ বয়স অভিজ্ঞতার, সফলতার ও পূর্ণাঙ্গতার। জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়ে চল্লিশে তোমার অভিজ্ঞতার ঝুলি পরিপূর্ণ। চলার পথে আছে তোমার অনেক। তবে জেনে রেখো চল্লিশের বন্ধুরা, এ বয়সেই হয় নতুন শুরু। নানা সফলতা, ব্যর্থতার স্মৃতিও মনে উঁকি দিয়ে যায়। তবে যদি চল্লিশ তোমায় ভাবায় বয়স নিয়ে জেনে রেখো বন্ধু, বলতে না পারা অনেক কথা, থেকে যাওয়া সব স্বপ্নরা ডানা মেলতে পারে এ বয়সেই। সম্প্রপ্রতি চল্লিশে পা দেওয়া টাইটানিক খ্যাত অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট জানিয়েছেন, বয়সটা তার কাছে কোনো বিষয়ই নয়। বরং এখন থেকে আরও কাজে এনার্জি পাবেন তিনি।’ নিকোল কিডম্যানের কাছে বয়সটা শুধুই একটা সংখ্যা। এ ছাড়া ম্যাডোনা, ঐশ্বরিয়া রাই, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কিংবা সালমা হায়েকের মতো তারকারা এ বয়সেই বিশ্ব মাতাচ্ছেন। লিখেছেন লিহান লিমা।

কী বিষাদে ভুগছ তুমি?
এতটা বসন্ত পার করেছে, কেটে গিয়েছে কত বর্ষা, আছে বিষাদ, চাপা কষ্ট, ক্লান্তি, ক্ষোভ। এ সবকিছু মোকাবেলা করে সুখের সন্ধান পাওয়া কি খুব কঠিন? পারিবারিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক কারণে এ বয়সে তুমি হতে পারো বিষাদগ্রস্ত, ভুগতে পারো হতাশা কিংবা বিষণ্নতায়। হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী ড্যান গিলবার্ট বলেন, ‘সুখ তোমাকেই সংশ্লেষণ করতে হবে।’ মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সুখ মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। এটি অনেকাংশেই মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অনুভূতি, যা জেনেটিক্যালি প্রভাবিত এবং জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যামি মেরিনের মতে, ‘একাকী সময় একাকিত্ব আনে না, নিজেকে জানতে সহায়তা করে। চাইলেই ইতিবাচকভাবে বাস্তবতা গ্রহণ করে তুমি হতে পারো সুখী।’

হাসো প্রাণ খুলে
চল্লিশের প্রিয় বন্ধু। জীবনের এই পর্যায়ে এসে তোমার আছে অনেক সাফল্য-ব্যর্থতার গল্প। উপভোগেরও আছে অনেক কিছু। হাসিতে জীবনের এই পর্যায়কে অন্য রকমভাবে উপভোগ করতে পারো তুমি। গবেষকেরা হাসির ১৮ রকম উপলক্ষ খুঁজে বের করেছেন। তাদের কাছে এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে স্বতঃস্ফ‚র্ত আনন্দের হাসি ও নকল হাসি। নকল হাসিকে গবেষকেরা নাম দিয়েছেন বিমানবালা হাসি বা সৌজন্যের হাসি। তুমি এখন অনেক কথাই মুখ ফুটে বলতে পারো। লোক দেখানো নয়, প্রাণখোলা হাসি এ বয়সে তোমাকে রাখবে আরও প্রাণবন্ত। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার অধিবাসী রস মেইনের অর্ধেক মুখ বেলস পালসি নামক ব্যাধির কারণে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল। অর্ধেক মুখে হাসতে পারতেন বলে তিনি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। মধ্য আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানী গবেষণায় দেখেন, হাসি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, মনকে প্রফুল্ল ও সদা সতেজ রাখে। ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এ ছাড়া দুশ্চিন্তা ও একাকিত্ব কমিয়ে শরীরকে দেয় প্রশান্তি।

বয়স কি বলছে কথা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স যত বাড়তে থাকে, হৃদরোগের আশঙ্কাও তত বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি হয় চল্লিশ বছর বয়সে এসে বা তার পরে। নারীদের মধ্যে মেনোপজ বন্ধের পর হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ নারীরই মেনোপজ ৪০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। এই সময় হরমোনের অনেক পরিবর্তন হয়। মেনোপজকালীন ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। যদি ১২ মাস একটানা পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তবে এটি মেনোপজের প্রাথমিক কাল হতে পারে। হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেনোপজের সময় ঘড়ি শুরু হওয়ার সময় শরীর জ্বালাপোড়া করা, ঘুমের অসুবিধা, অনিদ্রা, অনিয়মিত পিরিয়ড, ভ্যাজাইনায় অস্বস্তি, হাড়ের ক্ষয়, হৃদরোগের ঝুঁকি, মাথাব্যথা, চুল পড়া মেজাজের ওঠানামার মতো বিষয়গুলো দেখা যায়। বায়োলজিক্যাল ক্লর্ক তার ঘণ্টাধ্বনি বাজালেও চল্লিশেই তুমি থাকতে পারো সুস্থ ও প্রাণবন্ত। বাগান করা, গান শোনা, ডায়েরি লেখা কিংবা পছন্দের কোনো প্রাণী পোষা তোমায় দেবে মানসিক স্বস্তি। চাইলেই বেড়িয়ে আসতে পারো পছন্দের কোনো জায়গায়। চল্লিশে জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে নয়, যেমনটা তুমি ভাবছ, যেভাবে তুমি জীবন কাটিয়ে এসেছ, আয়নায় নিজেকে তুমি যেভাবে দেখতে চাও সেভাবেই বয়সের সৌন্দর্যকে উপভোগ করো।

ঝালিয়ে নাও রোমাঞ্চ
বয়সের এ পর্যায়ে প্রেম, ভালোবাসা, দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়। অথচ এই বয়সে এসেই সম্পর্ককে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্যান্য বিষয়ের মতো গুরুত্ব পাক যৌনতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঙ্গীর সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত থাকার একটি অন্যতম উপায় হলো সক্রিয় যৌনজীবন। এ সময় মস্তিষ্ক নিঃসরণ করে অক্সিটোনিন যা সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করে। এটি অবশ্যই ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। এ ছাড়া প্রত্যেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, নিয়মিত যৌন অভ্যাসের কারণে ঘুম ভালো হয়, ক্লান্তি দূর হয়, মন ভালো থাকে, যা সহজে বার্ধক্য নিয়ে আসতে পারে না। তবে মেনোপজের কারণে এ বয়সে হরমোনাল সমস্যা দেখা যাওয়ায় নারীরা যৌন সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত থাকে। সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এমি মুইজা বলেন, সপ্তাহে একবার যৌনমিলন দম্পতির মধ্যে ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট। কানাডায় ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে উঠে এসেছে, তারা অত্যন্ত সক্রিয় যৌন জীবনযাপন করেন এবং একই সঙ্গে তা উপভোগও করেন পূর্ণমাত্রায়। শতকরা ৬৩ ভাগের মতে, তারা যৌনজীবনে অভিনবত্ব আনার ব্যাপারেও যথেষ্ট এগিয়ে এবং নিজেদের ‘অ্যাডভেঞ্চারাস’ বলেও দাবি করেছেন তারা। এ ছাড়া দারুণ কোনো রোমান্টিক ডেট, ক্যান্ডাল লাইট ডিনার কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া তোমাকে রাখবে ফুরফুরে, প্রাণবন্ত।

চল্লিশের মুখশ্রী
রুটিনের ফাঁদে নিজেকে আটকে ফেলা নয়। চাকরি, দাম্পত্য, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, জীবনযাপন, হিসাব কষে দেখো এ বয়সে তুমি ভালো আছ কি না। এ বয়সে তুমি মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। পিছুটানগুলোকে মোকাবেলা করতে জানো। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের ঝুলিও তোমার অনেক। নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুবর্ণ মুহূর্ত এখন। তাই হাসি-আনন্দে জীবন সাজানোর কোনো সুযোগই হাতছাড়া করা উচিত নয়। এত দিনে তোমার রয়েছে অনেক ত্যাগ, এবার একটু নিজেকে দাও সময়। ব্যয় করো নিজের জন্য। ভালো থাকো তুমি নিজের জন্য। বেছে নাও তেমন জীবন, যা তুমি চাও। উপভোগ করো তোমার আজকের অবস্থানকে। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করো। পূরণ না হওয়া অনেক শখকে জীবনে জায়গা করে দিতে পারো নতুন করে। সেটি হোক নাচ, গান, স্কেটিং, ছবি আঁকা, সাইক্লিং কিংবা অন্য কোনো ভালো লাগার জায়গা।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রা

পঁচিশে তুমি

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৯, ২০১৮

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাট চুকানো হয়ে গেছে। সময় এখন জীবনের নতুন আঙিনায় প্রবেশের। এই সময়েই পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে ‘এখন অন্তত বিয়েটা করে ফেল’ কথাটি এটি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ তুমি। কখনো বিরক্তি, কখনো চাপ আবার কখনো ভুগছ সিদ্ধান্তহীনতায়। কী করা উচিত, কী উচিত নয় তা নিয়ে তোমার নিজের মধ্যেই যেন চলছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। পঁচিশের বিড়ম্বনা কি তোমায় কোণঠাসা করে ফেলছে? তবে জেনে রেখো, আত্মবিশ্বাস এবং সাহস থাকলে কখনোই হারবে না তুমি। লিখেছেন লিহান লিমা।

ক্যারিয়ার না বিয়ে?
সদ্য পড়াশোনা শেষ করে তুমি যখন নিজের স্বপ্নকে বাস্তবের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছ, ঠিক তখনই তোমার চারপাশে সামাজিক নিয়মকানুনের বেড়াজাল। একা আর কত পথ চলবে, এমন প্রশ্ন তোমাকে বিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত। জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার জন্য পরিবারের কাছ থেকে আসা চাপ তোমাকে যেন গোলকধাঁধার মধ্যে ফেলছে। এই সময় বিয়ে না করলে কি খুব বেশি দেরি হবে, নাকি বিয়ে করলে ক্যারিয়ার শেষ হবে এমন দ্ব›দ্ব তোমার মনে জাগাটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে নিজের বিশ্বাসকে ধরে রাখো। গুরুত্ব দাও তোমার এত দিনের স্বপ্ন ও পরিশ্রমকে। ক্যারিয়ার নাকি বিয়ে। যদি দুটির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হয়, তবে নিজের চাওয়ার ক্ষেত্রে কখনোই আপস করো না যেন। তুমি তোমার জীবনকে যেভাবে সাজাতে চাও, সেটিই বেছে নাও। সেটি কী হবে সেই সিদ্ধান্ত শুধুই তোমার। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘মনে রেখো, আজকের দিনটিই তোমার ভবিষ্যৎ, যা নিয়ে তুমি গতকাল চিন্তিত ছিলে।’

সমন্বয় দুটোতেই
এ বয়সে সাজানো-গোছানো সংসারের স্বপ্ন, ভালো জীবনসঙ্গীর স্বপ্ন, নতুন একটি সম্পর্ককে উপভোগের স্বপ্ন, ছোট্ট একটি নীড়ের স্বপ্ন তরুণী মন ছুঁয়ে যায়। একই সঙ্গে থাকে নিজের ক্যারিয়ারকে যোগ্যতার শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা। এ ক্ষেত্রে যদি মনোবল হয় অটুট, লক্ষ্যে থাকে স্থির, তবে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোটা কঠিন নয়। যদি তোমার সিদ্ধান্ত হয় বিয়ে তবে কোনো পরিস্থিতিকে বাধা-বিবেচনা করে পিছিয়ে না এসে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে এগিয়ে যাও। এ ক্ষেত্রে যদি তুমি চাকরিজীবী হও তবে বিয়ের আগেই নতুন পরিবারকে তোমার কর্মপরিবেশের কথা খুলে বল। তারাও জানবে তাদের পরিবারের নতুন সদস্যটি একজন চাকরিজীবী ও স্বাবলম্বী। তারা কখনোই তোমাকে গৃহিণী হিসেবে দেখবে না। বলিউডে কারিনা কাপুর, সোনম কাপুর, ঐশ্বরিয়া রাই ও আনুশকা শর্মার মতো নায়িকারা ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর তোমার ক্যারিয়ার থেমে থাকবে, নাকি এগিয়ে যাবে তা তুমিই নির্ধারণ করবে। যদি তুমি নিজের অর্জনকে সম্মান করো তবে অন্যরাও তা করতে বাধ্য। তবে যদি বিয়ের পর ক্যারিয়ার শুরু করার চিন্তা থাকে ভেবে দেখো প্রতিটি বাধা সম্পর্কে। সংসারজীবনে প্রবেশের পর তুমি নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শক্ত যুক্তি দাঁড় করাও। যাকে তুমি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছ, সে নারীর অধিকারকে সম্মান করে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নাও। যদি আত্মবিশ্বাসী হও তবে তুমি অবশ্যই পারবে। নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কখনোই আপস করতে নেই, এ ক্ষেত্রে নিজের প্রত্যয়ী অবস্থানকে জিইয়ে রাখতে হবে।

একা থাকার সিদ্ধান্ত
‘চোখে চোখ আজ চাহিতে পার না;
হাতে রুলি, পায়ে মল,
মাথার ঘোমটা ছুড়ে ফেল নারী,
ভেঙে ফেল ও শিকল।
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু
ওড়াও সে আবরণ,
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন
যেথা যত আবরণ।’
পড়াশোনা শেষ, চাকরিতে প্রবেশের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবে তাও নয়, আপাতত একাই পথ চলতে চাও তুমি। কিন্তু পরিবারকে বোঝাবে কী করে। কিংবা ‘বিয়ে করব না’ স্থির করলেও মনের অজান্তেই আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। এই সমাজে নারীর একা চলার পথে বাধা অনেক। কিন্তু সব বাধা মোকাবেলা করে নারীর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিত্রও কম নয়। মাতৃত্বের মতোই বিয়ে জীবনের অন্যতম একটি পছন্দ, অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অবিবাহিত ব্যক্তিদের নিজের ওপর আস্থা বেশি থাকে ও বিবাহিতদের চেয়ে তাদের মানসিক সুযোগও বেশি। অবিবাহিতরা সাধারণত বেশি ফিট হয় ও তারা ব্যক্তিসত্তার অগ্রগতিতেও বেশি সক্ষম। এ ক্ষেত্রে একা থাকার সিদ্ধান্ত মানেই কিন্তু একা চলা নয়। ২০১৫ সালে সমাজবিজ্ঞানী নাতালিয়া সারকিসিয়ান ও নওমি গার্স্টেলের বিবাহিত ও অবিবাহিতদের ওপর চালানো গবেষণায় উঠে এসেছে, অবিবাহিতদের সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী ও সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে সহযোগিতা দেওয়া ও পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহজলভ্য। তাই যদি তুমি আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকো, তবে নিজের মতের প্রতি হও শ্রদ্ধাশীল।

সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া
তোমার দেরিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পরিবারের ও কাছের মানুষদের ভালো লাগুক আর না-ই লাগুগ, নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখো। নিজের লক্ষ্যে, পরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার ভাবনা তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করো। সমাজের নিয়মনীতি, পরিবারের চাপ, বন্ধুবান্ধবের বিয়ে কিংবা বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে হুটহাট বিয়ের সিদ্ধান্ত নয়, নিজের সাফল্যকে বাস্তবের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে কাজ করাটাই হবে বুদ্ধিমানের। বিয়ের সিদ্ধান্ত হোক তখনই যখন তুমি মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত। উপভোগ করো সাফল্যের পথে নিজের পথচলাকে। পরিবার যাতে তোমাকে বোঝা না ভাবে সে জন্য নিজেকে যোগ্য ও স্বাবলম্বী করে তোলো। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্সের মতে, ‘ব্যক্তিজীবনে আমার পছন্দই চ‚ড়ান্ত। আমার পছন্দের বিপরীতে যা-ই হোক তা আমি কখনোই চাই না। এমন কিছু বিরক্তিকর কারণ আমরা সবাই স্বাধীন।’

মানসিক প্রস্তুতি?
বিয়ে, ক্যারিয়ার কিংবা একা পথচলা সিদ্ধান্ত যা-ই হোক প্রতিটি মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় থাকুক মানসিক প্রস্তুতি। মানসিক চাপ মোকাবেলার অন্যতম উপায় আত্মবিশ্বাস ও সাহস। এটি যে কোনো বাধা মোকাবেলা করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান তোমাকে দেবে স্বস্তি। প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় তোমাকে রাখবে উৎফুল্ল। তাই এখনো বিয়ে করছ না কেন, বয়স বেড়ে যাচ্ছে, কেন বাচ্চা নিচ্ছ না এ ধরনের প্রশ্ন কিংবা মন্তব্যে ঠান্ডা মাথায় দিতে হবে উত্তর। যত কাছের মানুষই হোক, যেভাবেই নিক না কেন উত্তরে যা সত্য তাই বলা উচিত। বিব্রত কিংবা ভেঙে পড়া নয়, মানসিকভাবে দৃঢ় থেকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। প্রশ্নকর্তা বা মন্তব্যকারীকে বুঝিয়ে দাও বিষয়গুলো তোমার একান্তই ব্যক্তিগত। কে কী ভাবল, কী মনে করল তা নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও পরিস্থিতি সামলে নেওয়াটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রা

বয়স যখন উনিশ-কুড়ি

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৯, ২০১৮

এ বয়স প্রতিযোগিতার। হার না মানার, নতুন কিছু জানার। অনাবিল স্বাধীনতা উপভোগের। চারপাশে বর্ণিল আলোর হাতছানি যেন মেলে ধরে রংধনুর ওই নীলাকাশ। কখনো এ বয়সের রং হার মানায় রংধনুর সাত রংকেও। ফ্যাশনে, তারুণ্যে, প্রতিবাদে, ঝড়ে এ বয়স হয়ে ওঠে অনন্য। এ বয়স মেলে ধরতে জানে নিজের সৌন্দর্য। এ বয়সেই আসে প্রথম শারীরিক অনুভূতি, প্রথম প্রেম, প্রথম স্বাধীনতা, প্রথম বাঁধভাঙা উচ্ছাস! লিখেছেন- লিহান লিমা।

বাঁধভাঙা উচ্ছাস
বিদেশে এই বয়সীরা পায় প্রথম একা থাকার স্বাধীনতা, বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে পড়াশোনার তাগিদে এই বয়সীরা বাড়ি ছাড়ে। একা থাকার স্বাধীনতা দ্বার খুলে দেয় আড্ডা-মাস্তি আর উল্লাসের। ইচ্ছে-ঘুড়ির নাটাইতে লাগাম টানা ভার। এ সময় যেন লাল, নীল অনেক স্বপ্নেরা ভর করে। যদিও সময়টা কলেজের পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত আঙিনায় প্রবেশের। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার প্রথম পাঠ নেওয়ার। নিজের ইচ্ছেগুলো নিয়ে থাকে অনেক স্বপ্ন, কখনো তা মেলে ধরা যায়, আবার কখনো তা ভেঙে যায়। তবে হতাশা নয়, মনোবল আর নিজের ভালো লাগার বিষয়কে প্রাধান্য দিলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। স্বপ্ন দেখানোর মানুষ এ পি জে আবদুল কালাম বলতেন, ‘স্বপ্ন সত্যি করার আগে স্বপ্ন দেখতে হবে। ওটা স্বপ্ন নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।’

নয় শুধু পাগলামি
এ বয়স যতটা ভুলের ঠিক, ততটাই কিশোর বয়সের পাগলামিগুলোকে সামলে নেওয়ার। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (ওএনএস) অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান, ধূমপান, সেক্স ও স্মার্টফোনে আসক্তি বিবেচনা করে ২০০০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে দেখেছে, আজকালকার ১৮-১৯ বছর বয়সীরা আগের তুলনায় অনেক সচেতন ও বিচক্ষণ প্রজন্ম। তারা দেখে, এসবে সময় দেওয়ার তুলনায় এ বয়সীরা এখন মনোযোগ দিচ্ছে শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের দিকে। এই বয়সে চাইলে ভালো লাগার দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তুমি নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার লক্ষ্যে এগিয়ে থাকতে পারো। সেটি হতে পারে ফটোগ্রাফি, বিদেশি ভাষা শেখা, থিয়েটার, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ, ভলেন্টিয়ারি কিংবা ভালো লাগার জায়গাটায় আত্মনিয়োগ।

প্রথম প্রেম
এ বয়সেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। প্রথম প্রেম কিংবা ভালো লাগা, সবকিছুই যেন হয় রঙিন। অনলাইনে পরিচয় হওয়া বন্ধুটি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দেখাতেই ভালো লাগার মানুষটি পরিবার, বন্ধু ও এত দিন পাশে থাকা মানুষগুলোর চেয়ে হয়ে ওঠে সবচেয়ে আপন। নিঃসন্দেহে প্রেমের সম্পর্ক বড়ই মধুর। প্রথম প্রেম এক অজানা ভালো লাগায় মোহাবিষ্ট থাকে। মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের মতে, ‘প্রেম হলো একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোনো যৌন-আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাউকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তির প্রতি একই সঙ্গে শক্তিশালী মানসিক এবং যৌন আকর্ষণ কাজ করে।’ দার্শনিক বার্নার্ড শ প্রেমকে দেখেছেন ধ্বংসকারী উপাদান হিসেবে। তার মতে, প্রেম হলো সিগারেটের মতো, যার শুরু আগুন দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে। রোমাঞ্চের আনাচে-কানাচে বাস্তবতাকে শত্রু ভাবাটা দোষের কিছু কি! আবেগের জায়গা থেকে প্রিয় মানুষটির ভেতরটাও সন্ধান করার সময় মেলে না। কিন্তু জানো কী, সঙ্গী নির্বাচনে ভুল হতেই পারে। এই সত্যিটাকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকলে কখনোই ঠকবে না তুমি। নিজেকে প্রশ্ন করো, সঙ্গীর হাত ধরে তুমি কি নিরাপত্তা, নির্ভরতা আর ভালোবাসার স্পর্শ খুঁজে পাও? সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাস দিন শেষে যেন তোমার অশ্রুজলের কারণ না হয়। আবার একতরফা প্রেমে বাড়ে কষ্ট, অনিশ্চয়তা আর হতাশা। ভুল মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেওয়ার অভ্যেস পরিহার করে বাস্তবতাকে মেনে নিলেই মিলবে কষ্ট থেকে মুক্তি।

প্রথম যৌনতা
ভারতের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এক লাখ নারীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সে কিশোরীরা প্রথম যৌন সম্পর্ক করে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, প্রিয় মানুষের প্রতি দুর্বলতা, যৌনতা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে সহজেই যৌন সম্পর্কে প্রভাবিত হতে পারো তুমিও। ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বে সব প্রেমের উৎস হচ্ছে যৌনতা। সফোক্লিসের ইডিপাস রেক্স থেকে তিনি সৃষ্টি করেন তার মতবাদ ইডিপাস কমপ্লেক্স। যেখানে মাতার প্রতি শিশুপুত্রের দৈহিক আসক্তি ও পিতার প্রতি শিশুপুত্রের ঈর্ষাবোধ দেখানো হয়েছে। ইলেকট্রা কমপ্লেক্সে তিনি দেখান কন্যাসন্তানের প্রতি পিতার থাকা একধরনের অবচেতন যৌন কামনা। কালের প্রবাহে এই তত্ত্ব বিতর্কিত ও এর বিপক্ষে শক্ত যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ, ফ্রয়েড যৌনতাকে আশ্রয় করে তত্ত¡ বানিয়েছেন, কিন্তু এখনো এই মতবাদের প্রভাব কম নয় যাদের কাছে প্রেম মানেই শরীর বা যৌনতা। প্রাচীন রোমানদের কাছে আবেগ মানেই প্রেম বা যৌনতা। ১৯ শতক থেকেই মুক্ত ভালোবাসা বা ফ্রি লাভ শব্দটি একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এটি বিয়ে ও সন্তানের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। উন্মক্ত যৌনতা শব্দটি মুক্ত ভালোবাসার ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়। জার্নাল অব সেক্স রিসার্চের গবেষকেরা বলছেন, নারীরা প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে অবহেলা করে থাকে, অন্যদিকে যৌন সম্পর্কের জন্য সঙ্গী খুঁজতে ভালোবাসার অভিনয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ করে। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত যৌন শিক্ষার যথেষ্ট অভাব থাকায় পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাময়িক আকর্ষণ কিংবা প্রবল আবেগে স্থিরতা ধরে রাখা ভার। তবে যে কোনো সিদ্ধান্তই যেন হয় ভেবেচিন্তে। ঝোঁক কিংবা আবেগের বশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তোমার ভবিষ্যৎকে বাধাগ্রস্ত করবে কি না, তোমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা একটু ভেবে দেখলেই সঠিক পথ বেছে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। নিজেকে জানো এবং বাছাই করো, ঠিক কিংবা ভুল তোমার ওপরই নির্ভর করছে। তুমিই জানো তুমি কী করছ এবং তোমার জন্য কোনটা সঠিক।

সামাজিক মাধ্যমে আসক্তি

লাইক, কমেন্ট, লাভ রিঅ্যাক্ট পেতে কার না ভালো লাগে। ঘোরা, আড্ডা কিংবা খাওয়া, ফেসবুকে ছবি আপলোড না করলে যেন সবকিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিংবা ফেসবুক ছাড়া যোগাযোগ, ভাবা বড় দায়। অস্ট্রিয়ার মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা সাজিয়াগ্লো ও টোবিয়াস গ্রেটামেয়ার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিয়ে চালানো জরিপে দেখা গেছে, ফেসবুক মানুষকে একা করে দেয়। ব্যবহারকারীদের মন-মেজাজ খারাপসহ তারা একাকিত্ব, পরশ্রীকাতরতা ও অতৃপ্তিতে ভোগে। ভাবো, ফ্রেন্ড লিস্টের কেউ হয়তো ঘুরতে গেল, কিংবা নতুন পোশাক পরে ছবি, কেউ হয়তো অনেক শপিং করল। এসব দেখে একটু কি আফসোস হয় না, ইসসস, যদি আমিও পারতাম। এতটুকু আফসোস থেকেই পরবর্তী সময়ে তৈরি হতে পারে হীনমন্যতা। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জিন টুয়েনজ ও তার সহকর্মীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, সব ধরনের পরিবেশ থেকে বেড়ে ওঠা তরুণদের মধ্যেই বেড়েছে হতাশা, আত্মহত্যার চেষ্টা ও আত্মহত্যার প্রবণতা। সব সম্ভাব্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ স্মার্টফোন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের শেষের দিকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় আর ঠিক এ সময়েই তরুণদের মধ্যে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তাই বলে কি স্মার্টফোন চালানো ছেড়ে দেবে? অবশ্যই না। তবে তা যেন তোমার আসক্তির কারণ না হয়।

বিখ্যাতরাও ব্যতিক্রম নয়
মূল্যবোধ, সচেতনতা, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, স্বাধীনচেতা মনোভাব, আত্মনির্ভরশীলতার মতো ইতিবাচক বিষয়গুলো আসে এ বয়সেই। সেই সঙ্গে থাকে সমবয়সীদের সঙ্গে প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা, ব্যক্তিসত্তার দ্ব›েদ্বর মতো জটিল বিষয়। ১৯ বছরের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে জটিলতা থাকে অনেক। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এই বয়সে প্রথমবার নগ্ন হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফটোগ্রাফার মার্সেল ইন্ডিকের ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিলেন। শিল্পের দাবি মেনে এমন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে জোলির অকপটতাই তাকে পরবর্তী সময়ে এনে দিয়েছিল সফলতা। যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত অক্ষয় ১৯ বছরেই ব্রিটেনে কম বয়সী কোটিপতিদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। জমি বেচাকেনায় মানুষকে সহায়তাবিষয়ক অনলাইন ব্যবসা ‘ডোরস্টেপস’ চালিয়ে ছিনিয়ে এনেছেন সফলতা। আবার এই বয়সেই ধর্ষণের মতো নির্মমতার শিকার হয়েছেন বিখ্যাত পপস্টার লেডি গাগা। দীর্ঘদিন ভুগেছেন পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে। কিন্তু বন্ধু ও পরিবারের সমর্থন, চিকিৎসকদের প্রেরণা ও নিজের প্রতি বিশ্বাসই তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করে।

নিজের যত্ন নিচ্ছো তো?
পরিবার থেকে দূরে থাকার ফলে খাওয়াদাওয়ার প্রতি খুব একটা আকর্ষণ থাকে না এই বয়সীদের। অন্যথায় উনিশ-কুড়ির খাবার মানেই যেন ফাস্ট ফুড। ফাস্ট ফুড খেতে দারুণ হলেও এটি ব্রণ, শুষ্কতা, অ্যালার্জির মতো ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করে। ত্বকের সতেজতা ও ঔজ্জল্য কমে যায়। স্থ‚লতার অন্যতম কারণ ফাস্ট ফুড। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অথচ এ বয়সেই ক্যালরি ও প্রেটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও লৌহযুক্ত খাবার প্রয়োজন। তাই খাবার তালিকায় ফাস্ট ফুড প্রথম পছন্দ হিসেবে জায়গা করে নিলেও শাকসবজি, দুধ, ডিম, কলিজা, মাংস, টক, ডাল লেবু ও ফল রাখতে হবে নিজের জন্য।

‘ভাল্লাগে না কিছু’
এ বয়সে অভিমান বলে কথা, সেই যেন হয় মনের রাজা, সদ্য কৈশোর পার করা অভিমানী মনে বাবা-মা কিংবা প্রিয়জনদের প্রতি সৃষ্টি হয় রাগ আর ক্ষোভ। কিন্তু মনে রাখতে হবে দিন শেষে তারাই শুভাকাঙ্ক্ষী, আপনজন, বিপদে মাথায় হাত রাখার নির্ভরতা, মমতা, ভালোবাসা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই বয়সে ৪ থেকে ৫ শতাংশই বিষণ্নতায় ভোগে। হরমোনাল পরিবর্তনের কারণেই হয় এই বিষণ্নতা। সবকিছুতেই সৃষ্টি হয় বিরক্তভাব, সমস্যাগুলো মন খুলে বলতে পারে না, কিংবা সমালোচনা সহজভাবে নিতে পারে না, কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে যাওয়া, পরিবার ও বন্ধুদের কোনো পরামর্শ না শোনার মতো বিষয়গুলোর উদয়ও হয় এই বয়সে। হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয় খাবার ও ঘুমের অভ্যাস। ব্যায়াম, ধ্যান, পরিবারকে সময় দেওয়া, নিজের শখের ও পছন্দের বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়াই পারে এই পরিস্থিতি কাটাতে।

বয়সের দোষ!
এই বয়সীরা পোশাক নিয়েও পড়ে নতুন বিড়ম্বনায়। তোমার পছন্দ জিনস-ফতুয়া কিংবা পাশ্চাত্য ঢঙের পোশাক। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেন শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ না পরলেই নয়। অন্যদিকে নিজের পছন্দের পোশাক পরে খেতে হয় বড়দের বকা। এ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি চিরায়ত সংস্কৃতির কথা ভাবলে খারাপ হয় কি? পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, ফাল্গুন কিংবা উৎসবে ও বাঙালির আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে পোশাকের প্রাধান্য। কিন্তু এ মন যে প্রথা ভাঙার, নিজের পছন্দকে স্বীকৃতি দেওয়ার, তাই মন যা বলে, নিজে যা পরে স্বস্তিবোধ করো তাতেই তুমি হয়ে উঠবে অনন্য। এ বয়সেরও তো একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে বৈকি। মেয়েদের ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে হয় ছেলেবন্ধু নিয়ে সমালোচনা। মেয়েদের এই মানায় না, ওই মানায় না, কত-কী? কিন্তু লৈঙ্গিক সমতা আর উদারতায় বিশ্বাসী তারুণ্য কি আর এ কথা মানে। বন্ধুত্বের আবার ছেলেমেয়ে কী? মন তো তাই বলে। তবে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতাই আনবে সমৃদ্ধি। ইউরিপিদিস কি এমনি এমনি বলেছিলেন ‘একজন বিশ্বস্তবন্ধু ১০ হাজার আত্মীয়ের সমান।’

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আয়নাঘররূপ ও ফ্যাশন

যত্নের জৌলুস

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৯, ২০১৮

ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, নিয়মিত ফেসমাস্ক, কোনো কিছুই বাদ যায় না? কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছ, তোমার ত্বক পরিচর্যার রুটিন, বয়সের সঙ্গে মানানসই কি না?

কে না চায় ত্বকের জৌলুশ অনেক দিন ধরে রাখতে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ধরন পাল্টে যায়। ফলে পরিচর্যার প্যাটার্নেও বদল আসে। এ ছাড়া নিজের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপরও তোমার বয়স ধরে রাখা অনেকাংশে নির্ভর করে। এবার ত্বকের যত্নের ব্যাপারে কথা বলেছেন নভীনস বিউটি অ্যান্ড অ্যারোমা সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আমিনা হক। লিখেছেন: নাসরিন প্রিয়া।

যত্ন যখন শুরু: ত্বকের যত্ন শুরু করা উচিত ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স থেকে। এই সময়টাতে হরমোনাল পরিবর্তন ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে মেয়েদের। এ জন্য ত্বকের যত্নটা ১৬ থেকে শুরু করা উচিত। হরমোনাল ও মানসিকতা পরিবর্তনের ফলে একটা মেয়ে এই সময়ে মানসিকভাবে বড় হতে শুরু করে। শারীরিক পরিবর্তনের জন্য এই সময়ে তার কিছু যত্ন নেওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে হালকাভাবে ত্বক পরিষ্কার করবে। কারণ, এ সময়ে ত্বক পরিষ্কার করাটা জরুরি। তবে এই সময়ে চার থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি ত্বকের যত্ন নেওয়া যাবে না। যদি অয়েলি ত্বক হয়, সে ক্ষেত্রে সে একটু শসার রস এবং ময়দা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারো। তবে আর কিছু করার দরকার বলে আমি মনে করি না। মাঝেমধ্যে সপ্তাহে এক দিন চাইলে স্ক্রাব করতে পারো। এ জন্য শসার রস, চালের গুঁড়া, মসুর ডাল মিশ্রণ করে স্ক্রাবিং করে নিতে পারো। তা ছাড়া শসার রস, ময়দা, লেবুর রস নিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারো। আর নরমাল স্কিনের জন্য মুলতানি মাটি, দুধ, লেবুর রস, গোলাপের পাপড়ি বেটে নিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারো। আর যাদের ড্রাই স্কিন তারা ক্যারটের প্যাক ব্যবহার করতে পারো। ২০ বছর বয়সে এসে ত্বক অনেক হাইড্রেট থাকে। এ জন্য ওপরের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো দিয়ে ত্বকের যতœটা করে আসতে হবে। এ ছাড়া গাছে কয়েক দিন পানি না দিলে কী অবস্থা হয় গাছের খেয়াল করেছ? গাছ যেমন শুকিয়ে যায়, তেমন আমাদের ত্বকও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। যত বেশি পানি পান করবে, তোমার ত্বক তত বেশি হাইড্রেটেড থাকবে। ত্বক হাইড্রেটেড থাকা মানেই তারুণ্যদীপ্ত থাকা। অ্যান্টি-এজিং হিসেবে পানির গুণ সবচেয়ে বেশি। পানি তোমার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করবে। ময়েশ্চারাইজার তোমার ত্বককে সরাসরি হাইড্রেটেড করে এবং ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে। মুখ ধোয়ার পর আমাদের ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায় এবং শুষ্ক ত্বকে খুব দ্রুত বলিরেখা পড়ে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে। তাই মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবে না। অতিরিক্ত মেকআপ, রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করো। তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করো।

পঁচিশের পরের সময় : কথায় আছে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর। তাই বলিরেখা পড়ার আগেই যদি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে হয়তো বয়সের ছাপ দেরিতে আসবে। পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে অনেকের মুখে ধীরে ধীরে বলিরেখা পড়া শুরু হয়ে যায়। তাই অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার শুরু করা উচিত। যত বয়স বাড়বে, তত ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবে। ৩০ বছরের পর থেকে চেহারার সৌন্দর্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। পঁয়ত্রিশ বছর থেকে অনেকেরই মুখে হালকা বলিরেখা, চোখের কোণে ভাঁজ পড়া শুরু করে। যেহেতু মাত্র শুরু, তখনই যদি যত্ন নেওয়া হয় তাহলে বয়সের ছাপ দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো ক্লিনজার দিয়ে মেকআপ ও ময়লা পরিষ্কার করো। ক্লিনজিং করার পর দিনের শুরুটা করো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে আমরা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করি। শুষ্ক ত্বকে অতি দ্রুত বলিরেখা পড়ে যায়। তাই ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি। সঙ্গে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে ত্বকে অল্প বয়সে বলিরেখা ও ভাঁজ পড়া প্রতিরোধ করতে এসপিএফ ১৫ বা তার বেশি এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। যদি তোমার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে থাকে, তাহলে তুমি ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে অল্প সিরাম যোগ করে নিতে পারো। সিরাম সাধারণত ঘন হওয়ায় এতে বেশি পরিমাণ অ্যান্টি-এজিং উপাদান থাকে এবং ত্বক তা তাড়াতাড়ি শোষণ করে নেয়। তোমার চোখের চারপাশের জায়গাটি ত্বকের অন্যান্য জায়গা থেকে বেশি পাতলা হয়ে থাকে। তাই এখানে দ্রুত ফাইন লাইন দেখা যায়। এই ফাইন লাইন রোধ করতে গ্লিসারিন অথবা নিয়াসিনিমাইড (ভিটামিন বি৩) যুক্ত আই-ক্রিম ব্যবহার করো। এই আই-ক্রিম চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল ও ফোলা ভাবও দূর করবে।

যখন চল্লিশ : এই সময়টিকে মেইন্টেনেন্স ধাপও বলা যেতে পারে। চল্লিশের পর সবার মুখেই বলিরেখা, চোখের কোনায় ভাঁজ পড়ে যায়। নিশ্চয় ভাবছ বলিরেখা তো পড়েই গেল, আর কী যত্ন নেব। যদি বয়স ধরে রাখতে চাও তাহলে ওপরের যত্নগুলোর কোনোটিতেই ছাড় দেওয়া যাবে না। উপরের টিপসগুলোর পাশাপাশি শরীর ফিট রাখো। কারণ, শরীর সুস্থ থাকলেই তোমার ত্বকে প্রাণ থাকবে। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করার চেষ্টা কর। নিয়ম করে হাঁটো। এই সময় অনেক মহিলাদের মেনোপজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং পঁয়তাল্লিশ বা পঞ্চাশে পা দিলে মোটামুটি সব মহিলারই মনোপোজ হয়ে যায়। শরীরে নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে শরীরে এবং ত্বকে তার ছাপ পড়ে। বিশেষ করে মেনোপজের পরে ত্বকের তৈলগ্রন্থিগুলো কম সক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই ত্বক অনেক শুষ্ক এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এ জন্য সেই শুরু থেকে করা ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংয়ের রুটিন ফলো করে যাওয়া। তার সঙ্গে অবশ্যই বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগানো। এই সময় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ কোনো ক্রিম বা সিরাম বেছে নেওয়া উচিত ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং মাঝেমধ্যেই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাবে। তাই এই সময়টাতে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিজের ডায়েট চার্ট তৈরি করে নাও। এ ছাড়া বেশি করে শাকসবজি বয়স ধরে রাখতে চাও তো আজই নিয়মের মধ্যে চলা শুরু করতে হবে। তাহলে তোমার ত্বকও থাকছে অনেক দিন ধরে মসৃণ ও তারুণ্যদীপ্ত। জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় যখন হাসতে হাসতে পারো করেই ফেলেছ তখন আর এত চাপ না নিয়ে খোলা মনে হাসিখুশি জীবন যাপন কর। ভালো ঘুম দাও। প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খাও। দেখবে বয়স এমনিতেই চৌকাঠের বাইরে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।

 

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook