এক গবেষণায় দেখা গেছে, সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করার হার গড়ে ১৬ শতাংশ। ধরো ওই ১৬ শতাংশের তুমি একজন। আর তুমি জানো ‘যুদ্ধে ও প্রেমে সবই সঠিক’। আসলেই কি তাই? লিখেছেন স্বরলিপি।
প্রেমে পড়লে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে হৃদকম্পন বেড়ে যায়। বিশেষ আকর্ষণ বোধ হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি। ক্রিয়াশীল হয় ডোপামিন বা ‘সুখের হরমোন’। এই হরমোন প্রেমের প্রতি নেশা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আবেগ সংবরণ কষ্টকর হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষ ছাড়া অন্যকিছু ভাবনা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। প্রেমে পড়ার অন্তত তিন-চার মাস লেগে যায় মনে স্থিতি পেতে।
প্রেমতো বোধের, প্রেম সুখের; তাই বলে সবখানে প্রেমের লাগাম ছেড়ে রাখলে তো চলবে না। বিশেষ করে অফিসে।
অফিসে প্রেম, তবে…
বোল্ডস্কাই-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে অফিসে প্রেম প্রসঙ্গে ভালো গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।
কাজের ফাঁকে যেটুকু সময় চা বা কফি পানের সুযোগ পাওয়া যায়, কফি খাওয়ার ছলে হতে পারে দেখা। এই সুযোগে মুখোমুখি বা পাশাপাশি বসে কফি খাওয়া আর অল্পস্বল্প কথাপর্ব শেষ করে নিতে পারো। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে রোমান্স যেন কর্মক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ না হয়।
শুধু প্রেমের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করা বড় ভুল। এতে কর্মস্পৃহা কমে যায়। ভুলেও এ ধরনের চেষ্টা করা ঠিক নয়।
অফিসে তোমার প্রথম পরিচয় তুমি একজন কর্মজীবী।
ইনবক্সে অনবরত চ্যাট করার নেই কোনো মানে বরং অফিস টাইমের পরে একজন আর একজনকে সময় দিতে পারো। সে ক্ষেত্রে যদিও একটু নাটকীয় আচরণ দরকার হয়ে পড়ে, তবু ভালো। অফিস টাইমের পরে দেখা হোক, কথা হোক। এই সময়ে অফিশিয়াল বিষয় আলোচনায় না নেওয়াই ভালো। খুব কাছে পেয়েও যার সঙ্গে কথা বলার এতটুকু ফুরসত জোটেনি বরং তার কথা শুনতে চাও। তার কথা বুঝতে চাও।
অফিসের প্রেম ভালোবাসাকে গোপন রাখার পক্ষে মত দেন অনেকে। এক জরিপে দেখা দেখে, ৭১ শতাংশ চাকরিজীবী অফিসে তাদের প্রেমের সম্পর্কটা গোপন রেখেছেন।
প্রেমের সম্পর্ক বলে কথা, গোপন করতে চাইলেই কি গোপন করা যায়। আবার ৭২ শতাংশ ডেটিংয়ে গিয়ে অন্য কোনো সহকর্মীর কাছে হাতেনাতে ধরাও খেয়েছেন!
অফিসে রোমান্সের বিষয়টি সহকর্মীরা ভালো চোখে দেখেন না। সুতরাং রোমান্সের বহর রয়ে সয়ে দেখাও। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীরাও তোমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে।
অফিসে প্রেমের উল্টো পাঠ
প্রেম যখন হয়েই যায়, কেউ না কেউ জেনে যায়। অফিসে যেন নিজের ব্যক্তিত্ব ঠিক থাকে। সেজন্য খেয়াল রাখো অফিসের নীতিমালা। তাছাড়া কোন কোন প্রেমের সম্পর্ক বিয়ের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায় আবার কোন সম্পর্ক মোড় নেয় বিচ্ছেদের দিকে। প্রেমের পরিণতি যখন ব্রেকআপের দিকে যায়, তখন একজন আর একজনের সামনে থেকে সরে যাওয়ার পায়তারাও শুরু হয়। এতে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেয়। পরিস্থিতি যাইহোক নিজেকে অফিস পরিবেশের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর অফিসের সম্পর্ক এক করে ফেললে চলবে না।
ভালোবাসা যেন ফায়দা লুফে নেওয়ার কারণ না হয়। হঠাৎ এমন কথা আসার কারণ হলো- ক্যারিয়ারবিল্ডারডটইন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৮ শতাংশ কর্মজীবী তাদের থেকে পদমর্যাদায় উপর দিকের কারও সাথেই প্রেম করতে অধিক আগ্রহী থাকে।
ভালোবাসার কারণ হোক হৃদয়ে হৃদয়ে বোঝাপড়ার।
এতো গেলে প্রেমের পাঠ। এবার, যারা বিয়ে করে একই কর্মস্থলে নিয়োজিত তাদের কথায় আসা যাক।
একই অফিসে স্বামী-স্ত্রী
অফিসে পেশাদারিত্বই প্রথম। সেক্ষেত্রে একই অফিসে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করলে প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা। দূরত্ব বজায় রেখা চলা ভালো। ভারতের দাম্পত্যবিষয়ক পরামর্শদাতা ড. সঞ্জয় মুখার্জির পরামর্শ হলো, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে একই অফিসে চাকরি করবেন, এমন চিন্তা মাথায় না রাখাই ভালো। এক অফিসে কাজ করলে দুজনের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাব তৈরি হয়। ফলে বিবাহিত জীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট হতে পারে।
বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রতিযোগী মনোভাব দূর করতে হবে
কোন একজনকে বস প্রশংসা করলে অন্য আরেকজন হিংসা করবে না। বা যে কোন একজনের পদন্নতি আর একজন নিজের দূর্বলতা হিসেবেও দেখবে না। এতে মানসিক দূরত্ব তৈরি হবে। মনে রাখতে হবে, স্বামী-স্ত্রীর যে কোন একজনের পদোন্নতি মানে তো দুজনেরই সফলতা; সংসারের জন্য শুভবার্তা।
কর্মক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একজন আর একজনের সঙ্গে সংযত আচরণ করতে হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাও থাকতে হবে।
মডেল : মুহাইমিন ও রাফিয়া
ছবি : আরাফাত সৈকত লালন