রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
লেখক

Rodoshee

Rodoshee

শিল্প-সংস্কৃতি

যে মেয়েটি জন কিটসকে ভালোবাসত

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৮, ২০১৮

ইংরেজি সাহিত্যের শক্তিশালী কবি জন কিটসের জন্ম এ মাসের ৩১ তারিখে। রোমান্টিক কবি কিটস ব্যক্তিজীবনেও ছিলেন একজন প্রবল প্রেমিক। অথচ প্রেমিকা ফ্যানির সঙ্গে হৃদয় লেনদেন নিয়ে আছে অনেক কানাঘুষা। তাহলে কেমন ছিল সেই প্রেম? লিখেছেন মিলন আশরাফ।

নভেম্বর মাস। সালটা ১৮১৮। হাম্পস্টেডের এক বাড়ি। ১৮ বছরের এক সুন্দরী তরুণী। আয়তচোখের ২২ বছরের টগবগে যুবক। তাদের প্রথম পরিচয় ঘটে উল্লিখিত বাড়িটিতে। শুরুর দিকে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলেও দু-এক দিন পরে আড়মোড়া ভেঙে সম্পর্ক হয় বন্ধুত্বের। যুবকটি শেক্সপিয়ার, স্পেনসার, মলিয়ের পড়ে শোনায় তরুণীটিকে। নিমগ্ন চিত্তে তরুণীটি সেই সব অমৃত হৃদয়ে পুরে নেয় ভাবুক বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটির মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে। ছেলেটির শরীর ছিল একটু শুকনা। ইংরেজ পুরুষদের তুলনায় উচ্চতা ছিল একটু কম। কোনো পার্টিতে সে মেয়েদের সঙ্গে নাচত না। কারণটা ওই উচ্চতা। তবে কোঁকড়ানো লাল-খয়েরি চুল ও আয়তচোখে তাকে দেখাত ভীষণ মায়াময়। এই মায়াময় ছেলেটিই সারা বিশ্বের সৌন্দর্যের কবি জন কিটস। ‘এ থিং অব বিউটি ইজ এ জয় ফরএভার’ এই লাইনটি শোনেনি এমন পাঠক মেলা ভার। লাইনটি কিটসের গ্রিক পুরাণের এক চরিত্রকে নিয়ে লেখা ‘এন্ডিমিয়ন’ পান্ডুলিপির। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, চার হাজার লাইনের ‘এন্ডিমিয়ন’ সেই সময়ের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ব্ল্যাকউডস এডিনবরা’ কোনো পাত্তাই দেয়নি। উল্টো সমালোচক বলেছিলেন, ‘কিটস এর উচিত কবিতা লেখা ছেড়ে দেওয়া।’ কড়া সমালোচক জন গিবসন লকহার্ট কিটসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘কিটসের ভাষা আঞ্চলিকতা দোষে দুষ্ট, শব্দচয়ন অতি নিম্নমানের।’ সঙ্গে একটি উপদেশনামাও দেয় কিটসের জন্য। সেটি হলো, ‘সে যেন চিকিৎসাশাস্ত্রে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে।’
সমালোচকদের এসব কথাবার্তার কারণে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার পরিবার তাকে শল্যচিকিৎসকের সহকারী হিসেবে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কবিতা তাকে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে যে, চিকিৎসাশাস্ত্র ছেড়ে আবার মনোনিবেশ করেন কবিতায়। সেই সময় তার পাশে ছিলেন পরম বন্ধু আরেক বিশ্বখ্যাত কবি পিবি শেলি। পরবর্তী সময়ে শেলি জানান, ‘সমালোচকদের কড়া মন্তব্য কিটসকে ভেতর থেকে এতটাই দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল যে, তার হৃদয়রোগও এতটা দেয়নি হয়তো।’
কিন্তু সবকিছু বদলে যেতে থাকে তরুণী ফ্যানি ব্রাউনের সঙ্গে পরিচয় ঘটার পর থেকেই। একে একে লিখে ফেলেন বিশ্বখ্যাত সব কবিতা। ‘ব্রাইট স্টার’ নামের কবিতা ও পত্রাবলি সংকলন পড়লে যে কেউ ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারবেন। তাদের প্রেমকাহিনি নিয়ে হলিউডে ‘ব্রাইট স্টার’ নামে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। তিনি যে শুধু সৌন্দর্যের কবি তা নয়, প্রেমেরও। তার কথায়, ‘প্রেম আমার ধর্ম, এটার জন্য আমি মরতেও পারি।’
কিটসের প্রেমিকা ফ্যানি ব্রাউন জন্মগ্রহণ করেন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট। কিটসের কাব্য সাধনায় এই মেয়েটির গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিন্তু ভিক্টোরীয় যুগের সমালোচকেরা ফ্যানির ওপর অবিচার করেছেন। কিটসের অকালমৃত্যুর পেছনে অন্যান্য কারণ ছাড়াও ফ্যানির হৃদয়হীনতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেই সময়ের সমালোচকেরা। সেই হৃদয়হীনতার ভার কিছুটা লাঘব হয়ে আসে ১৯৩৭ সালে কিটসের বোনের কাছে লেখা ফ্যানির চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পর। চিঠিগুলো কিটস ইতালি যাওয়ার পর লিখে পাঠিয়েছিলেন ফ্যানি ব্রাউন। এক চিঠিতে ফ্যানি লিখেন, ‘অন্য সকলে তোমার দাদার কথা ভুলে যাক, শুধু আমার বেদনাটা বেঁচে থাক।’ জোয়ানা রিচার্ডসন কর্তৃক লিখিত ফ্যানি ব্রাউনের জীবনী পাঠে আমরা বুঝতে পারি, কিটসকে সত্যিই ভালোবাসত ফ্যানি এবং কোনো অন্যায় আচারণও করেনি সে কবির প্রতি।
ফ্যানির সঙ্গে পরিচয়ের দেড় মাসের মাথায় বিয়ের প্রস্তাব দেন জন কিটস। সে প্রস্তাবে রাজিও হয় ফ্যানি। কিটসের বৈষয়িক অবস্থা জেনেবুঝেও এ রকম সিদ্ধান্ত বোকামির নামান্তর বটে! অল্প বয়সে বাবাকে হারান কবি। স্কুলে পড়াকালীন মা মারা যান। ছোট ভাই টমের মৃত্যুও ঘটে ওই একই রোগে। সেই সময়ে কবির নিজের স্বাস্থ্যও ভালো যাচ্ছিল না। তার ওপর আবার লাভের ব্যবসা ডাক্তারি ছেড়ে আরম্ভ করেছেন কবিতা লেখা। নিজের খরচ সে নিজেই চালাতে পারেন না। ফ্যানি যদি সত্যিই ভালো না বাসবে তাহলে এমন বোকামি কেন করবে? তাঁদের বাগদানের কথা জানল দু-একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন। তারাই ঠিক করলেন উপার্জনের একটা পথ বের করে তারপর বিয়ে হবে। কিন্তু ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে তাকালেন না। হৃদয়রোগ প্রকাশ পেল কিটসের। তার সব আশা লন্ডভন্ড হয়ে গেল। শরীর ভেঙে পড়ল। ফ্যানি রোজ দেখতে আসতেন তাকে। কিন্তু কিটসের প্রেম ছিল সর্বগ্রাসী। তিনি চাইতেন, ফ্যানি সারাক্ষণই তার পাশে পাশে থাকুক। কিটসকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে সে অন্য কারও সঙ্গে নাচবে, গল্প করবে, হাসবে এসব সহ্য করা তার জন্য কঠিন ছিল। এসব সন্দেহে ফ্যানিকে অনেক অপমানও করেছেন কবি। কিন্তু ফ্যানি সব মুখ বুজে সহ্য করেছেন কবিকে ভালোবাসতেন তাই। ওই সময়টাতে কিটসের সব কবিতাতেই ফুটে উঠেছে ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার। চিঠিগুলোতেও তাই। চরম এক হতাশায় পেয়ে বসে তাকে। ফ্যানির চরিত্রের ওপর সন্দেহের তির নিক্ষেপ করেন তিনি। এসব অভিযোগের পরেও হতাশাগ্রস্ত কবিকে ছেড়ে চলে যাননি প্রেমিকা ফ্যানি ব্রাউন।
এমন করে করে বাগদানের প্রায় এক বছর দশ মাস পার হল। সুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, শীতের আগেই তাকে ইতালি নিয়ে যেতে হবে। ফ্যানির ইচ্ছা ছিল কিটস ইতালি যাওয়ার আগেই বিয়েটা হোক। আপত্তিটা আসল কিটসের কাছ থেকে। এই শরীরে তার মন সায় দিল না। তা ছাড়া ফ্যানি তখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিয়েতে তার মায়ের মতো লাগবে, তিনি মত দিলেন না। অবশেষে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ সেপ্টেম্বর কিটস বিদায় নিল ফ্যানির কাছ থেকে। রওনা হলো ইতালির পথে। যাওয়ার আগে ফ্যানি কবির কাপড়চোপড় গুছিয়ে বাক্সে ভরে সঙ্গে কিছু উপহারও দিয়েছিলেন। কিটস দিয়ে গিয়েছিলেন সেভার্নের আঁকা তার নিজের ছবি ও প্রিয় বইগুলো। ইতালি যাওয়ার আগে ফ্যানিদের বাড়িতে কয়েক দিন ছিলেন কিটস। এই কয়েকটি দিন ও ফ্যানির অশ্রুসিক্ত বিদায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত বারবার মনে পড়ত তার। ফ্যানির নাম শুনলেই দেহ টালমাতাল হয়ে যেত কিটসের। ইতালি এসে তিনি আর চিঠি লিখতেন না ফ্যানির কাছে। বন্ধুরা কিটসের চিঠি পেত নিয়মিত। তাদের কাছ থেকে কিটসের খবর নিতেন ফ্যানি। একবার ফ্যানির লেখা চিঠি এলে বন্ধু সেভার্নকে ডেকে বললেন, ‘এ চিঠি আমি পড়তে পারব না। আমি মারা গেলে বুকের ওপর রেখে কবর দিও আমাকে।’ কিটসের এই নির্দেশ পালন করা হয়েছিল। এই নির্দেশ পালন করার ফলে ফ্যানির শেষ চিঠিতে কী লেখাছিল, তা অজানাই থেকে যায় চিরদিনের মতো।
১৮২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর ৪ মাস বয়সে রোমে মারা যান কিটস। তার মৃত্যুসংবাদ খুব শান্তভাবেই গ্রহণ করেন ফ্যানি। ধারণা করা হয়, ফ্যানি চাপা স্বভাবের মেয়ে হওয়ায় কোনোরকম উচ্চবাচ্য করেননি। তার প্রেম অন্য কেউ বুঝতে পারত না। প্রকাশ ক্ষমতা কম ছিল। জীবনীকার রিচার্ডসন জানান, ‘কিটসের মৃত্যুর ৬ বছর পর্যন্ত ফ্যানি বিধবার কালো পোশাক পরেছিল, চুল ছেটেছিল ছোট করে।’ ফ্যানি খুব রূপবতী ছিলেন। কিটস তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ’The richness, the bloom, the full form, the enchantment of love after my own heart.’

কিটস মারা যাওয়ার পর ফ্যানিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে অনেকে। সুন্দরী তরুণীর জন্য এটাই স্বাভাবিক। তাদের ফেরাতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে তার। বেশির ভাগ সময়ই তিনি থেকেছেন শীতল। অবশেষে জন কিটসের মৃত্যুর বারো বছর পর বিয়েতে বসেন ফ্যানি ব্রাউন। বিয়ে করেন লুই লিন্ডোকে। ধারণা করা হয়, লুই লিন্ডোর ভেতর হয়তো তিনি কিটসের ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ফ্যানি। কিটসের দেওয়া উপহার ও চিঠিগুলো সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন আমরণ। তা না হলে বিশ্বসাহিত্য থেকে এই অমূল্য সম্পদগুলো হারিয়ে যেত চিরতরে। কিটসকে আজীবন ভুলতে পারেননি ফ্যানি। একবার কবি ফ্যানিকে বলেছিলেন, ‘তোমার যদি ছেলে হয়, তবে তার নাম জন রেখো না। এই নামটি বড়ই অপয়া। আমার নাম জন দেখেই সেটা অনুমান করতে পারছ নিশ্চয়। তার চেয়ে বরং তোমার ছেলের নাম রেখো এডমন্ড। এটা বেশ ভালো নাম।’ ফ্যানি কবিকে আজীবন মনে রাখার আরেকটি প্রমাণ দিলেন। নিজ ছেলের নাম রেখেছিলেন কিটসের দেওয়া এডমন্ড (অর্থ-ঐশ্বর্যের সুরক্ষা)
কিটসের প্রায় সব বন্ধুই তখন মারা গেছে। ইতালিতে কিটসের কবরের কাছাকাছি থাকত সেভার্ন। ফ্যানি শেষ বয়সে হাম্পস্টেডে ফিরে আসেন। অর্থাৎ যেখানে তাদের প্রথম পরিচয় ঘটে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দারিদ্র্য ফ্যানিকে আঁকড়ে ধরে। অভাবে পড়েন। শেষ সম্বল বলতে কিটসের দেওয়া বন্ধু সেভার্নের আঁকা ছবি। বাঁচার শেষ অবলম্বন হিসেবে ছবিটি বিক্রির জন্য স্বামীর হাতে দিয়ে এক বন্ধুর কাছে পাঠালেন। ছবির সঙ্গে লিখে দিলেন একটি চিরকুট : ‘It would not be a light motive that would make me part with it.’
ছবিটি বিক্রির পর বেশি দিন বাঁচেননি তিনি। দারিদ্র্যের কাছে নিজের প্রেমের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ১৮৬৫ সালে ডিসেম্বর মাসে ৬৫ বছর বয়সে ফ্যানি ব্রাউন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পুনশ্চঃ জোয়ানা রিচার্ডসন লিখিত ‘ফ্যানি ব্রাউন’ বইটির সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.এই সংখ্যায়

যোগ্যতার খাতিরে

করেছে Rodoshee অক্টোবর ২৮, ২০১৮

স্ত্রীর যোগ্যতা বেশি হলে স্বামী বিব্রত! কেন হবে না? এত এত কথা আসতে থাকে চারপাশ থেকে। তোমার স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি, তুমি পিএইচডি করে ফেলো; তোমার স্ত্রী বড় চাকরি করছে তুমি বরং আরও ভালো কিছু করো; তোমার স্ত্রীর আয় বেশি তুমি এমন কিছু করো যাতে তাকে পেছনে ফেলতে পারো। এমন সব উপদেশ একেকজন দিয়ে দেয়। বেচারা স্বামী ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারল তো পারল, আর তা যদি না হয় তো সংসারে অশান্তি। নিজে হীনমন্যতায় ভুগবে, অকারণে রাগবে অথবা স্ত্রীকে তার বাইরের কাজ থেকে ই¯Íফা দিতে বলবে। এ তো গেল মুদ্রার এপিঠের গল্প, ওপিঠের গল্পে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে যোগ্যতায় এগিয়ে যাওয়া স্ত্রীও।

প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করত সোহান। হঠাৎ চাকরিচ্যুত হয়েছে। লিমা সোহানকে বলেছিল, এমবিএ শেষ করে আবার চাকরি শুরু করতে। মাঝের সময়টা সে একাই চালিয়ে নেবে সংসার। সোহান রাজি হয়েছে। তবে সোহানের শর্ত লিমার টাকায় যে সংসার চলছে, এ কথা যেন বাইরের কেউ জানতে না পারে।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ যদি থাকে পরস্পরের প্রতি সহানুভ‚তি দৃঢ় হবে। লোকে কী বলল না বলল, এতে কী আসে যায়। দাম্পত্য সম্পর্ক দীর্ঘ পথচলার প্রতিশ্রুতি। এই পথে একজন আরেকজনকে খানিকটা শান্তি দিতে ড্রাইভিং সিটে বসতেই পারে। আর হ্যাঁ, পরোক্ষ পরামর্শদাতা বা তৃতীয় ব্যক্তির পরামর্শ থাকবে, তাই বলে সেগুলোকেই প্রধান করে তুলতে হবে এমন তো কথা নেই। এ জীবন তোমার ও তার। এই সংসার, এই সমস্যাও নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।

একই অফিসে চাকরি করত নাসরিন-অনিক দম্পতি। নাসরিনের প্রমোশনের পর থেকেই সে নানা রকম টালবাহানা শুরু করেছে। স্বামীর সবকিছুতেই দোষ খুঁজে বেড়ায়। অনিক কোনো কিছু বললেই নাসরিন বলে বসে, ‘তোমার জন্য অফিসে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যায়। আমি আমার বন্ধু সার্কেলে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা পাই।’ অনিক ইংরেজি বলতে গেলে আমতা আমতা করে, এ নিয়ে আপত্তির শেষ নেই নাসরিনের।

সম্পর্কের ভাষায়
স্ত্রী হাই প্রোফাইল হলে স্বামীকেও তার সমান বা আরও বেশি হাই প্রোফাইল হতে হবে এমন মানসিকতা বাদ দাও। আত্মবিশ্বাসী হলে, নিজের কাজকে ভালোবাসলে সাফল্য আসবেই। তাই অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অফিসে তুমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে, বাসায় সেই কর্তৃত্ব খাটাতে এসো না।
ভালো আছি, এ কথা বোঝাতে সক্ষম হতে হবে
স্ত্রী নিজ যোগ্যতায় সমাজে উচ্চপদে আসীন হয়েছে। এটাকে স্বাভাবিকভাবে নাও। বাইরের বা অফিসের আলোচনা সংসারে টেনে আনার প্রয়োজন নেই। তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলো। লোকের কথা অগ্রাহ্য করা সম্ভব না হলে বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারো। এতে সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে। মানুষ অনেক সময় নিজের দুর্বলতা-অযোগ্যতা ঢাকতে গিয়ে সঙ্গীর ওপর চড়াও হয়। তুমিও কি তাই করছ? যদি তা না করো, নিজেদের মতো সব আয়োজন করে নাও ভালো থাকার, ভালোবাসার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার। বাইরের মানুষ বুঝতে পারবে তোমরা ভালো আছো।

বিশেষজ্ঞের মতামত
তরুণ কান্তি গায়েন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বলেন ‘দম্পতিদের দুজনই নিক্তিতে মেপে সমান যোগ্যতার হবেন এটা কখনো সম্ভব নয়; কমবেশি হবেই। সামান্য কমবেশিতে তেমন সমস্যা হয় না। পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন মানুষের মন্তব্য এ জাতীয় বিষয়কে আরও জটিল করে তোলে। এর ফলে দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে প্রথম করণীয়, ব্যক্তির নিজের সঙ্গে নিজের। নিজেকেই প্রশ্ন করা দরকার আমি কেন হীনমন্যতা বা জড়তায় ভুগছি। সব সময়ই মনে রাখা প্রয়োজন, দাম্পত্য সম্পর্ক একটা ইউনিক সম্পর্ক। এবং যে কোনো মানুষের বরত্রে বিয়ের পরে পার্টনারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই সত্যটিও সঠিকভাবে অনুধাবন করা জরুরি। প্রায় ছয়শ কোটি নর-নারীর মধ্যে সাধারণত একজনের সঙ্গেই কোনো ব্যক্তি দাম্পত্য সম্পর্কে যুক্ত হয়। এতটা এক্সক্লুসিভ যে সম্পর্ক, সেটিকে অন্য কোনো সামাজিক অবস্থা বা পরিচয় দিয়ে খন্ডিত করা যাবে না, বরং একান্ত এই সম্পর্কটিকেই (তা সে যত খুঁতযুক্তই হোক)।

তরুণ কান্তি গায়েন আরও বলেন, ‘জগতের সামনে তুলে ধরতে পারাটা যেকোনো পার্টনারের অন্যতম যোগ্যতা ও দায়িত্ব। দ্বিতীয়ত, তথাকথিত কম যোগ্যতার পার্টনারেরও নিজেকে ছোট বা কম ভাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন পার্টনারের সঙ্গে নিজের অবস্থানকে তুলনা করার কোনো প্রয়োজন নেই, বরং তিনি যা করছেন তা সুচারুভাবে করা এবং সেটিকে মর্যাদার চোখে দেখার অভ্যাস করলে হীনমন্যতা দূর হতে পারে। মানসিক দূরত্ব তখনই কমবে, যখন দুপক্ষই দাম্পত্য সম্পর্কের এক্সক্লুসিভিটি মনে রাখবে এবং হীনমন্যতা থেকে মুক্ত থাকবে।’
দাম্পত্য এই সম্পর্কটির সৌন্দর্য নির্ভর করে বিশ্বাস, সত্য আর ভালোবাসার ওপর। এই তিন ঠিক তো বাকি সব থোড়াই!

লেখা : স্বরলিপি

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
হেঁসেল

জায়ফলে জয়

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮

হালকা সুগন্ধিযুক্ত মসলা জায়ফল। ইংরেজি নাম ‘নাটমেগ’। গরম মশলা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি কিংবা মজাদার অন্যান্য রান্নায় বহুল ব্যবহৃত। তবে ওষুধের উপকরণ হিসেবেও জায়ফলের সুনাম আছে। সর্দিকাশিতে জায়ফলের গুঁড়া খুবই উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে গর্ভপাত করাতেও খ্যাতি রয়েছে। জায়ফলে প্লেগ রোগ ভালো হয় এমন কথাও শোনা যায়।

জায়ফলের আদিবাস ইন্দোনেশিয়ার বান্দা দ্বীপে। গড়ে প্রায় ৩৫ ফুট উঁচু জায়ফল গাছ। কাঁঠালপাতার মতো আকৃতি। বর্ষার আগেই ফুল আসে, ঋতু শেষে ফল। ফলের বীজ থেকে ঝরে পড়ে জৈত্রি। বীজ এবং জৈত্রি দুটোই ব্যবহারযোগ্য। খাবারকে সুস্বাদু ও সুগন্ধি করা জায়ফলের ভেষজ উপকারিতা অনেক।

জাগিয়ে তোলে শরীর
ভেষজ চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, জায়ফল কামোদ্দীপক যৌগ নিঃসৃত করে। স্নায়ুর কোষকে উদ্দীপ্ত করে। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে যৌন মিলনের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। প্রাচীনকাল থেকে জায়ফল যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। কফির সঙ্গেও জয়ফল মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পেতে পারো।

রাতে প্রশান্তির ঘুম
রাতে অনেকের ভালো ঘুম হয় না। নানা রকম চিন্তায় শরীরে উত্তেজনা তৈরি হয়। অনিন্দ্রা সমস্যা দেখা দেয়। ঘুমের এই সমস্যার সমাধান তোমার হাতেই। খাবারে জায়ফল যোগের মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবে। জায়ফল উত্তেজনা কমিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই নিদ্রার আসক্তি আনবে।

কিভাবে বানাবে
এক চা চামচ পরিমাণ জায়ফলের গুঁড়া এক কাপ কুসুম গরম পানিতে মেশাও। এরপর চার-পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো। মিশ্রণটি প্রতিদিন রাতে শোবার আগে পান করবে। একইভাবে ফলের জুসের সঙ্গেও মিশিয়ে খেতে পারো। কিংবা এক টেবিল চামচ আমলকির রসের সঙ্গে পরিমাণমতো জায়ফলের গুঁড়া মিশ্রণ করো। প্রতিদিন তিনবার করে খাবে। তাতে বিষণ্নতা ও হজমের সমস্যা দূর হবে।

এক সপ্তাহেই ব্রণ নিরাময়
ত্বকে ব্রণের সমস্যা? জায়ফলই সমাধান। সাতদিনেই এই সমস্যা দূর হতে পারে জায়ফল ব্যবহারে। এক টেবিল চামচ করে লেবুর রস, মধু ও জায়ফলের গুঁড়া মিশিয়ে নেবে। মিশ্রণটি মুখ এবং ঘাড়ে লাগিয়ে মিনিট পনের অপেক্ষা করো। সবশেষে মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলো। একসঙ্গে উপাদানগুলোর ব্যবহারে ব্রণের জীবাণু ধ্বংস হবে। ব্রণের কালো দাগ কিংবা বলিরেখা দ্রুত দুর হবে। জয়ফলের উপাদান ত্বকের কোষে শক্তি জোগায়। এতে ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি লেবুর রস ব্রণের কালচে দাগ দূর ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। অপরদিকে মধুর প্রভাবে ত্বকের আর্দ্রতাও ঠিক থাকে।

আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ওষুধের উপাদান হিসেবেই জায়ফল প্রচলন। ডায়রিয়া, ঠান্ডাকাশি, গ্যাস নিরাময়, হাঁপানি, বদহজম, অ্যাকজিমার মতো অসুখে জায়ফল ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়াও অনিদ্রা, গর্ভবতী নারীদের বমি বমি ভাব, নিতম্বের স্নায়ু ব্যথা কিংবা দুঃচিন্তায় জায়ফল অনেক উপকারী।

লেখা: রোদসী ডেস্ক

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়বিশেষ রচনা

নারীর ওপরে ভাষার আধিপত্য

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮

লেখাঃ কাজল দাশ : ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের বাহন। মানুষ মাত্রই আমরা কোনো না কোনো ভাষাতেই কথা বলি। আমাদের ভাষা বাংলা অথবা ইংরেজি। হিন্দি অথবা গুজরাটি বা মারাঠি। এই ভাষাই মানুষের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার যা দিয়ে সে বংশপরম্পরায় জ্ঞানকে প্রবাহিত করেছে। কিন্তু এই ভাষার ভেতর দিয়েই ঠিকে আছে পুরুষাধিপত্য। এই ভাষা দিয়ে যখন নারীকে বর্ণনা করা হয় তখন তার ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয় একধরনের হীনমানসিকতা। বাংলা ভাষাতেই এই ভাষার আধিপত্য রয়েছে বিস্তর। আমরা যে প্রচলিত বাংলা ভাষায় কথা বলি তা সেটা আঞ্চলিক হোক আর সাধু ভাষাই হোক, সেখানেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে নারীকে হেয় করা বা তাকে অধস্তন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রভূত নিদর্শন লক্ষ করা যায়।

ভাষার এই ব্যবহার সমাজে নারীকে যতটা তির্যক করে কথা বলে কিংবা যতটা কোমল হিসেবে নারীকে উপস্থাপন করে, এটি দেখা যায় না পুরুষের ক্ষেত্রেও। ভাষা নারীকে কীভাবে অধস্তন করে রেখেছে এটি বাংলা ভাষার স্ত্রীবাচক শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায়। আমাদের প্রচলিত বাংলায় আমরা নারীকে যেসব শব্দ দিয়ে গালি দেই সেগুলো সব কয়টাই পুরুষতান্ত্রিক শব্দ। শুধু গালিবাচক শব্দ দিয়েই নয়, নারীর ওপরে আধিপত্য তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত নানা রকমের শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে সমাজে অহরহ! এই শব্দগুলো নির্দেশ করছে নারী আর পুরুষের শক্তিমত্তাকে, তাদের ব্যক্তিত্বকে, একটি শব্দ দিয়েই আমরা নারীর দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেতে পারি অনায়াসে। ভাষা যে শব্দের জাল বিস্তার করেছে সেখানে কীভাবে নারীকে নির্মাণ করছে এই বিষয়টি ভাষার রাজনীতিকে খুব প্রতিফলিত হচ্ছে।
পুরুষসুলভ! নারীসুলভ!

বন্ধুদের আড্ডায় ছেলেরা কাউকে ‘হাফ লেডিস’ বলা মানেই ওই ছেলেটিকে অপমান করা। কোনো ছেলে যদি একটু মেয়েদের মতো আবেগ প্রকাশ করে অথবা মেয়েদের মতো করে অনুভূতি প্রকাশ করে তাকে অন্য ছেলেরা একটু অসম্মান করে দেখে। এই যে অনুভূতি প্রকাশের কারণে কোনো ছেলেকে হেয় করে দেখার বিষয় এটি এসেছে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে। আমাদের চিন্তাকাঠামো এমনভাবে গঠিত হয়ে আছে যে মেয়েদের মতো ছেলেকে আবেগ প্রকাশ করা যাবে না বা মেয়েরা যেভাবে সংবেদী আচরণ করে পুরুষ সেটি করতে পারবে না। আবার কোনো নারী যদি পুরুষের শক্তি প্রদর্শন করে, আচার-আচরণে কাঠিন্য দেখায় তাকেও আমরা নিতে পারি না। ডানপিটে ছেলে হলে ভালো আর সাহসী শোনায় কিন্তু মেয়ে হলে শোনাও খারাপ। এভাবে নারী ও পুরুষের জন্য আমরা এমন করে জেন্ডার বিভাজিত শব্দকে ভাগ করেছি যা প্রত্যক্ষভাবে নারীকে পিছিয়ে রাখছে। নারীরা কোমল হবে, তারা সবাইকে কেয়ার করবে, সে একটু আঘাতে ভেঙে পড়বে এসব ধারণা আমরা কতগুলো শব্দ দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করেছি। যদিও শব্দ দিয়ে প্রকাশ করছি বা সিগনিফাইং করছি কিন্তু তার পেছনের বস্তুগত ভিত্তি রয়েছে। আমরা শিশুদের ক্ষেত্রে খুব সচেতনভাবেই বলে থাকি ‘এটা ছেলেরা করে না’, ‘ওটা মেয়েরা করে না’। এভাবে তাদের মধ্যে একটি বিভাজিত ধারণা গড়ে ওঠে, যা দিয়ে তারা পরস্পর থেকে আলাদা হয় এবং ক্ষমতা কর্তৃত্বের দিক থেকে ছোটবেলা থেকে কেন্দ্রে আর প্রান্তে অবস্থান করে।

সব গালিই নারীকে ইঙ্গিত করে!
পাড়ার মোড়ে মোড়ে এখন যত আড্ডা হচ্ছে, একটি কমন গালি এখন ব্যবহৃত হয় ‘মাদারচোৎ’। শাব্দিক অর্থে এই গালিটি দ্বারা বোঝানো হচ্ছে ‘মায়ের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া’। একে অপরের পিঠ চাপড়ে দিয়ে দেদার এখন এই গালি দিয়েই যাচ্ছে। শুধু নারী নয়, একজন মাকে আইডেন্টিটি হিসেবে এই গালিটি খুবই অপমানজনক হলেও খুব সহজে এটির সামাজিকীকরণ ঘটে গেছে। কেউ কোনো মনস্তাত্ত্বিক বাধা অনুভব করছে না এই গালি দিতে একে অপরকে। এই যে একটি গালির সহজীকরণ হলো এটার কারণ কী? কারণ হলো-আমাদের প্রচলিত গালির নারীকেন্দ্রিকতা। একটি গালি দিয়ে কাউকে চূড়ান্ত অপমান করার জন্য তার সবচেয়ে তীর্যক প্রয়োগ হলো এখানে নারীকে সংযুক্ত করা, অথবা চূড়ান্ত রসিকতা করার দরকার হলে নারীকে দিয়ে স্থুল হাস্যরস সৃষ্টি করা। আমাদের প্রয়োগকৃত ভাষায় খুব সহজে এভাবে আমরা নারীকে গালি দিয়ে সম্বোধন করার কারণ হলো আমাদের চিন্তার পুরুষাধিক্য যা যুগ যুগ ধরে পুরুষের চেয়ে নারীর অবস্থান মর্যাদাগত দিক থেকে রেখে চিন্তা করার কারণে তৈরি হয়েছে। সে জন্য আমাদের পক্ষে মাদারচোৎ বলা সহজ ও কানেক্টিং হলেও ফাদারচোৎ ততটা নয়।

৩
গালির স্ত্রীলিঙ্গ আছে পুংলিঙ্গ নেই!

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কিছু নারীকেন্দ্রিক গালি যেমন- খানকি, ছিনাল, বেশ্যা, মাগি, রক্ষিতা, পতিতা, ভ্রষ্টা, কুলটা, ব্যাভিচারিণী, এগুলো এখনো সমান প্রচলিত। এ ছাড়া কামিনী, ভামীনি, মহিলা, অঙ্গনা, ভার্যা, রমণী, ললনা এই যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, এসবের কোনো পুরুষবাচকতা নেই। নারীকে গালি দেওয়া শব্দের পুরুষবাচকতা না থাকার একটি বড় কারণ হলো এসব গালি সমাজে খুবই প্রত্যক্ষভাবে পুরুষেরাই প্রচলিত করেছে। পুরুষেরা যেসব নারীকে যৌনসেবার জন্য বন্দি করে রাখে এসব নারীকে রক্ষিতা বলা হচ্ছে অথচ যে পুরুষ নারীকে বন্দি করে রক্ষীতা বানাচ্ছে তাকে কিছু বলা হচ্ছে। অধিকন্তু যে পুরুষ নারীকে যৌনতার জন্য বন্দি করে রেখেছে তাকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। যেসব রাজা আর বাদশাহের হারেমে হাজার হাজার রমণী থাকেন তারা সে সময় খুব সমাদৃত হতো। একইভাবে এই যে ‘বেশ্যা’ শব্দ বলে গালি দেওয়া হচ্ছে সেখানেও তার বিপরীত কোনো পুরুষবাচক শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। দেহকেন্দ্রিক নারীর বহুগামিতাকে বেশ্যা বা ছিনাল বলে গালি দেওয়া হলেও পুরুষকে সেভাবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে না। সমাজে অর্থনৈতিক কারণে কর্তৃত্ব পুরুষের হাতে থাকায় নারীকে কেনাবেচার প্রচলন তাদের হাত দিয়েই প্রসারিত হয় এবং এই ক্ষমতার জন্যই নারীকে নানাভাবে প্রান্তিকীকরণ করা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু নারীকে সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে এবং এর মধ্যে নারীর যৌনতার একটি বিনিময়মূল্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে জন্য তাকে লক্ষ্য করেই এই গালির উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি একটু বিপরীত বিষয় লক্ষ করি তাহলে গালি দেওয়ার সঙ্গে ক্ষমতাকাঠামোর সম্পর্কটা আরও ভালো করে দেখতে পাই। যদি কোনো যৌনসক্ষম পুরুষকে ‘নপুংসক’ বলে গালি দেওয়া হয় তাহলে এই ছেলের জন্য এটি একটি চূড়ান্ত অপমান। যদিও কারও যৌন অক্ষমতা একটি বিশেষ শারীরিক সমস্যা হওয়ায় এটি গালি অর্থে বিবেচ্য হওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। কিন্তু কোনো ছেলেকে এটি বলা মানে তাকে শেষ অপমানটাই করা বোঝায়। এ কথায় শোনার পর যে কোনো পুরুষেরাই খুবই তীব্র ও শক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এই প্রতিক্রিয়া শুধু যৌনক্রিয়ার শক্তিমত্তার কারণে আসে তা নয়, এটা হলো সমাজের প্রিভিলেজড পুরুষের ক্ষমতা। যে কারণে সে মনে করেই যে এই গালিটা এটা কোনোভাবেই তাকে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বিপরীতে আমরা দেখি যে, হাজার হাজার শব্দ চয়ন করে নারীকে গালি দেওয়া হচ্ছে রোজ। এবং দীর্ঘকাল ধরে নারীদের আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে রেখে এসব গালিকে কাঠামোবদ্ধ করে সমাজে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি।

পুরুষের জন্য কোনো সতীত্বের ধারণা নেই!
পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষতন্ত্র নারীর ওপরে যে মহার্ঘ্য চাপিয়ে দিয়েছে সেটির নাম সতীত্ব। নারীকে পুরাণে সৎ হিসেবে দেখতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘সতী’ নারী। মহাভারতের দ্রৌপদী আর রামায়ণের সীতা। এদের সতী-সাধ্বী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। রামায়ণে সীতার সঙ্গে বনবাসে যাওয়া রাম কিংবা তার সহোদর লক্ষণকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়নি। দিতে হয়েছে সীতাকে। মধ্যযুগের স্বামীরা যখন যুদ্ধে বা বাণিজ্যে যেত তখন তারা স্ত্রীকে কোমরে চেস্টিটি বেল্ট পরিয়ে যেত যাতে তার সতীত্ব বহাল থাকে। এই পরীক্ষার কারণই ছিল স্বামীর বাইরে আর কোনো পুরুষের সঙ্গে সীতার বা ওইসব স্ত্রীর যৌন সম্পর্কে নিয়ে নিশ্চিত হওয়া। বিবাহিত নারীর জন্য সতীত্বের ধারণা ছাড়াও কুমারী নারীদের ক্ষেত্রেও এই সতীত্বের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে অক্ষত যোনি হিসেবে। একইভাবে কোনো নারী যদি বিধবাও হয়ে থাকে তাহলে তার ওপরেও যৌন আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে ইতিহাসে নারীর ওপর সতীত্ব চাপানো হয়েছে পুরুষের ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। এর কারণ হচ্ছে নারীকে দেখার যৌন দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষের একাধিক যৌন সম্পর্ককে সমাজে দেখা হয়েছে নারীর ক্ষেত্রে তা ছিল না ফলে বংশ বা পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে একমাত্র নারীর সতীত্ব প্রমাণ করাটাই মুখ্য হিসেবে বিবেচ্য হয়েছে; পুরুষের নয়।

প্রমীলা ক্রিকেট দল বা নারী ফুটবল দল!
যে সময়ে এসে আমাদের বৈষম্যমূলক ভাষার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার কথা সেই সময়ে আমরা খুব নিত্য নতুন লিঙ্গ নির্দেশক শব্দ তৈরি করেই চলছি। তার উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ হলো খেলোয়াড়দের নারী বা পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে খেলাধুলা পুরোপুরিই একটি শারীরিক ক্রিয়া হলেও নারীদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেহেতু এটি একটি শক্তিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় ফলে নারীকে পুরুষের চেয়ে দুর্বল হিসেবে ভাবার যে মানসিকতা কাজ করে সেখান থেকেই এভাবে তাদের চিহ্নিত করা হয়। আমাদের পূর্ব থেকে কাঠামোবদ্ধ মানসিক চিন্তায় যেহেতু কাজ করে যে নারীরা অধঃস্তিত বা নারীরা পুরুষের মতো ভারী কাজ করতে পারবে না, সে জন্য ক্রিকেট বা ফুটবল একটি পরিশ্রমের খেলা হওয়ার কারণে তাদের আগে ‘প্রমীলা’ শব্দ জুড়ে দিই। এতে করে দর্শকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি ধারণা দিয়ে দেওয়া হয় যে খেলাটিতে পুরুষ প্রাধান্যের একটি ব্যাপার রয়েছে। নতুন করে এসব খেলাধুলায় নারীকে এভাবে সিগনিফাইং করার আগেও এই সমাজে নারীদের জন্য যেসব খেলাধুলার প্রচলন ছিল, সেগুলোও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমাদের স্কুল-কলেজে ছেলেরা যেখানে হাইজাম্প, লংজাম্প প্রতিযোগিতা হতো, সেখানে মেয়েদের জন্য চালু ছিল বালিশ খেলা, চেয়ার দখল, কানামাছি এই জাতীয় খেলাগুলো আক্ষরিক অর্থেই নারীর দুর্বলতাগুলোকে প্রতিফলিত করে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি যে একটি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা তার ফারাকটা ধরা পড়বে যদি আমরা উদাহরণটা এভাবেই দিই যে, যে দুর্বলতার কারণে মেয়েদের ফুটবল দলকে প্রমীলা বলা হচ্ছে এই দুর্বলতা পুরুষ দলেরও হতে পারে। উন্নত দেশের এগিয়ে থাকা কোনো নারী ফুটবল দলের সঙ্গে যদি আমাদের পুরুষদের খেলতে দেওয়া হয় তাহলে এরাও তাদের কাছে দুর্বল হিসেবে হারতে পারে অনায়াসেই। ফলে যে শক্তিমত্তা দিয়ে নারীকে মাপা হচ্ছে এটি পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

পূর্বপুরুষ হলেও পূর্বনারী নেই!

ঐতিহাসিকভাবে পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে প্রজাতি রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে নারীরা। অথচ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ধারণা হলো আমরা পূর্বপুরুষের বংশধর। এই যে ‘পূর্ব পুরুষ’ বলা হচ্ছে এটিও নারীর ওপরে ভাষার রাজনীতি যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে নারীকে অপসারণের মাধ্যমে। সমাজে যখন থেকে উৎপাদনের মালিকানা পুরুষের হাতে নিহিত হয়েছে এবং তাকে বংশের পরিচয় নির্ধারণের জন্য গৃহবন্দি করা হয়েছে তখন থেকে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। তখন থেকেই সমাজে ‘ভার্যা’ শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘পুত্রার্ত্রে ক্রিয়তে ভার্যা’। অর্থাৎ পুত্রের জন্য স্ত্রীকে গ্রহণ করার কথা বলে হচ্ছে সেদিক থেকে স্ত্রী হলো সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মাত্র।

ভাষার বিভেদ রেখা ও জেন্ডার স্টেরিওটাইপিং
সমাজে ভাষার বিভেদের ফলে জেন্ডার স্টেরিওটাইপিং জন্ম হয়েছে। আমরা যখন ‘স্যার’ এবং ‘ম্যাডাম’ এই শব্দ দুটি উচ্চারণ করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই নারী ও পুরুষকে আলাদা করি। ভাষা আমাদের স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ব্যক্তিটা কে হচ্ছেন। এই স্টেরিওটাইপিংয়ের বিষয়টি আমাদের প্রতিটি নারী ও পুরুষবাচকতা বোঝাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে আমরা প্রতিটি শব্দ ব্যবহারে বুঝিয়ে দিই কে ছেলে হয়ে বড় হচ্ছে আর কে মেয়ে হয়ে বড় হচ্ছে। এমনকি নামের সঙ্গে মি. এবং মিসেস. শব্দ ব্যবহারের যে প্রচলন লক্ষ করা যায়, সেখানেও শব্দ দিয়ে নারী ও পুরুষের পৃথকীকরণের বিষয়টি স্পষ্ট। মিসেস বললে একজন বিবাহিত নারীর যে আইডেন্টিটি ফুটে ওঠে সেটি মি. বলা শব্দের সঙ্গে তেমন পরিলক্ষিত হয় না। শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে এই পৃথকীকরণটাই ভাষার আধিপত্য বিস্তার।

 

ধর্ষিতা ও মিডিয়ার ধারাভাষ্য
পত্রিকায় ধর্ষণের শিরোনাম হয় এই রকম- পালাক্রমে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্ষণ, রাতভর ধর্ষণ, নির্জন স্থানে ধর্ষণ, একা পেয়ে ধর্ষণ, কিশোরী ধর্ষণ, তরুণী ধর্ষণ, যুবতী ধর্ষণ, কুমারী, সুন্দরী ধর্ষণ…যখন এক ধর্ষণ বোঝাতে শব্দের বিশেষণগত মাত্রা ভিন্ন ভিন্নভাবে বোঝানো হয় তখন কোন নারীকে কেবল ওই পুরুষই আর একা ধর্ষণ করে না বরং তাকে সেই সঙ্গে পুরো পুরুষতন্ত্র ধারা ধর্ষণ করার সুযোগ করে দেয় আরেক পুরুষতান্ত্রিক ভাষা, শব্দ ও মিডিয়া। যখন জোরপূর্বক ধর্ষণ বলা হয় তখন কিন্তু এটাই প্রতিভাত হয় যে নারীকে জোর করে ধর্ষণ করা যায়। যখন নির্জন স্থানে ধর্ষণ বলা হয়, তখন মনে করা হয় নির্জন স্থানে গেলেই নারী শ্বাপদ-সংকুল, তার সেখানে যাওয়া নিষেধ। যখন একা পেয়ে ধর্ষণ বলা হয় তখন বোঝায় নারীকে একা হলেই ধর্ষিত হতে হবে। সুন্দরী-যুবতী, কুমারী- এই শব্দগুলো তো এক কথায় ভাষাগত রাজনীতিতে ধর্ষণের জন্য টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। এখানে সংবাদ বা সাংবাদিক কী মনে করে লিখেছে সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো ব্যবহৃত শব্দ কি দ্যোতনা ছড়িয়েছে। এই যে সিগনিফায়ার সে কি সিগনিফাইং করছে। সে কী বোঝাচ্ছে এটাই আসল। প্রতিটা শব্দের ক্ষেত্রেই কিন্তু ধর্ষণ মাত্রাগত তারতম্য ছড়িয়েছে। এবং এর কোনোটাই ধর্ষিতার পক্ষে যায় না। বিষয়টা এমন যে, এক পুরুষ ধর্ষণ করে আনন্দ পায় আর আরেক পুরুষ ধর্ষণের খবর লিখে, খবর পড়ে বিবমিষায় ভোগে সুখ পায়। এই সুখ প্যাথলজিক্যাল রোগের মতো। প্যাথলজিক্যাল রোগ যেমন সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে, এটাও তেমনি। কোনো এক রাউজানের পুরুষ সুখ করলে তেঁতুলিয়ার আরেক পুরুষের মনে সেই সুখ ছড়িয়ে পড়ে। পুরুষাঙ্গের সুখের অনুভূতি বড়ই বিচিত্র। ভাষার রাজনীতি এমনই যে সে একজন ধর্ষিত নারীকেও অপদস্থ করে।

শব্দ সন্ত্রাস ও বদলে যাওয়া নারীর ভাষা

শব্দের ওপরে যে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য সেটি সেটি নিয়ে নারীবাদী চিন্তকেরা ব্যাপক সোচ্চার। বিশেষ করে উত্তরাধুনিক নারীবাদীরা নারীকে যে ভাষায় বয়ান করা হয় তারা সেটার পক্ষে। হেলেন সিসু, লুইস ইরিগারে আর জুলিয়া ক্রিস্টিভা নামের তিনজন নারীবাদী এই চিন্তার উদগাতা। যদিও আরেক চিন্তাবিদ জুডিথ বাটলার এই নারীর ওপর আরোপিত ভাষা ও তার ব্যবহার নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। এই চিন্তাবিদেরাই সর্বপ্রথম ভাষার রাজনীতিকে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন। তারা দেখান যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতাকাঠামো যেভাবে পুরুষের হাত ধরে এগিয়েছি, ঠিক সেভাবেই তারা নারীকে ভাষা দিয়ে বর্ণিত করেছে। তারা মনে করেন, পূর্বে লিখিত সব কয়টি গ্রন্থের পুনঃপাঠ করা দরকার এবং শব্দের ভেতর দিয়ে যেভাবে নারীকে খোলস বন্দি করা হয়েছে সেটা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এই বের হয়ে আসার কাজটা করার জন্য তারা নারীদের নিজস্ব একটি ভাষা অধিগ্রহণ করতে বলেন যা দিয়ে প্রতিটা শব্দ দ্বারা পুরুষের সমকক্ষতা তৈরি হতে পারে। তারা বলতে চান শব্দের দ্বারা শুধু যেভাবে নারীরে নিষ্ক্রিয়তাকে তুলে ধরা হয় একইভাবে সেটি দিয়ে পুরুষের দুর্বলতাকে প্রকাশ করতে হবে। প্রকাশ করতে হবে তাদের সক্রিয়তাকেও। তারা এই আলোচনা থেকে যে বিষয়টি চিহ্নিত করতে চান সেটি হলো শব্দের একটি নিরপেক্ষ বিভাজন অথবা উভয়মুখী বিভাজন। যা দিয়ে নারী-পুরুষ উভয়েই একটি সমতাসূচক ক্ষমতাকাঠামোতে বিরাজ থাকবে।

শব্দ সন্ত্রাসের বিপরীতে জেন্ডার নিরপেক্ষ ভাষা
ভাষার এই রাজনীতি নিয়ে বিস্তর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে এটি। শব্দ ব্যবহারের নিরপেক্ষতা। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা এই শুদ্ধি অভিযান চালু করেছে। ইনক্লুসিভ বা জেন্ডার বা নিরপেক্ষ শব্দ দিয়ে ইতিমধ্যে নারীর ওপরে ভাষার রাজনীতির বিরুদ্ধে একধরনের প্রচারণা কার্যকর হচ্ছে। সেখানে he এবং she শব্দের মাঝামাঝি বোঝাতে xe শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ দ্বারা ব্যবহৃত শব্দের ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে। এসব বিষয় এখন আমাদের দেশেও প্রচলিত হচ্ছে। পুলিশ ম্যান না বলে পুলিশ অফিসার বলা, চেয়ারম্যান না বলে চেয়ারপারসন বা সভা প্রধান ব্যবহার করার যথেষ্ট প্রচলন আমাদের সর্বক্ষেত্রে যেমন চালু হচ্ছে, তেমনি বিপরীত দিকে ঢালাওভাবে ব্যবহার করা ‘নগর পিতা’র মতো শব্দেরও। গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দের ব্যবহার ক্রমে বাড়লেও নারীকেন্দ্রিক শব্দ ব্যবহারের তির্যকতা কমেনি। খুব সমন্বিত পদ্ধতি দিয়ে যদি স্কুল থেকে এই লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দের ব্যবহার বন্ধ করার মতো উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে অন্তত আমরা শব্দের ব্যবহারের দ্বারা যথেষ্ট নিরপেক্ষতা তৈরি করতে পারব। যদিও মূলগতভাবে নারীর সঙ্গে পুরুষের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বগত জায়গায় সমতা তৈরি না হলে এই ভাষার রাজনীতির কাঠামো ভাঙা যাবে না, তবু এই নিরপেক্ষ ভাষার ব্যবহার আমাদের আশা দেখাতে পারে।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবন

নারীর জীবন : আলো ঝলমলে হোক সময়ের সব কটি ধাপ!

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮

দুপুরগুলো আর দুপুর থাকে না। বিকেল হয়ে যায়। বিকেলগুলো সন্ধেবেলায় গড়ায়। সন্ধেগুলো রাতে, মধ্যরাতে। শরীরের চামড়ায় ঢিল পড়ে, ভাঁজ পড়ে, কুঁচকে ওঠে। আমাদের বয়স বাড়ে। বয়স তুমি বাড়ো কেন? যৌবন- সে তো নিত্য চাওয়া। তবু বার্ধক্য আসে। মধ্যবয়সে পৌঁছেই আমরা বার্ধক্যের কথা ভাবতে শুরু করি। ফেলে রেখে যাওয়া যৌবনকে পিছু ফিরে দেখার চেষ্টা করি। আর কি শ্বাস ফেলি? দীর্ঘশ্বাস?
ঠিক কবে শেষ হয় যৌবন? এর কি কোনো ধরাবাধা নিয়মকানুন আছে? আছে কোনো দিনক্ষণ মাত্রা? এই দেশে এককালে প্রবাদ ছিল, নারী কুড়িতেই বুড়ি। কেন? মেয়ের বিয়ে হতো শৈশবে, সন্তান হতো কৈশোরে। আর সন্তান জন্মের পরই বদলে যেত তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। সে হয়ে উঠত মা। তার নারিত্ব, তার শরীর- মন সবকিছুই মাতৃত্বের আবহে তৈরি করত নতুন এক রূপে। সেই রূপে যৌবনের কোনো উপস্থিতি নেই। তাই সেই মা, সেই নারী কুড়িতেই বুড়ি।

আজ দিন পাল্টেছে। মেয়েরা বিয়েই করে পঁচিশ- ত্রিশে। সন্তান আসে তিরিশে বা তারও পরে। এখন কুড়িতেই বুড়ি ব্যাপারটা সেই জোর হারিয়ে সময়ের ধাপে আরেকটু এগিয়েছে। এখন হয়তো তিরিশে কি পঁয়ত্রিশে, অথবা চল্লিশে। নাগরিক জীবন হাতে গোনা সচেতন খুব অল্পসংখ্যক নারী ছাড়া অধিকাংশই ফুরিয়ে যেতে শুরু করে চল্লিশ পঁয়তাল্লিশেই। আধুনিক জীবন ব্যক্তি মানুষটিকে নবীন রাখতে পারে না। সেই সন্তান, সন্তানের স্কুল-কলেজের ডামাডোলে নারীর বার্ধক্য আসে দ্রুত, চল্লিশের পর প্রায় দ্রুতগামী গোড়ার পিঠে চেপে।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, যেখানে চল্লিশে পুরুষের যৌবন শুরু বলে ধরা হয়, সেখানে এই দেশে চল্লিশেই কেন ফুরিয়ে যেতে শুরু করে অধিকাংশ নারী?

মেয়েকে স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় লক্ষ করি মায়েদের। সন্তান জন্মের পর মেদবহুল ঢিলে শরীর, পোশাকে মনোযোগের অভাব, ঢিলেঢালা চলন, চুলে রুক্ষতা। কেন? সংসার সামলে, কেউ কেউ অফিস সামলে, সন্তান সামলে বেরিয়েছে। নিজের দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই আর। মুখে নেই সামান্য মেকাপ, ঠোঁট শুকিয়ে ধু ধু বালুচর। হুমায়ুন আজাদের কবিতা মনে পড়ে যায়-
‘বড়ো বেশি ক্লান্ত, সিঁড়ি ভেঙ্গে ওঠে থেমে থেমে
কয়েক ধাপের পরে জিরোয় রেলিং ধরে, কাঁপে পদতল
আঠারো তলার মতো বিবশতা দেহে আসে নেমে
পশ্চাৎ বক্ষ বাহু তলপেটে মাংসের আক্রমণে বিপন্ন বিহ্বল
বুঝতে পারে না তারা কোথা থেকে এলো এই স্তব্ধ ঘোলা ঢল।
কী যেন হারিয়ে গেছে, কী যেন অজ্ঞাতসারে হয়ে গেছে চুরি;
খোঁচা দেয় ভারি ত্বকে, কোথাও জাগে না তবু স্বল্পতম সাড়া…’
(কবিতা : স্ত্রীরা- হুমায়ুন আজাদ)

কবিতাটা পড়ি আর চোখের সামনে প্রতিদিন দেখে যাওয়া দৃশ্যাবলি ভাসে। ঢিলে পোশাক, পা টেনে হেঁটে আসা ক্লান্ত নারী, হাঁটুতে, পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, সংসারকর্মে, সন্তান লালনে নিয়ত ক্লান্ত! নিজের যত্ন নেওয়া মানে মাসে একবার পারলারে ভ্রু প্লাক আর সময় পেলে ফেসিয়াল। তারপর সন্তান বড় হয়ে যাচ্ছে এই অজুহাতে হালকা রঙের সুতি ঢিলে পোশাকে আরাম খোঁজার ইচ্ছে। কেন? মাঝে মাঝে আলাপ পরিচয়ের সূত্রে কারও কারও বয়স জেনে অবাক হয়ে যাই। কারও সাঁইত্রিশ- আটত্রিশ চল্লিশ কি বিয়াল্লিশ। তবু জীবনের ক্লান্তি আর সব ফুরোনো মুখ নিয়ে চলছে ফিরছে।

 

পৃথিবীর আর সব দেশেও মেয়েরা কি এমন? খেয়াল করলাম, বয়স যতই হানা দিক শরীরে- মনে, অন্যত্র মেয়েদের হাঁটাচলা- বসায় এই জড়তা, এই স্থবির ব্যাপারটা আসে অনেক দেরিতে। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও দৃঢ় পদক্ষেপে পথ চলে তারা। অধিকাংশই। শরীরের যে ব্যথা-বেদনা, তা অল্প বেশি সবখানেই ঘটে ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়ামের তারতম্যজনিত কারণে। কিন্তু মানসিক যে স্থবিরতা নারীকে দ্রুত এক জড়ভরতে পরিণত করে, তা মূলত এই উপমহাদেশেই, আর আমাদের দেশে তা খুব বেশি। আর যে নারী গৃহবধূ, তাদের মধ্যে এই ব্যাপারটা চলে আসে আরও আগে। যারা কর্মজীবী, ঘরে- বাইরে সমানতালে কাজ করে, বরং তাদের মধ্যে এই স্থবির জড়তার বিষয়টা আসে অনেক পরে, কারও কারও মধ্যে বার্ধক্যের আগে আসেও না।
বয়স কি তবে আসলে মনের বিষয়? হ্যাঁ, তাই। এই দেশে মেয়েদের শরীরের আগে মনের বয়স বাড়ে। আর শারীরিকভাবে সে যতটা না স্থবির নয়, সমাজ তার মনকে সময়ের আগেই সেই স্থবিরতা অর্জনের উৎসাহ দেয়, প্ররোচনা জোগায়। এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ও জড়িত।

এই সমাজে বিয়ের পর নারীকে একা হাতে সংসার সামলাতে হয়। গৃহকর্মে পুরুষ হাত দেয় না বললেই চলে। ফলে নিজের জন্য সময় বের করা কর্মজীবী বা গৃহিণী, যেকোনো নারীর জন্য বেশি কঠিন। এরপর সন্তান যখন জন্ম নেয়, তার জন্য নিজের সবটুকু ঢেলে দিতে হয় মাকে। এমনকি রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে চোখের নিচে স্থায়ী ডার্ক সার্কেল তৈরি হয় তার। সঙ্গে সন্তান জন্মপরবর্তী শারীরিক স্থূলতা তাকে বিষাদগ্রস্ত করে। কিন্তু নিজেকে সময় দেবার সুযোগ ও আগ্রহ কোনোটাই থাকে না তার। সন্তান জন্মের তিন মাস পর থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মা এক্সারসাইজ করতে পারে। পরিমিত ডায়েট, ব্যায়াম তাকে আবার একটা সুন্দর শারীরিক অবয়ব ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমি খুব কম মেয়েকেই দেখেছি সন্তানকে সময় দিয়ে নিজের জন্য সময় ম্যানেজ করে নিজের শরীরের যত্ন নিতে। ফলাফল বেঢপ শরীর আর মনের অবসাদ। যা তাকে ক্রমেই আরও হাল ছেড়ে দেওয়া মানসিকতার দিকে ঠেলে দেয়।

আমাদের নগরজীবনের অবকাঠামোগত সমস্যা নারী- পুরুষ শিশু সবার জন্যই শারীরিক স্থবিরতা, স্থূলতা ডেকে আনে। অন্যান্য দেশে রাস্তাঘাটে প্রচুর হাঁটাহাঁটির সুযোগ ও পরিস্থিতি থাকে। আমাদের জীবনে এই বিষয়টি অনুপস্থিত। ফলে হেঁটে পথচলার অভ্যাস মানুষের মধ্যে যে দৃঢ় সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ততা তৈরি করে, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। সারাক্ষণ রিকশা, ট্যাক্সি, গাড়িতে ওঠা শরীরগুলো সহজেই স্থূলতায় ভোগে। মেয়েরা আরও বেশি।
বয়স বাড়ছে মানেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলার প্রবণতা আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় এই সমাজ। যে মেয়েটি ফ্যাশনে স্টাইলে মেকাপে চলায় ভীষণ উজ্জ্বল ঝকমকে আর চটপটে ছিল, দুটি সন্তানের পর সেই মেয়েটিই মধ্য ত্রিশে আজ আটপৌরে ঢলে কামিজে, শুষ্ক মুখে জড়ভরত। কেন?

 

সন্তান জন্ম হয়েছে মানেই নিজের দিকে তাকানোর কিছু নেই আর এই ভ্রান্ত চিন্তা মেয়েদের মনের পরিসরকে আরও সংকুচিত করে। সন্তানকে সময় একটু কম দিয়ে নিজের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবলে সেই নারীকে বলা হয় স্বার্থপর মা। অথচ নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে সন্তানকে উজাড় করে ভালোবাসা যায় না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকে ম্লান রং, বেঢপ ডিজাইনের যে চল এই সমাজ চালু করেছে তা নারীর অবচেতনে গেড়ে গেছে যুগ যুগ ধরে। অথচ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও উজ্জ্বল রঙে, সুন্দরন মেকাপে সাজিয়ে তোলার মধ্যে বেঁচে থাকার সুতীব্র আনন্দ জেগে থাকে। পর্যাপ্ত ব্যায়াম, পুষ্টিকর ডায়েট, সুন্দর পোশাকে নিজেকে প্যাম্পার করার মধ্যেই যৌবনকে ধরে রাখা সম্ভব। শুধু কাজ নয়, শুধু সংসার নয়, শুধু স্বামী আর সন্তান নয়- নিজের জন্যও সময় দিতে হয়, সেই কথাটা কি ঠিকমতো জানে এদেশের মেয়েরা? নির্দিষ্ট সময়ে মেডিকেল চেকআপটাও খুব জরুরি।
পথচলা, ক্লান্ত বিবর্ণ নারী, সন্তানের হাত ধরে পথচলা মাকে দেখে ইচ্ছে করে ডেকে বলি, মেয়ে কেন তুমি শুধুই পাল্টাও? গময় তোমাকে এতটা পাল্টে দেয়? এত ঘন ঘন? বয়সের আগেই কেন আরও বেশি বয়সী হয়ে ওঠো তুমি? শরীর মনের পরিবর্তন কি এতই নিষ্ঠুর এতই কঠোর যে তুমি পাল্টে যাও দ্রুতবেগে? কে তবে পাল্টে দেয় তোমাকে? সে কি জরা? সে কি সময়? সে কি প্রকৃতি? নাকি স্রেফ এই সমাজ? এই রাষ্ট্রকাঠামো? এই পথঘাট? এই বাস্তবতা?

সময়তো বদলে দেয় প্রতিটা মানুষকেই। মেয়েরাই তবে কেন বদলে যাবে? কেন বদলাবে এত দ্রুত আর সময়ের আগেই? কারণ তার মন তো সে নিজে নিয়ন্ত্রণ করে না। নিয়ন্ত্রণ করে এই সমাজ। তাই এ দেশের মেয়ের দৈহিক মানসিক বিকাশ প্রকাশ বৃদ্ধির ধারায় তাকে নিয়ন্ত্রণ করে এই সমাজ। এটি অনুচিত। এটি ভুল। এটি একটা ভ্রান্ত চর্চা। এর থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে নিজেকেই। নিজের জন্য বাঁচা, নিজেকে ভালোবেসে বাঁচা- এটি যদি হয় জীবনের মন্ত্র তবে তো কেউই সময়ের আগে ফুরিয়ে যেতে পারে না। জীবনের শেষ অধ্যায়টি পর্যন্ত তীব্র জীবনবোধ আর আলো নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব। শুধু চাইতে হবে। বাঁচতে জানতে হবে। কারণ সবচেয়ে জরুরি হলো ভালো থাকা, আনন্দে থাকা। সেই তো জীবন। জীবন কি কখনো ফুরায়? জীবন তো প্রতিদিন শুরু হয় প্রতিটি সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে, ভোরের বাতাসের স্পর্শে। একে অনুভব করতে হয় নিজেকেই, নিজ হাতেই তো সাজাতে হয় নিজের একান্ত জীবন!

লেখাঃ শারমিন শামস্
ছবিঃ সংগৃহীত
০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রাসম্পাদকীয়

এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘সেক্স এডুকেশন’

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

বলছি আমাদের নানী-দাদীদের সময়কার কথা। আট-দশ বছর বয়সে বিয়ে, ১২-১৪বছর বয়সের মধ্যে কোলে সন্তান আর ত্রিশ না পেরুতেই নানী-দাদী! সে সময় নিয়ম করে ফি বছর গর্ভবতী হতেন তারা। অজানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ‘বংশের বাতি’ পৃথিবীতে আনার তাগিদের কারণে প্রত্যেক বছর সন্তান নেয়া ছিলো একরকম স্বাভাবিক ঘটনা।

এরপর সময় বদলালো। সরকার এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসায় সচেতন হলাম আমরা। এলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিপুল সহামার। ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই শ্লোগান থেকে আমরা চলে এলাম ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’-এই বিশ্বাসে। যে কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি বোধহয় এখন আর আমাদের মূল চিন্তার জায়গা নয়। মূল বিষয় দাঁড়াচ্ছে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সেটি। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি।

বিশ্বায়নের এই কালে জন্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষিত অনেক পদ্ধতি আজকাল বাজারে সয়লাভ। অথচ আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো নারী কেন্দ্রিক। অথচ পুরুষসঙ্গীটিও জন্মনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর এসব পদ্ধতি নারীর প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর। এতে নানা রকম শারীরিক ঝুঁকি থেকে নারী রেহাই পেতে পারে। অথচ কেবল পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্ম অহমের কারণে অনেক পুরুষই সে পথে হাটেন না। আমরা মনে করি সময় এসেছে পরিবর্তিত হবার। সংসারের অন্যান্য কজের মতো জন্মনিয়ন্ত্রণেরও স্বামী-স্ত্রী রাখতে পারে সমান অংশগ্রহণ।
আজকাল প্রচার মিডিয়া থেকে শুরু করে মাঠে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যলয়ের দুয়ারে দুয়ারে দেখি আইপিল নিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় হয়তো নেই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ার আইপিল ব্যবহার হচ্ছে সেটি নিয়ে সচেতন হবার দরকার অবশ্যই আছে। পরিসংখ্যান বলছে, অরক্ষিত সঙ্গমের পর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল এখন বেশ ভালো মাত্রায় ভোক্তাপ্রিয়তা পেয়েছে। সব থেকে বেশি ক্রেতা মেয়েরা, যাদের বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে। গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই এই পিল সমান জনপ্রিয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে যে কেউ এই পিল সংগ্রহ করতে পারে। অথচ এই ওষধ বহু ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও এই মেয়েদের সচেতন করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ গর্ভপাত করানো হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ করানো হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় পুরোটাই হয় উন্নয়নশীল দেশে। এর ফলে অন্তত ৭৮ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং আরও বিপুলসংখ্যক নারী স্থায়ী কিছু না কিছু সমস্যা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে বাধ্য হয়।

আমি বলব এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘সেক্স এডুকেশন’। জরুরি জন্মনিরোধক পিলের ওপর ভরসা করে অবাধ সঙ্গমের আনন্দে গা ভাসানোর আগে একটু ধৈর্য ধরে অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জেনে রাখা অবশ্যই দরকার, এই পিল গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে। তবে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস সি-জাতীয় ভয়ংকর রোগগুলোর আশঙ্কার কথা মনে রাখতে হবে সচেতন ভাবে!
সবার জন্য শুভকামনা।

লেখা : সাবিনা ইয়াসমীন

আরও লেখা : 

প্রথম সেক্সের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট- ১

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-২

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-৩

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়ঘুরে বেড়াইবিদেশ

এলোমেলো মনে নেপালে

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

নাম তার হিমালয় কন্যা। পরতে পরতে যার ছবির মতো সৌন্দর্য। আছে পাহাড় আর সাগরের অপূর্ব সন্মিলন। হ্যাঁ, নেপালের কথাই বলছি! হিমালয়ের দেশ নেপাল ঘুরে এসে লিখেছেন ইমরান মাহফুজ

পাখি হয়ে ঘোরাই আমার স্বভাব। একটু ফুরসত পেলেই হাওয়া। গ্রাম কিংবা শহর কোথাও নেই দ্বিধা। সাধ্যের মধ্যে করি জীবনানন্দ ফেরি। অনুপ্রেরণা পাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মানস ভ্রমণ’ কবিতায় : ইচ্ছে তো হয় সারাটা জীবন/ এই পৃথিবীকে/ এফোঁড়-ওফোঁড় করে যাই দুই/ পায়ে হেঁটে হেঁটে অথবা বিমানে’। আমিও গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে বাংলাদেশ বিমানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যেতে যেতে একলা পথে’ চলি। আর মনে করি কবিগুরুর ঘুরে বেড়ানোর দারুণ নেশাকে। প্রচুর ভ্রমণ করেছেন বিশ্বকবি। ট্রেন, জাহাজ, নৌকা, পালকি কিংবা গরুর গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশে-বিদেশে।

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে সহজলতা বিদেশ বলতে প্রথমেই যে নামগুলো মনে আসে ভারত, নেপাল ও ভুটান। নেপাল তাদের মধ্যে অন্যতম। আমি বেছে নিলাম নেপালকে। তা ছাড়া খরচও আয়ত্তের মধ্যে। যাকে বলে সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ। কবি আশিক রেজার আন্তরিক সহযোগে জীবনের প্রথম বিদেশ সফর নেপাল!

স্বাগত ত্রিভুবন

এয়ারপোর্টে চেকিং শেষে প্লেনে উঠি। প্লেন ঠিক সময় থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়ল। একজন যাত্রী আসতে দেরি আসায় অপেক্ষায় কিছুটা বিলম্ব। ঢাকা থেকে আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণ পর জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখলাম সবকিছু ছবির মতো সুন্দর। দেখতে দেখতে কাঠমান্ডুর কাছাকাছি এসে বিমানের ক্যাপ্টেন জানাল, নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে জ্যাম আছে। বাধ্য হয়ে আরও প্রায় এক ঘণ্টা আকাশেই! ঢাকা থেকে যখন উড়াল দিই, তখন জানানো হয় যাত্রার সময় থেকে আনুমানিক দেড় ঘণ্টা। এখন তা দাঁড়াল প্রায় আড়াই ঘণ্টা। অবশেষে পাখির মতো উড়ে নামলাম ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে। ভেতরে প্রবেশ করতেই আশিক ভাই অভ্যর্থনা জানায়। ভিসা-সংক্রান্ত কাজ সেরে বিমানবন্দর যখন বাইরে আসি, তখন সূর্য হেলে পড়ছে। হালকা ঠান্ডাও অনুভব করলাম। গরম পোশাক পরে গাড়িতে উঠি। উদ্দেশ্য কাঠমান্ডুর থামেলসস্থ সার্ক সচিবালয়। ট্যাক্সিতে দুজনই বেশ আনন্দে দেশের খোঁজখবর নিতে নিতেই অফিসে আসি। সেই সঙ্গে জানলাম, নেপালের সংস্কৃতিতে কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথমে প্রার্থনার ভঙ্গিতে হাতজোড় করে নমস্তে বা নমস্কার বলতে হয়। যদি কোনো প্রবীণকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে হয়- তবে নারীর ক্ষেত্রে দিদি এবং পুরুষের ক্ষেত্রে দাই সম্বোধন করতে হবে। নেপালে পায়ে ধরে সম্মান দেখানোর কোনো রীতি নেই।

নাগরকোট

বেলা প্রায় তখন চারটা। দুপুরের খাবার খেলাম। মিনাশিক ভাবি খুবই চমৎকার রান্না করেন। এমন ভোজে প্রায় সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। বেলা গড়াতে আমরা প্রস্তুতি নিলাম পহেলা বৈশাখ উৎসব অংশগ্রহণ করতে নাগরকোটে যাওয়ার। বলে রাখা ভালো, আমাদের দেশের বাংলা সনের সঙ্গেই তাদের দেশেরও মিল আছে। ফলে আনন্দ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সে জন্য আমরা যথারীতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নাগরকোটের উদ্দেশে মাইক্রোতে রওনা হলাম। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত স্থাপনা দেখতে দেখতে কাঠমান্ডু শহর পার হতেই সূর্য সেদিনের মতো বিদায় জানাল। আমরা হাওয়ায় উড়ছি। মাঝে মাঝে রাস্তার অবস্থা দেখে চক্ষু চড়কগাছ। নাগরকোট যাওয়ার পুরোটা পথ পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে আর সবুজে ঘেরা। মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। কিছুটা মিল পেলাম আমাদের বান্দরবানের নীলগিরি যাওয়ার পথটার সঙ্গে। সারি সারি উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে আঁকাবাঁকা পথ। এক পাশে বাড়ি অন্য পাশে পাহাড় এমন দৃশ্যে চমৎকার লাগছিল। দারুণ এই পারস্পরিক মিল, পাহাড়, পথ আর লেকের মাঝখানে একবার হোটেলে থামল কিছুক্ষণের জন্য। এভাবে গাড়ি চলল প্রায় চার ঘণ্টা। কিন্তু তবু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলাম না। নির্ধারিত হোটেল খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। অবশেষে দুই জওয়ানের সহযোগিতায় ‘নাগরকোট হিলসাইড ভিলেজ রিসোর্টে’ এলাম। আর হোটেল দেখেই আমাদের কী আনন্দ! হোটেল থেকে নিচে তাকাতেই পাহাড়ের মাঝে মাঝে অচেনা অনেক দারুণ গাছের সমাহার। পুরো জায়গাটা মনটাকে মাতোয়ারা করে রাখল। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনন্য।

ইতিমধ্যে আমরা অনেক উচ্চতায় উঠে গেছি। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জানলাম প্রায় ২৮০০ ফিট ওপরে! এখানকার হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরের নাম প্যানারোমা। হিমালয়ের আরও কিছু চূড়া যেমন মানাস্লু, গণেশ হিমেল, লেঙ্গান, চোবা ভাম্রি গৌরীশঙ্কর নাগরকোট থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আমরা ভোররাতেই গাড়িতে করে চলে গেলাম পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। সূর্য ওঠার সময় অপার্থিব সোনালি আভা যখন প্রকৃতি আর মন ছুঁয়ে যায়, তখন সত্যিই মনে প্রশ্ন ওঠে- যাপিত জীবনে এত এত হিংসা-বিদ্বেষ কেন করি!

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক

এক রাত দুই দিন পর- বাসায় এসে ভোর ছয়টার আগেই চলে গেলাম রত্ন পার্ক হয়ে থামেলস্থ ট্যুরিস্ট বাস স্পটে। বাস ছাড়বে সাড়ে ছয়টায়। আমরা যাব নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে। সেখানে দেখা মিলবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং এক শিংবিশিষ্ট বিরল প্রজাতির গন্ডারসহ নানান ধরনের প্রাণী। উদ্ভূত এক রোমান্সে সরাসরি দেখা যাবে- ৩৬০ বর্গমাইলের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক। এটি ত্রিশূলী নদীকে বাঁদিকে রেখে সবুজ পাহাড়ের শরীর বেয়ে কাঠমান্ডু থেকে নামতে নামতে প্রায় মাটির কাছে আসছে। নেপালের প্রথম এই ন্যাশনাল পার্ক ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। যেতে যেতে প্রায় দুপুর একটা বেজে গেল। সবুজ অরণ্যে বাসস্টপেজ। যেন একখ- বাংলাদেশ। এখানকার একটা বিশেষত্ব হচ্ছে মূল শহরের বাইরে যানবাহন রাখার স্থান আর এতে পর্যটকদের গাড়ির শব্দে কোনোরকম বিরক্তি আসে না। তা ছাড়া নেপালে তো গাড়ির হর্ন দেওয়ার নিয়মও নেই। আমরা হোটেলের গাড়ি করে হাওয়ায় নাচতে নাচতে চলে গেলাম চিতওয়ানের বুকে। বিকেলে লেকের ধারে ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ প্রাণীর পরিচয় দিল গাইড। এখানকার প্রতিটি বিষয় এমন গোছানো যা আমাদের গ্রহণীয়-কীভাবে সবুজ বনায়নসহ প্রকৃত সৌন্দর্যকে ইকো ট্যুরিজমের আওতায় আনা যায়। সত্যি- ভাবনার। চারদিক মুগ্ধকর সবুজ, আর তা ছাড়া নেপাল মানেই একধরনের রহস্যময়তা। যেভাবে মিহি কুয়াশার চাদর এখানকার মখমলে পাহাড়ের শরীরকে কখনো আড়ালে, কখনো গোপনে, কখনো চোখের সামনে এনে ফেলে, ঠিক সেই রহস্যময়তাই যেন ছেয়ে আছে সারা কুমারী মাতার শরীরজুড়ে!

পরদিন সকাল আটটায় বের হলাম। ‘জঙ্গলের হৃদয়ে’ হাতি আর হাতি- আর এত হাতির কথা শুনে চমকে ওঠার কিছু নেই। কারণ, এই জঙ্গলের একমাত্র বাহন এই হাতিই। হাতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেছে গাইডের আলোচনায়। এবার শুরু আশিক ভাইয়ের পরিবারসহ ‘জঙ্গল সাফারি’। হাতির পিঠে ঘন জঙ্গলে দুই ঘণ্টার অ্যাডভেঞ্চার। চিতওয়ানের জঙ্গলে মাছির মতো ভিড় গন্ডার আর হরিণের। গন্ডা কয়েক গুন্ডা টাইপের গন্ডার আর শয়ের কাছাকাছি হরিণের দেখা মিলল। ওখানে পরিচয় হলো এক ভারতীয় পরিবারের সঙ্গে। বেশ মজায় সময়টা কাটল। ‘রাপ্তি’ নদীতে গোসল করলাম জলের অনুভবে। দুপুরের খাবার বেশ উপভোগ্য মনেই খেলাম।
তারপর ক্যানো রাইডিং। ‘রাপ্তি’ নদীতে জঙ্গলের গা ঘেঁষে ক্যানোয় চরে বয়ে যাওয়া। জঙ্গলে পাখি দেখার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। বহু প্রজাতির পাখির মিলনমেলা এই অঞ্চলে। মাঝে মাঝে মিলে দেখা যায় কুমিরের। সেই সঙ্গে চিতওয়ানেই মিলেছে পৃথিবীর অন্যতম হাতি প্রজননকেন্দ্র বলে রাখা ভালো পৃথিবীতে হাতি প্রজননকেন্দ্র একেবারেই হাতে গোনা।

এমন মজার দৃশ্যে চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে থেকে যেতে ইচ্ছা করবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। উল্লেখ্য যে, এই পার্কটি হলো পর্যটকদের জন্য নেপালের প্রধান আকর্ষণ এবং তা ইউনেস্কোর বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত। ২০০৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, চিতওয়ানে দেখা যায় ৪০৮টি গন্ডার।

ভক্তপুর
চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক থেকে এসে গেলাম প্রাচীন রাজাদের আবাসস্থল ভক্তপুর ও পশুপতিনাথ মন্দির। একসময়ের নেপালে রাজধানী ছিল ভক্তপুর। যেটি বর্তমানে কাঠমান্ডু থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে প্রবেশমূল্য আমাদের কাছ থেকে রাখা হয়েছে জনপ্রতি ৫০০ নেপালি রুপি। আর নেপালিদের ইতিহাসে আগ্রহী করতে কোনো মূল্য নেওয়া হয় না। যে চিন্তাটি চাইলে বাংলাদেশ গ্রহণ করতে পারে।

এই শহরটি মধ্যযুগীয় শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জাদুঘর বলে পরিচিত। শহরটিতে বৌদ্ধ মন্দির ও হিন্দু মন্দিরের অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। ৫৫টি জানালা সমৃদ্ধ রাজপ্রাসাদ ও তার অপূর্ব কারুকাজ নেপালের ঐতিহ্য বহন করে। বেশ কিছু ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে এখানে। প্রাচীন কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রার ছোঁয়াও এখানে পাওয়া যায়। এখানকার স্থানীয় লোকজন এখনো কাঠমান্ডু ভ্যালির অনেক আবাদি জমিতে ফসল ফলায়। এর চিহ্ন মেলে স্থানীয় লোকজনের বাড়ির জানালায় ঝুলে থাকা খড়ের ব্যবহারে। আমরা দেখার সঙ্গে এসবের কিছু ছবি নিলাম অনুমতি নিয়ে। দায়িত্বে থাকা লোকজন দর্শনার্থীদের আন্তরিক সহযোগে সব সময় থাকে, যা বলার মতো। তবে কেনাকাটায় একটু খেয়াল রাখতে হবে!

পশুপতিনাথ মন্দির
১৮ এপ্রিল এখান থেকে যোগ হলো আমাদের যাত্রায় কবি জামসেদ ওয়াজেদ। গেলাম পশুপতিনাথ মন্দিরে। কাঠমান্ডু শহরের পূর্বদিকে বাগমতি নদীর তীরে মন্দিরটি অবস্থিত। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত এই শিবমন্দির ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি এই দেশের প্রাচীনতম হিন্দু মন্দির। বলা হয় হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা শিবের আরেক নাম পশুপতি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিভিন্ন পৌরাণিক প্রচলিত কাহিনিতে বলা হয়েছে একবার শিব ও পার্বতী কাঠমান্ডু উপত্যকায় বাগমতী নদীর তীরে বেড়াতে আসেন। নদী ও বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে শিব পার্বতী মুগ্ধ হয়ে নিজেদের হরিণে পরিণত করে এই এলাকায় ঘুরে বেড়ানো শুরু করলেন। কিছুদিন পরই দেবতা ও মানুষেরা শিবকে খুঁজতে শুরু করলেন। বহু পরে দেবতারা শিবকে খুঁজে পেলেও তিনি এই স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত শিব ঘোষণা করলেন যেহেতু তিনি বাগমতীর তীরে হরিণ বেশে ঘুরেছেন সেহেতু তিনি এখানে পশুপতিনাথ বা পশুদের অধিকর্তা বলে পরিচিত হবেন। আর তাই হলো।

দেখা যায় পশুপতিনাথের মূল মন্দিরটি নেপালের প্যাগোডা রীতিতে তৈরি। কৌণিক গঠন, কাঠের কারুকার্য এসবই নেপালের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতির অংশ। মন্দিরটি চারকোনা। এক স্তরবিশিষ্ট ভিত্তিভূমির ওপর স্থাপিত মন্দিরটি ভূমি থেকে ২৩.৬ মিটার উঁচু। মন্দিরটির সারা গায়ে সোনা ও রুপার কারুকাজ করা। হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি খোদাই করা হয়েছে মন্দিরের দেয়ালে। দুই স্তরবিশিষ্ট ছাদ তামার তৈরি, তাতে সোনার প্রলেপ দেওয়া। মন্দিরটির চারটি প্রধান দরজা। চারটি দরজাই রুপা দিয়ে মোড়া। প্রতিটি দরজার দুই পাশে সোনা দিয়ে প্রধান দেব-দেবীদের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে একটি পবিত্র কক্ষ। এখানে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। এটি এক মিটার দীর্ঘ ও চতুর্মুখ। এই চারটি মুখ শিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত চার দেব বিষ্ণু, সূর্য, পার্বতী ও গণেশের। মন্দিরের চূড়া সোনার তৈরি। পশ্চিম দরজার সামনে রয়েছে একটি বিশাল ষাঁড়ের মূর্তি যার নাম নন্দী। নন্দী মূর্তিটি ব্রোঞ্জের তৈরি সোনার প্রলেপ দেওয়া। মূল শিবলিঙ্গটি কালো পাথরে তৈরি ছয় ফুট দীর্ঘ। মন্দিরের ছাদের নিচের দেয়ালে সপ্তদশ শতাব্দীতে কাঠের অপূর্ব কারুকার্যের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শিব, পার্বতী, গণেশ, কুমার কার্তিক এবং যোগিনীদের মূর্তি। এ ছাড়া রয়েছে হনুমান, রাম, সীতা, লক্ষ্মণসহ রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্র ও পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি ও দেব-দেবীর ছবি।

মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বাগমতী নদী- হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই পবিত্র নদী। পুণ্যার্থীরা এই নদীতে স্নন করেন। দেখলাম- এ জন্য নদীর দুই তীরে রয়েছে অনেক ঘাট। লেখা আছে- এর মধ্যে উনিশ শতকে প্রতিষ্ঠিত আর্য ঘাট বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ ঘাটে শুধু নেপালের রাজপরিবারের সদস্যদের মরদেহ দাহ করা হতো। নদীর তীরে গেলেই দেখা যায় সারি সারি চিতা জ্বলছে। গৌরী ঘাট হলো নারীদের স্নানের জন্য বহুল ব্যবহৃত ঘাট। মন্দির তার অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক দেখতে আসছে। মানুষ আর মানুষ যেন মিলনোৎসব!

পাঠান দরবার স্কয়ার

এখান থেকে কবি জামসেদ ওয়াজেদসহ দরবার স্কয়ারে। নেপালের একটি খুবই বিখ্যাত স্থান দরবার স্কয়ার। এটি এখানকার তিনটি দরবার চত্বরের মধ্যে অন্যতম। এই জনপ্রিয় চত্বরে, এই অঞ্চলের শাসনকারী শাহ এবং মল্ল রাজাদের প্রাসাদগুলো রয়েছে। কাঠমান্ডু দরবার চত্বরটি হনুমান ধোঁকা প্রাসাদ ভবনেরও একটি স্থল। এটি ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত নেপালের রাজাদের রাজকীয় বাসভবন ছিল। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো এই জায়গায় অনুষ্ঠিত হতো এবং সেই ঐতিহ্য আজও চলে আসছে। বিরাজমান সংস্কৃতিতে কিছুটা ভারতের কালচার প্রবেশ করলেও মূল নেপালি কালচার প্রশ্নের জন্ম দেয়। বিস্তারিত পরের লেখায়। তাহলে দেখতে দেখতে এখন বলা যাক কাঠামো নিয়ে-
প্রাসাদটির সমগ্র কাঠামোটি বিস্তীর্ণভাবে কাঠের খোদাইকার্যের সঙ্গে খুবই সুন্দরভাবে সুসজ্জিত। সেই সঙ্গে এখানে সুশোভিত প্যানেল ও জানালা রয়েছে। প্রাসাদটি মহেন্দ্র মিউজিয়াম ও রাজা ত্রিভুবন মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত। ভ্রমণার্থীরা এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে অবস্থিত রাষ্ট্র কক্ষগুলোও পরিদর্শন করার সুযোগ আছে।
কাঠমান্ডু দরবার চত্বরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত কুমারী চৌক হলো একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি নেপালের এক অন্যতম রহস্যময় আকর্ষণ বলে মনে করা হয়। এখানে একটি পিছল পিঞ্জর রয়েছে যেটিতে প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন ঐতিহ্যগত চর্চার মনোনয়নের মাধ্যমে একজন যুবতী মেয়েকে রাখা হতো। মেয়েটিকে, জনপ্রিয় হিন্দু মাতৃ দেবী, দেবী দুর্গার মনুষ্য অবতার বলে মনে করা হতো এবং ধর্মীয় উৎসবের সময় পূজা করা হতো। এখানে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাসাদ ও মন্দির বেশ কয়েকবার পুনঃসংস্কার করা হয়েছে, যেহেতু তাদের মধ্যে অনেকগুলো অবহেলার দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর কাজ দ্রুত করছে এমনটাই দেখতে পেলাম।

ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ থামেল
১৮ এপ্রিল নেপালের কথাসাহিত্যিক কুমার শ্রেষ্ঠার থার্ড আই থিয়েটারের আমন্ত্রণে থামেলে আসি। কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র বলা হয় থামেলকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক স্থাপনা ছাড়াও আধুনিকতার ছোঁয়া তো আছেই। ঘুরে ঘুরে আমি আর জামসেদ দেখলাম- রয়েছে স্বল্পমূল্যের হোটেল, রেস্টহাউস ও পানশালা। থামেল অনেকটা বাংলার চকবাজারের মতো। এখানে প্রয়োজনীয় সব জিনিসই কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। এই এলাকার অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট থাইল্যান্ড আর চীনা পর্যটকদের পদচারণায় মুখর।

এই বাজারে পুরুষ বিক্রেতার চেয়ে নারী বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। প্রায় দোকান মালিকের বাড়ি ভারতে আর কর্মচারী নেপালি। এভাবে ভারতের আশ্রয়ে নেপাল! এই বাজার থেকে হেঁটে আসি নারায়ণহিটি প্যালেস জাদুঘরে। থামেল থেকে দশ মিনিটের মতো হাঁটা পথ হবে। মূলত এই জাদুঘর একসময় নেপালের রাজপ্রাসাদ ছিল। ১৯৬১ সালে রাজা মহেন্দ্র বিশাল এই রাজপ্রাসাদ সংস্কার করেন। নেপালের রাজকীয় সব কাজ, রাজপরিবারের আবাসন, অতিথিদের আবাসন সবই ছিল এই প্রাসাদে। প্রাসাদের দেয়ালে রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ছবি, বিভিন্ন কক্ষে তাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র, চেয়ার-টেবিল, খাট-আলমিরা সাজানো আছে এখানে। সঙ্গে আছে রেশমি কাপড়, গরম কাপড়, পর্বতারোহণের সরঞ্জাম, অ্যান্টিক, চিত্রকর্ম, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুরিস্ট-স্যুভেনির বা পর্যটন-স্মারক দোকানই বেশি। কথা বলে জানলাম, সন্ধ্যার পর এখানকার নাইট ক্লাবগুলো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। প্রায় সবাই নেপালের জনপ্রিয় মুমোমুমো খেতে ভুল করে না।

কিছু দোকানে ঢুকে আমরা জিনিসপত্র দেখি। কাঁসা-পিতলের বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, গান-বাজনার নানা সরঞ্জাম, চিত্রকর্ম, কাঠের মুখোশ, নেপালের ঐতিহ্যবাহী খুরপি (একধরনের ছুরি), পুঁতির মালাসহ বিভিন্ন গহনা, ট্যাপেস্ট্রি, নেপালের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা ও স্থানের ছবিসংবলিত বিভিন্ন স্মারক, ক্যালেন্ডার, শুভেচ্ছা কার্ডসহ পর্যটনের নানা স্মারক পণ্য দিয়ে সাজানো দোকানগুলো। এসব পণ্য কেনার জন্য দোকানগুলোয় পর্যটকের বেশ ভিড়ও লেগেই থাকে।

কায়সার লাইব্রেরিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ!
২১ এপ্রিল আসার আগের দিন থামেল হয়ে কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কায়সার লাইব্রেরির আঙিনায় গিয়েছিলাম। ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। কারণ, প্রবেশ নিষিদ্ধ! এই সময়ে কোনো লাইব্রেরিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ব্যাপারটা ভালো ঠেকে না। জানা যায়, কায়সার লাইব্রেরিতে কদিন আগেও বিদ্যার্থী আর দর্শনার্থীতে গমগম করত। বিদ্যার্থীদের আনাগোনা ছিল সেখানকার অমূল্য সংগ্রহের কারণে। আর দর্শনার্থীদের আগমন ছিল পুরো স্থাপনা আর সেখানকার বিশাল সংগ্রহের পুরাতাত্ত্বিক মূল্য ও সৌন্দর্যের কারণে। কিন্তু এখন সবই ধুলায় লুটাচ্ছে। যে ধ্বংসাবশেষটুকু দাঁড়িয়ে আছে, সেটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়- প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিলের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ১২০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক কায়সার লাইব্রেরি ভবনটি এখন সত্যিই ইতিহাস। এমন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার পেছনে নেপালের রানা রাজবংশের এক উত্তরাধিকারী কায়সার শমসেরের অবদান রয়েছে। ১৯০৮ সালে ইংল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে তিনি সেখানকার রাজভবন আর এর গ্রন্থাগারগুলোর প্রেমে পড়ে যান। দেশে ফিরে তিনি নিজ বাসভবনে গড়ে তোলেন গ্রন্থাগার। সেটিই আজকের কায়সার লাইব্রেরি। ২৮ হাজার বইয়ের সংগ্রহ আছে এখানে। এসবের মধ্যে বৌদ্ধমত, তান্ত্রিকতা আর জ্যোতিষশাস্ত্রের দুর্লভ বই, প্রাচীন পা-ুলিপি, এমনকি তালপাতায় লেখা পা-ুলিপিও আছে। আছে ১ হাজার ১০০ বছরের পুরোনো শুশ্রুতসংহিতা। প্রাচীন সংস্কৃত আয়ুর্বেদ-সংক্রান্ত এই সংগ্রহটি ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের তালিকাভুক্ত।

 

একসময় এখানে যাতায়াত করত এমন একজন বইপ্রেমী থেকে জানলাম, গ্রন্থাগার বলে সেখানে কেবল বইয়ের সমাহার তেমনটা কিন্তু নয়। সেখানে শিকার করা বিভিন্ন পশুর চামড়া আর মাথা, প্রাচীন মূর্তির সংগ্রহও দেখার মতো। ভবনের নির্মাণশৈলীও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ভূমিকম্প ধূলিসাৎ করে দিয়েছে সবটা। এখনো যে অবশিষ্টাংশ দাঁড়িয়ে আছে তাতে নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

সাহিত্য-সংস্কৃতি
নেপালের প্রচুর সংস্কৃতিমান মানুষ লেখালেখি করছেন। বিশেষ করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সামগ্রিক চালচিত্র বোঝা সম্ভব হবে। ১৯৬০-এর দশকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিপুল বৈচিত্র্য ও প্রাণসম্পদের মধ্যে নেপালি সাহিত্যের বিকাশ শুরু হয়। পাহাড়-পর্বত-উপত্যকা সমৃদ্ধ হিমালয় কন্যা, গৌতম বুদ্ধের দেশ নেপালের সাহিত্য দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেনি। দেশীয় গল্পগাথা এখনো মৌখিক কিংবদন্তিনির্ভর। তবে এর কিছু কিছু সাম্প্রতিক কালে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। পাশাপাশি নেপালি লেখকদের অনেকেই এখন ইংরেজিতে লিখছেন। ফলে আগের চেয়ে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে নেপালি সাহিত্য। বিশ্বসাহিত্যের আঙিনায় নিজেদের উপস্থিতি নেপালি লেখকদের এ প্রয়াস ক্রমেই বেগবান হচ্ছে। ইতিমধ্যে পড়েছি, লোকনাথ পাউদাল ও বালক কৃষ্ণের কবিতা। তাঁর কবিতার বাংলায় এমন : যে মানুষকে মানুষ ভাবে/ সে হলো শ্রেষ্ঠ মানুষ, আর মানুষই যে তার ভগবানকে দেখতে পায়, সে আসলে নিজেই ভগবান। কি মারাত্মক কথা! ভাবনায় দোল খায়।

বিদায় হিমালয়কন্যা
আমার ফ্লাইট ছিল ২১ এপ্রিল বেলা ১১টায়। আকাশের মন খারাপে তিনটায় উড়াল দিই। হাজার হাজার বছর ধরে তাবৎ দুনিয়ার মানুষকে অভিভূত করে রেখেছেন হিমালয়। হিমালয় হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা। হিমালয় পর্বত থেকে নেমে আসা নদীগুলোকেই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে নয়তো ভারত মহাসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ নদীর পানিই আসে হিমালয় পর্বতমালা বরফ গলে। সমগ্র পৃথিবী থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে ভিড় জমায়। মৌসুমি জলবায়ুর এই ছবির মতো সুন্দর এই দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে প্রচুর বৃষ্টি হয়ে থাকে, বাকি সময়টা সাধারণত থাকে শুষ্ক। অক্টোবর-নভেম্বরে নেপালের শুষ্ক মৌসুম এবং বছরের সেরা সময়। নেপাল এমন একটি দেশ, যেখানে একসঙ্গে পাওয়া যায় ছুটি উপভোগের সবকিছু।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
পার্শ্ব রচনারোদসীর পছন্দ

ভূমিকম্প হলে করণীয়

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

ভূমিকম্প এমন একধরনের দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস দেওয়া প্রায় অসম্ভব। আর তাই এর প্রলয়ঙ্করী থাবা থেকে রক্ষা পেতে সবসময় থাকতে হবে সচেতন আর মেনে চলতে হবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। মুহূর্তের সচেতনতাই পারে জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে।

ভূমিকম্প হলে করণীয়

• উঁচু ভবনে থাকলে বা বের হবার মতো সময় না থাকলে ড্রপ, কভার, হোল্ড অন পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। কম্পন শুরু হলেই মেঝেতে বসে পড়তে হবে। আর আশ্রয় নিতে হবে শক্ত টেবিল বা ভারী কোনো আসবাবের নিচে।বসে থাকতে হবে গুটিসুটি মেরে।
• আর সম্ভব হলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পরতে হবে। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। মুন। কখনোই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবে না।
• ঘরের ভেতরে নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিলে অবশ্যই মাথার ওপর বালিশ নিয়ে নাও। এতে মাথার চোট থেকে রক্ষা পাবে।
• পচনশীল নয় এমন শুকনো খাবার হাতের কাছে রাখ।
• কলাম ও বিমের তৈরি ভবনে কলামের গোড়ায় তুলনামূলকভাবে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারো।
• আধাপাকা বাড়িতে খাটের নিচে বা অন্য কোনো শক্ত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিতে পারো।
• গাড়িতে থাকলে খোলা জায়গা দেখে গাড়ি পার্ক করে রাখ। কখনোই ভূমিকম্পের সময় সেতুর ওপর দাঁড়াবে না।
• ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ এর লাইন পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ এর লাইন প্রধান সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে।
• সাধারণত বড় কম্পনের পর আরেকটি ছোট কম্পনের সম্ভাবনা থাকে। আর একারণেই ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সতর্ক থাকাটা জরুরি।
• মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করবে না। এতে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মন

স্বাস্থ্যকর খাবার থেকেও সাবধান!

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

ওজন কমানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার বেছে নিই, সেগুলো সব সময় শরীরের উপকার না করে শরীরের জন্য ডেকে আনে অমঙ্গল।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাজারে এমন অনেক পণ্য পাওয়া যায়, যেগুলো পুষ্টিকর হিসেবে দাবি করে। তবে গায়ে লাগানো লেভেল পড়লেই বোঝা যায়, সেগুলো মোটেই কোনো ভালো জিনিস দিয়ে তৈরি নয়। খাবারগুলো শরীরে কোনো উপকার করে তো না-ই, উল্টো হাসপাতালে পাঠানোর মতো জটিলতা তৈরি করে। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সেসব আপাতদৃষ্টিতে পুষ্টিকর কিন্তু ক্ষতিকর খাবারগুলো কী এবং তা কীভাবে আমাদের শরীরে ক্ষতি করে।

ফলের রস :
অনেকে গোটা ফল খাওয়ার চেয়ে ফলের রস খেতে বেশি পছন্দ করে। তবে বাজারে পাওয়া খুব কম ফলের রসেই প্রকৃত ফল থাকে। অধিকাংশ ফলের রসই কৃত্রিম রং ও স্বাদ দিয়ে তৈরি করা হয়। সঙ্গে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও খুব অল্প পরিমাণে ভিটামিন। এমনকি যদি গায়ে লেখা থাকে যে চিনিমুক্ত, তবু তাতে চিনি থাকে। এসব রস খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ইত্যাদির ঝুঁঁকিও বেড়ে যায়।

অপরিশোধিত আটা :
যদিও লাল আটা খাওয়া সাদা আটা বা ময়দার চেয়ে ভালো, তবু লাল আটা শরীরের জন্য ভালো নয়। একটা গবেষণায় জানা গেছে, লাল আটা শরীরের ভিটামিন ডির সঞ্চয়কে নিঃশেষ করে দেয়। এ ছাড়া লাল আটা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা শতকরা ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃৎপি-ে সমস্যা তৈরি করে। লাল আটায় প্রচুর পরিমাণে গ্লুটেন থাকে। সব দিক বিবেচনা করলে লাল আটা পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই ভালো।

মধু :
চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়াকে ভালো অভ্যাস হিসেবে ধরা হয়। মধুতে চিনির বিশ্লেষিত অবস্থা ফ্রুকটোজ থাকে। ফ্রুকটোজ মাত্রায় বেশি হলে তা লিভার বড় হয়ে যাওয়া সমস্যা তৈরি করে। ওজন বৃদ্ধি করা, ডায়াবেটিস সমস্যা তৈরিতেও ফ্রুকটোজ ভূমিকা রাখে। সাধারণ চিনিতে শতকরা ৫০ ভাগ ফ্রুকটোজ থাকে, তবে মধুতে থাকে শতকরা ৯০ ভাগ। চিনির সমস্যা এড়াতে গিয়ে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়।

এনার্জি ড্রিংকস :
এই পানীয়তে পানি, চিনি এবং সামান্য সোডিয়াম ছাড়া প্রায় কিছুই থাকে না। এগুলো খুব দ্রুত শরীরে শক্তির জোগান দেয়। তবে একজন সাধারণ মানুষের এই দ্রুত শক্তির কোনো প্রয়োজন নেই। ক্রীড়াবিদ বা অন্য যারা ওয়েট ট্রেইনিং বা খুব কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে প্রচুর ঘাম ঝরায়, তাদের কথা ভেবে এই পানীয় বানানো হয়। প্রতি বোতল এনার্জি ড্রিংকসে ৩০ গ্রাম পরিমাণ চিনি থাকে। এই ড্রিংকস সাধারণ মানুষের শরীরে চিনির অপ্রয়োজনীয় বোঝা বাড়ানো ছাড়া কিছুই করে না।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনা

জন্মনিয়ন্ত্রণ : একলা কেবল নারীর দায়িত্ব নয়

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮

‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’- এমন স্লোগানে আজকাল অনেকেই একমত। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়টা কেন যেন একা নারীর ওপরই চাপাতে চায়! অথচ সংসারের অন্য দশটা কাজের মতো এ ক্ষেত্রেও পুরুষ রাখতে পারে সমান অংশগ্রহণ। লিখেছেন মারজিয়া প্রভা

বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কী? জ্যাম, বেকারত্ব, দারিদ্র্য? এগুলোর সঙ্গে আমাদের নিত্য বসবাস। কিন্তু এই সমস্যাগুলোর মূলে যে সমস্যা সেটা ভুল করেও আমরা বলি না! কারণ, তাতে দায়টা এসে পড়ে নিজেদের কাঁধে। অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা আমাদের দেশের মূল সমস্যা। এই যে জ্যামে পড়ছ রোজ রোজ অফিস যেতে। গাড়ি আটকে আছে। মানছি ট্রাফিক মানছে না অনেকে, রাস্তা বানানোতে কারচুপির মতো একশ একটা কারণের লিস্ট তুমি করে ফেলেছ। কিন্তু এইটা কি মানো, এই ছোট দেশে এই এত এত মানুষের জায়গা আসলেই হয় কি না! মানুষের সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। এই বিশালসংখ্যক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই খুব একটা সহজ কাজ নয়। শহরের সুবিধা বলে সব মানুষ এসে পড়ছে শহরে। কার্বনের ধোঁয়া, মানুষের বর্জ্যে শহর সয়লাব আজ। কিন্তু তুমি ভাবতে পারো? ধরো আজ থেকে আরও ৩০-৪০ বছর আগে আমাদের মা-বাবার বা তারও আগে দাদা-দাদিরা এই সময়ের কথা ভেবে যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হতো, তাহলে সত্যিই আজকে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না আমাদের।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘সখী’ গল্পে এক সখীর মুখ থেকে বলিয়েছিলেন, ‘আমার মনে হয় এটি একটি ব্যারাম। ভালো খেতে না পারলে চিন্তায় কাহিল হলে এ রকমটি হয়।’ স্পষ্টত এই লাইনটিই বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন ঘরহীন-গৃহহীন দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস করা এক পরিবারের ছয় থেকে সাতটি ছেলেমেয়ে থাকে। অভাবের ফলস্বরূপ ব্যারাম যদি হয়ে থাকে এটি, তবে তা দূর করার পদ্ধতিও আছে। আজকে তাই আমি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে তোমাদের জানাব। যারা নতুন বিয়ে করেছ বা করোনি বা করবে বলে ভাবছ তাদের বিস্তারিত ধারণা দিতেই এই আর্টিকেল। তবে সঙ্গে সঙ্গে এও মনে রেখো, জন্মনিয়ন্ত্রণ তুমি একা করতে চাইলে পারবে। কিন্তু সেটা তোমার একার দায় নয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ কী? কেন দরকার?
জন্মনিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তেমন একটি সিস্টেম, যা প্রতিটি কাপলকে অপরিকল্পিত বাচ্চা গ্রহণ এড়াতে সহায়তা করে। শারীরিক সম্পর্ক মানুষের প্রাকৃতিক ডিজায়ার। একটা বয়সের পর প্রতিটি মানুষই শারীরিক সম্পর্ক করে। কিন্তু বাচ্চা একটা বিশাল দায়িত্ব। শুধু বাচ্চা জন্ম দিলেই হয় না, তার খাওয়া-পরা সর্বোপরি তাকে গড়ে তোলার বিশাল এক রেসপন্সিবিলিটি থাকে। এবং কোনো দম্পতিরই উচিত নয় বাচ্চার রেসপন্সিবিলিটি না নিতে পারলে বাবা-মা হওয়া। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শারীরিক সম্পর্ক আর বাচ্চা নেওয়াকে এক করে ফেলে বলে আমরা পথেঘাটে এত পথশিশু দেখি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকার গুলিস্তান পার্কে পথশিশুদের একটি স্কুল ‘পথের ইশকুল’ চালাই। আমাদের প্রায় ২৮ জন বাচ্চাকাচ্চা আছে, যারা এই স্কুলে নিয়মিত পড়ে। পার্কে আছে প্রায় ৪০টি পরিবার। এই ৪০টি পরিবারের প্রায় সবার তিনটির বেশি বাবু আছে। প্রায় দুই মাস পরপরই সেখানে একজন গর্ভবতী মাকে দেখা যায়। যে নিজে খেতে পায় না, বাসা নেই, জীবনের নিশ্চয়তা নেই, সে একজন বাচ্চার ভার কী করে আনে? কী হবে সেই বাচ্চার ভবিষ্যৎ? শুধু তাই নয়, অপুষ্টির শিকার হয়ে মাও জন্ম দেয় অপুষ্টির শিশু। রোগে-শোকে এই বাচ্চার ঠাঁই হয় সে পথে, যে জীবন কারও কাম্য নয়।
আচ্ছা তোমার অনেক টাকাপয়সা আছে! দশ বাচ্চা পালার ক্ষমতা আছে। তাই তুমি কি দশ বাচ্চা জন্ম দেবে। অবশ্যই না। কারণ, এক. অতিরিক্ত গর্ভধারণ শরীরের জন্য সহায়ক নয়। দুই. তোমাকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে হবে, কারণ তুমি দেশের নাগরিক। এই এত এত জনবহুল দেশে তুমি কি আরও সমস্যার সৃষ্টি করছ না! এই বেলা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একটা কৌতুক মনে পড়ছে। এত জ্ঞানী-গুণী বিদ্বান এক মানুষ অথচ জন্মনিয়ন্ত্রণে তার কোনো হেলদোল ছিল না। প্রায় নয়জন ছেলেমেয়ে ছিল তার। তো কোনো এক প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এত সন্তান কেন তার। তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘কে বলতে পারে শেষজন জিনিয়াস হবে না?’
আমাদের বাসায় হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করত সুমনা। এক সন্তান ছিল। তাকেই স্কুলে ভর্তি করতে পারে না। এর মধ্যেই আবার গর্ভবতী হলো। কেন? সরল উত্তর, ‘এক সন্তানের ভরসা কী?’ তার যে সন্তান এখন আছে, তাকে ঠিকঠাক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে পারবে কি না, সে ভরসার কথা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা আমার হয়নি। অতিরিক্ত বাচ্চা নেওয়ার কারণ কী? বাচ্চা ভালো লাগে অনেক, তাই? বাচ্চা হলে ঘর ভরা ভরা থাকে, তাই? এই বেশি বাচ্চা নেওয়ার মধ্যে যে এক সূক্ষ্ম রাজনীতি বিরাজ করে তা বোধ হয় কখনোই ভেবে দেখোনি। সামন্ত যুগে যে নারী যত সন্তান জন্ম দিতে পারত তাকে তত উর্বর নারী ভাবা হতো। আর যে পরিবারে যত বেশি সন্তান থাকত, সে লিড করত সেই গোত্রকে। এসব থেকেই মূলত বেশি বেশি বাচ্চা নেওয়ার কনসেপ্ট এসেছে। তবে বহুল জনসংখ্যা এই দেশে আর সামলানো যাচ্ছে না। তাই সরকার থেকেই প্রচার করা হচ্ছে, ‘দুটি সন্তান যথেষ্ট। একটি হলে আরও ভালো।’
এই কারণেই এই সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানা এত জরুরি। তোমার যৌনজীবনকে এতটুকু ব্যাহত না করেও তুমি কত নিশ্চিতভাবে যৌনজীবন করতে পারো তার জন্যই এত এত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে তোমার কাছে। পিল খাওয়া, ইনজেকশন নেওয়া ইত্যাদি বহু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে হয়তো অনেক কিছু তুমি জেনেই এসেছ। তাই এইবার একটু ভিন্ন বিষয়ে লিখব। একজন পুরুষ কী করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে ভূমিকা পালন করতে পারে?

পুরুষ পালন করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তেমন একটা পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেই। যা আছে, তাও পুরুষের কাছে জনপ্রিয় নয়। এর বিশাল কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের পুরুষদের মানসিকতা। এরা জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সচেতন নয়, আগ্রহী নয়। অনেক বেকার পুরুষকে আমি দেখেছি, ‘বংশের বাত্তি’ জ্বালানোর জন্য একের পর এক সন্তান নিয়েই গেছে, অথচ তাদের খাওয়ানো এবং সঠিকভাবে লালনপালনের কোনো ব্যবস্থাই নেই তাদের।
আজকাল কি কমেছে? সঠিক জানি না। একটা সময় বংশে একটা ছেলের জন্য একের পর এক বাচ্চা নেওয়া ছিল স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের অস্বাভাবিক অত্যাচার। আমার নানুমণির সাত মেয়ে নিতে হয়েছে নানুর জোরজবরদস্তিতে। একটি ছেলের জন্য! সেই ছেলে অবশ্য কী কাজে দেয় একটা মেয়ের চেয়ে অন্তত তা আমি আমার নানুবাড়ি দেখে বুঝিনি। একটা ছেলে হওয়া লাগবে! পরিবারের আলোটালো হয় সে। আর মেয়ে হচ্ছে পরিবারের ঘাসপাতা! এই পুরুষতান্ত্রিক কনসেপ্ট যাদের মাথায় চেপে আছে, তাদের দ্বারা কি জন্মনিয়ন্ত্রণ হয়? মজার বিষয় কী, মেয়েদের লাইগেশন অর্থাৎ মেয়েদের স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ দেশে খুব বহুল প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলেও ভ্যাসেকটমি কিন্তু তেমন জনপ্রিয় নয়। যদিও স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ এড়িয়ে চলতে চায় অনেকেই। কারণ, এতে বাচ্চা নেওয়ার আর সুযোগ থাকে না বা সেটা কোনো জটিল অপারেশনের ফলে সম্ভব হয়। পুরুষ একদম স্বাভাবিকভাবে কীভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ধারণা এখানে দিচ্ছি। প্রতিটি তথ্য বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে নেওয়া হয়েছে।

কনডম ব্যবহার
পুরুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সস্তা এবং কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে কনডম। তবে চূড়ান্ত উত্তেজনার সময় উত্থিত লিঙ্গে এই কনডম পরতে হয় বলে অনেক পুরুষ এটি পরতে চায় না। এর ব্যবহার খুবই সোজা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং ৯৯% কার্যকরী। যেকোনো রকম যৌন রোগ থেকে এটি বাঁচায়। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করে কনডম পরতে হয় না। বীর্য পরীক্ষার জন্য কনডম একটি উল্লেখযোগ্য উপায়। তবে অনেকে বলে কনডম ছিঁড়ে যায়। কিন্তু এই দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সব সময় থাকে না। যখন কনডম ঠিকভাবে পরা না হয় কিংবা অনেক দিনের পুরোনো কনডম ব্যবহার করা হয়, তখনোই তা ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অনেক দম্পতি কনডমে তৃপ্তি পায় না যৌনজীবনে। আবার অনেকের অ্যালার্জি থাকে কনডম ব্যবহারে। তবে বাজারের সেরা ব্র্যান্ডের কনডমগুলো এই অস্বস্তি দূর করতে পারে সহজেই। কনডম ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্র্যাকটিসের ওপর। ভালো মানের কনডম ব্যবহার করে শারীরিক সম্পর্ক নিয়মিত করতে থাকলে আস্তে আস্তেই এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে পার্টনাররা।

আজল
আজলের আরেক নাম কয়টাস ইন্টারেপটস। এই আজলের মানে হচ্ছে বীর্য যোনিপথে না ফেলে অন্য কোথাও ফেলা। আজলের ভালো দিক হচ্ছে এ ক্ষেত্রে কোনো রকম কোনো মাধ্যম ব্যবহার করতে হয় না। খালি বীর্য ফেলার আগমুহূর্তে সতর্কভাবে লিঙ্গ বের করে আনতে হয়। এই অন্যত্র বীর্যস্খলন পদ্ধতি জন্মনিয়ন্ত্রের সবচেয়ে পুরোনো পদ্ধতি। যখন কোনো কিছু আবিষ্কার হয়নি জন্মনিয়ন্ত্রণের তখন এভাবেই সবাই জন্মনিয়ন্ত্রণ করত। তাই এই প্রাকৃতিক নিয়মটি একমাত্র পুরুষের অংশগ্রহণেই সম্ভব। তবে আজল পুরোপুরি কার্যকরী নয়। কারণ কামরসের সঙ্গে কোনোভাবে বীর্য বা শুক্রাণু মিশে গেলে তা একজন মেয়েকে গর্ভবতী করতে পারে। তবে সেটাও খুব কম সময়েই ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আজলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।

ভ্যাসেকটমি
পুরুষের স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ ভ্যাসেকটমি। আমাদের দেশে এ বিষয়ে প্রচুর পুরুষকে উদ্বুদ্ধ করা হলেও পুরুষদের অংশগ্রহণ এতে কম ছিল বা আছে। কারণ এ নিয়ে পুরুষদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে ভ্যাসেকটমি ছেলেদের যৌনক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। আসলে এটি সত্য কথা নয়। বরং মেয়েদের লাইগেশনের চেয়ে ছেলেদের ভ্যাসেকটমি হচ্ছে সহজ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো রক্তপাত ছাড়াই এই ভ্যাসেকটমি করা যায়। এই পদ্ধতিতে পুরুষের দুই পাশের শুক্রনালি কেটে দেওয়া হয় এবং দুই পাশে বেঁধে দেওয়া হয়। এই নালি কেটে দেওয়ার ফলে শুক্রগুলো অন্কোডষ থেকে যৌনাঙ্গে আসতে পারে না। এটি পুরোপুরি ১০০% স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ। লোকাল এন্থেশিয়া করে সহজ একটি অপারেশনের মাধ্যমে এটি করা হয়। ভ্যাসেকটমি করার ২৪ ঘণ্টা পরেই একজন পুরুষ কাজে যেতে পারে। অবশ্য ভারী কাজ থেকে ১৫ দিন বিরত থাকতে হবে। এর মধ্যে সাইকেল চালানো নিষেধ। অপারেশনের ২৪ ঘণ্টা পর তাকে গোসল করতে হবে। যৌনজীবন একদম আগের মতোই থাকবে। খালি ১৫ দিন যৌনজীবন থেকে বিরত থাকতে হবে ভ্যাসেকটমির পর। ৫-৭ দিন পরেই সেলাই কেটে ফেলা হবে। এই পদ্ধতি একদম স্থায়ী। তবে অপারেশনের তিন মাস পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে।

নেই নেই করেও তিন তিনটি পদ্ধতি দেখতে পেলাম পুরুষের জন্য। বাইরের দেশগুলোতে পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে ভূরিভূরি। ড্রাই অর্গাজম পিল, হরমোন জেল এমনকি পুরুষদের জন্য কার্যকরী ইমপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা রয়েছে। সেসব দেশে মেয়ে-ছেলে উভয়ই জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সচেতন। আমাদের দেশের পুরুষ সেটা নয়। তাদের মানসিকতাই এমন ‘লিঙ্গ আছে, জন্ম দেব’। এটাই তাদের পুরুষত্ব মনে করে। যত বেশি এসব নিয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু হবে, দেশে যত যত পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বের হবে ততই এই মানসিকতার বদল ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস। ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের গণমাধ্যমও। যত বড় করে নারীর ইমার্জেন্সি পিলের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বিলবোর্ডে তত বড় করে যদি পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে ভূমিকা নিয়ে বলা হতো, এটি কাজে দিত আরও বেশি। তবে আসলে কথা অন্য জায়গায়! বাচ্চা জন্ম দেওয়াটা দুজনের দায়িত্ব এটা যেমন মাথায় রাখা উচিত, তেমনি দেওয়া উচিত পার্টনারকে সম্মান। স্ত্রীকে তথা পার্টনারকে সম্মান দেওয়াটা একটা ছেলেকে ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে। তা না হলে এসব কিছুই লবডঙ্কা!

নারীর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি : জানা কথা আবার জানি
সারাদিনই নারীর জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চারপাশে দেখছি, আমরা বোধ হয় সবাই জানি কী কী পদ্ধতি রয়েছে আমাদের দেশে।
প্রাকৃতিক পদ্ধতি : Menstrual cycle-এর হিসাব
মহিলাদের স্বাভাবিক ঋতুচক্র প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত। এতে এমন কিছুদিন রয়েছে, যাকে নিরাপদ দিন বা সেফ পিরিয়ড বলা হয়। এই দিনগুলোতে সহবাস করলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে না। সেফ পিরিয়ডের দিনগুলোও প্রকৃতিগতভাবে নির্দিষ্ট। এই কারণেই একে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা বলা যেতেই পারে। চিকিৎসকেরা এতে অনেক সময় ক্যালেন্ডার পদ্ধতিও বলে থাকেন। এই পদ্ধতি কার্যকর করতে অবশ্যই জানা দরকার ঋতুচক্রের নিরাপদ দিন কোনগুলো।

ধরা হয়ে থাকে, পিরিয়ড শুরুর প্রথম সাত দিন ও শেষের প্রথম সাত দিন সহবাস করা নিরাপদ। তবে পিরিয়ড নিয়মিত না হলে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ৮০ শতাংশ নিরাপদ। সাধারণত, পিরিয়ডের হিসেবে গন্ডগোল, অনিরাপদ দিবসে সহবাস, অনুমিত পিরিয়ডের ফলে প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধকের পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে। তাই সঠিকভাবে জানতে একবার অন্তত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

ওরাল পিল
আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলোর মধ্যে খাবার পিল ১ নম্বরে। কারণ এটি সহজলভ্য। এটি ৯৯% সফল পদ্ধতি। যৌনজীবন বিরতি দিতে হয় না। সহজে বন্ধ করা যায়। পরবর্তী জন্মদানে সমস্যা হয় না। তবে একাধারে তিন বছর খাওয়ার পিল খেলে বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, লিভারের রোগ এবং ক্যানসার তারা এসব পিল খেতে পারবে না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই বেশি। যেমন মাথা ঘোরানো, বমি, বমিবমি ভাব, স্তন টনটন করা, মাথাব্যথা, ডিপ্রেশন বা অবসন্নতা।

ইনজেকশন
এটি নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে খুবই প্রচলিত একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। সরকারি কেন্দ্র থেকেও এই হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। ১০০% কার্যকরী এই পদ্ধতির যে কোনো সময় বন্ধ করা যায়। স্তনদানে সমস্যা সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এই ইনজেকশন নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনেক। এতে ওজন বাড়ে, ক্যানসার হয়, মাসিক চক্র নষ্ট হয়ে যায়। অনেকের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। ইনজেকশন ছেড়ে দেওয়ার পর গর্ভধারণ করতে অনেক সময় লাগে।

ইমপ্ল্যান্ট
ইমপ্ল্যান্ট শুধু প্রজেস্টোরেন হরমোন সমৃদ্ধ অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেখানে একটি প্লাস্টিক বা সিলিকন রাবারের রড মহিলাদের বাহুতে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয়। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে কার্যকরী এবং বহুল জনপ্রিয় একটি বিষয়। কেউ গর্ভধারণ করতে চাইলে ইমপ্ল্যান্টের রডটি খুলে রেখে গর্ভধারণ করা যায়। যারা নবদম্পতি, দীর্ঘ সময় বাচ্চা জন্মদানে বিরতি চাও তাদের জন্য ইমপ্ল্যান্ট হচ্ছে উপযুক্ত একটি পদ্ধতি। এমনকি প্রসব পরবর্তী মা যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে তারা সন্তানের বয়স ৬ সপ্তাহ পর থেকেই এটি ব্যবহার করা যায়। তবে প্রজেস্টরেন হরমোনে সংবেদনশীল এমন মহিলা এটি ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে মাসিকের স্রাবের ধরন পরিবর্তন থাকে। আর এটি পরতে-খুলতে সব সময় সেবাকেন্দ্রে যেতে হয়। মাসিকের ১-৭ দিনের মধ্যে গর্ভপাত হলে সঙ্গে সঙ্গে গর্ভ নেই তা নিশ্চিত হলে যে কোনো সময়ে, খাবার বড়ি সব খাওয়া শেষ হলে তার পরদিন ইমপ্ল্যান্ট করার উপযুক্ত সময়।

লাইগেশন
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে লাইগেশন বহুল জনপ্রিয়। এতে একজন নারীর স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়। এ দেশে লাইগেশন জনপ্রিয়, ভ্যাসেকটমি না। বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রে ফ্রিতে এটি করায়। এই অপারেশনেও ভ্যাসেকটমির মতো দুই পাশের ডিম্বনালি কেটে আবার বেঁধে দেওয়া হয়। তবে অপারেশনের পর ১ সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হয় নারীটির। আর কিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে লাইগেশনে। সম্পূর্ণ রক্তপাতবিহীন অপারেশনও এটি নয়। কিন্তু ১০০% কার্যকরী ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য।

অনিয়মিত সহবাস! মেয়েদের ইমার্জেন্সি পিলের সর্বনাশ!
শারীরিক সম্পর্ক অনিয়মিত হতে পারে পার্টনারের ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে পুরুষ পার্টনার বেশির ভাগ সময় কেয়ারলেস থাকে। কনডম ব্যবহার করে না তৃপ্তি পাওয়ার জন্য। এবং নারী পার্টনারকে ৭২ ঘণ্টা এবং ১২০ ঘণ্টার মধ্যে হাই লেভেলের ইমার্জেন্সি পিল খেতে বাধ্য করে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্সি এড়াতে ইমার্জেন্সি পিল খায়। ইমার্জেন্সি পিল নারীর মাসিক জীবনকে অনিয়মিত করে তোলে। ওবেসিটি বাড়ায়। নারীর পরবর্তী জীবনে গর্ভধারণে সৃষ্টি করে হাজারো সমস্যা। তাই অতিরিক্ত ইমার্জেন্সি পিলকে না বলে অনিয়মিত সহবাসের ক্ষেত্রে পুরুষ পার্টনারকে কনডম ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলো।

জানা হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ! এবার করণীয়?
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে জানলাম অনেক অনেক কিছু। তাহলে এবার করণীয় কী? বাংলাদেশের কন্টেক্সটে এতক্ষণে বুঝে গেছ। এ দেশে একে নেই পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সুলভ সরবরাহ। অন্যদিকে আমাদের ছেলেরা ছোটবেলা থেকে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে জানে না। উল্টো এমন হ্যাডম নিয়ে সমাজে বেড়ে ওঠে যেখানে পার্টনারের ওপর নিয়ন্ত্রণ করাটা তারা পুরুষত্ব মনে করে। এমন মানসিকতার সৃষ্টি হয় পুরুষেরা কনডম ব্যবহারকে মনে করে পুরুষত্বের অপমান। যেন জন্মনিয়ন্ত্রণ একা একলা নারীরই করা জিনিস! অথচ শারীরিক সম্পর্ক দুজন ছাড়া কী করে সম্ভব? তাই শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে এত বড় আর্টিকেল পড়লেই হবে না। আজ থেকে শুরু করতে হবে প্র্যাকটিস। নিজ ঘর থেকেই।

প্রতিটি পার্টনার একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠুক। সম্মান দিক তাদের। হাসিখুশিতে ভরে উঠুক তাদের যৌন এবং দাম্পত্য জীবন। তারা বুঝে নিক একে অপরকে। বিছানা থেকে রান্নার বাটি, বেডরুম থেকে কিচেন- সব জায়গায় থাকুক শেয়ারিং অ্যান্ড কেয়ারিং। আলাদা করে তখন আর জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড় বড় ব্যানার-পোস্টার করতে হবে না, আর্টিকেল লিখতে হবে না। পার্টনারের সহায়তায় পার্টনার বুঝে নেবে জন্মনিয়ন্ত্রণের খুঁটিনাটি!

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • সঠিক হুইস্ক বাছাই করবো কীভাবে?

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook