রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

দিবস সবিশেষ

.অনুসঙ্গআয়নাঘরকেনাকাটাদিবস সবিশেষবসন ভূষণরূপ ও ফ্যাশন

পোশাকে একুশ

করেছে Shaila Hasan মার্চ ৫, ২০২৩

সঞ্চিতা খাসকেল:

ভাষা আন্দোলন এক নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অনন্য অসাধারণ চেতনা পুষ্ট শিল্প সাহিত্যের। দিনটিকে ঘিরে ফ্যাশন  ও পোশাকেও এসেছে নানান বৈচিত্র্যতা। বাংলাদেশ পুরো বিশ্বের কাছে আজ সমাদৃত। পুরো পৃথিবী তথা বাংলার মানুষের জাতীয় জীবনে  গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে আছে আমাদের মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।

বাঙালি তথা গোটা বিশ্ববাসী এই দিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির সূর্যসন্তানদের। যাদের  আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের  প্রিয় মাতৃভাষা। পুরো পৃথিবী বিস্ময় এ হতবাক হয়ে গেছে ভাষার জন্য বীরদর্পে বাঙালির আত্মত্যাগ দেখে। যে  আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে শেখায়। যে আত্মত্যাগ আমাদের দেশের প্রতি দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান, সৎ আর নির্ভীক হতে শিক্ষা দেয়  প্রতিনিয়ত। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। সারাবিশ্বে এই দিনটি আজ সমাদৃত  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। জাতীয় চেতনার মানসপটে ভাষা আন্দোলন এক নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অনন্য অসাধারণ চেতনাপুষ্ট শিল্প-সাহিত্যের। তাই তো নানা আনুষ্ঠানিকতার মাঝে বাঙালি দিনটিকে উদ্যাপন করে আসছে প্রতিবছর। দিনটিকে ঘিরে তাই ফ্যাশন ও পোশাকেও এসেছে নানান বৈচিত্র্যতা।

যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় শোক দিবস, তাই এই দিনটিকে সাজানো হয় কালো আর সাদা রঙের আঙ্গিকে। বাঙালি  মেয়েরা সাধারণত সাদা রঙের শাড়ি তাতে কালো পাড় অথবা সাদা রঙের সালোয়ার ওড়না আর কালো রঙের কামিজ পরতেই বেশি পছন্দ করে এই দিনটিতে। তবে যুগের হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে  পোশাকেও এসেছে নতুন সংযোজন। কালো রঙের শাড়িতে ফুটে উঠেছে নানান রঙের বর্ণমালা। কখনও বা আঁচলে শোভা পায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ,শহিদ  মিনার অথবা লাল-সবুজের চিরচেনা সেই গ্রামীণ দৃশ্যপট। কখনও বা শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র। ছেলেদের পোশাকেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সাদা পাঞ্জাবির পুরোটা জুড়ে  থাকে প্রিয় বর্ণমালারা। কখনও বা কালো পাঞ্জাবির বুকে থাকে শহিদ মিনার অথবা ছেলেদের টি-শার্টে শোভা পায় প্রিয় কবির  পংক্তিমালা-

‘মোদের গরব মোদের আশা

আ মরি বাংলা ভাষা’

কবি মাহমুদুল হাসান বলেছেন,

“মাতৃ ধ্বনিতে গুঞ্জন ফাগুনের সমীরণ

অগ্নি কণায় বাংলা বর্ণমালার আলিঙ্গন।”

প্রিয় কবির আহবানে সাড়া দিয়ে কেউ কেউ আবার কালো রঙের শাড়িতে লাল রঙের আঁচলের মাঝে রক্তিম সূর্যের আভা ছড়িয়ে দেন।

সাদা কালো সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মিল রেখে ওড়নার মাঝে কখনওবা ভেসে বেড়ায় শুভ্র মেঘপুঞ্জ। এ বিশেষদিনটিতে বড়দের  সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশুদের পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্যতার ধারা। বড়দের মতো শিশুরাও বর্ণিল বর্ণমালায় তাদের শাড়ি রাঙিয়ে নেয়।সঙ্গে  থাকে কালো রঙের ফেন্সি ব্লাউজ। কখনও বা কালো ধুতিসালোয়ারের সঙ্গে থাকে সাদা রঙের ফতুয়া। কখনও কখনও ছোট্টশিশুরা বেছে নেয় সাদা ফ্রক।

হালফ্যাশনে ছেলে বাবুরাও পিছিয়ে নেই। এই দিনে ওরাও বেছে নেয় চমৎকার সব টি-শার্ট আর পাঞ্জাবি। ছেলেবাবুদের টি-শার্টে উড়ে  বেড়ায় রংবেরঙের প্রজাপতি, ঘাসফড়িং। পাঞ্জাবির বুকে শোভা পায় সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধার ছবি। কখনও কখনও টি-শার্ট   বা পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীক। কেউ কেউ আবার সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে ব্যবহার করে কালো রঙের মুজিব কোট।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাদিবস সবিশেষদেহ ও মনবাতিঘরবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়- লাইভ আলোচনা

করেছে Shaila Hasan মার্চ ৫, ২০২৩

সুরাইয়া নাজনীন:

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “close the care gap” অর্থাৎ‘ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। ‘ক্যান্সারমানেইমৃত্যু নয়’ এই বিষয় ধরে রোদসী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে  ফেসবুক লাইভ আলোচনা। রোদসীর সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা ইয়াসমীনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। দুজন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম ও সহকারী অধ্যাপক ডা.তন্নিমা অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিস্ট স্বাগতা সরকার লোপা-

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার মানেই কি মৃত্যু? আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ধরে নেয়া হয় ক্যান্সার হলেই সব শেষ- এ  ধারণা নিয়ে কিছু বলুন?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সার হলেই যে মৃত্যু নিশ্চিত তেমনটি নয়।আর মৃত্যুর কথা তো আমরা কেউ বলতে পারিনা। দেখতে  হবে ক্যান্সারের স্টেজ কোন পর্যায়ে আছে। স্টেজ ১ হলে ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে আবার ২ হলে ৭০ শতাংশ আবার স্টেজ ৩ হলে ৫০  শতাংশ। এটা আসলে নির্ভর করে রোগীর শারীরিক কন্ডিশনের ওপর। স্টেজ বেশি হলে সারভাইবাল কমে যায়।তবে মৃত্যু  অবধারিত এমনটি নয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার হলে একজন মানুষ কীভাবে বুঝবে?

তন্নিমা অধিকারী: ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে সেগুলো দেখে আঁচ করা যেতেপারে।  যেমন কিছু কিছু ক্ষত হলে অনেক সময় সারতে চায়না, তিন-চারসপ্তাহ ধরে থাকে। আবার শরীরের কোনো কোনো জায়গায় চাকা কিংবা পিন্ডের মতো দেখা দিলে আবার তা যদি খুব দ্রুত  বেড়ে যায় তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। অস্বাভাবিক রক্তপাতও চিন্তার বিষয় হতে পারে। যেমন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে, মাসিকের সঙ্গে অস্বাভাবিক রক্ত গেলে, স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশার পর রক্ত গেলে। আবার শরীরে আঁচিলের সংখ্যা বেড়ে  গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। কিন্তু বলে রাখা ভালো এসব লক্ষণ দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তেমনটি ভাবারও কারণ নেই। একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন কী কারণে এসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী কি এর ভয়াবহতা নির্ভর করে?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সারের স্টেজ ভেদে এর ভয়াবহতা নির্ভর করে। আবার চিকিৎসাও ভিন্ন হয়ে যায়। অনেক সময় শুরুর দিকে ধরা পড়েনা সেজন্য উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। কিছু ক্যান্সার আছে কেমো সেনসিটিভ সেগুলো কেমোথেরাপি দিলে ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু ক্যান্সারের জন্য রেডিওথেরাপি দরকার হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কি নারী-পুরুষের কোনো প্রভাব আছে?

তন্নিমা অধিকারী:  হ্যাঁ, ব্রেস্ট, জরায়ু আর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে নারীরা। ব্রেস্ট ক্যান্সারপুরুষেরও হয় তবে তা ১  শতাংশের মতো। প্রোস্টেড ক্যান্সার পুরুষের হয়। আমাদের দেশে অতিমাত্রায় পান-জর্দা খাওয়ার কারণে মুখের ক্যান্সার বেশি হয়। আবার ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার কিংবা বড় কোনো রোগ হলে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই কিন্তু  এক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্টও বড় ভুমিকা পালন করতে পারে সেটা কীভাবে?

স্বাগতা সরকার লোপা: রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যকার একটা ভুমিকা পালন করে ফার্মাসিস্টরা। অনেক সময় ক্যান্সারের  মেডিসিনে অনেক রকম পার্শ্ব ¦প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা কাউন্সেলিং করে থাকেন। ওষুধের ডোজের ক্ষেত্রেও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরাই প্রেসক্রাইব করে থাকেন, সেই মোতাবেক ফার্মাসিস্টরা রোগীর কাউন্সেলিংয়ের কাজটা করেন। যেমন কেমোথেরাপি বেশ ব্যয়বহুল আমরা সেক্ষেত্রে অ্যাড মিক্সিং করি।

সাবিনা ইয়াসমীন: নারীরা কোন বয়স থেকে সচেতন তার চিন্তাটা করবে?

রওশন আরা বেগম: আসলে সচেতনতার কোনো বয়স নেই। আমরা স্কুল-কলেজে গিয়েও সচেতন তার বিষয়টি নিশ্চিত করি। তারা  যেন জানতে পারে কীভাবে ব্রেস্ট চেক করতে হয়। কখনই বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে রুটিন মাফিক নিয়ম করে ৩০ বছর  থেকেই সচেতন হওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে মাসিক শেষ হওয়ার পর ব্রেস্ট চেক করতে হয়।তাছাড়া আর একটু নিশ্চিত হওয়ার ভায়া  টেস্ট করাটাও জরুরি।

সাবিনা ইয়াসমীন: আপনার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের মানুষ কতটুকু সচেতন?

তন্নিমা অধিকারী: আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে তা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশ  তো আর শহরকেন্দ্রিক নয়। তবে একটা জিনিস জেনে রাখা ভালো দেশের প্রত্যেকটা উপজেলাতে ভায়া টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে।  সেটা সিস্টাররাই করতে পারেন। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জানা এবং জানানো ভীষণ প্রয়োজন। এখানে সরকার এবং গণমাধ্যমের বেশ ভূমিকা রয়েছে।তবে আরও একটা জিনিস আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমাদের লাইফস্টাইলের পরিবর্তন করতে হবে।  এখন আমরা স্যানিটারি লাইফ লিড করি। যেমন – সারাদিন বসে কাজকর্ম করা,  হাঁটাচলা, ব্যায়াম খুব কম হয়,  এগুলো বাড়াতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় শাকসবজি সতেজ জিনিস বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড বাদ দিতেহবে।

সাবিনা ইয়াসমীন: অনেকেই ধারণা করেন কেমোথেরাপি দিলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, রোগীর জন্য ধারণ করাও খুব কষ্টসাধ্য। এ বিষয়ে কিছু বলুন

স্বাগতা সরকার লোপা: আজকাল শুধু নয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, সার্জারি, টার্গেটেড থেরাপিও দেয়া হয়। তবে কেমোথেরাপি দিলেই যে রোগীর খারাপ কিছু হবে তেমনটি নয়। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা কার্যকর এটা চিকিৎসকরা সঠিকভাবেই প্রেসক্রাইব করেন। তবে ওই যে আমি আবার বলব, ক্যান্সার কোন স্টেজে ধরা পড়ল সেটার ওপরই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। শেষের দিকে ধরা পড়লে কেমোতেও কাজ হয় না তখন পেলিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট দিতে হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন:  রোদসী লাইভে ক্যান্সার বিষয়ক অনেক কথাই উঠে এসেছে। প্রত্যাশা রাখি শ্রোতা, পাঠক সবাই উপকৃত হবেন এই লাইভের মাধ্যমে। রোদসী লাইভে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

অতিথি বৃন্দ: রোদসীকে ধন্যবাদ। সব শ্রোতা ও পাঠকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

  • অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম

         এমবিবিএস, এমপিএইচ, এমফিল, ডিএমইউ, এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি বিভাগ।

          জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

  • ডা তন্নিমা অধিকারী

         এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         সহকারী অধ্যাপক

         রেডিওথেরাপি বিভাগ

          ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

  • স্বাগতা সরকার লোপা

          ডেপুটি ম্যানেজার

          ফার্মেসি

          এভার কেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।  

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গআয়নাঘরএই সংখ্যায়দিবস সবিশেষবসন ভূষণরূপ ও ফ্যাশন

একুশের সাজ যেমন হওয়া চাই

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২৩

শায়লা জাহান:

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কী ভূলিতে পারি?” ঐতিহাসিক এই গান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভাষার জন্য রাজপথে শহীদ হওয়া সালাম, বরকত, রফিক, শফিক সহ অসংখ্য নাম না জানা ভাষা শহীদদের কথা। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি প্রতিটি বাঙালির জীবনে অনেক বিশেষ একটি দিন কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির আবেগ, ঐতিহ্য। এই ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ কে সম্মান জানাতে প্রতি বছরই শ্রদ্ধার সাথে তাঁদের স্মরণ করা হয়। এই দিনে সকল স্তরের, সকল বয়সের মানুষ ফুল হাতে সমবেত হোন শহীদ মিনারে। দিবসটিকে ঘিরে সারাদিন জুড়ে থাকে নানান ধরনের আয়োজনের। তাই দিবসটি পালনের পাশাপাশি সাজ-পোশাকের ক্ষেত্রেও থাকা চাই কিছুটা বিশেষত্বের। কেমন হবে অমর একুশের সাজ-পোশাক? আসো জেনে নিই।

– প্রকৃতিতে বইছে ফাল্গুনি হাওয়া। ফাল্গুন মানে রঙের ছাড়াছড়ি। কিছুদিন আগেই আমরা রঙ-বেরঙের সাজপোশাকে ফাল্গুনকে বরণ করে নিয়েছি। আর একদিন পরেই একুশে ফেব্রুয়ারি। একেক দিবস একেক গল্প বহন করে। তাই আমাদের সাজগোছের যাবতীয় কিছু হওয়া চাই এই আবহকে ঘিরে। একুশ মানেই শোক, একুশ মানেই সাদাকালোর এক মেলবন্ধন। আর এই সাদাকালোর ভেতরই যেন মিশে আছে একুশের ভাবগাম্ভীর্য। এই দিনে সাদা-কালোর মিশেলে কিংবা শুধু সাদা বা কালো পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারো।

– আমাদের দেশের আবহে মেয়েদের পছন্দের তালিকায় থাকে শাড়ি। সাদা কালোর মিক্সড অথবা সাদা শাড়ি, কালো ব্লাউজ এমন কন্ট্রাস্টে করেও শাড়ি নির্বাচন করতে পারো। শাড়িতে মেটারিয়েল হিসেবে সুতিকে প্রাধান্য দেয়া থাকলেও, সিল্ক, জামদানি, মসলিন ইত্যাদিও পরতে পারো।

– প্রতিবছরই আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো এই দিবস উপলক্ষে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাকের সমারোহ নিয়ে হাজির থাকে। ভাষার মাসে পোশাকের অবয়ব অলংকরণে বর্ণমালা ও জ্যামিতিক মোটিফের ডিজাইন প্রাধান্য পায়। বর্ণ ও শব্দ মালার বিন্যাসে অলঙ্কৃত পোশাকও বেছে নিতে পারো।

– শুধু শাড়িতেই নয়, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টপস ইত্যাদিও তুমি অনায়াসে পরতে পারো। লাল, কালো, সাদা, ধূসর প্রধান রঙ ছাড়াও সবুজ, নীল, কমলার মতো রঙ বেছে নিতে পারো। কামিজ, ফতুয়ায় এমব্রয়ডারি, অ্যাপলিক, হ্যান্ড পেইন্ট, ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট সহ বিভিন্ন নকশার প্রাধান্য পাচ্ছে। তোমার পছন্দ অনুযায়ী তা নির্বাচন করে নিতে পারো।

– সাজের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, যতটা ন্যাচারাল দেখানো যায় তাই ভালো। একুশ মানে কিন্তু প্রভাতফেরি। এই দিনের যত আয়োজন সবকিছুর সূচনা এই প্রভাতফেরির মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে যায়। তাই দিনের বেলা সাজে প্রসাধনীর উপস্থিতি যতটা কম হবে তত স্নিগ্ধ দেখাবে। মুখ ভালো করে ক্লিন করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নাও। হালকা ফাউন্ডেশন দিয়ে মুখের বেজ ঠিক করে কম্প্যাক্ট পাউডার দিয়ে সেট করে নাও। দিনের আলোতে কন্ট্যুরিং ভাল দেখাবেনা। তার পরিবর্তে গালের দু’পাশে হালকা করে ব্লাশন মিশিয়ে দাও। এতে চেহারায় সতেজ ভাব দেখাবে। চোখ ভর্তি করে দিতে পারো কাজল এবং টানা করে আইলাইনার। ঠোঁটে হালকা কালারের লিপস্টিক। ব্যস! এই মিনিমাল মেকআপ লুকে তোমাকে দেখাবে অনেক সুন্দর। আর হ্যাঁ, সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলোনা যেন।

– চুল সজ্জার ক্ষেত্রে সাদামাটা বেণি বা হাতখোঁপা করলে ভালো দেখাবে। চাইলে তাতে সাদা রঙের যে কোন ফুল জড়িয়ে দিতে পারো।

– এই দিনে সাজে যেমন বাঙ্গালিয়ানা ভাব দেখতে ভালো লাগে তেমনি সাজের সাথে আনুষঙ্গিক জিনিসও সেভাবে বেছে নিতে পারো। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিংবা ফতুয়া সব পোশাকের সাথেই পরতে পারো দেশীয় ও ঐতিহ্যবাহী গয়না। শুধু হাত ভর্তি কাঁচের চুড়িও বেশ মানিয়ে যাবে। সাজের পাশাপাশি আরামদায়কতাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। এজন্য পায়ে পরতে পারো চটি কিংবা স্যান্ডেল।

– যদি তোমার সারাদিনের বাইরে থাকার পরিকল্পনা থাকে, তবে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই বের হবে। সন্ধ্যার পর হালকা ঠান্ডায় যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য সাথে পাতলা শাল নিতে ভূলোনা যেন।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়দিবস সবিশেষবাংলাদেশ ও বিশ্ববিশেষ রচনাশিল্প-সংস্কৃতি

আনন্দের ফেরিওয়ালা সান্তা ক্লজ

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

বছর ঘুরে ডিসেম্বর মাসে চারদিকে বড়দিনের এক সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। তবে এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা না গেলেও, মূলত এই দিনে বিশ্বব্যাপী বেশ আড়ম্বরভাবে ক্রিসমাস ডে পালিত হয়। সবকিছু ছাপিয়ে ক্রিসমাস মরসুমে, শিশুদের কাছে সান্তা ক্লজের চেয়ে বেশি আইকনিক আর কোন চিত্র নেই। কিন্তু কে এই সান্তা? ঠিক কোথা থেকে তার সূচনা হয়েছিল এবং কীভাবে তিনি বছরের পর বছর ধরে একটি আইকনিক ক্রিসমাস ব্যক্তিত্ব হিসেবে টিকে আছেন? আসো জেনে নিই।

সান্তা ক্লজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি সেইন্ট নিকোলাস, ফাদার খ্রিষ্টমাস বা সাধারণভাবে সান্তা নামে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি খ্রিষ্টমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর তারিখের সন্ধ্যায় এবং মধ্যরাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে উপহার দিয়ে যান। বলা হয়, সান্তা ক্লজ হলো বড়দিনের জাদুগর, যিনি সুখ এবং আনন্দ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে যান। প্রতি বছরের এই দিনে শিশু কিশোররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন উপহারের ঝোলা নিয়ে সান্তা ক্লজ হাজির হবে। রহস্যময়ী এই সান্তা ক্লজ নিয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে নিই।

-আমরা সান্তাকে সেই চরিত্র হিসেবেই সবচেয়ে ভালো জানি যিনি ক্রিসমাস ইভে উপহার প্রদান করেন। কিন্তু তার উৎস কল্পকাহিনী থেকেও অনেক দূরে। সান্তার গল্পটি ২৮০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের। সেন্ট নিকোলাস একজন সন্ন্যাসী ছিলেন যিনি দরিদ্র ও অসুস্থদের সাহায্য করার জন্য গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন। একটি গল্পে দাবী করা হয়েছে যে তিনি তিনজন দরিদ্র বোনের জন্য যৌতুক প্রদানের জন্য তার সম্পদ ব্যবহার করেছিলেন, তাদের বাবার দ্বারা বিক্রি হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তিনি শিশু এবং নাবিকদের একজন রক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং রেনেসাঁর মাধ্যমে তিনি ইউরোপের সবচেয়ে সাধুদের মধ্যে ছিলেন।

-সান্তা ক্লজ নাম নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছে। যখন নেদারল্যান্ডের লোকেরা নিউ ওয়ার্ল্ড উপনিবেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তারা তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল সিস্টারক্লাসের কিংবদন্তি। ১৭০০ এর দশকের শেষের দিকে, উদার সিস্টারক্লাসের গল্প আমেরিকান পপ সংস্কৃতিতে পৌঁছেছিল যখন ডাচ পরিবারগুলো সাধুর মৃত্যুকে সম্মান জানাতে একত্রিত হয়েছিলো এবং সময়ের সাথে, নামটি সান্তা ক্লজে পরিণত হয়েছিল।

-ক্রিসমাস মানেই উৎসবের দিন, সান্তা ক্লজ থেকে উপহার পাওয়ার দিন। কিন্তু তুমি জানো কি আমেরিকার প্রথম দিকে, ক্রিসমাস এমন উৎসবের ছুটি ছিলোনা যা আমরা আজকে জানি এবং ভালোবাসি। এটি নিউ ইংল্যান্ডে পরিহার করা হয়েছিল। তখন ছিলোনা এমন কোন উৎসবমুখর পরিবেশ, না ছিলো উপহারের ডালি নিয়ে আসা কোন প্রফুল্ল ব্যক্তিত্বের আগমণ। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে কবিতা এবং গল্পের একটি স্ট্রিং সেন্ট নিককে একটি মেকওভার দিয়ে এবং পারিবারিক ও একত্রিকতার থিমগুলোতে ফোকাস করার মাধ্যমে এর নতুন সংজ্ঞা দেয়।

-সান্তা ক্লজ বললেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে গোলাকার ভুঁড়ি ওয়ালা লাল স্যুট পরা এক অবয়বের। কিন্তু প্রথম দিকে কিন্তু তাকে এভাবে চিত্রিত করা হয়নি। ১৮০৯ সালে লেখক ওয়াশিংটন আরভিং তার বই “নিকারবকার’স হিস্ট্রি অব নিউ ইয়র্ক”-এ সান্তার চিত্রকে আকার দিতে সাহায্য করেছিলেন। উপন্যাসে, তিনি সেন্ট নিকোলাসকে ওয়াগনের ছাদে উড়ে যাওয়া একজন পাইপ-ধূমপানকারী স্লিম ফিগার হিসেবে বর্ননা করেছেন। অন্যদিকে, সান্তা ক্লজকে প্রথমে বিভিন্ন রঙের স্যুটে চিত্রিত করা হয়েছে। কখনও কখনও সে স্লেজের পরিবর্তে ঝাড়ুতে চড়েছে।

-সান্তা এবং তার এলভস চমৎকার তালিকায় বাচ্চাদের উপহার প্রস্তুত করতে এবং বিতরণ করতে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু কথিত আছে যে, যারা এই তালিকায় থাকেনা, খারাপ আচরণ করা শিশুদের উপহার নেয়ার স্টকিংসে কয়লার টুকরো রেখে আসে।

-বলা হয় যে সান্তার যে বাহন রয়েছে, সেই স্লেজ হলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী যান। বড়দিনের প্রাক্কালে, সুন্দর তালিকায় থাকা সমস্ত বাচ্চাদের উপহার দেয়ার জন্য সান্তাকে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করতে হবে। বিশ্বে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন শিশু রয়েছে। তাই সান্তার স্লেজকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৮০০ মাইল গতিতে চলতে হবে।

-সান্তার রয়েছে নয়টি হরিন, যারা তার স্লেজ উড়াতে সাহায্য করে যাতে সে উপহার দিতে পারে। সান্তার হরিণকে বলা হয় ড্যাশার, নর্তকী, প্রাণসার, ভিক্সেন, ধূমকেতু, কিউপিড,ডোনার, ব্লিটজেন এবং রুডলফ।

-সান্তা উত্তর মেরুতে থাকে নাকি ফিনল্যান্ডে থাকে তা মানুষ ঠিক করতে পারেনা। তবে উত্তর মেরুকে সান্তার বাড়ি হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিলো। কেন? উত্তরটি সহজ। তার স্লেজ চালানোর জন্য যে রেইনডিয়ার আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখা। রেইনডিয়ারগুলোর শীতল জলবায়ুতে বসবাস করার প্রবণতা রয়েছে; তারা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো কম হিমায়িত তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এটি কেবল বোঝায় যে, সান্তা এমন একটি স্থানে বাস করবে যেখানে ঠাণ্ডা আবহাওয়া তার সাহায্যকারীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে।

-অনেক সময় সান্তাকে হো হো হো শব্দ করতে শোনা যায়। এই হো হো হো হল সান্তার আনন্দ এবং উল্লাস প্রকাশের উপায়। যদি সে হা হা হা বলে, লোকেরা মনে করতে পারে সে তাদের দেখে হাসছিল।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দিবস সবিশেষসচেতনতাস্বাস্থ্য

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

করেছে Sabiha Zaman অক্টোবর ১০, ২০২১

শরীরের অসুখ নিয়ে আমরা বেশ সচেতপন হলেও মনের অসুখ নিয়ে আমরা অনেকেই উদাসীন।  মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছরের ১০ অক্টোবর পালন করা হয় মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস এবছরের প্রতিপাদ্য বিষয়  ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’।

সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য দিবস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয় প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়েই মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক ভাবে দেখা দিচ্ছে। যার কারণ করোনাকালীন সংকট। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্বেরই বেড়েছে  মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। শুধু কোভিড আক্রান্তরাই নয় এখনো এই রোগে আক্রান্ত হননি তাদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক নানা সমস্যা। হুট করেই জীবনের পরিবর্তন, গোটা নিয়মের হেরফের, অনিশ্চয়তা এ সমইয়ে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। পুরো বিশ্বেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিভিন্ন স্তরে দেখা যাচ্ছে নানা রকমের বিশৃঙ্খলা।

আমাদের দেশের মানসিন স্বাস্থ্য সমস্যাও বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন সংবাদ দেখলেই চোখে পরে আত্নহত্যা। বেড়ে চলেছে বাল্যবিবাহ, অনেকে চাকরি হারিয়েছেন আর অনেকেই চাকরি না পেয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। দির্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনেও ভালো বেই শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা।

আমরা অনেকেই জানিনা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে। নিজেকের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখগতে কি করা উচিত তা অনেকেরই অজানা। কেবল করোনা নয় যেকোন কারণেই মানসিক সমস্যা হতে পারে। আর এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আমরা অনেক সম্য এড়িয়ে যাই। অনেকে আবার বিষয়গুলো স্বাভাবিক ধরে  বসে থাকেন। আর কনেকে লজ্জা পান মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হতে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই আমাদের শরীরের যেমন অসুখ করে মন তেমন অসুস্থ হতে পারে। দীর্ঘ সময় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দিলে পরবর্তীতে বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হতে পারে। তাই যখন সমস্যা মনে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নাও। নিজের মনের কথা শেয়ার করো কাছের লোকদের কাছে। অনেক সময় দেখা যায় মন খুলে কাছের মানুষদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে ভালো লাগে সাথে মিলে যায় ভালো সমাধান। তবে সাবধান এমন কারোর সাথে নিজের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে না যে তোমাকে বুঝবে না। নিজেকে ভালোবাসো নিজেকে ভালো রাখতে চেষ্টা করো। মন ভালো রাখতে যা দরকারি করো। হতাশ না হয়ে জীবনের সমস্যা স্মাধানে লেগে থাকো। মন ভালো রাখতে নিজে কি চাও কি করছো দেখো। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নাও।

আমাদের জীবন সব সময় একরকম যায় না। বিভিন্ন সমস্যা আসে অনেক সময় আমরা হাল ছেড়ে দেই, হতাশা আমাদের নিত্য সঙ্গি হতে যায়। যদি বুঝতে পারো পরিবারের কোন সদস্য কিংবা কাছের কেউ মানসিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তবে তার পাশে থাকো। তাকে সাহায্য করো। আমাদের সচেতনতা থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।

লেখা: সাবিহা জামান

ছবি: ইন্টারনেট

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আয়নাঘরজীবনদিবস সবিশেষরূপ ও ফ্যাশন

মেহেদি উৎসব যেন ফ্যাকাশে না হয়

করেছে Sabiha Zaman জুলাই ২০, ২০২১

সুরাইয়া নাজনীন

উৎসব রাঙাতে মেহেদি লাগবেই। তবে এখনকার দিনগুলো যেন ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে। করোনা পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। মনটাকে চাঙা রাখতে উৎসবে মেহেদি দিয়ে হাত রাঙাবে কমবেশি সবাই। ঈদ বহু প্রতীক্ষার উৎসব। তাই চাঁদরাত যেন মলিন না হয়। রং ঝলমলে হয়ে উঠুক মেহেদিরাঙা হাতে।

যেহেতু হাতে মেহেদি দেওয়ার পর বেশ কিছুদিন সেই রং থাকে, তাই মেহেদির নকশা হতে হবে আকর্ষণীয়। এবার দুই ধরনের নকশার চল থাকবে। ছোট ছোট মোটিফে একটু হালকা নকশা যেমন চলবে, তেমনি অনেকে দুই হাত ভরে ঘন করেও মেহেদি লাগাবে। সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যাবে হালকা নকশার মেহেদি।

ঈদ উৎসবের বিশেষত্ব বহন করে মেহেদি। ঈদের দিন কোন ধরনের পোশাক পরা হবে, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে মেহেদির নকশা। এখন প্রিন্টেড কামিজের চল দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খুব ঘন করে মেহেদি না লাগানোই ভালো। আর ঈদ পোশাকটি যদি হয় লম্বা হাতার, তাহলে কনুই পর্যন্ত না দিয়ে হাতের তালুতে এবং ওপরে পছন্দমতো নকশা করা যেতে পারে। মেহেদির রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় মেরুন এবং লাল রংটাই বেশি পছন্দ করে সবাই। যদি কারও কালো মেহেদি পছন্দ থাকে, তাহলে হাতের তালুতে পুরো মেহেদি দেওয়ার পর সুন্দর একটি আউটলাইন হিসেবে কালো মেহেদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা দেখতে বেশ গোছানো লাগে, বললেন রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।


ঈদের দিন বিকেলে নিজেকে একটু ফ্রি রাখতে ফতুয়া, জিনস, কুর্তা বেছে নেয় অনেকে। সে ক্ষেত্রে মেহেদির নকশা জ্যামিতিক হলে ভালো লাগবে। আর শাড়ি পরলে বিভিন্ন ফুলেল নকশা মানানসই হবে।
মেহেদির সতর্কতার ব্যাপারে কানিজ আলমাস আরও বলেন, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা সচেতন থাকবে আগে থেকেই। ভালো হয় গাছের মেহেদি বেটে লাগালে। সময় না থাকলে তারা সংরক্ষিত মেহেদি লাগাতে পারো। এতে কেমিক্যাল কম থাকে। আর কালো মেহেদি তাদের জন্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিউটি স্যালন রেড-এর রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ঈদের আনন্দ যত দিন থাকে, মেহেদিও তত দিন তার সঙ্গে সঙ্গ দেয়। মেহেদির প্রচলন অনেক আগের কিন্তু এখন এর ধারার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মডার্ন ফরম্যাটটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে সবাই। ঈদের দিন বাড়িতে টুকটাক সবারই কিছু কাজ থাকে। তাই এবার মেহেদির জড়োয়া কাজ প্রাধান্য পাবে হাতের ওপরে। দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি নকশার মধ্যে গ্যাপ থাকবে একই রকম। এখন অনেকে ট্যাটু নকশাও পছন্দ করছে। তবে ট্রাডিশনাল নকশা কিংবা জ্যামিতিক নকশা যেটাই হোক না কেন, সেটা হতে হবে আর্টিস্টিক।

বাজারে অনেক ধরনের আকার ও দামের মেহেদি পাওয়া যায়। ৩০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকার মধ্যে পছন্দমতো রঙের মেহেদি পাবে। আর বিভিন্ন বিউটি স্যালনে মেহেদি পরানোর দামের ভিন্নতা রয়েছে। এটা নির্ভর করবে নকশার ওপর।

এখন পুরোনো মেহেদি না লাগিয়ে আঙুলের পাশ দিয়ে মেহেদির নকশা করাই হালের ফ্যাশন। আর নখে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে নেলপলিশ দিলে আরও ভালো মানাবে। তা ছাড়া হাতের গড়ন বুঝে মেহেদি লাগানো উচিত।

যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবে

  • মেহেদি কেনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে নেবে।
  • হাতের সব কাজ শেষ করে একেবারে ফ্রি হয়ে তারপর মেহেদি লাগাতে বসবে।
  • হাতটাকে ভালো করে পরিষ্কার করে নাও।

 ভেজা হাতে মেহেদি লাগাবে না, শুকনো হাতে মেহেদি লাগাবে।
হাতে লোশন বা অয়েলি কিছু লাগাবে না, এতে মেহেদির রং ভালো বসবে না।
মেহেদির রংটা আরও বেশি লাল করার জন্য মেহেদি ওঠানোর পর ব্যবহার করতে পারো চিনি ও লেবুর রস।
শিশুদের হাতে মেহেদি দেওয়ার আগে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। আগে সামান্য মেহেদি লাগিয়ে দেখতে পারো, কোনো সমস্যা না হলে বাকিটা লাগাও।

ছবি: সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়দিবস সবিশেষবিশেষ রচনা

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ

করেছে Sabiha Zaman এপ্রিল ১১, ২০২১

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে, দিগ্বিদিক
এই বাংলায়,
তোমাকে আসতেই হবে স্বাধীনতা।’

শামসুর রাহমানের এই কবিতায় বোঝা যায় কী তীব্র অপেক্ষা ছিল আমাদের স্বাধীনতার জন্য। ২৬ মার্চ ২০২১, স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে টিকিয়ে রেখেছে।


বাঙালির এই স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস অনেক মর্মান্তিক। অনেক কিছুর বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত কিন্তু ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর থেকে। যার পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১-এ। ’৭০-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর এ এক গণহত্যার পরিকল্পনা করা হয়, তখন সেটার নাম ছিল ‘অপারেশন ব্লিটজ’। পরে এই নাম পরিবর্তন করা হয়। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পরও পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আগা খান ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যাবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকেরা ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে বিভিন্ন আলোচোনা, বৈঠকের নামে টালবাহানা করতে থাকে। পাকিস্তানিরা যে ক্ষমতা কোনোভাবেই হস্তান্তর করবে না, এটা সহজেই বাঙালি বুঝে যায়। পাকিস্তানের পিপলস পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানে অস্বীকৃতি জানালে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ আকস্মিকভাবে ৩ তারিখের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। রেডিওতে এই ভাষণের পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আপামর জনতা।

বঙ্গবন্ধু এর জবাবে বলেন, ‘শুধুমাত্র সংখ্যালঘিষ্ঠদের সেন্টিমেন্ট রক্ষার্থে অধিবেশন স্থগিত করা হইয়াছে, এবং ইহা আমরা কোনোভাবেই নীরবে সহ্য করিব না। ইহার দ্বারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যর্থ হইয়াছে।’ অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ সারা দেশে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন। সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধু র ডাকে সাড়া দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অচল করে তোলে। এ পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়া খান সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ জারি করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, সমাবেশ করে। বিভিন্ন সমাবেশে গুলিবর্ষণও হয়। বঙ্গবন্ধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণকে নির্দেশ দেন। ৩ থেকে ৬ মার্চ প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতিটি প্রদেশে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু এক গণসমাবেশের ডাক দেন।


৭ মার্চ ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে সমগ্র বাঙালি জাতির উদ্দেশে এক যুগান্তকারী ভাষণ দেন। এই সমাবেশে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ যোগদান করে। এই ভাষণে তিনি সবাইকে সব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য নেতাদের ভাষণগুলোর অন্যতম। এই ভাষণে কোনো দলীয় নেতার নির্দেশ ছিল না, এই নির্দেশ ছিল একজন জাতীয় নেতার। তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে সর্বাত্মক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ৭ মার্চের এ ভাষণ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র, জনতা, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক সব কর্মচারী-কর্মকর্তাকে সচেতন করে তোলে। ২ মার্চ থেকে দেশের সব কাজকর্ম চলতে থাকে বঙ্গবন্ধু র নির্দেশে।

১০ মার্চ ইয়াহিয়া এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কে আমন্ত্রণ জানান। বঙ্গবন্ধু সেই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দেন। এই জনসভায় তিনি খাজনা-কর দিতে মানা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ দেশ চালানোর জন্য কর-খাজনা দেয়, গুলি খাওয়ার জন্য দেয় না।’
দেশের যখন এই পরিস্থিতি, তখন পশ্চিম পাকিস্তানে চলতে থাকে অন্য ধরনের ষড়যন্ত্র। জুলফিকার আলী ভুট্টো সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে নতুন সংকটের সৃষ্টি করেন। ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া ঢাকায় আসেন এবং তার এই আগমনে বেশ গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। ১৬ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়, পরের দিনও দুজনের বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে তিনি দাবিদাওয়া না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ১৯ মার্চ তৃতীয় দফা বৈঠক হয় মুজিব-ইয়াহিয়ার। ৯০ মিনিটের এই বৈঠকে আর কেউ উপস্থিত ছিল না। ২২ মার্চ পর্যন্ত আরও কয়েকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২১ মার্চের বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ২২ মার্চের বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু কিছুটা আশা ব্যক্ত করলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।


২৩ মার্চ পল্টনে এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজ শেষে সবাই বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন। বঙ্গবন্ধুর গাড়িতেও পতাকা লাগানো হয়। বাংলার প্রত্যেক শহরে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠান বর্জিত হয়।
আসলে এই বৈঠকগুলো ছিল সময় নষ্টের মূল অস্ত্র, যাতে করে কিছুদিন বাঙালির দৃষ্টি অন্য কোনো দিকে না পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে ব্যস্ত রাখা। বাস্তবে এই আলোচনা-বৈঠক ছিল কালক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। পূর্ব পাকিস্তানের কারও পক্ষেই এই ষড়যন্ত্রের আঁচ করা সম্ভব ছিল না। মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে দুই ডিভিশন অবাঙালি সামরিক অফিসারকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়। নানা রকম অস্ত্রশস্ত্র ও আসতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত বেশ কিছু বাঙালি অফিসার মার্চের শুরু থেকেই কিছুটা বিপদের আভাস পাচ্ছিল, কিন্তু এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে এসব কাজ পরিচালিত হচ্ছিল যে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত সব অফিসারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। অফিসাররা শুধু একটাই জিনিস বুঝছিল যে খুব জঘন্য কিছু পরিকল্পনা করছে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকেরা।


২৪ মার্চে সামরিক শাসকেরা হেলিকপ্টারযোগে সব সেনানিবাসে এই হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা হস্তান্তর করে। ‘৭০-এর ‘অপারেশন ব্লিটজ’ পরিবর্তন করে নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সংগঠিত হয় ইতিহাসের সব থেকে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড। যেটা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত।
২৫ মার্চ ১৯৭১ রাত ১১টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হামলার প্রস্তুতি নেয়, দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আক্রমণ শুরু হয়। রাত ১১টা ৩০ থেকে শুরু হয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হলে পাকিস্তানি সৈন্যরা নারকীয় তাণ্ডব চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। ঢাকার পিলখানা, পুলিশ লাইন, চট্টগ্রামের ইবিআরসিসহ বাংলাদেশের সব সামরিক, আধা সামরিক সৈন্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে আগুন দেওয়া হয়। নারী, পুরুষ, শিশু, নির্বিশেষে সবাইকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করে। ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতায় সেই ভয়াল রাতের নৃশংসতা ফুটে ওঠে।
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা একি হবে নষ্ট জন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।


১২.৩০ ঘটিকায় বঙ্গবন্ধুকে তার নিজস্ব বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পূর্বমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু তার দলীয় নেতাদের পরবর্তীতে করণীয় নির্দেশ দিয়ে যান। তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন এবং দেশের আপামর জনগণের উদ্দেশে স্বাধীনতার ডাক দেন। সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের খবর যাতে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। অনেককে দ্রুত দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। দেশে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নজরবন্দী করে রাখা হয়। এত সতর্কতার মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে সমগ্র বিশ্ব এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অবগত হয়।
২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে সমগ্র জাতিকে জানানোর জন্য সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তিনি মাইকিং করে এই ঘোষণা সবাইকে জানান। পরে ২৭ মার্চ অপরাহ্ণে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
এভাবেই শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমেআমাদের দেশ স্বাধীন হয়।


দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদ্্যাপন করা হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। প্রতিবছর খুব আয়োজন করে এই দিনটি পালিত হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল-কলেজ বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে এই দিনে পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়।
’৭০-এর নির্বাচনে যদি ইয়াহিয়া খান বাঙালিকে ক্ষমতা দিয়ে দিতেন, তাহলে হয়তো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মই হতো না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর প্রায় চার দশক পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ‘অনন্যসাধারণ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
বাঙালি জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার ৫০ বছর একই সঙ্গে উদযাপিত হয়েছে। এটা বাঙালির জন্য অনেক বড় কিছু। কবির ভাষায় বলতে গেলে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন।’ ৫০ বছর ধরেই বাঙালি জাতি সুষ্ঠুভাবেই এই কঠিন কাজ করে যাচ্ছে। ৫০ বছরের এই যাত্রাপথে বারবার ছোট-বড় অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। তারপর এই দেশ, এই জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর বুকে।

লেখা : কানিজ ফাতিমা তুলি

ছবি :  সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়তুমিই রোদসীদিবস সবিশেষনারী

নারী উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর নাজমা মাসুদ

করেছে Sabiha Zaman মার্চ ৮, ২০২১

দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। আমার স্বপ্নেরা এখন ডানা মেলছে। আমার ছেলেমেয়েরা সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দেয়, খুব ভালো লাগে তখন। চারপাশে আমি খারাপের থেকে ভালো মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি বেশি। বলছিলেন নাজমা মাসুদ। তিনি নারী উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। জন্মের পরই মা-বাবাকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থেকে জয়ী হয়েছেন। সেই গল্পই করলেন রোদসীর সঙ্গে। কথোপকথনে সুরাইয়া নাজনীন

জন্মের পরেই বাবা-মাকে হারানো
তখন আমার বয়স তিন মাস। মায়ের কোল সবচেয়ে মধুর। মায়ের কোলে মমতায় লেপ্টে ছিলাম। অমানিশা নেমেছিল সেদিন। একটা গুলির শব্দ আমার জীবন পাল্টে দিল মুহূর্তেই। আমি হামাগুড়ি খেতে খেতে আমার মায়ের রক্তের বন্যায় ভাসছিলাম। ঘরে জমিয়ে রাখা লবণের বস্তা গলে লাল সমুদ্র হলো বিস্তীর্ণ উঠোন। মুহূর্তে নিস্তব্ধ পুরো পৃথিবী। আমি হলাম মা-হারা। কয়েক মাস পরে বাবাকেও হারালাম। তখন হলাম এতিম! জীবনযুদ্ধে নাম লেখালাম তিন মাস বয়স থেকেই। বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটের শব্দে। ভাগ্যের কী নির্মম খেলা, হানাদার বাহিনীর ফাঁক গলে বেঁচে গেলাম আমি পারুল। পারুল থেকে শুরু হলো নাজমা মাসুদ হয়ে ওঠার গল্প।

স্বপ্নের কিনারায়
কলেজে পড়াকালে আসা-যাওয়া করতাম আড়ং-এর পাশ দিয়ে। আড়ংয়ের কাজ দেখে স্বপ্ন দেখতাম। তখনই ভাবতাম, ভালো ভালো কাজ করতে হবে। ভালো কাজ করতে পারলেই আমি আড়ংয়ে কাজ করতে পারব। তাই নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলাম সেভাবেই। আড়ংয়ের আউটলেটে সাজানো সুদৃশ্য নকশাসংবলিত সামগ্রী আমাকে আকৃষ্ট করত। বাড়িতে ফিরেই লেগে পড়তাম পছন্দসই জিনিস তৈরি করতে। আর এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক সাহায্য করতেন বড় বুবু। সুযোগ খুঁজতাম কখন আড়ংয়ে লোক নেয়। ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমি আড়ংয়ে চাকরির আবেদনপত্র দিয়ে রেখেছিলাম। যেদিন ডিগ্রি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়, সেদিনই আমি আড়ংয়ে চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাই। আর আমার এই খুশির প্রথম অংশীদার ছিল বড় বুবু। আমার কাজ পাওয়ার খবর শোনামাত্র তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন যেন তিনি এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

ডিজাইনার থেকে ‘নন্দিনী ফ্যাশন হাউস’
আড়ংয়ে কাজ করার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাটা এবার কাজে লাগাতে হবে। আমি কাপড় শুধু রং করাতাম না, তার ওপর ডিজাইন করে নানাভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতাম। আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়তে শুরু করল। যত নতুন ডিজাইন, ততই বিক্রি। আমার নিজের করা এই নতুন নতুন ডিজাইনের কামিজ-কুর্তা বিক্রি হতো দেদার। নাম দিলাম ‘নন্দিনী ফ্যাশন হাউস’। দ্রুত আমার গড়ে তোলা সেই নন্দিনী ফ্যাশন রমণীদের আগ্রহের জায়গাটা লুফে নিল। প্রতিষ্ঠানের ‘নন্দিনী’ নামটি রেখেছিলেন আমার স্বামী মাসুদ হাসান। জীবনে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যতবারই ধাক্কা খেয়েছি, আমার স্বামী বারবার সহযোগিতার হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শুধু দেশ নয়, বিদেশেও তৈরি করছি নারী উদ্যোক্তা
শুধু এই দেশে নয়; কানাডা, আমেরিকা ও হংকংয়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি আমি। আমার নিজের ডিজাইন করা পোশাক এখন ওই সব দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে বিভিন্ন মেলায় ও সেমিনারে। উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা করেছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা তাদের হাতে তৈরি সালোয়ার-কামিজ, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, চাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া এসব মেলায় প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া কাশ্মীরি কাপড়, ব্যাগ এবং বিভিন্ন ডিজাইনের গয়না ও হ্যান্ডিক্রাফট ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।

কারও দোয়া যখন শক্তি হয়ে ধরা দেয়
আমার উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের নারীরা যখন করোনা পরিস্থিতি একটু একটু করে কাটিয়ে উঠছে, তখন আমরা পূর্বাচল লেডিস ক্লাবে বসন্ত এবং ভ্যালেন্টাইনসের মেলার আয়োজনের সুযোগ পাই। আমি ওখানকার ডোনার মেম্বার। পূর্বাচল লেডিস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা, তিনি আমার বড় বোনের মতো। তবে বোনের মতো বললে ভুল হবে, তিনি আমার বোনই। তিনি যেভাবে আমাকে এবং আমার সংগঠনের জন্য দোয়া করেছেন, এটা আমার শক্তি হয়ে কাজে লাগছে, লাগবে।

প্রাপ্তি যখন সাহসের জায়গা তৈরি করে দেয়
উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘ দিন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় কর্মক্ষম নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা করার সুযোগ পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা তাদের হাতের তৈরি সালোয়ার-কামিজ, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, চাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া মেলায় প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া কাশ্মীরি কাপড়-ব্যাগ এবং বিভিন্ন ডিজাইনের গয়না ও হ্যান্ডিক্রাফট ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা- ২০১৯-এ উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের পক্ষে স্টল বরাদ্দ পাই। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত  India Trade Expo Ges AIT,  Bangkok   আমন্ত্রিত Capacity Building of Bangladeshi Women Micro-Enterprenur   প্রোগ্রামে আমি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই।
আমি যখন প্রথম মাইডাসে সদস্য হিসেবে যুক্ত হই, তখন তার বয়স অনেক কম। ধীরে ধীরে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নিয়েছি।
এখন একাধারে মাইডাস মিনিমার্টের উত্তরা ও গুলশান শাখার পরিচালক, ওয়াইসের বোর্ড অব মেম্বার, বাংলাদেশ ফেডারেশনের বোর্ড অব মেম্বার, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য, উইমা পল্লী রিসোর্টের পরিচালক। এ ছাড়া আমি এমপাওয়ারমেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি এনজিও চালাচ্ছি। ওয়ান পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেখাশোনা করছি এবং স্টেপ ওয়ান গ্রুপের ডিএমডি হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। নন্দিনী ফ্যাশন হাউসের একক কর্ণধার হিসেবেও কাজ করছি। ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আনন্দভুবন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার প্রথম পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ হয়েছে।

নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ২০০৭ সালে বেগম রোকেয়া শাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছি। পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘অনন্যা’র পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে বিভিন্ন শাখায় মোট ২১টি পুরস্কার জিতে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। ওই একই বছরে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে অনন্যা ঈদ ফ্যাশন পুরস্কার, মাদার তেরেসা পদক, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সম্মাননা পুরস্কার, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্মৃতি পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়েছি। ২০০৯ সালে ওরেন্ডা কমিউনিকেশন ‘উইমেন পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। পরে ২০১১ সালে আমার হাতে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয় জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। সম্প্রতি আমি নভীনস এরোমা স্বাধীনতা পদক ২০১৯ অর্জন করি।

ইচ্ছাগুলো সাফল্যের সিঁড়ি
যশোরে আমি একটি স্কুল তৈরি করেছি অসহায় বাচ্চাদের জন্য। করোনা পরিস্থিতিতে সব সেক্টরের ওপরেই ধস নেমেছে। তাই আমরা পরিস্থিতি সামলে একটু একটু করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগেই নওগাঁয় ২৫০ জন নারীকে ট্রেনিং করিয়েছি এবং ভীষণ সাড়া পেয়েছি। তারা নিজেরা কিছু করার সাহস পাচ্ছে। আমি ঢাকা শহরের বৃদ্ধাশ্রম ঘুরেছি আর দেখেছি বাবা-মায়ের জীবন্ত মৃত্যু। তাদের চোখের পানি শুকিয়ে স্বপ্নের মরুভূমি তৈরি হয়েছে। আমি তাদের দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করব। সেটা ঠিক বৃদ্ধাশ্রম হবে না। হবে বাবা-মায়ের আনন্দভূমি। যেখানে বাড়ির মতো অবয়ব থাকবে। যার যার প্রতিভা সেখানে বিকশিত হবে। আনন্দঘন অবসরযাপনের ব্যবস্থা থাকবে। মনকে সুস্থ রাখার ব্যবস্থা থাকবে প্রতিনিয়ত। আল্লাহ পাশে থাকলে আমি আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। ইতিমধ্যে জায়গা দেখার কাজ শুরু হয়ে গেছে।

বেকারত্ব চিরতরে মুছে দেওয়ার প্রত্যাশায়
বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা চিরতরে মুছে দেওয়ার প্রত্যাশায় আমি সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে মানুষের মনের গহিনে প্রবেশের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত থাকতে সর্বদা তৎপর থাকি। আমি তখনই নিজেকে সফল ভাবি, যখন একজন নারী তার অসহায়ত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এবং সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমার সফলতাই হলো নারীর জীবিকায়ন। যেদিন দেখব এই বাংলাদেশে নারীরা তাদের যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে, পাচ্ছে তাদের নিজস্ব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মাথা উঁচু করে বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছে, সেদিনই ভাবব আমি একজন সফল উদ্যোক্তা।

আমি চাই আগামী প্রজন্ম সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে সদা তৎপর থাকুক। আমি স্বপ্ন দেখি সেই সব নিপীড়িত-অসহায় নারীকে নিয়ে, যারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশে নিজেদের একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে পারবে। নারী আর পুরুষের বৈষম্য দূর হবে। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ দূর হয়ে সবাই সমাজে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

ছবি: ওমর ফারুক টিটু

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দিবস সবিশেষবিশেষ রচনারোমান্স রসায়ন

দুনিয়াকাঁপানো অমর প্রেমকাহিনি

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

যুগ যুগ ধরে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, আছে। কিছু প্রেম ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ। আবার কিছু প্রেম হারিয়ে গেছে অমানিশায়। যাদের প্রেমের অমর গল্প যুগ যুগ ধরে চলমান, নিশ্চয়ই সেসব গল্পের মাহাত্ম্য অবিচল। সেসবের আছে বিচার, আছে বিশ্লেষণ, আছে উদাহরণ। অনেকে জীবন দিয়েছে, কেউবা বনবাসী হয়েছে। সে জন্যই তো ভালোবাসার জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা দিবস। যাদের প্রেমের গল্প অমর হয়েছে, তাদের নিয়ে এই সংখ্যার আয়োজনÑ

রানি ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্ট 

হাজার বছরের পুরোনো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাদের হাজার হাজার প্রেমকাহিনির ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেমকাহিনি অুুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তার চাচা কিং উইলিয়ামের মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তারা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তারা একে অপরকে প্রচÐ ভালোবাসতেন। তাদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর পর স্বামীর শোকে রানি পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানি পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। তার শাসনামলেই ব্রিটেন সুপারপাওয়ার হিসেবে দুনিয়ায় আবিভর্‚ত হয়।

লাইলি ও মজনু 

প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং মজনু একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির বাবা মজনুকে আহত করলে লায়লাও আহত হতো, এমনি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ মজনু মরু প্রান্তরে নির্বাসনে যায়। মজনুর প্রকৃত নাম ছিল কায়েস। বিরহকাতর খ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য মজনুকে প্রেরণা দেয়। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা মজনুর সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচÐ দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা,’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট 

রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনি। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রæতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রæতার জেরে এবং ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!

সেলিম ও আনারকলি :

মোগল সম্রাট   আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়ে রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্যসুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে সম্রাট পুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয় এবং নিজ সন্তানের মৃত্যুদনন্ড করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চায়। তখন সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়।

 

শাহজাহান ও মমতাজ 

১৬১২ সালে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোগল সা¤্রাজ্য পরিচালনা করেন। স¤্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ সালে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সা¤্রাজ্য হারিয়ে বন্দিজীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্যসুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে ‘তাজমল’ গড়ে উঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তার ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ‘তাজমহল!’

নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন 

২৬ বছর বয়সী মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ¤øান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ান খুব চাইতেন জোসেফাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেফাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্তে¡ও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।

ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাÐুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। একসময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হৃদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। একপর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবেন না। ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান। তার শোকে ভগ্নহৃদয় নিয়ে ইসলদেও কিছুদিন পর তারই রাজ্যে মারা যান।

অরফিয়াস এবং ইফরিডাইস 

এটি প্রাচীন গ্রিসের এক অন্ধ প্রেমের কাহিনি। অরফিয়াস সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভ‚মি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর। কিন্তু ইউরিডাইসের প্রেমে সাড়া না পেয়ে তার ক্ষতি করতে উদ্যত হন। পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে ইউরিডাইস এক সাপের গর্তে পড়লে সাপ তার পায়ে বিষাক্ত ছোবল হানে। শোকে কাতর অরফিয়াসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হাহাকার শুনে পরি আর দেবতাদের চোখেও জল আসে। দেবতাদের পরামর্শে অরফিয়াস পাতালপুরীতে প্রবেশ করেন। পাতালপুরীতে তার গান শুনে হেডসের মন গলে যায়। মুগ্ধ হয়ে হেডস ইউরিডাইসকে অরফিয়াসের সঙ্গে পৃথিবীতে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু সে জন্য একটা বিশেষ শর্ত দেন। শর্তটি হলো অরফিয়াসকে ইউরিডাইসের সামনে থেকে হেঁটে যেতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে না পৌঁছাবে, ততক্ষণ অরফিয়াস পেছনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু উৎকণ্ঠিত অরফিয়াস হেডসের সেই শর্তের কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে ইউরিডাইসকে দেখতে পেছনে ফেরেন। আর তখনই অরফিয়াসের জীবন থেকে চিরদিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যান প্রিয়তমা ইউরিডাইস। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সংগীত ও মিউজিক অনেক বড় ভ‚মিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

রামোস অ্যান্ড থিইবি 

অত্যন্ত আবেগী আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেমকাহিনি। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাদের প্রেম দ্বারা প্রভুর থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে স্বর্গেও তারা একসঙ্গে থাকবে! সুপুরুষ রামোস ছিল ব্যাবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবির বাল্যকালের বন্ধু। তারা প্রতিবেশী হওয়ায় একই সঙ্গে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাদের পরিবার এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেয় না। তাই তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরিগাছের নিচে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবি গোপনীয়তা রক্ষার্থে মুখে একটা কাপড় পরে রামোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুধার্ত সিংহ থিইবির সামনে হাজির হলে ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার সময় তার মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ধরে নেয় যে সিংহ তার থিইবিকে ভক্ষণ করেছে। তাই সেও তার ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবি এসে মৃত রামোসকে দেখতে পেয়ে সেই একই ছুরি দিয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

মেরি এবং পিয়েরে কুরি

রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনি। অথচ দুনিয়াকাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পৌরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনি। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনি। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, এরা ছিল একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চের অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সুন্দরবনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর র‌্যাডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী, যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন।

লেখা : সুরাইয়া নাজনীন

ছবি : সংগৃহীত2

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.এই সংখ্যায়গ্রুমিংদিবস সবিশেষদেহ ও মননারীবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

জরায়ু ক্যান্সার:প্রতিরোধের সফল উদাহরন

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২১

‘ক্যান্সার’ রোগটির নাম শুনলেই বেশির ভাগ মানুষের  মনে আতঙ্ক তৈরি হয় যার কারণ আমরা ধরেই নিয়েছি ক্যান্সারের শেষ পরিণতি মৃত্যু। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এই রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।  ক্যান্সার আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংষই সেরে উঠতে পারেন। আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। বিশ্বে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাই  দিবসটির উদ্দেশ্য।  ক্যান্সার জয় করার গল্প নিয়ে আজ আমাদের এই বিশেষ লেখা। লিখেছেন অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার।

বাংলাদেশে নারীদের প্রধান রোগের মধ্যে পড়ে ক্যান্সার। নারী ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৮%। খুব ধীরে ধীরে সৃষ্টিহয় এ রোগ। এক যুগের ও বেশি সময় ধরে জরায়ু মুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে। এক সময়ে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়।ক্যান্সার কোষ সংখ্যা বেড়ে বেড়ে তা পিন্ডের আকার ধারন করে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার পিন্ডটি ক্ষত হয়ে বিভিন্ন সংক্রামক রোগঘটায়। বিভিন্ন প্রকার উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন পানির মত  স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত  স্রাব, রক্তক্ষরন, জ্বর, নীচের পেটে ও কোমরে ব্যথা, খাবারে রুচি কমে যাওয়া এবং দূর্বলতা ইত্যাদি। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে এ রোগ ভয়াবহ রুপ নেয়। তখন আর নিয়ন্ত্রেনের মধ্যে থাকেনা।

যে সকল বিষয় এ রোগের সূচনা ঘটায়-

  •  হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসের আক্রমন।
  •  অল্প বয়সে বিয়েবা যৌনসম্পর্ক করা, একাধিক বিয়ে বা একাধিক যৌনসাথী।
  •  ঘনঘন সন্তান ধারন।
  • প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপায়ী, পানের সাথে তামাক পাতা বা জর্দাখাওয়া, দাঁতের গোড়ায়তামাকপাতার গুড়া (গুল) ব্যবহার।
  • দীর্ঘদিনজন্ম নিয়ন্ত্রনবড়ি সেবন (এক টানা ১০/১২ বছরেরঅধিকসময়)
  • পুষ্টিহীনতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

যে বয়সেসাধারনতজরায়ুমুখক্যান্সারেআক্রান্তহয়ে থাকেন-
৩৫ হতে ৫৫ বছর বয়সীরা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বিশ বছরের নীচে এ রোগ হয় না। ষাটবছরের পর ও এ রোগ হতে পারে, তবে তাদেও সংখ্যা তুলনামূলক কম। প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসগর্ই থাকেনা।পরীক্ষাকরে তেমন চিহ্নবা ক্ষত চোখে দেখা যায় না। তবে সহবাসের পর রক্ত ফোটা দেখতে পাওয়াকে প্রাথমিক চিহ্ন হিসাবে দেখা হয়।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিং-
উন্নতদেশে এ রোগের প্রকোপ অনেক কমে এসেছে এবং এ রোগজনিত মৃত্যুরহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে।নারী শিক্ষার প্রসার, উন্নত জীবনযাপন,স্বাস্থ্য-সচেতনতা,সর্বোপরি যুগান্তকারী ‘পেপ্সটেস্ট’ আবিষ্কার। (জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর একটি পদ্ধতি)

পেপ্স টেস্ট
এটি একটি সহজ পরীক্ষা। জরায়ুমুখ  হতে রসনিয়ে অনুবীক্ষণীক(মাইক্রোস্কোপিক) যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা। এ পরীক্ষা দিয়ে ক্যান্সার, ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব অবস্থা ও জরায়ু মুখের অন্যান্য রোগ যেমন প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) সনাক্ত করা যায়। এতে কোন ব্যথা হয় না। এ টেস্টে খরচও কম। স্বাধারনত বিবাহিত মহিলাদেও বিয়ের তিন বছর হতে (২১ বছরেরআগেনয়) এ টেস্ট শুরু করা যেতে পারে এবং ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ৩ বছর পর পর এ টেস্ট করা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তন হতে পারে।হিউম্যান পেপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)
জরায়ু মুখেরক্যান্সার এর জন্য এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ (শতকরা ৭০ভাগ)। তবে একমাত্র কারণ নয়। যৌনসংযোগে এর সংক্রামন ঘটে।অল্পবয়সে বিয়েবা যৌনসংযোগে এ সংক্রামনের ঝুঁকি অনেক গুন বেশী।

  •  এ যাবৎ ১০০ প্রকার এইচপিভি সনাক্ত হয়েছে। এদের বেশীরভাগই (৭০%)জরায়ু ক্যান্সার এর জন্য তেমন ঝুঁকি পূর্ননয়। তবে জরায়ু ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ন এইচপিভিনং ১৬, ১৮, ৬, এবং ১১।
  • এ সকল ভাইরাসে আক্রমন হলেই যে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়, তা নয়। স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ নারীরা প্রায়ই এইচপিভি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে কোন উপসর্গ থাকেনা । শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবলে ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সকলএইচপিভি মুক্ত হয়েযায়।
  • কেবল মাত্র জরায়ুতে এইচপিভি দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, জরায়ু কোষে পরিবর্তনের সূচনাকরে। অতি ঝুঁকিপূর্ন এইচপিভি আক্রান্ত হলে জরায়ুমুখ, জরায়ুপথ,পায়ুপথ এবং সংলগ্ন স্থানে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ হতে পারে।
  •  যে সকল বিষয় জরায়ুতে এইচপিভির স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়,তাহলো’- ধূমপান ও তামাক পাতার ব্যবহার যেমন পানজর্দা, সাদাপাতা, গুল (তামাকের গুড়া), দীর্ঘদিন জন্ম নিয়ন্ত্রনবড়ি সেবন (১০-১২ বছর), অপুষ্টি, ঘনঘন সন্তান ধারন, এইডস, জরায়ুতে অন্যান্য ইনফেকশন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

এইচপিভি টেস্ট করার নিয়মাবলি-

  • জরায়ু মুখ হতে রস নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করে এইচপিভি সনাক্ত করা যায়।
  •  এইচপিভি টেস্ট করার পূর্বে অবশ্যই পেপ’স টেস্ট করা হয়।
  • জরায়ু মুখ ক্যান্সারের জন্য অতিঝুঁকিপূর্ন নারীদের এ টেস্ট করা হয়। তবে ত্রিশবছরের কম বয়সীদের এ টেস্ট করা হয় না। কারন কম বয়সীরা প্রায়ই এইচপিভিআক্রান্ত হয়ে থাকে এবং স্বাভাবিক নিয়মেই শরীর ভাইরাস মুক্ত হয়ে যায়। এইচপিভি টেস্ট তাদের অহেতুক ভীতির সৃষ্টি করতে পারে।

এইচপিভি আক্রান্ত হলে করণীয়-

  • সাধারনভাবে এইচপিভি আক্রন্তদের কোন চিকিৎসা নাই। চিকিৎসার কোন প্রয়োজন হয় না।
  •  তবে যদি জরারু মুখ ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ন নারী, তার পেপস টেস্ট অস্বাভাবিক((ডিস্প্লেসিয়া) এবং একই সঙ্গে অতি ঝুঁকিপূর্ন এইচপিভি আক্রন্ত হয়ে থাকেন, তাকে অবশ্যই এ রোগ সম্পর্কে সর্তক করা হয়।
  •  এইচপিভি আক্রান্ত জরায়ু মুখে ক্ষত হয়েছে কিনা আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য কল্পোস্কোপি (এক ধরনের যন্ত্র যাদি য়েজরায়ুমুখ ২ হতে ২৫ গুন বড়করে দেখা যায়) দ্বারা জরায়ু মুখ ভালো ভাবে পরীক্ষা করা হয়। যাতে ক্যান্সারপুর্ব অবস্থায় রোগ সনাক্ত করা হয়। যদি জরায়ুতে কোন অস্বাভাবিকতা সনাক্ত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার বিভিন্ন রকম পদ্ধতি আছে।
  •  পূনপূন পরীক্ষা করে দেখা। শুধু মাত্র লক্ষ রাখা। সময়ের সাথে সাথে অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের অস্বাভাকিত
  •  (ডিস্লপেসিয়া) স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  •  লিপঃইলেক্ট্রিক যন্ত্রেও সাহায্যে জরাযু মুখের আক্রান্ত কোষ কেটে ফেলা হয়।

এইচপিভি এর প্রতিরোধ-

  • কার্যকর প্রতিরোধ হলো এইচপিভির মাংস পেশীতে ইনজেকশন উপযোগী টিকা নেয়া।
  • এইচপিভি-১৬ ও ১৮ এর প্রতিশেধ কটিকা (সারভারিক্স) কিংবা এইচপিভি-১৮,১৬,১১ ও ৬ প্রতি শেধো কটিকা (র্গাডাসিল) টিকা নেয়া হলে শরীরে উল্লেখিত ভাইরাসের বিরেদ্ধে কার্যকর এন্টিবডি সৃষ্টি হয়। জরায়ুতে ঝুঁকিপূর্ন ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ারর সাথে সাথে পূর্ব হতে সৃষ্টি ওয়া এন্টিবডি তা ধ্বংসকওে দিতে সক্ষম হয়।
  •  মেলা মেশায় কনডম ব্যবহার করা।

আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিয়মানুযায়ী ৯বছর হতে ২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। যে কোন এক ধরনের টিকা (সারভারিক্স অথবার্গাডাসিল) বার/তেরবছরের বালিকাদের এইচপিভি আক্রান্ত হওয়ার আগে দেয় হয়।

এইচপিভি টিকার নিয়মাবলী-
দুটি ডোজঃ ৯-১৪ বছরপর্যন্ত (প্রথম ও ষষ্ঠমাসে)
তিনটি ডোজঃ ১৫-২৫ বছর পর্যন্ত (প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠমাসে)

এইচপিভিটিকাসম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য-

  • বিবাহিতজীবনযাপনকরানারীদের এ টিকা তেমনকার্যকরী হয় না।
  • গর্ভাবস্থায় এ টিকা নেয়াএখনওঅনুমোদনহয়নি।
  • এইচপিভিইনফেকশন হয়ে যাওয়ার পর বা ক্যান্সার হয়ে যাওয়ারপর টিকা দিলে কোন কাজে আসেনা। কারন এ টিকা ইনফেকশন দমন করতে পারেনা এবং ক্যান্সার গতিরূদ্ধ করতে পারেনা।
  • এ টিকা গ্রহন কারীকে ও নিয়মিত পেপস টেস্টে অংশ নিতে হবে।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতি রোধেনিম্নলিখিত বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন

  •  বাল্য বিবাহবন্ধকরা।বাংলাদেশেরপ্রচলিতআইন (মেয়েদেরবিয়েরবয়স ১৮ বছর) মেনেচলা ।
  • অধিকসন্তান নেয়া থেকে বিরত থাকা।
  • প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষধূমপান ওতামাকপাতারব্যবহার (পানের সাথে জর্দা,সাদাপাতা, গুল) বন্ধকরা ।
  • সুষম খাবার খাওয়াযাতে পুষ্টি ঘাটতিনা থাকে। প্রতিদিন ৪-৬ বার টাটকা শাকসবজি, তরকারী এবং দেশীফল খেতে হবে।
  • পরিস্কার পরিচ্ছন্ন , স্বাস্থ্যসম্মত ও সুশৃংখল জীবন যাপন করা।
  • একটানা দীর্ঘ দিন জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি সেবন না করা
  • নিয়মিত পেপস টেস্টে অংশ নেয়া
  • নিয়মানুযায়ী এইচপিভি টিকা নেয়া

অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার
মেডিকেল অন কোলজিস্ট,
শান্তি ক্যান্সার ফাউন্ডেশন
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষনা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

ছবি :  রোদসী ও সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook