রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
লেখক

Suraiya Naznin

Suraiya Naznin

বিশেষ রচনারূপ ও ফ্যাশন

শাড়ি বুঝে শাড়ির যত্ন

করেছে Suraiya Naznin মে ২৩, ২০২২

আফসানা সুমী

শাড়িরা একসময় থাকে শখের সঙ্গী। আমরা মেয়েরা কিশোরী বয়সে একটা-দুইটা শাড়ি কিনি বা মায়ের শাড়িটা পরি এভাবেই সম্পর্কটার শুরু। তারপর এই শাড়িরাই একসময় সবচেয়ে প্রিয় সখী হয়ে যায় আমাদের। আমরা শাড়ি জমাই, কারণে-অকারণে শাড়ি সংগ্রহ করি। নানান রঙের, নানার কারুকাজের শাড়িরা প্রিয় আলমারিতে বসবাস করতে শুরু করে একই ছাদের নিচে আমাদের সঙ্গে।

প্রিয় এই সখীদের যত্ন নিয়েও আমাদের ভাবতে হয়! তাদের কেউ অভিমানী, কেউ রাজকীয় ভাবভঙ্গি নিয়ে থাকে। নানান ঘরানার যত্ন নিয়েই কথা বলি চলো-

 

জামদানি
জামদানিগুলো যেন বড্ড অভিমানী, খুব আদর চাই, মাঝেমধ্যেই তাদের সঙ্গে দেখা করতে হয়, রোদ-ছায়ার লুকোচুরি খেলতে হয়। নইলে দীর্ঘ ব্যবধানের পর শাড়ি বের করলে দেখা যায় ফেঁসে গেছে শাড়ি। তাই যা করবে-

১. জামদানি শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে রোল করে রাখবে
২. মাঝেমধ্যে বের করে রোদে দেবে
৩. জামদানি শাড়ি মাঝেমধ্যে পরলে শাড়ির আয়ু বাড়ে, রেখে দিলেই ক্ষতি।
৪. হ্যান্ডওয়াশ বা ড্রাইওয়াশ নয়, জামদানি কাটা ওয়াশ করতে হয়।

 

 

মসলিন
রানিদের পোশাক মসলিন। এর আভিজাত্যে ইংল্যান্ডের রানি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিয়মিত পরিধান করতেন। তো এই শাড়ির মনমর্জিও কিন্তু রাজকীয়। যা করবে-

১. মসলিন শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখো
২. মাঝেমধ্যে ভাঁজ বদলে দিলে ভালো
৩. শাড়ি চাপাচাপি করে রাখবে না, মসলিনের সুতার ক্ষতি হয় সে ক্ষেত্রে।
৪. মসলিন ড্রাইওয়াশ করতে হয়।

 

সিল্ক
সিল্ক মানেই রেশম রেশম একটা অনুভূতি। সিল্কের শাড়িরা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া একদম পছন্দ করে না। তাই যা করতে হবে-
১. মাঝে রোদে দেবে
২. হ্যাঙ্গারে রাখা যাবে, তবে অনেক শাড়ির সঙ্গে চাপাচাপি করে রাখলে ফেঁসে যাবে।
৩. ড্রাইওয়াশ করাই ভালো। সঙ্গে হালকা তাপে আয়রন করতে হবে। সিল্ক শাড়ি তাপ মোটেই পছন্দ করে না।

 

সুতি
সুতি শাড়িরা তো সবচেয়ে প্রিয় সখী হয় মেয়েদের। একেবারে ছেলেবেলার পুতুল খেলার সাথি যেমন। তাদের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব বলে যত্নে অবহেলা করলে কিন্তু হবে না। তাদেরও চাই ভালোবাসা। কী করবে-

১. সুতি শাড়ি পরার পর সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজ করে রেখে না দিয়ে মেলে দিতে হবে বাতাসে
২. কড়া রোদে শাড়ি শুকাতে দেওয়া যাবে না, রং জ্বলে যাবে।
৩. সুতি শাড়ি আয়রন করার সময় ওপরে পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

 

 

হাতে আঁকা শাড়ি
নানান ঘরানার সুতায় বোনা শাড়িকে রাঙিয়ে তোলে শিল্পীরা আপন রঙে। সেই শাড়ি মসলিন হোক বা সুতি, একটু ভিন্ন যত্ন দাবি রাখে বৈকি।

১. হাতে আঁকা শাড়ি ড্রাইওয়াশ করাই শ্রেয়।
২. শাড়ি অবশ্যই উল্টো করে রোদে দিতে হবে।
৩. আয়রন করার সময় উল্টো পিঠে পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
৪. শাড়ি মেলে রাখতে হবে মাঝেমধ্যে, যাতে বাতাস লাগে।
৫. কখনোই কড়া রোদে দেওয়া যাবে না।

 

মণিপুরি শাড়ি
ক্লজেটে মণিপুরি শাড়িরা হলো সুখের স্মৃতির মতো মায়াবী সখী। তাদের যত্নে যা করবে-

১. কয়েকবার পরার পর মণিপুরি শাড়ির মাড় চলে যায়। জামদানির কাটা ওয়াশ যেমন জামদানি তাঁতিরাই ভালো জানেন, তেমনি মণিপুরি শাড়িতে আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এর তাঁতিরাই যথার্থ। দায়িত্বটা তাদেরই দেবে।

২. পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে না ধোয়াই উত্তম। ড্রাইওয়াশ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

কাতান বা বেনারসি
কাতান ও বেনারসি হলো শাড়ির রাজ্যে সেই বন্ধু, যারা শুধু বিয়ের দাওয়াত দিলেই আসে। বেশি ভাব-ভালোবাসা তাদের পছন্দ নয়। এই শাড়িগুলো তুলনামূলক ভারী হয়। সব শাড়ির সঙ্গে না রেখে অনায়াসে ভাঁজ করে আলাদা বাস্কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। শাড়ি ধোয়া, আয়রনের দায়িত্ব পুরোপুরি লন্ড্রিতে, নিজে করতে যাবে না একদমই।

সব শাড়ির সুরক্ষায় দুটি জরুরি কথা-
১. শাড়ির আলমারি কখনোই স্যাঁতসেঁতে বা ড্যাম্বজ দেয়ালে রাখবে না। এতে শাড়িতে ফাঙ্গাস পড়ে, শাড়ি নষ্ট হয়।
২. শাড়ির ফাঁকে ফাঁকে শুকনো নিমপাতা রাখলে তা শাড়িকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

প্রিয় সখীদের যত্ন আত্তি করলে দেখবে তারা হাসিখুশি থাকবে সব সময়। নতুনের মতো উজ্জ্বলতা ছড়াবে! সখ্য দৃঢ় আর দীর্ঘস্থায়ী হবে। তখন যেকোনো দিন যেকোনো শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে হয়ে উঠবেন প্রজাপতি, থাকবে না কোনো বারণ।

ছবি: আফসানা সুমী
পোশাক: গুটিপোকা

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনাসংগ্রামসম্ভাবনা

‘সুমির সাথে রান্না’ যেমন..

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২৭, ২০২২

জীবনের নিরেট সত্য হলো, আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গে নিজেরই। বলছিলেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা নাজনীন সুমি। তিনি এবার বইমেলায় রন্ধনশিল্পের ওপর একেবারেই ভিন্নধর্মী বই প্রকাশ করেছেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সুরাইয়া নাজনীন-

কেমন আছেন?
সুমি : ভালো আছি। সত্যি বলতে কি আমি সব সময়ই ভালো থাকতে চেষ্টা করি।

আপনি একজন জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী। এই জনপ্রিয় হতে গিয়ে আপনার সংগ্রামটা কেমন ছিল?
সুমি : জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখাটা কঠিন। সংগ্রাম ছাড়া তো সফলতা আসে না। ধৈর্য আর পরিশ্রম মানুষকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কাজটাকে ভালোবেসে করতে হবে। তবেই সে কাজে সফল হবে। বাধা পেয়ে থেমে যাওয়া যাবে না। আর সংগ্রামের গল্প যদি বলতে হয়, আমার সংগ্রামের গল্পটা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে বহুমুখী প্রফেশনাল হয়ে ওঠার। পড়াশোনা করেছি ‘এইচআর’ নিয়ে এমবিএ। ইচ্ছা ছিল করপোরেট জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু সংসার ও সন্তান সামলিয়ে নানা প্রতিকূলতার কারণে সেই করপোরেট জগতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সব সময়ই ইচ্ছা ছিল কিছু একটা করার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এই কিছু একটা করার ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত সব সময়। কারণ নিরেট সত্য হলো আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গেই। ড্রাইভিং শেখা, ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ওপর প্রফেশনাল ট্রেনিং, বারিস্তা ট্রেনিং নেওয়া, ফুড হাইজিনের ওপর কোর্স করা, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের ওপর সার্টিফিকেশন কোর্স করা, ফটোগ্রাফির কোর্স করা এসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলাটা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। সেই থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক খাবারের সঙ্গে পরিচয় আর ভালোবাসা।

 


আফরোজা নাজনীন সুমির বিশেষত্বের জায়গা কোনগুলো?
সুমি : বিশেষত্বের জায়গা যদি বলি, আমি একা এগিয়ে যেতে চাই না, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগে। আমি অসম্ভব পরিশ্রমী, সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি। সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছি, করে যেতে চাই। নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এই পেশার প্রতি আগ্রহ কেন হলো?
সুমি: ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে আর আশপাশের মানুষকে খাওয়ানোর আনন্দ থেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ভালো রান্নার হাত থাকায় খুব অল্প সময়েই আশপাশে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই একদিন ডাক পড়ে যমুনা টেলিভিশনের লাইভ কুকিং শোতে। সেই থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পথচলা শুরু। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি।

হাজারো প্রতিকূলতা সামাল দেওয়া হয় যেভাবে
সুমি : পরিবার থেকে সে রকম কোনো সহযোগিতা না থাকায় একাই ঘরসংসার সব সামলিয়ে হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাইরের জগতে টিকে থেকে, কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু হয় নতুন এক সংগ্রামের। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সুনামের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি সুমিস কিচেনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠিত করা শুরু হয়। শুধু রন্ধনশিল্পী থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে একজন উদ্যোক্তার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হই। এই পথচলার শুরুটাও খুব সহজ ছিল না। আসলে আমাদের এই সমাজে এখনো মেয়েদের এগিয়ে চলতে হয় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই আর সেই বাধাটা প্রথম আসে পরিবার থেকেই। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তো আছেই। ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে প্রথম যে বাধার সম্মুখীন হই, সেটা হলো মূলধনের অপ্রতুলতা। তারপর দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে মেয়েদের ব্যাংক লোন জোগাড় করা খুব একটা সহজ নয়। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।

বাংলাদেশে রন্ধনশিল্পের মূল্যায়ন কেমন?
সুমি : এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে যায় নেই, তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো বলব।

 

নতুনেরা এ পেশায় আসতে হলে কী বলবেন
সুমি : ডেডিকেশন, ধৈর্য থাকতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে।

 

এবার ঈদ নিয়ে আয়োজন কী?
সুমি : ঈদ সব সময়ই পরিবারের সঙ্গে একান্তে কাটাতে চাই। খাবারের আয়োজনেও থাকবে পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের পছন্দের মেনু।

এবারের বইমেলায় আপনার বই প্রকাশ হয়েছে, সেটার ভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্য আছে, জানতে চাই বিস্তারিত
সুমি : ‘সুমির সাথে রান্না’ নামে বাংলানামা প্রকাশনা থেকে এবার আমার যে বইটি বের হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের প্রথম রেসিপি বই, যেখানে কিউআর কোডে রেসিপির ভিডিও দেখা যাবে, নিউট্রিশন ভ্যালু আছে, বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই রেসিপি পাওয়া দেওয়া। প্রতিটি রেসিপির সঙ্গে সেই রেসিপির ছবিও পাওয়া যাবে। তা ছাড়া গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

দেশে রন্ধনশিল্পের জন্য তৈরি প্ল্যাটফর্ম কতটুকু মজবুত?
সুমি : প্ল্যাটফর্ম তো তৈরি থাকে না, করে নিতে হয়। আমাদের আগে অনেকেই সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা শক্ত ভিত করে দেওয়ার।

 

পারিবারিক সাপোর্ট কতটুকু দরকার বলে মনে করেন?
সুমি : একা একা যুদ্ধ করাটা অনেক কঠিন। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া এগিয়ে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। পরিবারের সাপোর্ট থাকলে কঠিন কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনবিশেষ রচনাভালো থাকার ভালো খাবারসচেতনতাস্বাস্থ্য

সুস্বাস্থ্য রমজানে

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২৬, ২০২২

নাজমুল হুদা খান

রমজানে শরীরের রক্তকণিকাসহ বিবিধ ধাতব পদার্থে পরিবর্তন ঘটে, যা পরবর্তী সময়ে শরীরের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। রোজার সময় রক্তের সুগার, চর্বি, রেচনক্রিয়ায় নিঃসৃত ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইটসমূহেও প্রভাবিত করে। এ ছাড়া শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও হার্টের বিভিন্ন অসুখও নিয়ন্ত্রণে রাখে-

 

 

রমজান সংযম, সহিষ্ণুতা, আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর নির্দেশনা পালন, নৈকট্য লাভ ও আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য মাসব্যাপী রোজা পালন করে থাকে। এর মাধ্যমে আত্মা ও মানসিক পরিশুদ্ধতা লাভ, ত্যাগের মহিমায় গড়ে ওঠার প্রত্যয়ী অনুশীলন যেমন সাধিত হয়; ঠিক তেমনি মানবদেহের বিভিন্ন তন্ত্রে বহুবিধ ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয় বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে। রোজার সময় শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অভিযোজন ঘটে। শরীরের তরল অংশের ভারসাম্য রক্ষার্থে রেচনতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র এবং খাদ্য, পরিপাকতন্ত্র প্রভৃতিসহ সংশ্লিষ্ট হরমোন, এনজাইমসমূহে পরিবর্তন সাধিত হয়, যা মানবদেহকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। রমজানে শরীরের রক্তকণিকাসহ বিবিধ ধাতব পদার্থে পরিবর্তন ঘটে, যা পরে শরীরের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। রোজার সময় রক্তের সুগার, চর্বি, রেচনক্রিয়ায় নিঃসৃত ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইটসসমূহেও প্রভাবিত করে। এ ছাড়া শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও হার্টের বিভিন্ন অসুখও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে যেসব শারীরিক অসুস্থতা রোজা রাখার কারণে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব ক্ষেত্রে রোজা না রাখার বিধান রয়েছে।

 


আমাদের দেশে রমজানের শুরুতেই নানা রকম খাবারদাবারের ধুম পড়ে যায়। রোজার সময়ের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এবং চিরায়ত খাদ্যাভ্যাস আমাদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা খাদ্য পরিস্থিতি, বাজার, এমনকি অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
রোজার সময় ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়াদাওয়া থেকে নিবৃত থাকতে হয় সত্যি; তবে ইফতার, রাতের খাবার, সেহিরসহ তিনবেলাই খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি। সুতরাং শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর রেখে খাবার ও মেনু নির্বাচন করলে একদিকে দৈহিক ও মানসিক কষ্ট ছাড়াই যেমন রোজা রাখা যায়, তেমনি পুরো মাসই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব।

ইফতার : সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে একসঙ্গে অনেক খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকে আমাদের। ইফতারিতে আমাদের মূলত নজর থাকে মুখরোচক খাবার : পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, শিঙাড়া, সমুচা, মোগলাই, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের ভাজাপোড়া, টক ও ঝাল খাবারের দিকে; যা সহজেই পেটফাঁপা, বদহজম, বমি বমি ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। তাই ইফতারের সময় খেজুর, নানা ধরনের দেশীয় ফল, নাশপাতি, আঙুর, সফেদা, ডালিম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত। এ ছাড়া কাঁচা ছোলা, দই, চিড়া, গুড়, মধু ইত্যাদিও থাকতে পারে ইফতারের মেনুতে। শরীরের সহজাত পানির ঘাটতি পূরণেও বাজারে নানা রকম পানীয় সহজলভ্য। এদের বেশির ভাগই নানা ধরনের রং, ঘ্রাণজাত সামগ্রীর মিশ্রণে তৈরি; যা শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগ তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করে। তাই পানির ঘাটতি পূরণে সাধারণ পানি, লেবুর শরবত, বেলের শরবত, ডাবের পানি, তরমুজ, বাঙ্গি, মাল্টা, আনারস, খেজুর, আনারের জুস ইত্যাদি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। মোটকথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ইফতারের খাবার হতে হবে নরম, সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর, অতিরিক্ত তেল ও নানা ধরনের মসলাবর্জিত।

 

রমজানে রাতের খাবার : ইফতারের পর এশা ও তারাবিহর পরপরই আমাদের রাতের খাবার গ্রহণের প্রস্তুিত শুরু। খাবারের বিরতিটা স্বল্প হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ক্ষুধা না-ও পেতে পারে। তাই রাতের খাবারটা হালকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। খাবারের পর থেকে সেহ্রির সময়ের ব্যবধানটিও খুব একটা বেশি নয় এবং বেশির ভাগ সময়টা ঘুমেই কেটে যায়। তাই রাতের খাবারে অল্প পরিমাণ ভাত, ভর্তা, শাকসবজি, মাছ ও পাতলা ডালই হতে পারে উৎকৃষ্ট মেনু। মাছের পরিবর্তে মাংসও থাকতে পারে। ভাতের পরিবর্তে রুটি বা খিচুড়িও খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, রাতের খাবার পরিমাণে বেশি হলে বদহজম, পেট ফেঁপে থাকা, অ্যাসিডিটি ও ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সেহরি : সারা দিন অর্থাৎ ১২ থেকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে এই ভেবে আমাদের সেহরি কিছুটা সেহরি খাওয়ার প্রবণতা থাকে; আবার অনেকে সেহরিতে কিছু খান না; কেউ কেউ হালকা পানীয়, ডিম বা ফল খেয়ে সেহরি সেরে ফেলেন। এসব ক্ষেত্রে অনেকের ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টিই কাজ করে থাকে। সেহরি অতিরিক্ত কিংবা কিছু না খাওয়া দুটিই সঠিক পন্থা নয়। সেহরিতে সুস্বাস্থ্য, পুষ্টিকর এবং পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। সেহরিতে মেনুতে ভাত, সবজি, সালাদ, ডিম বা মুরগির মাংস ইত্যাদির সঙ্গে এক গ্লাস দুধ কিংবা খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এ সময়ও ঝাল, তৈল চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। তা না হলে সারা দিন বদহজম, পেট ফেঁপে থাকাজাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রোজায় বর্জনীয় : রোজার ইফতারের তালিকায় আমাদের ঘরে ঘরে ভাজা পোড়া, ফাস্ট ফুড, হালিম, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের ঝাল, অতিরিক্ত তেল ও মসলাজাতীয় খাবার থাকে। রোজা রাখার ফলে আমাদের শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র এবং রেচনতন্ত্রের কার্যক্রমে যে পরিশুদ্ধতার সুযোগ থাকে এসব খাবারে তা ব্যাহত হয় এবং রোজাকে কষ্টকর করে তোলে। রোজায় চিনি, চিনিজাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংকস, চা কিংবা কফি না খাওয়া শরীরের পক্ষে ইতিবাচক। কারণ, চিনিজাতীয় খাবার কোষে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়; কফি শরীর থেকে আরও পানি শুষে নেয়। ফলে রেচনতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যতা বিনষ্ট করে।

শরীরকে সুস্থ রাখার প্রচেষ্টা ইবাদতেরই একটা অংশ। আত্মসংযমের এই রমজান মাসে শরীরকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর, উপাদেয়, সহজে হজমযোগ্য খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পান করার বিষয়ে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

 

লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান, এমফিল, এমপিএইচ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সহকারী পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
কুর্মিটোলা, ঢাকা।

 

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
প্যারেন্টিংবিশেষ রচনাসচেতনতা

উৎসবে বাড়ে শিশুর আত্মবিশ্বাস

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২০, ২০২২

সূরাইয়া ইসলাম মুন্নি

যে কোনো উৎসব শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। ঈদের সময় বাবা-মা শিশুর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে শিশুকে সহায়তা করার সুযোগ দিলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যেমন ঈদের শুকনো বা কাঁচাবাজারে শিশুর অংশগ্রহণ, ঘর গোছানো, জিনিসপত্র পরিষ্কার ও মোছা, রান্নায় শিশুর অংশগ্রহণ। এভাবে শিশুকে ব্যস্ত রাখলে তার উৎসব আরও আনন্দময় হবে।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য ঈদ অনেক আনন্দের ও প্রতীক্ষার। পরিবারের বড়দের মতো শিশুরাও অপেক্ষা করে ঈদ উৎসবের। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ২০২০ সালের পর থেকে করোনার কারণে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদ্্যাপনের সুযোগ পায়নি শিশুরা। লকডাউনে না থাকায় এই বছরের রোজা ও ঈদুল ফিতর নিয়ে সবার ভেতরে উত্তেজনা তৈরি করছে। কোনো ধরনের বাধা না থাকায় ঈদের কেনাকাটা করতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঘরের বাইরে যেতে পারবে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, করোনা-পূর্ব সময়ের মতো ঈদে শিশুরা আনন্দ করতে পারবে কি না। ঈদের পুরোনো ভাব ফিরে আনতে ও শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে পরিবারের বড় সদস্যদের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিবারে ঈদ উৎসবের গুরুত্ব ঈদ মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরাও ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করে থাকে।

১. ঈদে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আচরণের প্রচলন আছে। ঈদের ঐতিহ্যবাহী আচরণগুলো বড়দের পাশাপাশি পরিবারের ছোট শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক। যেমন একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া, নতুন জামা পরা, কোলাকুলি করা, সালাম করে সালামি নেওয়া, ইত্যাদি। শিশুদের সঙ্গে শিশুদের বাবা-মায়েরাও উপভোগ করে এ মুহূর্তগুলো।

২. অনেক সময় কর্মব্যস্ততায় বাবা-মা সন্তানকে সময় দিতে পারে না। এ ছাড়া বর্তমানে অনেক বাবা-মা ও সন্তানেরা ইলেকট্রনিক ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব, টিভি) নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। যার ফলে একই পরিবারে কাছাকাছি থেকেও সবার মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। ঈদের সময় ছুটির কারণে পরিবারের সব সদস্য নিজেদের কর্মব্যস্ততাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে নিজেরা একসঙ্গে সময় কাটাতে পারে।

৩. পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন ঐতিহ্য অনুসরণের মাধ্যমে ছোটরা তাদের অতীতের ও বর্তমানের বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। অনেক সময় শিশুরা সারা বছর উৎসবের এ মুহূর্তগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকে, ‘কখন ঈদ আসবে, কখন সালামি পাব।’

৪. ঈদের সময় শিশুরা বাবা-মা বা বন্ধুদের সঙ্গে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের বাসায় ঘুরতে যায়। অনেক সময় ঈদে শিশুরা গ্রামের বাড়িতেও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পায়। ভিন্ন পরিবারের বা ভিন্ন পরিবেশের মানুষদের জীবনযাত্রা দেখে নতুন কিছু শিশুরা শিখতে পারে, যেমন নতুন খাবার চেনা, কোনো নতুন কাজ কীভাবে করতে হয়, ভাষা (আঞ্চলিক ও শুদ্ধ), সামাজিকতা, ইত্যাদি।

৫. ঈদে ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের বড়দের মতো ছোটরাও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে পারে।

৬. ধর্মীয় উৎসব শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। ঈদের সময় বাবা-মা শিশুর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে শিশুকে সহায়তা করার সুযোগ দিলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যেমন ঈদের শুকনো বা কাঁচা বাজারে শিশুর অংশগ্রহণ, ঘর গোছানো, জিনিসপত্র পরিষ্কার ও মোছা, রান্নায় শিশুর অংশগ্রহণ, ইত্যাদি।

৭. ঈদের সময় শিশুরা ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করায় নিজেদের পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারে ও সচেতন হতে পারে।

৮. ঈদের সময় শিশুর সঙ্গে সব সময় যে ইতিবাচক নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটে, এমন নয়। অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটতে পারে। যেমন ঈদের সময় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার জ্যাম বা দূরত্বের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা, রাস্তায় রিকশা বা গাড়ি না পেলে হেঁটে কাছাকাছি গন্তব্যে চলে যাওয়া, ক্লাসের বন্ধুদের বাসায় আসার কথা থাকা সত্ত্বেও না আসা, ইত্যাদি। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা শিশুকে নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শেখায়। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বাবা-মা কীভাবে পরিস্থিতি সামলে নিচ্ছে, তা দেখেও শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারে।

৯. ঈদ-সম্পর্কিত ধর্মীয় গল্প শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তৈরিতে ভূমিকা রাখে। যেমন ঈদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন এতিম শিশুকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এবং শিশুটিকে নিজ পরিবারে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই গল্প থেকে শিশুরা দয়াবান ও সহানুভূতি শিখতে পারে। এ ছাড়া বাবা-মা পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের নিজেদের বিভিন্ন বয়সের মজার গল্প শিশুর সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন, যা শিশুকে আনন্দ দেবে ও শিশুর কল্পনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঈদের ছুটিতে শিশুকে ব্যস্ত রাখার টিপস
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখা জরুরি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুকে যখন বাবা-মা মজাদার কোনো অ্যাকটিভিটি করতে দেবে, শুধু তখনই শিশু নিজের ইচ্ছায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকবে। শিশুকে যে ধরনের অ্যাকটিভিটি দেওয়া যেতে পারে :

১. একসময় ঈদে কার্ড উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানের বন্ধুদের জন্য বা পরিচিত মানুষদের জন্য কার্ড কিনতে পারেন বা নিজেরা একসঙ্গে কার্ড তৈরি করতে পারেন। কার্ডে শুভে”ছাবাণী লেখায় সন্তানের সহায়তা নিন, তাকে কার্ডে লেখার বা ছবি আঁকার সুযোগ করে দিন।

২. ঈদের আগে সন্তানের কাছে জেনে নাও, সে ঈদে কী খেতে চায় এবং সে রান্নায় তোমাকে সহযোগিতা করতে চায় কি না। শিশুকে তার বয়স ও দক্ষতা অনুযায়ী কিছু কাজ করার সুযোগ দাও। শিশুর প্রশংসা করো।

৩. রান্না ছাড়াও ঘরের অন্যান্য কাজে শিশু সহায়তা করতে চাইলে তার ই”ছার গুরুত্ব দাও। যদি শিশু এমন কোনো কাজ করতে চায় যা শিশুর বয়স ও দক্ষতা অনুপযোগী তাহলে শিশুকে কারণসহ ব্যাখ্যা করো কেন তাকে তুমি কাজটি করতে দি”ছ না।

৪. সন্তানের জন্য কোনো একটি উপহার কিনে রাখো, যা তাকে ঈদের দিন উপহার দেবে। সালামির পাশাপাশি উপহার পেয়ে শিশু খুশি হয়ে যাবে। উপহার হিসেবে বয়স উপযোগী বই, রঙের বাক্স, ক্রাফটের উপকরণ ইত্যাদি দিতে পারো।

৫. সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীর বাসায় ঘুরতে যাও। সন্তান স্কুলপড়–য়া হলে সন্তানের বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় যাওয়া যায়। তবে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নাও তারা বাসায় আছে কি না। পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিজেদের বাসায় দাওয়াত করো। সন্তান এর মাধ্যমে সামাজিকতা শিখতে পারবে।

৬. আপনার বাসায় আপনার শিশুর সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের অন্য শিশুদের জন্য বয়স অনুযায়ী প্রতিযোগিতামুলক খেলা ও কুইজের আয়োজন করতে পারেন। সন্তানের সহপাঠীদের, একি বিল্ডিংয়ের শিশুদের বা পারিবারিকভাবে পরিচিত শিশুদের বাসায় আমন্ত্রণ জানান।

৭. ঈদের পূর্বে ও পরে অনেক পরিবার অসহায় মানুষদের পোশাক, খাবার বা আর্থিক সহায়তা করে থাকে। এই ধরনের দাতব্য কাজে সন্তানকে সাথে রাখুন। সন্তানকে জানাতে পারেন- “ঈদ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। মানুষদের বিভিন্ন জিনিস এই জন্য দেয়া হচ্ছে যেন সবাই একসাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে”।

৮. ঈদে শিশু খেলার জন্য অন্য কোন শিশুকে না পেলে শিশু একা খেলতে পারে এমন খেলা শিশুর জন্য তৈরি রাখুন। যেমনঃ গুপ্তধনের সন্ধান। এই খেলায় শিশুকে বিভিন্ন জিনিসের নাম লিখে একটি লিস্ট তৈরি করে দিন। শিশু পড়তে না পারলে জিনিসের ছবি একে দিতে পারেন বা প্রিন্টেড ছবি কাগজে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে পারেন। এখন শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে লিস্টে লেখা জিনিসগুলো খুজে বের করে আপনাকে এনে দিতে বলুন। খেয়াল রাখবেন, লিস্টে শুধুমাত্র ঘরে আছে এমন বস্তুর নাম লিখবেন। খেলার শেষে শিশুর জন্য উপহারও রাখতে পারেন।

৯. বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে গল্পের বই পড়তে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন, ঈদের সিনেমা বা নাটক দেখতে পারেন, রঙিন কাগজ কলম দিয়ে ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে পারেন, বোর্ড গেম বা কার্ড গেম খেলতে পারেন। ঈদের দিন ঘরের সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়া সন্তানের জন্য আনন্দের বিষয়।

ঈদে গ্রামে বা অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়াঃ ইংল্যান্ডে ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় ৪৫% মানুষ জানান, তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হলো ছুটিতে পরিবারের সাথে ঘুরতে যাওয়া। তাই ঈদের ছুটিতে সুখময় স্মৃতি তৈরি করতে গ্রামে ঘুরতে যেতে পারেন। শহরের শিশুরা গ্রামের মনোরম পরিবেশে সুন্দর সময় কাটাতে পারবে।

এছাড়া ঈদে ঢাকা শহরের বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে শহরের ভিতরে দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতে পারেন। যেমন, শিশুপার্ক, শিশুমেলা, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘরসহ বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন। অনেকে ঈদের ছুটিতে সপরিবারে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে আসতে পারেন।

ঈদের ব্যস্ততায় সন্তানের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ ঈদের ছুটি বছরের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলোর একটি। তারপরেও অনেক সময় শিশুরা ঈদের ব্যস্ততায় অপ্রতাশিত আচরণ করে ও শিশুর ভিতরে উদ্বিগ্নভাব দেখা যায়। বিশেষ করে ছোট শিশু যাদের বয়স দেড় বছর থেকে চার বছর তাদের জন্য ঈদের হঠাৎ পরিবর্তন নেয়া বেশ কষ্টকর হয়। অনেক সময় শিশু কান্না করে, জিদ করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাবা- মাকে শান্ত থেকে সন্তানের চাহিদায় মনযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে যে ঘরে মানুষ কম থাকবে, শব্দ কম থাকবে শিশুর সাথে কিছুক্ষণ সময় আলাদাভাবে ওই ঘরে কাটাতে হবে। শিশু শান্ত হলে তাকে আবার সবার মাঝে নিয়ে যেতে হবে।

ঈদে বাসায় পরিচিত অনেকেই ঘুরতে আসে। এইসব ক্ষেত্রে শিশু কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশির কাছে যেতে না চাইলে তাকে জোর করবেন না। শিশুকে নিজের মতো খেলাধুলা করতে দিন।

ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে ফিরে যান। দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করা শুরু করলে শিশুর ভিতরের উদ্বিগ্নভাব কমে যাবে। এছাড়া শিশুকে নিয়ে বাসার বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় সাথে রাখুন।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনাসম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২০, ২০২২

দুই বছর পর আবারও হয়তো ঈদের সত্যিকারের বাঁধভাঙা আনন্দ পেতে যাচ্ছি আমরা। গত দুটো বছর আমাদের কেটেছে আপন গৃহে, প্রিয়জনের দূরত্বে। তবে করোনার এবারের হিসাবটা আমাদের জন্য স্বস্তিকর। মৃত্যুর হাহাকার নেই। দূরত্ব মানার অতটা কড়াকড়ি নেই। অন্তরে-বাহিরে যেখানেই তাকানো যাক না কেন, কেমন যেন একটা শান্তি-শ্রান্তির ভাব। ঈদের সত্যিকার অর্থ তো এটাই!
ঈদ আসে খুশির খবর নিয়ে। এই খুশিতে আমরা সাধ্যমতো কেনাকাটা করি। নিজেকে সাজাই। প্রিয়জন আর প্রয়োজনের এই আয়োজনে বাণিজ্যে রমরমা হাওয়া লাগে। ঈদের এই ব্যাপকতাকে আমরা স্বাগত জানাই।

তবে ঈদ মানে নজরুলের সেই, ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’Ñএই গান নয়। জীবনের মানে মানুষভেদে ভিন্ন। করোনা আমাদের জীবনের সঙ্গে জীবিকা নিয়েছে। এর সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে অস্থির করে দিয়েছে। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটানো এখন কারও কারও কাছে জীবনের প্রধান সংগ্রাম। এই ঈদে আমরা যদি তাদের পাশে ভালোবাসার হাত বাড়াতে পারি, তাহলেই না ঈদ সত্যিকার আনন্দ নিয়ে আসবে সবার মাঝে! নজরুল তার সেই বিখ্যাত গানেই কিন্তু বলে গেছেন সে কথা

‘যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ।’

নগরবাসীর এই জীবনে ঈদ মানেই বাড়ি ফেরা। এতগুলো মানুষ একসঙ্গে বাড়ির পথ মাড়ানো মানেই পদে পদে বিরাট ঝক্কি। অনেক দিন পর প্রিয় মুখ দেখার আনন্দ আছে। উচ্ছাস আছে। আমরা কখনোই যেন না ভুলি, বাড়ি ফেরার প্রতি পদে সতর্ক পদক্ষেপই কেবল সেই উচ্ছাসকে ধরতে পারে।

আমরা এবারের ঈদসংখ্যায় ঈদের সালামি নিয়ে প্রচ্ছদ রচনা করেছি। সালামি ঈদের আনন্দের পূর্ণতা দেয়। জানান দেয় ছোটদের প্রতি বড়দের ভালোবাসা। এই সালামি আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশও বটে। টিম রোদসীর চেষ্টা ছিল ঈদসংখ্যাকে সুন্দর করে গুছিয়ে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার। সে প্রচেষ্টার সফলতা-ব্যর্থতার ভার পাঠকের হাতে। আমরা শুধু চেয়েছি তোমার আনন্দের ভাগী হতে, এতটুকুই।

মঙ্গল হোক সকলের। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনাবাতিঘরশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

ছোটবেলায় ঈদে সালামি ছিল না, আনন্দ ছিল

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ১৮, ২০২২

আনিসুল হক:

আমার ছোটবেলা কেটেছে রংপুরে। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে, বগুড়ার সোনাতলা পিটিআইতে। মার্চ মাসে মিছিলে যেতাম, স্লোগান দিতাম, ‘ভুট্টোর পেটে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ একটা বাঁশঝাড়ে গিয়ে বাঁশ কেটে এনে ছোট্ট লাঠি কতগুলো বানিয়েছিলাম আমরা, আমাদের ভাইবোনেরা। তারপর তো শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। আমরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম। যুদ্ধের মধ্যেও ঈদ এসেছিল। সেই ঈদের কিছুই মনে নেই, শুধু একটা কথা ভাসা-ভাসা মনে পড়ছে, ঈদের চাঁদ দেখা না দেখা নিয়ে তর্ক উঠেছিল। গ্রামের মানুষ রেডিওর কথা বিশ্বাস না করে নিজের চোখে চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

১৯৭২ সালে আমরা রংপুরে চলে আসি। সেবারের ঈদের কথা আমার মনে পড়ে। স্কুলের দেয়ালে বোমার শেল আটকে ছিল। সেই অংশটা আমরা বের করে এনেছিলাম। তারপর মাঠের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে সেই গোলার অংশটা রাখা হলো। প্রচ- শব্দে বিস্ফোরণ হলো। আজ ভাবলেও আমার গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। কী ভীষণ বিপদই না সেদিন হতে পারত।

আমাদের এক বন্ধু, রংপুর জিলা স্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়েছি, তার নাম দীপু। তিনি এ রকম একটা গোলাকার চাকা পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে গাড়ি বানানোর জন্য মাঝখানে পেরেক পুঁততে গেলে হাতুড়িতে বাড়ি দিয়েছিলেন। সেটা বিস্ফোরিত হয়, তার হাতের কটা আঙুল আর একটা চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই ছিল আমাদের ছোটবেলার পরিস্থিতি। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ। আরেকটা গল্প বলে ঈদের সালামির প্রসঙ্গে আসি।

১৯৭৯ সাল। আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোল। আমি ফার্স্ট হলাম। সেদিন ছিল ছুটির দিন। আমার প্যান্টটা তাই ধুতে দেওয়া হয়েছে। আমি লুঙ্গি পরে পিটিআইয়ের মাঠে খেলছিলাম। রংপুর জিলা স্কুলের হেড স্যার একজন পিয়ন আংকেলকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাকে ধরে আনার জন্য। সাইকেলে করে পিয়ন আংকেল এলেন। আমি তখনো মাঠে খেলছি। তিনি বললেন, ‘সাইকেলে ওঠেন। হেড স্যার ডাকে।’
আমি বললাম, আমি লুঙ্গি পরে আছি। আমার প্যান্ট ধুতে দেওয়া হয়েছে। লুঙ্গি পরে আমি স্কুলে যেতে পারব না।

পিয়ন আংকেল বললেন, ‘স্যারের অর্ডার, আনিসুলকে ধরে আনো। আমি আপনাকে ধরে নিয়ে যাবই।’

অগত্যা লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই আমি স্কুলে হেড স্যারের রুমে গেলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘তুমি বৃত্তিতে ফার্স্ট হয়েছ। তোমাকে আমি দোয়া করি। তোমাকে প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠিয়েছেন। দোয়া করি, আজ তোমাকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠিয়েছেন, একদিন যেন তোমাকে পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠান।’

আমি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। প্যান্টটা পরে বঙ্গভবনে যেতে হবে। কাজেই আমি পায়জামার ওপরে শার্ট পরে ঢাকা শহরে এলাম।

মানে ক্লাস নাইনে আমার প্যান্ট ছিল মাত্র একটা। পরে বৃত্তির টাকা পেয়ে আরেকটা প্যান্ট আমি তৈরি করাতে পেরেছিলাম।

তার মানে এই নয় যে আমরা গরিব ছিলাম। তার মানে এই যে তখন সারা দেশের জেলা শহরগুলোর মধ্যবিত্তের সবারই এই রকমই ছিল জীবনযাপনের মান। আমাদের কোনো অভাববোধ ছিল না। কিš‘ প্রাচুর্য বলতে কিছুই ছিল না। একেবারে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার মতো। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন :

‘জানিয়ে রাখি আমাদের চাল ছিল গরিবের মতো। গাড়িঘোড়ার বালাই ছিল না বললেই হয়। বাইরে কোণের দিকে তেঁতুলগাছের তলায় ছিল চালাঘরে একটা পাল্কিগাড়ি আর একটা বুড়ো ঘোড়া। পরনের কাপড় ছিল নেহাত সাদাসিধে। অনেক সময় লেগেছিল পায়ে মোজা উঠতে। যখন ব্রজেশ্বরের ফর্দ এড়িয়ে জলপানের বরাদ্দ হল পাউরুটি আর কলাপাতামোড়া মাখন, মনে হল আকাশ যেন হাতে নাগাল পাওয়া গেল। সাবেক কালের বড়োমানুষির ভগ্নদশা সহজেই মেনে নেবার তালিম চলছিল।’

রবীন্দ্রনাথ জমিদারের ছেলে ছিলেন। তাঁর ছোটবেলার জীবনেই বাহুল্য বলতে কিছু ছিল না। আমরা জমিদারের ছেলে ছিলাম না। আব্বা ছিলেন পিটিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট। সরকারি চাকরি। আমরা নিজেরা বাগান করতাম, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি নিজেদের বাগানে হতো। বাড়িতে গরু ছিল। তিন সের দুধ দিত দুটো গরু। গোটা কুড়ি মুরগি, গোটা ছয়েক হাঁস ছিল। ডিম আসত দেদার। সেসব খেয়ে আমাদের দিন যেত ভালোমতোই। তবে একটা নাবিস্কো পাইন অ্যাপেল ক্রিমের বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে কোনো অতিথি বাসায় এলে সেই বিস্কুট খাওয়া ছিল মহাভোজ।

কাজেই আমাদের ছোটবেলায় ঈদে কেউ আমাদের সালামি দিত না। আমরাও কাউকে কদমবুসি করতাম না। মুন্সিপাড়ায় ছিল আমাদের মামাবাড়ি। ওখানে গিয়ে দেখি মামাতো ভাইবোনেরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে এবং বড়রা তাদের সিকিটা আধুলিটা দেন। এখনকার ছেলেমেয়েরা সিকি আধুলি কী বুঝবে কি না, আমার সন্দেহ আছে। ১০ পয়সায় একটা লাল রঙের আইসক্রিম পাওয়া যেত। চার আনা বা সিকিতে পাওয়া যেত মালাই আইসক্রিম। ১০ পয়সা দিয়ে জোড়া পাপড় কিনে খেতে পারতাম। রাস্তার ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তিলের খাজা বা শনপাপড়ি কিনে খেতে আট আনা বা আধুলির দরকার পড়ত।

প্রত্যেক ঈদে তাই নতুন জামা পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। কোনো ঈদে হয়তো শার্ট পেলাম। পরের ঈদে আর কিছু না। তারপরের ঈদে বাটার স্যান্ডেল শু। তার পরের বছর একটা প্যান্ট।

তবে আমাদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ছিল। ঈদের আগে সেসব বের করে ধুয়ে মাড় দেওয়া হতো। আমাদের কাজ ছিল সেসব ইস্ত্রি করে রাখা। ইস্ত্রি ছিল দুই ধরনের। একটা শক্ত লোহার ইস্ত্রি। সেটা চুলার আগুনে ধরে গরম করতে হতো। আরেকটা ইস্ত্রির ছিল গহ্বর ভরা পেট। সেই পেটে কাঠের কয়লা ভরতে হতো। এরপর আগুন উসকে দেওয়ার জন্য হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতাম। বাঁশের চোঙ দিয়ে ফুঁ দিতাম। এই পায়জামা-পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করাটা ছিল বিশাল আনন্দের কাজ। তারপর স্যান্ডেল বা জুতা কালি করা। নিজেদের জুতা স্যান্ডেল নিজেরাই বুরুশ করতাম। তারপর সেগুলো রোদে মেলে ধরতে হতো।

আমাদের বাসায় সেমাই বানানোর মেশিন ছিল। সেটা দেখতে ছোটখাটো টিউবওয়েলের মতো। এক দিক দিয়ে পানি মেশানো আটার ছোট ছোট গুলি ভরে ওপরের হাতল ঘোরাতে হতো। নিচে ছিল ফুটো ফুটো পাত। সেটা দিয়ে সেমাই বের হতো। সেই সেমাই আমরা শুকাতে দিতাম মাদুরে। ছাদের ওপরে সেমাই শুকাতে দিয়ে পাখি তাড়ানোর জন্য বিশাল পাটকাঠি নিয়ে আমি বসে থাকতাম। সময়টা উপভোগ্য করে তোলার জন্য একটা কাগজের চোঙ বাঁশের লাঠির ডগায় বেঁধে মাইক হিসেবে চালাতাম। একটা দিয়াশলাইয়ের বাক্স হতো আমার মাউথপিস। সেই মাউথপিস মুখের কাছে ধরে আমি নিজে নিজে রেডিওর অনুষ্ঠান প্রচার করতাম। কবিতা আবৃত্তিই ছিল প্রধান অনুষ্ঠান। কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামি কবিতাগুলো বই দেখে পাতার পর পাতা আবৃত্তি করতাম। তাতে রোজা থাকার কষ্ট কমত। দিনটা পার হয়ে যেত দ্রুত।

ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য বিকেল তিনটা থেকে আমরা পিটিআইয়ের ছাদে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সূর্য ডোবার আগেই চাঁদ দেখা গেল। কী আনন্দ! ছেলেরা মিছিল বের করত, আজ আমাদের কিসের খুশি, ঈদের খুশি ঈদের খুশি। ১৯৭৮ সালের আগে রংপুরে টিভি ছিল না। সম্প্রচার কেন্দ্র হলো ১৯৭৮-এ। তারপর সাদাকালো টিভি রংপুরে আসতে লাগল। কাজেই তার আগে ঈদের আগের রাতে রেডিওতেই আমরা শুনতাম সেই গানটা, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এমনকি আমজাদ হোসেনের বিখ্যাত জব্বর আলীর ঈদের নাটক প্রথমে প্রচারিত হয়েছিল রেডিওতে। তার একটা সংলাপ আজও মনে আছে, জব্বর আলীর মেয়ে বলছে, ‘বাবা, ঈদে আমাকে ম্যাক্সি কিনে দিতে হবে।’ জব্বর আলী বলছে, ‘ট্যাক্সি, আমি তোকে ট্যাক্সি কিনে দিতে পারব না।’

আমরা অবশ্যই ঈদসংখ্যা কিনতাম। বিচিত্রা, রোববার, সন্ধানী। উপন্যাসগুলোর কোনো কোনোটাতে যৌনতা থাকত। এমনকি হাসান আজিজুল হকের লেখা ‘পাতালে হাসপাতালে’ গল্পে ‘রাত্রে স্ত্রী সহবাসে সে যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছিল’ এই বাক্য পড়ে আমি নিষিদ্ধ জিনিস পড়ার আনন্দ লাভ করেছিলাম। যৌনতা থাকত আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দীনের গল্পে। আমাদের শৈশবে ঈদের আরেকটা বিনোদন ছিল সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। প্রচন্ড ভিড় হতো। ওই সময় সৈনিকদের জন্য আলাদা কাউন্টার ছিল। আমি সেই কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কোনো সৈনিক আংকেল টিকিট কাটতে এলে আমি তাঁকে অনুরোধ করতাম, আমাকে একটা টিকিট কেটে দেবেন? আমার চেহারার মধ্যে একটা গো বেচারি ভাব তখনো ছিল। সহজেই তাঁরা রাজি হতেন। আমি নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ঈদের সিনেমা দেখতাম রংপুরের লক্ষ্মী টকিজে বা ওরিয়েন্টাল প্রেক্ষাগৃহে। আগের দুদিন মাইকিং করে সিনেমার গান আর নাম জানিয়ে যাওয়া হতো। কাজেই সিনেমা না দেখে পারা যায়?

এরপর এল টেলিভিশনের যুগ। ঈদ মানেই টেলিভিশনে ঈদের নাটক আর আনন্দমেলা। আনন্দমেলাগুলো খুব আনন্দময় হতো। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, জুয়েল আইচ, আফজাল হোসেন, আনিসুল হকÑ এঁরা সব আশ্চর্য আনন্দময় আনন্দমেলা করেছিলেন। পরে করেছিলেন হানিফ সংকেত। ঈদের নাটক ভালো করতেন হুমায়ূন আহমেদ। উফ। ঈদের নাটকগুলো দেখে হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যেত।

তারপর বড় হয়ে গেলাম। আমার ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা আমাকে ঈদে সালাম করতে লাগল। আমিও সাধ্যমতো তাদের বকশিশ দিতে শুরু করলাম। বিয়ের পরে খালু হলাম। ভাগনে-ভাগ্নিরা এলে আমি সালামি দিই। সে তারা সালাম করুক আর না করুক। ইদানীং তো অনেক নতুন নিয়মকানুন শোনা যাচ্ছে। কদমবুসি করতে হয় না। আমার আম্মা অবশ্য আমাকে শিখিয়েছিলেন, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার সময় মাথা উঁচু রাখতে হবে।

বড় হয়েই আমি আম্মাকে সালাম করতাম। শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করতাম। আম্মা মারা গেছেন। শ্বশুর সাহেবও মারা গেছেন বেশ ক’বছর আগে। এখন শাশুড়িকে সালাম করি। অফিসেও আমার জুনিয়র সহকর্মী মেয়েরা আগে আমার কাছ থেকে ঈদের সালামি আদায় করত। তার ছবিও ফেসবুকে দিত। এখন আমাদের অফিসও বড় হয়ে গেছে। আমরা এখন দূরে দূরে বসি। সালাম করে সালামি আদায় করবে, এমন মানুষেরা আর আমার ফ্লোরে বসেও না।

নিজের একমাত্র মেয়ে থাকে বিদেশে। ঈদে আসবে না। হয়তো ফোন করবে। ভিডিও কলে দেখা হবে। কথা হবে।

আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি। আগে আম্মা যখন বেঁচে ছিলেন এবং রংপুরে ছিলেন, আমরা পাঁচ ভাইবোন দারা পুত্র পরিবার নিয়ে রংপুর যেতাম। বাড়িতে চাঁদের হাট যেন লেগে যেত। সন্ধ্যার সময় বাচ্চারা নিজেরাই আনন্দমেলা করত। এখন আম্মাই নাই। রংপুরে কেউ থাকে না।

ঈদ আসলে ছোটবেলাতেই আনন্দের ছিল। এখন বড় হয়ে গেছি। এখন ঈদে আনন্দর চেয়ে দায়িত্বই বোধ করি বেশি। আর করোনার দুই বছরে তো ঈদেও আমরা বন্দী ছিলাম।
এবারের ঈদ হয়তো মুক্তি এনে দেবে।
করোনার বন্দিত্ব থেকে মুক্তি।

মধ্যখানে কিছুদিন আমারও ঈদ মানে ছিল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য ঈদের নাটক লেখা। প্রথম দিকে সেই সব নাটক ভালো হলো নাকি মন্দ হলো, তাই নিয়ে টেনশন করতাম। তারপর এত চ্যানেল আর এত নাটক প্রচারিত হতে লাগল যে নিজের নাটকও নিজে দেখা হয়ে উঠত না। এখন আর ঈদের নাটক লেখার সময় পাই না। আগ্রহও পাই না।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে এই লেখা শেষ করি, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ/ তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ।’
আমরা যদি ঠিকভাবে জাকাত দিই, দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকার কথা নয়। বিলাসব্যসনের প্রতিযোগিতা না করে আমরা কি সুচিন্তিতভাবে গরিব-আত্মীয়স্বজনকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সহযোগিতা করতে পারি না?

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিল্প-সংস্কৃতি

রেজা নুরের ‘নিরীহ হাওয়ার নদী’র মোড়ক উন্মোচন

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ১২, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: সত্যিকারের লেখক নিজের তাড়নায় লেখালেখি করেন। তবে কেউ কেউ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও লেখেন। আবার কেউ লেখেন মনের আনন্দে। কবি ও কথাসাহিত্যিক রেজা নুর মনের আনন্দে সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে স্বদেশ ও বিশ্বের অনন্য সৌন্দর্য কবিতায় তুলে ধরেন। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

মাইকেল মধুসূদনের মতো প্রবাসে থেকেও রেজা নুর স্বদেশ ভাবনায় প্রতিনিয়ত বিভোর থাকেন। বাস্তবে প্রবাসী হলেও মননে একজন কবি। রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘নিরীহ হাওয়ার নদী’ কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় গত ১ এপ্রিল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেতারের নিউজ প্রেজেন্টার ও এক্সিলেন্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার জিনাত রেহানা লুনা। বায়োফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক বাচ্চু এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিরেক্টর রবিউল হাসান।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও নাট্যকার বীরেন মুখার্জী, কবি ও কথাশিল্পী জব্বার আল নাঈম, কথাশিল্পী ফিরোজ আশরাফ, কথাশিল্পী শামস সাঈদ, কবি ও কথাশিল্পী রাসেল রায়হান ও কবি সাম্মি ইসলাম নীলা।

কবি রেজা নুর বলেন, ‘লেখার অভ্যাসটা দীর্ঘদিনের। তাই প্রবাসে গিয়েও ভুলতে পারি না। লেখার নেশা রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। কবিতা কখনোই ছাড়া যাবে না। কবিতা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন, আমাকে থাকতে হবে লেখার সঙ্গে।’

‘নিরীহ হাওয়ার নদী’ তার ষোলোতম প্রকাশিত গ্রন্থ হলেও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। পাঁচ ফর্মার বইটি ধ্রুব এষের আঁকা প্রচ্ছদে প্রকাশনা সংস্থা রণন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সিফাত সালাম।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনবলিউডরূপ ও ফ্যাশন

কৃতি শ্যাননের রুপরহস্য তার রান্নাঘরেই

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ২০, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: টেলিভিশনের পর্দায় দেখা সেলিব্রিটিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের দারুণ আগ্রহ। এটা যুগ যুগ থেকে হয়ে আসছে। তারা কি খেতে পছন্দ করেন, ফ্যাশনে কি প্রিয়, কিংবা ফিটনেস রহস্যই বা কী? আজ বলবো কৃতি শ্যাননের রুপ রহস্য-

কোনও নামী-দামি প্রসাধনীতে নয়, ঘরোয়া টোটকাতেই ভরসা রাখেন কৃতি। বেসনের ফেসপ্যাক দিয়েই নিয়মিত রূপচর্চা করেন অভিনেত্রী।

 


‘পরম সুন্দরী’ গানের তালে তাঁর নাচের জন্য ইতিমধ্যেই ভক্তদের নজর কেড়েছেন কৃতি শ্যানন। সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘বচ্চন পাণ্ডে’-তেও তাঁর অভিনয়ে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি কৃতির রূপেও মশগুল ভক্তমহল। এই ‘পরম সুন্দরী’র কোমল ত্বকের রহস্য কী জানো?

শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও কোনও নামী-দামি প্রসাধনী নয়, রূপচর্চার ক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকাতেই ভরসা রাখেন কৃতি। বেসনের ফেসপ্যাক দিয়েই নিয়মিত রূপচর্চা করেন অভিনেত্রী। কৃতির মতো কোমল ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে আপনিও সামান্য কিছু সামগ্রী দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পরেন কৃতির পছন্দের ঘরোয়া ফেসপ্যাক।

 

 

কী ভাবে বানাবে?

২ চামচ বেসন, ১ চামচ মুসুর ডাল, এক কাপ টক দই, ৪টে আমন্ড বাদাম ও অল্প পরিমাণ হলুদ ভাল করে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে। এ বার এই ঘন মিশ্রণ আলতো করে মুখে মেখে নিয়ে মিনিট ১৫ রেখে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাদে দু’ থেকে তিন বার এই ঘরোয়া ফেসপ্যাক লাগালেই ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে পাবে। ট্যান দূর করতেও এই ফেসপ্যাকের জুড়ি মেলা ভার।

এ সবের পাশাপাশি দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানি পান করেন অভিনেত্রী। ত্বক ভাল রাখতে ছ’ থেকে আট ঘন্টা গভীর ঘুমও জরুরি বলে জানান কৃতি। তা ছাড়া উজ্জ্বল ত্বক পেতে পুষ্টিকর খাবারেরও বিকল্প নেই।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
চলন বলনজীবনযাত্রাবিশেষ রচনারূপ ও ফ্যাশন

গরমে স্বস্তি দিতে হালকা রঙের পোশাক

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ১৫, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: বেড়েই চলেছে রোদের প্রকোপ। রোদ গরম যাই থাকুক কাজতো আর থেমে থাকার নয়। বের হতে ই হয় সবার। তবে রোদ থেকে একটু হলেও স্বস্তি দেয় নরম কাপড়ের পোশাক। তবে গরমে কিন্তু পোশাকের রংও বেশ ভুমিকা রাখে শান্তির পরশ দিতে-

গরমকালে উষ্ণতা ও আর্দ্রতার ধাক্কা সামাল দিতে সুতি বা সমতুল্য কোনও হালকা পোশাক পরাই দস্তুর। কিন্তু জানো কি পোশাকের রঙের উপরেও নির্ভর করে গরম লাগার মাত্রা?

 

অনেকেই বলেন, হালকা রঙের পোশাক পরলে গরম কম লাগে। বিষয়টি কিন্তু কোনও কুসংস্কার নয়। সত্যিই সাদা রঙের পোশাক পরলে গরম কম লাগতে পারে।

বিজ্ঞান বলছে, সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু সব বস্তুর এই তাপীয় বিকিরণ শোষণ করার ক্ষমতা সমান নয়।

 

সাদা রঙের তাপীয় বিকিরণ শোষণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম। অপর দিকে কালো রঙের বস্তু এই তাপ শোষণ করে সবচেয়ে বেশি। ফলে সাদা রঙের বস্তু, কালো রঙের বস্তুর তুলনায় কম তাপ শোষণ করে।

 

 

এই কারণেই সাদা রঙের পোশাক কম উত্তপ্ত হয় ও গাঢ় রঙের পোশাক পরলে হতে পারে হাঁসফাঁস দশা। বিজ্ঞান মেনে সাদা বা হালক রঙের পোশাক পরলে কিছুটা হলেও আরাম মিলতে পারে গরমে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিনোদনবিশেষ রচনাসংগ্রামসম্ভাবনা

৬০ এর পরেই জিতলেন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ১৪, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা জেতার কোন বয়স নেই তা দেখিয়ে দিলেন মার্কিনি নারী। ৬০ বছরের পিয়ানো শিক্ষিকা কিম্বার্লি ঘেদির রয়েছে সাত নাতি-নাতনি। টেক্সাসের বাসিন্দা বহু দিন মনে করতেন বয়স ৬০ পেরোলেই জীবন শেষ। কিন্তু ৬৩ বছর বয়সে এসে তিনি শরীরচর্চা করা শুরু করেন, বিয়ে করেন এবং ‘মিস টেক্সাস সিনিয়র আমেরিকা’ নামে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিজয়ী হন। তাই বয়স নিয়ে সব রকম ভুল ধারণা ভেঙে গিয়েছে তাঁর।

 


‘‘নিজেকে নিয়ে ধারণা পাল্টে গিয়েছে আমার। এখন মনে হয় বলিরেখার মধ্যেও অন্য রকম সৌন্দর্য রয়েছে। পরিণত বয়সের নারীরা সত্যিই সুন্দর,’’ প্রতিযোগিতা জিতে বললেন কিম্বার্লি।

৬০ থেকে ৭৫ বছর বয়সি নারীদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা হয় প্রত্যেক বছরই। বেলি ডান্সিং থেকে এক হাতে পুশ আপ— সব রকম খেলাতেই অংশ নেন নারীরা।


এই প্রতিযোগীরা মনে করেন ৪০, ৫০, ৬০, ৭০— যে কোনও বয়সেই মেয়েরা সুন্দর। বিজয়ী কিম্বার্লি জানিয়েছেন, ১৯ বছর বয়সেও তিনি এতটা ফিট ছিলেন না। ৬৩ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু করার পর থেকে তিনি অনেক বেশি ফিট হয়ে গিয়েছেন।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook