রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

রোমান্স রসায়ন

গ্রুমিংজীবনজীবনযাত্রারোমান্স রসায়ন

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বনাম লাভ ম্যারেজ

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৩১, ২০২৩

শায়লা জাহান:

বলা হয় বিয়ে হলো দিল্লি কা লাড্ডু; যে খেলো সেও পস্তালো, আর যে খেল না সেও পস্তালো। আবার অনেকে তো এক কাঠি সরেস। তাদের মতে, পুরুষ মানুষ হল দু’প্রকারঃ জীবিত ও বিবাহিত। বিবাহিত মানে প্রকারন্তরেতে মৃত। যতই কৌতুকপূর্ণ মতামত চালু থাকুক না কেনো, যুগ যুগ ধরে বিয়ের প্রথাকে মঙ্গলজনক ও ঐতিহ্যবাহী বন্ধন হিসেবে মনে করা হয়। এটি এমন এক সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষ একত্রে এক নতুন জীবনের সূচনা করে। পারিবারিক বিয়ে নাকি প্রেমের বিয়ে, কিসে সুখী হয় বেশী? এই নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। আসো এই ব্যাপারে আমরাও কিছু জেনে নিই।

বিয়ে হচ্ছে আজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি এবং এটি কেউই লাক বায় চান্স বলে ছেড়ে দিতে পারেনা। তাই সঠিক সঙ্গী বেছে নেয়াতে সাফল্য ও সুখের চাবিকাঠি নিহিত। পারিবারিক বিয়ে এবং প্রেমের বিয়ে- দুটিই বিয়ে করার দুটি পথ হলেও এদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামতের শেষ নেই। ১৮শতক পর্যন্ত পরিবারের জন্য একটি সম্পর্ক সংগঠিত করার প্রয়াসে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজকে আদর্শ উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই ব্যবস্থাগুলো সাধারণত পরিবারের অভিভাবক অর্থাৎ দম্পতির পিতামাতা বা দাদা-দাদি দ্বারা সম্পন্ন হতো। শুধু বর-কনে নয়, দুই পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ও অংশগ্রহনের মাধ্যমে এই পারিবারিক বিয়েগুলো হয়ে থাকে। অন্যদিকে বর্তমানে তরুন প্রজন্মের কাছে লাভ ম্যারেজ অত্যধিক জনপ্রিয়। এখানে মূলত দম্পতির একক সিদ্ধান্ত থাকে এবং তারা তাদের পছন্দের কারও সাথে গাঁটছড়া বাঁধতেই বেশি পছন্দ করে।

পারিবারিক বিয়ে বনাম প্রেমের বিয়ে

পারিবারিক ভাবে বিয়ে বেশি টেকসই নাকি প্রেমের বিয়ে-এই বিতর্ক অনেক পুরনো। কেউ প্রেমের বিয়ে পছন্দ করেন তো কেউবা পারিবারিক বিয়ের পক্ষে। এই দু’ধরনের বিয়ে ব্যবস্থার তুলনামূলক কিছু সুবিধা-অসুবিধা উল্লেখ করা হলঃ

পারিবারিক বিয়ের সুবিধা

-এই ধরনের বিয়ে যেহেতু দু’পক্ষের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার পরেই হয়, তাই এতে সম্পর্কের ভিত্তি হয় মজবুত এবং পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

-যেহেতু এটি অভিভাবকদের পারস্পরিক সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে, তাই প্রেমের বিয়েতে যতটা না সম্মান থাকে তার থেকে এতে দুজনের মধ্যে অনেক বেশি সম্মানের বিষয়টি জড়িত থাকে।

-অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে, বাবা-মা একে অপরের পরিবার এবং তাদের সার্কেল সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। নিজ সন্তানের আগ্রহ, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি মাথায় রেখেই তার জীবনসঙ্গী বেছে নেন। তারা শুধুমাত্র এমন কাউকে বেছে নেবেন যার মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং বিশ্বাস সবকিছুই নিজেদের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ থাকবে।

-নিঃসন্দেহে তুমি যখন অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ করছো, তখন তোমার কাছে অফুরন্ত সংখ্যক অপশন এভেলএবেল থাকবে। তুমি যে ধরনের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে চাও এবং বাকি জীবন কাটাতে চাও তা বেছে নিতে পারো।

-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ডক্টর রবার্ট এপস্টেইনের গবেষণা অনুসারে, প্রেমের বিয়েতে প্রেম সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়ে যায়, যেখানে পারিবারিক বিয়েতে প্রেম সময়ের সাথে বৃদ্ধি পায়।

-সর্বোপরি, এটি একটি পরিবারের সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, নৈতিকতা এবং পরিচয়ের ঐতিহ্য বজায় রাখে।

পারিবারিক বিয়ের অসুবিধা

-অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ অনেকটা লটারির মতো। দম্পতিদের মধ্যে পরস্পরের জন্য প্রেম, অনুভূতি জাগতে পারে আবার নাও পারে।

-যেহেতু দু’জন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি পরিবার থেকে আগত। বিয়ের আগে একে অপরকে চেনার পরিসর কম থাকে। তাই এক্ষেত্রে অনেকসময় পারস্পরিক এডজাস্টমেন্টের সমস্যা হতে পারে। আর এটা যদি বাড়তে থাকে তবে বিয়ে ভাঙার মতো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আবির্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

-যদিও তুলনামূলকভাবে প্রেমের বিয়ের তুলনায় পারিবারিক বিয়েতে বিচ্ছেদের হার কম থাকে, তবুও বলা যায় না যে তারা সুখী দম্পতি। এমন অনেকেই আছে যারা বৈবাহিক জীবনে তেমন সুখী নয়, কিন্তু সামাজিক চাপ, লোকলজ্জার ভয়ে বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে না পেরে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়।

-অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের নামে আজও অনেক জায়গায় জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার প্রচলন রয়েছে।

লাভ ম্যারেজের সুবিধা

-এই বিয়েতে যেহেতু পার্টনার একে অপরকে আগে থেকেই ভালভাবে জানে তাই বিয়ের পরে তাদের মাঝে বোঝাপড়ার সমস্যা থাকেনা।

-প্রেম বিবাহ বিশেষভাবে উদার মনের ব্যক্তিদের জন্য বোঝানো হয়। এখানে নিজ সঙ্গী নির্বাচনের পুরোপুরি স্বাধীনতা রয়েছে।

-একে অপরের জন্য সবচেয়ে বড় সাপোর্টিভ হয়ে উঠবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার জন্য একে অপরকে বিশ্বাস করা, সম্মান করা আগে থেকেই চলে আসে। তুমি যে ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে ছিলে এবং যে তোমাকে খুব ভালবাসে তার চেয়ে ভাল উপায়ে আর কে সমর্থন করতে পারে।

লাভ ম্যারেজের অসুবিধা

-এই বিয়েতে বিচ্ছেদ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কখনও কখনও দম্পতিদের মাঝে প্রেম ফুরিয়ে যায় বা অনেক সময় তারা একে অপরের প্রতি ক্লান্ত হয়ে যায়।

-এমন বিয়েতে অনেক সময় তোমার সঙ্গী নির্বাচন পরিবার এবং বন্ধুদের দ্বারা অনুমোদিত নাও হতে পারে। তাই তুমি যখন চলার পথে কোন সমস্যায় পড়বে, সেখান থেকে মুক্তির জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত কাউকে নাও পেতে পারো।

-সাংসারিক জীবনে বিরোধের দেখা দিতে পারে। বিয়ের আগে এবং  বিয়ের পরে লাইফ স্টাইল অনেক পরিবর্তন হয়ে যায় উভয়ের। এটা মেনে না নিতে পেরে শুরু হয়ে যায় সাংসারিক ঝামেলার।

-জীবনে যে শুধুমাত্র ভালোবাসাই প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। পারিবারিক পটভূমি, অর্থনৈতিক অবস্থা, বেড়ে উঠার পরিবেশ এগুলোও বিবেচ্য বিষয়। তাই বিয়ের মত এতো বড় সিদ্ধান্তে আবেগ থেকেও বাস্তবতা যাচাই করা উচিৎ।

প্রেমের বিয়েই হোক কিংবা পারিবারিক বিয়ে, সম্পর্ক তখনই কাজ করবে যখন পরস্পরের মাঝে সৎ, শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আজকাল অবশ্য পারিবারিকভাবে বিয়ে ব্যবস্থায়ও একে অপরকে জানতে সময় নিচ্ছে। জীবনসঙ্গীকে জোর করে নয়, নিজের মনের মতো করে নির্বাচন করা উচিৎ।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বলিউডবিনোদনরোমান্স রসায়নসিনেমা

তারকাদের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২৬, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

সৃষ্টির শুরুতে আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া থেকে শুরু করে প্রেম, ভালোবাসার সুচনা ঘটেছিলো। কত কত সাহিত্য রচিত হয়েছে একে ঘিরে। শিরিন-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট-এর মতো ইতিহাসখ্যাত চরিত্র আজো জনমনে জীবন্ত হয়ে আছে। প্রেম কী? এই প্রশ্নের সদুত্তর আজো অজানা। কারো মতে, প্রেম হলো স্বর্গ থেকে আসা এমন এক আবেগ যা জীবনে অমর হয়ে রয়। আবার কারো মতে, ব্যক্তি তো প্রেমে পড়ে না, বরং প্রেম ব্যক্তির উপর ভর করে। একে যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন মূল ব্যাপার হল প্রেম হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ যার দ্বারা অন্যের উপর তীব্র আকর্ষণ ও অনুভূতির সঞ্চার হয়। এই যদি হয় প্রেম তবে বিচ্ছেদ কী? বিখ্যাত ‘রোমিও জুলিয়েট’ নাটকের সংলাপের আলোকে বলতে হয় “বিচ্ছেদ হলো একটি মধুর দুঃখ”।

বিনোদন পাড়ার জগতে তারকাদের লাইফ স্টাইল ব্যাপারে জানার আগ্রহ কার না থাকে। আর তা যদি হয় তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, তবে তো তা সকলের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। তারকারা পর্দায় কতবার প্রেমে মজেছেন। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে হিরোইজমের সহিত প্রেম হাসিলও করে নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে এমন অনেকেই আছেন যারা প্রেম করে হয়েছেন ব্যর্থ। জীবনে যাদের রচিত হয়ে গেছে অসমাপ্ত প্রেমের গল্প। আজ এমনই কিছু প্রেমে ব্যর্থ তারকাদের গল্প জানা যাক।

মধুবালা-দিলীপ কুমার

মমতাজ জাহান দেহলভী, যিনি মধুবালা নামেই বেশি পরিচিত। রুপ-সৌন্দর্য, চোখের চাহনি সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন হাজারো পুরুষের স্বপ্নের রানী। ‘মুঘল-ই-আজম’ ছবিতে তাঁর ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ গানের সাথে অসাধারণ পারফরম্যান্স সকলকে করেছে মন্ত্রমুগ্ধ। অভিনেতা ও গায়ক কিশোর কুমারের স্ত্রী হওয়ার আগে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কয়েকবার সম্পর্কে জড়ালেও দিলীপ কুমারের সাথে তাঁর প্রেম কাহিনী বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো। তাদের প্রেম কাহিনী শুরু হয় ‘তারানা’ ছবির সেটে। এরপরে একদিকে যেমন পরপর ছবি করতে থাকেন, অন্যদিকে তাঁদের প্রেমও হতে থাকে গাঢ়। দুজনে দেখেছিলেনও সারাজীবন একসাথে থাকার স্বপ্ন। কিন্তু বিধির নিয়তি, না যায় খন্ডন। ক্যারিয়ারের ইগো আর মধুবালার বাবার জন্য ভেঙে যায় সেই স্বপ্ন। পরবর্তীতে দুজনে পৃথকভাবে সংসার করলেও অতৃপ্ত এক ভালোবাসা তাঁদের মনে রয়েই যায়।

রেখা-অমিতাভ

বলি ইন্ডাস্ট্রির দুই কিংবদন্তী অমিতাভ বচ্চন এবং রেখার প্রেমের গল্প এখনও পর্যন্ত বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। এই বহুল আলোচিত প্রেমের গল্পটি সর্বদা এক রহস্যে আবৃত রয়ে গেছে। গল্পের শুরুটা হয়েছিলো ফিল্ম ‘দো আনজানে’ এর সেটে। যদিও তার আগে থেকেই অমিতাভ ছিলেন বিবাহিত। কিন্তু প্রেম কি আর বাধা মানে? গোপনে চলে তাঁদের প্রণয় সম্পর্ক। পরে ব্যাপারটি যখন মিডিয়ার লাইমলাইটে আসে, দুজনেই প্রেমের বিষয়টি অস্বীকার করে। ঋষি কাপুর ও নিতু সিংহের বিয়েতে মাথায় সিঁদুর দিয়ে রেখার উপস্থিতি সবাইকে চমকিয়ে দেয়। গভীর প্রণয় থাকাকালে রেখা-অমিতাভ-জয়া অভিনয় করেন ‘সিলসিলা’ মুভিতে। এই ছবির শুটিংয়ে অমিতাভ ও রেখার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ঝড় উঠে অমিতাভ-জয়ার দাম্পত্য জীবনে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জয়াকে সামলাতে এবং দাম্পত্য জীবন সামলাতে ছবি করা তো দূরের কথা, রেখার জীবন থেকে চিরতরেই সরে যান বিগ বি।

সালমান খান-ঐশ্বরিয়া রাই

বলি-ইন্ডাস্ট্রিতে সম্পর্কের গল্প, হৃদয়বিদারক এবং দুঃখজনক সমাপ্তির শিরোনাম হতে সময় লাগেনা। বলিউডের ড্যাশিং নায়ক সালমান খান এবং সাবেক বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সম্পর্ককে এখনও সবচেয়ে রোমান্টিক এবং একই সাথে সর্বকালের খারাপ সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে দেখানো হয়। তাঁদের প্রেমের মধুর রসায়ন থেকে শুরু করে উত্তপ্ত বিতর্ক যা তাঁদের বিচ্ছেদের পর বছর ধরে চলতে থাকে। সঞ্জয় লীলা বানসালি-র ‘হাম দিল দি চুকে সানাম’ ছবিতে তাঁদের অন-স্ক্রিনের পাশাপাশি অফ-স্ক্রিন কেমিস্ট্রিও জমে উঠে। পরবর্তীতে ‘হাম তুমহারে হ্যায় সানাম’ ছবিতেও তাঁদের একসাথে দেখা গেছে। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত সালমান খান এবং ঐশ্বরিয়া রাই এর মাঝে সবই চলছিলো ভালোই। কিন্তু কোথাও গিয়ে ঘটে ছন্দ পতন। কথিত আছে, সালমান খানের অত্যাধিক পজেসিভনেস তাঁদের সম্পর্কের ভাঙনের নেপথ্যে ছিল। এই নিয়ে ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার জীবনে উঠে অশান্তি। ঐশ্বর্যের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও নাকি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সম্পর্ক থেকে সরে পরেন এই বলি সুন্দরী। বর্তমানে অভিষেক বচ্চনকে বিয়ে করে সন্তান সহ সুখেই আছেন এই নীল নয়না। একাধিক সম্পর্কে জড়ালেও সালমান আজোও রয়ে গেছেন ব্যাচেলর।

অভিষেক বচ্চন-কারিশমা কাপুর

আরেকটি রহস্যময় ব্যর্থ প্রেমের গল্প রচিত হয়েছে অভিষেক বচ্চন ও কারিশমা কাপুরকে নিয়ে। তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে যখন কারিশমা ছিলো পুরোদস্তুর স্টার আর অভিষেকের তখন নায়ক পাড়ায় আগমন ঘটেনি। তাদের সম্পর্কের বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই অমিতাভের ৬০ তম জন্মদিনের পার্টিতে অনুষ্ঠিত হয় এংগেইজমেন্ট। কিন্তু কয়েকমাস যেতে না যেতেই হঠাৎ করেই বিয়েটা বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্রেকআপের পেছনে বাতাসে ঘুরতে থাকে নানান গুঞ্জন।

বিপাশা বসু-জন আব্রাহাম

লম্বা সময় প্রায় এক দশক ধরে প্রেম করেছিলেন জন আব্রাহাম ও বিপাশা বসু। প্রথমে ডিনো মারিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও পরবর্তীতে জন আব্রাহামের প্রেমে পরে যান এই বাংগালি সুন্দরী। কিন্তু এতো বছরের সম্পর্কও শেষ পর্যন্ত টিকাতে পারলেননা তারা।

রণবীর কাপুর-দীপিকা পাড়ুকোন

কুল বয় রণবীর এবং ডিম্পল গার্ল দীপিকার দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প তো সবারই জানা। রণবীরের প্রেমে এতোই মজে ছিলেন দীপিকা যে তার নাম ঘাড়ে ট্যাটুও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সম্পর্কও বেশিদিন জোড়া ছিলোনা। ভেঙে যায় তাঁদের স্বপ্ন। শোনা যায় রণবীরই নাকি দীপিকাকে ধোঁকা দিয়েছিলো। এতে মানসিকভাবে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলো দীপিকা। বহুদিন ডিপ্রেশনের মাঝেও থাকতে হয়েছিলো তাকে। যদিও সময়ের সাথে সাথে দুজনেই নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছেন। দীপিকা রণবীর সিংকে বিয়ে করে ভালোই আছেন অন্যদিকে রণবীর কাপুর স্ত্রী আলিয়া ভাট ও সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ে রাহাকে নিয়ে সুখে আছেন।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইজীবনজীবনযাত্রাদেহ ও মনরোমান্স রসায়নসচেতনতাসমস্যা

সংকটকালীন মধ্যবয়স

করেছে Shaila Hasan অক্টোবর ১১, ২০২২

শায়লা জাহান

বয়স যখন ৪৫ থেকে ৬৫, জীবনের এই প্রান্তে এসে নিজ পরিচয় ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে একটি পরিবর্তন আসে; যা সংকটের মধ্য বয়স হিসেবে পরিচিত। আমাদের সমাজে তা বুড়ো বয়সের ভীমরতি বলে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু আসলেই কি এমন কিছু? এসব কিছু নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

বেলাশেষে মুভিটির কথা মনে আছে? সংসার জীবনের এক পর্যায়ে এসে বিশ্বনাথ মজুমদার তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী আরতি দেবীকে প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের মধ্যে কি প্রেম ছিল? না কি শুধুই অভ্যাস?’’ জীবনের এই দোরগোড়ায় এসে তাঁর কাছে মনে হল আমি কি পেলাম? রিল লাইফের এই বিশ্বনাথের মত মানুষের জীবনেও বয়সের এই পর্যায়ে এক ধরনের অনুভূতির উদ্রেক হয়। চাওয়া পাওয়ার মধ্যে হিসাব কষতে গিয়ে মনে জমে উঠে হতাশা আর অভিমান। সম্পর্কগুলোতেও কেমন যেন তাল কেটে যায়। আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি এবং উদ্বেগ বা হতাশার অনুভূতিকে মনোবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন মিডলাইফ ক্রাইসিস বা সংকটকালীন মধ্যবয়স। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন এটা আমার সাথে কখনোই ঘটবেনা। কিন্তু আজ না হোক কাল এই সংকটাবস্থা আঘাত হানতে পারে। হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে গত কয়েক দশক ধরে সম্পন্ন করা কাজ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করছেন। পরিকল্পিত করা পরিকল্পনাগুলোর আর কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। হঠাৎ করেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে। মানসিক অবস্থার এই টানাপোড়েন নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনে ঘটে থাকে। যদিও উভয়ের সংকটের ধরনে কিছুটা ভিন্নতা হতে পারে। এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩-১০ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ২-৫ বছর স্থায়ী হতে পারে।

সংকটের কারন

মধ্যবয়সের এই সংকটের নিয়ামক হিসেবে থাকতে পারে-

-শারীরিক পরিবর্তন

-কাজ বা কর্মজীবন

-প্রিয়জনকে হারানো

-দাম্পত্য সংকট

লক্ষন

এই ক্রাইসিস সঠিকভাবে নির্নয় করা সম্ভব নয়। কারন একজনের কাছে যেটিকে সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয় তা আরেকজনের কাছে বিবেচিত সংকটের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নাও হতে পারে। তবে সম্ভাব্য কিছু লক্ষন রয়েছে-

-জীবনে যেসব বযাপারগুলো উপভোগ্য ছিল সেগুলোর প্রতি হঠাৎ আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এটি আগমনী মানসিক সংকটের লক্ষন হতে পারে। এই উদাসীন মনোভাব সংকটে আরো গভীর ও জটিল স্তর যুক্ত করে।

-নিজের জীবন ও জীবনযাত্রার গুনে-মানে সবসময় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা

-জীবনের সকল সোনালী সময় আগেই ঘটে গেছে এমন ধারনা পোষণ করা

-ক্রমাগত অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা

-স্বামি-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনও ভালোবাসায় ফাটল ধরা

-সবকিছুর উপর বিরক্ত ও একঘেয়েমি বোধ করা

প্রতিকার

আধুনিক কিছু গবেষণায় অনেকে মিডলাইফ ক্রাইসিসের অস্তিত্ব আছে কি নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আদতে তা আছে কি নেই তা নিয়েও আছে অনেক মতানৈক্য। তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত শরীর ও মনকে ভালো রাখতে যা করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন-

-সবার আগে চাই শরীরের যত্ন। এই সময় হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা রোগ বাসা বাঁধে। এজন্ন চাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা।

-চলার পথে অনেক ঘটনাই জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য বিচক্ষণতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অতীতকে ঝেড়ে ফেলে, বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যতের লক্ষে যেতে হবে।

-গৎবাঁধা গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল যে কোন কাজই টনিকের কাজ দেবে

-শরীরের পাশাপাশি মনেরও যত্ন-আত্তির প্রয়োজন হয়। পরিবারের পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সাথে আড্ডা দেয়া যায়

-এই সময় স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিৎ। একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, পছন্দের কাজ করা যেতে পারে।

-সর্বোপরি নিজেকে ভালোবাসা। জীবন উপভোগ করার বিষয়টির সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই। বরং তা জড়িত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের উপর।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনদেহ ও মনবিশেষ রচনারোমান্স রসায়নশিল্প ও সাহিত্য

অনুভূতির যোগ-বিয়োগ

করেছে Suraiya Naznin ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২

লিজা নাজনীন-

 

আত্মিক অনুভূতি থেকে ভালোবাসার জন্ম। হৃদয়ের চিরন্তন আবেগ থেকে বিখ্যাতদের ভালোবাসার জন্য জীবন দিতেও দেখা গেছে। ইতিহাসের সোনালি পাতায় আজও সেসব গল্প অমর হয়ে আছে। আগের দিনে প্রেমের প্রতীক্ষাতেও ছিল ধৈর্যেরই পরীক্ষা। এখন অবশ্য সেই অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষার বদল হয়েছে অনেক। হয়েছে অনুভূতির যোগ-বিয়োগ

 

কবি জীবনানন্দ দাশ ভালোবাসার বিশ্লেষণ নিয়ে বলেছেন-
‘তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে
যেখানেই রাখি এ হৃদয়’

ভালোবাসার অপেক্ষা নিয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন,
‘অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। সবাই ভালোবাসি বলতে পারে। কিন্তু সবাই অপেক্ষা করে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না।’

ওবেলায় যেমন ছিল ভালোবাসা-

সেকালের প্রেম ছিল আলো-আঁধারির দীর্ঘশ্বাসে ভরা। প্রেম একটি ধোঁয়া মাত্র যা সৃষ্টি হয় দীর্ঘশ্বাস থেকে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর একেবারে গোড়ায় এ কথা বলেছিলেন স্বয়ং শেক্সপিয়ার। রোমিও আর জুলিয়েটের মতো প্রথম প্রেমের নজির বিশ্বসাহিত্যে খুব কমই আছে। প্রথম প্রেম। শব্দবন্ধটা শুনলেই একটা চমৎকার ঘুমভাঙা সকাল, একটা পাটভাঙা জামার খসখসে মিঠে গন্ধ, একটা হাতে লেখা চিঠির সারপ্রাইজ। প্রথম প্রেম ভাবলেই একখানা অপার্থিব মুখ, যার দিকে তাকিয়ে থাকাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য, দুটো আশ্চর্য হাত, যার মুঠোর ভেতরে পৃথিবীর সেরা নিশ্চয়তা লুকানো আর একটা অলীক কণ্ঠস্বর, কেবল যেটার জন্যই আমার নামটা রাখা হয়েছিল কখনো। এই ছিল তখনকার প্রেম।

 


উত্তম-সুচিত্রার হিট জুটির সিনেমা মানেই এই ধুলার ছদ্মবেশে গোলাপি আবির মার্কা প্রেম যা হাতের মুঠোয় ঝিনুকের মতো পড়ে থাকে। প্রেম নিয়ে লেখেননি এমন কবি মেলা ভার, প্রেমের ছবি আঁকেননি এমন চিত্রকরও দুর্লভ। শিল্পীদের একটা সুবিধা আছে, তারা যেটুকু আড়াল করার, সেটুকু লুকিয়ে রেখে বাকিটা প্রকাশ করে ফেলতে পারে। এতে শ্যামও থাকল, কুলও গেল না। কিন্তু বাকিদের কষ্ট বোধ হয় আরও বেশি। আগেকার দিনে তারা প্রেমে দাগা খেলে কিছুদিন দেবদাসের কালাশৌচ পালন করত। নয়তো ধর্মযাজক বা সমাজসংস্কারী হয়ে যেত। কেউ কেউ বিয়ে করতেন না। কেউবা আবার সন্ন্যাস নিতেন। কী মহিমা প্রেমের!

আসলে প্রেমের মহিমা ট্র্যাজেডিতে। ট্র্যাজেডি। মানুষ তো আজীবন ট্র্যাজেডিকেই সেলিব্রেট করেছে। কী শিল্পে, কী জীবনে। যা জীবনে সফল, স্মৃতিতে বা শিল্পে তার দাম মেলেনি। পথ যেখানে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকেই তো রাস্তা শুরু। আমরা কে না জানি মার্গারিটের কথা। আইওয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক লেখক কর্মশালায় এক বছর থাকার সুবাদে সেই ফরাসি তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল দুর্দান্ত যুবক সুনীলের। সে কথা সুনীলই পরে লিখেছেন বহু জায়গায়। পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন তারা। কিন্তু একসঙ্গে থাকা হয়নি বাস্তবিক কারণে।

থাকা হয়নি মানুষ দুটোর। কিন্তু ভালোবাসাটা ছিল। আর এই বিচ্ছেদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিভিন্ন কবিতা ও উপন্যাস ‘সোনালী দুঃখ’। সেই সুনীলই যখন ‘প্রথম আলো’ লিখছেন, তখন তার পাতায় পাতায় উঠে আসছে কাদম্বরী দেবীর প্রতি রবি ঠাকুরের অন্ধ মুগ্ধতা আর নির্ভরতার কথা। বৌঠানের অকালপ্রয়াণের পর রবির হাজারো লেখায় তার ছায়া ফিরে ফিরে আসার কথা। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ভালোবেসেছেন, আর সেটাই স্বাভাবিক। কিš‘ অত গভীর ছায়া আর কোনো সম্পর্ক ফেলতে পেরেছে কি? সম্ভবত পারেনি। তিনিও সারাজীবন বিচ্ছেদের উৎসবে মেতেছেন।

চিঠির স্পর্শে
ওবেলার প্রেমে বড় মধুময় সময় ছিল চিঠি। আর চিঠিতে মুখফুটে না বলা কথাগুলো প্রেয়সী লিখে ফেলত। সামনে এলেই লজ্জায় লাল। শুধু মুচকি হাসির আবডালে ভালোবাসা প্রকাশের সময় ছিল ওবেলার সময়টা। মুখ ফুটে সরাসরি প্রেমের আবেদন জানানোর সাহস না করে চিঠির মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করে অপেক্ষার প্রহর গোনা হতো প্রত্যুত্তরের। এতে নানা ধরনের মুখরোচক ও আবেগময় লেখা থাকত। প্রেমের চিঠি আদান-প্রদানের সময় বন্ধু বা বান্ধবীর প্রতিবেশী বা সমমনা বন্ধুবান্ধব অথবা বাড়ির ছোট ছোট কিশোর-কিশোরীকে ব্যবহার করা হতো এবং এ কাজের জন্য তাদের নানান ধরনের পুরস্কারেও ভূষিত করা হতো।

 

প্রেমিক বা প্রেমিকা চিঠি পেয়ে সাড়া দিলে তখনি চিঠির উত্তর দিয়ে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে প্রেমের প্রথম পর্ব শুরু হতো। আবার অনেকে প্রেম প্রত্যাখ্যান করলে চিঠি ছিঁড়ে বা পুড়িয়ে ফেলত। বাহকের কাছ থেকে যেকোনোভাবে জায়গামতো না গিয়ে অভিভাবক বা মুরব্বি কারও হাতে চিঠি গেলে বিচার-আচার কিংবা ঝগড়াঝাঁটি-মারামারিও হতো। অনেকেই নিজে চিঠি লেখার বা লেখানোর পরও বারবার পাঠ করে শুনতেন বা শোনাতেন যাতে কোনো তথ্য অসম্পূর্ণ না থাকে।
সময়ের বিবর্তনে আজ চিঠি বিলুপ্তপ্রায়। প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটা চিঠি পড়ে বোঝা যায়, চিঠি কত আবেগময়, জীবন্ত হতে পারে। কবিকে তার প্রথম স্ত্রী নার্গিস একটি পত্র লিখেছিলেন। কুমিল্লা থেকে কবি চলে যাওয়ার কিছুদিন পর। বিয়ের পরপরই চরম আপন ভাবা ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে কেউ যায়? কবি নজরুল যে বাঁধনহারা। শিকল ছেঁড়া বিদ্রোহী। সেই চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন পনেরো বছর! চিঠির শুরু এভাবে হয়েছিল

কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নব বর্ষার নবঘনসিক্ত প্রভাতে। মেঘ মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনেরো বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি এক বারিধারায় প্লাবন নেমেছিল তা তুমিও হয়তো স্মরণ করতে পারো। এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত ¯্রােতে। যাক, তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখে শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে, আর তা মিথ্যা।

তোমার ওপর আমি কোনো ‘জিঘাংসা’ পোষণ করি না এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি।
কী অদ্ভুত শব্দচয়ণ। মনে হয় যেন বুকের ভেতর থেকে কথাগুলো টেনে টেনে বের করে কবি গাঁথছেন চিঠি নামের এক ফুলমালা। কবি চলে আসার কারণ লিখতে অন্তর্যামীকে নিয়ে আসেন। তিনিই যে কবির ভেতরটা দেখেন।
আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! কিš‘ সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি।

 

 

কবি তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাকে প্রজ্বলিত ব্যথার আগুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। দীর্ঘ পনেরো বছর কবি সে আগুনে নিজে পুড়ছেন। নার্গিসকে পোড়াতে চাননি। আগুন তার হৃদয় পুড়িয়ে তাকে নিখাদ সোনা বানিয়েছে। সাফল্য এনে দিয়েছে। নজরুল নির্দ্বিধায় সে সত্যকে স্বীকার করে লিখেছেন, তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যাণ রূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথম দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্ব প্রথম ভালোবাসার অঞ্জলি দিয়েছিলাম, সে রূপ আজও স্বর্গের পারিজাত-মন্দারের মতো চির অম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের সে আগুন- বাইরের সে ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি।

দীর্ঘ পনেরো বছর আগের স্মৃতিচারণা বর্ণনায় কবি লেখেন, হঠাৎ মনে পড়ে গেল পনেরো বছর আগের কথা। তোমার জ্বর হয়েছিল, বহু সাধনার পর আমার তৃষিত দুটি তোমার শুভ্র ললাট স্পর্শ করতে পেরেছিল; তোমার তপ্ত ললাটের স্পর্শ যেন আজও অনুভব করতে পারি। তুমি কি চেয়ে দেখেছিলে? আমার চোখে ছিল জল, হাতে সেবা করার আকুলস্পৃহা, অন্তরে শ্রীবিধাতার চরণে তোমার আরোগ্যলাভের জন্য করুণ মিনতি। মনে হয় যেন কালকের কথা। মহাকাল যে স্মৃতি মুছে ফেলতে পারল না। কী উদগ্র অতৃপ্তি, কী দুর্দমনীয় প্রেমের জোয়ারই সেদিন এসেছিল। সারা দিন রাত আমার চোখে ঘুম ছিল না।

এত ভালোবাসার পরেও কবি তার আপন পথের, গন্তব্যের দিকে ছুটবেন সবকিছু মাড়িয়ে। অনুরোধ, প্রার্থনা ও কৈফিয়ত দিলেন, যাক আজ চলেছি জীবনের অস্তমান দিনের শেষে রশ্মি ধরে ভাটার ¯্রােতে, তোমার ক্ষমতা নেই সে পথ থেকে ফেরানোর। আর তার চেষ্টা করো না। তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি বিশ্বাস করো আমার অক্ষয় আশীর্বাদকবচ তোমায় ঘিরে থাকবে। তুমি সুখী হও, শান্তি পাও এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস করো, আমি তত মন্দ নই এই আমার শেষ কৈফিয়ত।
চিঠি নিয়ে যদি গবেষণা হয়, তো কবি নজরুলের এই চিঠি জীবন্ত প্রেমময়ী চিঠি হবে।

এবেলার ভালোবাসা যেমন-

বর্তমান যুগে অপেক্ষার জন্য কেউ তোয়াক্কা করে না। কম সময়ে সবকিছু হাতের নাগালে এসে হাজির হবে সেই চিন্তার দৌড়। বর্তমানে ঘরে বসেই ভালোবাসার সব স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বল্প খরচে চ্যাটিং করা যায় এবং উভয় উভয়ের আলাপ সরাসরি শোনার পাশাপাশি দেখতেও পারে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরের পর্দায়। ফেসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাৎচিত করা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে বর্তমানে ইন্টারনেট, ই-মেইল, ভয়েস মেইল, চ্যাটিং, ফোন ও মোবাইলের যুগে আজ তা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

জাদুঘরের বন্ধ খাঁচার দিকে ক্রমেই ধাবমান আর ইতিহাসের পাতায় বন্দী হওয়ার মতো অবস্থা। ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপস চ্যাট, এসএমএস, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, ফ্লাশ মেসেজ, অডিও মেসেজ, টেলিকানেকশন ও মোবাইলের জয়জয়কারে দেশ-বিদেশের স্বজনদের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ এখন সেকেলে মডেলে পরিণত হয়েছে। এখন হয়ে গেছে এই চাইলাম ভালোবাসলাম, আবার হুটহাট ব্রেকআপ করে ফেললাম…এখন আবার অনেকে ব্রেকআপ পার্টিও দেওয়া হয়। সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বিজয়ের হাসি দেয়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে নিজের ভালোবাসার মানুষকে কমপ্লিমেন্ট দিয়ে প্রেমের ঘোষণা করছেন সেলিব্রিটিরা। চোখে চোখ, হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট মেলানোর জন্য যারা লোকলজ্জার তোয়াক্কা করে না, তাদের বলা হয় পিডিএ (পাবলিক ডিসপ্লে অব অ্যাফেকশন) যুগল।

 

ডিজিটাল ভালোবাসা-

এই যুগের ভালোবাসা ভিন্ন সুতোয় বোনা। বিশেষ করে, বর্তমান জেনারেশন তাদের মনের মানুষ খোঁজার ব্যাপারে অনেক বেশি স্বাবলম্বী, অনেক বেশি স্বাধীন। তাদের অনেকেই অনলাইন ডেটিংয়ে বিশ্বাসী, যেটা কিনা ফেস টু ফেস রোমান্সের পরিবর্তে স্ক্রিন টু স্ক্রিন রোমান্সকে হাইলাইট করে। সেটা কী রকম?

 

 

বর্তমান সময়ে পশ্চিমা জগতের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে , তা হলো অনলাইন ডেটিং বা অনস্ক্রিন রোমান্স। আমেরিকার কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা শুধু বন্ধু-বান্ধবী খোঁজার উদ্দেশ্যে অনলাইন ডেটিং সাইটগুলো ব্যবহার করে। অন্যদিকে ত্রিশোর্ধ্ব বয়সীরা বা মধ্যবয়সীরা তাদের মনের মানুষ খোঁজার লক্ষ্যে এটিতে সাইনআপ করে। ডেটিং সাইটগুলোর প্রায় ৫৪ শতাংশ রেজিস্টার্ড সদস্যরা বিশ্বাস করে।

আমেরিকার ২০ শতাংশ বিয়ে হয়ে থাকে এই অনলাইন ডেটিংয়ের মাধ্যমে। যারা অনলাইনে প্রেম করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের হার তুলনামূলক কম। কারণ, এই ডেটিং সাইটগুলো অনেক রকম ম্যাচিং অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে সদস্যদের জন্য তালিকা তৈরি করে, যাতে কপোত-কপোতীরা তাদের সমমানসিকতার বন্ধু-বান্ধবীদের খুব সহজেই বেছে নিতে পারে।


নিজের ব্যক্তিগত কিছু তথ্য আর ছবি দিয়ে একটি প্রোফাইল খুলতে হয়। তারপর এই সাইটগুলো একের পর এক ওই সব তথ্যের সঙ্গে ম্যাচ করে সম্ভাব্য প্রেমিক-প্রেমিকার সন্ধান দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে এই বাছাইকৃত তালিকা থেকে ছেলেমেয়েরা তাদের পছন্দের মানুষের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট চালিয়ে যায়। এরপর যদি কাউকে ভালো লেগে যায় বা সত্যি কোনো সম্ভাবনা থেকে থাকে, তাহলে একদিন সামনাসামনি দেখা করা হয়। আরও দূর অগ্রসর হলে গভীর প্রেম, অতঃপর বিয়ে। এভাবেই প্রযুক্তির বদলের সঙ্গে সঙ্গে হ”েছ ভালোবাসারও ভার্চ্যুয়াল পরিবর্তন।

 

 

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনজীবনযাত্রারোমান্স রসায়ন

আজ ফাগুন হাওয়ায় বইছে ভালোবাসা

করেছে Suraiya Naznin ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২

আজ ফাগুন হাওয়া উদাস করে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলবে ঋতুরাজ। মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে বসন্ত ভালোবাসায়। বাসন্তী আবিরের সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় লাল গোলাপের টায়রায় তারুণ্যের ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠবে শৈল্পিকতা। ফুলেল পরিবেশে হবে বসন্তবরণের নানা অনুষ্ঠান। আবহমান বাংলার বাসন্তীদের হৃদয়ে তরুণরাও ধরা দেবে একরাশ ফাল্গুনী সাজে। লাল কিংবা হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীর বাঁধভাঙা উল্লাসে আজ নতুনভাবে সেজে উঠবে দেশ।

করোনার কারণে এবারের বসন্ত উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলার পরিবর্তে আয়োজন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে। বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে কপোত-কপোতী। ফুল, কার্ড, চকোলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত খুদে বার্তায় ভরে যাবে মুঠোফোনের মেসেজ বক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপেও ছড়িয়ে যাবে পরানের গহিনের উষ্ণতা।

১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর থেকেই একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। একদিনে দুটি ফুলনির্ভর উৎসব হওয়ায় কয়েক দিন আগেই ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফুলের বাজার।

রোদসী ডেস্ক

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রারোমান্স রসায়নসচেতনতা

বিয়ে আগে যা জানা জরুরী

করেছে Tania Akter জানুয়ারী ২৩, ২০২২

রোদসী ডেস্ক

বিয়ে খুবই স্পর্শকাতর একটি সম্পর্ক। তাই দাম্পত্য কলহ এড়াতে কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা কমে যায় যদি বিয়ের আগে অভিভাবক ও পাত্র-পাত্রীর জরুরী কিছু বিষয় জেনে নেয়-

প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
প্রথমেই পাত্র-পাত্রীর বয়স রাষ্ট্রীয় আইনুসারের বৈধ কি না সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তা না হলে আইনগতভাবে হেনস্থা হওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও অপদস্ত হতে হবে।

কততম বিয়ে
বিয়ে মানেই প্রথম বিয়ে এমন নয়। পাত্র বা পাত্রীর এটা প্রথম বা কততম বিয়ে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য রাখতে হবে। এছাড়া পাত্রের কততম স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় এই বিয়ে হতে যাচ্ছে। পাত্রের একাধিক বিয়ে হলে আগের স্ত্রীর অনুমতি আছে কি না কিংবা পাত্রীর বিয়েটা এখনও বিদ্যমান আছে কিনা জেনে নিতে হবে। এছাড়া পাত্রী বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত হলেও তা জানা উচিত। পাত্রীর আগের স্বামীর ঔরসজাত সন্তান থাকলে তার দায়িত্ব কিংবা পাত্রের আগের স্ত্রীর সন্তান নিয়েও দুজনেরই স্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত।

 

একা নাকি একান্নবর্তী পরিবার
বিয়ের পর সঙ্গী একা থাকবে নাকি পরিবারের সাথে থাকবে সে বিষয়ে জেনে নিতে হবে। তা না হলে পরিবারের সবার সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা খুবই বিব্রতকর।

আর্থিক বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান
ভবিষ্যত জীবনে চলার পথের গুরুত্বপূর্ণ হলো দুজনের এবং দুই পরিবারের আর্থিক বিষয় সম্পর্কে জানা জরুরী। এছাড়াও নিজেদের খরচের অভ্যাস সম্পর্কে জানাও প্রয়োজন। এছাড়াও দুইজনের কারও কোন ধরনের ঋণ কিংবা ব্যাংক লোন আছে কিনা সেটাও সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করে নিলে দুজন দুজনকে সহায়তার পাশাপাশি অবাঞ্চিত দাম্পত্য কলহ এড়ানো যাবে।

সন্তান গ্রহণ সম্পর্কে মতামত
বিয়ের পর সন্তান নেয়ার ইচ্ছে আছে কিনা এ বিষয়ে সঙ্গীর মতামত জানা জরুরি। যদি সন্তান গ্রহণের ইচ্ছা থাকে তাহলে কখন এবং সন্তানের সংখ্যা জেনে নিতে হবে। ছেলে সন্তান নিয়ে কতটা আগ্রহী কিংবা সহবসেসঙ্গীর ইচ্ছার উপর গুরুত্ব দেয়া হবে কি না এসব বিষয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করে নিলে দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।

 

জীবনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পাত্র এবং পাত্রীর সম্পর্কে জড়ানোর পূর্বমুহূর্তেই জরুরী বিষয়গুলো নিয়ে সংকোচ নয় খোলামেলা আলোচনায় সঠিক তথ্য জানিয়ে দিলে দাম্পত্যজীবন হবে উপভোগের এবং পরবর্তী প্রজন্ম থাকবে নিশ্চিন্ত।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রারোমান্স রসায়ন

ধরে রাখুন প্রেমের সুত্র

করেছে Sabiha Zaman নভেম্বর ৮, ২০২১

সাবিহা জামান: প্রেমের শুরুর সময়টা কিন্তু বেশ সুন্দর। কিন্তু সবকিছু চিরস্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের চেহারা বদলায়, ঠিক তেমনই প্রেমেও পরিবর্তন আসে। প্রেম বিয়ে অবধি গড়ালে সম্পর্কে রঙে আসে আরো পরিবর্তন। ভালবাসা জিইে রাখতে হলে এই সারসত্যটা বুঝতে হবে। রোম্যান্সের ঝুলি সম্পরকের শুরুতে পূর্ণ থাকলেওম সময়ের সঙ্গে তা যেন ধাপে ধাপে কমতে থাকে। যা মেনে নেওয়া বেশ কষ্টকর। কিন্তু তুমি বা তোমরা দুজন চাইলেই কিন্তু পুরনো প্রেম জিইয়ে রাখতে পারো আজীবন। রোদসীতে থাকসে এ নিয়েই কিছু টিপস।

রোম্যান্টিক ডিনার, লং-ড্রাইভ, ফুলের বোকে, উপহারের ঘনঘটা দিয়েই সম্পর্ক শুরু হয়। এর কারণ আমরা শুরুতে পার্টনারকে মুগ্ধ করতে চাই। কিন্তু বাস্তবে এমন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় আজীবন। সময় আর বাস্তবতার চাপে ব্যালেন্স করতে গিয়ে সম্পর্কে আমরা সময় দিতে ভুলে যাই। শুরু হয়ে যায় নিত্য অশান্তি। ঝগড়াঝাঁটি, মনোমালিন্য, মান-অভিমান। বিয়ের পর আসলে দাম্পত্য খানিকটা একঘেয়ে হয়ে যায়। তবে ছোট কিছু বিষয় মেনে চললে সম্পর্ক সুন্দর থাকে।

টিপস

  • আমরা কেউই পারফেক্ট নই। এমনকি তুমি নিজেও না। তাই পার্টনারের থেকে পারফেকশন আশা করবে না। বরং তাকে বুঝতে চেষ্টা করো।
  • সব সম্পরকেই সমস্যা হয় কিন্তু তাই বলে সম্মান করা বাদ দিলে চলবে না। যে কোন ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার মুলে সম্মান। একে অপরকে সম্মান করো।
  • সবসময় অভিযোগ না করে পার্টনারকে বুঝিয়ে বলো তুমি কি চাইছো। তোমার কি সমস্যা হচ্ছে। চুপ থাকা সমাধান নয়। ভালো আলোচনা থেকেই দেখবে সমাধান আসবে।
  • পার্টনারের আবেগ, অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। জোর করে নিজের ইচ্ছে চাপিয়ে দেবে না।
  • সম্পর্ক গড়ার জন্যে যে এফর্ট দিয়েছেন দুজনে, বিয়ের পর সেটাই যেন ভাঁটা না পড়ে সেদিকে নজর রাখবে।
  • বিয়ের পর অনেকেই ভাবে একসাথেই তো থাকছি আলাদা করে সময় কাটানোর কি আছে। কিন্তু এমনটা না ভেবে দুজন মাঝে মাঝে বের হও। ঠিক আগের মতো ঘুরো, পুরনো দিনের কথা মনে করো দেখবে আগের সেই রোমান্স জেগে উঠেছে।
  • বিশেষ দিন যেমন, জম্মদিন, অ্যানিভার্সারিতে দুজঙ্কে সময় দাও। ছোট করে হলেও দুজনের জন্য আয়োজন করো। উপহার কিংবা বাইরে যেতে পারো।

ছবি: সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
চিত্রকলাজীবনযাত্রারোমান্স রসায়ন

সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে?

করেছে Sabiha Zaman নভেম্বর ৭, ২০২১
সুরাইয়া নাজনীন: করেই কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় না অবার কোনো সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সময় দিতে হয়। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙতে সময় লাগে না। মাত্র কয়েক মুহূর্তেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য মানুষের কিছু অভ্যাসই দায়ী হতে পারে-
# আত্মবিশ্বাস না থাকলে সঙ্গীর কাছে বিশ্বস্ত হওয়া সম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখতে চান না।
# বার বার দোষারোপ করতে থাকেন অনেকে। কারও কোনো ভুল পেলেই তার দোষারোপ করা ঠিক নয়।
# গোঁড়ামি, অসহিষ্ণুতা ও অহংবোধ থাকার কারণে বিষিয়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। ‘আমিই সঠিক’- এ ভাবনা সম্পর্ক নষ্টের অন্যতম কারণ।
# সম্পর্ক দুজন মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠে। গুরুত্ব না পেলে সঙ্গী কষ্ট পেতে পারেন। সবসময় নিজেকে প্রাধান্য দিলে
# কোনো মানুষ নিজের সমালোচনা শুনতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত ভালোবাসার মানুষের সমালোচনা করতে থাকেন। পান থেকে চুন খসলেই সঙ্গীর ভুল ধরতে গেলে সম্পর্কে সৃষ্টি হয় তিক্ততা।
May be an image of one or more people and text
ছবি: ইন্টারনেট
০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দিবস সবিশেষবিশেষ রচনারোমান্স রসায়ন

দুনিয়াকাঁপানো অমর প্রেমকাহিনি

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

যুগ যুগ ধরে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, আছে। কিছু প্রেম ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ। আবার কিছু প্রেম হারিয়ে গেছে অমানিশায়। যাদের প্রেমের অমর গল্প যুগ যুগ ধরে চলমান, নিশ্চয়ই সেসব গল্পের মাহাত্ম্য অবিচল। সেসবের আছে বিচার, আছে বিশ্লেষণ, আছে উদাহরণ। অনেকে জীবন দিয়েছে, কেউবা বনবাসী হয়েছে। সে জন্যই তো ভালোবাসার জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা দিবস। যাদের প্রেমের গল্প অমর হয়েছে, তাদের নিয়ে এই সংখ্যার আয়োজনÑ

রানি ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্ট 

হাজার বছরের পুরোনো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাদের হাজার হাজার প্রেমকাহিনির ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেমকাহিনি অুুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তার চাচা কিং উইলিয়ামের মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তারা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তারা একে অপরকে প্রচÐ ভালোবাসতেন। তাদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর পর স্বামীর শোকে রানি পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানি পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। তার শাসনামলেই ব্রিটেন সুপারপাওয়ার হিসেবে দুনিয়ায় আবিভর্‚ত হয়।

লাইলি ও মজনু 

প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং মজনু একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির বাবা মজনুকে আহত করলে লায়লাও আহত হতো, এমনি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ মজনু মরু প্রান্তরে নির্বাসনে যায়। মজনুর প্রকৃত নাম ছিল কায়েস। বিরহকাতর খ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য মজনুকে প্রেরণা দেয়। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা মজনুর সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচÐ দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা,’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট 

রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনি। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রæতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রæতার জেরে এবং ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!

সেলিম ও আনারকলি :

মোগল সম্রাট   আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়ে রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্যসুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে সম্রাট পুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয় এবং নিজ সন্তানের মৃত্যুদনন্ড করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চায়। তখন সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়।

 

শাহজাহান ও মমতাজ 

১৬১২ সালে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোগল সা¤্রাজ্য পরিচালনা করেন। স¤্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ সালে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সা¤্রাজ্য হারিয়ে বন্দিজীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্যসুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে ‘তাজমল’ গড়ে উঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তার ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ‘তাজমহল!’

নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন 

২৬ বছর বয়সী মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ¤øান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ান খুব চাইতেন জোসেফাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেফাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্তে¡ও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।

ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাÐুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। একসময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হৃদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। একপর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবেন না। ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান। তার শোকে ভগ্নহৃদয় নিয়ে ইসলদেও কিছুদিন পর তারই রাজ্যে মারা যান।

অরফিয়াস এবং ইফরিডাইস 

এটি প্রাচীন গ্রিসের এক অন্ধ প্রেমের কাহিনি। অরফিয়াস সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভ‚মি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর। কিন্তু ইউরিডাইসের প্রেমে সাড়া না পেয়ে তার ক্ষতি করতে উদ্যত হন। পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে ইউরিডাইস এক সাপের গর্তে পড়লে সাপ তার পায়ে বিষাক্ত ছোবল হানে। শোকে কাতর অরফিয়াসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হাহাকার শুনে পরি আর দেবতাদের চোখেও জল আসে। দেবতাদের পরামর্শে অরফিয়াস পাতালপুরীতে প্রবেশ করেন। পাতালপুরীতে তার গান শুনে হেডসের মন গলে যায়। মুগ্ধ হয়ে হেডস ইউরিডাইসকে অরফিয়াসের সঙ্গে পৃথিবীতে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু সে জন্য একটা বিশেষ শর্ত দেন। শর্তটি হলো অরফিয়াসকে ইউরিডাইসের সামনে থেকে হেঁটে যেতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে না পৌঁছাবে, ততক্ষণ অরফিয়াস পেছনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু উৎকণ্ঠিত অরফিয়াস হেডসের সেই শর্তের কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে ইউরিডাইসকে দেখতে পেছনে ফেরেন। আর তখনই অরফিয়াসের জীবন থেকে চিরদিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যান প্রিয়তমা ইউরিডাইস। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সংগীত ও মিউজিক অনেক বড় ভ‚মিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

রামোস অ্যান্ড থিইবি 

অত্যন্ত আবেগী আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেমকাহিনি। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাদের প্রেম দ্বারা প্রভুর থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে স্বর্গেও তারা একসঙ্গে থাকবে! সুপুরুষ রামোস ছিল ব্যাবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবির বাল্যকালের বন্ধু। তারা প্রতিবেশী হওয়ায় একই সঙ্গে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাদের পরিবার এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেয় না। তাই তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরিগাছের নিচে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবি গোপনীয়তা রক্ষার্থে মুখে একটা কাপড় পরে রামোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুধার্ত সিংহ থিইবির সামনে হাজির হলে ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার সময় তার মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ধরে নেয় যে সিংহ তার থিইবিকে ভক্ষণ করেছে। তাই সেও তার ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবি এসে মৃত রামোসকে দেখতে পেয়ে সেই একই ছুরি দিয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

মেরি এবং পিয়েরে কুরি

রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনি। অথচ দুনিয়াকাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পৌরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনি। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনি। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, এরা ছিল একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চের অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সুন্দরবনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর র‌্যাডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী, যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন।

লেখা : সুরাইয়া নাজনীন

ছবি : সংগৃহীত2

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইরোমান্সরোমান্স রসায়ন

হানিমুনের সেরা দশ গন্তব্য

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২১

আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা অনেক। সাগর, পাহাড়, স্থাপত্য সব রকম পর্যটন আকর্ষণই আছে বাংলাদেশে। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য হানিমুনে ঘুরে আসতে পারো এ রকমই জনপ্রিয় দশটি ভ্রমণ গন্তব্য তুলে ধরা হলো এখানে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। টেকনাফ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকতজুড়ে সারি সারি নারকেলগাছ, বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথর, দিগন্তজুড়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনমাতানো সৌন্দর্য। ছোট্ট এই দ্বীপে বৈচিত্র্যে ঠাসা। উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিম, সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের পসরা। যেমন উত্তরের সৈকতে জোয়ার-ভাটায় জেলেদের মাছ ধরা, পশ্চিমের সৈকতে সারি সারি নারকেলবাগান। পূর্ব আর দক্ষিণ পাশের সৈকতজুড়ে মৃত প্রবালের সঙ্গে নীলসমুদ্র। এত নীল পানির সমুদ্র বাংলাদেশের আর কোথাও নেই।

নারিকেল জিঞ্জিরা 
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এ দ্বীপটির অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারকেলগাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি পর্যটক আকর্ষণের মূল উপাদান। সেন্ট মার্টিনের আরেক আকর্ষণ ছেঁড়া দ্বীপ। মূল দ্বীপের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত। একসময় মূল দ্বীপ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে। তবে জোয়ারের সময় এখনো এর সংযোগস্থল ডুবে যায়। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু আছে বেশ কিছু সমুদ্রগামী জাহাজ।

কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভও। ভ্রমণে তাই কক্সবাজার এখন আরও বেশি উপভোগ্য। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। শহর থেকে শুরু করে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত এখানে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর সৈকত আছে। কক্সবাজার শহরের লাবণী ও সুগন্ধা সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর, হাজামপাড়া আর টেকনাফ। এর একেকটি সৈকত যেন বৈচিত্র্যের ভান্ডার।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামুতে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। আর চকরিয়ার ডুলাহাজারায় আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কুতুবদিয়া চ্যানেল
কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে এই কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল  ভূখণ্ড  বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে যেতে হলে চকরিয়ার মগনামা ঘাট থেকে পাড়ি দিতে হয় এই চ্যানেল। শীত মৌসুমে এ চ্যানেল বেশ শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আসল সময় তাই শীতকাল।

কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে আছে নানান পর্যটন আকর্ষণ। নির্জন সমুদ্রসৈকত, একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাচীন বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এ দ্বীপে। চকরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় দ্বীপে। এখানকার সমুদ্রসৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বেশির ভাগ এলাকাই বেশ নির্জন। সৈকতের তীরে অনেক জায়গাতেই আছে ঝাউগাছের বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও কুতুবদিয়ায়। এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের আলী আকবরের ডেল এলাকায়।

আর দ্বীপের উত্তর প্রান্তে আছে কুতুবদিয়ার প্রাচীন বাতিঘর। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরোনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনো কখনো জেগে উঠতে দেখা যায়।
দ্বীপের মাঝামাঝি ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরিফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবীর জন্মস্থান এটি। জনশ্রুতি আছে, দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই। বর্তমানে কুতুব শরিফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তারই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ। এ ছাড়া কুতুবদিয়ার সর্বত্রই লবণ চাষ হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।


বান্দরবান
তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা। বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি। বোমাং রাজার উত্তরসূরিরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে। আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় জাদির পাহাড়ে আছে স্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের এ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ। শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট। এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূরদূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত। এখানে আছে একটি ঝরনা। শৈলপ্রপাতের পাশেই স্থানীয় আদিবাসীদের ভ্রাম্যমাণ বাজারটি দেখার মতো। তাদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল পাওয়া যায় এ বাজারে। এখানে আরও আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের একটি গ্রামও।

শৈলপ্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। এ পথে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য ছবির মতো।

রাঙামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা রাঙামাটি। এখানকার জেলা শহরে আছে উপজাতীয় জাদুঘর। জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে এ জাদুঘরের জুড়ি নেই। এর কাছেই বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নানান আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি।
রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীরে খুব ব্যস্ত দুটি জায়গা রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। দুটি বাজারেই মূলত আদিবাসীদের আনাগোনা বেশি। তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু।
রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকায় চড়ে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। বাজারের আগেই বাঁ দিকের পাহাড়ে আছে শুভলং ঝরনা। তবে শীতে এ ঝরনায় পানি থাকে না। শুভলং যেতে পথে কাপ্তাই হ্রদের মাঝের ছোট দ্বীপজুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখানকার রেস্তোরাঁয় মেলে হরেক পদের পাহাড়ি খাবার।

রাঙামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি হলো সাজেক। জায়গাটির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে। সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান। সাজেকের পাহাড়চ‚ড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে।

খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা খাগড়াছড়ি। এখানেও ভ্রমণের অনেক জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এই জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। চারদিকে পাহাড়ের মাঝে অনেকটা সমতলে এই শহর।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের জায়গা হলো আলুটিলা পাহাড়। জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে এই পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চ‚ড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো এর নিচের গুহাপথ। পাহাড়ের নিচে গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা।

আলুটিলা পাহাড় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রিসাং ঝরনাটিও বেশ সুন্দর। আর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নুনছড়ির পাহাড়চ‚ড়ায় দেবতার পুকুরও মনোরম জায়গা।


সুন্দরবন
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেঙ্গল টাইগারের বাস ছাড়াও এ বনে আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুইসাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমিরসহ আরও অনেক বন্য প্রাণী। সুন্দরবনের প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, হেঁতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
মোংলার কাছাকাছি করমজল আর হারবাড়িয়া ছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, কোকিলমনি, মান্দারবাড়িয়া, পুটনি দ্বীপ ইত্যাদি। এর মধ্যে কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া এবং পুটনি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবনে ভ্রমণে এখন অনেক পেশাদার ভ্রমণ সংস্থা এখন প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে।

শ্রীমঙ্গল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর এ জেলার শ্রীমঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি চা-বাগান। জীববৈচিত্র্যে ভরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও শ্রীমঙ্গলের পাশেই। শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু সুন্দর চা-বাগান আছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা-বাগান আর চা-বাগান। পছন্দসই যেকোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারো। শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্টও। তাই চা-বাগান বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও বেড়াতে পারো বাইক্কা বিল। এ বিল অতিথি পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম। শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী থলই এলাকায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। আর কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকও শ্রীমঙ্গল থেকে খুবই কাছের একটি দর্শনীয় স্থান।

 

 

 

বাগেরহাট

প্রাচীন মসজিদের একটি শহর বাগেরহাট। বেশ কিছু প্রাচীন মসজিদ এখানকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আলীর এসব প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাটগম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে।
বাগেরহাট শহরের মাঝে হজরত খানজাহানের (র.) সমাধিসৌধ, মসজিদ আর প্রাচীন দিঘি। এ ছাড়া এই দিঘির তীরে জিন্দাপীর মসজিদ আর নয়গম্বুজ মসজিদ নামে আরও দুটি মসজিদ আছে। হজরত খানজাহান আলীর (র.) সমাধিসৌধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি বাগেরহাটের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বিশাল এই মসজিদ ইটের তৈরি। ষাটগম্বুজ নাম হলেও মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ আছে। তবে মসজিদের ভেতরের ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হতে পারে ষাটগম্বুজ। স্তম্ভগুলো কালো পাথরের তৈরি।
এ ছাড়া বাগেরহাটের অন্য প্রাচীন মসজিদগুলো হলো ষাটগম্বুজের পাশেই সিংড়া মসজিদ, রণবিজয়পুর গ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একগম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রণবিজয়পুর মসজিদ। চুনাখোলা গ্রামের চুনাখোলা মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণে কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা। একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়ার কারণে এ জায়গাটি বেশি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখানকার সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে নারকেলগাছের বাগান। তবে এর অনেকটাই সাগরে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র তীরের এই নারকেল বাগান।
এ সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলেপল্লি। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। শীত মৌসুমে এ পল্লির জেলেরা ব্যস্ত থাকেন শুঁটকি তৈরির কাজে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। এর নাম ফাতরার বন। সুন্দরবনের অংশ হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্য  প্রাণী নেই সেখানে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতীর খাল। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতীর জঙ্গল। এখান থেকে আরও সামনে গেলে ছোট্ট একটি দ্বীপে আছে লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। দ্বীপটি ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত।

লেখা – রোদসী ডেস্ক

ছবি – সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook