রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
লেখক

Suraiya Naznin

Suraiya Naznin

জীবনদেহ ও মনস্বাস্থ্য

অতি চেনা পাতার গন্ধেই বাড়বে স্মৃতিশক্তি

করেছে Suraiya Naznin জুলাই ২০, ২০২২

রোদসী ডেস্ক:

গবেষকদের মতে, পুদিনার গন্ধের গুণেই মূলত কাজ হয়। পুদিনা পাতার গন্ধ নাক থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছলেই রক্ত চলাচল বাড়ে। আর সেই গুণেই মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ে।

পুদিনা পাতার গুণে সচল থাকে মস্তিষ্ক। সেখানে রক্ত চলাচল বাড়ে। আর তার গুণেই বাড়ে স্মৃতিশক্তি। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। অংশগ্রহণ করেন ১৪৪ ব্যক্তি। সেখানে দেখা যায়, পুদিনা পাতার তেল পাঁচ মিনিটের জন্য ব্যবহার করলেই সুফল মিলছে। আর একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, একই ধরনের তেল ব্যবহার করলে সার্বিক সচেতনতার মাত্রা বাড়ছে। কমছে উদ্বেগ, অবসাদের মতো সমস্যা। কাটছে ক্লান্তিও।

 

 

শুধু পুদিনার তেল নয়, অনেক সময়ে পুদিনা পাতা বেটে ব্যবহার করলেও একই ধরনের কাজ হয় বলেও দেখা গিয়েছে।

শুধু পুদিনার তেল নয়, অনেক সময়ে পুদিনা পাতা বেটে ব্যবহার করলেও একই ধরনের কাজ হয় বলেও দেখা গিয়েছে। শুধু পুদিনার তেল নয়, অনেক সময়ে পুদিনা পাতা বেটে ব্যবহার করলেও একই ধরনের কাজ হয় বলেও দেখা গিয়েছে।

 

কিন্তু কী ভাবে কাজ হয়?

গবেষকদের মতে, পুদিনার গন্ধের গুণেই মূলত কাজ হয়। পুদিনা পাতার গন্ধ নাক থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছলেই রক্ত চলাচল বাড়ে। আর সেই গুণেই মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ে। স্মৃতি যেমন মজবুত হয়, তেমন বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও বাড়ে।

তবে পুদিনার এই গুণ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ক্লান্তি কাটাতে যে এই গন্ধ সাহায্য করে, তা প্রমাণিত হয়ে থাকলেও বাকিটা এখনও বিভিন্ন সমীক্ষার উপর নির্ভরশীল।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আড্ডাজীবনযাত্রাবিশেষ রচনাভালো থাকার ভালো খাবারহেঁসেল

উদ্বোধন হলো এসপ্রেসো হাউজের সিগনেচার আউটলেট

করেছে Suraiya Naznin জুন ২৭, ২০২২

রোদসী ডেস্ক:

হসপিটালিটি পার্টনার্স এর ব্র্যান্ড ইতালিয়ান রেষ্টুরেন্ট এসপ্রেসো হাউজ এর সিগনেচার আউটলেট এর শুভ উদ্বোধন হয়েছে গত ২৪ জুন শুক্রবার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক, ড. নাফিস ইমতিয়াজ চৌধুরী, রোদসীর সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা ইয়াসমীন, মিউজিশিয়ান ইমরান রাব্বানী, মডেল ফাহিম উল হক, জনপ্রিয় শিশুশিল্পী মানহা মেহজাবিন মান্যতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ও এসপ্রেসো হাউজের সংশ্লিষ্ট সবাই।

 

বনানীর ১৭ নম্বার রোডে অথেনটিক ইতালিয়ান খাবার, বেকারি, পেষ্ট্রি ও কলম্বিয়ান ১০০% আরাবিকা কফির স্বাদ নিশ্চিত করবে এই রেষ্টুরেন্ট। পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক বলেন, সবাই বাইরে খেতে ভালবাসে ডায়েট এ থাকা অবস্থায় বাইরে অবশ্যই পরিমান মত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারবেন, এই রেষ্টুরেন্টকে রাখা যাবে হেলদি লাইফস্টাইল টপ লিস্টে।

এসপ্রেসো হাউজ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব শওকত হোসেন রনি জানান, বাংলাদেশে ইতালিয়ান খাবারের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ফুডলাভারদের জন্য পরিপূর্ন স্বাদ নিয়ে এসেছে এসপ্রেসো হাউজ। আমাদের পিজ্জা তৈরি করা হচ্ছে ইষ্ট ছাড়া। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য রয়েছে বিশেষ মেনু। আমরা খাবারের মান ১০০% নিশ্চিত করছি।

 


ব্র্যান্ড ম্যনেজার ইয়ারা তুলি জানান ঢাকার লাইফস্টাইল রেষ্টুরেন্ট কেবল খাবার জায়গা নয়, কর্পোরেট মিটিং,বন্ধুদেও সাথে আড্ডা, প্রিয়জন ও পরিবার এর সাথে ভাল থাবার খাওয়ার পাশাপাশি সবাই সুন্দর শান্তিপূর্ন পরিবেশ খুঁজে থাকেন। পরিবেশ ও আতিথেয়তা সব মিলিয়ে কাস্টমার স্যাটিফেকশন এর জন্য প্রস্তুত এসপ্রেসো হাউজ। প্রতিদিন সকাল ৮.৩০ থেকে রাত ১.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকবে রেষ্টুরেন্ট।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনাভালো থাকার ভালো খাবারস্বাস্থ্য

এসপ্রেসো হাউজ এর সিগনেচার আউটলেট উদ্বোধন

করেছে Suraiya Naznin জুন ২৩, ২০২২

রোদসী ডেস্ক:

হসপিটালিটি পার্টনার্স এর ব্র্যান্ড ইতালিয়ান রেষ্টুরেন্ট এসপ্রেসো হাউজ এর সিগনেচার আউটলেট এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বিকেল ৩টায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার পুলিশ ইফতেখায়রুল ইসলাম, পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক, চিত্রশিল্পি আহমেদ নওয়াজ, বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার তুতলি রহমান, রোদসীর সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা ইয়াসমীন, চিত্রনায়ক সম্রাট, মডেল আনোয়ারুল শামীম, তাহমিদ ও নিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ও এসপ্রেসো হাউজ সংশ্লিষ্ট সবাই।

বনানীর ১৭ নাম্বার রোডে অথেনটিক ইতালিয়ান খাবার, বেকারি, পেষ্ট্রি ও কলম্বিয়ান ১০০% আরাবিকা কফির স্বাদ নিশ্চিত করবে এই রেষ্টুরেন্ট। পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক বলেন, সবাই বাইরে খেতে ভালবাসে ডায়েট এ থাকা অবস্থায় বাইরে অবশ্যই পরিমান মত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারবেন, এই রেষ্টুরেন্টকে রাখা যাবে হেলদি লাইফস্টাইল টপ লিস্টে।

এসপ্রেসো হাউজ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব শওকত হোসেন রনি জানান, বাংলাদেশে ইতালিয়ান খাবারের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ফুডলাভারদের জন্য পরিপূর্ন স্বাদ নিয়ে এসেছে এসপ্রেসো হাউজ।
আমাদের পিজ্জা তৈরি করা হচ্ছে ইষ্ট ছাড়া। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য রয়েছে বিশেষ মেনু। আমরা খাবারের মান ১০০% নিশ্চিত করছি। রেষ্টুরেন্ট এর পরিবেশ ও আতিথেয়তা সব মিলিয়ে কাস্টমার স্যাটিফেকশন এর জন্য প্রস্তুত এসপ্রেসো হাউজ। প্রতিদিন সকাল ৮.৩০ থেকে রাত ১.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকবে রেষ্টুরেন্ট।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রানারীপ্যারেন্টিংবিশেষ রচনাসংগ্রাম

কাজে ফেরা মাতৃত্বের পর

করেছে Suraiya Naznin মে ৩০, ২০২২

রেহনুমা তারান্নুম

অনেকেরই ম্যাটারনিটি লিভ থেকে ফিরে মনে হয় ‘একেবারে নতুন করে শুরু করছি!’ আবার বাড়িতে ছোট্ট শিশুটিকে রেখে এলে তার জন্যও মন কেমন করে। আসে ইমোশনাল ব্যাঘাত। তবে সমস্যা যা-ই হোক না কেন, স্ট্রেসড হবে না। কারণ, মাতৃত্ব কেবল নিজের জন্য নয়, উন্নত জাতির জন্যও!

মা হওয়ার পরে একটা লম্বা সময় কাজের জগৎ থেকে দূরে থাকলে অভ্যাসটা চলে যায়, এমনটাই মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। অবশ্য বিষয়টা যে খুব ভুল, তা-ও নয়! মা হওয়ার ঝক্কি তো কম নয়। তাই তিন মাস বা তারও বেশি পাওয়া ছুটিটা শুয়ে-বসে উপভোগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। ফলে ছুটি কাটিয়ে অফিসে ফিরলে যে রিফ্রেশড ব্যাপারটা আসে, এ ক্ষেত্রে তা একেবারেই অসম্ভব। রোজকার ডেডলাইনের চাপ, অফিস মিটিং, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি এসব কিছুই এত দিন অনুপস্থিত ছিল।

 


তাই অনেকেরই ম্যাটারনিটি লিভ থেকে ফিরে মনে হয় ‘একেবারে নতুন করে শুরু করছি!’ আবার বাড়িতে ছোট্ট শিশুটিকে একলা ফেলে রেখে এলে তার জন্যও মন কেমন করে। ফলে মন দিয়ে কাজ করবে, সেখানেও কিছুটা ইমোশনাল ব্যাঘাত। তবে সমস্যা যা-ই হোক না কেন, স্ট্রেসড হবে না। পুরোনো অভ্যাসে ফিরতে একটু সময় লাগুক না! তা নিয়ে ভেবে মাথা খারাপ করার কিছু নেই।

বস ও সহকর্মীদের সঙ্গে একবার গোড়াতেই কথা বলে নাও। আগামী তিন-চার মাসে কী প্রজেক্ট আসতে পারে, ও তাতে তুমি কীভাবে কন্ট্রিবিউট করবে, সে ব্যাপারে মোটামুটি জেনে গেলে সুবিধা হয়। প্রথমেই খুব বড় প্রজেক্টে হাত দেবে না। ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করতে পারো। কয়েক দিন পর ছন্দ ফিরে পেলে আবার পুরোদমে কাজ করবে। প্রথম প্রথম অফিসের কাজ খুব হেকটিক মনে হলে অফিসের বাইরে নিজেকে প্যাম্পার করো।

 

ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়া, নিজেকে উপহার দেওয়া ইত্যাদি অফিস স্ট্রেস অনেকটা কমিয়ে দেবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। সন্তানকে বাড়িতে কারও নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে রেখে আসো। বারবার যদি বাড়িতে ফোন করতে হয়, বা সন্তান ঠিকমতো খাচ্ছে বা ঘুমাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে টেনশন করতে হয়, তাহলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবেই। তুমি চাকরি করছ বলেই যে সন্তানের দেখভাল ঠিকমতো করতে পারছ না, এ রকম ধারণা মনের মধ্যে রাখবে না। বেবিসিটার রাখার আগে তার স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। এ ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করতে পারলে, অফিসে পুরোপুরি মন দিতে পারবে। কাজের ফাঁকে এক-আধবার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে নাও। তবে সন্তান পালনের অজুহাতে কাজে ফাঁকি দেওয়া বা দেদার অফিস ছুটি নেওয়া মোটেও কাজের কথা নয়। কাজের জগৎটা প্রফেশনাল জায়গা। সংসারের সঙ্গে অফিসের সঠিক ভারসাম্যটাই জরুরি।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
প্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতাসমস্যা

বডি শেমিং কোনো রসিকতা নয়

করেছে Suraiya Naznin মে ২৬, ২০২২

জহুরা আকসা

অন্যের শারীরিক গঠন, চেহারা, আকার, আকৃতি বা গায়ের রং নিয়ে রসিকতা করা আমাদের সমাজের আদিতম চর্চাগুলোর একটি। সমাজের লোকেরা এসব করে মজা পায়। এগুলো যে বডি শেমিং এবং অন্যায়, সে বোধ সমাজের লোকজনের নেই। তাই তো যুগ যুগ ধরে রসিকতার নামে বডি শেমিং কোনো রকম বাধানিষেধ ছাড়াই সমাজে চর্চিত হয়ে আসছে।

বেশির ভাগ মানুষ নিজের অজান্তে বা জেনেবুঝেই অন্য মানুষকে তার শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ করে থাকে। যেমন দেখা হলেই কাউকে মুটকি, ভুটকি, বাট্টু-পাতলু ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা। কিংবা বলা আরে তুমি এত কালো হয়ে গেছ? তোমার মুখে এত দাগ কেন? ডাক্তার দেখাও! তোমার তো বিয়ে হবে না! এই কথাগুলো বডি শেমিংয়ের মধ্যে পড়ে। অথচ মানুষ এগুলো এতটা সাবলীলভাবে বলে যে মনে হয় সামনের জন বুঝি অনুভূতিশূন্য মানুষ!

 

 

আসলে ছোট থেকেই আমরা কত কিছু শিখি কিন্তু এই শিক্ষা পাই না যে কাউকে তার শারীরিক গঠন নিয়ে তাচ্ছিল্য করাটা অপরাধ। বরং সামাজিকভাবে আমরা অন্যের খুঁত নিয়ে রসিকতা করার শিক্ষা নিয়ে থাকি।

অবশ্য এমন আচরণের পেছনে দায় কেবল সাধারণ মানুষের তা নয়। প্রতিদিন পেপার-পত্রিকা খুললেই বা টেলিভিশন অন করলেই মোটা থেকে চিকন হওয়া বা কালো থেকে ফরসা হওয়ার এত এত বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে যে আমরা ধরেই নিই যে চিকন আর ফরসা মানেই সুন্দর। এ ছাড়া টিভি সিরিয়ালগুলোতে স্বাস্থ্যবান মানুষদের যেভাবে ভাঁড় বানিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বাস্তব জীবনের মোটা মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাদের নিয়ে হাসাহাসি করা, রসিকতা করা সবাই যেন সমাজের বিনোদনের একটা অংশ মনে করে। রসিকতার নামে এই অসভ্যতা বিশ্বব্যাপী চলে।

 

সাম্প্রতিক অস্কারের মঞ্চে সেটাই দেখা গেল। আমেরিকান বিখ্যাত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান ক্রিস রক, রসিকতার ছলে অভিনেতা উইল স্মিথের স্ত্রী জেডা পিঙ্কেট স্মিথের কামানো মাথাকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জেডা, “জিআই জেন টু”-এর জন্য আমার আর তর সইছে না।’ ক্রিস রক মূলত ১৯৯৭ সালের সিনেমা ‘জিআই জেন’- এর প্রসঙ্গ টেনেছিলেন, যেখানে অভিনেত্রী ডেমি মুরের চুল খুব ছোট করে ছাঁটা ছিল। অথচ জেডা পিঙ্কেট স্মিথ তার আগেই অ্যালোপেশিয়া অসুখের কারণে তার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, এই চুল কমে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে জেডাকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় বলে এটা তার একটা অস্বস্তির জায়গা। আর মঞ্চে যখন ক্রিস রক তাকে নিয়ে রসিকতা করছিলেন, তখন জেডার চেহারায় সেই অস্বস্তি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। মূলত সেদিন অস্কারের মঞ্চে ক্রিস রক যা বলেছিলেন, তা বডি শেমিংয়ের নামান্তর। নিশ্চয় মানুষের অসুস্থতা কখনো কোনো রসিকতার বিষয় হতে পারে না।

কিন্তু এর প্রতিবাদে উইল স্মিথ যা করেছেন, সেটাও সমর্থনযোগ্য ছিল না। কাউকে এভাবে চড় মারা বা শারীরিকভাবে আঘাত করা যায় না। প্রতিবাদের আরও অনেক মাধ্যম আছে। গায়ে হাত তুলে কেন প্রতিবাদ করতে হবে? মুখে কথা বলেও তো প্রতিবাদ করা যেত।

তবে পুরো ঘটনায় একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো ছিল। আর তা হলো, যখন ক্রিস রক জেডাকে নিয়ে রসিকতা করেছিলেন, আর উইল স্মিথ যখন প্রতিবাদস্বরূপ ক্রিসকে চড় মারছিলেন, এই দুই সময়েই কিš‘ দর্শকেরা একইভাবে হেসে যাচ্ছিলেন। অর্থাৎ বডি শেমিং এবং সহিংসতা দুটোই তাদের কাছে রসিকতা মনে হয়েছে। আর এটাই হলো সমাজের বাস্তবতা। সমাজ রসিকতা করতে ও দেখতে পছন্দ করে। কিš‘ এই রসিকতার কারণে কেউ কষ্ট পেল কি না বা কারোর আত্মসম্মানে আঘাত করা হলো কি না, তা ভেবে দেখার তাদের সময় নেই।

 

শুধু অস্কারের মঞ্চে নয়, টিভির যত জনপ্রিয় কমেডি অনুষ্ঠান আছে, সেখানেও কিš‘ অবলীলায় সেক্সিস্ট এবং বডি শেমিং-জাতীয় রসিকতা করা হয়। মানুষের আকার, আকৃতি, চেহারা নিয়ে রসিকতা করা, মোটা ও কালো মানুষদের নিয়ে মজা করা, পঙ্গু বা খোঁড়া মানুষদের হাঁটা নিয়ে রসিকতা করা, ইত্যাদি চলে। অনেক সময় স্ট্যান্ডআপ কমেডি যারা করেন, তারা মিমিক করতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের গলার স্বর নকল করেন। ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে হাসাহাসি করেন। এতে কিন্তু পুরো একটি কমিউনিটিকে অসম্মান করা হয়। অথচ বডি শেমিং বা কমিউনিটি শেমিংয়ের এই বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়ার বা অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকে না। উল্টো মিডিয়া নিজেদের টিআরপি বাড়াতে এই ধরনের কনটেন্টগুলোকেই বেছে নেয়। কারণ, সমাজের লোকেরা এগুলোই খায় বেশি। জনপ্রিয় হতে হলে সমাজের কাছে এসব কনটেন্ট বেচা সহজ। যে কারণেই দিনে দিনে এসব রসিকতা আরও বাড়ছে।

 


অথচ প্রত্যেক মানুষ আলাদা; আলাদা তাদের গঠন, স্কিন কালার। এটাই স্বাভাবিক ও প্রকৃতির সৌন্দর্য। তাই আমাদের কোনো অধিকার নেই নিজেদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি দিয়ে অন্যের সৌন্দর্য মাপা। আধুনিক সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের সবার উচিত একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আমাদের বোঝা উচিত রসিকতার নামে বডি শেমিং, যা অন্যকে দুঃখ দেয়, কষ্ট দেয়, ছোট করে, তা কখনো কোনো সুস্থ বিনোদনের বিষয় হতে পারে না।

 

ছবি: সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
প্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতাসমস্যা

বডি শেমিং : সভ্য সমাজে অসভ্যতার চর্চা

করেছে Suraiya Naznin মে ২৫, ২০২২

সাবিরা ইসলাম

কেউ কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণের জন্য দায়ী নয়। সুতরাং কারও শারীরিক উচ্চতা, রং বা আকৃতি নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা অসভ্যতার নামান্তর। যদিও অহরহ আমরা তা করি। একজন মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কাজে, মেধায়, মননে-

আমরা বলি মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বিশ্বাস করি এ কথা। আবার লালনও করি। তবে স্রষ্টার কোন সৃষ্টিই-বা শ্রেষ্ঠ নয়? এমন একটি সৃষ্টি কি আছে, যা মানুষ সৃষ্টি করতে পারে? পারে না। মানুষ যা পারে তা হলো স্রষ্টার সৃষ্টিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করতে, সম্মান করতে, মর্যাদা দিতে। ভালো পোশাক, দামি অলংকার বা আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু দিয়ে শরীরকে আবৃত করার নামই সাজ নয়। বরং একজন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশও তার অবস্থানকে সাজিয়ে তোলা, উন্নত করা। আমরা অনেকেই তা করি না। করতে পারি না। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক উচ্চতায় ত্রুটি বা ঘাটতি রয়েছে।

 

আজকের বিষয়টি বডি শেমিং নিয়ে। বডি শেমিং কী? সহজ ভাষায় বডি শেমিং হলো কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণ নিয়ে কটাক্ষ করা, আঘাত করা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ করা বা ব্যঙ্গ করা। মানসিকভাবে বিপন্ন করে তোলা।

আমাদের মানতে হবে, জগতের সব সৃষ্টি এক রকম নয়। এ জগৎকে সাজানোই হয়েছে বৈচিত্র্য দিয়ে। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি একেকজনকে একেক রকম করে তৈরি করেছেন দুটি কারণে। এক. আমরা যেন সর্বাবস্থায় স্রষ্টার সৃষ্টিবৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হই এবং দুই. আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজের জন্য শুকরিয়া প্রকাশ করি। কিন্তু আমরা তা করি না। বরং স্রষ্টার সৃষ্টিকে অপমান করি, ব্যঙ্গ করি, তাচ্ছিল্য দেখাই।

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে আমরা খুব সহজেই সহপাঠীর শারীরিক ত্রুটি নিয়ে কথা বলি। প্রকাশ্যে তাকে নানা ধরনের টাইটেল দিয়ে ফেলি। উ”চতায় কম হলে বাটলু, বাটুস, বাইট্টা, খাইট্যা, বামন এমন সব নামকরণ করি। আবার উচ্চতা বেশি হলে লম্বু, তালগাছ, কুতুব মিনার বলতেও ছাড়ি না। গায়ের রং কালো হলে নিগ্রো, কালাচান, ব্ল্যাক ডায়মন্ড এসব বলি। মোটা হলে কোন গুদামের চাল খায়, জলহস্তী, হাতি বলি। হালকা-পাতলা হলেও নিস্তার নেই। সে ক্ষেত্রেও তালপাতার সেপাই, রবিউল, শুঁটকি, জীবনেও কিছু খায় নাই ধরনের মন্তব্য করি। আমরা এসব নামে যাদের নামকরণ করি, তাদের মনোযাতনা আমরা কেউ বুঝি না বা বোঝার চেষ্টা করি না। এতে যে তারা নিজেদের হীন মনে করে, করতে পারে, মনে মনে কষ্ট পায়, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।

মনে রাখতে হবে, কেউ কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণের জন্য দায়ী নয়। সুতরাং কারও শারীরিক উ”চতা, রং বা আকৃতি নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা অসভ্যতার নামান্তর। যদিও অহরহ আমরা তা করি। একজন মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কাজে, মেধায়, মননে।

ধর্ম কাউকে হেয় করার শিক্ষা দেয় না। বরং শারীরিক কোনো অসামঞ্জস্যের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন মানসিকভাবে নিজেকে ছোট মনে না করে, সেদিকে নজর রাখার কথা বলে। এটি প্রতিটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু গুণ রয়েছে। সেই গুণগুলোকে সামনে তুলে আনা জরুরি। সেই কর্মক্ষমতা, সেই যোগ্যতাগুলোকে মূল্যায়ন করা উচিত।

 

 

আমাদের সমাজে শারীরিক ত্রুটি নিয়ে নারীরা বেশি কটাক্ষের শিকার হয়। গায়ের রং কালো হলে তার পদে পদে হেনস্তা। পরিবার চিন্তিত হয় তার পাত্র¯’ করা নিয়ে, পাত্র¯’ করা গেলেও এর পেছনে অর্থনৈতিক দ- দিতে হয় প্রচুর। কারণ মা-বাবা অর্থ দিয়ে মেয়েটির সুখ কিনতে চায়, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চায়, পাত্রপক্ষও তাদের দর একটু বাড়িয়েও রাখে। কিš‘ এতে আদৌ কি কোনো সমাধান হয়? বরং এতে পাত্রপক্ষের লোভের সলতে উসকে দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েটির ওপর আরও বেশি মানসিক চাপ তৈরি করে দেওয়া হয়।

সংসারে বউ শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী কথা-কাটাকাটি হয় না এমন খুব কম পরিবারই আছে। এসব ক্ষেত্রেও দেখা যায় বডি শেমিং করা হয়। শিকার হয় নারীটিই। যদিও সাংসারিক কোনো দায়িত্ব পালনে নারীটি অক্ষম নয়। বর্তমান সময়ে অনেক নারী সংসার, সন্তান এবং চাকরি একা সামলাচ্ছে। তবু কখনো কখনো বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে এ রকম উদাহরণ মেলা কঠিন নয়।

তবে পুরুষ একদম বডি শেমিংয়ের শিকার হয় না, তা নয়। একজন কালো পুরুষের সুন্দরী বউ হতে পারবে না, একজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষের কম বয়সী বউ হওয়া যাবে না, লম্বা পুরুষের ছোটখাটো বউ, খাটো পুরুষের লম্বা বউ হলেও কটু কথায় কেউ ছাড়ে না। কোনো দম্পতি নিঃসন্তান হতে পারবে না, কোনো দম্পতির একাধিক ছেলেসন্তান বা কন্যাসন্তান হতে পারবে না সবকিছু নিয়েই অন্যদের কথা বলতে হবে এবং আঘাত করেই তা বলতে হবে।
কিন্তু আমরা জানিও না, এসব বলার অধিকার আমাদের কারও নেই। অধিকার যে নেই, তা প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন দেশে বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনও রয়েছে।

 

 

* মালয়েশিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে কারও শরীর নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলে সর্বো”চ সোয়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বো”চ এক বছরের জেল কিংবা উভয় শাস্তি হতে পারে।
* ভারতে ২০২০ সালে এক নারী বডি শেমিং করায় তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে তিনি বলেন যে ২০১৭ সালে বিয়ের পর থেকে তারা তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে কথা বলতে থাকে।

* ইন্দোনেশিয়ায় বডি শেমিং করার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাড়ে চার মাস জেল কিংবা সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি জরিমানা হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে বডি শেমিং করলে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি হতে পারে।

* বাংলাদেশে বডি শেমিংয়ের জন্য কেউ সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। কারণ, এর সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছে। ৩৭.২৪ শতাংশ তরুণী আত্মীয়স্বজনের কথায় ও ইঙ্গিতে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। বন্ধুবান্ধবের কাছে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছে ২২ শতাংশ নারী। দেশে অন্যান্য যৌন হয়রানির ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বডি শেমিংয়ের বিষয়ে আইন স্পষ্ট নয়। অন্য আইনগুলো দিয়ে মামলা করা বা থানায় অভিযোগ করা যায়।

* যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্য ও সান ফ্রান্সিসকো, ম্যাডিসনের মতো কয়েকটি শহর ছাড়া বাকি সব জায়গায় চাকরিদাতারা মোটা হওয়ার কারণ দেখিয়ে কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে পারে। এই বৈষম্য থেকে রক্ষা করার কোনো আইন নেই সেখানে। এক জরিপ অনুযায়ী প্রতি ২.৭২ কেজি ওজন বাড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী কর্মীর বেতন ঘণ্টাপ্রতি ২ শতাংশ কমে গেছে।

* অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ওজনধারী প্রায় ১৪ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি তাদের ডাক্তার, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেট ও সহকর্মীদের দ্বারা ফ্যাট-শেমিংয়ের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি (৭৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) ফ্যাট-শেমিং করেছে পরিবারের সদস্যরা।

এর মানে বিশ্বজুড়েই বডি শেমিংয়ের চর্চা রয়েছে। তাতে যত উন্নত দেশই হোক না কেন। গবেষণা বলে, যারা বডি শেমিং করে, তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো হতাশার মধ্যে আছে। যে কারণে তারা তাদের হতাশা বা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটায় অন্যের ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে। যদি বিষয়টি এ রকমই হয়, তবে যারা এমনটি করে, তাদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

বডি শেমিং রোধে নানা দেশে নানা আইন রয়েছে। কিন্তু এতে মূল সমস্যার সমাধান কতটা হয়েছে? আমাদের কথা হলো, সর্বক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ ও কার্যকর সম্ভব হয় না। বডি শেমিং এমন একটি সামাজিক ব্যাধি, যার উৎপত্তি ও বসবাস মানুষের মগজে। একে রোধ করতে হলে পারিবারিক শিক্ষাটা অনেক জরুরি। পরিবার থেকেই শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে কারও শারীরিক আকার-আকৃতি, বর্ণ নিয়ে কটাক্ষ করা মানবিক ও নৈতিক অপরাধ, মানসিক নীচতা। শিশুর উন্নত মানসিকতা, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পরিবারকেই তৈরি করে দিতে হবে।

আগেও বলেছি, কোনো মানুষ তার শারীরিক কোনো ত্রুটির জন্য দায়ী নয়। সুতরাং তাকে সেসব বিষয়ে কথা শোনানো যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, এসব আমরা মানি না। সমাজের প্রায় সব স্তরেই বডিং শেমিংয়ের চর্চা হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত, মূর্খ কিংবা ধনী-গরিব নেই। সব স্তরে এর কম বেশি চর্চা হয়, হচ্ছে। অথচ সারা বিশ্বে ত্রুটিপূর্ণ শারীরিক গঠনসমৃদ্ধ মানুষের সাফল্য কম নয়। স্টিফেন হকিংয়ের নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের এই মহিরুহের নাম বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, যারা শোনেনি।

সুরসম্রাট মোজার্টের সুর মূর্ছনায় মোহিত হয়নি এমন সুরপ্রেমী কি আছে কোথাও? অথচ তারা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না। বিশ্বে এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে, যারা তাদের শারীরিক ত্রুটিকে জয় করে নিজেকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছেন এবং বিশ্ববাসীর জন্য রেখে গেছেন বিশেষ অবদান। আমাদের উচিত তাদের সেই সব অবদান স্মরণে রাখা। মূল্যায়ন করা। সেইমতো নিজেদের আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আমাদের দেশেও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হলে আমরা এমন কিছু শিক্ষার্থীকে পাই, যারা তাদের নানা ধরনের শারীরিক ত্রুটি উপেক্ষা করে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে, আনছে। নিজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অন্যের অনুপ্রেরণার কারণ হয়েছে। সুতরাং মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কর্মে। বডি শেমিং করে সভ্য সমাজে সভ্য মানুষের অসভ্যতার চর্চা বন্ধ করে নিজেকেও শুদ্ধ মানুষ প্রমাণ করার এটাই সময়। সঠিক আইন ও এর প্রয়োগ, পারিবারিক শিক্ষা এবং সচেতনতাই হতে পারে এর থেকে উত্তরণের পথ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, গল্পকার।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনারূপ ও ফ্যাশন

শাড়ি বুঝে শাড়ির যত্ন

করেছে Suraiya Naznin মে ২৩, ২০২২

আফসানা সুমী

শাড়িরা একসময় থাকে শখের সঙ্গী। আমরা মেয়েরা কিশোরী বয়সে একটা-দুইটা শাড়ি কিনি বা মায়ের শাড়িটা পরি এভাবেই সম্পর্কটার শুরু। তারপর এই শাড়িরাই একসময় সবচেয়ে প্রিয় সখী হয়ে যায় আমাদের। আমরা শাড়ি জমাই, কারণে-অকারণে শাড়ি সংগ্রহ করি। নানান রঙের, নানার কারুকাজের শাড়িরা প্রিয় আলমারিতে বসবাস করতে শুরু করে একই ছাদের নিচে আমাদের সঙ্গে।

প্রিয় এই সখীদের যত্ন নিয়েও আমাদের ভাবতে হয়! তাদের কেউ অভিমানী, কেউ রাজকীয় ভাবভঙ্গি নিয়ে থাকে। নানান ঘরানার যত্ন নিয়েই কথা বলি চলো-

 

জামদানি
জামদানিগুলো যেন বড্ড অভিমানী, খুব আদর চাই, মাঝেমধ্যেই তাদের সঙ্গে দেখা করতে হয়, রোদ-ছায়ার লুকোচুরি খেলতে হয়। নইলে দীর্ঘ ব্যবধানের পর শাড়ি বের করলে দেখা যায় ফেঁসে গেছে শাড়ি। তাই যা করবে-

১. জামদানি শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে রোল করে রাখবে
২. মাঝেমধ্যে বের করে রোদে দেবে
৩. জামদানি শাড়ি মাঝেমধ্যে পরলে শাড়ির আয়ু বাড়ে, রেখে দিলেই ক্ষতি।
৪. হ্যান্ডওয়াশ বা ড্রাইওয়াশ নয়, জামদানি কাটা ওয়াশ করতে হয়।

 

 

মসলিন
রানিদের পোশাক মসলিন। এর আভিজাত্যে ইংল্যান্ডের রানি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিয়মিত পরিধান করতেন। তো এই শাড়ির মনমর্জিও কিন্তু রাজকীয়। যা করবে-

১. মসলিন শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখো
২. মাঝেমধ্যে ভাঁজ বদলে দিলে ভালো
৩. শাড়ি চাপাচাপি করে রাখবে না, মসলিনের সুতার ক্ষতি হয় সে ক্ষেত্রে।
৪. মসলিন ড্রাইওয়াশ করতে হয়।

 

সিল্ক
সিল্ক মানেই রেশম রেশম একটা অনুভূতি। সিল্কের শাড়িরা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া একদম পছন্দ করে না। তাই যা করতে হবে-
১. মাঝে রোদে দেবে
২. হ্যাঙ্গারে রাখা যাবে, তবে অনেক শাড়ির সঙ্গে চাপাচাপি করে রাখলে ফেঁসে যাবে।
৩. ড্রাইওয়াশ করাই ভালো। সঙ্গে হালকা তাপে আয়রন করতে হবে। সিল্ক শাড়ি তাপ মোটেই পছন্দ করে না।

 

সুতি
সুতি শাড়িরা তো সবচেয়ে প্রিয় সখী হয় মেয়েদের। একেবারে ছেলেবেলার পুতুল খেলার সাথি যেমন। তাদের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব বলে যত্নে অবহেলা করলে কিন্তু হবে না। তাদেরও চাই ভালোবাসা। কী করবে-

১. সুতি শাড়ি পরার পর সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজ করে রেখে না দিয়ে মেলে দিতে হবে বাতাসে
২. কড়া রোদে শাড়ি শুকাতে দেওয়া যাবে না, রং জ্বলে যাবে।
৩. সুতি শাড়ি আয়রন করার সময় ওপরে পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

 

 

হাতে আঁকা শাড়ি
নানান ঘরানার সুতায় বোনা শাড়িকে রাঙিয়ে তোলে শিল্পীরা আপন রঙে। সেই শাড়ি মসলিন হোক বা সুতি, একটু ভিন্ন যত্ন দাবি রাখে বৈকি।

১. হাতে আঁকা শাড়ি ড্রাইওয়াশ করাই শ্রেয়।
২. শাড়ি অবশ্যই উল্টো করে রোদে দিতে হবে।
৩. আয়রন করার সময় উল্টো পিঠে পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
৪. শাড়ি মেলে রাখতে হবে মাঝেমধ্যে, যাতে বাতাস লাগে।
৫. কখনোই কড়া রোদে দেওয়া যাবে না।

 

মণিপুরি শাড়ি
ক্লজেটে মণিপুরি শাড়িরা হলো সুখের স্মৃতির মতো মায়াবী সখী। তাদের যত্নে যা করবে-

১. কয়েকবার পরার পর মণিপুরি শাড়ির মাড় চলে যায়। জামদানির কাটা ওয়াশ যেমন জামদানি তাঁতিরাই ভালো জানেন, তেমনি মণিপুরি শাড়িতে আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এর তাঁতিরাই যথার্থ। দায়িত্বটা তাদেরই দেবে।

২. পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে না ধোয়াই উত্তম। ড্রাইওয়াশ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

কাতান বা বেনারসি
কাতান ও বেনারসি হলো শাড়ির রাজ্যে সেই বন্ধু, যারা শুধু বিয়ের দাওয়াত দিলেই আসে। বেশি ভাব-ভালোবাসা তাদের পছন্দ নয়। এই শাড়িগুলো তুলনামূলক ভারী হয়। সব শাড়ির সঙ্গে না রেখে অনায়াসে ভাঁজ করে আলাদা বাস্কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। শাড়ি ধোয়া, আয়রনের দায়িত্ব পুরোপুরি লন্ড্রিতে, নিজে করতে যাবে না একদমই।

সব শাড়ির সুরক্ষায় দুটি জরুরি কথা-
১. শাড়ির আলমারি কখনোই স্যাঁতসেঁতে বা ড্যাম্বজ দেয়ালে রাখবে না। এতে শাড়িতে ফাঙ্গাস পড়ে, শাড়ি নষ্ট হয়।
২. শাড়ির ফাঁকে ফাঁকে শুকনো নিমপাতা রাখলে তা শাড়িকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

প্রিয় সখীদের যত্ন আত্তি করলে দেখবে তারা হাসিখুশি থাকবে সব সময়। নতুনের মতো উজ্জ্বলতা ছড়াবে! সখ্য দৃঢ় আর দীর্ঘস্থায়ী হবে। তখন যেকোনো দিন যেকোনো শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে হয়ে উঠবেন প্রজাপতি, থাকবে না কোনো বারণ।

ছবি: আফসানা সুমী
পোশাক: গুটিপোকা

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনাসংগ্রামসম্ভাবনা

‘সুমির সাথে রান্না’ যেমন..

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২৭, ২০২২

জীবনের নিরেট সত্য হলো, আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গে নিজেরই। বলছিলেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা নাজনীন সুমি। তিনি এবার বইমেলায় রন্ধনশিল্পের ওপর একেবারেই ভিন্নধর্মী বই প্রকাশ করেছেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সুরাইয়া নাজনীন-

কেমন আছেন?
সুমি : ভালো আছি। সত্যি বলতে কি আমি সব সময়ই ভালো থাকতে চেষ্টা করি।

আপনি একজন জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী। এই জনপ্রিয় হতে গিয়ে আপনার সংগ্রামটা কেমন ছিল?
সুমি : জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখাটা কঠিন। সংগ্রাম ছাড়া তো সফলতা আসে না। ধৈর্য আর পরিশ্রম মানুষকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কাজটাকে ভালোবেসে করতে হবে। তবেই সে কাজে সফল হবে। বাধা পেয়ে থেমে যাওয়া যাবে না। আর সংগ্রামের গল্প যদি বলতে হয়, আমার সংগ্রামের গল্পটা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে বহুমুখী প্রফেশনাল হয়ে ওঠার। পড়াশোনা করেছি ‘এইচআর’ নিয়ে এমবিএ। ইচ্ছা ছিল করপোরেট জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু সংসার ও সন্তান সামলিয়ে নানা প্রতিকূলতার কারণে সেই করপোরেট জগতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সব সময়ই ইচ্ছা ছিল কিছু একটা করার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এই কিছু একটা করার ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত সব সময়। কারণ নিরেট সত্য হলো আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গেই। ড্রাইভিং শেখা, ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ওপর প্রফেশনাল ট্রেনিং, বারিস্তা ট্রেনিং নেওয়া, ফুড হাইজিনের ওপর কোর্স করা, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের ওপর সার্টিফিকেশন কোর্স করা, ফটোগ্রাফির কোর্স করা এসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলাটা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। সেই থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক খাবারের সঙ্গে পরিচয় আর ভালোবাসা।

 


আফরোজা নাজনীন সুমির বিশেষত্বের জায়গা কোনগুলো?
সুমি : বিশেষত্বের জায়গা যদি বলি, আমি একা এগিয়ে যেতে চাই না, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগে। আমি অসম্ভব পরিশ্রমী, সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি। সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছি, করে যেতে চাই। নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এই পেশার প্রতি আগ্রহ কেন হলো?
সুমি: ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে আর আশপাশের মানুষকে খাওয়ানোর আনন্দ থেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ভালো রান্নার হাত থাকায় খুব অল্প সময়েই আশপাশে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই একদিন ডাক পড়ে যমুনা টেলিভিশনের লাইভ কুকিং শোতে। সেই থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পথচলা শুরু। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি।

হাজারো প্রতিকূলতা সামাল দেওয়া হয় যেভাবে
সুমি : পরিবার থেকে সে রকম কোনো সহযোগিতা না থাকায় একাই ঘরসংসার সব সামলিয়ে হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাইরের জগতে টিকে থেকে, কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু হয় নতুন এক সংগ্রামের। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সুনামের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি সুমিস কিচেনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠিত করা শুরু হয়। শুধু রন্ধনশিল্পী থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে একজন উদ্যোক্তার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হই। এই পথচলার শুরুটাও খুব সহজ ছিল না। আসলে আমাদের এই সমাজে এখনো মেয়েদের এগিয়ে চলতে হয় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই আর সেই বাধাটা প্রথম আসে পরিবার থেকেই। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তো আছেই। ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে প্রথম যে বাধার সম্মুখীন হই, সেটা হলো মূলধনের অপ্রতুলতা। তারপর দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে মেয়েদের ব্যাংক লোন জোগাড় করা খুব একটা সহজ নয়। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।

বাংলাদেশে রন্ধনশিল্পের মূল্যায়ন কেমন?
সুমি : এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে যায় নেই, তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো বলব।

 

নতুনেরা এ পেশায় আসতে হলে কী বলবেন
সুমি : ডেডিকেশন, ধৈর্য থাকতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে।

 

এবার ঈদ নিয়ে আয়োজন কী?
সুমি : ঈদ সব সময়ই পরিবারের সঙ্গে একান্তে কাটাতে চাই। খাবারের আয়োজনেও থাকবে পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের পছন্দের মেনু।

এবারের বইমেলায় আপনার বই প্রকাশ হয়েছে, সেটার ভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্য আছে, জানতে চাই বিস্তারিত
সুমি : ‘সুমির সাথে রান্না’ নামে বাংলানামা প্রকাশনা থেকে এবার আমার যে বইটি বের হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের প্রথম রেসিপি বই, যেখানে কিউআর কোডে রেসিপির ভিডিও দেখা যাবে, নিউট্রিশন ভ্যালু আছে, বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই রেসিপি পাওয়া দেওয়া। প্রতিটি রেসিপির সঙ্গে সেই রেসিপির ছবিও পাওয়া যাবে। তা ছাড়া গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

দেশে রন্ধনশিল্পের জন্য তৈরি প্ল্যাটফর্ম কতটুকু মজবুত?
সুমি : প্ল্যাটফর্ম তো তৈরি থাকে না, করে নিতে হয়। আমাদের আগে অনেকেই সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা শক্ত ভিত করে দেওয়ার।

 

পারিবারিক সাপোর্ট কতটুকু দরকার বলে মনে করেন?
সুমি : একা একা যুদ্ধ করাটা অনেক কঠিন। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া এগিয়ে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। পরিবারের সাপোর্ট থাকলে কঠিন কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনবিশেষ রচনাভালো থাকার ভালো খাবারসচেতনতাস্বাস্থ্য

সুস্বাস্থ্য রমজানে

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২৬, ২০২২

নাজমুল হুদা খান

রমজানে শরীরের রক্তকণিকাসহ বিবিধ ধাতব পদার্থে পরিবর্তন ঘটে, যা পরবর্তী সময়ে শরীরের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। রোজার সময় রক্তের সুগার, চর্বি, রেচনক্রিয়ায় নিঃসৃত ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইটসমূহেও প্রভাবিত করে। এ ছাড়া শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও হার্টের বিভিন্ন অসুখও নিয়ন্ত্রণে রাখে-

 

 

রমজান সংযম, সহিষ্ণুতা, আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর নির্দেশনা পালন, নৈকট্য লাভ ও আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য মাসব্যাপী রোজা পালন করে থাকে। এর মাধ্যমে আত্মা ও মানসিক পরিশুদ্ধতা লাভ, ত্যাগের মহিমায় গড়ে ওঠার প্রত্যয়ী অনুশীলন যেমন সাধিত হয়; ঠিক তেমনি মানবদেহের বিভিন্ন তন্ত্রে বহুবিধ ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয় বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে। রোজার সময় শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অভিযোজন ঘটে। শরীরের তরল অংশের ভারসাম্য রক্ষার্থে রেচনতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র এবং খাদ্য, পরিপাকতন্ত্র প্রভৃতিসহ সংশ্লিষ্ট হরমোন, এনজাইমসমূহে পরিবর্তন সাধিত হয়, যা মানবদেহকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। রমজানে শরীরের রক্তকণিকাসহ বিবিধ ধাতব পদার্থে পরিবর্তন ঘটে, যা পরে শরীরের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। রোজার সময় রক্তের সুগার, চর্বি, রেচনক্রিয়ায় নিঃসৃত ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইটসসমূহেও প্রভাবিত করে। এ ছাড়া শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও হার্টের বিভিন্ন অসুখও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে যেসব শারীরিক অসুস্থতা রোজা রাখার কারণে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব ক্ষেত্রে রোজা না রাখার বিধান রয়েছে।

 


আমাদের দেশে রমজানের শুরুতেই নানা রকম খাবারদাবারের ধুম পড়ে যায়। রোজার সময়ের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এবং চিরায়ত খাদ্যাভ্যাস আমাদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা খাদ্য পরিস্থিতি, বাজার, এমনকি অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
রোজার সময় ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়াদাওয়া থেকে নিবৃত থাকতে হয় সত্যি; তবে ইফতার, রাতের খাবার, সেহিরসহ তিনবেলাই খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি। সুতরাং শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর রেখে খাবার ও মেনু নির্বাচন করলে একদিকে দৈহিক ও মানসিক কষ্ট ছাড়াই যেমন রোজা রাখা যায়, তেমনি পুরো মাসই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব।

ইফতার : সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে একসঙ্গে অনেক খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকে আমাদের। ইফতারিতে আমাদের মূলত নজর থাকে মুখরোচক খাবার : পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, শিঙাড়া, সমুচা, মোগলাই, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের ভাজাপোড়া, টক ও ঝাল খাবারের দিকে; যা সহজেই পেটফাঁপা, বদহজম, বমি বমি ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। তাই ইফতারের সময় খেজুর, নানা ধরনের দেশীয় ফল, নাশপাতি, আঙুর, সফেদা, ডালিম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত। এ ছাড়া কাঁচা ছোলা, দই, চিড়া, গুড়, মধু ইত্যাদিও থাকতে পারে ইফতারের মেনুতে। শরীরের সহজাত পানির ঘাটতি পূরণেও বাজারে নানা রকম পানীয় সহজলভ্য। এদের বেশির ভাগই নানা ধরনের রং, ঘ্রাণজাত সামগ্রীর মিশ্রণে তৈরি; যা শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগ তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করে। তাই পানির ঘাটতি পূরণে সাধারণ পানি, লেবুর শরবত, বেলের শরবত, ডাবের পানি, তরমুজ, বাঙ্গি, মাল্টা, আনারস, খেজুর, আনারের জুস ইত্যাদি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। মোটকথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ইফতারের খাবার হতে হবে নরম, সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর, অতিরিক্ত তেল ও নানা ধরনের মসলাবর্জিত।

 

রমজানে রাতের খাবার : ইফতারের পর এশা ও তারাবিহর পরপরই আমাদের রাতের খাবার গ্রহণের প্রস্তুিত শুরু। খাবারের বিরতিটা স্বল্প হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ক্ষুধা না-ও পেতে পারে। তাই রাতের খাবারটা হালকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। খাবারের পর থেকে সেহ্রির সময়ের ব্যবধানটিও খুব একটা বেশি নয় এবং বেশির ভাগ সময়টা ঘুমেই কেটে যায়। তাই রাতের খাবারে অল্প পরিমাণ ভাত, ভর্তা, শাকসবজি, মাছ ও পাতলা ডালই হতে পারে উৎকৃষ্ট মেনু। মাছের পরিবর্তে মাংসও থাকতে পারে। ভাতের পরিবর্তে রুটি বা খিচুড়িও খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, রাতের খাবার পরিমাণে বেশি হলে বদহজম, পেট ফেঁপে থাকা, অ্যাসিডিটি ও ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সেহরি : সারা দিন অর্থাৎ ১২ থেকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে এই ভেবে আমাদের সেহরি কিছুটা সেহরি খাওয়ার প্রবণতা থাকে; আবার অনেকে সেহরিতে কিছু খান না; কেউ কেউ হালকা পানীয়, ডিম বা ফল খেয়ে সেহরি সেরে ফেলেন। এসব ক্ষেত্রে অনেকের ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টিই কাজ করে থাকে। সেহরি অতিরিক্ত কিংবা কিছু না খাওয়া দুটিই সঠিক পন্থা নয়। সেহরিতে সুস্বাস্থ্য, পুষ্টিকর এবং পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। সেহরিতে মেনুতে ভাত, সবজি, সালাদ, ডিম বা মুরগির মাংস ইত্যাদির সঙ্গে এক গ্লাস দুধ কিংবা খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এ সময়ও ঝাল, তৈল চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। তা না হলে সারা দিন বদহজম, পেট ফেঁপে থাকাজাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রোজায় বর্জনীয় : রোজার ইফতারের তালিকায় আমাদের ঘরে ঘরে ভাজা পোড়া, ফাস্ট ফুড, হালিম, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের ঝাল, অতিরিক্ত তেল ও মসলাজাতীয় খাবার থাকে। রোজা রাখার ফলে আমাদের শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র এবং রেচনতন্ত্রের কার্যক্রমে যে পরিশুদ্ধতার সুযোগ থাকে এসব খাবারে তা ব্যাহত হয় এবং রোজাকে কষ্টকর করে তোলে। রোজায় চিনি, চিনিজাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংকস, চা কিংবা কফি না খাওয়া শরীরের পক্ষে ইতিবাচক। কারণ, চিনিজাতীয় খাবার কোষে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়; কফি শরীর থেকে আরও পানি শুষে নেয়। ফলে রেচনতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যতা বিনষ্ট করে।

শরীরকে সুস্থ রাখার প্রচেষ্টা ইবাদতেরই একটা অংশ। আত্মসংযমের এই রমজান মাসে শরীরকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর, উপাদেয়, সহজে হজমযোগ্য খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পান করার বিষয়ে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

 

লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান, এমফিল, এমপিএইচ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সহকারী পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
কুর্মিটোলা, ঢাকা।

 

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
প্যারেন্টিংবিশেষ রচনাসচেতনতা

উৎসবে বাড়ে শিশুর আত্মবিশ্বাস

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২০, ২০২২

সূরাইয়া ইসলাম মুন্নি

যে কোনো উৎসব শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। ঈদের সময় বাবা-মা শিশুর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে শিশুকে সহায়তা করার সুযোগ দিলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যেমন ঈদের শুকনো বা কাঁচাবাজারে শিশুর অংশগ্রহণ, ঘর গোছানো, জিনিসপত্র পরিষ্কার ও মোছা, রান্নায় শিশুর অংশগ্রহণ। এভাবে শিশুকে ব্যস্ত রাখলে তার উৎসব আরও আনন্দময় হবে।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য ঈদ অনেক আনন্দের ও প্রতীক্ষার। পরিবারের বড়দের মতো শিশুরাও অপেক্ষা করে ঈদ উৎসবের। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ২০২০ সালের পর থেকে করোনার কারণে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদ্্যাপনের সুযোগ পায়নি শিশুরা। লকডাউনে না থাকায় এই বছরের রোজা ও ঈদুল ফিতর নিয়ে সবার ভেতরে উত্তেজনা তৈরি করছে। কোনো ধরনের বাধা না থাকায় ঈদের কেনাকাটা করতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঘরের বাইরে যেতে পারবে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, করোনা-পূর্ব সময়ের মতো ঈদে শিশুরা আনন্দ করতে পারবে কি না। ঈদের পুরোনো ভাব ফিরে আনতে ও শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে পরিবারের বড় সদস্যদের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিবারে ঈদ উৎসবের গুরুত্ব ঈদ মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরাও ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করে থাকে।

১. ঈদে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আচরণের প্রচলন আছে। ঈদের ঐতিহ্যবাহী আচরণগুলো বড়দের পাশাপাশি পরিবারের ছোট শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক। যেমন একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া, নতুন জামা পরা, কোলাকুলি করা, সালাম করে সালামি নেওয়া, ইত্যাদি। শিশুদের সঙ্গে শিশুদের বাবা-মায়েরাও উপভোগ করে এ মুহূর্তগুলো।

২. অনেক সময় কর্মব্যস্ততায় বাবা-মা সন্তানকে সময় দিতে পারে না। এ ছাড়া বর্তমানে অনেক বাবা-মা ও সন্তানেরা ইলেকট্রনিক ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব, টিভি) নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। যার ফলে একই পরিবারে কাছাকাছি থেকেও সবার মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। ঈদের সময় ছুটির কারণে পরিবারের সব সদস্য নিজেদের কর্মব্যস্ততাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে নিজেরা একসঙ্গে সময় কাটাতে পারে।

৩. পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন ঐতিহ্য অনুসরণের মাধ্যমে ছোটরা তাদের অতীতের ও বর্তমানের বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। অনেক সময় শিশুরা সারা বছর উৎসবের এ মুহূর্তগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকে, ‘কখন ঈদ আসবে, কখন সালামি পাব।’

৪. ঈদের সময় শিশুরা বাবা-মা বা বন্ধুদের সঙ্গে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের বাসায় ঘুরতে যায়। অনেক সময় ঈদে শিশুরা গ্রামের বাড়িতেও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পায়। ভিন্ন পরিবারের বা ভিন্ন পরিবেশের মানুষদের জীবনযাত্রা দেখে নতুন কিছু শিশুরা শিখতে পারে, যেমন নতুন খাবার চেনা, কোনো নতুন কাজ কীভাবে করতে হয়, ভাষা (আঞ্চলিক ও শুদ্ধ), সামাজিকতা, ইত্যাদি।

৫. ঈদে ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের বড়দের মতো ছোটরাও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে পারে।

৬. ধর্মীয় উৎসব শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। ঈদের সময় বাবা-মা শিশুর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে শিশুকে সহায়তা করার সুযোগ দিলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যেমন ঈদের শুকনো বা কাঁচা বাজারে শিশুর অংশগ্রহণ, ঘর গোছানো, জিনিসপত্র পরিষ্কার ও মোছা, রান্নায় শিশুর অংশগ্রহণ, ইত্যাদি।

৭. ঈদের সময় শিশুরা ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করায় নিজেদের পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারে ও সচেতন হতে পারে।

৮. ঈদের সময় শিশুর সঙ্গে সব সময় যে ইতিবাচক নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটে, এমন নয়। অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটতে পারে। যেমন ঈদের সময় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার জ্যাম বা দূরত্বের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা, রাস্তায় রিকশা বা গাড়ি না পেলে হেঁটে কাছাকাছি গন্তব্যে চলে যাওয়া, ক্লাসের বন্ধুদের বাসায় আসার কথা থাকা সত্ত্বেও না আসা, ইত্যাদি। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা শিশুকে নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শেখায়। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বাবা-মা কীভাবে পরিস্থিতি সামলে নিচ্ছে, তা দেখেও শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারে।

৯. ঈদ-সম্পর্কিত ধর্মীয় গল্প শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তৈরিতে ভূমিকা রাখে। যেমন ঈদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন এতিম শিশুকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এবং শিশুটিকে নিজ পরিবারে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই গল্প থেকে শিশুরা দয়াবান ও সহানুভূতি শিখতে পারে। এ ছাড়া বাবা-মা পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের নিজেদের বিভিন্ন বয়সের মজার গল্প শিশুর সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন, যা শিশুকে আনন্দ দেবে ও শিশুর কল্পনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঈদের ছুটিতে শিশুকে ব্যস্ত রাখার টিপস
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখা জরুরি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুকে যখন বাবা-মা মজাদার কোনো অ্যাকটিভিটি করতে দেবে, শুধু তখনই শিশু নিজের ইচ্ছায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকবে। শিশুকে যে ধরনের অ্যাকটিভিটি দেওয়া যেতে পারে :

১. একসময় ঈদে কার্ড উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানের বন্ধুদের জন্য বা পরিচিত মানুষদের জন্য কার্ড কিনতে পারেন বা নিজেরা একসঙ্গে কার্ড তৈরি করতে পারেন। কার্ডে শুভে”ছাবাণী লেখায় সন্তানের সহায়তা নিন, তাকে কার্ডে লেখার বা ছবি আঁকার সুযোগ করে দিন।

২. ঈদের আগে সন্তানের কাছে জেনে নাও, সে ঈদে কী খেতে চায় এবং সে রান্নায় তোমাকে সহযোগিতা করতে চায় কি না। শিশুকে তার বয়স ও দক্ষতা অনুযায়ী কিছু কাজ করার সুযোগ দাও। শিশুর প্রশংসা করো।

৩. রান্না ছাড়াও ঘরের অন্যান্য কাজে শিশু সহায়তা করতে চাইলে তার ই”ছার গুরুত্ব দাও। যদি শিশু এমন কোনো কাজ করতে চায় যা শিশুর বয়স ও দক্ষতা অনুপযোগী তাহলে শিশুকে কারণসহ ব্যাখ্যা করো কেন তাকে তুমি কাজটি করতে দি”ছ না।

৪. সন্তানের জন্য কোনো একটি উপহার কিনে রাখো, যা তাকে ঈদের দিন উপহার দেবে। সালামির পাশাপাশি উপহার পেয়ে শিশু খুশি হয়ে যাবে। উপহার হিসেবে বয়স উপযোগী বই, রঙের বাক্স, ক্রাফটের উপকরণ ইত্যাদি দিতে পারো।

৫. সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীর বাসায় ঘুরতে যাও। সন্তান স্কুলপড়–য়া হলে সন্তানের বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় যাওয়া যায়। তবে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নাও তারা বাসায় আছে কি না। পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিজেদের বাসায় দাওয়াত করো। সন্তান এর মাধ্যমে সামাজিকতা শিখতে পারবে।

৬. আপনার বাসায় আপনার শিশুর সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের অন্য শিশুদের জন্য বয়স অনুযায়ী প্রতিযোগিতামুলক খেলা ও কুইজের আয়োজন করতে পারেন। সন্তানের সহপাঠীদের, একি বিল্ডিংয়ের শিশুদের বা পারিবারিকভাবে পরিচিত শিশুদের বাসায় আমন্ত্রণ জানান।

৭. ঈদের পূর্বে ও পরে অনেক পরিবার অসহায় মানুষদের পোশাক, খাবার বা আর্থিক সহায়তা করে থাকে। এই ধরনের দাতব্য কাজে সন্তানকে সাথে রাখুন। সন্তানকে জানাতে পারেন- “ঈদ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। মানুষদের বিভিন্ন জিনিস এই জন্য দেয়া হচ্ছে যেন সবাই একসাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে”।

৮. ঈদে শিশু খেলার জন্য অন্য কোন শিশুকে না পেলে শিশু একা খেলতে পারে এমন খেলা শিশুর জন্য তৈরি রাখুন। যেমনঃ গুপ্তধনের সন্ধান। এই খেলায় শিশুকে বিভিন্ন জিনিসের নাম লিখে একটি লিস্ট তৈরি করে দিন। শিশু পড়তে না পারলে জিনিসের ছবি একে দিতে পারেন বা প্রিন্টেড ছবি কাগজে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে পারেন। এখন শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে লিস্টে লেখা জিনিসগুলো খুজে বের করে আপনাকে এনে দিতে বলুন। খেয়াল রাখবেন, লিস্টে শুধুমাত্র ঘরে আছে এমন বস্তুর নাম লিখবেন। খেলার শেষে শিশুর জন্য উপহারও রাখতে পারেন।

৯. বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে গল্পের বই পড়তে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন, ঈদের সিনেমা বা নাটক দেখতে পারেন, রঙিন কাগজ কলম দিয়ে ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে পারেন, বোর্ড গেম বা কার্ড গেম খেলতে পারেন। ঈদের দিন ঘরের সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়া সন্তানের জন্য আনন্দের বিষয়।

ঈদে গ্রামে বা অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়াঃ ইংল্যান্ডে ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় ৪৫% মানুষ জানান, তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হলো ছুটিতে পরিবারের সাথে ঘুরতে যাওয়া। তাই ঈদের ছুটিতে সুখময় স্মৃতি তৈরি করতে গ্রামে ঘুরতে যেতে পারেন। শহরের শিশুরা গ্রামের মনোরম পরিবেশে সুন্দর সময় কাটাতে পারবে।

এছাড়া ঈদে ঢাকা শহরের বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে শহরের ভিতরে দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতে পারেন। যেমন, শিশুপার্ক, শিশুমেলা, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘরসহ বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন। অনেকে ঈদের ছুটিতে সপরিবারে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে আসতে পারেন।

ঈদের ব্যস্ততায় সন্তানের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ ঈদের ছুটি বছরের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলোর একটি। তারপরেও অনেক সময় শিশুরা ঈদের ব্যস্ততায় অপ্রতাশিত আচরণ করে ও শিশুর ভিতরে উদ্বিগ্নভাব দেখা যায়। বিশেষ করে ছোট শিশু যাদের বয়স দেড় বছর থেকে চার বছর তাদের জন্য ঈদের হঠাৎ পরিবর্তন নেয়া বেশ কষ্টকর হয়। অনেক সময় শিশু কান্না করে, জিদ করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাবা- মাকে শান্ত থেকে সন্তানের চাহিদায় মনযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে যে ঘরে মানুষ কম থাকবে, শব্দ কম থাকবে শিশুর সাথে কিছুক্ষণ সময় আলাদাভাবে ওই ঘরে কাটাতে হবে। শিশু শান্ত হলে তাকে আবার সবার মাঝে নিয়ে যেতে হবে।

ঈদে বাসায় পরিচিত অনেকেই ঘুরতে আসে। এইসব ক্ষেত্রে শিশু কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশির কাছে যেতে না চাইলে তাকে জোর করবেন না। শিশুকে নিজের মতো খেলাধুলা করতে দিন।

ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে ফিরে যান। দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করা শুরু করলে শিশুর ভিতরের উদ্বিগ্নভাব কমে যাবে। এছাড়া শিশুকে নিয়ে বাসার বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় সাথে রাখুন।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ওয়েডিং ডেস্টিনেশন

তুমিই রোদসী

  • স্বপ্ন দেখি নারী দিবসের দরকারই হবে না







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook