শায়লা জাহানঃ
হিম হিম শীতে উষ্ণতার পরশে শরীরে এক ধরনের আলস্যতা দেখা দেয়। আমাদের কাজের গতিও অনেকটা শ্লথ হয়ে আসে। ঠিক আমাদের মতোই প্রকৃতির এই বিমূর্ত চেহারার সাথে আমাদের শখের বাগানের কার্যকলাপেও অনিবার্য ধীরগতি আসে। প্রিয় গাছের পাতার রঙ ফ্যাকাসে হয়ে আসে বা তাদের পাতা ঝরে যেতে পারে। বাগানের এই ধীরতায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে কিছুই করতে হবেনা। এই সময়ে যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করি তবে শীত শেষে যে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটবে, তখন একটি সুন্দর বাগান রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। শীতে কীভাবে বাগানের যত্ন নেয়া যাবে তার কিছু টিপস শেয়ার করছি।
রোগাক্রান্ত গাছপালা পরিষ্কার
যদিও অনেক পুরোনো এবং মরা গাছ পচে মাটিতে মিশে পরবর্তীতে পুষ্টি যোগানের কাজ করে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে এগুলোতেও কিছু কিছু রোগ, কীটপতঙ্গ এবং ছত্রাক আশ্রয় করতে পারে। এই মরসুমে যদি গাছের ক্রমবর্ধমান রোগের কোন লক্ষণ লক্ষ্য করে থাকো তবে সেগুলো এখনই অপসারণ করে ফেলতে হবে। আর বাকিগুলো মাটির সুরক্ষা প্রদানের জন্য ছেড়ে দাও।
মালচিং করা
কিছু গাছ আছে যেগুলো হার্ডি প্রকৃতির, সেগুলোকে শীতের জন্য প্রস্তুত করতে খুব বেশি প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবেনা। কিন্তু এমন অনেক গাছ আছে বিশেষ করে নতুন গাছ, যাদের এখনও মাটি ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য শিকড় নেই; সেসব গাছের জন্য প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া ক্ষতি করতে পারে। এর প্রতিকার করতে, গাছের চারপাশে কাটা পাটা, খড় বা অন্যান্য মালচের একটি ৬ ইঞ্চি পুরু স্তর যোগ করো। এটি মাটির তাপমাত্রা মাঝারি করতে সাহায্য করবে। কখনও কখনও গাছের মৃত পাতাগুলো তার মুকুট এবং শিকড়গুলোকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই শীতের জন্য বাগান প্রস্তুত করার সময়, পরবর্তী বসন্ত পর্যন্ত তাদের জায়গায় রেখে দাও।
বসন্তের জন্য মাটি সংশোধন
মাটি সংশোধনের এই কাজটি বেশিরভাগ লোকেরা বসন্তের জন্য তুলে রাখে। কিন্তু সার এবং কম্পোস্টের মতো মাটির সংশোধন বা হাড় গুঁড়া, কেল্প এবং রক ফসফেটের মতো জৈব সার যুক্ত এখনই করা যেতে পারে। শীতের আগেই এই সময়ে পুষ্টি যোগ করার অর্থ হল তা মাটিকে সমৃদ্ধ করার এবং জৈবিকভাবে সক্রিয় হওয়ার অনেক সময় পাবে। একবার মাটি সংশোধনের কাজ করলে, তাতে মালচিং করে দিতে পার অথবা কভার দিয়ে রাখতে পারো। এতে তীব্র শীতে এর মূলে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। নতুন রপণের আগে বসন্তের শুরুতে মালচ সরিয়ে ফেললেই হবে।
টেন্ডার বাল্ব খনন
কিছু গ্রীষ্মকালীন জনপ্রিয় ব্লুমার গাছ রয়েছে যেমন গ্লাডিওলাস, ক্যানাস, ডালিয়াস যেগুলো টেন্ডার বাল্ব নামে পরিচিত। এই গাছগুলো প্রচন্ড শীতে বেঁচে থাকেনা। তবে তুমি যদি এই গাছগুলোকে আরও এক বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে চাও তবে সেগুলোকে ঠান্ডা আবহাওয়ার বাইরে রাখতে হবে। এগুলো সংরক্ষণের জন্য আলতো করে বাল্ব বা কন্দগুলো খনন করে নিতে হবে। পাতাগুলো কেটে ফেলে মাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে পানি দিয়ে ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, নয়তো এগুলে পচে যেতে পারে। এক সপ্তাহ এগুলোকে খোলা জায়গায় ফেলে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে তারপর তা সংরক্ষণ করে রাখলেই হবে।
পানি দেয়া
শীতকালে গাছে অতিরিক্ত আনি না দেয়াই ভালো। মাটি সহজেই শুকায় না বলে শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে তাই বলে মাটি একদম খটখটে শুকনোও হলে চলবেনা। তাই পানি দেয়ার সময় মাটি চেক করে তারপর প্রয়োগ করতে হবে। ঘরের টবে পানি দেয়ার জন্য স্প্রে ব্যবহার করা যায়। এতে বাড়তি পানি নষ্ট হবেনা।
ছাটাইকরণ
শীতের শুরুতে বা শীতের সময় গাছে ছাঁটাই না করাই ভালো। এই সময় গাছ খুব ধীরগতিতে বাড়ে। তবে শীত বেশি হলে অনেক গাছ মরে যেতে পারে। এমন হলে খানিকটা ছেটে দেয়া যেতে পারে, যাকে বলা হয় প্রুনিং। শীত কমে গেলে নতুন পাতা গজিয়ে সতেজ হয়ে উঠবে শখের গাছটি।
কীটনাশক স্প্রে
শীতে মাটির ছত্রাকজনিত রোগ খুব বেশি পরিমানে বাড়ে। তাই শুরুতেই ছত্রাক্রোধী কীটনাশক গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে দিতে হবে। গাছের পাতাতেও কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। মাসে দুইবার কীটনাশক ব্যবহার করা উচিৎ।